সকাল বেলা। রাত শেষ হয়েছে। আবছা আবছা আলো আসছে চারদিকে। কিছুক্ষণের মধ্যে আলোর বন্যায় প্লাবিত হবে চারপাশ। চারদিকে
আলোকিত। অথচ লিমার মনটা অন্ধকার। যেখানে শুধুই অন্ধকার। ঘুটঘুটে সে
অন্ধকার। লিমার মনে হয় পৃথিবী যদি সব সময় অন্ধকার থাকতো তাহলেই ভাল হতো।
আলোর দিকে তাকাতে ইচ্ছে হয় না। ইচ্ছে হয় সূর্যকে ঢেকে দিতে কালো কিছু দিয়ে।...............
রিমন শেষ পর্যন্ত চিঠি দিল। ঠিক চিঠি না। একটা চিরকুট। কয়েক শব্দের। রিমনের হাতের লেখা বরাবরের মত সুন্দর। মেয়েলি টাইপের। যথেষ্ট যতœ করে চিঠি লিখে ও।
আগে অনেক চিঠি দিত। ভয়াবহ রকমের বড় সে সব চিঠিগুলো। কোন কোন চিঠি পড়তে রাত পার হয়ে যেত। সেসব চিঠি সব আছে। সব আছে।
চিঠিগুলো সব আছে। ডেস্কের মধ্যে তালা মেরে রাখা হয়েছে সব।
মোবাইলে কথা বলতে লিমার ভাল লাগে না। কথাগুলো মনে হয় যান্ত্রিক যান্ত্রিক। এজন্যই এত চিঠির আদান প্রদান। যেদিন একশটা চিঠি পূরণ হয়েছিল সেদিন ঘুরতে বেরিয়েছিল। রিমন নতুন ড্রাইভিং শিখেছে তখন। ওদের গাড়ি আছে।
: তুমি আমার চুলের দিকে এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? দূর্ঘটনা হতে পারে। সামনের দিকে তাকাও।
: তোমার চুল গুলো এত সুন্দর কেন? ইচ্ছা হচ্ছে নাক ডুবিয়ে রাখি ঐ চুলে।
উত্তর দেয় রিমন।
একটা হাত বাড়িয়ে দেয় লিমার মাথার উপর। লিমা হাত সরিয়ে দেয়।
: খবরদার এদিকে হাত দিও না। সামনের দিকে তাকাও। ঐ যে বড় ট্রাক আসছে।
ট্রাক আসে। একটুর জন্য দূর্ঘটনা ঘটতে গিয়েও বেঁচে যায় ওরা। ভাগ্য ভাল।
স্বাভাবিক হওয়ার পর রিমন বলে, আচ্ছা আজ দূর্ঘটনায় যদি আমি মারা যেতাম, তুমি অন্য কাউকে পছন্দ করতে?
: আহা আপনি মরে গেলে যেন আমি বেঁচে থাকতাম।
মন থেকেই কথাটা বলেছিল লিমা।
কথাটা মনে পড়তেই লিমা হেসে উঠে। হু হু করে হাসি। হাসিটার মধ্যে কি আছে কে জানে। পাগলদের এভাবে হাসতে দেখা যায়। লিমা কি পাগল হয়ে যাচ্ছে? কি সাংঘাতিক।
আচ্ছা কোন সময়টা সবচেয়ে সুন্দর। দিনের কোন সময়টা? কারো মতে বিকাল। কারো মতে গভীর রাত। তবে লিমার মনে হচ্ছে সকালের সময়টা খুব সুন্দর। ভোর হচ্ছে। আলোর বন্যায় প্লাবিত হচ্ছে সব। পাখিরা ডাকছে। পরিবেশ অনেক ঠান্ডা। শীতল একটা ভাব। অসাধারণ একটা ভাব।
চিরকুটটি আবার পড়ে লিমা। আবার পড়ে। শব্দ কয়েকটি। মাত্র কয়েকটি শব্দ। আর এই শব্দগুলোর এত শক্তি যে একজনকে পৃথিবীর ছাড়তে বাধ্য করে। লিমা ভাবে এই চিরকুটের শব্দের শব্দগুলোকে কি পরাস্ত করা যায় না? কোন ভাবেই পরাস্ত করা যায় না?
