বুকের ভিতরটায় অন্যরকম লাগছে নীলা আহমদের। যদি ঠিক ধরতে পারছে না, এটা ভাল
লাগার না খারাপ লাগার। যদিও নীলা আহমদ তার আসল নাম না। ভার্চুয়াল জগতে এই
নামেই সে পরিচিত। যেসব বন্ধুদের সাথে ব্যক্তিগত পরিচয় নাই তারা এই নামেই
তাকে চিনে। ওর আসল নাম জুই সুলতানা। নীল রঙ অনেক পছন্দের। তাই থেকে নীলা
নাম নিয়েছে নিজের। আর ওর সবচেয়ে ভাল লাগে হুমায়ুন আহমদের বই। হুমায়ুনের বই
হাতের নাগালে পেলেই হলো। সব কিছু বাদ দিয়ে ওই বই পড়তে বসে যায়। সে ছোট বেলা
থেকে হুমায়ুনের বইয়ের প্রতি যে আগ্রহ এখনও সে আগ্রহ রয়ে গেছে। প্রিয়
লেখকের নামের শেষাংষ যুক্ত করেছে নিজের ভার্চুয়াল নামে। নিজের নাম নিজে
দেওয়া। সম্পূর্ণ নিজের পছন্দ অনুযায়ী। ব্যাপারটা ভাবতে ভাল লাগে নীলার। ...............
অনেকে কয়েকদিন পর পর নাম পরিবর্তন করে। দেখে মজা লাগে নীলার। প্রিয় রঙ আর প্রিয় লেখকের নাম যুক্ত করে নিজের ভার্চুয়াল নামটা একবারই পরিবর্তন করতে ইচ্ছা হয়েছিল। যখন হুমায়ুন আহমদ নিজের মেয়ের বয়সী একটা মেয়েকে বিয়ে করে বসে। অনেক ক্ষুব্ধ হয়েছিল সেদিন। ইচ্ছা করছিল প্রিয় লেখকের নাম থেকে হুমায়ুনকে বাদ দিয়ে দেওয়ার। কিন্তু চিন্তা করে দেখল, ওতো হুমায়ুন আহমদের লেখাকে পছন্দ করে। লেখাগুলোর জন্যই হো হুমায়ুন আহমদ এত প্রিয়। ওই লেখা তো কোন দোষ করে নাই। এখনও লেখাগুলো আগের মতই ভাল লাগে। দরকার নেই নাম পরিবর্তনের। লেখা ভাল লাগলেই হলো।
এ কাজটা করতে গিয়ে একবার মনে হচ্ছে এটা ভালই তো। আর কেউ ভুল বুঝবে না। অযথা অফার দিয়ে বসবে না। প্রত্যাখ্যান করতে হবে না অতি আকুতি নিয়ে আসা কাউকে। অনেক বেশি আগ্রহ নিয়ে কেউ আসলে তাকে প্রত্যাখ্যান করা অনেক কষ্টের তা জানে ও। তারপরও করতে হয়। অন্যকে অযথা স্বপ্ন সাগরে ভিড়িয়ে কি লাভ। স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনা যে কত কষ্টের তা টের পেয়েছে নীলা। যদিও স্বপ্নটা একটু বেশি আগেই দেখেছিল। তখন অষ্টম শ্রেণীতে পড়ত। মানবীয় ভালবাসা সম্পর্কে এত বেশি জানা হয় নি। একেবারে জানত না যে তাও না। আর পড়ত মেয়েদের স্কুলে। তাই এই ব্যাপারটাতে ছেলেদের অনুপস্থিতি একটা নিষ্ক্রিয় ভূমিকা রাখে হঠাৎ ভাল লেগে যাওয়ায়। এদিক থেকে নীলার পরিবারও ছিল কিছুটা দুশ্চিন্তামুক্ত। মেয়েদের স্কুলে মেয়েকে ভর্তি করিয়েছেন। ছেলেদের সাথে হাঁটা চলা, কথা বলতে গিয়ে কারো প্রতি দুর্বল হওয়ার সম্ভাবনা নেই অন্তত প্রতিষ্ঠানে গিয়ে।
