একটু আগেও রোদ ছিল। হঠাৎ করে আকাশটা মেঘে ঢেকে গেল। আর তার পর পরই শুরু হয়ে
গেল বৃষ্টি। বৃষ্টি অনেক পছন্দের ছিল শারমীনের। বৃষ্টি আসা মানেই ছিল
বৃষ্টিতে ভেজা। আকাশে মেঘ দেখা দিলেই চলে যেত ছাদে। অপেক্ষায় থাকত কখন
বৃষ্টির ফোঁটা পড়া শুরু হবে। চাচাতো বোন সাবিহা, মনিহাও আসত। সবাই আকাশের
পানে চেয়ে থাকতো। এই বুঝি বৃষ্টি এলো। ....
বৃষ্টি এলে শুরু হয়ে যেত লাফালাফি। স্প্রিং খেলত। কার চেয়ে কে বেশি পারে। ১০০০ এ ছিল গেম। সাবিহাই বেশির ভাগ সময় জিতত। অনেক দম ওর। একবার তো একসাথেই ২৩০ করেছে। কিভাবে সম্ভব কে জানে। শারমীন একবারে ৬০ এর বেশি কখনো পারতো না। তবে বৃষ্টির পানিতে এভাবে লাফাতে অনেক ভাল লাগত। এক জনের গাঁয়ে অন্যজন পানি ছিটিয়ে দিত। প্রথমে দুই হাত মেলে আকাশের নিচে করে মেলে ধরতো। সেখানে পানি জমা হতো। তারপর সে পানি একজন অন্যজনের দিকে ছুঁড়ে দিত। বয়স তখন কত, এগার কি বারো। ঐই বয়সে একটু একটু বড়দের নিয়ে কথা বলা শুরু করেছে। অন্য জগত নিয়েও নিজেদের মধ্যে হাসি ঠাট্টা হতো। তবে বড়রা সেগুলো জানত না। এসব ব্যাপার মনিহাই বেশি বলত। কান গরম হয়ে যেত। তবে বৃষ্টির পানির ছোয়ায় সে কান আবার ঠান্ডা হতো। কথা শুনে এই গরম হচ্ছে। আবার বৃষ্টির পানি পড়ে সাথে সাথে ঠান্ডা এইরকম অবস্থা।
একদিন পানি দুইহাতে ভরছে শারমিন। তা দেখে মনিহা হাসতে হাসতে শেষ। শারমিন নিজের দিকে তাকায়। উল্টাপাল্টা কিছু হয় নাই তো। আরেকদিন ভুলে জামার পিছনে বোতাম একটা বোতাম খোলা ছিল বলে অনেক হাসাহাসি করেছিল মনিহা ও সাবিহা। এসব সবার আগে মনিহার চোখে পড়ে। শারমিন খেয়াল করলো। না ঠিক মতই আছে। তবে হাসছে কেন?
একটু আতঙ্কিত হয়ে বিরক্তির সাথে জিজ্ঞেস করে, হাসিস কেন?
ওর প্রশ্ন শুনে মনিহার হাসি আরো বেড়ে যায়। যেন প্রশ্নটাই হাসির। সাবিহাও যোগ দেয় হাসিতে। হাসি সংক্রামক। আরো কেউ থাকলে তারাও যোগ দিত। শারমিন একটা জিনিষ খেয়াল করেছে কেউ যদি হাসা শুরু পারে তবে আশে পাশে যারা থাকে তারাও হাসে। কারণ জানার চেয়ে হাসিতে যোগ দেওয়াটাই যেন জুরুরী।
হাসির মাত্রা বেড়ে যাওয়া দেখে শারমিনের ভয় করে। বড়সড় ভুল কিছু হয় নাই তো। আবারও বিভ্রান্ত হয়ে নিজের দিকে তাকায়।
-আরে বলিস না ক্যান? হাসছিস কেন? ৩২ টা দাঁত দেখিয়ে পুরা মুখ খুলে হাসছিস কেন? ঐ দেখ মশা ঢুকতেছে।
-গাধা, বৃষ্টিতে বুঝি মশা থাকে! মশা বৃষ্টিকে পছন্দ করে না। বৃষ্টি এলেই ওরা লুকিয়ে যায় যেখানে বৃষ্টির ফোঁটা পৌঁছে না সেখানে গিয়ে মিলিত হয় সবাই। সুতরাং বৃষ্টিতে দাঁত কিলিয়ে হাসলেও সমস্যা নাই। কোন মশা আসবে না।
-ঠিক আছে বাবা বুঝলাম। এখন বল কেন হাসছিস?
