বৃহস্পতিবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৫

সারপ্রাইজডে : ২০১৩

সুন্দর এবং সারপ্রাইজড দিন পেতে হলে ভাগ্যবান হতে হয়। আজ সকালে লালখান বাজারে নেমে আবিষ্কার করলাম আমি ভাগ্যবানদের একজন। পনের জনের একটা দল আমাকে উইশ করতে সে আগে থেকে অপেক্ষা করে আছে। পরিকল্পনা করেছে অতি গোপনীয়তার সাথে যাতে কোনক্রমেই আমি জানতে না পারি। এজন্য তারা একদিন আগে শিল্পকলায় যুক্ত হয়ে মিটিংও করেছে। বৃষ্টি হলে কোন স্থানে হবে তাও ভেবে রেখেছে। আমাকে সারপ্রাইজড দিতে চায়।

আর এমন সব বন্ধুরা একাজটি করতে আগ্রহী হয়েছে যাদের সাথে পরিচয় এ ফেসবুকেই। একই শহরের বাসিন্দা। সত্যি বলছি তারা যতটুকু চেয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশিই সারপ্রাইজড হয়েছি।
নিজেকে বড় বেশি বিব্রত মনে হচ্ছিলো। যে যা উপযুক্ত না তা যখন একটু বেশিই হয়ে যায় তখন বড় অসহায় মনে হয়। আজ আনন্দে উদ্বেলিত হওয়ার সাথে সাথে অসহায়ও লাগছিলো।
জিকু আশরাফ জিকু আশরাফ অসম্ভব ফুরফুরে মেজাজের একটি ছেলে। পাঞ্জাবি পরিহিত হয়ে নীলকে সাথে নিয়ে আড্ডায় যোগ দেয় জিকু। জিকুকে দেখে মনে হচ্ছিলো বার্থডে বয় সে। এর আগের বার সে একই কাহিনী করে। যদিও তখন উপস্থিতি ছিল কম।
জিকু একটু বেশিই জনপ্রিয় ও রোমান্টিক মানুষ, যেখানে যায় কারো না কারো সাথে তার আবেগীয় সম্পর্ক সৃষ্টি হয়ে যায়। আজ দেখা গেলো অথৈর সাথে রোমান্টিক কথোপকথন। জিকু আমার ওপর ফেনা স্প্রে করেছে ইচ্ছামত।
এক সময় ওই স্প্রে যায় অথৈর হাতে। অথৈ তা অন্যদের দিকে স্প্রে করছিল তখন বললাম, জিকুর দিকেও দিতে। না জিকুকে সে রক্ষা করতে চায়। আমার বিরুদ্ধে গিয়ে জিকুর পক্ষে তাহার অবস্থান। সে নাকি জিকুকে স্প্রে করে বিরক্ত করতে পারবে না । এক পর্যায়ে তো বলেই ফেলতে হলো আমার মাধ্যমে উভয় জনের পরিচয় আর এখন আমার বিপক্ষে। এমনই হয়! তাহাদের মধ্যে রোমান্টিক কথা বার্তা সকলের দৃষ্টি বিশেষ ভাবে আকৃষ্ট হয়েছে। অভি ভাই জন্মদিনের উইশ করার জন্য ফোন দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি না এসে ভুলই করলেন মনে হচ্ছে!
রুপার আবিদা সুলতানা রুপা সম্পর্কে আজ আরেকটি বিষয় জানা গেলো। এ মেয়ে যে কারাতে ব্লু বেল্ট প্রাপ্ত তা কে বলবে তার মায়াবী মুখ দেখে। গত গেট টুগেদারে একটা প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য তার পর সম্মিলিত চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল। আজ সে নিজ থেকেই ওই নামের ব্যক্তির সাথে কথা বলায় দিল। জন্মদিনের উইশ জানিয়েছেন। যদিও নাম আজও জানা যায়নি।

আরিফ রাহী ভাই শাহী বিখ্যাত পান ব্যাগ ভরে নিয়ে এসেছেন। বিরানির পর সে পান সবাইকে দিলেন। পানটা খেলে স্বাদ জিহ্বায় লেগে থাকে। পাওয়ামাত্র মুখে দিয়ে দিলাম। জিকু রোমান্টিক মানসিকতা থেকে তার নিজের ভাগের পানটা দিল অথৈকে, যেহেতু অথৈও এ পানের প্রেমে পড়ে গেছে। আমার পান খাওয়া শেষ হওয়া মাত্র অথৈর Cutee Queen কাছ থেকে পানটি ছিনিয়ে নিয়ে দিলাম দৌড়। ভাবলাম নিরাপদ দূরত্বে থাকতে পারবো। কিন্তু একি আমার পেছনে দৌড়ানি শুরু করলো অথৈ। আমি যত দৌড়াই সেও ততই দৌড়াতে থাকে। একসময় থেমে গেলাম। অথৈর নখগুলো বেশ বড়। দেখলাম চিমটি খাওয়ার মারাত্মক সম্ভাবনা। নখ ঘটিত আক্রমণের ভয়েই পান ফেরত দিয়ে দিলাম। অবলা বলে কথা!
নীল কাজী তারানা রহমান আমাকেই সাংঘাতিক মুডে প্রশ্ন করে বসলো, আপনি রিপ্লাই দেন না কেন। মোবাইলে মেসেজ দিয়েছি, রিপ্লাই দেন নাই, এটা ঠিক না। বললাম, দিবো দিবো।

