সোমবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১২

ছেলেটি আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল (গল্প)


শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্তটা নিয়েই ফেলল মুহিব। পত্রিকায় ইদানিং অনেক আত্মহত্যার খবর আসছে। যার বেশির ভাগই মেয়ে। দেখা যায় ইভটিজিংয়ের শিকার হয়ে কেউ কেউ আত্মহত্যা করছে। আবার কোন কোন মা বিভিন্ন অত্যাচারে পরে সন্তান সহ আত্মহত্যা করছে। তবে ছেলে মানুষের আত্মহত্যা ব্যাপারটা একটু অন্যরকম। কমই শোনা যায়। .....


একটু চিন্তায় পড়ে যায় মুহিব। আবার ভাবে আরে আত্মহত্যা কি মেয়েদের সম্পত্তি নাকি। যে কেউ চাইলে তা করতে পারে। এটা ভেবে একটু স্বস্তি লাগে ওর। আবার হাসিও হাসে। আত্মহত্যা করতে পারবে কিনা এটা ভাবছে। মরার যখন সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছে এত ভাবনা কেন?

তারপরও ভাবছে। সবচেয়ে আগে যেটা ভাবছে সেটা হচ্ছে কি খেলে কষ্ট ছাড়া মৃত্যু হবে। অনেকে ফাঁস দিয়ে মরে। কিন্তু এত সাহস নেই মুহিবের। অনেক আয়োজন করতে হবে তাতে। ফ্যানের সাথে ঝুলতে হবে। ঠিকমত বাঁধা না হলে নিচে পড়ে হাত পা ভাঙার সম্ভাবনা। তখন বিশ্রী অবস্থা হবে। আত্মহত্যা কারীর ব্যক্তির দাবি অনেক জোরালো হয়ে উঠে ওর মৃত্যু দেখে। কিন্তু আত্মহত্যায় যে বিফল হয় তাকে কেউ ভাল চোখে দেখে না। সুতরাং কোন রিস্ক নেওয়া যাবে না। এক চেষ্টাতেই যাতে মৃত্যু হয় এমন ব্যবস্থা নিতে হবে।

খাবার মনে করে খাবে আর মৃত্যু হবে ব্যাপারটাতে এত ঝামেলা হবে না। এজন্য বেশ কিছু জিনিষও যোগাড় করেছে মুহিব। কীটনাশক, হারপিক, ডেটল, ঘুমের ওষুধ এগুলো ওর খাটের নিচে রাখা। সবচেয়ে কার্যকর কীটনাশক। ছোট একটা শিশিতে রাখা আছে। নাকের কাছে নিয়ে দেখেছে এটা তীব্র গন্ধ। খেতে হলে নাক বন্ধ করে খেতে হবে। এটার সুবিধা হচ্ছে খুব তাড়াতাড়ি মারা যাওয়া যাবে। দরজা ভেঙে ঢুকলেও হাসপাতালে নিতে নিতে মৃত্যু নিশ্চিত। মধ্যখানে আবার পৃথিবীতে এসে অপমানিত হওয়ার ঝুঁকি নেই। তবে ভয়ও করে মুহিবের কেননা কীটনাশক খেলে বুক জ্বলবে অনেক। তখন সে জ্বলায় যদি চিল্লায় উঠে তবে অন্যরা ছুটে আসবে। জ্বলা সহ্য করবে নাকি অন্যদের ধস্তাধস্তি সহ্য করবে। কিছু চিন্তা করে কীটনাশকের ব্যাপারটা বাদ দিয়ে দেয়।

হারপিক, ডেটল এগুলো বাদ দেয়। বুক জ্বলাপোড়ার ভয়ে। তবে ঘুমের ওষুধ টা নিরাপদ। ঘুমানোর আগে একসাথে অনেক গুলো খেয়ে ফেলবে। ঘুমের মধ্যেই শান্তির মৃত্যু।

এখন দিন ঠিক করার বাকী। সামনের সপ্তাহের শনিবার জুইয়ের বিয়ে। স্বামী প্রবাসী। জুই ও সব ভুলে বিয়েতে বসছে। সেদিন করাই ঠিক হবে। একদিকে জুইয়ের বিয়ে হচ্ছে। আরেক দিকে প্রিয় জনের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে এই ভেবে একজন পৃথিবী ছেড়ে স্বেচ্ছায় চলে যাচ্ছে। ব্যাপারটা নাটক নাটক মনে হচ্ছে। হোক নাটক সমস্যা নেই। জুইকে তো দেখিয়ে দেওয়া যাবে কতটুকু ভালবেসেছিল তা। কিন্তু আফসোস হচ্ছে জুইকে আর দেখতে পারবে না ভেবে।

আত্মহত্যা চিন্তা করার পর থেকে অদ্ভূত কিছু ভর করছে মাথায়। মনে হচ্ছে পাগল হয়ে গেছে। কিন্তু আত্মহত্যা করার আগে কোন মতেই পাগল হওয়া চলবে না। পাগলরা কখনও আত্মহত্যা করতে পারে না। এই যেমন এখন বিছানার সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করছে।

আর কথা বললে কোথা থেকে যেন উত্তরও চলে আসে। আচ্ছা পাগলদেরও কি এরকম হয়?

