মঈন সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। নিজেকে মাঝে মাঝে মানুষ ভাবতে ইচ্ছে হয়,
ইচ্ছে হয় আবেগী ভাবতে। যে চলন্ত পথে মেয়েদের গলার চেইন, কানের দুল টান
দিয়ে হাওয়া হয়ে যায় সে আবেগী হয় কিভাবে। অনেক সময় কানে দুল টানতে গিয়ে
কানের লতি ছিড়ে যায়। কিন্তু সেদিকে দেখার সময় কই। তার আগেই অদৃশ্য হয়ে যায়
মঈন। অদৃশ্য হতে সেকেন্ড দেরি করার উপায় নেই। ইদানিং গণপিটুনি বেড়ে গেছে।
গণপিটুনি মানে হচ্ছে মৃত্যু। তার দলের রাজু মারা গেল এক মাস আগে। একটুর
জন্য ধরা পড়ে গেল। চেইন নিয়ে দৌড় দিচ্ছে এসময় দেখে একটা হোন্ডা জোরে আসছে
সেটা দেখে থমকে দাঁড়াতেই পিছে এসে একজন ধরে ফেলে। আর যায় কই। শুরু হয় মাইর।
হোন্ডার নিচে পড়ে মরলেও এত কষ্ট পেত না। মানুষের গণপিটুনিতে যত কষ্ট। দূর
থেকে মঈন সব দেখছিল। নিজের সাগরেদ মারা যাচ্ছে অথচ কিছু করা যাচ্ছে না। দূর
থেকে শুধু দেখে গেল চল্লিশ পঞ্চাশ জন লোক একটা লোককে সমানে মেরে যাচ্ছে।......
বলা হয় আমজনতা নিরীহ। এ কথাটা মানতে নারাজ মঈন। নিরীহ হলে এভাবে গণপিটুনি দিতে পারতো না। চোখের সামনে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে কাউকে মারতে পারত না। আম জনতা সুযোগ পায় না বিধায় নিরীহের মুখোশ ধরে থাকে। রাজু ছিঁচড়ে ছিনতাইকারী। ওর হাতে বড় অস্ত্র নাই এটা জানে ওরা। আর সেটা জেনেই ওরা এভাবে মারছে একটা ছেলেকে। কিন্তু এখন যদি বড় সন্ত্রাসী কেউ হতো, হাতে অস্ত্র থাকতো তাহলে ভয়েই কেউ কাছে ঘেঁষত না।
ঠোট দিয়ে রক্ত পড়ছে। দাঁত কয়েকটা পড়ে গেছে। পরণের শার্টটা ছিড়ে ফাড়া ফাড়া হয়ে আছে। ডান চোখের দিকটা ফুলে উঠেছে। এরমধ্যে কেউ বলছে, ছেড়ে দিন। অজ্ঞান হয়ে গেছে মনে হয়। তা শুনে আরেকজন প্রতিবাদ করে, আরে রাখেন ভাই অজ্ঞান। এগুলো ওদের অভিনয়। এখন ছেড়ে দিলে দেখবেন দৌড় মেরে পালাবে। আরো ঘুষি চলে।
হুম শেষ নিঃশ্বাস কখন ফেলছে টের পাইনি কেউ। বেশ কিছুক্ষণ পর জানা গেল আক্রোশের শিকার লোকটা আর নেই। পুলিশ এসে মর্গে নিয়ে গেল। এরপর লাশটার কি হয়েছে কেউ জানে না।
মঈন দূর থেকে সব দেখেছে। পুলিশ যখন লাশ নিয়ে যাচ্ছে ক্ষতবিক্ষত রাজুর তখন কান্নায় চোখ ভেসে যাচ্ছিল। কিন্তু কিছুই করার নেই। শুধু দেখে থাকা। শেষ বারের মত দেখল রাজুকে। ডান দিকের চোখের মণিটা কিছুটা বেরিয়ে এসেছে। রাজুর লাশের কোন খবর থাকবে না। হয়ত কেউ নিয়ে যাবে এই লাশ। তারপর ক্ষতবিক্ষত করে ওষুধ কিংবা মেডিকেলের শিক্ষার্থীদের শেখানোর জন্য কঙ্কাল হবে।
গ্রামের রাজুর স্ত্রী ও মেয়ে আছে। জানে না ওরা রাজুর মৃত্যুর খবর। মঈন জানায়নি। রাজু আগে যেভাবে টাকা পাঠাত মঈনও সেভাবে পাঠায়। ওরা ধরে নিয়েছে রাজু ঠিকই আছে। তবে সামনে বিপদ। ঈদের সময় প্রতিবার রাজু বাড়ীতে যায়। কয়েকদিন পরই ঈদ। কিন্তু রাজু যাবে না। থাক কারণ একটা বলে দিলে হবে।
