শনিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১২

জিলস ( গল্প )

অনেক বছর আগে একটা প্রাণী ছিল নাম জিলস। ওদের ছয় পা, দুই হাত। বেশি বড় না। তবে আকারটা ডাইনোসরের মত। আকাশে ও মাটিতে দুই জায়গাতেই ওরা চলাচল করতে পারত। তবে ওদের জীবনের বেশির ভাগ সময় কাটত আকাশেই।
ওরা নিজেদের সাথে নিজেরা খুব কথা বলত। একটা জিলস জন্ম নেওয়ার সাথে সাথে কথা বলতে পারত। কেউ মায়ের পেট থেকে বের হল, সাথে চোখ পাকিয়ে বলে, এখানে এত আলো কেন?
...............


কেউবা এসেই বলত, এই আমি কোথায় এলাম? এত বড় পৃথিবীতে আমি কিভাবে থাকব?

মা, উত্তর দিতেন। বাবা, ভয়ের কিছু নেই, দেখো না আমরা আছি। আমরা তোমার সাথে থাকব। জন্মে র দিনই সবার সাথে পরিচয় করে দেওয়া হতো।

সে জিলসরা নিজেদের সাথে কথা বলার সাথে সাথে আরো একজনের সাথে কথা বলতে পারত। সেটা হচ্ছে পিপড়া। পিপড়ার সাথে কথা বলতে একটু সমস্যা হতো। কেননা পিপড়া তো আর উড়তে পারে না। তাই পিপড়ার সাথে কথা বলতে হলে ওদের নিচে নেমে আসতে হইত।

জিলসদের প্রধান হচ্ছে মুহাং। আর পিপড়াদের রাজা হচ্ছে নুফ। দুই রাজার মধ্যে ভীষণ বন্ধুত্ব।
প্রতিদিন দুজনে দেখা করত। অনেক গল্প হতো দুজনের মাঝে।

জিলসদের রাজা মুহাং বলে, ইশ নুফো, তুমি উড়তে পারলে অনেক ভাল হত। আমরা উড়তে উড়তে গল্প করতে পারতাম।

নুফ বলে, ঠিক বলেছো। আমরা যে উড়তে পারি না, আমারও খারাপ লাগে। কিন্তু কি করব আমাদের তো আর পাখনা নেই যে উড়ব।
ঃ আচ্ছা এক কাজ করলে কি হয়, আমি একটা গাছের পাত দেখছি। খুব হালকা। তুমি বহন করতে পারবা।
ঃ কিভাবে?
ঃ এই মনে করো তোমার দুই পাশে দুইটা পাতা ধরে থাকবা। তারপর সেগুলো নাড়ালে দেখবা তুমি উড়তে পারছো।
অবিশ্বাসের গলায় নুফ বলে, তা কিভাবে? পাতা নাড়ালেই বুঝি উড়া যাবে?

অবিশ্বাস প্রকাশ করছে দেখে মুরাং একটু বিরক্ত হয়। আকাশে দেখো না বিমান উড়ে। সেখানে অনেক মানুষ চড়ে। আমরা না হয় পাখা নিয়ে জন্ম নিই। কিন্তু বিমান কি পাখা নিয়ে জন্ম নেয়? মানুষই তো বিমানে পাখা লাগায়। তারপর সে পাখার উপর ভর করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলে যায়।

এবার আগ্রহী হয়ে উঠে পিপড়ার রাজা নুফ। ঠিক বলছোতো। আসলেই তো বিমান যদি পাখা লাগিয়ে উড়তে পারে। তবে আমরা উড়তে পারব না কেন? তুমি কি পাতা এনেছো?

ঃ না এখনো আনি নাই। তুমি বললে এনে দেব।
নুফের আর তর সয় না। আকাশে উড়তে কি মজা হবে। চিন্তা করতেই ভাল লাগছে। উড়তে পারলে আর কারো পায়ে চাপা পড়ার সম্ভাবনা নেই। বছরে অনেক পিপড়া মারা যায় পদপিষ্ট হয়ে। উড়তে পারলে সেটা আর হবে না।

ঃ তুমি এক্ষুনি নিয়ে আসো। আমি এখনই উড়তে চাই।

মুহাং বলে, অধৈর্য্য হয়ো না বন্ধু। একটু সবুর করো। আমি আজই আমার সকল প্রজাকে বলে দেবো তারা যেন এম্বয়িং পাতা নিয়ে আসে। ঐ পাতা হালকা এবং শক্ত। সহজে ছেঁড়া যায় না। ঐ একটা পাতাই কোন প্রাণী খায় না শক্ত এজন্য।
-তাহলে ছিঁড়ে আনবা কিভাবে?
-পদ্ধতি আছে। পাতা শক্ত। কিন্তু ডাল এত শক্ত না। ডাল সহ নিয়ে আসা হবে। তোমাদের সব পিপড়ার গায়ে পাখা লাগিয়ে দেওয়া যাবে। সবাই উড়তে পারবে।

