সামনের সাত তলা বাড়িটির ছাদের উপর দেওয়া বিশাল পতাকাটা বাঁশের মাথায় আটকে
গেছে। সেটা ছড়িয়ে দেওয়া গেলে ভাল হতো। প্রায় সব খানে পতাকা উড়ছে। বাতাস
বইছে। বৃষ্টি আসার সম্ভাবনা। বাতাসে পতাকাগুলো পত পত করে উড়ছে। পতাকা গুলো
দেখছে আর আহাদের দীর্ঘশ্বাস বের হচ্ছে। এই এলাকায় আর্জেন্টিনা, ব্রাজিলের
পতাকাই বেশি। বেশির ভাগ বিল্ডিংয়েই আর্জেন্টিনার পতাকা। এলাকায় বোধহয়
আর্জেন্টিনার সমর্থকই বেশি।........
অনেক বড় পতাকা বানিয়েছে আহাদ। সেটা ব্যালকনি বাহিরের দিকে উড়ানোর কথা ছিল। অথচ সেটা সম্ভব না এখন। উড়ালে বিশাল কিছু হয়ে যাবে। ভালবাসার মানুষটি যদি একই এলাকায় থাকে তবে অনেক সুবিধা। প্রতিদিন যাওয়া আসার পথে দেখা যায়। আহাদদের বাসা যে গলিতে তার পরের গলিতেই তিথিদের বাসা। আসা যাওয়ার পথে চোখাচোখি হবেই। যখন রাস্তা দিয়ে আহাদ যায় তখন শুধু একটা মিসকল। সাথে সাথে তিথি ব্যারান্দায় চলে আসে।
চোখাচোখি কথা চলে। মাঝে মাঝে কোন কারণে বিরক্ত হলে চোখ বড় বড় করে তাকায় তিথি।
তা দেখে থুতুনি উপরের দিকে ঝাঁকানি দিয়ে চোখ উপরের দিকে তুলে আহাদ জানতে চায়, সমস্যা কি?
মাথা নাড়ায় তিথি। চোখের পলক ফেলে। তার মানে বলবে না।
আহাদ আর জোরাজুরি করে না। একবার যেটা না বলবে সেটা তিথিকে দিয়ে করানো অনেকটা অসম্ভব।
তিথিরা আগে অন্য এলাকায় ছিল। ওর ছোট ভাইয়ের স্কুল এ এলাকাতে হওয়ায় তাদের এখানে আসতে হয়। আহাদ বলেছিল, ওদের বিল্ডিংয়ে উঠতে।
-তোমাদের বিল্ডিংয়ে ফ্ল্যাট খালি আছে নাকি?
-না,
-তবে যে বললা তোমাদের ঐখানে উঠতে।
-তোমরা উঠবা বললেই হলো। ভাড়াটিয়া একজনকে চলে যেতে বলব। আম্মুকে বুঝিয়ে বললেই হবে। আহা একই বিল্ডিংয়ে থাকবো। কি মজা হবে।
তিথির একটু মজা করতে ইচ্ছা করে। আহাদ ছেলেটা সরল। শুধু সরল না অনেক সরল। তবে এত সরল হওয়া ঠিক না। অনেক বিপদ তাতে। সরলতা বলতে মানুষ এখন দুর্বলতাকে বুঝায়।
তিথি জিজ্ঞেস করে, আহাদ আন্টিকে কি বলবা? আমার গার্লফ্রেন্ড উঠবে আমাদের বাড়িতে। একটা ফ্ল্যাট খালি করে দাও। এটাই বলবা?
বলেই হেসে দেয় তিথি।
আহাদ ফুচকা খাচ্ছিলো। আহা। এটা বললে তো আমাকেই ঘর থেকে বের করে দেবে। আম্মু আমাকে এখনও এখনো ছোট ভাবেন।
তবে কি বলবা?
বলব আমার এক ক্লোজ ফ্রেন্ডের রিলেটিভ বাসা খুঁজছে। ওদের জন্য দরকার।
তিথি আহাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। তোমার মাথায় তো বুদ্ধি আছে। চুল টেনে দেয় আস্তে আস্তে। আমি তো তোমাকে শুধু বোকাই ভাবি।
-আমি বোকা?
প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকায় আহাদ।
আরে নাহ। এম্নে দুষ্টামি করলাম।
-আচ্ছা আম্মুকে বলি তাহলে।
-না না। তোমাদের বিল্ডিংয়ে কোন মতেই উঠা সম্ভব না। সমস্যা আছে।
- কি সমস্যা?