রাস্তার একটু আড়ালে আসতেই তিনটি চেইন আর কানের দুলটি দেখে মঈন। হালকা চেইনটি দেখে মায়া হচ্ছে। একটা ছোট মেয়ের গলা থেকে নিয়ে আসা। বয়স কত হবে, পাঁচ ছয়। যখন টের পেল মেয়েটা চিৎকার করে কেঁদে উঠল কিন্তু সেদিকে খেয়াল করার উপায় নেই মঈনের। সে সটকে পড়ে। এখন চেইনটা দেখে খারাপ লাগছে।
হয়ত ছোট মেয়েটা অনেক শখ করে নিয়েছে। যদি বিয়ে করত তবে এত দিনে সে মেয়েটার মত একটা মেয়ে থাকতে পারত। মেয়েটার কথা চিন্তা করে মন খারাপ হচ্ছে। ইচ্ছে করছে মেয়েটাকে ফিরিয়ে দিয়ে আসতে। কিন্তু অনেক ঝুঁকিপূর্ণ ? তারপরও ফুটফুটে মুখটিই শুধু ভেসে আসছে চোখে। মনে হচ্ছে নিজের মেয়ে।
যে রাস্তা থেকে মেয়েটির কাছ থেকে চেইনটি নিয়ে আসছিল সেখানে ফিরে যায় মঈন। দেখে ছোট মেয়েটি আর তা মা তখনো দাঁড়িয়ে আছে। আশে পাশে কৌতুহলী লোকের ভীড়। বিভিন্ন কথা জিজ্ঞেস করছে। কিভাবে নিলো। কেউ কেউ সান্ত্বনা দিচ্ছে। ছোট মেয়েটি শুধু কাঁদছে। মায়া আসলে অন্যরকম এক জিনিস। বুঝা যায় না। নিজেকে মানুষ ভাবতে ইচ্ছা করে মঈনের। মঈন মনের অজান্তেই মেয়েটির কাছে যায়। পকেটে হাত দেয়।
এসময় মেয়েটি মঈনকে দেখা মাত্র চিৎকার দিয়ে উঠে, মা এই লোকটি নিয়েছে।
শোনার অপেক্ষা শুধু। সাথে সাথে চারদিক থেকে শুরু হয়ে যায় পিটুনি। পকেট থেকে আর হাত বের বের করতে হয় না। ছোট্ট মেয়েটি চিৎকার দিয়ে উঠে এরকম মারছে দেখে। তাই মা চলে যান মেয়েকে নিয়ে। এরকম মার দেখা ঠিক না। মঈন কথা বলার চেষ্টা করে। কিন্তু ওর কথা কেউ শুনে না। ওর গায়ের মধ্যে ঘুষি লাথি পড়ে। ঘুষি আর লাথির শব্দে ওর বলা কথাগুলো হারিয়ে যায়।
একটা লাশ পড়ে আছে। যে কিছুক্ষণের জন্য একটু মানুষ হতে চেয়েছিল। একটু মায়া দেখাতে গিয়েছিল।
>>>প্রথম আলো ব্লগে : http://www.prothom-aloblog.com/posts/13/107582
বলা হয় আমজনতা নিরীহ। এ কথাটা মানতে নারাজ মঈন। নিরীহ হলে এভাবে গণপিটুনি দিতে পারতো না। চোখের সামনে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে কাউকে মারতে পারত না। আম জনতা সুযোগ পায় না বিধায় নিরীহের মুখোশ ধরে থাকে। রাজু ছিঁচড়ে ছিনতাইকারী। ওর হাতে বড় অস্ত্র নাই এটা জানে ওরা। আর সেটা জেনেই ওরা এভাবে মারছে একটা ছেলেকে। কিন্তু এখন যদি বড় সন্ত্রাসী কেউ হতো, হাতে অস্ত্র থাকতো তাহলে ভয়েই কেউ কাছে ঘেঁষত না।
ঠোট দিয়ে রক্ত পড়ছে। দাঁত কয়েকটা পড়ে গেছে। পরণের শার্টটা ছিড়ে ফাড়া ফাড়া হয়ে আছে। ডান চোখের দিকটা ফুলে উঠেছে। এরমধ্যে কেউ বলছে, ছেড়ে দিন। অজ্ঞান হয়ে গেছে মনে হয়। তা শুনে আরেকজন প্রতিবাদ করে, আরে রাখেন ভাই অজ্ঞান। এগুলো ওদের অভিনয়। এখন ছেড়ে দিলে দেখবেন দৌড় মেরে পালাবে। আরো ঘুষি চলে।
