একশ, নিরানব্বই, আটানব্বই। এভাবে গুণে যাচ্ছে শামিম। কোন কিছু সামনে নাই।
এটা কাল্পনিক গণনা। প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে আসলেই এভাবে গুণতে হয়। বাজে
অভ্যাস হয়ে গেছে। প্রতিদিন চিন্তা করে আজ থেকে আর এটা করবে না। তারপরও হয়
না। কিভাবে যেন ঠিকই শুরু করে দেয়।.......
আজ তাড়াতাড়ি ঘুমানো দরকার। কাল একটা ইন্টারভিউ আছে। রাতে দেরি করে ঘুমালে চোখের নিচে তার ছাপ থাকে। ছাপটা মোটেই সুখকর নয়। ইন্টারভিউ বোর্ডের কর্মকর্তারা অন্য কিছু ভাবতে পারেন যা ভয়ংকর। জোর করে চোখ বন্ধ করে রেখেছে শামীম। মোবাইলও অফ করে রেখেছে । যাতে কোন কল না আসে।
এর আগেও বেশ কিছু ইন্টারভিউ দেওয়ার অভিজ্ঞতা আছে। তবে কোনটাতে লাভ হয় নি শেষ পর্যন্ত। দুইটাতে একেবারে হয়েই যাচ্ছিলো শেষে বাদ পড়ল। চাকরির দরখাস্তে অভিজ্ঞতার তালিকায় কিছু দিতে হয়। শামীমের মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে, অভিজ্ঞতায় তালিকায় কয়বার ইন্টারভিউ দিয়েছে সেটা দিয়ে দেবে। সেটাও তো বড় অভিজ্ঞতা। প্রতিটি ইন্টারভিউ বোর্ডে বড় বড় কর্মকর্তা থাকেন। তাদের সামনে বসা বিশাল একটা ব্যাপার। আর তা যদি বিশাল হয় তবে যত বেশি ইন্টারভিউ বোর্ডের সামনে বসবে তত বিশাল ব্যাপার হবে। এটা অভিজ্ঞতায় দেয়া যায় না কেন?
ঘড়িতে টিট করে উঠল। হাত ঘড়িটা এখন হাতে থাকে না। বালিশের নিচে হাত ঘড়িটা থাকে। এটাকে এখন বালিশ ঘড়ি বলা যায়। প্রতি ঘন্টায় টিট টিট করে উঠে ঘড়িটা। ঘড়িটা বের করে শামীম। অন্ধকার। ঘড়ির কিছু দেখা যাচ্ছে না। ঘন্টা হিসাবে অনুমান করা যায়। কিন্তু অনুমান করা যাচ্ছে না। শোওয়ার সময় সময় ঘড়ি দেখা হয় নি। রাত রহস্য পূর্ণ। ঠিক কয়টা তা বুঝা যায় না। জানালার উপর দিয়ে একটা টিকটিকি যায়। জানালার আবছা আলোতে টিকটিকিটাকে আরো বেশি সাদা মনে হয়। কি আরাম টিকটিকির কখনো ইন্টারভিউ দিতে হয় না। ইন্টারভিউয়ের কথা চিন্তা করে রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাওয়ার চিন্তা করতে হয় না। মনের সুখে এদিক ঐ দিক যাচ্ছে। অনেক আরামে আছে।
টিকটিকির সাথে নিজের অবস্থার পার্থক্য করতে ভাল লাগে না শামীমের। চিন্তা ঘুরানোর চেষ্টা করে। আচ্ছা কাল কি কি জিজ্ঞাসা করতে পারে? সাধারণ জ্ঞান ভালই আছে। ইংরেজীও খারাপ না। তবে সমস্যা হচ্ছে এখন ইন্টারভিউ বোর্ডে জ্ঞানভিত্তিক প্রশ্ন কমই করা হয়। বেশির ভাগ সময় মজার প্রশ্ন করে। ইন্টারভিউ বোর্ডের সদস্যরা ইন্টারভিউকে বিনোদন হিসাবে দেখে। মজার মজার প্রশ্ন করে চলে যায়। আগেই থেকে কাকে নেওয়া হবে তা নির্ধারণ থাকে। ইন্টারভিউ হয় লোক দেখানো।
