শনিবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৫

শিক্ষা (অনুগল্প)

মিমের বয়স সাড়ে দশ। তার মন খারাপ। ক্লাসে একটা বাজে ব্যাপার হয়ে গেছে। বাবার সাথে শেয়ার করা দরকার। কিন্তু শেয়ার করলে বাবার মন অনেক খারাপ হবে। তাই ঠিক সাহস পাচ্ছে না।
মিমের সবচেয়ে ভাল বন্ধু তার বাবা। ভাল বন্ধুর মন খারাপ করতে হয় না।
মা পড়ার জন্য ধমক দেন। মিমের যখন পড়তে ভাল লাগে না তখনও মায়ের ভয়ে পড়তে হয়। না পড়লে মা ভয়ানক রাগ করেন। বাবা কখনো রাগ করেন না। মাঝে মাঝে তো পড়ানোর ভান করে বাবা বিভিন্ন বিষয়ে গল্প করে।

মিমের বাবা ভার্চুয়াল জগতে বেশ পরিচিত সেলিব্রেটি। দেশের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কথা বলে। তাকে অনেক পছন্দ করে. এরই মধ্যে ক্লাসের অনেকের ফেসবুকে একাউন্ট আছে। তাদের অনেকে মীমের বাবার ফলোয়ার। কেউ কেউ তো মীমকে তার বাবার জনপ্রিয়তার জন্য সমীহ করে। তাদের ধারণা, যেহেতু ওর বাবা অনেক জানে তাই মিমও বেশি জানবে। দেশের বিষয়ে কথা উঠলে মিমের কথাকে গুরুত্ব দেয় সহপাঠীরা।
মিমের ফেসবুক একাউন্টটি গত বছর খোলা।
মিম দেখে তার বাবা ল্যাপটপে ফেসবুকিং করছে। সে কাছে গিয়ে বলে, বাবা, আমাদের ক্লাসের প্রিয়া, সুহি, অদ্রিতার ফেসবুক একাউন্ট আছে। তারাও তোমার মত ফেসবুকে থাকে।

মিমের বাবা মেয়ের দিকে তাকান। মেয়ের চোখে মুখে আশার ছবি। বাবা নিশ্চয় জিজ্ঞেস করবে, তোমাকে একাউন্ট খুলে দিই।
মেয়েকে হতাশ করেন না মিমের বাবা। সেদিনই একাউন্ট খুলে দেন। উত্তেজনার একটা দিন ছিল, প্রোফাইলে কোন ছবিটা দেবে, কাকে কাকে এড করবে এসব নিয়ে বাবা মেয়ের কি ব্যস্ততা।
মাঝে মাঝে বাবা তাকে ট্যাগ দিয়ে স্ট্যাটাস দেয়। আর ওইটা দেখে মিমের কাছে অনেকে রিকোয়েস্ট পাঠায়।
বাবা কয়েকদিন ধরে ফেসবুকে বসছেন না। মিম লক্ষ করেছে বাবা যখন অনেক মন খারাপ থাকে তখন ফেসবুকে যান না। কয়েকদিন ফেসবুক থেকে দূরে থাকেন। এবারের মন খারাপের কারণটা মিম কিছুটা হলেও বুঝতে পারছে।
প্রতিদিন ক্লাসে এটা নিয়ে কথা বলছে ওর কয়েক বান্ধবী। বাবার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর বাজে কিছু ছবি প্রকাশ পেয়েছে। মেয়েরা ছি ছি করছে। এসব বিষয়ে ওরা যখন কথা বলে মিমের ইচ্ছা করে দুই কান চেপে ধরতে যাতে ওদের কথাগুলো কানে না আসে। ওই লোকটাকে ওরা মিমের আঙ্কেল বলে জানে।
বাবাকে কিছু বলে না মিম। শুধু একদিন জিজ্ঞেস করে বাবা তোমার ওই বন্ধুটার খবর কি?

মিমের বাবা খেয়াল করেন মেয়ে আঙ্কেল ডাকছে না, বলছে তোমার বন্ধুটা বলছে। বিষয়টা যেন তার চোখ খুলে দেয়!
যে কাজের জন্য নিজের মেয়ে আঙ্কেল ডাকছে না, সে কাজ করার পর ওই জন তার বন্ধু হিসেবে থাকে কিভাবে। ফেসবুক ওপেন করে ব্লক লিস্টে পাঠিয়ে দেন। মেয়ে পাশে দাঁড়িয়ে বাবার কাজ দেখে।
মেয়ে দেখে, তার বাবা স্ট্যাটাস দিয়েছে, কিছু সম্পর্কচ্ছেদ স্বস্তির, দায় মুক্তির। ছোটদের কাজ থেকেও বড় কিছু শেখার আছে।

শিক্ষা (অনুগল্প)