রবিবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১২

চোখ

আবীর চেয়ারে বসে আছে। বসে বসে ঝিমানো যায়। কিন্তু বসার মধ্যে ওর ঝিমানো পায় না। কোন রোগী নেই। তাই অলস বসে থাকা। আবীরের কাজ হচ্ছে এক্সরে করা। ও এক্সরে রুমের ইনচার্জ। বড় মেশিনটার সামনে রোগীকে বসিয়ে দেয়।..............

তারপর ও অন্য রুমে এসে সুইচ টিপ দেয়। এক্সরে রশ্মি দিয়ে শরীরের ভিতরের অংশের ছবি তোলা হয়ে যায়।

অনেকে এক্সরে রুমে এসে এতবড় মেশিন দেখে ভয় পেয়ে যায়। এক্সরে রুম যেহেতু বিপদজনক সেহেতু রোগীর সাথে অন্য কেউ ঢোকা নিষেধ। এক্সরে করতে গিয়ে কেউ কেউ ভয়ে কাঁপে। অতি ক্ষুদ্র সময়ের জন্য রশ্মি বিকরিত হয়ে ছবি তোলে। এখন কাউকে এক্সরে করাতে গিয়ে যদি রশ্মি বিকিরণ যদি আর বন্ধ না হয় তবে কি হবে? লোকটাতো জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। মাঝে মাঝে ভাবে আবীর। এ এক্সরে আবিষ্কারের পিছেও মজার কাহিনী আছে। রন্টজেন ভুলে দুইবার রশ্মি ফেলায় এক্সরে আবিষ্কারের ব্যাপারটা মাথায় আসে। আসলে পৃথিবীতে বেশিরভাগ ভাল ভাল আবিষ্কারই ভুলের ফল। ঝড়ে বকের মত অবস্থা আরকি?

বেশ কয়েক বছর ধরে আবীর এক্সরে রুমে কাজ করে। ও একটা ব্যাপার খেয়াল করেছে বর্ষাকালে মানুষ এক্সরে করার জন্য বেশি আসে। হাত-পা বেশি ভাঙে এ সময়টায়। বর্ষা পার হয়েছে। রোগীর আনাগোণাও কমে যায়। আবীরকে অলস বসে থাকতে হয়। বসে থাকা আবীরের কোন সমস্যা না। বসে থাকতে ভালোই লাগে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বসে থাকা সামিরা পছন্দ করে না। বাসায় প্রায় সময় এ বিষয়ে কথা বলে।

: তুমি খেয়াল করেছো তোমার পেটে কি পরিমাণ চর্বি জমেছে? সারাদিন বসে থাকো। পেটে চর্বি না জমে কি হবে?
: আমি সারাদিন বসে থাকি এ তথ্য তোমাকে দিল কে? আমার বুঝি কাজ নেই।
: ঢেড় কাজ আছে! আমি যতবার তোমার রুমের সামনে দিয়ে যাই ততবার দেখি তুমি বসে আছো।

সামিরাও একই হাসপাতালে কাজ করে। নার্স। দোতলায় ওয়ার্ডে ওর দায়িত্ব। বিভিন্ন প্রয়োজনে ওকে নিচে নামতে হয়। নিচে যাওয়ার সময় এক্সরে রুম উঁকি দিয়ে দেখে যায়।

হাসপাতালে আবীরের সাথে দেখা হলেও সামিরা কোন কথা বলে না। আবীর কথা বলতে চেষ্টা করে। কিন্তু সামিরা শুনেনি ভান করে চলে যায়।

রাতে মশারী টাঙাতে টাঙাতে আবীর একদিন জিজ্ঞেস করে, আচ্ছা সামিরা তুমি আমার সাথে হাসপাতালে কথা বলো না কেন? ওখানে দেখা হলে মনে হয় তুমি আমাকে চিনোই না।