তারপরও ঐ মেয়েদের স্কুলেই ঘটে গেল সে ব্যাপার। হঠাৎ একদিন খেয়াল করে বান্ধবীরা ওকে ফরিদা নামে ডাকছে। আশ্চর্য ব্যাপারতো। এই স্কুলে সবাই জুই নামেই চিনে। ফরিদা নাম আসল কোথা থেকে। কিছুদিনের মধ্যে টের পেল। ওদের স্কুলে নতুন একজন বাংলা স্যার এসেছেন। টকটকে ফর্সা চেহারা। অনেক লম্বা। নাম ফরিদ। সে স্যার সবকিছুতে জুইকে আগে ডাকেন। পড়া জিজ্ঞেস করেন জুইকে সবার আগে। এই ব্যাপারটা দেখেই বান্ধবীরা ফরিদা নামে ডাকা শুরু করে।
বিব্রত হয় জুই। কিন্তু কেমন জানি ভালও লাগে। বান্ধবীদের সাথে উত্তেজিত অবস্থা দেখালেও ভিতরে ভিতরে কিছু প্রসন্নতাও থাকে। ফরিদ স্যার অনেক সুন্দর করে কথা বলেন। আর বাংলায় বরাবরই দুর্বল জুই। স্যার অনেক সহজে ব্যকরণের বিষয়গুলো বুঝিয়ে দেন। কিভাবে যে ক্লাসটি পার হয়ে যায় তা বুঝায়ই যায় না। বাংলায় দুর্বলতার জন্য সে স্যারের কাছে বান্ধবীদের সাথে ব্যাচে প্রাইভেট পড়া শুরু করে। জুইয়ের মনে হয় ও প্রাইভেটে এসেছে দেখে স্যার খুশী হয়েছেন। এটা ভেবে ভাল লাগে। সাথে ওর ফরিদা নামটা আরো মজবুত হয়। কোন বান্ধবী ভুলেও জুই নামে ডাকত না।
স্যারের কানে কথাটা যায়। স্যার হাসেন। মানা করেন না। ভাল লাগা আরো বেড়ে যায়। মেট্রিকের আগে স্যার বাসায় আসতেন। ব্যকরণের সমস্যা গুলো বুঝিয়ে দিতেন। যে প্রশ্নের নোট দরকার তৈরি করে এনে দিতেন। এই স্যারকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু। মুধুর সে সব স্বপ্ন। মাঝে মাঝে লজ্জা লাগত এই ধরণের বড়দের স্বপ্ন দেখা শুরু করেছে দেখে। লজ্জার চেয়ে যে ভাল লাগাটাই বেশি ছিল। রাতে ঘুমানোর আগে একটা মুখই কল্পনায় আসত। সে ফরিদ স্যার। মনের মাঝে ফরিদ স্যার কখন যে এত বেশি আপন হয়ে গেছে তা টের পায়নি জুই। মনের অজান্তেই আপন থেকে আপন হচ্ছে এই মানুষটি। মাঝে মাঝে ইচ্ছা হতো স্যার ডাকবে না। নাম ধরে ডাকবে। সব কিছু কল্পনাতেই। বাস্তবে এই ধরণের কিছু হয় নি। তারপরও জ্ইুয়ের কাছে মনে হয় সে সময়গুলোই ছিল জীবনের শ্রেষ্ঠ্য সময়। ইচ্ছে ছিল স্কুল থেকে বের হয়ে কলেজে গেলে তখন স্যারকে বলবে ভাল লাগার কথাগুলো। সাহস করে বলেই ফেলবে। সুন্দর স্বপ্ন আলোকিত করার জন্য যে বলতেই হবে।
তা হঠাৎ স্বপ্ন অন্ধকার হয়। কোন নোটিশ ছাড়াই। এস এস সি পরীক্ষা শেষ। আগে কোচিং করতে হত কলেজ ভর্তির জন্য। কিন্তু তাদের সময় থেকে কোচিং ব্যবসা বন্ধের জন্য কলেজের ভর্তি পরীক্ষা বাদ দেওয়া হয়। সেজন্য হাতে অনেক অবসর। দাদার বাড়ী, নানার বাড়ী ঘুরছিল। এইরকম সময়ে একদিন শুনে ফরিদ স্যার আর এই স্কুলে নেই। এই স্কুলে কেন বাংলাদেশে কোন স্কুলেই নেই। ফরিদ স্যার স্কলারশিপ পেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন। মন পুরা খারাপ হয়ে যায়। একবার বলে পর্যন্ত যান নাই। কি নিষ্ঠুর। বলা হয় মেয়েরা নিষ্ঠুর। জুইয়ের মনে হয় ছেলেরা তার চেয়ে বেশি নিষ্ঠুর। স্যার যাওয়ার আগে একবার বলে গেলে কি সমস্যা হতো?
