সাবিহা সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। টেনশনে ভুগছে। ওর একটা পদোন্নতি হয়েছে।
এত বড় দায়িত্ব সামলাতে পারবে? সেটা গ্রহণ করবে কিনা বুঝতে পারছে না। ওর হাত
চুলকাচ্ছে। কোন বিষয়ে টেনশন করলেই হাত চুলকায়। ভীষণ সে চুলকানি। ডাক্তার
দেখিয়েছে অনেক। লাভ হয় নাই। ডাক্তাররা বলছেন এটা এলার্জি। যে কারণে এই
এলার্জি হচ্ছে সেটা বন্ধ না করলে এটা হবে না। বেশ কিছু খাবারের উপর পরীক্ষা
করা হয়েছে। কিন্তু কোনটার কারণেই এই সমস্যা হচ্ছে না। সাবিহা খেয়াল করেছে
টেনশন করলেই এই চুলকানি শুরু হয়। চেষ্টা করে টেনশন না করতে। কিন্তু এখন
টেনশন না করে পারছেন না। ............
নখ দিয়ে চুলকালে দাগ হয়ে যাবে দেখে চুল দিয়ে চুলকাচ্ছে। পদোন্নতি হলে বেতন বাড়বে ২৫ হাজার টাকার মত। বাড়তি সুবিধা পাওয়া যাবে অনেক। অফিসের বাসে যাওয়া আসা করে এখন। পদোন্নতি হলে অফিস থেকে প্রাইভেট কার পাওয়া যাবে।
পদোন্নতির ব্যাপারটা ঠিক বিশ্বাস করে নি। গত সপ্তাহে সেকশন ম্যানেজার সালেক সাহেব বললেন, আপনার জন্য তো সুখবর আছে?
বুঝতে পারে না সাবিহা। “ স্যার, কি সুখবর”
আগে মিস্টি খাওয়ান। হাসতে হাসতে বলে সালেক সাহেব। আপনার পদোন্নতির ব্যাপারে জোর আলোচনা চলছে। আশা করা যাচ্ছে হয়ে যাবে।
তখনো ঠিক বিশ্বাস করতে পারে না সাবিহা। ফাইলটার দিকে নজর বুলায়।
সালেক সাহেব বিশ্বাস না হওয়ার ব্যাপারটা বুঝতে পারেন। বলেন, এখন বিশ্বাস হচ্ছে না, তাই না। সামনের মাসেই পেয়ে যাবেন। তখন তো আপনাকেও আমার ম্যাডাম ডাকতে হবে।
-স্যার কি যে বলেন?
-সত্যি বলছি। একসাথে এত বড় পদোন্নতি খুব সহজে হয় না। আপনার ক্ষেত্রে হয়েছে। আপনাকে অভিনন্দন।
ধন্যবাদ জানিয়ে চলে আসছিলো সাবিহা।
কিছুক্ষণ আগে কুরিয়ার সার্ভিসে একটা চিঠি আসে অফিস থেকে। আজ সে অফিস করছে। অফিসেই দিতে পারত। তা না দিয়ে বাসায় পাঠালো কেন বুঝতে পারে না। চিঠিটা হচ্ছে নতুন পদোন্নতি সংক্রান্ত। তাকে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে বর্তমান দায়িত্বের সব কিছু বুঝিয়ে দিয়ে নতুন দায়িত্ব নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।
বাসায় ইমতিয়াজ নেই। ওর হাজবেন্ড। অথচ জানাতে ইচ্ছা করছে। মোবাইলে জানানো যায়। না থাক। তার চেয়ে বাসায় আসলে সারপ্রাইজ দেওয়া যাবে। সাবিহা দেখে তার ছেলে শিহাব গাড়ি নিয়ে খেলছে। এই ছেলেটার জন্য দুঃখ লাগে। অফিসে চলে যেতে হয় বিধায় সারাদিন কাছে পায় না। কাজের মেয়ের কাছে থাকে।
শিহাবকে কোলে নিয়ে তার মুখে চোখে চুমু খায় সাবিহা। কি সুন্দর ফুটফুটে মুখ। “আম্মু আজ আমার জন্য নতুন গাড়ি আনার কথা ছিল আনো নি কেন?”