-তুই আমাকে মশার ভয় দেখিয়েছিস। মশাকে আমি দুচউক্ষে দেখতে পারি না। সে মশার ভয় দেখিয়েছিস, তাই তোরে কিছু বলুম না।
বৃষ্টির ফোঁটা ঘন হচ্ছে। এখনের ফোঁটাগুলো একটু ভারী ভারী। শরীরের যেখানে পড়ছে সেখানে হালকা যেন বাড়ি খাচ্ছে এই ধরণের অবস্থা। কেমন একটু ব্যথা। তবে তা মজার।
শারমিন বলে, ঠিক আছে মশা যখন তোর এত অপছন্দ আমি মশা শব্দটা বাদ দিলাম। মশার বদলে হবে বানর। এবার খুশীতো?
তা শুনে ক্ষেপে উঠে মনিহা। কি তুই বানরের কথা বললি? আমার মুখে বানর ঢুকবে! আমার মুখ এত্তবড়! তোর মুখে তো কুকুর ঢুকবে, গন্ডার ঢুকবে, ঐ বড় বড় হাতি আছে না। হাতি ঢুকবে।
উত্তেজিত হয়ে গেলে কি বলবে তার কোন ঠিক ঠিকানা থাকে না মনিহার। মুখে যা আসে তা বলা শুরু করে।
শারমিনের ভাল লাগে। ওকে আতঙ্কিত করছিল মনিহা। এখন বানরের কথা বলে মনিহাকে উত্তেজিত করা গেছে। প্রতিশোধ নেওয়া হয়ে গেল। তবে এখনো জানা যায় নি কেন হেসেছে।
অন্যসময় হলে মনিহার এই রাগ অনেকক্ষণ থাকত। সে একবার রাগলে সহজে তার রাগ ভাঙে না। সপ্তাহব্যাপী চলে। তবে বিশুদ্ধ বৃষ্টির পানির ফোঁটার নিচে থাকলে মন কঠিন ভাবে রাখা সম্ভব না। বৃষ্টির পানির ফোটায় নরম হয়ে যায়। বৃষ্টির ফোঁটাগুলো রাগগুলোকে যেন মাটিতে নিয়ে চলে যায়।
সাবিহা বলে, তোরা কি লাগিয়েছিস? কারণ বলছিস না। অযথা রাগারাগি করছিস।
-তুই ও তো হাসছিস সব দাঁত দেখিয়ে। তোরা বলছিস কেন?
-আরে আমি তো মনিহার হাসি দেখে হাসছি। ও যখন হাসছে তখন ভাবলাম মজার কিছু ঘটছে। এজন্য হাসছি। এখানে আমার দোষ কি?
ওর সরল স্বীকারোক্তি শুনে ওরা হেসে উঠল। বৃষ্টির পানি আর কিশোরীদের হাসির শব্দে ছাদের জায়গাটা যেন অন্যরকম শব্দ মেলায় নিজেকে মাতিয়ে তুলল। সে বৃষ্টি সে হাসি অনেক বেশি নির্মল। দুটাই যেন প্রাকৃতিক।
মনিহা হাত দিয়ে চুলের পানিগুলো ছেটে দেয়। ওর অনেক লম্বা চুল এ বয়সেই। সেজন্য পানি সবচেয়ে বেশি জমে ওর মাথায়। ও বলে, শোন তাহলে কি জন্য হাসছি। শারমিনের হাতগুলো তো অনেক ফর্সা। শারমিন যখন দুইহাত ভরে পানি ভরছিলো তখন ওর হাত গুলো বৃষ্টির পানিতে আরো অনেক বেশি ফর্সা দেখাচ্ছিল। অনেক সুন্দর।
-হুম , আমার হাত ফর্সা দেখালে তোর সমস্যাটা কি?