-বিছানা, আর চারদিন পরই তোকে ছেড়ে চলে যাবো। খারাপ লাগছে। কত রাত তোর উপর থেকেছি। এরপর থেকে আর পারবো না। মাটিতে থাকতে হবে। কি যে কষ্ট হবে। কিন্তু আমি যে নিরুপায়।
- আপনি অযথা ইচ্ছা করে চলে যেতে চাচ্ছেন। পরে কিন্তু আফসোস করবেন।

আচ্ছা বিছনা আপনি করে বলছে কেন? সম্মানিত কেউ ভাবছে কি? আর এটা কি সত্যিই বিছানা উত্তর দিচ্ছে। ধূর কি যে হলো। এখন বিছানাকে কারণ ব্যাখ্যা করতে বললে আবার বিছানা উত্তর দিয়ে বসবে। তার চেয়ে চুপ থাকাই মঙ্গল। মাথা এত বেশি আউলায় লাভ নেই।

মোবাইলে রিং বাজে।
আশ্চর্য জুই ফোন করেছে। যে মেয়ে চারদিন পর অন্য একজনের সাথে সম্পর্ক করতে যাচ্ছে আগের সব কিছু ভুলে। সে আবার ফোন করে কিভাবে?

ধরবে না ধরবে না চিন্তা করেও কোন এক টানে ধরে ফেলে। এই মেয়েটা আশ্চর্য এক মেয়ে। ওর সাথে কথা বললে মন ভাল হয়ে যায় মুহুর্তেও। একটু ও মন খারাপ করে থাকা যায় না। প্রবাসী ছেলেটার কি ভাগ্য। এতদিন বিদেশে থেকে সব মজা করে নিয়েছে। এখন জুইয়ের মত ভাল একটা মেয়ে পাচ্ছে।

-কি করো?
জুইয়ের গলায় অস্বাভাবিক গম্ভীর।
- এই তো শুয়ে আছি।
- ইউনিভার্সিটিতে আসো না কেন?
- ভাল লাগে না, তাই যাই না।
- ওহ। যাওয়া উচিত।
- আচ্ছা ইউনিভার্সিটির কথা বাদ দাও। বিয়ের পর কি বিদেশ চলে যাবা?
- জানি না। কেন?
- নাহ এম্নেই জিজ্ঞেস করলাম।
- কারণ বল। এম্নে জিজ্ঞেস করো নাই।
- বললাম তো কোন কারণ নেই। আবার জিজ্ঞেস করছো কেন?
- তুমি উত্তেজিত হচ্ছো কেন?
- দুঃখিত। তুমি তো এখন অন্যজনের। তোমার সাথে তো উত্তেজিত হওয়া যাবে না। ভুলে গিয়েছিলাম তোমাকে যা ইচ্ছা তা বলা যাবে না।

ফোন রেখে দেয় জুই। রাগ করেছে হয়ত। করুক গা। সমস্যা নেই। এখন ওর রাগ ভাঙানোর দায়িত্ব তো অন্য জন নিয়ে নিয়েছে। ঐ প্রবাসীটা। ওর কি?

এবার মুহিব ওর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে। নাহ বিয়ের দিন না। বিয়ের একদিন আগে আত্মহত্যা করবে। এটাই ভাল হবে।

আবার রিং এসেছে। জুই ই করেছে।

-আচ্ছা তুমি এমন করে কথা বলছো কেন?
-কিভাবে বলছি?
জুই তা ব্যাখ্যা করে না। বলে, আমার এই পৃথিবী ভাল লাগছে না। বিশ্বাস করো একটুও বাঁচতে ইচ্ছা করছে না । বেঁচে থাকলে মা বাবার কথা অনুযায়ী ঐ ছেলেটাকেই বিয়ে করতে হবে। কিন্তু মন থেকে যে মেনে নিতে পারছি না।

-সমস্যা কোথায়? ছেলেটা অনেক সুদর্শন। প্রতিষ্ঠিত। অনেক সম্পদের মালিক।

এটা শুনে জুই উত্তেজিত হয়ে পড়ে। খবরদার ব্যঙ্গ করবে না। এই ছেলের সাথে বিয়ের কথাবার্তার পর থেকে অনেক ব্যঙ্গ করেছো আর না। আমার অসহায়ত্ব অবস্থা বুঝার চেষ্টা কখনো করো নি। আর করতেও হবে না। জুই তোমাকে আর কখনো বিরক্ত করবে না। শুধু তোমাকে না পৃথিবীর আর কাউকেই বিরক্ত করবে না।

এটা বলে ফোন কেটে দেয় জুই।

আরে বিপদ তো। এই মেয়ে এগুলো কি বলছে। সর্বনাশ হয়ে যাবে। মুহিব বার বার চেষ্টা করে জুইয়ের ফোনে। কিন্তু প্রতিবারই বন্ধ পায়। কাউকে না জানিয়ে মুহিব বেরিয়ে পড়ে জুইদের বাসার উদ্দেশ্যে। রাস্তায় কোন যানবাহন নেই। নিস্তব্ধ চারদিক। দৌড়া শুরু করে মুহিব যত শক্তি আছে তা নিয়ে। এখুনি জুইদের বাসায় পৌঁছতে হবে। অপরাধী সন্দেহেদুইটা পুলিশও ওর পিছে ছুটে। কিন্তু সেদিকে খেয়াল নেই মুহিবের। জুইয়ের কাছে যেতে হবে।

রচনাকাল - রাত ১.৪০, ১৯ আগস্ট ২০১০। প্রথম আলো ব্লগে : http://prothom-aloblog.com/posts/13/106166