-ওহ তাইতো। এক্কেবারে ভুলে গিয়েছিলাম।
-তাহলে আব্বুকে বলে দাও, আব্বু আনুক।
-নাহ আমি এখুনি এনে দিচ্ছি। আসো রেডি করে দিই তোমাকে। বের হবো। সুন্দর গাড়ি কিনে দেবো।
মা ছেলে বের হয়। রিকসা নেয়। শিহাবকে কোলে নিতে চায়। কিন্তু শিহাব কোলে আসে না। “আমি আলাদা বসবো। কোলে বসব না।”
-ঠিক আছে বাবা বসো।
পাশে বসায়। শক্ত করে ধরে রাখে।
- মা এভাবে ধরে রাখছো কেন? আমাকে ছাড়ো।
- বাবা ছাড়লে পড়ে যাবা তো। ঠিক আছে আস্তে ধরছি।
সাবিহার ভাল লাগে। এই পদোন্নতিতে অফিস থেকে গাড়ী পাবে। সে গাড়ি নিয়ে ঘুরতে পারবে। শিহাবকে ছোট ছোট গাড়ি কিনে দেয়। এখন বড় গাড়িও হবে।
-আচ্ছা বাবা অফিস থেকে ফোন করলে তুমি কথা বলো না কেন আমার সাথে?
- তুমি আমাকে রেখে অফিসে চলে যাও। এজন্য কথা বলি না।
সাবিহার খারাপ লাগে। শিহাবকে রেখে যেতে অনেক কষ্ট হয়। কিন্তু ভবিষ্যত সুন্দর করার জন্য যে চাকরিটা খুব দরকার। শিহাবের ভবিষ্যত সুন্দর করার জন্যই তো এত কিছু করা।
-রোজি তোমাকে আদর করে না?
- হা করে।
এসময় একটা ল্যাংড়া আসে ভিক্ষা চাইতে। ব্যাগ খুলে একটা পঞ্চাশ টাকার নোট বের করে দেয় সাবিহা। পদোন্নতি হওয়ার চিঠিটা পেয়ে চিন্তা করছিল ফকিরকে কিছু টাকা সদকা দিবে।
আচ্ছা আম্মু, এই ভিক্ষুকের পা ভাঙল কিভাবে?
-দুষ্টামি করেছে তো, এজন্য পা ভেঙেছে।
শুনে শিহাব বলে, মা আমি কক্ষনো দুষ্টামি করবো না।
মায়া লাগে সাবিহার। জড়িয়ে ধরেন শিহাবকে। এবার শিহাব কিছু বলে না। এসময় একটা ট্রাক অনেক জোরে পাশ দিয়ে ছুটে যায়। রিকসা ওলা কড়া ব্রেক কষে রিকসা থামানোর চেষ্টা করেন। রিকসা জোরে চলছিল। ঠিক থামতে চায় না। হঠাৎ ব্রেক ধরায় রিকসা উল্টিয়ে পড়তে চায়। উল্টাতে গিয়ে পরে আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে। আরেকটু হলে ট্রাকের নিচে চলে যেত। আচ্ছা শিহাব যদি কোলে না থাকত তাহলে পড়ে যেতে পারত। ভাগ্যিস কোলে নিয়েছিলেন। আল্লাহর কাছে শোকরিয়া আদায় করে সাবিহা।
কি অবস্থা হতো ভয়ে শিউরে উঠে সাবিহা। শিহাবও অনেক ভয় পায়। রিকসা অলা ট্রাক চালকের উদ্দেশ্যে গালি দেয়, হারামজাদা ট্্রাক ড্রাইভার। দেইখ্যা শুইন্যা চালায় না। মনে করে হগল রাস্তা হের বাপ দাদা চৌদ্দ গুষ্টির।
তিনটি গাড়ি কিনে দেয় শিহাবকে। শিহাব অনেক খুশি। রিকসায় ভয় পাওয়ার কথা মনে থাকে না। নতুন গাড়িগুলো নিয়ে খেলতে থাকে। সাবিহা ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু পারে না। বার বার মনে হয় যদি ট্রাকটার নিচে রিকসাটা পড়ত তাহলে কি হতো? নিজের জন্য চিন্তা করে না। তার সাথে যে শিহাব ছিল। এতটুকু বাচ্চার যে কি হতো?
