শনিবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৫

মনবোমা (অনুগল্প)

রাফিদ ও তার বন্ধুরা সেন্টমার্টিন যাবে। কত কত পরিকল্পনা। স্বাধীন হলে কিছু স্বাধীনের অপব্যবহারও হতে দেখা যায়।
আট বন্ধু মিলে যাবে। সেখানে কিছু ব্যাপার ঠিক করা হয়েছে। যা শহরের কেউ জানবে না। গোপন থাকবে। তবে রাফিদের ব্যাপারগুলো খুব অপছন্দ। সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বন্ধুদের ওইসব কাজের সময় সে আলাদা থাকবে। নীপা এসব পছন্দ করে না।
কিভাবে যেন নীপা ব্যাপারটা অনুমান করে নিলো। তারা যেদিন যাবে তার আগের দিন ফোন।

: তোমার সেন্টমার্টিন যাওয়ার দরকার নেই।
রাফিদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।
: কেন কি হয়েছে? মাত্রতো দুইটা দিন।
: একদিনের জন্যও না।
: গত মাসে তুমি রাঙ্গামাটি ঘুরে এসেছো। আমি যেতে মানা করেছি?
: নাহ করো নি। আর আমি আমার পরিবারের সাথে গিয়েছি।
: বন্ধুরা মিলে যাচ্ছি। ঢাকা শহরটা ভাল লাগছে না।
: অন্য সময় গেলে হবে। কাল যাওয়ার দরকার নেই।
: গেলে সমস্যাটা কোথায়?
: আমার মানা আমি করেছি। এখন যেতে চাইলে যাবে। জোর করে তো আর কাউকে থামিয়ে রাখা যায় না।
: প্লিজ বোঝার চেষ্টা করো। সব কিছু রেডি। এখন বন্ধুদের যদি বলি যাবো না, তারা আমাকে আস্ত রাখবে না।
: আমার চেয়ে বন্ধুদের গুরুত্ব বেশি হতেই পারে। বললামই বেশি ইচ্ছা করলে যাও। আমি মানা করেছি এরচেয়ে বেশি কিছু না।
: তুমি না অনেক ভাল! এবার যাই। সামনের বার আর যাবো না।
নীপা আর কোন কথা না বলে কেটে দেয়।
রাফিদ ফোন দিতেই থাকে। চারবারে ফোন পুরোপুরি রিং হয়, তবে রিসিভ হয় না। পঞ্চম বারের সময় শোনা যায়, এ মুহূর্তে ফোন সংযোগ দেয়া সম্ভব না।
রাফিদের ইচ্ছা করে মোবাইলটা আছাড় মারে। নিজের হলে এতক্ষনে ছুড়ে মারতো। কিন্তু মোবাইলটি নীপা গিফট দিয়েছে। এ গিফট দেয়ার পেছনে যুক্তি আছে ওর। রাফিদ ভুলোমনা। প্রায় সময় মোবাইল হারিয়ে বসে থাকে। নীপা মোবাইলটি গিফট দিয়ে বলেছে, আমার ধারণা আমাকে তুমি পছন্দ করো। আমার দেয়া জিনিস যত্ন করে রাখবে। আশা করি এটা হারাবে না।

"মোবাইল না হারানোর জন্য এটা গিফট দিলে? আমাকে তো বিপদে ফেলে দিলে।" রাফিদ বলে।
"নাহ, তোমাকে বিপদে ফেলার জন্য না। মোবাইল সব সময় হাতে থাকে। প্রিয় মানুষকে তেমন জিনিসই দেওয়া দরকার যে জিনিসটা সব সময় কাছে থাকে। আমার কথা ভুলে গেলেও মোবাইলটা দেখে অন্তত যেন মনে পড়ে। বলেই হাসে নীপা। টোল পড়া মুখের হাসি।
রাফিদ মনে মনে বলে, নিজেকে ভুলে যেতে পারি। তবে তোমাকে না।
কিন্তু একথা এখন বললেই নীপা ন্যাকামি ন্যাকামি বলে ক্ষেপাবে। মেয়েটা যে কি! যখন ইচ্ছা করে অনেক বেশি আবেগ দেখায়। আবার যখন ইচ্ছা করে তখন ক্ষেপায়।
মোবাইলের স্ক্রিণের দিকে তাকিয়ে আছে রাফিদ। যেকোন সময় একটা মেসেজ আসবে। মোবাইল রিসিভ না করলে একটা সময় মেসেজ আসে।
একটা জিনিস নীপা মানা করেছে। তার কথার বাহিরে গিয়ে করার সাহস হয় না রাফিদের। মাঝে মাঝে ভাবে তবে কি তার নিজের বলতে কিছু নেই। সবকিছুতে নীপার কথামত চলতে হবে। নাহ এবার মানার দরকার নেই। সব কথা মানতে হবে এমন কোন কথাও নেই। যা করার করুক গিয়ে। কাল সে অবশ্যই যাবে।
ব্যাগ গুছিয়ে নিচ্ছিলো এমন সময় মেসেজ, “তোমার বন্ধুরা ওসব করবে আর তোমার দেখতে খুব ভাল লাগবে, তাই না? ভাল লাগলে যাও।”

মেসেজটা যেন মনবোমা। রাফিদ সাথে সাথে সিদ্ধান্ত নেয় নাহ থাক যাওয়ার দরকার নেই। যার সাথে সারা জীবন থাকার প্রশ্ন তাকে কষ্ট দেয়ার মানে নেই।

ফেসবুকে - মনবোমা