শনিবার, ৮ জুন, ২০১৩

নাহ (গল্প)

চোখ বন্ধ করলেই ঘুম হয়ে গেলে ভাল হতো। জোর করে চোখ বন্ধ করে রাখছি। কিন্তু ঘুমের কোন দেখা নেই। এ মুহূর্তে যে কেউ আমাকে দেখলেই মনে করবে আমি ঘুমিয়ে আছি। কিন্তু বুঝবেও না আমি ঘুমের জন্য কি সংগ্রামটাই না করছি।


মোবাইলের ভাইব্রেশনের শব্দ। রাতের বেলা সাধারণত ফোনটাকে ভাইব্রেশন মুডে নিয়ে যাই। রাত আমার কাছে অন্যরকম গুরুত্ব বহন করে। আগে তো রাতে ফোন সাইলেন্স করে রাখতাম। কিন্তু বারংবার ফোন দিয়েও না পাওয়ায় বন্ধুদের ঝাড়ি খেয়ে বদলাতে হলো ব্যবস্থা। এখন ভাইব্রেশন করে রাখি।

ফোন ধরলাম। রাতে ফোনে কল আসলে প্রথমে কথা বলার সময় গলাটা কেমন গম্ভীর হয়ে যায়। নিজের গলা স্বর বদলে যাওয়া দেখে নিজেই আশ্চর্য হই। অথচ ওই রকম গম্ভীর গলার স্বর মোটেই ইচ্ছাকৃত নয়। নিজে নিজে হয়ে যায়, মাঝে মাঝে তো বিরক্তিই লাগে ওই গম্ভীর গলার স্বর হওয়ার। নিজে যেখানে অন্যদের গম্ভীরতাকে মনে করি পার্ট দেখানো সেখানে নিজের গলাই যদি ওরকম কোন আচরণ করে তাহলে তো তা বিব্রতকর। এ বিব্রতকর অবস্থায় আমার পড়তে হয়। যদিও ওই পাশে যে কথা বলে সে আমার বিব্রত হওয়ার বিষয়টি বুঝতে পারে না। আবার কথা বলতে বলতে ঠিক হয়ে যায়, ফিরে পাই স্বাভাবিক গলা।

: মন খারাপ?
: নাহ।
: মেজাজ খারাপ?
: নাহ।
: আজ ঘুম থেকে সকাল সকাল উঠতে পেরেছিলেন?
: নাহ।
: গল্প লিখেছেন?
: নাহ।
আচ্ছা আপনি একটা কথা বলেন তো। আমাকে বন্ধু মনে করেন তো?
আমি হাসি। মনে মনে বলি বন্ধু মনে করি এটা আবার ওপরে বলার কি আছে।
: হাসছেন কেন? আপনাকে প্রশ্ন করেছি। উত্তর দেন।
: আমি তো এম্নেই হাসি। কারণ ছাড়া হাসি, কারণ সহ হাসি। তবে বেশির ভাগ সময়ই কারণ ছাড়া হাসি। সহজ কথায় উত্তর দিতে গেলে হাসতে ভাল লাগে, তাই হাসি।
আমি আবার হাসতে থাকি।

ওই পাশ থেকে এবার একটু হুকুমজারি গলা, খবরদার হাসবেন না। যা বলছি তা মন দিয়ে শুনেন। এর মধ্যে আপনার ঢাকায় আসার সম্ভাবনা আছে?

: বলতে গেলে একেবারেই নেই। সামনের বছর যাওয়া হতে পারে।
: শুনেন, আগামী ২৩ তারিখ আপনার ঢাকা থাকতে হবে। আমার বিয়ে। আপনাকে অবশ্যই বিয়েতে থাকতে হবে।
: ঢাকায় তো যাওয়া হবে না।
: না উত্তর দেয়ার আর সুযোগ নেই। আমি আপনাকে প্রথমে যতগুলো প্রশ্ন করছি। সবগুলোতে নাহ উত্তর দিয়েছেন বলিষ্ঠভাবে। না উত্তরের স্টক শেষ। আমি এত কিছু বুঝি না। আমার বিয়েতে আপনাকে আসতেই হবে। আপনি না আসলে আমি বিয়েতেই বসবো না। বুঝতে পারছেন? আপনার তো গন্ডারের চামড়া। অনেক কিছুই বুঝেন না।
: আরে সমস্যা নেই। বড় ভাই হিসাবে এখান থেকেই দোয়া পাঠিয়ে দেবো।
: বেশি কথা বইলেন না। আপনি আমার চেয়ে বয়সে বেশি বড় হবেন না। এত বড় ভাই বড় ভাই করবেন না।