হুম শেষ নিঃশ্বাস কখন ফেলছে টের পাইনি কেউ। বেশ কিছুক্ষণ পর জানা গেল আক্রোশের শিকার লোকটা আর নেই। পুলিশ এসে মর্গে নিয়ে গেল। এরপর লাশটার কি হয়েছে কেউ জানে না।
মঈন দূর থেকে সব দেখেছে। পুলিশ যখন লাশ নিয়ে যাচ্ছে ক্ষতবিক্ষত রাজুর তখন কান্নায় চোখ ভেসে যাচ্ছিল। কিন্তু কিছুই করার নেই। শুধু দেখে থাকা। শেষ বারের মত দেখল রাজুকে। ডান দিকের চোখের মণিটা কিছুটা বেরিয়ে এসেছে। রাজুর লাশের কোন খবর থাকবে না। হয়ত কেউ নিয়ে যাবে এই লাশ। তারপর ক্ষতবিক্ষত করে ওষুধ কিংবা মেডিকেলের শিক্ষার্থীদের শেখানোর জন্য কঙ্কাল হবে।
গ্রামের রাজুর স্ত্রী ও মেয়ে আছে। জানে না ওরা রাজুর মৃত্যুর খবর। মঈন জানায়নি। রাজু আগে যেভাবে টাকা পাঠাত মঈনও সেভাবে পাঠায়। ওরা ধরে নিয়েছে রাজু ঠিকই আছে। তবে সামনে বিপদ। ঈদের সময় প্রতিবার রাজু বাড়ীতে যায়। কয়েকদিন পরই ঈদ। কিন্তু রাজু যাবে না। থাক কারণ একটা বলে দিলে হবে।
রাস্তার একটু আড়ালে আসতেই তিনটি চেইন আর কানের দুলটি দেখে মঈন। হালকা চেইনটি দেখে মায়া হচ্ছে। একটা ছোট মেয়ের গলা থেকে নিয়ে আসা। বয়স কত হবে, পাঁচ ছয়। যখন টের পেল মেয়েটা চিৎকার করে কেঁদে উঠল কিন্তু সেদিকে খেয়াল করার উপায় নেই মঈনের। সে সটকে পড়ে। এখন চেইনটা দেখে খারাপ লাগছে।
হয়ত ছোট মেয়েটা অনেক শখ করে নিয়েছে। যদি বিয়ে করত তবে এত দিনে সে মেয়েটার মত একটা মেয়ে থাকতে পারত। মেয়েটার কথা চিন্তা করে মন খারাপ হচ্ছে। ইচ্ছে করছে মেয়েটাকে ফিরিয়ে দিয়ে আসতে। কিন্তু অনেক ঝুঁকিপূর্ণ ? তারপরও ফুটফুটে মুখটিই শুধু ভেসে আসছে চোখে। মনে হচ্ছে নিজের মেয়ে।
যে রাস্তা থেকে মেয়েটির কাছ থেকে চেইনটি নিয়ে আসছিল সেখানে ফিরে যায় মঈন। দেখে ছোট মেয়েটি আর তা মা তখনো দাঁড়িয়ে আছে। আশে পাশে কৌতুহলী লোকের ভীড়। বিভিন্ন কথা জিজ্ঞেস করছে। কিভাবে নিলো। কেউ কেউ সান্ত্বনা দিচ্ছে। ছোট মেয়েটি শুধু কাঁদছে। মায়া আসলে অন্যরকম এক জিনিস। বুঝা যায় না। নিজেকে মানুষ ভাবতে ইচ্ছা করে মঈনের। মঈন মনের অজান্তেই মেয়েটির কাছে যায়। পকেটে হাত দেয়।
এসময় মেয়েটি মঈনকে দেখা মাত্র চিৎকার দিয়ে উঠে, মা এই লোকটি নিয়েছে।
শোনার অপেক্ষা শুধু। সাথে সাথে চারদিক থেকে শুরু হয়ে যায় পিটুনি। পকেট থেকে আর হাত বের বের করতে হয় না। ছোট্ট মেয়েটি চিৎকার দিয়ে উঠে এরকম মারছে দেখে। তাই মা চলে যান মেয়েকে নিয়ে। এরকম মার দেখা ঠিক না। মঈন কথা বলার চেষ্টা করে। কিন্তু ওর কথা কেউ শুনে না। ওর গায়ের মধ্যে ঘুষি লাথি পড়ে। ঘুষি আর লাথির শব্দে ওর বলা কথাগুলো হারিয়ে যায়।
একটা লাশ পড়ে আছে। যে কিছুক্ষণের জন্য একটু মানুষ হতে চেয়েছিল। একটু মায়া দেখাতে গিয়েছিল।
>>>প্রথম আলো ব্লগে : http://www.prothom-aloblog.com/posts/13/107582