-আছে অনেক সমস্যা।
-বলো না, কি সমস্যা।
-বাড়িঅলার ছেলের সাথে ভাড়াটিয়ার মেয়ের প্রেম ব্যাপারটি কেমন সুযোগ সন্ধানী টাইপের। বাড়ীঅলার ছেলের টাকা আছে এজন্যই প্রেম করছে অনেকে এটা মনে করবে। অন্যরা এ জাতীয় বাজে কিছু ভাবুক এটা চাই না।
-আমিই তো আগে তোমার প্রেমে পড়ছি। তোমাকে বেশি বিরক্ত করতাম বলে শেষে রাজি হয়েছো।
বিরক্তির কথা শুনে ভাল লাগে তিথির। ও যখন স্কুল থেকে বের হতো দেখত ধূসর রঙের গাড়ি একটা দাঁড়িয়ে আছে চায়ের দোকানটার সামনে। তবে গাড়িতে কেউ থাকতো না। একটু দূরে হ্যাবলার মত দাঁড়িয়ে থাকতো আহাদ। মাঝে মাঝে চোরা চাহনিতে ওর দিকে তাকাতো। বান্ধবীরা ব্যাপারটা টের পেয়ে মজা করত তিথির সাথে।
হয়ত কখনো এটা সম্পর্কের দিকে যেত না। বান্ধবীরা ছেলেটাকে নিয়ে মজা করলে কেন জানি খারাপ লাগত তিথির। একটা ছেলে ওর জন্য এভাবে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু বলে বিরক্ত করছে না। বান্ধবীদের সাথে সেও তাল মিলায় তবে। ভিতরে ভিতরে ছেলেটার জন্য খারাপ লাগে। সে খারাপ লাগায় যে কখন দুর্বল করে ফেলল তা টের পেতে বেশি সময় লাগে না।
সে নিজেই গিয়েই পরিচিত হয় আহাদের সাথে। আপনি আর এভাবে স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকবেন না। আপনাকে নিয়ে অনেকে মজা করে। ব্যাপারটা ভাল দেখায় না।
আহাদ কিছু বলতে পারে না। এই মেয়ে ওর সাথে কথা বলছে এটাই ও বিশ্বাস করতে পারে না। মনে হয় স্বপ্ন স্বপ্ন। এই মেয়ে বুঝল কিভাবে ওর জন্যই সে প্রতিদিন এখানে দাঁড়ায়। কখনো তো কিছু বলে নাই। কোন চিরকুট দেয় নাই। টের পেল কিভাবে?
আহাদ চুপ থাকে। আপনার সেলফোন নাম্বারটা বলেন।
আহাদ যন্ত্রের মত নাম্বারটা বলে যায়। ওর ঘোর কাটে না।
তিথি চলে যায়। বান্ধবী কেউ দেখলে খবর আছে। এটা নিশ্চিত ওকে হ্যাবলা বিবি হিসাবে ডাকা শুরু করবে। সেদিন তো নীলা বলছিলোই, ওর হ্যাবলার সাথে তোর প্রেম হলে ভালই হতো। আমরা তোকে একটা সুন্দর নামে ডাকতে পারতাম।
ফুচকা শেষ। তা দেখে আহাদ বলল, আমার আরেক প্লেট নিতে ইচ্ছা করছে। তুমি নিবে আরেক প্লেট?
