শনিবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৫

মুক্তি (অনুগল্প)

রুবিনা বারান্দায় বসে আছে। যখন ওর সময় কাটে না তখন বারান্দায় চলে আসে। রাস্তায় লোক চলাচল কমে গেছে। মাঝে মাঝে এলাকার গার্ড বাশি বাজাতে বাজাতে হেঁটে যায়। এদিক ওদিক টর্চের আলো ফেলে মানুষ ভেবে। পরে দেখা যায় আলো ফেলছে কুকুরের ওপর।
বারান্দার ছাদের দিকে তাকায় রুবিনা। এটা একটা নতুন সমস্যা হয়েছে। ছাদের দিকে তাকিয়ে থাকা। অনেকক্ষণ ধরে ছাদের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়, মাথাটা একটু ঘুরে উঠে, পৃথিবীকে উল্টা মনে হয়। বারান্দায় ফ্যান ঝুলানো হয় না। তারপরও ফ্যান ঝুলানোর রিং দেয়া আছে। আচ্ছা সবাই তো দরজা বন্ধ করে ফাঁস খায়। বারান্দায় রিংয়ে ঝুলে ফাঁস খেলে নিশ্চয় ব্যতিক্রম হবে। সারাজীবনের জন্য একবার মৃত্যু হবে সেখানে ব্যতিক্রম করা যেতেই পারে।
আত্মহত্যা করার মত তিনটা কারণ জমা আছে রুবিনার মাথায়। রুবিনা সিদ্ধান্ত নিয়েছে দশটা কারণ যখন হবে সে আত্মহত্যা করবে। তিনটা কারণের প্রথমটা হচ্ছে তাকে টিউশনি পড়াতে আসা শিক্ষকের আচরণ। দ্বিতীয়টা হচ্ছে তার প্রতি সৎ মায়ের জ্বালাতন। মহিলাটা সম্ভবত তাকে জ্বালানোকে বিনোদন হিসাবে নিয়েছে। দেখা হলেই খোঁচামার্কা কথা বলবে। একটার পর একটা দোষ ধরবে। বাথরুমে গেলে দরজা ধাক্কাধাক্কি করবে। এতক্ষণ বাথরুমে কি করো। তাড়াতাড়ি বের হও। প্রতিটা ক্ষেত্রেই সমস্যা।
বাবার প্রতি ইদানিং অনেক বেশি করুণা হয় রুবিনা। লোকটা বড্ড বদলে গেছে। সে নিজেও কি বদলে যায় নি! মা বেঁচে থাকলে লোকটা বলার কথা চিন্তাও করা যেত না। অথচ কি সহজেই বলে দিলো লোকটা। বাবা তার কাছ থেকে দূরে দূরে থাকে। আবার যদি নতুন স্ত্রী কিছু বলে বসেন। মায়ের প্রত অভিমান হয় রুবিনা। কেন মরে গিয়ে একটা লোককে এভাবে মেরুদন্ডহীন বানিয়ে গেলো! মাঝে মাঝে মায়ের কাছে চিঠি লিখে রুবিনা। রুবিনা ঠিক করেছে আত্মহত্যা করার ব্যাপারটা শুধু মা-কে জানাবে, বিশাল একটা চিঠি লিখে যাবে মা-কে উদ্দেশ্য করে। মৃতদের বললে সুবিধা, তারা মানা করতে পারেন না, অন্যদের বলে দিতে পারেন না।
দশটা কারণের ক্ষেত্রে একটা কোটা রেখেছে। কোটাটা হচ্ছে একটা কারণ হতে হবে বিয়ের পর। আচ্ছা বিয়ের পর কি ধরণের কারণ হতে পারে। ধরা গেলো স্বামী মারলো! এটা এত বিশাল কারণ না। যে মেয়ে কাল তাকে মা-রাই যায়। এটাকে বড় কারণ ভাবা যাবে না। বিভিন্ন সময় পত্রিকায় খবর আসে শ্বশুর বাড়ির পক্ষের লোকজন রড গরম করে ছ্যাকা দেয়। তার ক্ষেত্রেও যদি তেমন দেয় তাহলে। সেটাকে কারণ হিসাবে ধরবে! ঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না রুবিনা।

রুবিনার ধারণা তার আত্মহত্যা করা হবে না। তার যে চেহারা কোন ছেলে বিয়ে করতে রাজি হবে না। এখনকার ছেলেরা ফর্সা মেয়ে খুঁজে। তার গায়ের রঙ্গ কালো রঙ্গের। এ রঙ্গের ব্যাপারটা তার আত্মবিশ্বাস অনেক খানি কমিয়ে দিয়েছে। আচ্ছা মরে গেলে তাকেও তো সাদা কাপড়ের কাফনই পড়ানো হবে। ফর্সা মেয়েদেরও সাদা কাপড় পড়ানো হয়। তাহলে আর পার্থক্য কই। পঁচা হওয়ার ক্ষেত্রেও সমান সময় নেবে। ফর্সা বিধায় তারা কালোর চেয়ে বেশি সময় নিবে না পঁচতে।
ধ্যৎ এসব কি ভাবছে। নিজের প্রতি নিজেই বিরক্ত হয় রুবিনা। বারান্দা ছেড়ে বিছানায় আসে। পাশের রুম থেকে শব্দ আসছে।

রুবিনা দোয়া করে, অন্য কোন সন্তানের এমন দূর্ভাগ্য না হোক নিজের বাবার বিয়ে দেখার। সে জানে তার দোয়া কবুল হবে না। তার মত অভাগী এ পৃথিবীতে আরো অনেক আছে। সামনেও থাকবে। তার দোয়া অনুযায়ী পৃথিবী চলবে না। পৃথিবী চলবে পৃথিবীর নিয়মে।
শব্দগুলো থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আবার বারান্দায় গিয়ে বসে রুবিনা। রাত পার হয়ে যায়....

ফেসবুকে : মুক্তি