বৃহস্পতিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১২

নিহত প্রেমিকের আত্মকাহিনী (গল্প)

তিনি হতে পারতেন আমার শ্বশুর। তার পা ছুয়ে হয়ত সালাম করতাম আমি। না তিনি আমার শ্বশুর হন নি। হয়েছেন আমার ঘাতক। চার চারটি বার ট্রিগার চাপলেন তিনি। বুলেটে আমার শরীর হলো ঝাঝড়া। বিয়ে না হলে তাকে শ্বশুর বলে অভিহিত করলে কি অন্যায়? আমি বেঁচে থাকলে তো বিয়ে করতাম উর্মিকেই, সুতরাং উর্মির বাবা হিসাবে তিনি আমার শ্রদ্ধেয় শ্বশুর, সমাজ মেনে নিক বা না নিক, তাতে আমার কি, মৃত মানুষের কাছে সমাজের কোন দাম নেই। তাই আমার ঘাতককে আমি শ্বশুর বলেই ডাকছি।....


সেদিন তিনি রাগ সামলাতে না পেরে দেয়াল থেকে তুলে নিলেন চকচক করা লাইসেন্সকৃত অস্ত্রটি। আমি মনে করেছিলাম ভয় দেখাচ্ছেন আমাকে। আমি সাহসীর মত ঐ নলের সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমি পালাচ্ছি না দেখে ওনার রাগ যেন বাড়ল!! মুহূর্তের মধ্যে ট্রিগার চাপলেন। মাত্র চারটি বুলেট ঝাঝড়া করে দিলো আমার এই হৃদয়। যেখানে শুধুই ছিল উর্মির জন্য ভালোবাসা।
আমার শ্বশুর সাহেব শুধু আমার ঘাতক না। তার মেয়ের ভালোবাসার ও ঘাতক তিনি।

তিনদিন অজ্ঞানের মত পড়ে ছিল উর্মি। আমি এখান থেকে দেখি সব। সব দেখি। উর্মি ফ্যাল ফ্যাল হয়ে চারদিকে তাকায়। কি খুঁজে? নিশ্চয় আমাকে খুঁজছে। ইচ্ছে করে ওর সামনে গিয়ে বলি এই তো আমি। ছুয়ে দেখো আমাকে। কিন্তু আমাকে দেখলে যে ও ভীষণ ভয় পাবে। খুউব ইচ্ছে করছে ওর সামনে গিয়ে দাড়াই। মাংসহীন বুলেট বিদ্ধ হাড্ডিসার দেহ দেখে ও আর্তনাদ করবো। না না আমি পারবো না ওকে ভয় দেখাতে। এই ভালো মেয়েটিকে আমি একটুও কষ্ট দিতে পারবো না।

হত্যার অপরাধে আমার শ্বশুর জেলে। শ্বাশুড়ি দিন রাত কাঁদছে। যে আমার শালা হতে পারত সে আজ মাদকাসক্ত। কত্ত ভাল ছেলে ছিল। অথচ বাবার এই দশা দেখে সকল কষ্ট ভুলতে সে রাত কাটায় আজ নাইট ক্লাবে। উকিল সাহেবকে অনেক টাকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এটা যেহেতু প্রকাশ্যে হত্যা , তাই আশা খুব কম।

আমি মরার পর সবচেয়ে বেশি খুশী হয়েছে বোধহয় পত্রিকাওয়ালারা। লাল লাল কালিতে বড় বড় শিরোনাম দিয়েছে। প্রতিদিন নতুন নতুন রিপোর্ট করছে। সিরিজ রিপোর্ট। কোন কোন পত্রিকা বলছে আমাদের মধ্যে সর্বোচ্চ মিলন হয়েছে। কি তাজ্জব ব্যাপার। বিয়ের আগে এসব কথা করা তো দূরে থাক আমরা চিন্তার মধ্যেই আনিনি। আমাদের কে নিয়ে একটা একটা গল্প সাজাচ্ছে। বিচ্ছরি কথা বলা হচ্ছে। অশ্লীন কথাগুলো শুনে অভ্যাসবশত কানে হাত দিয়ে ফেলি। কিন্তু আমার যে কান নেই। আমি সব কিছু অর্ধভঙ্গ হৃদপিন্ড দিয়ে শুনি।

এসব কলুষিত কাহিনী পড়ে উর্মি মানসিক ভাবে পুরোটাই ভেঙে পড়েছে। ওর একজন সঙ্গী দরকার। গত ভালোবাসা দিবসে আমরা অনেক জায়গায় ঘুরেছি। ও ভাল আবৃত্তি করতে পারে। গলা অনেক মিস্টি। ভালোবাসার সুন্দর দিনটিতে অনেক গুলো কবিতা শুনালো। আসার সময় আমরা পরষ্পর পরষ্পরকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করব না বলে কথা দিলাম। এখন আমি বলছি, উর্মি আমার কথা আমি ফিরিয়ে নিলাম, তুমি ও ফিরায় নাও। তোমার একজন সঙ্গী দরকার। এই কস্টের ভাগ নেওয়ার জন্য একজন সঙ্গী দরকার।

দীর্ঘ শুনানীর পর অনেক কোর্ট কাছারী ঘুরে আজ আদালতে রায় দেবে। কি হবে রায়? উর্মির খাওয়া বন্ধ। বাবার চিন্তায়। অনেক শুকিয়ে গেছে ও।

আমি কথা বলতে চাই। আমি সাক্ষী দিতে চাই । আদালতে আমি বলতে চাই এই খুন উর্মির বাবা মোস্তাকিম আহমদ করে নাই। আমি নিজে নিজে আত্ম হত্যা করেছি, আত্ম হত্যা করেছি। তারপরও আমি উর্মির মুখে হাসি চাই।

আচ্ছা আদালত কি মৃত মানুষের সাক্ষ্য গ্রহণ করে?

এই বিষয়ে কি আপনাদের জানা আছে?

আমার সর্বশেষ পোস্টটি, চাইলে চোখ দেওয়া যেতে পারে-