ডেস্কের থেকে চিঠিগুলো বের করে। গ্যাস লাইট দিয়ে রিমনের সব চিঠি জ্বালিয়ে দেয়। অনেক কষ্ট লাগে আবেগী এই চিঠিগুলো পুড়িয়ে দিতে। কত্ত প্রিয় ছিল চিঠিগুলো। অথচ সেগুলো নষ্ট করেছে নিজ হাতে। না করে উপায় নেই। চিঠি গুলো থাকলে রিমন বিপদে পড়বে। অনেক ঝামেলা হবে। পুলিশ যথেষ্ট ভোগাবে ওকে।
কিন্তু হাতের চিরকুটটি রয়ে গেছে। এটাই শেষ চিঠি। এটাও কি পুড়িয়ে ফেলবে? বুঝে না কি করবে। রিমনের কোন চিঠিই কি থাকবে না ওর কাছে? হ্যা থাকতেই হবে। কিন্তু কিভাবে? হঠাৎ কি হয়। লিমা চিঠিটি খেয়ে ফেলে। নিজের অস্তিত্বের সাথে মিশিয়ে ফেলে চিঠিখানা। হোক না চিঠির শব্দগুলো অতি নিষ্ঠুর। তারপরও তো প্রিয়জনের লেখা। কোন প্রমাণ থাকল না। আইনগত ভাবে রিমন কোন বিপদে পড়বে না।
হাতে থাকা ডেটলের বোতল থেকে হলুদ পানিগুলো গ্লাসে ঢালে লিমা। বোতল দিয়ে পান করতে ভাল লাগে না। তাই গ্লাসে ঢালা।
খেতে যাবে। হঠাৎ হাত থেমে যায়। এভাবে মরে গেলে পোস্ট মর্টেম করা হবে। পোস্ট মর্টেমে নাকি মৃত মানুষ নিষ্ঠুর ভাবে কাটা হয়।
সে ডায়েরী টেনে নেয়। সেখানে গুটি গুটি অক্ষরে লিখে, প্লিজ আমাকে পোস্ট মর্টেম করবেন না, মৃত্যুর আগে আমার রাখা এই অনুরোধটুকু অন্তত রাখবেন।
আরো কিছু কি লেখা উচিত। যাতে অনুরোধটুকুর প্রতি মায়া জন্মায়। খুঁজে পায় না কি লিখবে।
তারপরও সাথে যুক্ত করে দেয়, আমি পোস্ট মর্টেমকে খুব ভয় পাই।
রিমন প্রশ্ন রেখেছিল ও মারা গেলে অন্য কাউকে পছন্দ করবে কিনা? রিমন বেঁচে আছে। কিন্তু লিমা কিছুক্ষণ পর আর থাকবে না। প্রশ্নটা মনে পড়ায় এজন্য এত হাসি আসে ওর। আচ্ছা ভালবাসা গুলো এত প্রতারক হয় কিভাবে?
ভোর আরেকটু সকাল হয়। মা – বাবা এখনো উঠে নি। হাতে যথেষ্ট সময়। লিমা ঢক ঢক করে খেয়ে ফেলে গ্লাসে ডেটলগুলো।
এরপর.......................
পোস্টমর্টেম না করার অনুরোধ কি রাখবে জীবতরা??
রিমন শেষ পর্যন্ত চিঠি দিল। ঠিক চিঠি না। একটা চিরকুট। কয়েক শব্দের। রিমনের হাতের লেখা বরাবরের মত সুন্দর। মেয়েলি টাইপের। যথেষ্ট যতœ করে চিঠি লিখে ও।
আগে অনেক চিঠি দিত। ভয়াবহ রকমের বড় সে সব চিঠিগুলো। কোন কোন চিঠি পড়তে রাত পার হয়ে যেত। সেসব চিঠি সব আছে। সব আছে।
চিঠিগুলো সব আছে। ডেস্কের মধ্যে তালা মেরে রাখা হয়েছে সব।
মোবাইলে কথা বলতে লিমার ভাল লাগে না। কথাগুলো মনে হয় যান্ত্রিক যান্ত্রিক। এজন্যই এত চিঠির আদান প্রদান। যেদিন একশটা চিঠি পূরণ হয়েছিল সেদিন ঘুরতে বেরিয়েছিল। রিমন নতুন ড্রাইভিং শিখেছে তখন। ওদের গাড়ি আছে।
: তুমি আমার চুলের দিকে এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? দূর্ঘটনা হতে পারে। সামনের দিকে তাকাও।
: তোমার চুল গুলো এত সুন্দর কেন? ইচ্ছা হচ্ছে নাক ডুবিয়ে রাখি ঐ চুলে।
উত্তর দেয় রিমন।
একটা হাত বাড়িয়ে দেয় লিমার মাথার উপর। লিমা হাত সরিয়ে দেয়।
: খবরদার এদিকে হাত দিও না। সামনের দিকে তাকাও। ঐ যে বড় ট্রাক আসছে।
ট্রাক আসে। একটুর জন্য দূর্ঘটনা ঘটতে গিয়েও বেঁচে যায় ওরা। ভাগ্য ভাল।
স্বাভাবিক হওয়ার পর রিমন বলে, আচ্ছা আজ দূর্ঘটনায় যদি আমি মারা যেতাম, তুমি অন্য কাউকে পছন্দ করতে?