সামিরা পত্রিকার নারী পাতাটা পড়ছিলো। সেটা ভাজ করে র‌্যাকের উপর রাখতে রাখতে বলে, তোমার সাথে কথা বলতে দেখলে অপরিচিতরা মনে করবে আমরা হাসপাতালে প্রেম করছি। ড্যাব ড্যাব চোখে ওরা তাকিয়ে থাকবে। চেষ্টা করবে রহস্য খোঁজার। আমরা সস্তা মার্কা প্রেম করছি তা মানুষরা ভাবুক এটা আমি চাই না।
: অন্যরা কি ভাববে তাই মনে করে আমার সাথে কথা বলবে না? আশ্চর্য ব্যাপারতো।
হাই তুলতে তুলতে সামিরা বলে, এখন কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। ঘুম পাচ্ছে।

আবীর কথা বলে না। সামিরার মুখের দিকে তাকায়। ঠিক মুখের দিকে না। ওর চোখের দিকে। ওর চোখগুলো অদ্ভুত রকমের সুন্দর। হাই তোলার সময় চোখগুলো ছোট হয়ে আসছে। আবার হাই বন্ধ হলে চোখগুলো বড় হয়েছে।

সেদিকে খেয়াল করে সামিরা বলে, তুমি জান আমাদের বিয়ের পর সবচেয়ে বেশি কি কাজে তুমি সময় ব্যয় করেছো?
আবীর বলল, না জানি না।
: এই আমার চোখ দেখে। আমার চোখের দিকে তুমি প্রায় সময় তাকিয়ে থাকো। জীবনের বহু গুরুত্বপূর্ণ সময় তুমি আমার চোখ দেখে নষ্ট করছো?
: সুন্দর হলে তাকাবো না? আর নষ্ট বলছো কেন? আমার ভাল লাগে।
: নাহ, তুমি আমার চোখের দিকে তাকাবা না। আমার চোখ কি টিভির পর্দা নাকি এভাবে তাকিয়ে থাকতে হবে।
: টিভির পর্দায় কি সব দেখায় কোন আগামাথা আছে নাকি? তোমার চোখে আমি বিশ্ব খুঁজে পায়। প্রকৃতির গভীরতম সৌন্দর্য দেখে আমি কখন আবির্ভূত হই জানো?
: না বললে জানবো কেমনে? সামিরা বলে।
: যখন তোমার চোখ দেখি তখন মনে হয় আমি পৃথিবীর সেরা সৌন্দর্য দেখছি। তোমার চোখ দুটি এত সুন্দর কেন তুমি বলতে পার। অনেকে পার্লারে যায় ভ্রু প্লাগ করতে, চোখে মশকরা লাগায় আরো কি কি দেয়। তুমিতো সেগুলো কিছুই করো না তারপরও তোমার চোখে এত সুন্দর কেন?

কথা শুনে সামিরার তলপেটে সূক্ষ্ণ ব্যথা বয়ে যায়। এ ব্যথা আনন্দের। সামিরার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে, আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী।

সামিরা আর আবীরের বিয়ে হয়েছে নয় মাস হয়েছে। নিজেদের পছন্দ করা বিয়ে নয়। পরিবার থেকেই ঠিক করা হয়েছে। তারপরও তাদের মধ্যে এত ভাল সম্পর্ক যে মনে হয় অনেক আগে থেকে তাদের মধ্যে বোঝাপড়া ছিল। মাঝে মাঝে সামিরা ভাবে, এত সুখ তার কপালে সইবে।
সপ্তাহে তিনদিন হাসপাতালে রাতে সামিরার উিউটি পড়ে। আবীরের তা পড়ে না। সামিরা সকাল বেলা ফিরলে দুইবার দরজা ধাক্কাতে হয় না। একবার টোকা দিলেই আবীর দরজা খুলে দেয়।
: আচ্ছা আবীর, তুমি এক ধাক্কাতে দরজা খুলে দাও কিভাবে? দরজার সামনে বসে থাকো তাই না।
: আমার ইয়ে আসবে আর আমি দরজার সামনে বসে থাকবো না এটা হয়।- চোখে ঘুমের ভান করে আবীর বলে।
: ইয়ে মানে কি?
: ইয়ে মানে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর চোখের অধিকারিনী, আমার বিশ্ব। আমি মাঝে মাঝে ভাবি। তুমি যখন থাকো না। রাতে আমার একা ঘুমাতে হয়। তখন অনেক ভাবি।
: কি ভাবো?
: ভাবি আমি আমার জীবনে এমন বড় পুণ্য কি করলাম যে তোমার মত ভাল একটা মেয়ে আমি পেয়েছি। আচ্ছা তুমি সবসময় এমন থাকবেতো।
বাথরুমে ঢুকে সামিরা।
কতবার মানা করা হয়েছে, তারপরও কথা শুনে না। আবীর নাস্তা বানিয়ে রাখে। রাতের ডিউটি শেষে সকালে আসে সামিরা প্রতিবারই গরম গরম নাস্তা পায়।
: এত ভোরে জেগে তোমার নাস্তা বানানো কি দরকার?
: আমার ভাল লাগে। তাই বানাই। তাছাড়া অন্যদিন তো তুমি বানাও। আমি বানালে এত আপত্তি করো কেন? আমার বানানো পরোটাগুলো ঠিকমত আকৃতি পায় না বিধায়। আর তোমাকে বললেও তো তুমি শিখাও না। আগে মনে করতাম রুটি গোল করা কি সহজ। বেললেই তা নিজে নিজে গোল হয়। এখন না বুঝি কত ঝামেলার।
কথাটা সত্য। আবীরের বানানো রুটিগুলো আকৃতি এঁকেবেঁকে। ঠিক গোল না। আগের চেয়ে আকৃতিতে কিছুটা ভাল হয়েছে।