আর লোক দেখানো ইন্টারভিউগুলোতে প্রার্থীরা ভীড় জমায়। অফিস গেট থেকে মেইন রাস্তা পর্যন্ত লাইন হয়ে যায়। শুধু প্রার্থী আর প্রার্থী। ইন্টারভিউ দিতে খারাপ লাগে না শামীমের। কেননা সব ইন্টারভিউ এক রকম না। একেক জায়গায় এক এক অভিজ্ঞতা হয়। এটা নিশ্চিত যদি চাকরি হয়ে যায় তবে ইন্টারভিউ অনেক মিস করবে। তখন ইচ্ছা হবে আবার ইন্টারভিউ দিয়ে চাকরিতে ঢুকা।
চিন্তায় চিন্তায় রাত পার হয়। ঘড়ির লাইট বাটন টিপে। সবুজ আলোতে দেখা যায় ৩ টা ১৭ । সকাল হতে আর দেরি নাই।
হঠাৎ কি হয়। শামীম উঠে যায়। বিদ্যুত নেই। আধা চার্জ থাকা চার্জ লাইটটা জ্বালায়। আবছা আলো হয়। ও টেবিলে বসে পড়ে। লেখা শুরু করে। এক ইন্টারভিউ পাগলের চরিত্র। যার ইচ্ছা শুধু ইন্টারভিউ দেওয়া। তা লেখা শুরু করে। লেখা এগুতে থাকে। শামীম যেন এই জগতে নেই। অন্য জগতে। জীবনে কখনো গল্প লেখে নি। কিন্তু এখন দেখছে গল্পটা উপন্যাস হয়ে যাচ্ছে।
ঘড়ির টিট আরো ৬ বার শোনা গেছে। কিন্তু সেদিকে খেয়াল নাই শামীমের। তার হাতের কলম ছুটছে। একটু আগে কলম বদলানো হয়েছে। কালি শেষ হয়ে যাওয়ায়। ইন্টারভিউ দেওয়ার কথা মনে নেই আর শামীমের। সে লিখেই চলছে। এত গুলো ইন্টারভিউ দিতে যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তা লিখে চলে।
পুরা খাতাটা শেষ হয়ে যায়। তখন হুশ হয় শামীমের। ঘড়ি দেখে। বাজছে ১১ টা। তার মানে ইন্টারভিউ সময় পার হয়ে গেছে। আশ্চর্য ব্যাপারতো একটুও টের পাওয়া যায়নি। এতগুলো সময় কিভাবে চলে গেলে। মন খারাপ হয়। ইচ্ছা হয় খাতাটা ছিড়ে ডাস্টবিনে ফেলতে।
এই চাকরিটা অনেক দরকার ছিল। হওয়ার সম্ভাবনাও ছিল। হয়েও যেতে পারতো।
খাতার দিকে তাকায়। ছিড়ঁতে মায়া লাগছে। এতগুলো লেখা ছেড়া উচিত হবে না। এত গুলো লেখা নিজেই লিখছে। অসম্ভব। মনে হচ্ছে অন্য কেউ লিখে দিয়ে গেছে।
কিন্তু মাথার মধ্যে আসছে খাতা ছেড়ার কথা। তাই ছেড়া প্রয়োজন। কিন্তু কি করবে। শামীম পুরান একটা খাতা বের করে। সেটাকে এই খাতা মনে করে টুকরা টুকরা করে ফেলে।
শার্ট প্যান্ট পড়ে। মাথা উসকো খুশকো। পায়ে স্পঞ্জের স্যান্ডেল পড়েই হাজির হয়ে যায় ইন্টারভিউ বোর্ডের ঐখানে। জানা যায় ওর সিরিয়াল শেষ হয়ে গেছে অনেক আগে।
হাতে সে খাতাটা। যে খাতায় উপন্যাসটি লিখেছে।
দারোয়ান যেতে দেবেন না।
অনুনয় করে শামীম।
ভাই প্লিজ একটা সুযোগ দেন। আমি অনেক দূর থেকে এসেছি। একবার কথা বলে বের হয়ে যাবো।
-না এটা অসম্ভব। আরো দুজনকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
-ভাই আমাকে যেতেই হবে।
এবার দারোয়ান একটু বিনয়ী হয়। বিনয়ী গলায় বলে, আপনি কি আমার চাকরি খেতে চান? প্লিজ বিরক্ত কইরেন না। আপনি এখানে না পেলে অন্য জায়গায় চাকরি পাবেন। সার্টিফিকেট আছে আপনার। কিন্তু আমি এই চাকরি হারলে কোথায় চাকরি পাবো?