শিহাবের সাথে খেলার চেষ্টা করে। সাবিহার মনে হয় ছোটদের মত হতে পারলে ভাল হতো। কি সহজে ভুলে গাড়ি নিয়ে খেলছে। ঐ সময় ভয় পাওয়ার কথা একটুও মনে নাই। মা খেলতে এসেছে দেখে অনেক খুশি শিহাব। মা আমি তোমার দিকে গাড়ি পাঠাবো। তুমি আমার দিকে পাঠাবে ঠিক আছে?
-হুম ঠিক আছে।
-আমি ঢাকা। তুমি চিটাগাং। বুঝছো?
- হা বুঝছি। বাবা গাড়িগুলো তোমার পছন্দ হয়েছে?
- অনেক ভাল। জোরে চলছে। অনেক পছন্দ হয়েছে।
-এই যে অফিসে যাই। সেখান থেকে টাকা পাই বিধায় তো এগুলো তোমাকে কিনে দিতে পেরেছি। অফিসে গেলে তুমি রাগ করো না ঠিক আছে?
মাথা নাড়ায় শিহাব।
শিহাব মায়ের দিকে গাড়ি চালিয়ে দেয়। চালানোর সময় বলে, চিটাগাং চিটাগাং চিটাগাং।
সাবিহার দিকে গাড়ি আসার পর সাবিহা সেটা শিহাবের দিকে পাঠায়।
শিহাব বিরক্ত হয়। “ মা তুমি কিছু বলছো না কেন? ”
-কি বলব?
তোমার দিক থেকে গাড়ি ছাড়ার সময় বলবা ঢাকা ঢাকা ঢাকা।
ছেলের কথা শুনে সাবিহা ঢাকা ঢাকা চিল্লায়। মজা লাগে।
খেলতে খেলতে গল্প করে শিহাবের সাথে।
-বাবা, আমার একটা প্রমোশন হয়েছে।
-প্রমোশন কি?
-আমি আগের চেয়ে আরো বেশি টাকা পাবো।
-বেশি টাকা পেলে আমাকে কি বেশি গাড়ি কিনে দেবে?
-হুম, অনেক অনেক গাড়ি কিনে দেব।
শিহাব খুশী হয়ে যায়।
-আর একটা সত্যি সত্যি গাড়িও পাবো। সেটা দিয়ে আমরা ঘুরবো।
-অনেক মজা হবে। সে গাড়ি করে কি ফ্যান্টাসি কিংডম যাওয়া যাবে?