প্রথমদিন ওর বানানো রুটি দেখেতো সামিরা হেসে উঠে। একদিকে ওকে না বলে সকালের নাস্তা তৈরি করে ফেলার চরম বিস্ময় তারউপর বাংলাদেশের মানচিত্রের মত রুটিগুলো দেখে ওর বিষম উঠে। বহু কষ্টে হাসি চেপে রাখার চেষ্টা করে। তারপরও মুখ দিয়ে কিছু হাসি বের হয়ে যায়। হাসি চেপে রাখা কতটা যে কষ্টের সেদিন সামিরা টের পায়।
ওর মুখে হাসি দেখে আবীর লজ্জা পায়।
ঃ আসলে অনেক চেষ্টা করেছি কোনমতে গোল আকৃতি করতে পারিনি।- পরীক্ষায় ভাল ছাত্র পরীক্ষায় খারাপ করলে যেরকম লজ্জা পেয়ে কথা বলে ঠিক সেরকমভাবে কথাটা বলে আবীর।
: না, না অনেক ভালো হয়েছে। আমার ভাল লাগছে।
রুটি মধ্যখানে ঠিকমত হলেও আশে পাশে কিছু কাঁচা রয়ে গেছে। সবদিকে সমান চাপ না দেওয়ায় এই আবস্থা। সেগুলোও অনেক ভাল লাগে সামিরার। যেখানে অন্যদিন তিনটা রুটি খায় সেখানে খুশিতে আধাকাঁচা পাঁচটি রুটি খেয়ে ফেলে।
: তুমি আমাকে রুটির আকার কিভাবে গোল করা হয় তা শিখাবে। এটা বলেই পাকঘর থেকে রুটি বেলার পিড়া আর রুলারটা আনতে যায় আবীর।
সেগুলো এনে মেঝেতে রাখে।
: এবার বলো কিভাবে রুটি বেলে গোল করব।
: বলব না।
: কেন? আবীর খানিকটা অবাক হয়।
: তোমার বানানো রুটি আমার অনেক ভাল লাগছে। গোল হওয়ার দরকার নেই। এরকম হলেই বরং আমি বেশি খেতে পারবো। দেখো না আজ দুইটা বেশি খেয়ে ফেলছি।

সামিরার মাঝে মাঝে ভাবনা আসে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে চোখের পরিবর্তন হয়? ভাবনা দেখে নিজেই বিরক্ত হয়। পরিবর্তন হবে না কেন? বয়স বাড়লে চুল পাকবে। চুলের মত ভ্রু গুলোও পাকবে। মুখের অন্যান্য মাংসপেশী সংকুচিত হওয়ার পাশাপাশি চোখের নিচের অংশও সংকুচিত হবে। তখন নিশ্চয় চোখের সৌন্দর্য আর থাকবে না। এখনের সময়টা সামিরার কাছে শ্রেষ্ঠ্য সময় মনে হয়। ইশ এ সময়টাকে যদি বেঁধে রাখা যেত। মানুষকে কেন বৃদ্ধ হতে হবে?

