একটু পর পর টুক টুক আওয়াজ হচ্ছে। ছন্দময় আওয়াজ। একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর।
হয়ত প্রতিটা সময় সূক্ষ্ণ ভাবে মিলছে। একটার পর আরেকটার মাঝে যে সময় তা একই।
মধ্যখানের সময় ব্যবধান একই নাকি তা ধরার চেষ্টা করে ইব্রাহিম। স্টপ ওয়াচ
থাকলে ভাল হতো। কিন্তু তা হাতের কাছে নেই। মুখই ভরসা। সে গুণে যায় এক, দুই,
তিন, চার পাঁচ বলতে যায় ঠিক তখনই আবার শব্দ হয়। প্রতিবারই এমন হচ্ছে। পাঁচ
আর বলা হয় না। অথ্যাৎ প্রতি সাড়ে চার সেকেন্ড পর পর শব্দ হচ্ছে। সুন্দর
সময় সচেতন তো। সময়ানুবর্তিতার চমৎকার উদাহরণ। ............
যেটা শব্দ করছে সেটা ইঁদুর। কিছু কাটছে মনে হয়। ইঁদুরের প্রিয় কাটার জিনিষ কাগজ। এই রুমে কাগজ নাই। তাই রাগ করে অন্য কিছু বোধ হয় সর্বশক্তি প্রয়োগ করে কাটছে। যে কারণে ঠোকরের আওয়াজ বেশি আসছে। ইব্রাহিম ডান হাত দিয়ে সজোরে খাটের উপর থাপ্পর মারে। টুক টুক শব্দটা থেমে যায়। কিছুক্ষণ পর আবার শুরু। নাহ ইঁদুর যে শব্দ করছে এজন্য বিরক্ত হয় না ইব্রাহিম। তবে ওর থাপ্পরের শব্দে ইঁদুর থামে কিনা তা দেখার জন্য থাপ্পর দেওয়া। নিজেকে অনেক বেশি অসহায় মনে হয় ইব্রাহিমের। কেউ ভয় পায় না ওকে। এমনকি ইঁদুর পর্যন্ত না। কারো কাছে যেন গুরুত্ব নেই কথার।
এখন এসব খুটিনাটি বিষয় নিয়ে অনেক ভাবে ইব্রাহিম। খুঁটিনাটি বিষয় ভাবলে মনের দুঃখ দূর হয়। ধনীরা নাকি মনের দুঃখ ভুলার জন্য নেশা করে। নাইট ক্লাবে সুন্দরী ললনার সঙ্গ নেয়। কিন্তু ইব্রাহিমের কাছে এসব নাগালের বাহিরে। খুঁটিনাটি বিষয় ভেবে ভেবে যদি দুঃখটাকে পাশ কাটানো যায় সেটাই ভাল।
এখন প্রায় রাতে ঘুম হয় না। ঘুম গুলো যেন কোথায় চলে গেছে। অথচ যখন মা বেঁচে ছিল সময়ে অসময়ে ঘুমাতো। মা কতো বকতো। তারপরও ঘুমাতো। এখন মা নেই। ঘুম গুলোও বোধ হয় মায়ের সাথে চলে গেছে।
রাতে না ঘুমালে সকালে যে ঘুমাতে পারবে সে সুযোগও নাই। বোনের বাসায় থাকে ইব্রাহিম। ওর দুলাভাইয়ের লবণ ব্যবসা। লবণ বানান। সাতসকালে কারখানায় যেতে হবে। গিয়ে কারখানা তালা খুলতে হবে। দারোয়ান আছে। কিন্তু দুলাভাই দারোয়ানকে বিশ্বাস করেন না। ওর কাছে চাবি দেন না। ইব্রাহিমের খুলতে হয় প্রতিদিন সবার আগে গিয়ে। আবার আসার সময় গেটে তালা বন্ধ করে সবার শেষে আসতে হয়।