-হা যাওয়া যাবে। প্রথম যেদিন গাড়ি পাবো সেদিনই তোমার বাবা সহ ফ্যান্টাসি কিংডম যাবো।
-আম্মু তুমি অনেক ভাল।
“মাকে একটা আদর দাও।” শিহাব দৌড় মেরে এসে একটা চুমু খায় মায়ের মুখে।
সন্ধ্যার দিকে ইমতিয়াজ ফিরে। অফিস থেকে একজায়গায় পাঠানো হয়েছিল। সে কাজটা শেষ করে এসেছে। স্বামী স্ত্রী একই অফিসে কাজ করে। ভাল লাগে। মাঝে মাঝে ইমতিয়াজের মুখটা দেখতে খুব ইচ্ছা করে সাবিহার। মুখ উঁচু করে তাকালেই দেখা যায়। সাবিহার সামনের দুই টেবিল পড়ে ডান পাশেই ইমতিয়াজ বসে। সাবিহার কাছে এই পৃথিবীর অনেক সুন্দর একটা দৃশ্য ইমতিয়াজ খুব মনযোগ দিয়ে মাথা নিচু করে কাজ করছে। এই দৃশ্যটা অনেক বেশি উপভোগ করে। অফিসে ইমতিয়াজ কম কথা বলে। মাঝে মাঝে মনে হয় ওকে যেন চিনেই না। এমন একটা ভাব ধরে ইমতিয়াজ। তখন বিরক্ত লাগে সাবিহার।
তবে এখন বড় পদে চলে গেলে আলাদ রুম হবে। ঐখান থেকে দেখা যাবে না আর ইমতিয়াজকে। দেখতে হলে ঐ রুম থেকে বের হয়ে এসে দেখতে হবে।
গোসল করে ফ্রেশ হয়ে এসে ছেলের সাথে খেলায় যোগ দেয় ইমতিয়াজ। “বাবা, আম্মু আমাকে আজ একসাথে তিনটা গাড়ি কিনে দিয়েছে। সুন্দর না?”
-হা সুন্দর। তুমি কিছু খেয়েছো?
- হা, আম্মু নুডলস খাইয়ে দিলেন।
রাতে শিহাব ঘুম যায়। সাবিহা বলে, একটা সুসংবাদ আছে।
-জানি। মুচকি হেসে বলে ইমতিয়াজ।
-কি বলো তো?
-তোমার বিশাল প্রমোশন হয়েছে।
-তুমি জানলে কিভাবে?
-অফিস থেকে জেনেছি। আজ অফিসে তো এটাই আলোচনার বিষয়। এত বড় একটা পদোন্নতি। সবাই একটু অবাক হয়েছে বটে।
-তুমি অবাক হও নাই।
-নাহ, অবাক হওয়ার কি আছে? তোমার কাজ অফিস ম্যানেজমেন্টের পছন্দ হয়েছে তাই তোমাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এম্নে এম্নে তো দেয় নাই।
ইমতিয়াজের মাথায় হাত বুলাতে থাকে সাবিহা। এই ব্যাপারটা অনেক পছন্দের ইমতিয়াজের।
সাবিহা প্রশ্ন করে, পদোন্নতি গ্রহণ করবো?
-অবশ্যই করবা, করবা না কেন? কখন যোগ দিতে বলছে নতুন পদে?
-সামনের মাসের প্রথম সপ্তাহে।
-তাহলে তো বেশি সময় নাই। সব গুছিয়ে নাও।
-কিন্তু করলে যে কিছু সমস্যা আছে?
ইমতিয়াজ অবাক হয়। কি সমস্যা?
-আমাকে তোমার ম্যাডাম ডাকতে হবে।
আরেকটি সমস্যার কথাও বলতে ইচ্ছা হয় সাবিহার। এখন চাইলেই তোমাকে দেখতে পারি। কিন্তু ঐ সময় তোমাকে দেখার জন্য রুম ছেড়ে বের হয়ে আসতে হবে। কিন্তু বলতে পারে না এই সমস্যার কথা। লজ্জা লাগে।
-ম্যাডাম ডাকতে হবে। ঠিক আছে ডাকবো। আচ্ছা এখন থেকে প্র্যাকটিস করি। পরে ডাকতে আর সমস্যা হবে না।
নিজের হাতটা সাবিহার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে ইমতিয়াজ বলে, ম্যাডাম এই ফাইলে একটু সাইন করে দেন।
সাবিহা হেসে উঠে। অনেক ভাল লাগে ইমতিয়াজের অভিনয়। নিজের আঙুলকে কলম বানিয়ে হাতেই স্বাক্ষর করে দেয় ও। ইমতিয়াজের শির শির লাগে হাতে।
সেও হেসে দেয়।
-আচ্ছা তুমি শুয়ে থাকো। আমার অনেক ভাল লাগছে। ভাল লাগলে আমার চা খেতে ইচ্ছা হয় তা তো জানো। এখন আমি চা বানিয়ে আনতে যাচ্ছি। খবরদার এর মধ্যে তুমি কিন্তু ঘুমিয়ে পড়বে না।
এই বলে সাবিহা চা বানাতে চলে যায়।
বিশাল বড় কাপে চা।
ইমতিয়াজ বলে, এতগুলো চা খেলে তো রাতে আর ঘুম আসবে না।
-না আসুক। দরকার হলে আজ সারা রাত গল্প করবো। কেন তোমার কোন সমস্যা আছে?
