ব্যাপারটা একটু অন্যরকম দেখাচ্ছে। পথে যারা হাঁটছে তারা তাকাচ্ছে আড়চোখে ।
কেউ কেউ দাঁড়িয়ে গেছে ব্যাপারটা ঠান্ডা মাথায় দেখতে। সেদিকে কোন নজর নেই
রুবার। অতি সুন্দরী একটা মেয়ে ঝালমুড়ি বানাচ্ছে তা স্বাভাবিক ভাবে নেওয়া
একটু কষ্টকর বটে। যারা দেখছে তাদের কষ্ট হচ্ছে কিনা বুঝা যাচ্ছে না। তবে
তারা যে বেশ মজা পাচ্ছে তাদের মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে।.......
রুবা পেয়াজ কাটছে। আস্তে আস্তে। প্রথমদিকে ঝালমুড়িঅলার মত কুচ কুচ করে তাড়াতাড়ি কাটার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু বড় বড় হয়ে যাচ্ছে কাটা পেয়াজের আকৃতিগুলো। তাই আস্তে আস্তে কাটছে। ঝালমুড়িঅলা কাছে দাঁড়িয়ে তা দেখছে। অনেক ভাল লাগছে। যে জিনিষ প্রতিদিন ধরে সে জিনিষ একটা সুন্দর মেয়ে ধরছে ব্যাপারটা ভাবতেই অন্যরকম লাগছে। স্বপ্ন স্বপ্ন একটা ব্যাপার।
সেন্ট্রাল মার্কেটের সামনে বসে সাধারণত। কিন্তু আজ আগেই অন্য এক জন সেখানে বসে যাওয়ায় এই দিকটায় চলে এসেছে। ভাগ্যিস এখানে এসেছে। বেশি পেয়াজ মরিচ কেটে রাখতে হয়। যাতে কাস্টমার আসলে সাথে সাথে বানিয়ে দেওয়া যায়। কেউ ঝাল বেশি পছন্দ করে। কেউ আবার মরিচ কম দিতে বলে। তা পেয়াজ কাটছিল। এসময় দেখে একটা মেয়ে সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। মুখটা অনেক বেশি ফর্সা। দেখলেই অনেক ভাল লাগে। এরকম সুন্দর মেয়ে তার বানানো ঝালমুড়ি খাবে?
-আচ্ছা ঝালমুড়ি ভাই একটা কাজ করা যাবে?
এভাবে আপন করে আগে কেউ কখনো ঝালমুড়ি ভাই বলে নাই। কি আন্তরিক গলায় বলছে। যতবড় কঠিন কাজই করতে বলুক না কে করে ফেলবে বলে প্রস্তুতি নেয়। প্রায় পাঁচ বছর ধরে এই ঢাকা শহরে ঝালমুড়ি বিক্রি করে। এই প্রথম কেউ এত আবেগ দিয়ে বলল। আনন্দে চোখে পানি এসে যায় কামালের।
-আপনি একটু সরবেন? আমি নিজে ঝালমুড়ি বানাবো। রাস্তায় দাঁড়িয়ে ঝালমুড়ি বানাতে ইচ্ছে হচ্ছে।
তা শুনে থ হয়ে যায় কামাল। একটু হতাশও। মনে করেছিল কঠিন কোন কাজ করতে দেবে। কিন্তু এটাতো সামান্য কাজ। আবার মজাও পায়। নিজে সরে গিয়ে জায়গা করে দেয়।