-আরে শোন আগে, কি সমস্যা।
এই তোরা তর্ক করিস না। মনিহা বল তুই। যেন স্পিকারের ভূমিকায় আছে সাবিহা।
-আচ্ছা বলছি, তা ওর হাত দেখে যা মনে হলো তা বলছি। এরকম কোন এক বৃষ্টিতে ও দুই হাতে পানি ভরবে। তখন ওর স্বামী ওর কাছে হাত থেকে পানি নিতে চাইবে। তখন শারমিন বলে বসবে, এই সরো তোমার কালো হাতের কালি আমার হাতে লেগে যাবে। তুমি সরো। এই কথায় ওর স্বামী কষ্ট পেয়ে কোণায় চলে যাবে। অনেক মন খারাপ হবে বেচারার। শত হোক একমাত্র বউয়ের কাছ থেকে এত্ত বড় আঘাত। তখন শারমিন দৌড় দিয়ে যাবে। এই এদিকে দেখো। আরে একটু দুষ্টামি করলাম। আর তাতেই মাইন্ড করলে। এই দেখ আমার হাত দিচ্ছি। আমার হাতের ফর্সা গুলো তোমাকে লাগিয়ে দিচ্ছি। ওর বলার ভঙ্গি দেখে ওর স্বামী হেসে উঠবে। রাগ ভেঙে যাবে। এগুলো ভাবতে গিয়ে হাসি আসলো। বিশেষ করে রাগ ভাঙানোর জন্য আমাদের শারমিন কি অনুনয় করেই না বলবে, এই দেখো আমার ফর্সাগুলো তোমাকে লাগিয়ে দিচ্ছি। তুমি তোমার কালোগুলো আমাকে লাগাও। প্লিজ, প্লিজ, প্লিজ।
তা শুনে সাবিহা হৈ হৈ করে হেসে উঠে।
শারমিন চেঁচিয়ে উঠে, তুই বলছিস আমার স্বামী কালো হবে না? তোর স্বামীতো কালোর চেয়ে কালো হবে। তার চেয়েও কালো। একেবারে ঘুটঘুটে অন্ধকার কালো হবে।
এই কথাগুলো বলে ছুটে যায় ছাদের গেটের দিকে। গেট খুলে হুড় হুড় করে চলে যায় বাসার দিকে। ওরা দুজন আটকানোর চেষ্টা করে। পারে না।
শারমিনের এখন খারাপ লাগে। কি ছেলেমানুষই না ছিল। ওর স্বামী ফরহাদ। শ্যামলা। তবে অনেক ভাল। অনেক ভালবাসে। ফরহাদের এখন সবচেয়ে কঠিন কাজ শারমিনকে ছেড়ে কোথাও একদিনের বেশি থাকা।
বৃষ্টি আসছে দেখে শারমিন এখন বিরক্ত। একটা কাজে যাওয়ার কথা ছিল। বৃষ্টির জন্য সেটা বাদ দিতে হবে। বৃষ্টিতে এখন আর রোমান্টিকতা খুঁজে পায় না শারমিন। বরং বৃষ্টিকে মনে করে বোঝা। ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বলে। এই যেন বৃষ্টির বিরুদ্ধে সংগ্রাম।
এখন বৃষ্টিতে ভিজতে পারে না। বৃষ্টিতে ভিজতে গেলেই মনিহার কথা মনে পড়ে যায়। মনিহা এক সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যায়। আজ থেকে ৭ বছর আগে। অনেক পছন্দ করত বৃষ্টি। মনিহা চলে যাওয়ার পর থেকে আর ছাদে বৃষ্টিতে ভেজা হতো না। উঠলেই শুধু মনিহার কথা মনে পড়ত।
বৃষ্টিতে ভেজার অভ্যাস মনিহাই ওদের শিখিয়েছিল। মা এত মানা করতেন। তারপরও শুনতো না। আর এখন কেউ মানা করে না। তারপরও বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে করে না।
