অদ্ভূত শব্দটা উচ্চারণ করতে নীপা খুব মজা পায়। বেশিরভাগ বাক্যের মন্ত্রব্য
করার সময়ই ও বলে ফেলে অদ্ভূত। যদিও মাঝে মাঝে অভ্যাসবশত বলতে গিয়ে লজ্জা
পায়। সেদিন ওর বান্ধবী কাইসা ওদের বাসায় আসছে। বলে, পানি দেয়তো। পিপাসা
লাগছে।
তা শুনে নীপা বলে ফেলে, অদ্ভূত।............
তা শুনে নীপা বলে ফেলে, অদ্ভূত।............
বলেই নিজে লজ্জা পায়। কেউ পানি খুঁজলে অদ্ভূত হতে যাবে কেন। মুখ টা যে দিন দিন কি হয়ে যাচ্ছে বুঝা যাচ্ছে না। নীপা নিজের উপর বিরক্ত হয়।
কাইসা ঐ সময় এ ব্যাপারটা ঠিক খেয়াল করে নি। কিংবা খেয়াল করলেও এ বিষয়টা এড়িয়ে গেছে। না হলে কিছু বলত। কেননা কাইসা ছেড়ে দেওয়ার মেয়ে না। কলেজের ছেলেরা কাইসা থেকে ন্যূনতম দশ হাত দূরে থাকে।
কিছু সৌন্দর্য চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। দেখলে মনে হয় মানুষ এত সুন্দরও হতে পারে? কাইসা ঠিক ঐই ধরণের। তবে কাইসার আক্রমণের প্রথম শিকার কোন ছাত্র না। এক শিক্ষক।
মনজুর স্যার বাংলা নেয়। সব সময় চেষ্টা করেন শিক্ষার্থীদের অভিভূত করার। মজার কথা বলার চেষ্টা করেন। যদিও কেউ মজা পায় কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। কারণ বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই বাংলা ক্লাসটা ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করে।
বাংলা ক্লাস নিতে স্যার আসেন। হাতে হাজিরা খাতা।
এসেই উর্মিকে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বলেন, নাটকের সংলাপ পড়া শুরু করতো।
উর্মি কিছুক্ষণ পড়ার পর নীপাকে পড়তে বলেন। তারপর লাইজুকে।
আরো দুইজন মেয়ে পড়ে। এর পর কাইসাকে পড়তে বলেন।
কাইসা উঠে দাঁড়িয়েই বলে, স্যার আমি পড়ব না।
: কেন?
: স্যার এটা কোন গার্লস কলেজ না।
মনজুর স্যার কাইসার দিকে তাকিয়ে বলেন, এটা গার্লস কলেজ হতে যাবে কেন? ছেলে-মেয়েরা যে কলেজে পড়ে সেটা যে গার্লস কলেজ না এটা তো আমি জানি।
: কিন্তু আপনার আচরণে মনে হয় এটা গার্লস কলেজ।
মনজুর স্যার রেগে যান। কি বলে এ মেয়েটি। নতুন কলেজে আসছে। একমাসও ক্লাস হয় নি। এর মধ্যে এত সাহস পায় কোথা থেকে।
মনজুর স্যার নিজেকে সংযত করে বলেন, এই কলেজের আমিই এক মাত্র শিক্ষক যে ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে বেশি বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করে।
: স্যার, সেটা কিছুটা ঠিক আছে।
: মানে? কি বলতে চাও তুমি?
কাইসা হাত থেকে কলমটা নিচে রাখে। বলে, স্যার আপনি যে ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে বেশি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে আগ্রহী এটা কিছুটা ঠিক। তবে পুরাটা না। কেননা ছাত্ররা আপনাকে তেমন বন্ধু হিসাবে পায় না। ছাত্রীদেরকেই আপনি বন্ধু বানান। এর মধ্যে গত তিন দিন ক্লাস হলো। কোন ছাত্রকেই নাটক পড়তে দিলেন না। অথচ কোন কোন ছাত্রী দুইবারও পড়ল।
মনজুর স্যার আর নিজেকে সামলাতে পারলেন না।
: বাস্টার্ড কোথাকার! তোমার বাবা-মা গুরুজনের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় তা শিক্ষা দেন নাই। দাঁড়াও তোমার বিরুদ্ধে আমি আজই প্রিন্সিপালের কাছে লিখিত অভিযোগ জানাব। কলেজে আসছো এক মাস ও হয় নাই। এরিমধ্যে এ অবস্থা।
কাইসার ঠিক পাশের সিটে নীপা। ও প্রথম থেকেই বেশ কয়েকবার কাইসাকে ইঙ্গিত দিল বসে পড়তে। কিন্তু কাইসা থামার পাত্র না। বসে না। আবারও কাইসাকে হালাক চিমটি দিল বসার জন্য। না কাইসা এবারো বসল না। পুরা ক্লাস রুম থমথমে।
: স্যার আমার মা-বাবা হয়ত ঠিকমতই শিক্ষা দিয়েছেন। হয়ত আমি ঠিকমত ধরতে পারিনি। কারো দোষের জন্য অবাধে তার মা-বাবাকে দোষী করা বোকাদেরই কাজ।
মনজুর স্যার হাজিরা খাতাকে টেবিলে বেশ কয়েকবার বাড়ি মারতে মারতে বলেন, এই মেয়ে থামো। তুমি অনেক কথা বলছ। তোমাকে আমি কলেজ থেকে বহিষ্কার করে ছাড়ব। শিক্ষকদের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় তা শিখে আসো নি। তোমাকে আমি দেখে নেব।
সবাই মনে করল এবার কাইসা বসে পড়বে। স্যার গর্জন করে কথাগুলো বলছেন। এই ক্লাসটা তিন তলায়। স্যারের কথাগুলো এত জোরে ছিল যে নিচতলায়ও হয়ত শুনা গেছে।
কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে কাইসা বলল- স্যার বেশি বেয়াদবি হলে মাফ করবেন। তবে আপনি গার্লস কলেজে গেলেই ভাল শিক্ষক হতে পারবেন। সেখানে চলে যাওয়াই উত্তম।
কথাগুলো শুনে মনজুর স্যার উঠে দাঁড়ালেন- এই মেয়েতো আস্ত বেয়াদব। আমি এখনিই প্রিন্সিপালের সাথে দেখা করতে যাচ্ছি।
হন হন করে ক্লাস রুম থেকে বের হয়ে গেলেন স্যার। ...
........................
( অসমাপ্ত )