: আহা আপনি মরে গেলে যেন আমি বেঁচে থাকতাম।
মন থেকেই কথাটা বলেছিল লিমা।
কথাটা মনে পড়তেই লিমা হেসে উঠে। হু হু করে হাসি। হাসিটার মধ্যে কি আছে কে জানে। পাগলদের এভাবে হাসতে দেখা যায়। লিমা কি পাগল হয়ে যাচ্ছে? কি সাংঘাতিক।
আচ্ছা কোন সময়টা সবচেয়ে সুন্দর। দিনের কোন সময়টা? কারো মতে বিকাল। কারো মতে গভীর রাত। তবে লিমার মনে হচ্ছে সকালের সময়টা খুব সুন্দর। ভোর হচ্ছে। আলোর বন্যায় প্লাবিত হচ্ছে সব। পাখিরা ডাকছে। পরিবেশ অনেক ঠান্ডা। শীতল একটা ভাব। অসাধারণ একটা ভাব।
চিরকুটটি আবার পড়ে লিমা। আবার পড়ে। শব্দ কয়েকটি। মাত্র কয়েকটি শব্দ। আর এই শব্দগুলোর এত শক্তি যে একজনকে পৃথিবীর ছাড়তে বাধ্য করে। লিমা ভাবে এই চিরকুটের শব্দের শব্দগুলোকে কি পরাস্ত করা যায় না? কোন ভাবেই পরাস্ত করা যায় না?
ডেস্কের থেকে চিঠিগুলো বের করে। গ্যাস লাইট দিয়ে রিমনের সব চিঠি জ্বালিয়ে দেয়। অনেক কষ্ট লাগে আবেগী এই চিঠিগুলো পুড়িয়ে দিতে। কত্ত প্রিয় ছিল চিঠিগুলো। অথচ সেগুলো নষ্ট করেছে নিজ হাতে। না করে উপায় নেই। চিঠি গুলো থাকলে রিমন বিপদে পড়বে। অনেক ঝামেলা হবে। পুলিশ যথেষ্ট ভোগাবে ওকে।
কিন্তু হাতের চিরকুটটি রয়ে গেছে। এটাই শেষ চিঠি। এটাও কি পুড়িয়ে ফেলবে? বুঝে না কি করবে। রিমনের কোন চিঠিই কি থাকবে না ওর কাছে? হ্যা থাকতেই হবে। কিন্তু কিভাবে? হঠাৎ কি হয়। লিমা চিঠিটি খেয়ে ফেলে। নিজের অস্তিত্বের সাথে মিশিয়ে ফেলে চিঠিখানা। হোক না চিঠির শব্দগুলো অতি নিষ্ঠুর। তারপরও তো প্রিয়জনের লেখা। কোন প্রমাণ থাকল না। আইনগত ভাবে রিমন কোন বিপদে পড়বে না।
হাতে থাকা ডেটলের বোতল থেকে হলুদ পানিগুলো গ্লাসে ঢালে লিমা। বোতল দিয়ে পান করতে ভাল লাগে না। তাই গ্লাসে ঢালা।
খেতে যাবে। হঠাৎ হাত থেমে যায়। এভাবে মরে গেলে পোস্ট মর্টেম করা হবে। পোস্ট মর্টেমে নাকি মৃত মানুষ নিষ্ঠুর ভাবে কাটা হয়।
সে ডায়েরী টেনে নেয়। সেখানে গুটি গুটি অক্ষরে লিখে, প্লিজ আমাকে পোস্ট মর্টেম করবেন না, মৃত্যুর আগে আমার রাখা এই অনুরোধটুকু অন্তত রাখবেন।
আরো কিছু কি লেখা উচিত। যাতে অনুরোধটুকুর প্রতি মায়া জন্মায়। খুঁজে পায় না কি লিখবে।
তারপরও সাথে যুক্ত করে দেয়, আমি পোস্ট মর্টেমকে খুব ভয় পাই।
রিমন প্রশ্ন রেখেছিল ও মারা গেলে অন্য কাউকে পছন্দ করবে কিনা? রিমন বেঁচে আছে। কিন্তু লিমা কিছুক্ষণ পর আর থাকবে না। প্রশ্নটা মনে পড়ায় এজন্য এত হাসি আসে ওর। আচ্ছা ভালবাসা গুলো এত প্রতারক হয় কিভাবে?
ভোর আরেকটু সকাল হয়। মা – বাবা এখনো উঠে নি। হাতে যথেষ্ট সময়। লিমা ঢক ঢক করে খেয়ে ফেলে গ্লাসে ডেটলগুলো।
এরপর.......................
পোস্টমর্টেম না করার অনুরোধ কি রাখবে জীবতরা??