শনিবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৫

দগ্ধ (অনুগল্প)

তাদের সম্পর্কের শুরুর গল্পটা পরিচিত কোন গল্পকারের বর্ণনার মত। বৃষ্টি পড়ছিল। মেয়েটির ছাতা ছিল না। ছেলেটি ছাতা নিয়ে গিয়েছিল। বৃষ্টির মধ্যেই যখন মেয়েটি বের হচ্ছিলো ছেলেটি ডাক দিয়ে হাতে ছাতা ধরিয়ে দেয়। অনেকটা জোর করে ধরিয়ে দেয় বলা যায়। একই কলেজে পড়ে অথচ কখনো কথা হয়নি আগে।
পরদিনই ছাতা ফেরত দেয় মেয়েটি। এর পর দুইজনের মধ্যে কথা বার্তা। আলাপন। একটা সময় ভাল লাগা। এরপর একজন আরেকজনের সাথে সারা জীবন থাকার স্বপ্ন দেখা।

দৃশ্য (অনুগল্প)

শেষ পর্যন্ত হিসাব মিললো না। মেলার কথাও না। নিজ দেশের দুইজনের মধ্যেই যেখানে শুভ পরিণতির দিকে যায় না সেখানে দুই দেশের।
এরপরও জুলিয়া সর্বশেষ চেষ্টা করেছে। ওই দেশে কয়েকটা ভাষা শিক্ষার কোর্স থাকলেও বাংলা ভাষা শিক্ষার কোর্স কোন প্রতিষ্ঠানে নেই। কি আর করা। আরিফকে চমকায় দিতে হবে। দেড়শ কিলোমিটার দূরে লইয়াঞ্জ শহরে কিছু বাংলাদেশি থাকে। সেখানে একটা কমিউনিটি গড়ে উঠেছে। একটা বড় বাজারও আছে যেখানে বাংলাদেশি প্রায় সব কিছু পাওয়া যায়। ওইসব দোকানে সাধারণ ওই দেশের নাগরিকরা কাজ করে না। এটা একটা সম্মানের ওপর আঘাত বটে। কিন্তু জুলিয়া ওইসবের ধার ধারেনি। তাকে বাংলা শিখতেই হবে। সেখানে একটা দোকানে সেলসগার্লের কাজ নিলো। প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে এতটুকু পথ নিজে ড্রাইভ করে চলে যেতো।

বোকা (অনুগল্প)

চুমকি হাসছে। ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে হাসছে। তাদের ঘরটা পুরানো ধরণের। ব্যালকনির আকৃতি বিশাল। উপজেলা কমপ্লেক্সের ভেতরে তাদের বাসা। সামনে দিয়ে রাস্তা বয়ে গেছে। ভারী গাড়ি চলে না এ রাস্তায়। তবে প্রতিদিন ইউ এন ও আঙ্কেলের বিকট শব্দে চলা পুরান দিনের সরকারি জিপ গাড়িটা যখন যায় তখন পুরা কমপ্লেক্সে খবর হয়ে যায়।
একটা ছেলে সাইকেল চালিয়ে সামনে এগিয়ে যায় আবার পেছনে আসে। আবার যায় আবার আসে।
সেটা দেখেই চুমকি হাসছে। ছেলেটাকে দেখে মনে হবে সে খুব মনযোগ দিয়ে সাইকেল চালাচ্ছে। কিন্তু ছেলেটা যে তার দৃষ্টি পেতেই এভাবে যাওয়া আসা করছে তা বুঝতে পারে। মেয়েদের একটা আলাদা দৃষ্টি থাকে। ওই দৃষ্টি দিয়ে তারা বুঝে যায় কে তাদের ফলো করছে।

বালিকা ও কান্না (অনুগল্প)

পাশে পাহাড়, রাস্তাগুলো একে বেঁকে গেছে। সুন্দর পিচঢালা রাস্তা। গাড়ি চলাচল কম। মাঝে মাঝে ফ্লাড লাইট জ্বালিয়ে দু একটা গাড়ি চলছে। কখনোবা শোনা যায় রিকসার টুং টাং বেল। বালক-বালিকা হাঁটছে। বালিকা বালকের হাত ধরে আছে। তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। আজ আকাশে চাঁদ নেই। দূরের পাহাড়টার ওপর চাঁদটা যখন মায়াবী আলো ছড়ায় তখন অন্যরকম লাগে। আজ মায়াবী আলো নেই।
: আচ্ছা চাঁদ প্রতিদিন থাকলে কি সমস্যা?