এর পর অনেক চেষ্টা করেছে স্যারের সাথে যোগাযোগ করার। কিন্তু সম্ভব হয় নাই। মেয়ে মানুষের পক্ষে অনেক কিছু আসলে অসাধ্য থেকেই যায়। ছেলে হলে হয়ত খুঁজে বের করতে সমস্যা হতো না। পাওয়া যেত।
পরীক্ষায় রেজাল্ট হয়। স্কুল থেকে ঐই একমাত্র গোল্ডেন এ প্লাস পায়। অনেকে বাংলার জন্য গোল্ডেন এ প্লাস থেকে বঞ্চিত হয়। কিন্তু এত ভাল রেজাল্টের পরও মন খারাপ কমে না। আগে রাতে ঘুমানোর আগে যে স্বপ্ন কল্পনাগুলো ছিল সুন্দর সঙ্গী এগুলো এখন অনেক বেশি কষ্টের। আগে ঐ স্বপ্ন গুলো ঘুম এনে দিত। আর এখন কেড়ে নেয়। দুঃস্বপ্ন হয়ে গেছে যেন।
নাহ আর কাউকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে নি জুই। চেহারা সুন্দর দেখে ওকে নিয়ে অনেকে স্বপ্ন দেখতে চেয়েছিল। কিন্তু নিজের স্বপ্ন ভাঙার যন্ত্রণায় আর কাউকে দিতে চায়নি। সেজন্য কখনো বিনয়ের সাথে কখনো কড়া ভাবে প্রত্যাখান করেছে অফার গুলো।
বাবা মায়ের পছন্দের ছেলে আকিব। বুয়েটের শিক্ষক। তার সাথেই বিয়ে হয় জুই। বিয়ের জন্য কিছুদিন নেটেই বসতে পারে নি। আজ বসল।
বসেই প্রোফাইল চেঞ্জে গিয়ে রিলেশনে সিঙ্গেল থেকে ম্যারিড টু আকিব লিখে। পরিবর্তন করার সময় অন্যরকম লাগছে। ঠিক বুঝা যাচ্ছে না। কি সহজে পরিবর্তন হয়ে গেল। ২৪ বছরের একটা পরিচয় পরিবর্তন হয়ে গেল নিমিষে।
তবে বিস্ময় তখনও শেষ হয় নাই জুইয়ের। যে ছেলেটা দুইদিন আগেও প্রেম নিবেদন করেছিল সেও অভিনন্দন জানাচ্ছে। কি বিস্ময়ের। মানুষ কি সহজে মেনে নিতে পারে। আরো অনেকের অভিনন্দন পায় যাদের মধ্যে বেশ কয়েক জন আছে যারা অফার দিয়েছিল।
আচ্ছা ফরিদ স্যার কখনো এড হয়ে অভিনন্দন জানাবে না?? এখন তো আর সমস্যা নেই? বিস্ময়ে অপেক্ষা করে জুই।
অনেকে কয়েকদিন পর পর নাম পরিবর্তন করে। দেখে মজা লাগে নীলার। প্রিয় রঙ আর প্রিয় লেখকের নাম যুক্ত করে নিজের ভার্চুয়াল নামটা একবারই পরিবর্তন করতে ইচ্ছা হয়েছিল। যখন হুমায়ুন আহমদ নিজের মেয়ের বয়সী একটা মেয়েকে বিয়ে করে বসে। অনেক ক্ষুব্ধ হয়েছিল সেদিন। ইচ্ছা করছিল প্রিয় লেখকের নাম থেকে হুমায়ুনকে বাদ দিয়ে দেওয়ার। কিন্তু চিন্তা করে দেখল, ওতো হুমায়ুন আহমদের লেখাকে পছন্দ করে। লেখাগুলোর জন্যই হো হুমায়ুন আহমদ এত প্রিয়। ওই লেখা তো কোন দোষ করে নাই। এখনও লেখাগুলো আগের মতই ভাল লাগে। দরকার নেই নাম পরিবর্তনের। লেখা ভাল লাগলেই হলো।