শামীম এবার চুপ হয়ে যায়। আর কিছু বলে না। লম্বা বেঞ্চে বসে পড়ে।
খিদে লেগেছে অনেক। সেই যে রাতের দিকে ভাত খেয়েছিল আর পেটে কিছু পড়ে নাই। চাকরি না হলে আরো অনেক সময় এভাবে না খেয়ে থাকতে হবে। পকেটে ২৮ টাকা আছে। ইচ্ছা হলে হালকা কিছু খেয়ে আসা যায় রাস্তায় থাকা ভ্রাম্যমান দোকান গুলো থেকে। সিংগাড়া অথবা বনরুটি এজাতীয়। কিন্তু যেতে ইচ্ছা করছে না একটা কিছু হবে মনে হচ্ছে। তাই বসেই থাকে।
দুপুরের দিকে লাঞ্চ ব্রেক। ইন্টারভিউ বোর্ডের কর্মকর্তারা বের হয়ে আসেন রুম থেকে। ওনাদের দেখে ছুটে যায় শামীম।
একজন কর্মকর্তাকে রাতের কথা খুলে বলে। কর্মকর্তাটি গল্পটি দেখতে চান।
এর পর শুধু পরিবর্তনের গল্প।
---------------------------------------------------------------
০২
শামীম আহমদ এখন বাংলাদেশের অনেক বড় লেখক। উদ্দেশ্য ছাড়া যে উপন্যাসটি লেখা হয়েছিল সে উপন্যাসটি ছাপানোর ক্ষেত্রে সব রকম সাহায্য করেন ঐ কর্মকর্তা। এখন রাস্তায় বের হলে অটোগ্রাফ দিতে দিতে হাত ব্যথা হয়ে যায় শামীম আহমদের।
নিয়মিত বই বের হয়। বিভিন্ন সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে থাকতে হয়। প্রকাশকরা সব সময় চাপ দিতে থাকেন। নতুন লেখার জন্য। বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদকরা ফোন করেন লেখা পাঠানোর জন্য।
এত ব্যস্ততার মাঝেও শামীম আহমদ ঠিকই মিস করেন ইন্টারভিউ। খুব ইচ্ছা করে আবারো ইন্টারভিউ দিতে। কিন্তু তা যে দিতে পারেন না। তারপরও ইচ্ছা করে। ইশ যদি ইন্টারভিউ দেওয়া যায়।
আজ তাড়াতাড়ি ঘুমানো দরকার। কাল একটা ইন্টারভিউ আছে। রাতে দেরি করে ঘুমালে চোখের নিচে তার ছাপ থাকে। ছাপটা মোটেই সুখকর নয়। ইন্টারভিউ বোর্ডের কর্মকর্তারা অন্য কিছু ভাবতে পারেন যা ভয়ংকর। জোর করে চোখ বন্ধ করে রেখেছে শামীম। মোবাইলও অফ করে রেখেছে । যাতে কোন কল না আসে।
এর আগেও বেশ কিছু ইন্টারভিউ দেওয়ার অভিজ্ঞতা আছে। তবে কোনটাতে লাভ হয় নি শেষ পর্যন্ত। দুইটাতে একেবারে হয়েই যাচ্ছিলো শেষে বাদ পড়ল। চাকরির দরখাস্তে অভিজ্ঞতার তালিকায় কিছু দিতে হয়। শামীমের মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে, অভিজ্ঞতায় তালিকায় কয়বার ইন্টারভিউ দিয়েছে সেটা দিয়ে দেবে। সেটাও তো বড় অভিজ্ঞতা। প্রতিটি ইন্টারভিউ বোর্ডে বড় বড় কর্মকর্তা থাকেন। তাদের সামনে বসা বিশাল একটা ব্যাপার। আর তা যদি বিশাল হয় তবে যত বেশি ইন্টারভিউ বোর্ডের সামনে বসবে তত বিশাল ব্যাপার হবে। এটা অভিজ্ঞতায় দেয়া যায় না কেন?