খবর (অনুগল্প)

নিজেকে দুই দিন ধরে বেশ সুখী মনে হচ্ছে ছিদ্দিক সাহেবের। তবে কি যেন করা হচ্ছে না, করা হচ্ছে না এ ধরণের একটা অস্বস্তি কাজ করছে। গত দুই দিন আগে ভোরে পত্রিকার হকার যখন পত্রিকা দিয়ে চলে যাচ্ছিলো, তখন ডাক দিলেন হকারকে।
: কাল থেকে এ বাসায় আর পত্রিকা দেবে না।
হকার একটু অবাক হয়।
: স্যার, সমস্যা নেই। অন্য কোন হকারকে বলার দরকার নেই। আমি কাল থেকে আরো ভোরে পত্রিকা দিয়ে যাবো।

পত্রিকা (অনুগল্প)

মুঠো শক্ত হয়ে আসে নিয়াজের। কপালের রগগুলো টন টন করে। চোখ কিছুটা লাল হয়ে আসে। তার মনে হয় এখুনি ছুটে যেতে।
পত্রিকার শিরোনামটার ওপর তার ক্রুব্ধ দৃষ্টি। তেমন গুরুত্বপূণ ভাবে ছাপা হয়নি। ভেতরের পাতায় ৬ষ্ঠ কলামে ছোট্ট করে লেখা। এক কলামেই শিরোনাম। বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত।
নিয়াজের পানির পিপাসা লাগে। পানির বোতলটা থেকে পানি পান করতে থাকে। কিন্তু পানির পিপাসা যে মিঠে না। ওর মনে হয় ওই খুনীদের প্রতিশোধ নিতে না পারলে মিটবে না এ পিপাসা!

মুক্তি (অনুগল্প)

রুবিনা বারান্দায় বসে আছে। যখন ওর সময় কাটে না তখন বারান্দায় চলে আসে। রাস্তায় লোক চলাচল কমে গেছে। মাঝে মাঝে এলাকার গার্ড বাশি বাজাতে বাজাতে হেঁটে যায়। এদিক ওদিক টর্চের আলো ফেলে মানুষ ভেবে। পরে দেখা যায় আলো ফেলছে কুকুরের ওপর।
বারান্দার ছাদের দিকে তাকায় রুবিনা। এটা একটা নতুন সমস্যা হয়েছে। ছাদের দিকে তাকিয়ে থাকা। অনেকক্ষণ ধরে ছাদের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়, মাথাটা একটু ঘুরে উঠে, পৃথিবীকে উল্টা মনে হয়। বারান্দায় ফ্যান ঝুলানো হয় না। তারপরও ফ্যান ঝুলানোর রিং দেয়া আছে। আচ্ছা সবাই তো দরজা বন্ধ করে ফাঁস খায়। বারান্দায় রিংয়ে ঝুলে ফাঁস খেলে নিশ্চয় ব্যতিক্রম হবে। সারাজীবনের জন্য একবার মৃত্যু হবে সেখানে ব্যতিক্রম করা যেতেই পারে।

স্বার্থপর (অনুগল্প)

: হাসো কেন?
: হাসতে ইচ্ছা হচ্ছে তাই!
: আমি কি খুব হাস্যকর কথা বলেছি?
: নাহ, তা বলো নি।
তাহলে দয়া করে তোমার ওই বিশ্রী হাসিটা থামাও।
: আচ্ছা থামালাম। এ হাসির জন্যই একসময় তুমি আবেগী হয়ে পড়েছিলে আমার প্রতি।
: সেটাই তো জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল।
ভুল বলে জানতাম বিধায়ইতো আমি এগিয়ে যাইনি।
: মানে?
: মানে কিছু না। তোমাদের পাশের বিল্ডিং ছেড়ে চলে গেলাম।

অনুভব (অনুগল্প)

