সোমবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১২

ইচ্ছা (গল্প)

ওরা দুজন। শুধু দুই জন। বিশাল মাঠ কেউ নেই। থাকবেই বা কি করে? যে বৃষ্টি হচ্ছে তাতে কারো থাকারই কথা না। কয়েকজন আসছিলেন। আকাশের অবস্থা খারাপ দেখে সবাই চলে গেছে। ওরাই শুধু যায় নি। আকাশে বিজলি চমকাচ্ছে বড় বড়। মেঘের গর্জনে চারদিক প্রকম্পিত। মনে হচ্ছে বড় বড় বোমা ফুটছে। বৃষ্টির মধ্যে বোমা ফুটলে তা বেশি কার্যকর হওয়ার সুযোগ নেই এটাই ভরসা। পত্রিকায় এখন প্রায়ই সময়ই বাজ পড়ে মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। যেভাবে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে যেকোন সময় অঘটন ঘটে যেতে পারে। সেদিকে যেন নজর নেই ওদের। আনন্দে যে দুজনে মিলে বৃষ্টিতে ভিজছে সেটাও না। বরং দুজনের মন ই বিক্ষিপ্ত। সুন্দর বৃষ্টিও সেটা গুছিয়ে দিতে পারে নি। .......


প্রকৃতি অনেক সময় অসহায় হয়ে পড়ে। তার হাজারো সৌন্দর্যতা দিয়েকখনো কখনো মানব হৃদয় জয় করতে পারে না। এখন সে অবস্থা। আজকের পর থেকে এরকম দুজনে দেখা করা হবে না। হবে না এই পরিচয়ে একজনের সাথে অন্যজনের আলাপন। পরিচয় বদলে যাবে। অবিবাহিত মুন্নীর জায়গায় হবে বিবাহিত মুন্নী।

সাহসী হওয়া যেত। কিন্তু বাবার হার্টে সমস্যা আছে। বাবার কারণে সাহসী হতে পারছে না। নিজের লোভের কারণে বাবার কিছু হয়ে যাবে তা মেনে নিতে পারবে না মুন্নী। নিজে কষ্ট বরণ করে নিবে। হোক না তা আজীবন কষ্টের সূচনা।

আহাদ কথা বলছে না। মুন্নী এক কথার মেয়ে। যা বলবে তাই করে। বেশি জোরাজুরিও করা যাচ্ছে না। আবার আত্মহত্যার মত কিছু করে বসলে। দুইদিক থেকে চাপ সহ্য করা কঠিন। মানুষের সহ্য ক্ষমতারও তো একটা সীমা আছে।

আবার গর্জন শুনা যায়। মেঘের গর্জন। অন্য সময় হলে হাত ধরতে চাইত আহাদ। এখন আর ধরার কথা বলে না। যেদিন থেকে বিয়ের ব্যাপারটা জানল সেদিন থেকেই।
মুন্নী বলে,তুমি আমার হাতটা ধরো।
আহাদ ইতস্তত করে।

-কি আশ্চর্য! চিন্তা করেছো? আগে আমি হাত ধরতে দিতে চাইতাম না তারপরও হাত ধরার জন্য তোমার কি আকুতি থাকত। আর এখন আমি হাত ধরতে বলছি। অথচ তুমি সাহস করছো না। একটা সিদ্ধান্ত সব কিছু কিভাবে বদলে দেয় দেখছো? চেনা মানুষও কেমন অচেনা হয়ে যায়।

মুন্নীর কথাগুলো শুনে, আহাদ হাত বাড়িয়ে দেয়।

তা দেখে মুন্নী বলে, হাত ধরতে হবে না। অনিচ্ছা স্বত্বে কেউ আমার হাত ধরবে আমি তা চাই না। আর আমি তো অন্য জনের হতে যাচ্ছি। তুমি আমার হাত ধরবে কেন? তুমি তো তোমার বউয়ের হাত ধরবে।

কথাগুলো বলতে গিয়ে সব দুঃখ যেন গলায় উগলে উঠে। চোখের পানিতে ভরে যায় মুখ। একদিকে চোখের পানির উষ্ণতা অন্য দিকে বৃষ্টির পানির শীতলতা।

আহাদ বলে, মন খারাপ করো না। সব ঠিক হয়ে যাবে। তোমার হাসবেন্ড তোমাকে অনেক পছন্দ করবে। অনেক ভালবাসবে। অনেক সুন্দর হবে তোমাদের জীবন।

আমি জানি আমাকে অনেক পছন্দ করবে। আমি কি অপছন্দ হওয়ার মত মেয়ে নাকি? তবে মন থেকে পছন্দ করতে পারবো না তাকে এটা নিয়েই ভাবছি।

প্রিয় মানুষকে হারানোর বেদনা কত দুঃসহ যন্ত্রণার সৃষ্টি করেছে তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে আহাদ। প্রাণবন্ত আড্ডা হবে না আর মুন্নীর সাথে। কোন গল্প পড়ে কিভাবে কেঁদেছে তা আর কখনো শুনাবে না। সব শুনাবে অন্য এক মানুষকে। যাকে কক্ষনো দেখেনি। অনেক বেশি বই পছন্দ মুন্নীর। বই পেলেই হয়। সেটা পড়তেই হবে। আর যারা বই পড়ে তাদের মন অনেক ভাল হয়। মুন্নীর মন ও অনেক ভাল।

বৃষ্টি কমার লক্ষণ দেখা যায় না।

আহাদ বলে, তুমি বাসায় চলে যাও। এত বৃষ্টিতে ভিজছো যে তোমার ঠান্ডা লাগবে। সামনের সপ্তাহেই বিয়ে। এ সময়ে ঠান্ডা লাগানো ঠিক না।

মুন্নী কিছু বলে না। ওর ইচ্ছা হয় সারাজীবন এভাবে এখানে বসে থাকতে।
ওর বসার ধরণ দেখে মনে হয় ও সারাজীবন এখানেই বসে থাকবে।