সুড়ঙ্গের নিচে চায়ের দোকানটাতে প্রতিদিন আমরা বিকেল বেলায় জড়ো হই। আড্ডা
দিই। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, মোবাইল, নারী সব বিষয়ে আমাদের আলোচনা চলে। সেদিন
আড্ডায় আমি বিষয় হিসাবে তুলি নাক ডাকা। উদ্দেশ্য যদি লেখার জন্য কিছু পেয়ে
যাই। ...............
ফরিদ নামে একটা ছেলে আছে আমাদের সাথে। চুপচাপ ধরণের। মেসে থাকে। নাক ডাকা বিষয়ে কথা উঠতেই সে লাফিয়ে উঠে। গত কয়েক মাস যাবত নাকি সে রাতের বেলা ঠিকমত ঘুমাতে পারে না। পাশের বেডের রুমমেটটি নাক ডাকা এত তীব্র যে মনে হয় গাড়ি চলতেছে। কিছুক্ষণ পর পর গিয়ার পরিবর্তনের মত নাক ডাকা স্বরেরও নাকি পরিবর্তন হয়। প্রতিদিন রাতে নাকি ওর ইচ্ছে হয় ছেলেটার মুখে বালিশ ঠেসে ধরতে। দিনের বেলায় বাড়তি ঘুমানোর মাধ্যমে রাতের বেলার ঘুমের ঘাটতি দূর করার চেষ্টা চালায় ও। আমরা বলি রুমটা ছেড়ে দিয়ে নতুন রুম নিতে। কিন্তু ফরিদ জানায় সে পারবে না। তাদের পাশের বাসায় সুন্দর একটা মেয়ে থাকে। ঐই মেয়ের দিকে চেয়ে সে নাক ডাকা নির্যাতন শর্তেও রুম পাল্টাবে না। কামরুল বলে, আচ্ছা ফরিদ, এখন যদি শুনো ঐ মেয়েটাই নাক ডাকে। কি করবে?
ফরিদ একটু কাচুমাচু হয়। বলে, এত সুন্দর মেয়ে নাক ডাকবে? অসম্ভব। তা হতেই পারে না।
আমরা একে অন্যের দিকে চাওয়া চাওয়ি করি। সুন্দর মেয়েরা কি নাক ডাকে না? এ বিষয়ে স্পষ্ট কোন তথ্য আমাদের কাছে নেই। মানিক একটু না মানা ধরণের। যে কথাই হোক তার একমাত্র দায়িত্ব হচ্ছে ঐ কথার বিরোধিতা করা। সব কথার বিপক্ষে সে যুক্তি দেখাবেই। সুন্দর মেয়েরা নাক ডাকে না এই তথ্যের সাথে সম্পূর্ণ দ্বিমত পোষন করল ও। আনিস বলে, তোর কাছে প্রমাণ আছে।
ঃ না প্রমাণ নেই। তবে সুন্দরী হোক অসুন্দরী হোক সবারতো নাক আছে। এ কথা কি তোরা মানস?
আমরা বলি, হ্যা মানি। কিন্তু নাক থাকলেইতো নাকে ডাকবে না।
ঃ আমরা বলি না মেয়েটা এত সুন্দর শুধু চোখটাই ট্যারা। কিংবা আরেকটা দোষ দেখি। দোষগুলো সুন্দর অসুন্দর দেখে আসে না। ফরিদ যে মেয়েটাকে পছন্দ করে হয়ত সে মেয়েটাই ঘুমের সময় গোফওয়ালা লোকের মত জোরে জোরে নাক ডাকে।
এটা বলাতে ফরিদ দেখি মুখ কালো করে ফেলে। আমাদের ছেড়ে উঠে যেতে উদ্যত হয়। হাত ধরে বসাই আমি। হাসার জন্য বলি- আমরা সবাই নাক ডাকা মুক্ত ফ্যামিলি গড়বো। পাত্রী দেখতে গেলে আমাদের সামনে পাত্রীকে ঘুমাতে বলব নাক ডাকে কিনা পরীক্ষা করার জন্য।
না ফরিদের চেহারার কোন পরিবর্তন হয় না। মেয়েটাকে বোধ হয় বেশি ভালবাসে। এজন্য মানিকের কথা খুব লেগেছে।
জাকির বলে, ঠিক আছে তদন্ত হোক। মেয়েটা ঘুমন্ত অবস্থায় আমরা সরেজমিনে দেখে আসব নাক ডাকে কি ডাকে না।
আমরা সবাই হৈ হৈ করে উঠি। এটাই সঠিক সিদ্বান্ত। সিদ্বান্ত নেওয়ার পর কয়দিন পার হয়ে গেছে। কিন্তু আমাদের কারো সাহস হয় না একজন ঘুমন্ত কিশোরীকে চুপি চুপি লুকিয়ে দেখে আসার। মফস্বলের ছেলে হিসাবে এতটুকু যেতে পারি না। বিবেকে বাঁধে। কিন্তু এই বাধাটাইতো আমাদের সম্বল।