নুরউদ্দীন জাহিদ ছেলেটা অনেক মাই ডিয়ার টাইপের। কিন্তু আজও সে ছবি তুললো না একটিও। কারণ কি জানতে পারলাম না। তবে তার ভূমিকা ছিল ফটোগ্রাফার হিসেবে। শেষে অফিসে আসার সময়ও সঙ্গী হয় জাহিদ।

লাঞ্চ পরবর্তী আড্ডায় সাদী Silentt Tearss কয়েকটি গান গেয়ে আড্ডার সময়টুকুকে আরো মধুর করে তোলে। এ ছেলেটাও অনেক প্রাণবন্ত ও মজার। কাঁচে নিজ হাতে নকশা করেছে আমার জন্য। আর মাঝখানে মাঝখানে তার মন্তব্যগুলোও বেশ মজার। অথৈ রবীন্দ্র সংগীত একটা গেয়ে শোনায়।

ফরহাদ আহমদ নিলয় সব আড্ডাতেই থাকবে। উদ্যোগের ক্ষেত্রে দারুণ এক প্রতিভা। যদিও দূর্ভাগ্যজনক ভাবে তার ওপর দিয়েই ঝড় যায় বেশি। আজও ঝড় বওয়ানোর চেষ্টা হয়েছে। তবে ব্যাপারটা থামিয়ে দিয়েছি। তবে তার আরো কি ব্যাপার যেন উদঘাটন হয়েছে বলে জানালো জিকু। কিন্তু ব্যাপারটা শোনা হয়নি।

Oronne Rodon এর আগে বাসায় হাত পুড়িয়ে ফেলছে রান্না করতে গিয়ে। তাকে রান্না বিষয়ে বিভিন্ন সতর্কতার কথা বলা হলো। লেকচার দিতে কেউ শুরু করলে অন্যদের মধ্যেও তা সংক্রমিত হয়। তেমনটাই দেখা গেলো। আজ আড্ডায় বেশ সরবই ছিল।
আড্ডাতে থাকে, কিন্তু ছবি তোলার সময় উধাও হয়ে যায় Whimsical Toma। কথা কম বলে কিন্তু যখন একটা বলে তখন বেশ আলোচনার দাবি রাখে। আজ এমন একটা কথা বলেছে যে জিকুর ওপর দিয়েই তা গেছে।

@মোফাজ্জল হোসেন মাশফিক কে পোজম্যান দেয়া যায় অনায়াসেই। সে এমন এমন পোজে ছবি তোলা শুরু করলো যে সত্যিই মজার। সে নাকি সবার বড়। ছোটদের সম্মান করতে জানে। সে বড় ভাই বোনদের কাছে গিয়ে নিজে যে বড় তা বলতে লাগল। আড্ডাটাকে প্রাণবন্ত করার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা বেশিই।
তন্বী @kolpo bilashi এ মেয়েটা অতি বেশি চটপটে। ডাক্তার কাছে পেয়ে আশাবাদী হয়ে গেলাম তার কাছে, ফ্রি চিকিৎসা বলে কথা। বললাম, দশবার ফোন এলেও ঘুম ভাঙ্গে না। টেরই পাই না। বেশ বিপদে আছি। কি করা যায়?
কি পরামর্শ দিবে উল্টা ঝাড়ি দিলো, রাত তিনটা চারটা বাজে করে ঘুমালে টের পাবেন কোথায়।


তন্বীর স্যান্ডেলে ১৬৫০ টাকা সংযুক্ত ট্যাগ রয়ে গেছে। নিলয় তাহা দেখে অন্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলল, দেখছেন স্যান্ডেলের দাম যাতে অন্যরা দেখে সেজন্য দামের ট্যাগও খুলে নাই।
এসময় একজন খোঁচা মেরে বলে উঠলো, অন্য স্যান্ডেল থেকে খুলে লাগিয়ে দিয়েছে সম্ভব। অনুমান করেন তো এ খোঁচা কে দিয়েছে?
এর আগে সিআরবিতে আড্ডায় আবীরের @একাকী রাজপুত্র আবীর জন্মদিন ছিল। সেদিন তেমন কিছু করা হয়নি। অথচ আজ যে মহাযজ্ঞ করা হয়েছে তাতে সেও আছে। এজন্য একটু খারাপ লাগছিল। তবে দারুণ আড্ডাবাজ এই ছেলে। আজকের মজা করার প্ল্যানটাতে তার অনেক ভুমিক।
আমাকে বার্থডে কাগজের টুপি পড়ানোর ব্যাপক চেষ্টা চালানো হয়। ওরা পড়ায় আমি খুলি। আবার পড়ায় আমি খুলি। এক পর্যায়ে বার্থডে টুপি গুলো সব পড়িয়ে দেয়া হলো সেখানে থাকা পথশিশুদের মাথায়।
তরুর @কল্প তরু কথাতো আগের স্ট্যাটাসে বললামই,। অসাধারণ একটা পরিবার যেন। যাদের পরিচয় ফেসবুক থেকে।

