মঙ্গলবার, ২০ জুলাই, ২০১০

একটি লাশ ( গল্প )

খুন হবে। একটা খুন। সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। এখন করাটাই বাকী। অন্ধকার কক্ষ। গিয়াস বসে আছেন। খুনের অর্ডার গুলো সে নেয়। এজেন্ট আছে তার। তবে কখনো প্রকাশ্যে আসে না। যাদেরকে খুনের দায়িত্ব দেওয়া হয় তারা দেখে না গিয়াসকে। তবে কিভাবে কি করা হবে তা গিয়াস সরাসরি বলে দেয়। মোবাইলে বলা অনিরাপদ। অনেক সময় মোবাইলে কথোপকথন ধরে সূত্র পেয়ে যায়। এজন্য সরাসরি কথা বলে গিয়াস। এক এক খুনে এক এক রকম পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়।


কক্ষে ঢুকার সময় সবাই খালি হাতে ঢুকে। সাথে কিছু রাখতে পারে না। মোবাইলও পাশের রুমে রেখে আসতে হয়।

অন্ধকার কক্ষটিতে বসে আছেন ৬ জন। গিয়াস বসে আছে মধ্যখানে। সভাপতি যেমন মধ্যখানে বসে ঠিক সেভাবে। গিয়াসের পাশে তার দেহরক্ষী মনির।

গিয়াস জিজ্ঞেস করে, এই খুন কখন হচ্ছে?

ওরা চারজন। পেশাদার খুনী। ওদের দলনেতা মন্তু বলে, আজ রাত ১২ টা থেকে ১টার মধ্যে হয়ে যাবে। মন্তুর এক চোখ কানা। সে পুরা বিশ্বটাকে এক চোখে দেখে। কিন্তু এক চোখ দিয়ে দেখলে কি হবে। সবার চেয়ে ওই যেন বেশি দেখে।
-আপনার চিন্তা করতে হবে না।

গিয়াস বিরক্ত হয়। এতগুলো টাকা দেয়া হবে খুনের জন্য। আর বলে কিনা চিন্তা করতে হবে না। বিরক্তির ছাপ পড়ে চোখে মুখে।
যদিও অন্ধকারের কারণে তা কেউ দেখে না।
আরো কিছু কথা হয়। সিদ্ধান্ত একটাই। রাতেই খুন হবে।


........................................
গ্রামের সবাই ঘুমিয়ে আছে। গ্রামের দিকে মানুষে একটু তাড়াতাড়িই ঘুমায়। তবে এখলাস সাহেবের পরিবার একটু দেরিতেই ঘুমায়। এখলাস সাহেব রাজনীতি করেন। তার অনেক বড় স্বপ্ন। একদিন অনেক বড় নেতা হবেন। টিভি পত্রিকার ওনার ছবি আসবে।

অভাবের কারনে লেখাপড়া বেশি করতে পারেন নাই। কিন্তু তার ভাগ্য ভাল। সামান্য মুদির দোকান দিয়ে শুরু করে এখন তিনি অনেক টাকার মালিক। এখন টাকা আয়ের চেয়ে তার স্বপ্ন একজন বড় নেতা হওয়া।

এজন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন। রাতে টকশো গুলো দেখেন অনেক মনযোগ দিয়ে। বড় বড় নেতারা তর্ক করে। তিনি সেগুলো দেখেন। শেখার চেষ্টা করেন। আর কল্পনা করেন নিজেও একসময় টিভিতে যাবেন।

তার বউ রেহেনা মহা বিরক্ত। প্রতিদিন টিভিতে লোকগুলোর ফ্যাড় ফ্যাড়ানি ভাল লাগে না। একটার পর একটা কথা বলে যায়। যেন কথা বলা ছাড়া আর কোন কাজ নেই তাদের।

তার উপর একই স্বপ্নের কথা শুনতে হয় প্রতিরাতে স্বামীর কাছ থেকে।

সাংবাদিকরা নিউজ নেবে। সাক্ষাৎতার নিতে আসবে। নেত্রীর পাশে দাঁড়ানো ছবি পত্রিকায় ছাপা হবে। নেত্রী দেখা হলে কুশালাদি জিজ্ঞেস করবেন। টিভি চ্যানেলে আলোচনার জন্য আমন্ত্রিত হবেন এরকম কত্ত কিছু।

এখলাস সাহেব বাসায় এইরকম স্বপ্নে কথা খোলাখুলি বললেও বাহিরে অনেক সিরিয়াস। সব কিছু কঠিন ভাবে করেন। গ্রামে দুইটা ক্লাব আছে। কিছু যুবক মিলে বানিয়েছে। সেখানে তিনি বেশ বড় সাহায্য দিয়েছেন।