রুবা ঝাল মুড়ি বানানো শুরু করে। অনেক ভাল লাগছে ওর। রুবা চিন্তা করেছে এই কয়দিন শুধু এরকম পাগলামী করবে। পাগলামী করা যে এত আনন্দায়ক হবে তা আগে বুঝে নাই। শুধু লোক চক্ষুর ভয়ে অনেক পাগলামী থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখে। এখন থেকে আর যে কয়দিন আছে যে পাগলামী করতে ইচ্ছে হবে তা করে ফেলবে। এরিমধ্যে দেখে একটা মটর সাইকেল এসে দাঁড়ায়। সাইকেলের দুজন আরোহী। একজনের কাঁধে ভারী ক্যামেরা। হোন্ডার রেজি. প্লেটে লেখা সাংবাদিক। ওকে দেখেই যে মোটর সাইকেল আরোহী থেমেছে তা বুঝা যায়। রুবা সাথে সাথে সরে আসে।
পরের দিন পত্রিকায় ঝালমুড়িঅলা হিসাবে ওর ছবি দেখলে সবাই অন্যভাবে তাকাবে। একটা ডকুমেন্ট হয়ে থেকে যাবে। রাস্তার ঝাল মহিলা ঝালমুড়িঅলাকে কে বিয়ে করবে? বিয়ে করা নিয়ে সমস্যা নেই। মুফরাত এসব বিষয় খুব মজা পায়। অন্যান্য ক্ষেত্রে পাগলামী উঠলেও তা অনেক সময়ই দেখায় না। কিন্তু মুফরাতের সামনে কোন পাগলামি উঠলে তা করেই ছাড়ে। আর মুফরাতও পাগলামীর ভক্ত।
অনেক পাগলামী করে রুবা। ওরা একটা চাইনিজ রেস্টুরেন্টে বসে আছে। প্রতিদিনই এই রেস্টুরেন্টে আসে তাই পরিচিত। হঠাৎ এক কোণে দেখে রোনাল্ডোর ছবি। মাথায় কোন চুল নেই। হঠাৎ কি যেন হয় রুবার। মুফরাতের চুলের দিকে তাকায়। অনেক সুন্দর চুল। ছেলেদের চুল নিয়ে তেমন বলা হয় না। তবে ছেলেদের চুলও যে লেখার উপাদান হতে পারে তা মুফরাতের চুলই প্রমাণ। রুবা মাঝে মাঝে কবিতা লিখে। যদিও কবিতাগুলোর একমাত্র পাঠক নিজেই। কবিতার খাতা তিনটা। একটা খাতার শিরোনাম সে বোকা, আমি পাগলী। যেখানে ওদের সম্পর্ক নিয়েই অনেক কবিতা। ডায়েরী লেখা হয় না। তবে মুড থাকলে কবিতার মধ্য দিয়ে দিনের ঘটনা গুলো আটকে রাখে রুবা।
সুপের বাটিতে চামচ নাড়াতে নাড়তে রুবা বলে, আমার একটা কাজ করতে ইচ্ছা হচ্ছে।
-হুম বলো কি?
-হুম বলছো কেন? হুম মানেটা কি?
-সরি হুম বাদ দিলাম।
-তোমাকে বাদ দিতে বলি নাই। কেন বলছ তাই বলো?
-আচ্ছা বাবা বলছি। আমার গলায় খাবার আটকে ছিল। হুম বলে সেটা গিললাম। এর পর প্রশ্ন করলাম।
রুবা হেসে উঠে। প্রাণবন্ত, জীবন্ত হাসি। এই হাসি দেখলে মন অনেক ভাল হয়ে যায়।
-আচ্ছা বললা না তো কি করতে ইচ্ছা হচ্ছে?
-না থাক।
-আরে থাকবে কেন? প্লিজ বলো।
-তোমার খারাপ লাগবে। দরকার নেই। আর যা ইচ্ছা হবে তা করতেই হবে এমন কোন কথা নাই। জিনিষটা মাথা থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করছি।
-বাদ দিতে হবে না। বলো। কোন সমস্যা নেই।
-সত্যিই বলবো? মন খারাপ হবে না তো?
-আরে না। বলো। তুমি মানুষের মন খারাপ করতে পারো নাকি? বলে হো হো করে হেসে উঠে মুফরাত।
-এখন আমার ইচ্ছা হচ্ছে তোমাকে রোনাল্ডো বানাতে?