দুপুরে আবীর ঘরে ফিরে। ভাত খাওয়ার জন্য টেবিলে বসে। খাওয়ার সময় সামিরা সামনা সামনি বসে না। পাশে বসে। সামনা সামনি বসলে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে আবীর ঠিকমত খানা খায় না।
: আচ্ছা সামিরা, হাসপাতালে ডিউটি দেওয়ার সময় তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে রোগীরা প্রেমে পড়ে যায় না?
: প্রেমে পড়বে কেন? আমিতো মহিলা ওয়ার্ডে কাজ করি।
: মহিলাদের আত্মীয়রা যারা আসেন তারাতো পুরুষ। তারা নিশ্চয় পড়েন।
: তা জানি না। তবে পড়লে আমি কি করবো?
: একটা কাজ করলে হয় না। তুমি ডিউটি দেওয়ার সময় সানগ্লাস দিয়ে থাকবে।
তা শুনে সামিরা হেসে ফেলে।
: হাসছো যে।
: তোমার ছেলেমানুষী দেখে। আমি রুমের ভিতরে সানগ্লাস পড়ে থাকি। আর তা দেখে সবাই হাসাহাসি করুক। আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করলে তোমার ভাল লাগবে?

আবীর লবণের কোটা থেকে এক চিমটি লবণ নেয়। কাঁচা লবণ ছাড়া ও ভাত খেতে পারে না।
: তবে আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তুমি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে ঠিকমত খানা খাও না। এজন্য আজই সানগ্লাস কিনব। এখন থেকে তোমার খানার সময় আমি সানগ্লাস পড়ে থাকবো। যাতে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে না থাকো।
: সর্বনাশ। বুদ্ধি দিলাম কি। আর উল্টা দেখি আমাকেই ঘায়েল করছে। তুমি সানগ্লাস পড়ে থাকলেতো আমি এক্কেবারেই খাবো না।
: ঠিক আছে আমি সানগ্লাস পড়ছি না। এখন দয়া করে খাও।
: খাচ্ছি। তার আগে বলো তুমি তোমার চোখে এত মেঘ ধরে রেখেছো কিভাবে?

: আমি আমার চোখে মেঘ রাখতে যাবো কেন? আমি সূর্য নাকি যে পানি বাষ্পকারে আমার চোখের মধ্যে জমা রাখছি। আশ্চর্য ব্যাপারতো। আর বাষ্প করতে গেলেতো অনেক গরম হতে হয়। আমার চোখ গরম নাকি।
এটা বলে নিজের চোখে হাত রাখে সামিরা। কি ঠান্ডা। আর বলে কিনা আমি মেঘ জমা রাখছি।
: আরে আমি সেটা বলছি নাকি। তোমার চোখগুলো অনেক ভাসাভাসা। তুমি যখন চোখের পলক ফেল তোমাকে আমার এত ব্যক্তিত্ববান মনে হয়। তখন কথা বলতে ভয় করে। আমার মনে হয় তুমি অনেক চিন্তা চেতনার পর তোমার চোখের পলক ফেল। রাতে যখন তুমি ঘুমিয়ে থাকো তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে তোমার পলক ফেলা ভাবি আমি।

দুজনে একসাথে ছুটি পায় না। অনেকদিন পর পর এ সুযোগ আসে। দুজনে একই সাথে ছুটি পেলে সেদিন ওরা বাইরে খাওয়ার চেষ্টা করে। মার্কেটে মার্কেটে ঘুরে এটা ঐইটা খুঁজে। পছন্দ হলে কিনে ফেলে। ভবিষ্যতের জন্য টাকা জমানোর ক্ষেত্রে আবীরের মস্ত আপত্তি। যেটা পছন্দ হয় সেটা যত দামিই হোক কিনে ফেলে।
বাইশদিন পর দুজনে ছুটি পেয়েছে। বিকালের দিকে ওরা বের হয়। মার্কেটে মার্কেটে ঘুরে অনেক কিছুই কিনে। একটা সানগ্লাসও কিনে।
কেনার সময় প্রথমে মানা করে আবীর।
: তুমি সানগ্লাস কেন কিনছো? আমি খাওয়ার সময় যাতে তোমার চোখের দিকে না তাকাতে পারি এজন্য? সানগ্লাস কেনার দরকার নেই।
: আরে নাহ।
: আমি কিন্তু তখন একটুও খাবো না।
: আরে বাবা, আমি বাসায় সানগ্লাস পড়বো না। বাইরে প্রয়োজন হলে পড়বো।
: তাহলে কিনতে পারো।
শপিং করতে করতে রাত হয়ে যায়। ওরা একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকে রাতের খাবার সেরে নেয়।