যেদিন দূর্ঘটনা হয় সেদিনও বৃষ্টি ছিল। গাড়ী স্লিপ খেয়ে পাশের খালে গিয়ে পড়ে। সেখানেই মৃত্যু হয়ে যায় মনিহার। যে পানিকে এত পছন্দ করত সে পানিতেই মৃত্যু। বৃষ্টিই যেন ওর জীবনকে ধুয়ে মুছে দিয়েছে।
সাবিহা এখন অস্টেলিয়া আছে। পিএইচডি করছে। মাঝে মাঝে কথা হয়।
কি উচ্ছ্বাসিত দুরন্ত জীবনই না ছিল। অথচ এখন হারিয়ে গেছে সে সময়গুলো।
বৃষ্টি এলে শুরু হয়ে যেত লাফালাফি। স্প্রিং খেলত। কার চেয়ে কে বেশি পারে। ১০০০ এ ছিল গেম। সাবিহাই বেশির ভাগ সময় জিতত। অনেক দম ওর। একবার তো একসাথেই ২৩০ করেছে। কিভাবে সম্ভব কে জানে। শারমীন একবারে ৬০ এর বেশি কখনো পারতো না। তবে বৃষ্টির পানিতে এভাবে লাফাতে অনেক ভাল লাগত। এক জনের গাঁয়ে অন্যজন পানি ছিটিয়ে দিত। প্রথমে দুই হাত মেলে আকাশের নিচে করে মেলে ধরতো। সেখানে পানি জমা হতো। তারপর সে পানি একজন অন্যজনের দিকে ছুঁড়ে দিত। বয়স তখন কত, এগার কি বারো। ঐই বয়সে একটু একটু বড়দের নিয়ে কথা বলা শুরু করেছে। অন্য জগত নিয়েও নিজেদের মধ্যে হাসি ঠাট্টা হতো। তবে বড়রা সেগুলো জানত না। এসব ব্যাপার মনিহাই বেশি বলত। কান গরম হয়ে যেত। তবে বৃষ্টির পানির ছোয়ায় সে কান আবার ঠান্ডা হতো। কথা শুনে এই গরম হচ্ছে। আবার বৃষ্টির পানি পড়ে সাথে সাথে ঠান্ডা এইরকম অবস্থা।
একদিন পানি দুইহাতে ভরছে শারমিন। তা দেখে মনিহা হাসতে হাসতে শেষ। শারমিন নিজের দিকে তাকায়। উল্টাপাল্টা কিছু হয় নাই তো। আরেকদিন ভুলে জামার পিছনে বোতাম একটা বোতাম খোলা ছিল বলে অনেক হাসাহাসি করেছিল মনিহা ও সাবিহা। এসব সবার আগে মনিহার চোখে পড়ে। শারমিন খেয়াল করলো। না ঠিক মতই আছে। তবে হাসছে কেন?
একটু আতঙ্কিত হয়ে বিরক্তির সাথে জিজ্ঞেস করে, হাসিস কেন?
ওর প্রশ্ন শুনে মনিহার হাসি আরো বেড়ে যায়। যেন প্রশ্নটাই হাসির। সাবিহাও যোগ দেয় হাসিতে। হাসি সংক্রামক। আরো কেউ থাকলে তারাও যোগ দিত। শারমিন একটা জিনিষ খেয়াল করেছে কেউ যদি হাসা শুরু পারে তবে আশে পাশে যারা থাকে তারাও হাসে। কারণ জানার চেয়ে হাসিতে যোগ দেওয়াটাই যেন জুরুরী।
হাসির মাত্রা বেড়ে যাওয়া দেখে শারমিনের ভয় করে। বড়সড় ভুল কিছু হয় নাই তো। আবারও বিভ্রান্ত হয়ে নিজের দিকে তাকায়।
-আরে বলিস না ক্যান? হাসছিস কেন? ৩২ টা দাঁত দেখিয়ে পুরা মুখ খুলে হাসছিস কেন? ঐ দেখ মশা ঢুকতেছে।
-গাধা, বৃষ্টিতে বুঝি মশা থাকে! মশা বৃষ্টিকে পছন্দ করে না। বৃষ্টি এলেই ওরা লুকিয়ে যায় যেখানে বৃষ্টির ফোঁটা পৌঁছে না সেখানে গিয়ে মিলিত হয় সবাই। সুতরাং বৃষ্টিতে দাঁত কিলিয়ে হাসলেও সমস্যা নাই। কোন মশা আসবে না।
-ঠিক আছে বাবা বুঝলাম। এখন বল কেন হাসছিস?