মুফরাত অবাক হয়। টেবিলে সুপ একটু পড়ছিল। সেটা টিস্যু দিয়ে মুছে দেয়।
-মানে খুব সহজ, তোমার মাথার চুল গুলো কেটে দিতে ইচ্ছা করছে। এবং তা এখুনি। খুব ইচ্ছা করছে।
মুফরাত ঢোক গিলে।
তা দেখে রুবা বলে, বললাম না তোমার খারাপ লাগবে। সেজন্যই বলতে চাই নি।
-আরে সেজন্য না, আমি করি আর্জেন্টিনা। এখন যদি রোনাল্ডোর মত হয় তা কিভাবে অন্যরা নেবে তা চিন্তা করে ঢোক গিললাম।
-ঠিক আছে। এম্নেই বললাম কথাটা।
-না না।
মুফরাত বয়কে ডাক দেয়। বয় অবাক। এতদিন এখানে চাকরি করে। এর আগে কেউ তাকে রেজার আর ব্লেড আনতে বলে নাই।
ব্লেড আর রেজর আনা হয়। রুবা বলে, বাদ দাও।
-আরে বাদ দেওয়া দেওয়ি নাই। অবশ্যই করতে হবে। মানুষ খুব কম সময়ের জন্য পৃথিবীতে আসে। ইচ্ছা গুলো পূর্ণ করা উচিত। এখন আমার মাথা চুল মুড়ে না দিলে আমি।
-আচ্ছা, আচ্ছা, মাইন্ড খাওয়ার দরকার নেই। আমি এখুনি কেটে দিচ্ছি। যদিও প্রথম কারো মাথায় চুল কাটতে যাচ্ছি। মাথা কাটলে কিন্তু আমার দোষ নেই।
- আরে সমস্যা নাই। আস্তে আস্তে করলে কাটবে না মাথা। আর স্যাভলন আছে। লাগিয়ে দিলেই হবে।
দুজনই বেসিনে যায়। আস্তে করে পোচ দেয় রুবা।
এরিমধ্যে যারা চাইনিজ রেস্টুরেন্টে এসেছে তারা সবাই বেসিনের সামনে ভীড় জমায়। অনেক মজার ঘটনা। চুল কাটার মহা উৎসব যেন।
তবে এর মধ্যে আরো দুইজন ঝামেলায় পড়ে। তাদের প্রেমিকারও স্বাদ জাগে প্রিয় মানুষটিকে ঠিক এভাবে টাক করে দিবে। কিন্তু ওরা কোন মতেই চুল কাটতে রাজি হচ্ছে না।
একজন তো ঘোষণা দিয়ে দিল, তুমি যদি চুল না কাটো তবে আর সম্পর্ক রাখবো না। এই সামান্য আবদার যে রাখতে পারে না তার সাথে কিসের সম্পর্ক।
প্রেমিকটি তারপরও রাজি না। বুঝানোর চেষ্টা করে।
মেয়েটির চোখে পানি এসে গেছে, এতগুলো মানুষের সামনে তুমি আমাকে অপমান করবে? তুমি সত্যি সত্যি চুল কাটবে না তা না?
পরে অনেক কষ্টে ঐ বেচারা রাজি হয়।
মুফরাত যতটুকু সমস্যা হবে মনে করেছিল তার চেয়ে বেশি হয়। বন্ধুরা টিটকারী মারা শুরু করে দিয়েছে, দোস্ত শেষ পর্যন্ত তুই ও আর্জেন্টিনা থেকে সরে গেলি। গেলি তো গেলি মহা প্রমাণ সহ পুরা রোনাল্ডো হয়ে। ছি ছি। প্রিয় দল হারবে বলে তাকে ছেড়ে যেতে হবে?
মুফরাত বলে, দোস্ত আমি এখনো আর্জেন্টিনা। মাথার চুল কাটছি খুশকি জ্বালাচ্ছে সেজন্য।
-তুই বললেই বিশ্বাস করবো আমরা? দেশে কি এন্টি ড্যানড্রফ শ্যাম্পুর অভাব দেখা দিয়েছে?
যতদিন চুল উঠে নাই ততদিন মহা যন্ত্রণায় থাকতে হয়েছে। নতুন করে কারো সাথে দেখা হলেই প্রথমেই জিজ্ঞেস করে বসে, মাথার এই অবস্থা কেন?
রুবার জন্য এই দশা এটা কি কাউকে বলা যায়। রুবার কারণে এত কিছু। তারপরও কেন জানি রুবার প্রতি একটুও বিরক্ত হতে পারে না মুফরাত। ও যা করে সবই ভাল লাগে।
রুবা মোটর সাইকেলের দিকে এগিয়ে যায়।
-আপনার কি আমার ঝালমুড়ি বিক্রীর ছবি তুলতে চেয়েছেন?