-হুম নাও।
আরেক প্লেট খাওয়া শুরু হয়।
শোনো তোমাদের বিল্ডিংয়ে উঠা সম্ভব না। বাবা গতকালও বাড়ি খুঁজতে গিয়েছেন। একটা বাসাও চয়েজ করে আসছেন। নন্দন কুঁঠি।
সেটা ঠিক করে ফেলছেন? নন্দন কুঁঠি বাড়িটা সিরাজ আঙ্কেলের। আব্বুর বন্ধু। আমাদের বাসার এক গলির পরেই।
-নাহ এখনো ফাইনাল কথা বলেন নাই। তবে বলবেন।
তুমি আমাদের এলাকায় থাকবা ভাবতেই ভাল লাগছে। আমাদের বিল্ডিংয়ে যদি থাকতা আরো বেশি ভাল লাগত। কি মজা আকাশে দোলা খায়।
আহাদ গান গাইতে পারে না। মাঝে মাঝে গান গাওয়ার চেষ্টা করে। অদ্ভূত লাগে তখন।
একই এলাকায় থাকার সুবিধা অনেক। তবে অসুবিধাও আছে। এখন টের পাচ্ছে আহাদ।
এলাকার আর্জেন্টিনাইন সমর্থক গোষ্ঠীর নেতৃত্বে আহাদও আছে। অনেক পতাকা টাঙানো হয়েছে আর্জেন্টিনার। অনেক আলোচনা হচ্ছে। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে পুরা এলাকাকে আর্জেন্টিনার পতাকায় ভরে ফেলা হবে। এমনভাবে করা হবে যাতে ব্রাজিলের পতাকা দেখা না যায়।
আহাদ ওর ব্যালকনিতে বড় একটা পতাকা লাগাবে চিন্তা করছে। ছাদে অনেক দেওয়া হয়েছে। ভাড়াটিয়ারাও অনেক পতাকা দিয়েছে।
এদিকে তিথি হচ্ছে ব্রাজিল। এলাকায় আসতে যেতে চারদিকে এত আর্জেন্টিনার পতাকা দেখে ওর বিরক্ত লাগে। একটা দল হারা ছাড়া কিছু জানে না, তারপরও ঐ দলকে এত পছন্দ করার মানেটা কি?
রাগ চরমে উঠছে সেদিন। তিথি ফোন দিয়েছে।
আহাদ তখন আলোচনায় ব্যস্ত পতাকা নিয়ে বন্ধুদের সাথে। কিভাবে বেশি বেশি পতাকা উড়ানো যায়। কোথায় কোথায় দিলে ভাল হয়?
-তিথি আমি একটু ব্যস্ত আছি। তোমাকে ফোন দিচ্ছি পরে।
আলোচনা শেষ হয়।
তিথিকে ফোন দেওয়া হয়। কিন্তু তিথি ধরে না। অনেক বার ফোন দেয়। রিং হলে কেটে দেয়। তিথিদের বাসার সামনে গিয়ে অনেকবার কল দেয়। কিন্তু তিথি বের হয় না। রাগ করছে অনেক। ধূর একটু কথা বললেই হতো।
বিকালের দিকে কাজের ছেলে মুনিরকে পাঠায়ছে আহাদ বাঁশের জন্য। বারান্দায় পতাকা ঝুলিয়ে দেবে। আর্জেন্টিনার পতাকাটা বেশ বড়। সুন্দর দেখাবে অনেক। রাস্তার উপর ছড়িয়ে থাকবে।
এসময় তিথির ফোন।
আহাদ খুশীতে লাফিয়ে উঠে।
এত বার ফোন দিলাম, রিসিভ করলে না!
-ইচ্ছা হয় নাই, তাই ধরি নাই। কি করছো?
-এই যে ফ্ল্যাগ উড়াবো ব্যালকনিতে। আর্জেন্টিনার বড় একটি পতাকা। বাঁশ আনতে পাঠিয়েছি।
তোমার ব্যালকনিতে যদি কোন আর্জেন্টিনার পতাকা দেখি তবে তোমার খবর আছে।
মিটিং করো পতাকা নিয়ে। কল দিলে কথা বলার সময় পাও না। আমার মন অনেক খারাপ ছিল। ভাবলাম তোমার সাথে কথা বললে হয়ত ভাল হবে। কল দিলাম। তুমি তো মহা গুরুত্বপূর্ণ। মিটিং করছো।
-সরি।
-সরি টরি বুঝি না। তবে তোমার ব্যালকনিতে যেন কোন পতাকা না দেখি আমি বলে রাখলাম। তুমি যে আমার সাথে তখন কথা বলো নাই, অনেক খারাপ লাগছে। এখন এটার শাস্তি বুঝো। রাখলাম।
মুনীর লম্বা বাঁশ নিয়ে আসে।
ভাই পতাকাটা দেন লাগিয়ে ফেলি।
-এখন যা। লাগাতে হবে না এখন। মাথা ব্যথা করছে।
-ঠিক আছে আপনার কিছু করতে হবে না। আমি লাগিয়ে দিচ্ছি।
আর্জেন্টিনার দল মুনিরের পছন্দ না। ওর পছন্দ ফ্রান্স। ইশ একটা যদি ফ্রান্সের পতাকা পাওয়া যেত। আহাদ ভাইকে বললেই এনে দেবে। তবে যেকোন পতাকা উড়াতেই আনন্দ।
মুনিরকে দাঁড়ানো দেখেআহাদ রেগে যায়। তুই এখনো দাঁড়িয়ে আছিস তোকে যেতে বললাম না।
মুনির চলে যায়।
বন্ধুদের বলা হয়ে গেছে আজ বারান্দায় পতাকা উড়াবে। রাতে ওরা জিজ্ঞেস করলে কি বলবে?