কয়েকজন রিকসাঅলাকে যাবে নাকি জিজ্ঞেস করে। কেউ যাবে বলে না। রাতের বেলা রিকসা জমা দেওয়ার সময় হয়ে গেছে। আর তাছাড়া ঐখানে গেলে ফিরতি ভাড়া পাওয়া যাবে না। এজন্য কেউ যেতে রাজি নয়।

কেউ যেতে রাজি হচ্ছে না দেখে আবীর বলে, চলো হেঁটে হেঁটে যায়। অনেক ভাল লাগবে।

সামিরারও হাঁটতে ইচ্ছে করছে। হেঁটে গেলে মজা হত। কিন্তু এতগুলো প্যাকেট আবীরের হাতে নিয়ে হাটতে হবে দেখে ও বলল, পাগল হয়েছো। এই রাত্রে হাঁটার কোন ইচ্ছে নেই।

আরো কয়েক রিকসাওলার পর পরিশেষে একজনকে পাওয়া গেল। বৃদ্ধ রিকসাঅলা। দ্বিগুণ ভাড়া। রিকসা চলছে। রাস্তায় গাড়ি ঘোড়া কম। খুব সুন্দর বাতাস। বাতাসে চুল উড়ছে। সামিরা অবাধ্য চুলগুলো বাতাসে উড়ে আবীরের মুখে আছড়ে পড়ছে।

হঠাৎ করে একটা বড় ট্রাক পেছন থেকে পোঁ পোঁ বাজাতে আসে।

রিকসাঅলা সাইড করতে চায়। কিন্তু পাশে জায়গা নেই। আবীর আর সামিরার বুক ধক করে উঠে। ট্রাকটা তীব্র গতিতে এক্কেবারে পাশ দিয়ে চলে যায়। একটুর জন্য রক্ষা পায় ওরা।

: চাচা, আরেকটু সাবধানে চালান।
বাতাস বইছে। বাতাসে চুলের পাশাপাশি ওড়নাও উড়ছে। গল্প করতে করতে কখন যে বাতাসে ওড়নার একটা বড় অংশ নিচের দিকে পড়ে গেছে তা কারো খেয়াল নেই। ওড়নাটা চাকার সাথে গিট খেয়ে যায়। রিকসা চলছে। রাস্তা ফাঁকা পেয়ে রিকসার গতি বাড়ে। হঠাৎ কিছু বুঝার আগেই সামিরা নিচে পড়ে যায়। চাকার শিকের সাথে ওড়না বেজে যাওয়ায় তার টানে নিচে পড়ে যায়। ওর পড়ার সাথে সাথে রিকসাও উল্টিয়ে পড়ে। আবীর লাফ দেয়। বৃদ্ধ রিকসাওয়ালাও ব্যথা পান।

সামিরার চোখ জ্বলে। একটা রিকসার শিক ওর বাম চোখে ঢুকে গেছে। ও অজ্ঞান হয়ে যায়।
দীর্ঘ পাঁচ মাস চিকিৎসার পর ও বাসায় ফিরে। বাম চোখটা পুরো পুরো নষ্ট হয়ে গেছে। এখনো ব্যান্ডেজ লাগানো।
সামির, আবিরকে বলে, তুমি আর আমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকবে না। তাই না। তোমার তাকাতে হবে না। ঐ সানগ্লাসটাতো ভাঙেনি। ঐইটা সবসময় পরে থাকবো আমি।
আবির কেঁদে উঠে। বাচ্চার মত কান্না। কান্না আর থামেই না। অবিরাম সে কান্না কতক্ষণ চলেছিল তা ঘড়ি ছাড়া কেউ বলতে পারে না।