-জ্বী। কিন্তু আপনি সরে এলেন যে।
-আচ্ছা আপনাদের কারণে কি একটু মজাও করতে পারবো না? মজা করতে গেলে সেটা পুরা দেশকে জানাতে হবে?
-একটা সুন্দরী মেয়ে ঝালমুড়ি বিক্রী করছে ব্যাপারটা অন্যরকম। এজন্যই ছবি তুলতে থামছি।
-আপনারা কি ভেবে দেখেছেন এই যে আপনারা এমন সব ছবি দিয়ে দেন, এর পর কি হয়? এই যে আমি ঝাল মুড়ি বিক্রী করছি এরকম ছবি যদি পত্রিকায় উঠে তবে কোন ভাল পরিবারে কি আমাকে নেবে বধূ হিসাবে? যা তুলবেন তা ভেবে চিন্তে তুলবেন। নিজেকে ফোকাস করতে গিয়ে অন্যের ক্ষতি করা ঠিক না।
এই কথা বলে উত্তরের অপেক্ষা না করে হন হন করে অন্য দিকে চলে যায় রুবা। মোবাইল বাজছে। মুফরাতের ফোন।
-আজ তো তোমার সাথে দেখা হবে না?
-কেন?
-মন ভাল ছিল। কিন্তু ঠিক এই মুহূর্তে মন খারাপ হয়ে গেল সেজন্য।
-মন খারাপ হলো কেন?
-বলতে ইচ্ছা হচ্ছে না এখন।
-আমি চলে এসেছি।
-চলে এসেছো ভাল কথা। যেভাবে চলে এসেছো। সেভাবে যাও গিয়ে।
-প্লিজ একটু যদি দেখা করে যেতাম।
মুফরাতের কন্ঠে অনুনয়। মুফরাত ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে অনেক সিরিয়াস। অনেক ভয় পায় তার কর্মচারীরা। ড্রাইভারও অনেক বেশি সমীহ করে। কিন্তু সামনে বসে বসের অনুনয় শুনে ড্রাইভারের অন্যরকম লাগে। অচেনা মনে হয় বসকে। মানুষ যে কত রকম হয়।
-না, এখন দেখা করবো না। তুমি চলে যাও।
বলে মোবাইলের রেড বাটন চেপে দেয় রুবা।
রুবা পেয়াজ কাটছে। আস্তে আস্তে। প্রথমদিকে ঝালমুড়িঅলার মত কুচ কুচ করে তাড়াতাড়ি কাটার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু বড় বড় হয়ে যাচ্ছে কাটা পেয়াজের আকৃতিগুলো। তাই আস্তে আস্তে কাটছে। ঝালমুড়িঅলা কাছে দাঁড়িয়ে তা দেখছে। অনেক ভাল লাগছে। যে জিনিষ প্রতিদিন ধরে সে জিনিষ একটা সুন্দর মেয়ে ধরছে ব্যাপারটা ভাবতেই অন্যরকম লাগছে। স্বপ্ন স্বপ্ন একটা ব্যাপার।
সেন্ট্রাল মার্কেটের সামনে বসে সাধারণত। কিন্তু আজ আগেই অন্য এক জন সেখানে বসে যাওয়ায় এই দিকটায় চলে এসেছে। ভাগ্যিস এখানে এসেছে। বেশি পেয়াজ মরিচ কেটে রাখতে হয়। যাতে কাস্টমার আসলে সাথে সাথে বানিয়ে দেওয়া যায়। কেউ ঝাল বেশি পছন্দ করে। কেউ আবার মরিচ কম দিতে বলে। তা পেয়াজ কাটছিল। এসময় দেখে একটা মেয়ে সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। মুখটা অনেক বেশি ফর্সা। দেখলেই অনেক ভাল লাগে। এরকম সুন্দর মেয়ে তার বানানো ঝালমুড়ি খাবে?
-আচ্ছা ঝালমুড়ি ভাই একটা কাজ করা যাবে?