নীরা ও অনিক ব্যালকনিতে বসে আছে। ওদের ব্যালকনিটা বড়। সবুজ লাইট জ্বলছে। অন্য রঙ্গের আলো মুখে পড়লে চেনা মানুষটিকেও অচেনা মনে হয়। নীরার কাছে অনিককে অচেনা মনে হচ্ছে।
অনিকের মুখ গম্ভীর। কান্না আটকানোর চেষ্টা যেন। এত কম রান করার পরও বলতেছিল জিতবে। কিন্তু পরে যখন হারলো তখন আর কিছু বলল না।
নীরা কি বলবে ভেবে পায় না। বাংলাদেশ হারায় তারও খারাপ লাগছে। কিন্তু হার জিত তো বাস্তবতা। হারলে এভাবে মুষড়ে পড়তে হবে! কিছু বলতে ইচ্ছা করে।
: শুনো।
অনিক কিছু বলে না।

বিশ্বাস (অনুগল্প)

: আচ্ছা তুমি কি আমাকে সত্যিই ভালবাসো?
ঘুমের ঘোর তখনও কাটে নি। রুনার মোবাইলের রিংয়েই ঘুম ভাঙল। সুন্দর ঘুম নষ্ট করে মোবাইল ধরবো না ভেবেছিলাম। কিন্তু সে সাহস করতে পারি নি। মোবাইল না ধরলে ও কঠিন কাণ্ড করে বসে।কখনো যদি রিসিভ করতে না পারি পরে হাজারো প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়।তার ওপর উত্তর যদি ওর মনমত না হয় তাহলে যোগাযোগ বন্ধ। শুধু যে আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে তা নয়। ওর মোবাইলটিই অফ করে রাখে কয়েকদিন। কি যে পাগল মেয়ে।
আমার চুপ থাকা দেখে বলে উঠে, এই কি হয়েছে? উত্তর দিচ্ছো না কেন?
আমি আগের প্রশ্নটি শুনি নাই ভান করে বলি, কি উত্তর দিবো?

ইচ্ছে (অনুগল্প)

: তুমি সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে যাবে।
: কেন! আমার তো সকালে কোন কাজ নেই। তাছাড়া এ শীতের সকালে মায়াবী কম্বলের পরশ ছেড়ে উঠতে ইচ্ছা করে না।
: তুমি ঘুমাও আর আমাকে সকালেই ক্লাস করতে যেতে হয়। শীতের তীব্রতায় দাঁতের সাথে দাঁত লেগে যায়। গায়ের শালটা আরো জড়িয়ে নিই। তারপরও শীত কমে না। রিকসা চালককে বলি ধীরে ধীরে চালাতে। রিকসা অলা বিরক্ত হয়ে গতি কমায়।
: এককাজ করি, শীতের এক সকালে দুইজনে রিকসা করে ঘুরতে বের হই।
: তোমার না কম্বলের মায়ার পরশ ছেড়ে উঠতে ইচ্ছা করে না?

পাথর (অনুগল্প)

: আচ্ছা আপনার সমস্যাটা কি?
: কেন, কি হয়েছে?
: প্রশ্নের উত্তরে ডাবল প্রশ্ন করলেন কেন?
: এখনও তো তুমি প্রশ্ন করলে।
: আমি তো একটা প্রশ্ন করছিলাম, আর আপনি উত্তর তো দিলেনই না। বরং দুইটা প্রশ্ন করে বসলেন।
: আচ্ছা আর প্রশ্ন করবো না। আমি এখন শুধু শিক্ষার্থী। যে রাগী শিক্ষকের ভয়ে প্রশ্ন থাকলেও প্রশ্ন করে না।

প্রতিজ্ঞা (অনুগল্প)

