শনিবার, ৮ জুন, ২০১৩

সারপ্রাইজ

লুবনার মেজাজ চরম খারাপ। জন্মদিনে মেজাজ খারাপ করা ভাল দেখায় না। কিছুক্ষণ আগে বন্ধুদের সাথে জন্মদিনের উইশ করে এসেছে।
হলে থাকে। রুমমেট চারজনই এখন আত্মীয়। কেক এনে কাটাকাটি হলো। একজনের মুখে অন্যজন কেক মাখিয়ে দিলো। নিজের মেজাজ খারাপের বিষয়টা আড়াল করে ওদের সাথে মাস্তি করেছে লুবনা।


কিন্তু শুয়ে পড়ার পর মেজাজ খারাপটা ক্রমাগত বাড়ছে। রাহিয়ান জন্মদিনের উপহার হিসাবে গিফট পাঠিয়েছে একটা ছবি। খুব ভাল ছবি তোলে ও। কিন্তু ছবিটা হচ্ছে একটা মেয়ের। কেমন বিষন্ন দৃষ্টিতে মেয়েটা তাকিয়ে আছে। তবে অদ্ভূত সুন্দর মুখ।
জন্মদিনে অন্য মেয়ের ছবি পাঠানোর মানেটা কি! ভাল লাগলে ওই মেয়ের সাথে ঘুরুকগে। এখানে ওই মেয়ের ছবি পাঠালো কেন। ভাল ছবি তুলতে পারে বিধায় মেয়েদের ছবি তুলে ফেলতেই হবে!

নিজের জন্মদিন উপলক্ষে রাহিয়ানকে নিয়ে একটা গল্প লিখেছিল ডায়েরীতে। ডায়েরীর পৃষ্ঠাগুলো ছিড়ে নিয়ে পাকঘরের দিকে গেলো। অটো গ্যাস চুলা। চাবি ঘুরালেই আগুন জ্বলে উঠে, ম্যাচের দরকার হয় না। চুলায় আগুন জ্বলছে। হাতের লেখাগুলো বেশ সুন্দর। হাতের লেখা প্রতিযোগিতায় প্রতিবারই ফাস্ট হয় ও। সুন্দর লেখাগুলো পুড়তে মায়া লাগছে। কিন্তু পাত্তা দিলো না। কিছুক্ষণের মধ্যে পুড়ে গেলো ছয়টি পৃষ্ঠা। কালো ছাই চারদিকে। কিছুক্ষণ আগেও যেখানে ছিল কিছু স্বপ্নের কথা।

বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আবার বিছানায় শুয়ে পড়লো। কিন্তু ঘুম আসছে না। রাহিয়ান এমন করলো কেন! জন্মদিনে কত সুন্দর কথার উইশ পাঠানো যায়, আর ও পাঠিয়েছে অন্য একটা মেয়েকে। এ মেয়ের সাথে ওর সম্পর্কই বা কি। ফোনে জিজ্ঞেস করা যায়, কিন্তু ইচ্ছা করছে না।

রাতে ঘুম হলো না। ভোরের দিকে ফোন এলো। রাহিয়ান ফোন দিয়েছে। ধরলো না, ক্রমাগত ফোন আসছে। রিসিভ করছে না লুবনা। জন্মদিনের প্রথম প্রহরই মেজাজ খারাপ যে করে দিয়েছে তার সাথে কিসের কথা।

মেসেজ এলো, তুমি একটু বের হবে! তোমার হলের গেইটের সামনে আসতে পারবে? নাকি এখনও ঘুমে?

লুবনা হল থেকে বের হয়ে দেখলো টং দোকানটার সামনে দাড়িয়ে আছে রাহিয়ান। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই প্রিয় মানুষটাকে দেখে ভাল লাগছে। কিন্তু যেহেতু মেজাজ খারাপ করে দিয়েছে রাতে তাই কথা বলবে না সিদ্ধান্ত নেয়।

জন্মদিনের উইশ জানিয়ে রাহিয়ান ফুলের গুচ্ছটা তুলে দেয় লুবনার হাতে।
গম্ভীর ভাব নিয়ে সেটা হাতে নেয়।

: তোমাদের এখানে মশার উপদ্রব বেশি। আমার মনে হয় ঢাকা শহরের অর্ধেক মশাই তোমাদের এ এলাকার বাসিন্দা। সারা রাত ধরে যেভাবে আক্রমণ করে গেছে।
: মানে কি! তুমি সারা রাত এখানে কি করছো?

: এই দেখো কয়েকটা দেয়াল, অল্প কিছু দূরত্ব। তোমার অনুভূতি, বন্ধুদের সাথে মজার সময়গুলোর ভাগিদার হতে চাইলাম। মেয়েদের হলে তো আমাকে আর ঢুকতে দেবে না। তাই বাহির থেকেই অনুভব করে গেলাম।
এ কথা শুনে মন ভাল হয়ে যায় লুবনার।
: কিন্তু তুমি অন্য মেয়ের ছবি পাঠালে কেন?
: আরে মশা যেভাবে কামড়াচ্ছিলো, ভাবলাম তোমাকেও একটু বিরক্ত করি, তাই দুষ্টামি করে মেয়েটির ছবি পাঠিয়েছি। আমার কাজিন। অনেক বেশি সুন্দরী।
: তার সাথে গিয়েই থাকো। এখানে কি, এখানে এলে কেন?
এটা বলে মুখ ঘুরিয়ে নেয় লুবনা।

: আরে বাবা, কাজিনটির কলেজে পড়ার সময়ের ছবি এটি। অনেক আগের। এখন তার ছেলেই ক্লাস থ্রিতে পড়ে।
সরি দুষ্টামি করার জন্য, তোমাকে মাঝে মাঝে রাগাতে ইচ্ছা করে।
: আমি যে রাগ করে তোমাকে নিয়ে লেখা গল্পটি পুড়িয়ে ফেলেছি। কাল বিকালের দিকে লিখেছিলাম।
: বলো কি! সত্যি?

উত্তরে কিছু বলে না লুবনা। মন খারাপ করে মাথা নাড়ে শুধু।

রাহিয়ান লুবনার চিবুক ধরে বলে, আচ্ছা মন খারাপ করো না। আমাদের জীবনের গল্প নিশ্চয় তোমার ওই গল্পের চেয়ে খারাপ হবে না, দেখো আমাদের জীবনের গল্পটাও অনেক সুন্দর হবে। চলো চলো নাস্তা করতে যাই। ভীষণ ক্ষিধে পেয়েছে। আর তোমার জন্য আরো কিছু সারপ্রাইজ আছে। এখন বলছি না। আগে নাস্তা খাওয়া হবে।

দুইজনে হাত ধরাধরি করে হাঁটে। ভোরের মায়াবী আলো তাদের চোখেমুখে।