ঘড়িতে টিট করে উঠল। হাত ঘড়িটা এখন হাতে থাকে না। বালিশের নিচে হাত ঘড়িটা থাকে। এটাকে এখন বালিশ ঘড়ি বলা যায়। প্রতি ঘন্টায় টিট টিট করে উঠে ঘড়িটা। ঘড়িটা বের করে শামীম। অন্ধকার। ঘড়ির কিছু দেখা যাচ্ছে না। ঘন্টা হিসাবে অনুমান করা যায়। কিন্তু অনুমান করা যাচ্ছে না। শোওয়ার সময় সময় ঘড়ি দেখা হয় নি। রাত রহস্য পূর্ণ। ঠিক কয়টা তা বুঝা যায় না। জানালার উপর দিয়ে একটা টিকটিকি যায়। জানালার আবছা আলোতে টিকটিকিটাকে আরো বেশি সাদা মনে হয়। কি আরাম টিকটিকির কখনো ইন্টারভিউ দিতে হয় না। ইন্টারভিউয়ের কথা চিন্তা করে রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাওয়ার চিন্তা করতে হয় না। মনের সুখে এদিক ঐ দিক যাচ্ছে। অনেক আরামে আছে।
টিকটিকির সাথে নিজের অবস্থার পার্থক্য করতে ভাল লাগে না শামীমের। চিন্তা ঘুরানোর চেষ্টা করে। আচ্ছা কাল কি কি জিজ্ঞাসা করতে পারে? সাধারণ জ্ঞান ভালই আছে। ইংরেজীও খারাপ না। তবে সমস্যা হচ্ছে এখন ইন্টারভিউ বোর্ডে জ্ঞানভিত্তিক প্রশ্ন কমই করা হয়। বেশির ভাগ সময় মজার প্রশ্ন করে। ইন্টারভিউ বোর্ডের সদস্যরা ইন্টারভিউকে বিনোদন হিসাবে দেখে। মজার মজার প্রশ্ন করে চলে যায়। আগেই থেকে কাকে নেওয়া হবে তা নির্ধারণ থাকে। ইন্টারভিউ হয় লোক দেখানো।
আর লোক দেখানো ইন্টারভিউগুলোতে প্রার্থীরা ভীড় জমায়। অফিস গেট থেকে মেইন রাস্তা পর্যন্ত লাইন হয়ে যায়। শুধু প্রার্থী আর প্রার্থী। ইন্টারভিউ দিতে খারাপ লাগে না শামীমের। কেননা সব ইন্টারভিউ এক রকম না। একেক জায়গায় এক এক অভিজ্ঞতা হয়। এটা নিশ্চিত যদি চাকরি হয়ে যায় তবে ইন্টারভিউ অনেক মিস করবে। তখন ইচ্ছা হবে আবার ইন্টারভিউ দিয়ে চাকরিতে ঢুকা।
চিন্তায় চিন্তায় রাত পার হয়। ঘড়ির লাইট বাটন টিপে। সবুজ আলোতে দেখা যায় ৩ টা ১৭ । সকাল হতে আর দেরি নাই।
হঠাৎ কি হয়। শামীম উঠে যায়। বিদ্যুত নেই। আধা চার্জ থাকা চার্জ লাইটটা জ্বালায়। আবছা আলো হয়। ও টেবিলে বসে পড়ে। লেখা শুরু করে। এক ইন্টারভিউ পাগলের চরিত্র। যার ইচ্ছা শুধু ইন্টারভিউ দেওয়া। তা লেখা শুরু করে। লেখা এগুতে থাকে। শামীম যেন এই জগতে নেই। অন্য জগতে। জীবনে কখনো গল্প লেখে নি। কিন্তু এখন দেখছে গল্পটা উপন্যাস হয়ে যাচ্ছে।
ঘড়ির টিট আরো ৬ বার শোনা গেছে। কিন্তু সেদিকে খেয়াল নাই শামীমের। তার হাতের কলম ছুটছে। একটু আগে কলম বদলানো হয়েছে। কালি শেষ হয়ে যাওয়ায়। ইন্টারভিউ দেওয়ার কথা মনে নেই আর শামীমের। সে লিখেই চলছে। এত গুলো ইন্টারভিউ দিতে যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তা লিখে চলে।
পুরা খাতাটা শেষ হয়ে যায়। তখন হুশ হয় শামীমের। ঘড়ি দেখে। বাজছে ১১ টা। তার মানে ইন্টারভিউ সময় পার হয়ে গেছে। আশ্চর্য ব্যাপারতো একটুও টের পাওয়া যায়নি। এতগুলো সময় কিভাবে চলে গেলে। মন খারাপ হয়। ইচ্ছা হয় খাতাটা ছিড়ে ডাস্টবিনে ফেলতে।