এভাবে আপন করে আগে কেউ কখনো ঝালমুড়ি ভাই বলে নাই। কি আন্তরিক গলায় বলছে। যতবড় কঠিন কাজই করতে বলুক না কে করে ফেলবে বলে প্রস্তুতি নেয়। প্রায় পাঁচ বছর ধরে এই ঢাকা শহরে ঝালমুড়ি বিক্রি করে। এই প্রথম কেউ এত আবেগ দিয়ে বলল। আনন্দে চোখে পানি এসে যায় কামালের।
-আপনি একটু সরবেন? আমি নিজে ঝালমুড়ি বানাবো। রাস্তায় দাঁড়িয়ে ঝালমুড়ি বানাতে ইচ্ছে হচ্ছে।
তা শুনে থ হয়ে যায় কামাল। একটু হতাশও। মনে করেছিল কঠিন কোন কাজ করতে দেবে। কিন্তু এটাতো সামান্য কাজ। আবার মজাও পায়। নিজে সরে গিয়ে জায়গা করে দেয়।
রুবা ঝাল মুড়ি বানানো শুরু করে। অনেক ভাল লাগছে ওর। রুবা চিন্তা করেছে এই কয়দিন শুধু এরকম পাগলামী করবে। পাগলামী করা যে এত আনন্দায়ক হবে তা আগে বুঝে নাই। শুধু লোক চক্ষুর ভয়ে অনেক পাগলামী থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখে। এখন থেকে আর যে কয়দিন আছে যে পাগলামী করতে ইচ্ছে হবে তা করে ফেলবে। এরিমধ্যে দেখে একটা মটর সাইকেল এসে দাঁড়ায়। সাইকেলের দুজন আরোহী। একজনের কাঁধে ভারী ক্যামেরা। হোন্ডার রেজি. প্লেটে লেখা সাংবাদিক। ওকে দেখেই যে মোটর সাইকেল আরোহী থেমেছে তা বুঝা যায়। রুবা সাথে সাথে সরে আসে।
পরের দিন পত্রিকায় ঝালমুড়িঅলা হিসাবে ওর ছবি দেখলে সবাই অন্যভাবে তাকাবে। একটা ডকুমেন্ট হয়ে থেকে যাবে। রাস্তার ঝাল মহিলা ঝালমুড়িঅলাকে কে বিয়ে করবে? বিয়ে করা নিয়ে সমস্যা নেই। মুফরাত এসব বিষয় খুব মজা পায়। অন্যান্য ক্ষেত্রে পাগলামী উঠলেও তা অনেক সময়ই দেখায় না। কিন্তু মুফরাতের সামনে কোন পাগলামি উঠলে তা করেই ছাড়ে। আর মুফরাতও পাগলামীর ভক্ত।
অনেক পাগলামী করে রুবা। ওরা একটা চাইনিজ রেস্টুরেন্টে বসে আছে। প্রতিদিনই এই রেস্টুরেন্টে আসে তাই পরিচিত। হঠাৎ এক কোণে দেখে রোনাল্ডোর ছবি। মাথায় কোন চুল নেই। হঠাৎ কি যেন হয় রুবার। মুফরাতের চুলের দিকে তাকায়। অনেক সুন্দর চুল। ছেলেদের চুল নিয়ে তেমন বলা হয় না। তবে ছেলেদের চুলও যে লেখার উপাদান হতে পারে তা মুফরাতের চুলই প্রমাণ। রুবা মাঝে মাঝে কবিতা লিখে। যদিও কবিতাগুলোর একমাত্র পাঠক নিজেই। কবিতার খাতা তিনটা। একটা খাতার শিরোনাম সে বোকা, আমি পাগলী। যেখানে ওদের সম্পর্ক নিয়েই অনেক কবিতা। ডায়েরী লেখা হয় না। তবে মুড থাকলে কবিতার মধ্য দিয়ে দিনের ঘটনা গুলো আটকে রাখে রুবা।
সুপের বাটিতে চামচ নাড়াতে নাড়তে রুবা বলে, আমার একটা কাজ করতে ইচ্ছা হচ্ছে।
-হুম বলো কি?
-হুম বলছো কেন? হুম মানেটা কি?