-তুই আমাকে মশার ভয় দেখিয়েছিস। মশাকে আমি দুচউক্ষে দেখতে পারি না। সে মশার ভয় দেখিয়েছিস, তাই তোরে কিছু বলুম না।
বৃষ্টির ফোঁটা ঘন হচ্ছে। এখনের ফোঁটাগুলো একটু ভারী ভারী। শরীরের যেখানে পড়ছে সেখানে হালকা যেন বাড়ি খাচ্ছে এই ধরণের অবস্থা। কেমন একটু ব্যথা। তবে তা মজার।
শারমিন বলে, ঠিক আছে মশা যখন তোর এত অপছন্দ আমি মশা শব্দটা বাদ দিলাম। মশার বদলে হবে বানর। এবার খুশীতো?
তা শুনে ক্ষেপে উঠে মনিহা। কি তুই বানরের কথা বললি? আমার মুখে বানর ঢুকবে! আমার মুখ এত্তবড়! তোর মুখে তো কুকুর ঢুকবে, গন্ডার ঢুকবে, ঐ বড় বড় হাতি আছে না। হাতি ঢুকবে।
উত্তেজিত হয়ে গেলে কি বলবে তার কোন ঠিক ঠিকানা থাকে না মনিহার। মুখে যা আসে তা বলা শুরু করে।
শারমিনের ভাল লাগে। ওকে আতঙ্কিত করছিল মনিহা। এখন বানরের কথা বলে মনিহাকে উত্তেজিত করা গেছে। প্রতিশোধ নেওয়া হয়ে গেল। তবে এখনো জানা যায় নি কেন হেসেছে।
অন্যসময় হলে মনিহার এই রাগ অনেকক্ষণ থাকত। সে একবার রাগলে সহজে তার রাগ ভাঙে না। সপ্তাহব্যাপী চলে। তবে বিশুদ্ধ বৃষ্টির পানির ফোঁটার নিচে থাকলে মন কঠিন ভাবে রাখা সম্ভব না। বৃষ্টির পানির ফোটায় নরম হয়ে যায়। বৃষ্টির ফোঁটাগুলো রাগগুলোকে যেন মাটিতে নিয়ে চলে যায়।
সাবিহা বলে, তোরা কি লাগিয়েছিস? কারণ বলছিস না। অযথা রাগারাগি করছিস।
-তুই ও তো হাসছিস সব দাঁত দেখিয়ে। তোরা বলছিস কেন?
-আরে আমি তো মনিহার হাসি দেখে হাসছি। ও যখন হাসছে তখন ভাবলাম মজার কিছু ঘটছে। এজন্য হাসছি। এখানে আমার দোষ কি?
ওর সরল স্বীকারোক্তি শুনে ওরা হেসে উঠল। বৃষ্টির পানি আর কিশোরীদের হাসির শব্দে ছাদের জায়গাটা যেন অন্যরকম শব্দ মেলায় নিজেকে মাতিয়ে তুলল। সে বৃষ্টি সে হাসি অনেক বেশি নির্মল। দুটাই যেন প্রাকৃতিক।
মনিহা হাত দিয়ে চুলের পানিগুলো ছেটে দেয়। ওর অনেক লম্বা চুল এ বয়সেই। সেজন্য পানি সবচেয়ে বেশি জমে ওর মাথায়। ও বলে, শোন তাহলে কি জন্য হাসছি। শারমিনের হাতগুলো তো অনেক ফর্সা। শারমিন যখন দুইহাত ভরে পানি ভরছিলো তখন ওর হাত গুলো বৃষ্টির পানিতে আরো অনেক বেশি ফর্সা দেখাচ্ছিল। অনেক সুন্দর।
-হুম , আমার হাত ফর্সা দেখালে তোর সমস্যাটা কি?