ওয়েল ফুড চট্টগ্রামের থেকে কেক এনেছে ওরা। সুদৃশ্য কেকটার ওপর দুই সাদা গোলাপ। গোলাপের দিকে দেখি অথৈর নজর। সে সুন্দর করে গোলাপ উঠিয়ে নিলো। কেক হয়ে গেলো গোলাপ শূন্য।
কেক নিজেদের পাশাপাশি পথশিশুদেরও খাওয়ানো হলো। তারা তো বেজায় খুশী। আমার মুখে কেকের ক্রিম লাগিয়ে বিশাল কাজ করে ফেলার ভাব নিলেন জিকু, তমা। তবে জিকুর মুখও রক্ষা পায় না। আরো বেশ কয়েকজনের মুখ কেকে মাখামাখি হয়েছে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে কেকে লেখা ছিল হাসান মুন্নার ৬২ তম জন্মদিন। ভালই হলো। ততদিন না বাঁচলেও অগ্রিম পালন করা হয়ে গেলো বুড়ো বয়সের জন্মদিন।
লাঞ্চের পর গিফটগুলো একে একে খুলতে বলা হলো আমাকে। এত সুন্দর করে প্যাকেটগুলো বাঁধা যে সেগুলো ছিড়তে মায়াই হচ্ছিলো। তারপরও কয়েকবারের তাড়ায় ছিড়তেই হলো। এক এক বাকসো খুলি আর চমকে উঠি।
স্প্রিং যুক্ত টেবিল ঘুড়ি। আমার ঘুম গভীর সে কারণেই নাকি এ আকর্ষণীয় ঘড়িটা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু ঘড়ির এলার্মের সাউন্ড ঘুম ভাঙ্গাতে পারবে বলে মনে হয় না।
হঠাৎ দেখা গেলো মেনটোসের বড় প্যাকেটটা খুলে সেখান থেকে চকোলেট নেওয়ার সময় সবার মাথা গুণছে জিকু। চকোলেট নেয়া শেষ, মাথা গোণাও শেষ। কিন্তু এ কি সব চকোলেট দেখি নিজের পাঞ্জাবির পকেটে ঢুকিয়ে নিয়েছে! পরে বলল, আপনাদের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘোরাতেই মাথা গোণা। যদিও পরে পকেট থেকেই সবার উদ্দেশ্যে চকলেট দান করেছে।

গিফটে পাওয়া কাঁচের মগে দেখি আমারই বেশ কয়েক পোজের ছবি। মগের দেয়ালের চারধারে আমি হাসছি! ফেসবুকে দেয়া ছবিগুলো ডাউনলোড করে মগে প্রিন্ট করা হয়েছে। মগের ভেতরে হলমার্কের চাবির তোড়া। রিংয়ের সাথে চাকা যুক্ত। বলা হলো এখন চাবির রিং, পরে চাবি আর গাড়ি দেয়া হবে।
দুইটা প্যাকেট এখনও খোলা হয়নি। যতটুকু ধারণা করছি সেখানে প্রসাধনী সামগ্রী আছে।
বাটালী হিল আমাদের ভেন্যু ছিল। এ পাহাড়ের চূড়ার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সব সময় বাতাস থাকে। ঠান্ডা পরশ বুলিয়ে দেয়, পাহাড়ের ওপর থেকে দূরের বাণিজ্যিক এলাকা আগ্রাবাদ দেখা যায়। জন্মদিনে অপ্রত্যাশিত ভাবে যখন প্রিয় মানুষগুলোর সাথে সে পাহাড়ের ওপর জন্মদিনের কেক কাটা হয়, খুনসুটি করা হয়, আড্ডা হয় এক সাথে দুপুরে খাওয়া হয় খোলা আকাশের নিচে সে আনন্দ আসলে ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। যতটুকু প্রকাশ করা যায় তার চেয়ে অনেক বেশি সুন্দর এবং নির্মল।
পাহাড় থেকে নেমে আইসক্রীম খাওয়া হলো। এরপর বিদায়। একটা রঙ্গিন দিন, কিছু চমৎকার স্মৃতি।

ফেসবুকে সারপ্রাইজডে১৩