সুমন একটু বিরক্ত। একটু না বলে বেশিই বলা যায়। সামনে ভালোবাসা দিবস। এই
দিবসে নতুন একটা রীতি চালু হয়েছে প্রিয় মানুষকে গিফট দেওয়া। দামি জিনিষটি
বাহারি ডিজাইনে রেকিঙ পেপারে মুড়ে গিফট তার সাথে একটা দামি কার্ড। ..........
কম দামি জিনিষ যে দেবে তারও উপায় নেই। কমদামী জিনিষ দিলে নাকি মনে করা হয় ভালোবাসা কম। কম ভালবাসে এজন্য কমদামী জিনিষ দিয়েছে। এ সূত্র সোহেলের। সে নাকি তার বান্ধবীকে একটা কলম দানি দিয়েছিল ভালোবাসা দিবস উপলক্ষ্যে। বান্ধবী তা পেয়ে বেশ খুশী। অনেক অনেক ধন্যবাদ জানালো। বার বার বলল জিনিষটি বেশ পছন্দ হয়েছে। অনেক ক্ষণ গল্প করে বাসায় ফিরে গেল। পরের দিন বিশেষ সূত্রে সোহেল জানতে পারল, তার দেওয়া কলমদানিটি আছাড় মেরে ভেঙে ফেলা হয়েছে। আগের দিন যে জিনিষটার এত প্রশংসা করল সে জিনিষটা এভাবে ভাঙার কারণ কি? বান্ধবীটির নাম মৌরি। কারণ হিসাবে যা জানল তাতে হতবাক হয়ে গেল সোহেল। ওর দেওয়া জিনিষটি খুশীমনে ওর বান্ধবীদের দেখালো। ওর বান্ধবীরা তা দেখে তাচ্ছিল্য করল। এত্ত বড় একটা দিবসে এই সামান্য গিফট!!! নিজেরা কি কি গিফট পেয়েছে সব দেখাল। দামি দামি পারফিউম, দামি ডায়েরী, আরো বিভিন্ন শোপিস, একজনতো একটা ল্যাপটপ পর্যন্ত পেয়েছে। ওদের একজন বিজ্ঞের মত গম্ভীর গলায় বলে বসল, তোকে কম ভালোবাসে বিধায় এই অল্প দামের জিনিষ দিয়েছে। তুই বোকা বিধায় এটা বুঝছিস না। ভালোবাসা দিবস কি বছরে বারে বারে আসে। একবারই তো আসে। এই একটা দিনে এত কম দামী জিনিষ দেবে!! ওদের কথায় রাগান্বিত হয়ে ওদের সামনেই কলমদানিটা ভেঙে ফেলেছে মৌরি। এসব কথাগুলো সোহেল জেনেছে ওদের বাসার কাজের মেয়ের থেকে।
সুমন যাকে পছন্দ করে তার নাম শ্রেয়া। অনেক ভাল। তারপর ও সুমনের আফছোস লাগছে। কি দরকার ছিল বড়লোকের মেয়ের সাথে সম্পর্ক গড়তে যাওয়ার। এবারের ভালোবাসা দিবসে ভালো উপহার দেওয়ার জন্য বেশ কিছু টাকা জমিয়েছিল ও। কিন্তু ভালোবাসা দিবসের ২০ দিন আগে শুনে মৌরির জন্মদিন। জন্ম দিনে যেতেই হবে। কি মুসিবত!! জন্মদিন হওয়ার আর সময় পেল না। সুমনকে কারণে অকারণে শ্রেয়া অনেক গিফট দেয়। সুমন সবসময় আপত্তি করে। এত না নিতে চায় তারপরও দেয়। নিতে না চাইলে অভিমানে গাল ফুলিয়ে রাখে। কথা বলা বন্ধ করে দেয়। জমানো টাকাগুলো নিয়ে সাথে আরো কিছু টাকা ধার করে মৌরির জন্মদিনে একটা গিফট দেয়। আরেকটু কম দামে দেওয়া যেত। কিন্তু ওর জন্মদিনে অনেকে ভালো ভালো গিফট দিবে সেগুলোর সাথে প্রিয় জনের কমদামী গিফট দেখলে কি ভাববে এটা ভেবে দামী গিফটই দেয় সুমন। হাতে এখন তেমন টাকা নেই।