-সরি হুম বাদ দিলাম।
-তোমাকে বাদ দিতে বলি নাই। কেন বলছ তাই বলো?
-আচ্ছা বাবা বলছি। আমার গলায় খাবার আটকে ছিল। হুম বলে সেটা গিললাম। এর পর প্রশ্ন করলাম।
রুবা হেসে উঠে। প্রাণবন্ত, জীবন্ত হাসি। এই হাসি দেখলে মন অনেক ভাল হয়ে যায়।
-আচ্ছা বললা না তো কি করতে ইচ্ছা হচ্ছে?
-না থাক।
-আরে থাকবে কেন? প্লিজ বলো।
-তোমার খারাপ লাগবে। দরকার নেই। আর যা ইচ্ছা হবে তা করতেই হবে এমন কোন কথা নাই। জিনিষটা মাথা থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করছি।
-বাদ দিতে হবে না। বলো। কোন সমস্যা নেই।
-সত্যিই বলবো? মন খারাপ হবে না তো?
-আরে না। বলো। তুমি মানুষের মন খারাপ করতে পারো নাকি? বলে হো হো করে হেসে উঠে মুফরাত।
-এখন আমার ইচ্ছা হচ্ছে তোমাকে রোনাল্ডো বানাতে?
মুফরাত অবাক হয়। টেবিলে সুপ একটু পড়ছিল। সেটা টিস্যু দিয়ে মুছে দেয়।
-মানে খুব সহজ, তোমার মাথার চুল গুলো কেটে দিতে ইচ্ছা করছে। এবং তা এখুনি। খুব ইচ্ছা করছে।
মুফরাত ঢোক গিলে।
তা দেখে রুবা বলে, বললাম না তোমার খারাপ লাগবে। সেজন্যই বলতে চাই নি।
-আরে সেজন্য না, আমি করি আর্জেন্টিনা। এখন যদি রোনাল্ডোর মত হয় তা কিভাবে অন্যরা নেবে তা চিন্তা করে ঢোক গিললাম।
-ঠিক আছে। এম্নেই বললাম কথাটা।
-না না।
মুফরাত বয়কে ডাক দেয়। বয় অবাক। এতদিন এখানে চাকরি করে। এর আগে কেউ তাকে রেজার আর ব্লেড আনতে বলে নাই।
ব্লেড আর রেজর আনা হয়। রুবা বলে, বাদ দাও।
-আরে বাদ দেওয়া দেওয়ি নাই। অবশ্যই করতে হবে। মানুষ খুব কম সময়ের জন্য পৃথিবীতে আসে। ইচ্ছা গুলো পূর্ণ করা উচিত। এখন আমার মাথা চুল মুড়ে না দিলে আমি।
-আচ্ছা, আচ্ছা, মাইন্ড খাওয়ার দরকার নেই। আমি এখুনি কেটে দিচ্ছি। যদিও প্রথম কারো মাথায় চুল কাটতে যাচ্ছি। মাথা কাটলে কিন্তু আমার দোষ নেই।
- আরে সমস্যা নাই। আস্তে আস্তে করলে কাটবে না মাথা। আর স্যাভলন আছে। লাগিয়ে দিলেই হবে।
দুজনই বেসিনে যায়। আস্তে করে পোচ দেয় রুবা।
এরিমধ্যে যারা চাইনিজ রেস্টুরেন্টে এসেছে তারা সবাই বেসিনের সামনে ভীড় জমায়। অনেক মজার ঘটনা। চুল কাটার মহা উৎসব যেন।
তবে এর মধ্যে আরো দুইজন ঝামেলায় পড়ে। তাদের প্রেমিকারও স্বাদ জাগে প্রিয় মানুষটিকে ঠিক এভাবে টাক করে দিবে। কিন্তু ওরা কোন মতেই চুল কাটতে রাজি হচ্ছে না।
একজন তো ঘোষণা দিয়ে দিল, তুমি যদি চুল না কাটো তবে আর সম্পর্ক রাখবো না। এই সামান্য আবদার যে রাখতে পারে না তার সাথে কিসের সম্পর্ক।
প্রেমিকটি তারপরও রাজি না। বুঝানোর চেষ্টা করে।
মেয়েটির চোখে পানি এসে গেছে, এতগুলো মানুষের সামনে তুমি আমাকে অপমান করবে? তুমি সত্যি সত্যি চুল কাটবে না তা না?
