শনিবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৫

খবর (অনুগল্প)

নিজেকে দুই দিন ধরে বেশ সুখী মনে হচ্ছে ছিদ্দিক সাহেবের। তবে কি যেন করা হচ্ছে না, করা হচ্ছে না এ ধরণের একটা অস্বস্তি কাজ করছে। গত দুই দিন আগে ভোরে পত্রিকার হকার যখন পত্রিকা দিয়ে চলে যাচ্ছিলো, তখন ডাক দিলেন হকারকে।
: কাল থেকে এ বাসায় আর পত্রিকা দেবে না।
হকার একটু অবাক হয়।
: স্যার, সমস্যা নেই। অন্য কোন হকারকে বলার দরকার নেই। আমি কাল থেকে আরো ভোরে পত্রিকা দিয়ে যাবো।

: ভোরে পত্রিকা দেয়ার জন্য না। হানাহানি, দেশের অশান্তি, পত্রিকাগুলোর নির্লজ্জ আচরণ আর ভাল লাগে না। আর তোমার সমস্যা নেই। পত্রিকা না দিলেও বিল করে দিবে। মাসের শেষে দিয়ে দিবো। যতদিন দেশের অশান্তি থাকবে, নোংরা রাজনীতি চলবে ততদিন আর পত্রিকা পড়বো না। টাকা খরচ করে পত্রিকা নিয়ে এমন অশান্তি দেখার কোন মানে হয় না। যখন দেশ শান্ত হবে, নোংরা রাজনীতি থাকবে না তখন আবার পত্রিকা নেবো। ততদিন বন্ধ থাকবে।
: স্যার একটা কথা বলি? রাগ করবেন না তো?
: হা বলো।
: আপনার পত্রিকা কখনই পড়া হবে না। এদেশে রাজনীতিবিদরা ভাল হবে এটা মনে হয় না।

আর কিছু না বলে বিদায় নেয় হকার। কিছুক্ষণ পরেই ছিদ্দিক সাহেব ফোন দেন ডিশ ক্যাবল অপারেটরকে। তাদেরকে বলেন, তার ঘরের ডিশ লাইনটা কেটে দিতে।
অনেক চ্যানেল হয়েছে। এত চ্যানেল যে, নাম মনে রাখাই কঠিন ব্যাপার। তার ওপর বেশিরভাগ চ্যানেলের মালিকই রাজনৈতিক দলের নেতারা। এক এক চ্যানেলে এক এক রকম খবর। যার যেমন ইচ্ছা বলে যাচ্ছে।

তার স্ত্রী ধর্ম নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকতে পছন্দ করে। টিভির দিকে তেমন নজর নেই। একমাত্র মেয়ে সুষ্মিতাও তেমন টিভি দেখতে আসে না। ল্যাপটপ নিয়ে কিংবা হাতে থাকা মোবাইলটা নিয়েই তার ব্যস্ততা। তাই বাসায় ডিশ লাইন অফ করে দেয়ায় তেমন বেশি সমস্যা হয় নাই। তবে কাজের মেয়েটার মন খারাপ। মাঝে মাঝে সিরিয়াল দেখতো। ডিশ না থাকায় তা দেখা বন্ধ হয়ে গেছে।

পত্রিকা নিচ্ছে না এ বিষয়টা নিয়ে তৃতীয় দিন কথা তুলল সুষ্মিতা। সকালের নাস্তার টেবিলে মা, মেয়ে বাবা নাস্তা করছিল।
: আচ্ছা বাবা, পত্রিকা দিচ্ছে না যে?
: মানা করে দিয়েছি পত্রিকা দিতে। আর দেবে না।
: কেন কি হয়েছে?
: দেশের অশান্তি দেখতে আর ভাল লাগে না।
: বাবা, আমিও একটা সিদ্ধান্ত নেবো নেবো ভাবছিলাম।
: তুই আবার কি সিদ্ধান্ত নিবি?
: ফেসবুকে যাবো না। দলাদলি, একে এ ট্যাগ ওকে ওই ট্যাগ দিয়ে দেয়া এমনই চলছে। তুমি যদি ফেসবুকের এখন পরিস্থিতি দেখতে। মানুষে মানুষে সম্পর্ক যে কি পরিমাণ তিক্ততা হতে পারে। অথচ সবাই এদেশেরই নাগরিক।
: তুই তো সারাদিন ফেসবুকেই থাকিস। ফেসবুক ছাড়লে কেম্নে থাকবি?
: তুমি তো পত্রিকা পড়তে, খবর দেখতে। সেগুলো ছাড়া যদি তুমি এ রিটায়ার্ড লাইফ কাটাতে পারো আমি পারবো না কেন! অবশ্যই পারবো। বাবা, চলো আমরা কোথাও ঘুরে আসি।
: ঠিক বলেছিস। কোথাও ঘুরে আসা যায়। কিন্তু দেশের এ পরিস্থিতিতে ঘুরতে যাওয়াটা কি ঠিক হবে? যখন তখন হরতাল ডেকে বসে থাকে।
এতক্ষণ চুপচাপ কথা শুনছিলেন সুষ্মিতার মা আমেনা।

: তোমাদের কত্ত সাহস দেশের এমন সময়ে ঘুরতে যাওয়ার চিন্তা! এত বীর পুরুষ হতে হবে না। এম্নেতে প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হলেই কবে ফিরে আসবে সে অপেক্ষায় থাকি। আল্লাহ না করুক নিজেরাই সংবাদের শিরোনাম হওয়ার কোন ইচ্ছা নেই।
পারিবারিক গল্পের মাঝেই বাহিরে ককটেলের শব্দ শোনা যায়। একটু পরই পুলিশের গাড়ির সাইরেন। গুলির শব্দ। সুষ্মিতা জানালার দিকে ছুটে যায় বাহিরর অবস্থা দেখতে। থেমে যায় আড্ডা।

ছিদ্দিক সাহেব ভাবে পত্রিকা, টিভির প্রচারিত অশান্তি থেকে মুক্তি পেলেন কিন্তু নিজের এলাকায় ঘটনা থেকে মুক্তি পাবেন কিভাবে! কোন হকার কিংবা ক্যাবল অপারেটরকে ধরবেন?

ফেসবুকে : খবর