এই চাকরিটা অনেক দরকার ছিল। হওয়ার সম্ভাবনাও ছিল। হয়েও যেতে পারতো।
খাতার দিকে তাকায়। ছিড়ঁতে মায়া লাগছে। এতগুলো লেখা ছেড়া উচিত হবে না। এত গুলো লেখা নিজেই লিখছে। অসম্ভব। মনে হচ্ছে অন্য কেউ লিখে দিয়ে গেছে।
কিন্তু মাথার মধ্যে আসছে খাতা ছেড়ার কথা। তাই ছেড়া প্রয়োজন। কিন্তু কি করবে। শামীম পুরান একটা খাতা বের করে। সেটাকে এই খাতা মনে করে টুকরা টুকরা করে ফেলে।
শার্ট প্যান্ট পড়ে। মাথা উসকো খুশকো। পায়ে স্পঞ্জের স্যান্ডেল পড়েই হাজির হয়ে যায় ইন্টারভিউ বোর্ডের ঐখানে। জানা যায় ওর সিরিয়াল শেষ হয়ে গেছে অনেক আগে।
হাতে সে খাতাটা। যে খাতায় উপন্যাসটি লিখেছে।
দারোয়ান যেতে দেবেন না।
অনুনয় করে শামীম।
ভাই প্লিজ একটা সুযোগ দেন। আমি অনেক দূর থেকে এসেছি। একবার কথা বলে বের হয়ে যাবো।
-না এটা অসম্ভব। আরো দুজনকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
-ভাই আমাকে যেতেই হবে।
এবার দারোয়ান একটু বিনয়ী হয়। বিনয়ী গলায় বলে, আপনি কি আমার চাকরি খেতে চান? প্লিজ বিরক্ত কইরেন না। আপনি এখানে না পেলে অন্য জায়গায় চাকরি পাবেন। সার্টিফিকেট আছে আপনার। কিন্তু আমি এই চাকরি হারলে কোথায় চাকরি পাবো?
শামীম এবার চুপ হয়ে যায়। আর কিছু বলে না। লম্বা বেঞ্চে বসে পড়ে।
খিদে লেগেছে অনেক। সেই যে রাতের দিকে ভাত খেয়েছিল আর পেটে কিছু পড়ে নাই। চাকরি না হলে আরো অনেক সময় এভাবে না খেয়ে থাকতে হবে। পকেটে ২৮ টাকা আছে। ইচ্ছা হলে হালকা কিছু খেয়ে আসা যায় রাস্তায় থাকা ভ্রাম্যমান দোকান গুলো থেকে। সিংগাড়া অথবা বনরুটি এজাতীয়। কিন্তু যেতে ইচ্ছা করছে না একটা কিছু হবে মনে হচ্ছে। তাই বসেই থাকে।
দুপুরের দিকে লাঞ্চ ব্রেক। ইন্টারভিউ বোর্ডের কর্মকর্তারা বের হয়ে আসেন রুম থেকে। ওনাদের দেখে ছুটে যায় শামীম।
একজন কর্মকর্তাকে রাতের কথা খুলে বলে। কর্মকর্তাটি গল্পটি দেখতে চান।
এর পর শুধু পরিবর্তনের গল্প।
---------------------------------------------------------------
০২
শামীম আহমদ এখন বাংলাদেশের অনেক বড় লেখক। উদ্দেশ্য ছাড়া যে উপন্যাসটি লেখা হয়েছিল সে উপন্যাসটি ছাপানোর ক্ষেত্রে সব রকম সাহায্য করেন ঐ কর্মকর্তা। এখন রাস্তায় বের হলে অটোগ্রাফ দিতে দিতে হাত ব্যথা হয়ে যায় শামীম আহমদের।
নিয়মিত বই বের হয়। বিভিন্ন সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে থাকতে হয়। প্রকাশকরা সব সময় চাপ দিতে থাকেন। নতুন লেখার জন্য। বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদকরা ফোন করেন লেখা পাঠানোর জন্য।
এত ব্যস্ততার মাঝেও শামীম আহমদ ঠিকই মিস করেন ইন্টারভিউ। খুব ইচ্ছা করে আবারো ইন্টারভিউ দিতে। কিন্তু তা যে দিতে পারেন না। তারপরও ইচ্ছা করে। ইশ যদি ইন্টারভিউ দেওয়া যায়।