: একটা ছাতা দিতে পারবে?
: কেন. তোমার ছাতা কি হয়েছে?
: সেদিন অফিসে যাওয়ার সময় বৃষ্টি ছিল, ছাতা নিয়ে গেলাম। আসার সময় দেখি বৃষ্টি নাই। তাই ছাতাটা আর আনি নাই।
: বেশ ভাল কাজ করেছো। এখন এ বৃষ্টিতে অফিসে যাবে কিভাবে!
: এজন্যইতো তোমার ছাতাটা খুঁজলাম।
: আমি যে ছাতা ব্যবহার করি তাতো তুমি ব্যবহার পারবে না তো। ছাতায় একপাড়ে ফুলের নকশা আছে। লেডিস ছাতা এটি। তুমি ব্যবহার করছো এ দৃশ্য অন্যরা দেখলে হাসাহাসি করবে। পরিচিত কেউ দেখলে ছবি তুলে ফেসবুকেও আপলোড দিয়ে দিতে পারে।

রহস্যময় হাসি (অনুগল্প)

রত্নার সাথে ফাহাদের দেখা সাড়ে তিন বছর পর। সর্বশেষ দেখা হয়েছিল বিষন্ন এক সন্ধ্যায়। বাসায় ঝামেলার পর বের হয়েছিল রত্না। যারা চটপটে ধরণের থাকে সব সময় তারা যখন টেনশনে থাকে তখন তাদের অচেনা লাগে। রত্নাকেও অচেনা মনে হচ্ছিলো
এসেই বলে, আজ রাতে আমাকে দেখতে আসবে। চলো আমরা পালিয়ে যায়।
: দেখতে আসলেই তো বিয়ে হবে না।
: বাসার পরিবেশ দেখে মনে হচ্ছে আজ রাতেই আকদ। চলো না আমরা পালিয়ে যায়। আমি আর ঘরে ফিরে যাবো না।
: শুনো মাথা গরম করো না। নিজেই চলতে পারি না, সেখানে তোমাকে নিয়ে এখন কিভাবে সম্ভব! এসব কাজে দায়িত্ববান হতে হয়। নিজের একটা চাকরি হলে হয়ে যেত।
: তোমাকে দুশ্চিন্তা করতে হবে না। আমিও টিউশনি করবো। দেখো আমাদের তেমন সমস্যা হবে না।

পেট্রোলবোমা ও ভালোবাসা (অনুগল্প)

গাড়িটা বলতে গেলে পুরাটাই খালি। মিজান তৃতীয় যাত্রী। জানালার পাশে বসলো। জানালার কাঁচ নেই। হয়ত ভেঙ্গে গেছে। তাই পুরা কাঁচটাই ফেলে দেয়া হয়েছে। এখন বেশিরভাগ গাড়িতেই কাঁচ ভাঙ্গা থাকে। গাড়ির মালিকরা সে কাঁচ ঠিক করতে আগ্রহী থাকেন না। লাভ কি আন্দোলনকারীরা আবার ভাঙবে।
অনিকের হাতে শিমের বিচি ভাজার ছোট ঠোঙ্গা। সেখান থেকে একটা একটা করে শিমের নিচ্ছে আর চিবোচ্ছে, অল্প বয়সী হেল্পার ছেলেটা যাত্রী ডাকছে, মার্কেট, মার্কেট, মার্কেট। পাঁচ টাকা বাড়তি ভাড়া।

কল্পনা (অনুগল্প)

ইদানিং আমি লোডশেডিংয়ের অপেক্ষা করি। নাহ দিনের বেলায় না, রাতের বেলা। বিশেষ করে রাত দশটার পর। কখন লোডশেডিং হবে। চারদিক অন্ধকার হয়ে যাবে। গরম তীব্রতা আরো বেশি বোঝা যাবে।
পাশের বিল্ডিংয়ে থাকে মেয়েটি। মাঝে মাঝে সকাল বেলায় দেখি। কাধে ভারী ব্যাগ নিয়ে কলেজে ব্যস্ত ভঙ্গিতে কলেজে যায়। লম্বা চুল বেণী করা থাকে। খুব যত্ন করে স্কাফ দেয়। সম্ভবত এগুলোকে হিজাবের স্কার্ফ বলে। অনেক পবিত্র লাগে মুখটি।
কখনো কথা হয়নি। তবে রাতে বিদ্যুত চলে গেলে মেয়েটি বিল্ডিংয়ের ছাদে উঠে। আমি তো রাতের বড় একটা সময় ছাদে কাটাই। ছাদে এলে মেয়েটি তার ছোট ভাইয়ের সাথে গল্প করে। কি গল্প বোঝা যায় না। তবে মাঝে মাঝেই তাদের হাসির শব্দ শোনা যায়। অনেক সুন্দর মনে হয় হাসিটি।