কি করবে বুঝতে পারে না সুমন। দুইদিন পরই ভালোবাসা দিবস। ভালোবাসা দিবসে শ্রেয়া অনেক দামী গিফট দেবে এটা নিশ্চিত। বিনিময়ে ওকেও তো কিছু দিতে হবে। কিন্তু কি দেবে? যদি বলে নিজের হাত কেটে রক্ত দিয়ে ভালোবাসা লিখতে তা করে দিতে পারবে। কিন্তু এখন যে ভালো গিফট কিনা সম্ভব না। টাকা পাবে কই। সুমনের মাথায় কিছু ঢুকে না। শ্রেয়া অনেক সরল মনের। এত্ত বড়লোকের মেয়ে তারপরও এতটুকু অহংকার দেখায় না।
বিকালের দিকে ব্যাপারটা নিয়ে সুমন কথা বলে কাদেরের সাথে। কাদের সুমনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। দোস্ত তুই ধার করে একটা ভালো গিফট দিতে পারোস, কিন্তু তুই ধার শোধ করবি কিভাবে?
: সেটাই তো আমারো চিন্তা। কিছুই মাথায় ঢুকছে না।
: দোস্ত এক কাজ কর, তুই একদিন আগে গ্রামের বাড়ী চলে যা, জানি তোর খারাপ লাগবে। এরকম একটা দিনে শ্রেয়াকে ছেড়ে দূরে থাকতে মন চাইবে না। তারপরও এটা ছাড়া আর কোন উপায় দেখছি না। নিজের মান সম্মান ঠিক রাখতে হবে আগে। নিজেকে কখনো ছোট করবি না।
অনেক ভাবনার পর কাদেরের পরামর্শ মত সুমন ভালোবাসা দিবসের আগের দিন শ্রেয়ার মোবাইলে একটা এসএমএস পাঠায়, একটা সমস্যার কারণে আমাকে জরূরী বাড়ীতে যেতে হচ্ছে। মোবাইলে চার্জ নাই, এজন্য কথা বলতে পারছি না।
ভাগ্য ভাল গ্রামের বাড়ীতে কারেন্ট নেই। তাই সেখানে মোবাইল ব্যবহার করা যায় না এটা জানে শ্রেয়া। যদি মোবাইল চালু থাকতো তবে সব বলতে হতো।
এদিকে শ্রেয়া বার বার কল দেয় সুমনের মোবাইলে। সুমন বলছে চার্জ নেই। মোবাইলে কথা বলতে পারছে না। তারপরও শ্রেয়া চেস্টা করেই যায়। ইশ একটু যদি চার্জ হয়ে যেত নিজে নিজে। কাল সুমনকে নিয়ে অনেক পরিকল্পনা শ্রেয়ার। অনেক জায়গায় ঘুরবে। সারাদিন গল্প করবে। ওর বান্ধবীরা প্রিয়জন নিয়ে ঘুরবে আর ও প্রিয়জনকে পাশে পাবে না?? কান্না আসতে চায় শ্রেয়ার।
এদিকে সুমন গ্রামের বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা দেয় লক্কর ঝক্কর মার্কা বাসে। এই বাসে যাওয়ার খরচ কম। ওর পাশের সিটে বসা লোকটি মধ্যবয়স্ক। যথেষ্ট অপরিচ্ছন্ন। জামা কাপড়ে অনেক ময়লা। হয়ত অনেক দিন গোসল হয় নি এই লোকের।
সুমন দীর্ঘশ্বাস ফেলে। উপহারের ক্ষেত্রে কেন প্রতিযোগিতা সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে!! এটা চিন্তা করে সুমনের দীর্ঘশ্বাস দীর্ঘতর হয়। চোখ বন্ধ করে ঘুমাতে চেষ্টা করে। না পারে না। সামান্য উপহারের কারণে তাকে পালাতে হচ্ছে শহর থেকে।