এলাকার মসজিদ সংষ্কারে টাকা দিয়েছেন। মন্দিরের বাহিরের অংশ পাকা করার জন্যও টাকা দিয়েছেন।

মাঝে নিজ রাজনৈতিক দলের অফিসে বসেন।
সামনে নির্বাচন। খলিল সাহেব চেয়ারম্যান। এবারও চেয়ারম্যান হতে চান। কিন্তু এখলাছ সাহেব বড় বাধা। লোকটা যেভাবে টাকা বিলিয়ে যাচ্ছে তাতে সবাই এখন এখলাছ সাহেবের পক্ষের হয়ে যাচ্ছেন। সবচেয়ে অবাক হলেন সেদিন তার একান্ত সচিব জানিয়ে দিয়েছে সে আর এখানে থাকবে না। ইখলাছ সাহেবের সেখানে কাজ করবেন।

এবার নির্বাচিত হলে সামনে উপনির্বাচন আসছে। সেখানে এমপি পদে মনোয়ন পেতে পারেন। এমপি হলে আর ঠেকায় কে?

কিন্তু এখলাছ সাহেবের কারণে ভয় হয়। এই ব্যাটা নির্বাচনে দাঁড়ালে জিতে যেতে পারে। একে ফেলে দিতে হবে।


...........................................................

চাঁদের আলোয় চারদিক আলোকিত। স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে চারটা ছায়া মূতি এগিয়ে চলছে। তাদের গন্তব্য এখলাছ সাহেবের বাসা। বাসা থেকে এখলাছ সাহেবকে বের করে আনবে। তারপর হাঁটতে হাঁটতে কিছুদূর যাবে। নির্জন রাস্তার আসার পরই আসল কাজ করা হবে।

বাহিরের থেকে ডাক আসে, এখলাছ ভাই, এখলাছ ভাই আছেন?

রেহেনা স্বামীকে সাবধান করেন। এত রাতে কে আসলো? বাহিরে যাওয়ার দরকার নেই।
স্ত্রীর উপর বিরক্ত হন এখলাছ সাহেব। কত জন আসতে পারে। অনেকের উপকার করেন। কেউ হয়ত বিপদে পড়ছে। সাহায্য প্রয়োজন। আর এই অল্পতেই যদি বিরক্ত হন যখন বড় নেতা হবেন তখন আরো গভীর রাতে সাহায্য প্রার্থী আসবে। তখন কি করবেন?

স্ত্রী মানা করেন। কিন্তু মানা শুনেন না এখলাছ সাহেব। জামা চড়িয়ে দরজা খুলে বেড়িয়ে আসেন।

-ভাই একটা বিপদে পড়ে গিয়েছি।
-কি বিপদ?

চাদর জড়ানো ছেলেটা বলে, একটু সামনে আসেন। বলি।

সামনে এগিয়ে চলেন।

কিছুদূর যেতেই চাদরের ভিতর থেকে ক্ষুর বের করে, মন্তু। পিছন থেকে কোপ বসিয়ে দেয় এখলাছ সাহেবের গলায়। আরো দুইজন শক্ত করে ধরে রাখে এখলাছ সাহেবকে। শেষে লাশ কয়েক টুকরা করা হয়। সেগুলো আলাদা দুইটা বস্তায় ভরা হয়।

দুই বস্তা দুই জায়গায় রেখে আসা হয়।

একটা নির্মম খুন। যার স্বাক্ষী ঐ সুন্দর চাঁদটা। চাঁদটাকেও মাঝে মাঝে খারাপ ঘটনার স্বাক্ষী হতে হয়।


এখলাছ সাহেবের বাসায় সাংবাদিকদের ভীড়। ঢাকা থেকে সাংবাদিকও এসেছে।

জীবিত থাকতে যে স্বপ্ন দেখতেন সাংবাদিকরা তার কাছে এসেছেন। তা সত্য হয়েছে। তবে তিনি যে মৃত। তার লাশের পাশে অনেক সাংবাদিক। ছবি তুলছে। রিপোর্ট সংগ্রহ করছে।

রেহেনা অজ্ঞান হয়ে আছেন। এখলাছ সাহেবের মেয়ে তানিয়া। সে কাঁদছে। সাংবাদিকরা তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে। কিন্তু সে বোবা হয়ে আছে যেন। কোন কথা বলছে না।

দুই জায়গা থেকে উদ্ধার হয় লাশ। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয়। দুই থানার মধ্যে চলে ঝামেলা। টানাপোড়ন। কোন থানা-ই লাশ নিতে চাচ্ছে না। কে গ্রহণ করবে এটা? কে গ্রহণ করবে এটা তা নিয়ে চলে টানা বাকবিতন্ডা। নিতে রাজি না কেউ।

লাশের চেয়ে যে আইন অনেক বেশি বড়।