ফেসবুক (অনুগল্প)

রাস্তার পথচারীদের চলাচল কমে গেছে। গাড়ি চলাচলও কম। ফুটপাট ঘেষে কয়েকটি ভ্যানগাড়ি রাখা। সেখানে বসে গল্প করছে দুই বন্ধু সৌরব ও অনিক। অফলাইনে অনলাইনে গল্প।
সৌরব মধুর এক সমস্যায় আছে। একটা মেয়ে তাকে ইদানিং পোক দিচ্ছে। সে ব্যাক করলে ওই মেয়ে আবার দেয়। আবার ব্যাক করলে আবার দেয়। প্রোফাইলে মেয়ের ছবিটা দূর্দান্ত। সারা মুখ জুড়ে মায়া ছড়ানো। লম্বা কালো চুল। দেখলে তাকিয়েই থাকতে ইচ্ছা করে।
সৌরভ ঘটনাটা শেয়ার করে অনিকের সাথে।
-বুঝছিস, একটা মেয়ে আমাকে প্রতিদিন পোক করে। ব্যাপারটা আনন্দের।
- তুই কি ওই পোক পেয়ে খুব খুশী।

অপরাধবোধ (অনুগল্প)

জয়া কান্না করছে। সময় না বোঝার কান্না, মানুষ না চেনার কান্না। ব্রেক আপে সাধারণ কান্নার ঘটনা তেমন দেখা যায় না। জয়া যে কলেজে পড়ে সেখানে তাদের একটি বন্ধুত্বের সার্কেল আছে। মেয়েদের কলেজ। ব্রেক আপ একটি সাধারণ ঘটনা। দুইদিন পর পর ব্রেক আপের ঘটনা ঘটছে। সবাই সহজ ভাবেই মেনে নিচ্ছে। এসে সুন্দর ভাবে বলেও দিচ্ছে ব্রেক আপ হয়েছে। দুই দিন যেতেই আবার গল্প করছে, নতুন আরেকজনের সাথে কিভাবে জড়ালো।
বন্ধু সার্কেলের মধ্যেও একটু যেন অন্যরকম জয়া। বাবার টাকার অভাব নেই। বাসায় স্বাধীনতার অভাব নেই। স্বাধীনতার অনেক কিছু করেও ফেলেছে। যা আগে করবে ভাবে নি।

মৃত্যু (অনুগল্প)

ফুটপাথে ছেলেটি দাঁড়িয়েছিল। সন্ধ্যার আঁধারটা ভারী হচ্ছিলো। নিয়ন আলোর বদলে এখন সাদা এনার্জি বালভ ল্যাম্পপোস্টগুলোতে। হালকা আলোয় কিছুটা অন্ধকার দূর হয়। ছেলেটি উদাস মনে হাঁটতে থাকে। তার সামনে রিকসায় এক জুটি চলে যাচ্ছে। নতুন ভালোবাসা সম্ভবত। মেয়েটি ছেলেটির হাত ধরে আছে। ছেলেটি কেমন যেন লজ্জা পাচ্ছে।
তারও ভালোবাসার মানুষ ছিল। এখন আর নেই। প্রিয় মানুষটির নাম ছিল তমা। ইন্টার পাস হতেই ডাক্তার ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দেয়া হয় তাকে। ক্লাসমেটকে বিয়ে করার বড় দু:সাহস ছিল না ছেলেটির। অন্যদের ভালোবাসার ব্যাপারগুলো যখন দেখে বুকের এক পাশটা ব্যথা করে। আফসোসে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। যা চাওয়া হয় তা সব সময় পাওয়া যায় না। দুইজনই তো চেয়েছিল। তারপরও বাস্তবতার কারণে পাওয়া হয়নি। তমার জন্য ভালই হয়েছে। নিশ্চিত জীবন পেয়েছে। একটা ডাক্তারের অনেক ইনকাম। 

সাঁতার (অনুগল্প)