অনেক বড় পতাকা বানিয়েছে আহাদ। সেটা ব্যালকনি বাহিরের দিকে উড়ানোর কথা ছিল। অথচ সেটা সম্ভব না এখন। উড়ালে বিশাল কিছু হয়ে যাবে। ভালবাসার মানুষটি যদি একই এলাকায় থাকে তবে অনেক সুবিধা। প্রতিদিন যাওয়া আসার পথে দেখা যায়। আহাদদের বাসা যে গলিতে তার পরের গলিতেই তিথিদের বাসা। আসা যাওয়ার পথে চোখাচোখি হবেই। যখন রাস্তা দিয়ে আহাদ যায় তখন শুধু একটা মিসকল। সাথে সাথে তিথি ব্যারান্দায় চলে আসে।
চোখাচোখি কথা চলে। মাঝে মাঝে কোন কারণে বিরক্ত হলে চোখ বড় বড় করে তাকায় তিথি।
তা দেখে থুতুনি উপরের দিকে ঝাঁকানি দিয়ে চোখ উপরের দিকে তুলে আহাদ জানতে চায়, সমস্যা কি?
মাথা নাড়ায় তিথি। চোখের পলক ফেলে। তার মানে বলবে না।
আহাদ আর জোরাজুরি করে না। একবার যেটা না বলবে সেটা তিথিকে দিয়ে করানো অনেকটা অসম্ভব।
তিথিরা আগে অন্য এলাকায় ছিল। ওর ছোট ভাইয়ের স্কুল এ এলাকাতে হওয়ায় তাদের এখানে আসতে হয়। আহাদ বলেছিল, ওদের বিল্ডিংয়ে উঠতে।
-তোমাদের বিল্ডিংয়ে ফ্ল্যাট খালি আছে নাকি?
-না,
-তবে যে বললা তোমাদের ঐখানে উঠতে।
-তোমরা উঠবা বললেই হলো। ভাড়াটিয়া একজনকে চলে যেতে বলব। আম্মুকে বুঝিয়ে বললেই হবে। আহা একই বিল্ডিংয়ে থাকবো। কি মজা হবে।
তিথির একটু মজা করতে ইচ্ছা করে। আহাদ ছেলেটা সরল। শুধু সরল না অনেক সরল। তবে এত সরল হওয়া ঠিক না। অনেক বিপদ তাতে। সরলতা বলতে মানুষ এখন দুর্বলতাকে বুঝায়।
তিথি জিজ্ঞেস করে, আহাদ আন্টিকে কি বলবা? আমার গার্লফ্রেন্ড উঠবে আমাদের বাড়িতে। একটা ফ্ল্যাট খালি করে দাও। এটাই বলবা?
বলেই হেসে দেয় তিথি।
আহাদ ফুচকা খাচ্ছিলো। আহা। এটা বললে তো আমাকেই ঘর থেকে বের করে দেবে। আম্মু আমাকে এখনও এখনো ছোট ভাবেন।
তবে কি বলবা?
বলব আমার এক ক্লোজ ফ্রেন্ডের রিলেটিভ বাসা খুঁজছে। ওদের জন্য দরকার।
তিথি আহাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। তোমার মাথায় তো বুদ্ধি আছে। চুল টেনে দেয় আস্তে আস্তে। আমি তো তোমাকে শুধু বোকাই ভাবি।
-আমি বোকা?
প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকায় আহাদ।
আরে নাহ। এম্নে দুষ্টামি করলাম।
-আচ্ছা আম্মুকে বলি তাহলে।
-না না। তোমাদের বিল্ডিংয়ে কোন মতেই উঠা সম্ভব না। সমস্যা আছে।
- কি সমস্যা?