পরে অনেক কষ্টে ঐ বেচারা রাজি হয়।
মুফরাত যতটুকু সমস্যা হবে মনে করেছিল তার চেয়ে বেশি হয়। বন্ধুরা টিটকারী মারা শুরু করে দিয়েছে, দোস্ত শেষ পর্যন্ত তুই ও আর্জেন্টিনা থেকে সরে গেলি। গেলি তো গেলি মহা প্রমাণ সহ পুরা রোনাল্ডো হয়ে। ছি ছি। প্রিয় দল হারবে বলে তাকে ছেড়ে যেতে হবে?
মুফরাত বলে, দোস্ত আমি এখনো আর্জেন্টিনা। মাথার চুল কাটছি খুশকি জ্বালাচ্ছে সেজন্য।
-তুই বললেই বিশ্বাস করবো আমরা? দেশে কি এন্টি ড্যানড্রফ শ্যাম্পুর অভাব দেখা দিয়েছে?
যতদিন চুল উঠে নাই ততদিন মহা যন্ত্রণায় থাকতে হয়েছে। নতুন করে কারো সাথে দেখা হলেই প্রথমেই জিজ্ঞেস করে বসে, মাথার এই অবস্থা কেন?
রুবার জন্য এই দশা এটা কি কাউকে বলা যায়। রুবার কারণে এত কিছু। তারপরও কেন জানি রুবার প্রতি একটুও বিরক্ত হতে পারে না মুফরাত। ও যা করে সবই ভাল লাগে।
রুবা মোটর সাইকেলের দিকে এগিয়ে যায়।
-আপনার কি আমার ঝালমুড়ি বিক্রীর ছবি তুলতে চেয়েছেন?
-জ্বী। কিন্তু আপনি সরে এলেন যে।
-আচ্ছা আপনাদের কারণে কি একটু মজাও করতে পারবো না? মজা করতে গেলে সেটা পুরা দেশকে জানাতে হবে?
-একটা সুন্দরী মেয়ে ঝালমুড়ি বিক্রী করছে ব্যাপারটা অন্যরকম। এজন্যই ছবি তুলতে থামছি।
-আপনারা কি ভেবে দেখেছেন এই যে আপনারা এমন সব ছবি দিয়ে দেন, এর পর কি হয়? এই যে আমি ঝাল মুড়ি বিক্রী করছি এরকম ছবি যদি পত্রিকায় উঠে তবে কোন ভাল পরিবারে কি আমাকে নেবে বধূ হিসাবে? যা তুলবেন তা ভেবে চিন্তে তুলবেন। নিজেকে ফোকাস করতে গিয়ে অন্যের ক্ষতি করা ঠিক না।
এই কথা বলে উত্তরের অপেক্ষা না করে হন হন করে অন্য দিকে চলে যায় রুবা। মোবাইল বাজছে। মুফরাতের ফোন।
-আজ তো তোমার সাথে দেখা হবে না?
-কেন?
-মন ভাল ছিল। কিন্তু ঠিক এই মুহূর্তে মন খারাপ হয়ে গেল সেজন্য।
-মন খারাপ হলো কেন?
-বলতে ইচ্ছা হচ্ছে না এখন।
-আমি চলে এসেছি।
-চলে এসেছো ভাল কথা। যেভাবে চলে এসেছো। সেভাবে যাও গিয়ে।
-প্লিজ একটু যদি দেখা করে যেতাম।
মুফরাতের কন্ঠে অনুনয়। মুফরাত ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে অনেক সিরিয়াস। অনেক ভয় পায় তার কর্মচারীরা। ড্রাইভারও অনেক বেশি সমীহ করে। কিন্তু সামনে বসে বসের অনুনয় শুনে ড্রাইভারের অন্যরকম লাগে। অচেনা মনে হয় বসকে। মানুষ যে কত রকম হয়।
-না, এখন দেখা করবো না। তুমি চলে যাও।
বলে মোবাইলের রেড বাটন চেপে দেয় রুবা।