: কান্না করছো কেন?
: কান্না করতে কোন ট্যাক্স দিতে হয় না। তাই কাঁদছি।
: হাসতেও তো ট্যাক্স দিতে হয় না। হাসি কি দোষ করলো?
: হাসি দোষ করেছে তা কি আমি বলেছি নাকি। কারো কারো কাছে কান্নাটাই বড় আপন। কান্নার মাধ্যমে মনের কষ্টগুলো ওয়াশ করে দিতে পারি।
: মনের কষ্ট তো সবারই কম বেশি আছে। এখন সবাই যদি তা ওয়াশ করতে শুরু করে তাহলে তো দেশে গ্রীষ্মকালেও বন্যা হয়ে যাবে। তখন দেখা যাবে প্রাইভেট নৌকা কিনতে হচ্ছে। একদিকে ভালই হতো। গাড়ি কেনার তো টাকা হতো না। নৌকার দাম কম আছে। সে নৌকা কিনে আমরা দুইজনে মিলে ঘুরতে পারতাম। আচ্ছা তুমি সাঁতার পারো?

অভিমানী (অনুগল্প)

সেদিন বেশ অবাক হয়েছিলাম। এ পিচ্ছি মেয়ে ভালোবাসবে আমায়! আরে এর মুখ দেখলে কি মায়া লাগে। মনে হয় এখুনি বুঝি চোখ ভাসিয়ে দেবে অভিমানে।
অভিমানের ওপর পৃথিবীতে পিএইডি পাওয়ার কোন প্রতিষ্ঠান থাকলে এ মেয়ে অতি সফলতার সাথে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করতো।
ছয়টা বছর পর। আগের সম্পর্ক বদলে গেছে। আগে যা ছিল আড়ালে এখন তা উম্মুক্ত। সমাজ কর্তৃক স্বীকৃত।
তবে অভিমান এতটুকু কমেনি।

নীরবতা (অনুগল্প)

লামিয়া কাঁদছে। নি:শব্দে কান্না। দুই বার বাথরুমে গিয়ে চোখ পানির ঝাপটা দিয়ে এসেছে। লাভ হয়নি। যখন গালর্স স্কুলে ছিল, পরীক্ষার আগের রাতগুলোতে ঘুম এসে যেতো। তখন বাথরুমে গিয়ে পানির ঝাপটা দিয়ে এসে আবার পড়তে বসতো। সিলেবাস পুরা রিভাইস না দেয়া পর্যন্ত যতই ঘুম আসুক বিছানায় যেত না।
মা এর মধ্যে চা বানিয়ে দিতেন। লামিয়া চা খেতে খেতে নোটগুলো দেখতো। অন্যদিকে তখন মাথায় চুলে তেল দিয়ে হাত বুলিয়ে দিতেন মা। দিনগুলো অন্য রকম ছিল।
এ মুহূর্তে কান্না চাপার চেষ্টা করছে। কিন্তু চোখের পানি গড়িয়ে পড়ছেই। পাশের মানুষটা শুয়ে ঘুমাচ্ছে। হয়ত বেশিই ক্লান্ত তাই ঘুমটাও বেশি গভীর। কিন্তু লামিয়ার চোখে ঘুম নেই।

ঝালমুড়ি (অনুগল্প)

রাত দুইটায় আবীরের ঝাল মুড়ি খেতে ইচ্ছা করছে। তমাকে বলতে ইচ্ছা করছে। তবে তমার কষ্ট হবে ভেবে বলছে না।
তমা শুয়ে আছে। আবীর চেয়ারে বসা। একটা ম্যাগাজিন পড়ছে।
-তুমি ঘুমাবে না?
আবীর চোখ তুলে তাকায়। তমা তার দিকে তাকিয়ে আছে। গোলাপী রঙ্গের জামা পড়া। মেয়েটা এত সুন্দর কেন! মাঝে মাঝে পুরা ব্যাপারটা আবীরের কাছে স্বপ্ন মনে হয়। মনে হয় ঘুম ভাঙলে দেখবে তমা আর পাশে নেই।
-কিছু বলছো না যে! না ঘুমালে বলো।
- আরেকটু পড়ে ঘুমাবো।

ভুল (অনুগল্প)

