বৃহস্পতিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১২

অন্ধ প্রেম (গল্প)

আহাদকে বাড়িতে ডেকে পাঠানো হয়েছে। মনে করছিল কোন বিশেষ জরুরী কাজ। সেজন্য ও তড়িঘড়ি করে ফিরে এসেছে। কিন্তু এসে দেখে ব্যাপার অন্যকিছু।
আহাদ ভাত খাচ্ছে। মা এসে বলল- তোর জন্য মেয়ে একটা ঠিক করছি। দেখতে অনেক ভাল। সামনের সপ্তাহে বিয়ে।..............


: মেয়ে রাজি হয়ছে?
: রাজি হবে না কেন?
পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে আহাদ বলে, আমি যে অন্ধ সেটা মেয়েকে জানানো হয় নাই? জানলে তো রাজি হওয়ার কথা না।
মার গলা নরম হয়ে আসে। বলে, তোর ভাল হবে। তুই অমত দিস না। আমি কি সারাজীবন বেঁচে থাকব? মেয়েটা অনেক লক্ষী, তোকে দেখে শুনে রাখবে। আর অন্ধ হয়েছিস কি হয়েছে? এটা কি তোর ইচ্ছাকৃত? আল্লাহ করছে। এতে তোর তো দোষ নেই। মেয়ের নাম রুমা। অনার্সে পড়ছে।

আহাদ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কোটায় একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করছে। তার সাথে পড়ে নিলু। সেও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কোটাতেই ভর্তি হয়েছে। সে মেয়েকে বিয়ে করবে বলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অযথা একটা স্বাভাবিক মেয়ের জীবনে ঢুকার কোন মানে হয় না। কোন ভাবেই রুমাকে বিয়ে করবে না। বিয়ে করতে হলে ঐ নিলুকেই করবে। দুজনেই অন্ধ। পরষ্পরের কষ্ট পরষ্পর বুঝতে পারবে।

মা জোর করেন। আহাদ নীরব থাকে।

আহাদ দেখি বলে ঢাকায় ফিরে আসে। ঢাকায় এসে নীলুর সাথে দেখা করে। নীলুকে প্রস্তাবটা দিতেই নীলু এক কথায় না বলে দেয়।

: কেন? আমি অন্ধ সেটাই কি আমার দোষ?
: সেটা দোষ হতে যাবে কেন? আমিও তো অন্ধ।
: তবে।

হাতের ব্যাগটা পাশে রাখে নীলু। বলে, বাস্তবতা এত সহজ না। জীবনে চলার পথে অনেক সমস্যায় পড়বে। এসব সমস্যা থেকে বাঁচাতে যে চোখে দেখে এরকম কাউকে তোমার দরকার। তোমার মা তোমাকে আগলে রেখেছেন। চোখে দেখেন তিনি। তিনিতো সারাজীবন থাকবেন না। তুমি তোমার মায়ের পছন্দের ওই মেয়েকে বিয়ে করো। সুখী হবে।
কথাগুলো বলতে নীলুর অনেক কষ্ট হয়। সে ও আহাদকে অনেক পছন্দ করে। আহাদকে ছাড়া অন্য কোন পুরুষ তার আজীবন সঙ্গী হবে তা কখনো কল্পনাই করেনি।

আহাদের চোখে পানি আসে। পুরা পৃথিবী তার কাছে এম্নেতেই অন্ধকারচ্ছন্ন। এখন আরো অনেক বেশি অন্ধকার মনে হচ্ছে।
বাস্তবের কাছে কি হেরে যাবে এই প্রকৃত অন্ধ প্রেম ?



প্রথম আলো ব্লগে লেখাটি : অন্ধ প্রেম