-আরে কি বলে, দরকার হলে আরেক কাপ চা খাবো। গল্প চুলুক রাত জুড়ে।
ঘড়ির কাটা দুলছে। একটুও এদিক ওদিক করে না। সম্পূর্ণ নিজের মত। একই গতিতে। খাটে উঠে বসেছে সাবিহা। শুয়ে শুয়ে গল্প করতে ভাল লাগছে না। বসে গল্পের আমেজ আরো ভাল পাওয়া যায়।
ওকে উঠতে দেখে ইমতিয়াজ বলে, আমিও উঠে বসবো নাকি?
-নাহ নাহ। তোমার উঠতে হবে না। তোমার আজ দূরে যেতে হয়েছিল। অনেক ধকল গেছে। তুমি শুয়ে শুয়েই কথা বলো।
-ঠিক আছে ম্যাডাম। আপনি যা বলবেন তাই হবে।
হঠাৎ সাবিহা আচ্ছা আমার প্রমোশন নিয়ে অফিসে কি বলাবলি হচ্ছে?
-তোমার প্রমোশন হলো এটা আরকি।
-আরে সেটা তো বুঝলাম। আর কি বলছে?
ইমতিয়াজ এবার একটু গম্ভীর হয়ে যায়।
-বলা যাবে না। শুনলে তোমার খারাপ লাগবে।
-লাগুক তারপরও বলো। শুনবো।
-এটা বাদ দাও। অন্য বিষয়ে কথা বলি। আচ্ছা তোমার তো প্রমোশন হয়েছে। তোমাকে অভিনন্দন জানিয়ে কি গিফট দেওয়া যায় বলো তো? কি দিলে খুশী হবে তুমি?
-গিফটের কথা পরে। আগে বলো অফিসে কি বলাবলি হচ্ছে।
-বললাম তো বলা যাবে না। তোমার মন খারাপ হবে। এখন মজার সময় পার হচ্ছে। অযথা মন খারাপ করে লাভ নেই। অন্যদের কথার কি মূল্য?
-না, আমার মন খারাপ হবে না তুমি বলো।
ইমতিয়াজ হাই তুলে। “এই আমার ঘুম আসছে। আমি ঘুম যাচ্ছি।”
সাবিহা বিরক্ত হয়। “ কথা কাটাবা না। বলো কি বলছে?”
-নাহ কিছু বলে নাই।
-তোমাকে কিন্তু বলতেই হবে। না বললে আমি আর ঘুমাবো না। মন অনেক খারাপ হবে। তারচেয়ে বলে দাও।
ইমতিয়াজ বুঝতে পারে না বলা ঠিক হবে কিনা। তবে অফিসে যেহেতু কথাগুলো আলোচনা হচ্ছে তাই কোন না কোন সময় তো শুনবেই। তারচেয়ে বলে দিলেই হয়ত ভাল। মানসিক প্রস্তুতি থাকবে।
সাবিহা তাড়া দেয়। কি হলো? বলছো না কেন?
ইমতিয়াজ বলে, লোকে তো অনেক কথাই বলে। সব কথার মূল্য দিতে হয় না।
-ঠিক আছে মূল্য দিবো না। বলো।
-অফিসের কয়েকজন বলছে বড় সাহেব তোমাকে পেয়ার করেন সেজন্যই এই পদোন্নতিটা হয়েছে। তুমিও নাকি বড় সাহেবের মন যোগায় চলো।
এটা কথা শুনে অবাক হয়ে যায় সাবিহা। কলিগরা এই কথা বলতে পারে। ওর মন খারাপ হয়ে যায়।
-এটা বলছে? কি বলো? এত্ত বাজে ভাবে বলছে?