এ কাজটা করতে গিয়ে একবার মনে হচ্ছে এটা ভালই তো। আর কেউ ভুল বুঝবে না। অযথা অফার দিয়ে বসবে না। প্রত্যাখ্যান করতে হবে না অতি আকুতি নিয়ে আসা কাউকে। অনেক বেশি আগ্রহ নিয়ে কেউ আসলে তাকে প্রত্যাখ্যান করা অনেক কষ্টের তা জানে ও। তারপরও করতে হয়। অন্যকে অযথা স্বপ্ন সাগরে ভিড়িয়ে কি লাভ। স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনা যে কত কষ্টের তা টের পেয়েছে নীলা। যদিও স্বপ্নটা একটু বেশি আগেই দেখেছিল। তখন অষ্টম শ্রেণীতে পড়ত। মানবীয় ভালবাসা সম্পর্কে এত বেশি জানা হয় নি। একেবারে জানত না যে তাও না। আর পড়ত মেয়েদের স্কুলে। তাই এই ব্যাপারটাতে ছেলেদের অনুপস্থিতি একটা নিষ্ক্রিয় ভূমিকা রাখে হঠাৎ ভাল লেগে যাওয়ায়। এদিক থেকে নীলার পরিবারও ছিল কিছুটা দুশ্চিন্তামুক্ত। মেয়েদের স্কুলে মেয়েকে ভর্তি করিয়েছেন। ছেলেদের সাথে হাঁটা চলা, কথা বলতে গিয়ে কারো প্রতি দুর্বল হওয়ার সম্ভাবনা নেই অন্তত প্রতিষ্ঠানে গিয়ে।
তারপরও ঐ মেয়েদের স্কুলেই ঘটে গেল সে ব্যাপার। হঠাৎ একদিন খেয়াল করে বান্ধবীরা ওকে ফরিদা নামে ডাকছে। আশ্চর্য ব্যাপারতো। এই স্কুলে সবাই জুই নামেই চিনে। ফরিদা নাম আসল কোথা থেকে। কিছুদিনের মধ্যে টের পেল। ওদের স্কুলে নতুন একজন বাংলা স্যার এসেছেন। টকটকে ফর্সা চেহারা। অনেক লম্বা। নাম ফরিদ। সে স্যার সবকিছুতে জুইকে আগে ডাকেন। পড়া জিজ্ঞেস করেন জুইকে সবার আগে। এই ব্যাপারটা দেখেই বান্ধবীরা ফরিদা নামে ডাকা শুরু করে।
বিব্রত হয় জুই। কিন্তু কেমন জানি ভালও লাগে। বান্ধবীদের সাথে উত্তেজিত অবস্থা দেখালেও ভিতরে ভিতরে কিছু প্রসন্নতাও থাকে। ফরিদ স্যার অনেক সুন্দর করে কথা বলেন। আর বাংলায় বরাবরই দুর্বল জুই। স্যার অনেক সহজে ব্যকরণের বিষয়গুলো বুঝিয়ে দেন। কিভাবে যে ক্লাসটি পার হয়ে যায় তা বুঝায়ই যায় না। বাংলায় দুর্বলতার জন্য সে স্যারের কাছে বান্ধবীদের সাথে ব্যাচে প্রাইভেট পড়া শুরু করে। জুইয়ের মনে হয় ও প্রাইভেটে এসেছে দেখে স্যার খুশী হয়েছেন। এটা ভেবে ভাল লাগে। সাথে ওর ফরিদা নামটা আরো মজবুত হয়। কোন বান্ধবী ভুলেও জুই নামে ডাকত না।
স্যারের কানে কথাটা যায়। স্যার হাসেন। মানা করেন না। ভাল লাগা আরো বেড়ে যায়। মেট্রিকের আগে স্যার বাসায় আসতেন। ব্যকরণের সমস্যা গুলো বুঝিয়ে দিতেন। যে প্রশ্নের নোট দরকার তৈরি করে এনে দিতেন। এই স্যারকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু। মুধুর সে সব স্বপ্ন। মাঝে মাঝে লজ্জা লাগত এই ধরণের বড়দের স্বপ্ন দেখা শুরু করেছে দেখে। লজ্জার চেয়ে যে ভাল লাগাটাই বেশি ছিল। রাতে ঘুমানোর আগে একটা মুখই কল্পনায় আসত। সে ফরিদ স্যার। মনের মাঝে ফরিদ স্যার কখন যে এত বেশি আপন হয়ে গেছে তা টের পায়নি জুই। মনের অজান্তেই আপন থেকে আপন হচ্ছে এই মানুষটি। মাঝে মাঝে ইচ্ছা হতো স্যার ডাকবে না। নাম ধরে ডাকবে। সব কিছু কল্পনাতেই। বাস্তবে এই ধরণের কিছু হয় নি। তারপরও জ্ইুয়ের কাছে মনে হয় সে সময়গুলোই ছিল জীবনের শ্রেষ্ঠ্য সময়। ইচ্ছে ছিল স্কুল থেকে বের হয়ে কলেজে গেলে তখন স্যারকে বলবে ভাল লাগার কথাগুলো। সাহস করে বলেই ফেলবে। সুন্দর স্বপ্ন আলোকিত করার জন্য যে বলতেই হবে।