-আরে শোন আগে, কি সমস্যা।
এই তোরা তর্ক করিস না। মনিহা বল তুই। যেন স্পিকারের ভূমিকায় আছে সাবিহা।
-আচ্ছা বলছি, তা ওর হাত দেখে যা মনে হলো তা বলছি। এরকম কোন এক বৃষ্টিতে ও দুই হাতে পানি ভরবে। তখন ওর স্বামী ওর কাছে হাত থেকে পানি নিতে চাইবে। তখন শারমিন বলে বসবে, এই সরো তোমার কালো হাতের কালি আমার হাতে লেগে যাবে। তুমি সরো। এই কথায় ওর স্বামী কষ্ট পেয়ে কোণায় চলে যাবে। অনেক মন খারাপ হবে বেচারার। শত হোক একমাত্র বউয়ের কাছ থেকে এত্ত বড় আঘাত। তখন শারমিন দৌড় দিয়ে যাবে। এই এদিকে দেখো। আরে একটু দুষ্টামি করলাম। আর তাতেই মাইন্ড করলে। এই দেখ আমার হাত দিচ্ছি। আমার হাতের ফর্সা গুলো তোমাকে লাগিয়ে দিচ্ছি। ওর বলার ভঙ্গি দেখে ওর স্বামী হেসে উঠবে। রাগ ভেঙে যাবে। এগুলো ভাবতে গিয়ে হাসি আসলো। বিশেষ করে রাগ ভাঙানোর জন্য আমাদের শারমিন কি অনুনয় করেই না বলবে, এই দেখো আমার ফর্সাগুলো তোমাকে লাগিয়ে দিচ্ছি। তুমি তোমার কালোগুলো আমাকে লাগাও। প্লিজ, প্লিজ, প্লিজ।
তা শুনে সাবিহা হৈ হৈ করে হেসে উঠে।
শারমিন চেঁচিয়ে উঠে, তুই বলছিস আমার স্বামী কালো হবে না? তোর স্বামীতো কালোর চেয়ে কালো হবে। তার চেয়েও কালো। একেবারে ঘুটঘুটে অন্ধকার কালো হবে।
এই কথাগুলো বলে ছুটে যায় ছাদের গেটের দিকে। গেট খুলে হুড় হুড় করে চলে যায় বাসার দিকে। ওরা দুজন আটকানোর চেষ্টা করে। পারে না।
শারমিনের এখন খারাপ লাগে। কি ছেলেমানুষই না ছিল। ওর স্বামী ফরহাদ। শ্যামলা। তবে অনেক ভাল। অনেক ভালবাসে। ফরহাদের এখন সবচেয়ে কঠিন কাজ শারমিনকে ছেড়ে কোথাও একদিনের বেশি থাকা।
বৃষ্টি আসছে দেখে শারমিন এখন বিরক্ত। একটা কাজে যাওয়ার কথা ছিল। বৃষ্টির জন্য সেটা বাদ দিতে হবে। বৃষ্টিতে এখন আর রোমান্টিকতা খুঁজে পায় না শারমিন। বরং বৃষ্টিকে মনে করে বোঝা। ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বলে। এই যেন বৃষ্টির বিরুদ্ধে সংগ্রাম।
এখন বৃষ্টিতে ভিজতে পারে না। বৃষ্টিতে ভিজতে গেলেই মনিহার কথা মনে পড়ে যায়। মনিহা এক সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যায়। আজ থেকে ৭ বছর আগে। অনেক পছন্দ করত বৃষ্টি। মনিহা চলে যাওয়ার পর থেকে আর ছাদে বৃষ্টিতে ভেজা হতো না। উঠলেই শুধু মনিহার কথা মনে পড়ত।
বৃষ্টিতে ভেজার অভ্যাস মনিহাই ওদের শিখিয়েছিল। মা এত মানা করতেন। তারপরও শুনতো না। আর এখন কেউ মানা করে না। তারপরও বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে করে না।
যেদিন দূর্ঘটনা হয় সেদিনও বৃষ্টি ছিল। গাড়ী স্লিপ খেয়ে পাশের খালে গিয়ে পড়ে। সেখানেই মৃত্যু হয়ে যায় মনিহার। যে পানিকে এত পছন্দ করত সে পানিতেই মৃত্যু। বৃষ্টিই যেন ওর জীবনকে ধুয়ে মুছে দিয়েছে।
সাবিহা এখন অস্টেলিয়া আছে। পিএইচডি করছে। মাঝে মাঝে কথা হয়।
কি উচ্ছ্বাসিত দুরন্ত জীবনই না ছিল। অথচ এখন হারিয়ে গেছে সে সময়গুলো।