ইদানিং রাতে ঘুম হচ্ছে না জুয়েলের। দেশে আসার পর থেকে এ সমস্যা। ঘুমাতে
গেলে বিভিন্ন চিন্তায় আর ঘুম আসে না। অথচ যখন বিদেশে ছিল তখন সারাদিনের
কাজের পর রাত আসার অপেক্ষা করতো। বিছানায় যেতেই ঘুমে হারিয়ে যাওয়া। এজন্য
তো তন্বী বেশ বিরক্ত ছিল।
তন্বী অপেক্ষায় থাকতো ওই সময়টার জন্য। ফ্রি হওয়ার পর চ্যাটে কথা বলবে। কিন্তু জুয়েলের ঘুম চলে আসায় কথা বেশি দূর নিতে পারতো না। জুয়েল ঘুমিয়ে পড়তো। তবে এ নিয়ে কখনো অনুযোগ ছিল না তন্বীর। কোন ব্যাপারেই অনুযোগ নেই এ মেয়েটার। যখন শুনলো দেশে আসবে জুয়েল তখন বেশ খুশী হয়েছিল।
জুয়েল ফোন দিয়ে বলল, তাদের সম্পর্ক বেশি দূর নেওয়া সম্ভব নয়। বাসা থেকে বলা হয়েছে, দূর জেলার কোন মেয়েকে বউ হিসাবে আনা হবে না।
সেটা শুনে হা ঠিকই তো। তারা তো ঠিক কথাই বলেছেন। এতটুকুই বলেছে তন্বী।
এরপর থেকে আর তন্বী ফেসবুকে আসেনি। মোবাইল যে নাম্বারটা ছিল সেটাও বন্ধ। জুয়েল দেশে আসার পর কয়েকবার ফোন দিয়ে দেখেছে ওই নাম্বারে। কিন্তু লাভ হয়নি। প্রতিবারই একটা যন্ত্র মেয়ের কন্ঠস্বর, দু:খিত, আপনার আপনার ডায়েলকৃত নাম্বারটিতে এ মুহূর্তে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, অনুগ্রহ করে কিছুক্ষণ পর আবার চেষ্টা করুন।
ওই কথা কিছুক্ষণপর চেষ্টা আবার করে যাওয়া। ফলাফল একই। সে একই কথা জানায় যন্ত্র মানবীটি।
বিদেশ যাওয়ার পর এ পর্যন্ত তৃতীয়বারের মত দেশে এসেছে জুয়েল। একটা ব্যাপার তার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে। বিদেশ থেকে যখন আসবে শুনে তখন আত্মীয়রা অপেক্ষায় থাকে কখন আসবে। বিভিন্ন চাহিদা জানিয়ে দেয়। এর এটা লাগবে, ওর ওইটা লাগবে। জুয়েলের মনে হয়, তার আসার প্রতীক্ষার চেয়ে ওই সব জিনিসের জন্য প্রতীক্ষাই বেশি কাজ করে আত্মীয়দের মনে।
এরপরও জিনিসগুলো পেয়ে অন্যদের মুখে হাসি দেখতে ভালই লাগে জুয়েলের। কিন্তু কয়েকজন ঠিক সন্তুষ্ঠ হতে পারে না। আনা জিনিস পছন্দ হয় নাই। মুখ কালো করে রাখে। তখন মনে হয় কিছু না আনলেই ভাল হতো।
আগের দুইবারের চেয়ে এবারে আসার পার্থক্য আছে। আগের দুইবার ঘুরেই চলে গেছে। এবার বিয়ে করবে। নিজের জীবন আর একা থাকছে না। একই সাথে দুইজনে মিলে স্বপ্ন দেখবে। সেজন্য এবার একমাস ছুটি বাড়িয়ে এনেছে। কিন্তু পাত্রী দেখতে দেখতেই ছুটির অনেকটা চলে গেছে।
জুয়েল মোটামুটি বিরক্ত। তার মনে হচ্ছে ছোট কালে বাবার সাথে কুরবানী হাটে গরু কিনতে যাওয়ার স্মৃতিগুলো। সে সকালে যে বাবার হাত ধরে যাওয়া হতো। এরপর সারাদিন পশুর হাটে ঘোরা। কোনটার এটা পছন্দ করে, কোনটার এটা পছন্দ হয় না। কোনটার সব পছন্দ হয় কিন্তু দাম পছন্দ হয় না। দামাদামি করা। এভাবে যে কত সময় চলে যেত। পা ব্যাথা হয়ে যেত। তবে বলতেও পারতো না। বললে যদি পরের দিন আর হাটে না নেওয়া হয়।
সকালে নাস্তা দিতে আসেন জুয়েলের মা আয়েশা বেগম। টেবিলে নাস্তা রেখে চলে যান না।
: মা, কিছু বলবেন?
: আচ্ছা মুন্সী সাহেবের মেয়েটাতো সব দিক দিয়ে ভাল, দেখতে সুন্দর, নামাজ কালামও পড়ে নিয়মিত। আমাদের পছন্দ হয়েছে। কিন্তু নিম্মী যে অন্য একটা কথা বলছে। এখন তো আমার ভয় হচ্ছে।
: কেন, কি হয়েছে?