তা হঠাৎ স্বপ্ন অন্ধকার হয়। কোন নোটিশ ছাড়াই। এস এস সি পরীক্ষা শেষ। আগে কোচিং করতে হত কলেজ ভর্তির জন্য। কিন্তু তাদের সময় থেকে কোচিং ব্যবসা বন্ধের জন্য কলেজের ভর্তি পরীক্ষা বাদ দেওয়া হয়। সেজন্য হাতে অনেক অবসর। দাদার বাড়ী, নানার বাড়ী ঘুরছিল। এইরকম সময়ে একদিন শুনে ফরিদ স্যার আর এই স্কুলে নেই। এই স্কুলে কেন বাংলাদেশে কোন স্কুলেই নেই। ফরিদ স্যার স্কলারশিপ পেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন। মন পুরা খারাপ হয়ে যায়। একবার বলে পর্যন্ত যান নাই। কি নিষ্ঠুর। বলা হয় মেয়েরা নিষ্ঠুর। জুইয়ের মনে হয় ছেলেরা তার চেয়ে বেশি নিষ্ঠুর। স্যার যাওয়ার আগে একবার বলে গেলে কি সমস্যা হতো?
এর পর অনেক চেষ্টা করেছে স্যারের সাথে যোগাযোগ করার। কিন্তু সম্ভব হয় নাই। মেয়ে মানুষের পক্ষে অনেক কিছু আসলে অসাধ্য থেকেই যায়। ছেলে হলে হয়ত খুঁজে বের করতে সমস্যা হতো না। পাওয়া যেত।
পরীক্ষায় রেজাল্ট হয়। স্কুল থেকে ঐই একমাত্র গোল্ডেন এ প্লাস পায়। অনেকে বাংলার জন্য গোল্ডেন এ প্লাস থেকে বঞ্চিত হয়। কিন্তু এত ভাল রেজাল্টের পরও মন খারাপ কমে না। আগে রাতে ঘুমানোর আগে যে স্বপ্ন কল্পনাগুলো ছিল সুন্দর সঙ্গী এগুলো এখন অনেক বেশি কষ্টের। আগে ঐ স্বপ্ন গুলো ঘুম এনে দিত। আর এখন কেড়ে নেয়। দুঃস্বপ্ন হয়ে গেছে যেন।
নাহ আর কাউকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে নি জুই। চেহারা সুন্দর দেখে ওকে নিয়ে অনেকে স্বপ্ন দেখতে চেয়েছিল। কিন্তু নিজের স্বপ্ন ভাঙার যন্ত্রণায় আর কাউকে দিতে চায়নি। সেজন্য কখনো বিনয়ের সাথে কখনো কড়া ভাবে প্রত্যাখান করেছে অফার গুলো।
বাবা মায়ের পছন্দের ছেলে আকিব। বুয়েটের শিক্ষক। তার সাথেই বিয়ে হয় জুই। বিয়ের জন্য কিছুদিন নেটেই বসতে পারে নি। আজ বসল।
বসেই প্রোফাইল চেঞ্জে গিয়ে রিলেশনে সিঙ্গেল থেকে ম্যারিড টু আকিব লিখে। পরিবর্তন করার সময় অন্যরকম লাগছে। ঠিক বুঝা যাচ্ছে না। কি সহজে পরিবর্তন হয়ে গেল। ২৪ বছরের একটা পরিচয় পরিবর্তন হয়ে গেল নিমিষে।
তবে বিস্ময় তখনও শেষ হয় নাই জুইয়ের। যে ছেলেটা দুইদিন আগেও প্রেম নিবেদন করেছিল সেও অভিনন্দন জানাচ্ছে। কি বিস্ময়ের। মানুষ কি সহজে মেনে নিতে পারে। আরো অনেকের অভিনন্দন পায় যাদের মধ্যে বেশ কয়েক জন আছে যারা অফার দিয়েছিল।
আচ্ছা ফরিদ স্যার কখনো এড হয়ে অভিনন্দন জানাবে না?? এখন তো আর সমস্যা নেই? বিস্ময়ে অপেক্ষা করে জুই।