: আচ্ছা বিয়ে তো একটা উপলক্ষের সিঁড়ি। নতুন নতুন আরো বিভিন্ন উপলক্ষ আসবে। তখন কোন একবার নাহয় অবশ্যই যাওয়া হবে।

: তার মানে বলতে চাচ্ছেন আমার ছেলে মেয়ের বিয়েতে আসবেন? আমি এত কিছু বুঝি না। আপনাকে আসতে হবে শেষ।

একটু ভাবনায় পড়ে গেলাম। নাহ শব্দটা তো বেশ কয়েকবার ব্যবহার করে ফেলছি। এর বিকল্পে সুন্দর কোন শব্দ দরকার। টেবিলের ওপর বাংলা অভিধানটা আছে। একবার ভাবলাম অভিধানটা নিয়ে বসি। দেখি নাহ এর বিকল্প কোন সুন্দর সমার্থক শব্দ পাই কিনা। কিন্তু এখন অভিধানটা নিতে গেলে আবার লাইট জ্বালাতে হবে। আবার অভিধান দেখার পর লাইট নেভাতে হবে। যেটুকু ঘুম আসছিল এ উঠা নামায় তাও চলে যাবে। তাই অভিধান নেওয়ার চিন্তা বাদ দিলাম।

: আচ্ছা আপনি বিয়েতে কি পড়ে আসবেন, শার্ট, ফতুয়া নাকি পাঞ্জাবি?
এদিকে আমি নাহের বিকল্প শব্দ খুঁজছি। সেদিকে সে অলরেডি কি পড়ে যাবো সে ভাবনায় চলে গেছে। কি বলবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। নীরবতার মাঝে মাঝে অনেক অর্থ থাকে। সব সময় তা প্রকাশ পায় না সমস্যা এটাই।
ওই পাশ থেকে আবার কন্ঠস্বর ভেসে আসে। এইযে, চুপ করে আছেন কেন? ঘুমিয়ে পড়লেন নাকি?
: নাহ নাহ ঘুম যাইনি।
: তাহলে চুপ যে! আপনি কিন্তু অবশ্যই আসতেছেন। আর কিছু শুনতে চাই না।
দেয়ালের টিকটিকিটা টিক টিক শব্দ করে উঠে।

আমি টিক টিক উচ্চারণ করি। কেন যেন টিকটিকিটাকে ভেংগাতে ইচ্ছা হলো।
: ওয়াও। আপনি আসলে অনেক ভাল।

বিস্ময়ে কিছুটা বাকহারা ওই পাশের আনন্দোচ্ছ্বাস দেখে, আমি আবার কি করলাম?
: এই যে আপনি বললেন, ঠিক ঠিক। তার মানে আপনি আসতেছেন আমার বিয়েতে। আমার অনেক ভাল লাগছে। আমি জানতাম আপনি আমার এই রিকুয়েস্টটা ফেলতে পারবেন না।
টিকটিকিটাকে ভেংগাতে গিয়ে তো ভালই বিপদে পড়লাম।
: আমি তো ঠিক ঠিক বলি নাই।
: মানে? ওই পাশের গলাটা একটু উত্তেজিত।
: আমি আসলে টিক টিক বলেছি। একটা টিকটিকি শব্দ করছিলো তো। সেটাকে ভেংগালাম।

ওই পাশে কিছুক্ষণ নীরবতা। এরপর কথা ভেসে আসলো আপনি আসলে ……. । পুরা বাক্যটা শোনা গেলো না। এর মধ্যে লাইন কেটে দিলো।

ফোন দিলাম। নাহ সংযোগ পাওয়া সম্ভব নয়। ফোন বন্ধই করে দিয়েছে। মেয়েদের মন বোঝা অনেক বেশি কঠিন! নাহ! আসলেই মেয়েদের মন বোঝা সম্ভব নাহহ!