মায়ের সাথে আগে এ ধরণের পাত্রী বিষয়ে কথা বলতে অস্বস্তি হতো। লজ্জা লাগত। এখন এত বেশিবার এ বিষয়গুলো ঘরে আলোচিত হচ্ছে যে এখন আর কথাগুলো অস্বস্তি পর্যায়ে নেই। নিম্মী জুয়েলের ছোট বোন।
: নিম্মী বলল যে ওই মেয়েটা কোন একটা ছেলেকে পছন্দ করে। ওই ছেলের সাথে মেয়েটার অ্যাফেয়ার আছে। এ বিষয়ে মুন্সী সাহেব কিছু জানে কিনা কে জানে। তাকে জিজ্ঞাসা করবো কিনা ভাবছি।
: মা, এ বিষয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করতে যাইয়েন না। ওই মেয়ে যদি পছন্দ করে ওই মেয়ের ব্যাপার। এখন কিছু জিজ্ঞাসা করলে ওই মেয়ের অবস্থা কাহিল হবে। মুন্সী সাহেব এম্নেই অনেক রাগী মানুষ। নিম্মী যখন বলছে সত্য হতেও পারে। আর এখনকার মেয়েরা এরকম পছন্দ করেই রাখে। আপনি কিছু বলতে যাইয়েন না। মুন্সী সাহেবের মেয়ে বাদ দেন।
এসময় মা জিজ্ঞেস করে, আচ্ছা তোর পছন্দের কেউ নেই?
তন্বীর কথা বললে কিছুতেই এত দূর ছেলের বিয়ে দিতে রাজি হবে না মা-বাবা কেউই। এম্নে বিদেশে থাকে ছেলের দেখা পায় না। তার ওপর তাদের এমন অপছন্দনীয় একটা ব্যাপার করলে আরো বেশি কষ্ট পাবে।
তাই জুয়েল মিথ্যা কথাই বলে, নাহ মা। পছন্দ থাকবে কিভাবে! আমি তো দেশেই থাকি না। আর যেখানে থাকি সেখানকার মেয়েদের মধ্যে কাউকে পছন্দ করে লাভ কি। তারা তো ভিনদেশি। যে এডভান্স মেয়েগুলো, আপনার ছেলেকে দৌড়ের ওপর রাখবে। আমি এত দৌড়ের ওপর থাকতে পারবো না।
একথা শুনে আয়েশা বেগম হাসে। মায়ের হাসিটা অনেক সুন্দর। কেমন লজ্জা মেশানো একটা হাসি। জুয়েলের ভাল লাগে মায়ের হাসি।
চলবে...
ফেসবুকে - দূরপ্রবাস
তন্বী অপেক্ষায় থাকতো ওই সময়টার জন্য। ফ্রি হওয়ার পর চ্যাটে কথা বলবে। কিন্তু জুয়েলের ঘুম চলে আসায় কথা বেশি দূর নিতে পারতো না। জুয়েল ঘুমিয়ে পড়তো। তবে এ নিয়ে কখনো অনুযোগ ছিল না তন্বীর। কোন ব্যাপারেই অনুযোগ নেই এ মেয়েটার। যখন শুনলো দেশে আসবে জুয়েল তখন বেশ খুশী হয়েছিল।
জুয়েল ফোন দিয়ে বলল, তাদের সম্পর্ক বেশি দূর নেওয়া সম্ভব নয়। বাসা থেকে বলা হয়েছে, দূর জেলার কোন মেয়েকে বউ হিসাবে আনা হবে না।
সেটা শুনে হা ঠিকই তো। তারা তো ঠিক কথাই বলেছেন। এতটুকুই বলেছে তন্বী।
এরপর থেকে আর তন্বী ফেসবুকে আসেনি। মোবাইল যে নাম্বারটা ছিল সেটাও বন্ধ। জুয়েল দেশে আসার পর কয়েকবার ফোন দিয়ে দেখেছে ওই নাম্বারে। কিন্তু লাভ হয়নি। প্রতিবারই একটা যন্ত্র মেয়ের কন্ঠস্বর, দু:খিত, আপনার আপনার ডায়েলকৃত নাম্বারটিতে এ মুহূর্তে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, অনুগ্রহ করে কিছুক্ষণ পর আবার চেষ্টা করুন।
ওই কথা কিছুক্ষণপর চেষ্টা আবার করে যাওয়া। ফলাফল একই। সে একই কথা জানায় যন্ত্র মানবীটি।
বিদেশ যাওয়ার পর এ পর্যন্ত তৃতীয়বারের মত দেশে এসেছে জুয়েল। একটা ব্যাপার তার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে। বিদেশ থেকে যখন আসবে শুনে তখন আত্মীয়রা অপেক্ষায় থাকে কখন আসবে। বিভিন্ন চাহিদা জানিয়ে দেয়। এর এটা লাগবে, ওর ওইটা লাগবে। জুয়েলের মনে হয়, তার আসার প্রতীক্ষার চেয়ে ওই সব জিনিসের জন্য প্রতীক্ষাই বেশি কাজ করে আত্মীয়দের মনে।