-আছে অনেক সমস্যা।
-বলো না, কি সমস্যা।
-বাড়িঅলার ছেলের সাথে ভাড়াটিয়ার মেয়ের প্রেম ব্যাপারটি কেমন সুযোগ সন্ধানী টাইপের। বাড়ীঅলার ছেলের টাকা আছে এজন্যই প্রেম করছে অনেকে এটা মনে করবে। অন্যরা এ জাতীয় বাজে কিছু ভাবুক এটা চাই না।
-আমিই তো আগে তোমার প্রেমে পড়ছি। তোমাকে বেশি বিরক্ত করতাম বলে শেষে রাজি হয়েছো।
বিরক্তির কথা শুনে ভাল লাগে তিথির। ও যখন স্কুল থেকে বের হতো দেখত ধূসর রঙের গাড়ি একটা দাঁড়িয়ে আছে চায়ের দোকানটার সামনে। তবে গাড়িতে কেউ থাকতো না। একটু দূরে হ্যাবলার মত দাঁড়িয়ে থাকতো আহাদ। মাঝে মাঝে চোরা চাহনিতে ওর দিকে তাকাতো। বান্ধবীরা ব্যাপারটা টের পেয়ে মজা করত তিথির সাথে।
হয়ত কখনো এটা সম্পর্কের দিকে যেত না। বান্ধবীরা ছেলেটাকে নিয়ে মজা করলে কেন জানি খারাপ লাগত তিথির। একটা ছেলে ওর জন্য এভাবে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু বলে বিরক্ত করছে না। বান্ধবীদের সাথে সেও তাল মিলায় তবে। ভিতরে ভিতরে ছেলেটার জন্য খারাপ লাগে। সে খারাপ লাগায় যে কখন দুর্বল করে ফেলল তা টের পেতে বেশি সময় লাগে না।
সে নিজেই গিয়েই পরিচিত হয় আহাদের সাথে। আপনি আর এভাবে স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকবেন না। আপনাকে নিয়ে অনেকে মজা করে। ব্যাপারটা ভাল দেখায় না।
আহাদ কিছু বলতে পারে না। এই মেয়ে ওর সাথে কথা বলছে এটাই ও বিশ্বাস করতে পারে না। মনে হয় স্বপ্ন স্বপ্ন। এই মেয়ে বুঝল কিভাবে ওর জন্যই সে প্রতিদিন এখানে দাঁড়ায়। কখনো তো কিছু বলে নাই। কোন চিরকুট দেয় নাই। টের পেল কিভাবে?
আহাদ চুপ থাকে। আপনার সেলফোন নাম্বারটা বলেন।
আহাদ যন্ত্রের মত নাম্বারটা বলে যায়। ওর ঘোর কাটে না।
তিথি চলে যায়। বান্ধবী কেউ দেখলে খবর আছে। এটা নিশ্চিত ওকে হ্যাবলা বিবি হিসাবে ডাকা শুরু করবে। সেদিন তো নীলা বলছিলোই, ওর হ্যাবলার সাথে তোর প্রেম হলে ভালই হতো। আমরা তোকে একটা সুন্দর নামে ডাকতে পারতাম।
ফুচকা শেষ। তা দেখে আহাদ বলল, আমার আরেক প্লেট নিতে ইচ্ছা করছে। তুমি নিবে আরেক প্লেট?
-হুম নাও।
আরেক প্লেট খাওয়া শুরু হয়।
শোনো তোমাদের বিল্ডিংয়ে উঠা সম্ভব না। বাবা গতকালও বাড়ি খুঁজতে গিয়েছেন। একটা বাসাও চয়েজ করে আসছেন। নন্দন কুঁঠি।
সেটা ঠিক করে ফেলছেন? নন্দন কুঁঠি বাড়িটা সিরাজ আঙ্কেলের। আব্বুর বন্ধু। আমাদের বাসার এক গলির পরেই।
-নাহ এখনো ফাইনাল কথা বলেন নাই। তবে বলবেন।
তুমি আমাদের এলাকায় থাকবা ভাবতেই ভাল লাগছে। আমাদের বিল্ডিংয়ে যদি থাকতা আরো বেশি ভাল লাগত। কি মজা আকাশে দোলা খায়।
আহাদ গান গাইতে পারে না। মাঝে মাঝে গান গাওয়ার চেষ্টা করে। অদ্ভূত লাগে তখন।
একই এলাকায় থাকার সুবিধা অনেক। তবে অসুবিধাও আছে। এখন টের পাচ্ছে আহাদ।
এলাকার আর্জেন্টিনাইন সমর্থক গোষ্ঠীর নেতৃত্বে আহাদও আছে। অনেক পতাকা টাঙানো হয়েছে আর্জেন্টিনার। অনেক আলোচনা হচ্ছে। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে পুরা এলাকাকে আর্জেন্টিনার পতাকায় ভরে ফেলা হবে। এমনভাবে করা হবে যাতে ব্রাজিলের পতাকা দেখা না যায়।
আহাদ ওর ব্যালকনিতে বড় একটা পতাকা লাগাবে চিন্তা করছে। ছাদে অনেক দেওয়া হয়েছে। ভাড়াটিয়ারাও অনেক পতাকা দিয়েছে।
এদিকে তিথি হচ্ছে ব্রাজিল। এলাকায় আসতে যেতে চারদিকে এত আর্জেন্টিনার পতাকা দেখে ওর বিরক্ত লাগে। একটা দল হারা ছাড়া কিছু জানে না, তারপরও ঐ দলকে এত পছন্দ করার মানেটা কি?