আর রাত জাগতে হয় না মাসুদের। তৃষার ফোনের অপেক্ষায় থাকতে হয় না। অপেক্ষায় থাকলেও তৃষা আর ফোন দেবে না। এক সময় অতি কাছের জন সামাজিক ভাবে এত দূরত্বের হয়ে গেছে যে ফোন পর্যন্ত দেয়ার কথা ভাবে না।
মাসুদ রাত জাগতে চায় না। আগের স্মৃতি গুলো মনে পড়ে যাচ্ছে। ঘুমের ওষুধেও ইদানিং কাজ করছে না। একটা চিরস্থায়ী ঘুম হয়ে গেলে ভাল হতো।
শেষ পর্যন্ত ফ্যামিলি যেখানে বলেছে সেখানেই যেতে রাজি হয়েছে তৃষা। ডাক্তার এক ছেলের সাথে বিয়ে হয়েছে! এতগুলো স্মৃতিকে কি অবলীলায় পেছনে ফেলে গেছে।
তৃষার শেষ কথাগুলো ছিলো, "অপরাধী হিসেবেই আছি। জানি স্বার্থপর ভাবছো আমায়। আমাকে সেটা ভেবে যদি কিছুটা হলেও ভাল থাকো তবে আমি অনেক ভাল থাকবো। সত্যি বলছি অনেক ভাল থাকবো।"

রিলেশন (অনুগল্প)

ফারিয়ার জগতটা ছোট। সে ফেসবুকে এসে অন্যদের স্ট্যাটাসগুলো পড়ে, লাইক দেয়। কয়েকটি গল্পের পেইজ বুকমার্ক করে রেখেছে। সেগুলোর কোন গল্পই মিস করে না। গল্প ভাল হলেও পড়ে. খারাপ হলেও পড়ে। পড়ার ব্যাপারটা অভ্যাস হয়ে গেছে। তবে খুব কম ক্ষেত্রেই কমেন্ট করে।
ক্লাশ এইট নাইনে পড়ার সময় বই থেকে গল্প পড়ত। হুমায়ূনের গল্পের বই না পড়লে ঘুমই আসতো না। এজন্য মায়ের সাথে রাতে ঝামেলা হতো।
: ফারিয়া, তুমি এখনও লাইট জ্বালিয়ে রেখেছো কেন? তোমার বাবা টের পেলে রাগারাগি করবেন।

সেক্রিফাইস (অনুগল্প)

তাহাদের দুইজনের মধ্যে অনেক ভালো সম্পর্ক। চমৎকার বোঝা পড়া। ন্যাকামি ব্যাপারটা কখনো দেখিনি।
মেয়েটি লেখা লেখি করে, ছেলেটিও লেখালেখি করে। একবার একটা ম্যাগাজিনে দুইজনই লেখা জমা দিলো। ছেলেটির লেখা প্রকাশ পেলো। মেয়েটির লেখা ছাপানো হয়নি।
মেয়েটির অনেক মন খারাপ হয়। লেখালেখির ব্যাপারে অল্পতেই আপসেট হওয়ার অস্বাভাবিক গুণ আছে মেয়েটির!

মনবোমা (অনুগল্প)

রাফিদ ও তার বন্ধুরা সেন্টমার্টিন যাবে। কত কত পরিকল্পনা। স্বাধীন হলে কিছু স্বাধীনের অপব্যবহারও হতে দেখা যায়।
আট বন্ধু মিলে যাবে। সেখানে কিছু ব্যাপার ঠিক করা হয়েছে। যা শহরের কেউ জানবে না। গোপন থাকবে। তবে রাফিদের ব্যাপারগুলো খুব অপছন্দ। সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বন্ধুদের ওইসব কাজের সময় সে আলাদা থাকবে। নীপা এসব পছন্দ করে না।
কিভাবে যেন নীপা ব্যাপারটা অনুমান করে নিলো। তারা যেদিন যাবে তার আগের দিন ফোন।

শিক্ষা (অনুগল্প)