-হুম বলছে। বললাম না মন খারাপ হয়ে যাবে। এজন্যই বলতে চাই নি।
সাবিহা জানতে চায়, এটা শুনে তোমার কি মন খারাপ হয় নি।
ইমতিয়াজজ স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে, আরে লোকে কত কথা বলবে তা শুনে কি লাভ আছে? অন্যরা কি বলছে সেটা দেখার বিষয় না।
-আমি জানতে চাচ্ছি এগুলো শুনে তোমার মন খারাপ হয় নাই?
-হুম হয়েছে। আচ্ছা বাদ দাও কাল অফিস আছে। চলো ঘুমিয়ে পড়ি। প্রমোশন হয়েছে ভালই হয়েছে। তোমার প্রাইভেট গাড়ীতে চলে যেতে পারবো একসাথে। এখনের মত রাস্তায় আগে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না অফিসের গাড়ীর জন্য।
সাবিহা আস্তে আস্তে বলে, আমি পদোন্নতিটা একসেপ্ট করবো না?
ইমতিয়াজ বলে, পাগলামী করিও না। লোকের কথায় কান দিবে কেন? এত বড় সুযোগ কেন হাতছাড়া করবে? ওরা যা বলছে এটাকে গুরুত্ব দিলে তো এগিয়ে যেতে পারবে না। পাগলামী করিও না প্লিজ।
-এটা পাগলামী না। আমি কালই অফিসকে জানিয়ে দিবো এই পদোন্নতিটা আমি নিচ্ছি না। আমি এখন বুঝতে পারছি এটা গ্রহণ করলে অফিসে আরো অনেক কথা ছড়াবে। কথাগুলো শুনলে তোমার কষ্ট লাগবে। আমার কষ্ট না হয় আমি সহ্য করলাম। কিন্তু তোমার কষ্ট সহ্য করা যাবে না। আমি লোকদের বাজে কথা বলার সুযোগ দেবো না। আর তোমার পদোন্নতির আগে আমি কোন পদোন্নতি একসেপ্ট করবো না।
-শুনো আমি কষ্ট পাবো না। এগুলো তো মিথ্যা কথা। অন্যের সফলতা দেখলে অনেকে বাঁকা মুখে এসব কথা বলবে। এগুলো গুরুত্ব দিতে হয় না। তুমি অবশ্যই এই প্রমোশনটা একসেপ্ট করবা। ঠিক আছে?
-আমরা যদি একই অফিসে চাকরি না করতাম তাহলে অবশ্যই লোকের কথায় কান দিতাম না। কারণ আমি নিজে জানি আমি কেমন? কিন্তু একই অফিসে চাকরি করি। তাই এটা নেবো না। আমার কাছে সংসারটাই আগে। ভালবাসা আগে। প্লিজ তুমি আমাকে রিকোয়েস্ট করো না। তোমার একটা প্রমোশনের হোক, তারপর আমার প্রমোশন হলে আমি হুট করে নিয়ে ফেলব। আমার কারণে তোমার কোন কথা শুনতে হবে এটা আমি মানতে পারবো না। কোন মতেই না। হোক তা মিথ্যা। তারপরও পারবো না মেনে নিতে।
ইমতিয়াজের চোখে পানি এসে যায়। এই মেয়েটি এত ভাল কেন? এত বেশি ভালবাসে কেন? পানি আড়াল করতে চায়। পারে না। এত ভালবাসা। এত সুন্দর জীবন।
এই তুমি কাঁদছো কেন? কথা গুলো বলতে গিয়ে সাবিহাও কেঁদে ফেলে।
এই পানি ভালবাসার কান্নার পানি। দুজনের কেউই চোখের পানি মুছার চেষ্টা করে না।