পিপড়া রাজা খুশীতে সব পিপড়াদের ডেকে পাঠায়। সবাইকে জানানো হয় তারা শীঘ্রই উড়তে পারবে। তা শুনে কতগুলো পিপড়া আনন্দে লাফালাফি শুরু করে দেয় মুক্ত আকাশে উড়তে পারবে এটা ভেবে। তবে কিছু পিপড়া বিশ্বাস করে। বাপদাদা কাউকে দেখলো না উড়তে। আর রাজা কিনা বলছে উড়তে পারবে। অসম্ভব। বিশ্বাস হয় না তাদের। তবে রাজার কথা অবিশ্বাস করছে এটাও প্রকাশ করতে পারে না। নীরবে থাকে ওরা।

পিপড়াদের আনন্দে সময় কাটে। সবার চোখে মুখে স্বপ্ন আকাশে উড়ছে।

এদিকে জিলসদের রাজা মুহাং রাজ্যে নির্দেশ জারি করেছে, সকলে যেন এম্বয়িং পাতা নিয়ে আসে। যে আনতে পারবে না তাকে শাস্তি দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়।

সব জিলস ছুটে চলে এম্বয়িং পাতা নিয়ে আসতে। আজ রাজ্যে অন্য সব কাজ বন্ধ। সবাই এম্বয়িং পাতা এনে দেবে।

পিপড়ার রাজার কাছে আসে মুহাং।
-আমি সকল জিলসকে বলে দিয়েছি এম্বয়িং পাতা আনার জন্য। আজ রাতের মধ্যেই সবাই নিয়ে আসবে।
পিপড়ার রাজা খুশী হয়ে যায়। তার মানে আজ থেকে উড়া যাবে?
-আশা করা যায়।

নুফ বলে, আমার খুশীতে নাচতে ইচ্ছা করছে। কতদিন পাখিগুলোর সাথে হিংসা করেছি। ওরা উড়তে পারে। আমরা পারি না। কি সুন্দর একদেশ থেকে অন্য দেশে চলে যায়। নদী পার হয়। অথচ আমরা এক জায়গায় যেন বন্দী। এখন মুক্ত হবো।

জিলসরা সকল এম্বয়িং গাছ পাতাশূন্য করে ফেলে। সেগুলো নিয়ে আসে পিপড়াদের দেওয়ার জন্য। এখন পাতা লাগিয়ে পিপড়ারা উড়বে। যেভাবে পাখা লাগিয়ে বিমান উড়ে।

এক দরবেশ পথ দিয়ে যায়। গাছের কথা বুঝতেন ঐ দরবেশ। যাওয়ার সময় দেখেন সকল এম্বয়িং গাছ গুলো পাতা শূন্য। ওরা কাঁদছে।
দরবেশ জিজ্ঞেস করেন, কাঁদছো কেন তোমরা?

দরবেশের দয়াপরশ কথা শুনে ওদের কান্না আরো বেড়ে যায়। “ আমাদের সকল পাতা জিলসরা নিয়ে গেছে”
-দরবেশ বলে কেন কেন? ওরা নিয়েছে কেন?
-ওরা নাকি পিপড়াদের গায়ে পাখা দিবে আমাদের পাতাগুলো দিয়ে।

দরবেশ এটা শুনে রেগে যান। এত্ত সাহস। সব পাতা নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, তোমরা শান্ত হও। কান্না করো না। আমি দোয়া করছি তোমাদের নতুন পাতা গজানোর জন্য। এর পর আর জিলস তোমাদের পাতা নিতে পারবে না। জিলস পাখিকে বদদোয়া দেন। প্রকৃতির চিরন্তন নিয়ম বদলানোর চেষ্টা করছে জিলস। তাই তাদের থাকার অধিকার নেই।

সকল জিলস মারা যায়। তখন থেকে পৃথিবীতে আর একটা জিলসও নাই। পৃথিবী হয় জিলস শূন্য।

পিপড়া ছুটে আসে দরবেশের কাছে। দরবেশ হুজুর আপনি এই কি বদদোয়া দিলেন। সব জিলস যে মারা গেল। জিলসদের অপরাধ ওরা পাতা ছিড়ছে। কিন্তু মানুষ যে পুরা গাছ কেটে ফেলে তারপরও তো মরে না। তাদের অভিশাপ দেন না কেন? বন উজার করার পরও মানুষ বেঁচে থাকে কিভাবে। উত্তেজিত গলায় পিপড়ার রাজা নুফ দরবেশকে এগুলো বলে।

-তুমি শান্ত হও। মানুষ যেসমস্ত পাপ করছে তার হিসাব মৃত্যুর পর দিতে হবে। তখন অপরাধের জন্য শাস্তি দেওয়া হবে। ঐইটাই তাদের আসল জীবন। কিন্তু জিলসদের এই জীবনই শেষ। আর জীবন নেই। তারপরও তারা মহা অন্যায় করছে। এজন্যই তাদের অস্তিত্ব বিলীন হয়েছে।