এরপরও জিনিসগুলো পেয়ে অন্যদের মুখে হাসি দেখতে ভালই লাগে জুয়েলের। কিন্তু কয়েকজন ঠিক সন্তুষ্ঠ হতে পারে না। আনা জিনিস পছন্দ হয় নাই। মুখ কালো করে রাখে। তখন মনে হয় কিছু না আনলেই ভাল হতো।
আগের দুইবারের চেয়ে এবারে আসার পার্থক্য আছে। আগের দুইবার ঘুরেই চলে গেছে। এবার বিয়ে করবে। নিজের জীবন আর একা থাকছে না। একই সাথে দুইজনে মিলে স্বপ্ন দেখবে। সেজন্য এবার একমাস ছুটি বাড়িয়ে এনেছে। কিন্তু পাত্রী দেখতে দেখতেই ছুটির অনেকটা চলে গেছে।
জুয়েল মোটামুটি বিরক্ত। তার মনে হচ্ছে ছোট কালে বাবার সাথে কুরবানী হাটে গরু কিনতে যাওয়ার স্মৃতিগুলো। সে সকালে যে বাবার হাত ধরে যাওয়া হতো। এরপর সারাদিন পশুর হাটে ঘোরা। কোনটার এটা পছন্দ করে, কোনটার এটা পছন্দ হয় না। কোনটার সব পছন্দ হয় কিন্তু দাম পছন্দ হয় না। দামাদামি করা। এভাবে যে কত সময় চলে যেত। পা ব্যাথা হয়ে যেত। তবে বলতেও পারতো না। বললে যদি পরের দিন আর হাটে না নেওয়া হয়।
সকালে নাস্তা দিতে আসেন জুয়েলের মা আয়েশা বেগম। টেবিলে নাস্তা রেখে চলে যান না।
: মা, কিছু বলবেন?
: আচ্ছা মুন্সী সাহেবের মেয়েটাতো সব দিক দিয়ে ভাল, দেখতে সুন্দর, নামাজ কালামও পড়ে নিয়মিত। আমাদের পছন্দ হয়েছে। কিন্তু নিম্মী যে অন্য একটা কথা বলছে। এখন তো আমার ভয় হচ্ছে।
: কেন, কি হয়েছে?
মায়ের সাথে আগে এ ধরণের পাত্রী বিষয়ে কথা বলতে অস্বস্তি হতো। লজ্জা লাগত। এখন এত বেশিবার এ বিষয়গুলো ঘরে আলোচিত হচ্ছে যে এখন আর কথাগুলো অস্বস্তি পর্যায়ে নেই। নিম্মী জুয়েলের ছোট বোন।
: নিম্মী বলল যে ওই মেয়েটা কোন একটা ছেলেকে পছন্দ করে। ওই ছেলের সাথে মেয়েটার অ্যাফেয়ার আছে। এ বিষয়ে মুন্সী সাহেব কিছু জানে কিনা কে জানে। তাকে জিজ্ঞাসা করবো কিনা ভাবছি।
: মা, এ বিষয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করতে যাইয়েন না। ওই মেয়ে যদি পছন্দ করে ওই মেয়ের ব্যাপার। এখন কিছু জিজ্ঞাসা করলে ওই মেয়ের অবস্থা কাহিল হবে। মুন্সী সাহেব এম্নেই অনেক রাগী মানুষ। নিম্মী যখন বলছে সত্য হতেও পারে। আর এখনকার মেয়েরা এরকম পছন্দ করেই রাখে। আপনি কিছু বলতে যাইয়েন না। মুন্সী সাহেবের মেয়ে বাদ দেন।
এসময় মা জিজ্ঞেস করে, আচ্ছা তোর পছন্দের কেউ নেই?
তন্বীর কথা বললে কিছুতেই এত দূর ছেলের বিয়ে দিতে রাজি হবে না মা-বাবা কেউই। এম্নে বিদেশে থাকে ছেলের দেখা পায় না। তার ওপর তাদের এমন অপছন্দনীয় একটা ব্যাপার করলে আরো বেশি কষ্ট পাবে।
তাই জুয়েল মিথ্যা কথাই বলে, নাহ মা। পছন্দ থাকবে কিভাবে! আমি তো দেশেই থাকি না। আর যেখানে থাকি সেখানকার মেয়েদের মধ্যে কাউকে পছন্দ করে লাভ কি। তারা তো ভিনদেশি। যে এডভান্স মেয়েগুলো, আপনার ছেলেকে দৌড়ের ওপর রাখবে। আমি এত দৌড়ের ওপর থাকতে পারবো না।
একথা শুনে আয়েশা বেগম হাসে। মায়ের হাসিটা অনেক সুন্দর। কেমন লজ্জা মেশানো একটা হাসি। জুয়েলের ভাল লাগে মায়ের হাসি।
চলবে...
ফেসবুকে - দূরপ্রবাস