মিমের বয়স সাড়ে দশ। তার মন খারাপ। ক্লাসে একটা বাজে ব্যাপার হয়ে গেছে। বাবার সাথে শেয়ার করা দরকার। কিন্তু শেয়ার করলে বাবার মন অনেক খারাপ হবে। তাই ঠিক সাহস পাচ্ছে না।
মিমের সবচেয়ে ভাল বন্ধু তার বাবা। ভাল বন্ধুর মন খারাপ করতে হয় না।
মা পড়ার জন্য ধমক দেন। মিমের যখন পড়তে ভাল লাগে না তখনও মায়ের ভয়ে পড়তে হয়। না পড়লে মা ভয়ানক রাগ করেন। বাবা কখনো রাগ করেন না। মাঝে মাঝে তো পড়ানোর ভান করে বাবা বিভিন্ন বিষয়ে গল্প করে।

সবুজবাতি (অনুগল্প)

-তোমার ওয়ালটা একটু খুলে দিবে?
-কেন?
-আগে দাও না। খোলার পর বলবো।
- নাহ, কোন দুষ্টামির দরকার নেই। তুমি দুষ্টামি করো, অন্যরা মনে করে তুমি আমার গার্লফ্রেন্ড।
- মনে করলে সমস্যা কি?
- সমস্যা কি মানে! তুমি একজন বিবাহিত নারী। বিবাহিত নারী অন্য জনের গার্লফ্রেন্ড হয় কিভাবে।
-এখানে একটু ভুল হয়ে গেছে। সময়গত ভুল। তোমার সাথে তো বিয়ের পর পরিচয় হয়েছে। বিয়ের আগে পরিচয় হলে তোমারই বউ হতাম।

ছেলেমানুষি (অনুগল্প)

: আজকে বাজার করতে যেতে পারবো না।
: এটা তো নতুন কিছু না। বাজারে যেতে বললেই নতুন নতুন অজুহাত দেখাও। তোমাকে তো জোর করে বাজারে পাঠাতে হয়। তো আজকের অজুহাত কি?
: আজকের অজুহাতটা অনেক শক্তিশালী। আজকে কোন মতেই আমাকে বাজারে পাঠাতে পারবে না। ফরিদকে পাঠায় দাও।
: আরে, অজুহাতটা কি শুনি।
: বিকেলে বাংলাদেশের খেলা আছে।

দূরপ্রবাস (অনুগল্প)

ইদানিং রাতে ঘুম হচ্ছে না জুয়েলের। দেশে আসার পর থেকে এ সমস্যা। ঘুমাতে গেলে বিভিন্ন চিন্তায় আর ঘুম আসে না। অথচ যখন বিদেশে ছিল তখন সারাদিনের কাজের পর রাত আসার অপেক্ষা করতো। বিছানায় যেতেই ঘুমে হারিয়ে যাওয়া। এজন্য তো তন্বী বেশ বিরক্ত ছিল।
তন্বী অপেক্ষায় থাকতো ওই সময়টার জন্য। ফ্রি হওয়ার পর চ্যাটে কথা বলবে। কিন্তু জুয়েলের ঘুম চলে আসায় কথা বেশি দূর নিতে পারতো না। জুয়েল ঘুমিয়ে পড়তো। তবে এ নিয়ে কখনো অনুযোগ ছিল না তন্বীর। কোন ব্যাপারেই অনুযোগ নেই এ মেয়েটার। যখন শুনলো দেশে আসবে জুয়েল তখন বেশ খুশী হয়েছিল।

বৃহস্পতিবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৫

সারপ্রাইজডে : ২০১৩

সুন্দর এবং সারপ্রাইজড দিন পেতে হলে ভাগ্যবান হতে হয়। আজ সকালে লালখান বাজারে নেমে আবিষ্কার করলাম আমি ভাগ্যবানদের একজন। পনের জনের একটা দল আমাকে উইশ করতে সে আগে থেকে অপেক্ষা করে আছে। পরিকল্পনা করেছে অতি গোপনীয়তার সাথে যাতে কোনক্রমেই আমি জানতে না পারি। এজন্য তারা একদিন আগে শিল্পকলায় যুক্ত হয়ে মিটিংও করেছে। বৃষ্টি হলে কোন স্থানে হবে তাও ভেবে রেখেছে। আমাকে সারপ্রাইজড দিতে চায়।