রাগ চরমে উঠছে সেদিন। তিথি ফোন দিয়েছে।
আহাদ তখন আলোচনায় ব্যস্ত পতাকা নিয়ে বন্ধুদের সাথে। কিভাবে বেশি বেশি পতাকা উড়ানো যায়। কোথায় কোথায় দিলে ভাল হয়?
-তিথি আমি একটু ব্যস্ত আছি। তোমাকে ফোন দিচ্ছি পরে।
আলোচনা শেষ হয়।
তিথিকে ফোন দেওয়া হয়। কিন্তু তিথি ধরে না। অনেক বার ফোন দেয়। রিং হলে কেটে দেয়। তিথিদের বাসার সামনে গিয়ে অনেকবার কল দেয়। কিন্তু তিথি বের হয় না। রাগ করছে অনেক। ধূর একটু কথা বললেই হতো।
বিকালের দিকে কাজের ছেলে মুনিরকে পাঠায়ছে আহাদ বাঁশের জন্য। বারান্দায় পতাকা ঝুলিয়ে দেবে। আর্জেন্টিনার পতাকাটা বেশ বড়। সুন্দর দেখাবে অনেক। রাস্তার উপর ছড়িয়ে থাকবে।
এসময় তিথির ফোন।
আহাদ খুশীতে লাফিয়ে উঠে।
এত বার ফোন দিলাম, রিসিভ করলে না!
-ইচ্ছা হয় নাই, তাই ধরি নাই। কি করছো?
-এই যে ফ্ল্যাগ উড়াবো ব্যালকনিতে। আর্জেন্টিনার বড় একটি পতাকা। বাঁশ আনতে পাঠিয়েছি।
তোমার ব্যালকনিতে যদি কোন আর্জেন্টিনার পতাকা দেখি তবে তোমার খবর আছে।
মিটিং করো পতাকা নিয়ে। কল দিলে কথা বলার সময় পাও না। আমার মন অনেক খারাপ ছিল। ভাবলাম তোমার সাথে কথা বললে হয়ত ভাল হবে। কল দিলাম। তুমি তো মহা গুরুত্বপূর্ণ। মিটিং করছো।
-সরি।
-সরি টরি বুঝি না। তবে তোমার ব্যালকনিতে যেন কোন পতাকা না দেখি আমি বলে রাখলাম। তুমি যে আমার সাথে তখন কথা বলো নাই, অনেক খারাপ লাগছে। এখন এটার শাস্তি বুঝো। রাখলাম।
মুনীর লম্বা বাঁশ নিয়ে আসে।
ভাই পতাকাটা দেন লাগিয়ে ফেলি।
-এখন যা। লাগাতে হবে না এখন। মাথা ব্যথা করছে।
-ঠিক আছে আপনার কিছু করতে হবে না। আমি লাগিয়ে দিচ্ছি।
আর্জেন্টিনার দল মুনিরের পছন্দ না। ওর পছন্দ ফ্রান্স। ইশ একটা যদি ফ্রান্সের পতাকা পাওয়া যেত। আহাদ ভাইকে বললেই এনে দেবে। তবে যেকোন পতাকা উড়াতেই আনন্দ।
মুনিরকে দাঁড়ানো দেখেআহাদ রেগে যায়। তুই এখনো দাঁড়িয়ে আছিস তোকে যেতে বললাম না।
মুনির চলে যায়।
বন্ধুদের বলা হয়ে গেছে আজ বারান্দায় পতাকা উড়াবে। রাতে ওরা জিজ্ঞেস করলে কি বলবে?