মালিকের আত্মীয় হলে অধীনস্ত কর্মচারীরা বিশেষ সম্মান করে। কিন্তু ইব্রাহিমের মনে হয় সম্মান করা তো দূরের কথা তাকে ঠিকমত পাত্তাই দেয় না শ্রমিকরা। একটা কাজ একবার বলার সাথে সাথে কখনো করে না। বেশ কয়েকবার বলতে হয়। আর দেবেই বা কেন? মালিক যার সাথে সবার সামনে এত বিশ্রী ব্যবহার করেন তাকে পাত্তা দেওয়ার কোন মানে হয় না।
প্রথম দিকে ইব্রাহিমের খুব খারাপ লাগত দুলাভাইয়ের ব্যবহার দেখে। কান্না আসত। ঘুমাতে যাওয়ার আগে কান্না করত। নিঃশব্দের কান্না। বালিশ ভিজতো চোখের নোনা পানিতে। এখন আগের মত খারাপ লাগে না। সহ্য ক্ষমতা বেড়ে গেছে।
দুলাভাই কথায় কথায় কুত্তার বাচ্চা ডাকে। শ্বশুরকে কুত্তা মনে করলে কিইবা করার আছে। বাবার প্রতি রাগ হয় ইব্রাহিমের। চাকরি শেষে অবসরে কিছু টাকা পেয়েছিলেন। মেয়ের জামাইয়ের কথা শুনে সেগুলো দিয়ে দিয়েছেন। দুলাভাই কি সুন্দর করে বুঝালেন। বলেছিলেন, ইব্রাহিমের সব দায়িত্ব নেবেন। বড় হলে ইঞ্জিনিয়ার বানাবেন। টাকা বসিয়ে রেখে লাভ নেই। লাভ দেবেন।
বাবার মৃত্যুর পর দুলাভাই সম্পূর্ণ বদলে যান। ইব্রাহিমকে বোনের বাসায় উঠতে হয়। গ্রামের স্কুলে নবম শ্রেণীতে পড়ত। বোন কুলছুমা স্বামীকে অনেক অনুরোধ করে ভাইকে স্কুলে ভর্তি করার জন্য।
কিন্তু কুলছুমার কথা পাত্তা দেয় না। বলে, বেশি কথা বললে ইব্রাহিমকে এ বাসাতে রাখাই সম্ভব না।
তারপরও জোর করলে থাপ্পর মেরে বসে।
দুলাভাই যাওয়ার পর ইব্রাহিম বোনের কাছে যায়। কুলছুমা তখন তরকারি কাটছিল। আপা, আমার পড়ার ব্যাপারে তুই আর অনুরোধ করবি না। আমার পড়ালেখা করার ইচ্ছা নাই।
-কেন পড়ালেখা করার ইচ্ছা নাই কেন? পড়ালেখা করতে হবে। বাবা তোকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতেন। পূরণ করবি না বাবার স্বপ্ন?
- তুই থাপ্পর খেলি। তারপরও এই কথা বলছিস? শুন তুই যদি পড়ালেখা করতে বলিস তাহলে আমি এখান থেকে চলে যাবো।
তা বলে চলে এসেছিল। বাবা আপাকে অনেক আদর করত। মা কোন কারণে শাসন করলে অনেক রাগ করত। বলত ছোট মেয়ে বুঝে নাকি? বুঝিয়ে বললেই তো হয়। কখনো হাত তুলেন নাই। আর সে আপা স্বামীর হাতে মার খাচ্ছে। অজান্তে চোখের পানি ঝরেছিল ইব্রাহিমের। আর বাবা মা-র উপর রাগও হয়েছিল অনেক। পাশের বাসার বড় ছেলে শামীম ভাই আপাকে অনেক পছন্দ করত। আপাকে দেখার জন্য দাঁড়িয়ে থাকতো রাস্তায়। কিন্তু পারিবারিক সমস্যা দুই পরিবারের মধ্যে থাকায় সেখানে বিয়ে দেন না। শামীম ভাই এখন ও বিয়ে করেন নাই। হয়ত এখন্ও আপাকে ভালবাসেন। অনেক ভাল শামীম ভাই। শামীম ভাইয়ের সাথে বিয়ে হলে অন্যরকম জীবন হতো আপার। আসলে সব নিয়তি।
আপা অনেক সুন্দর ছিলেন। অথচ এখন দেখলে চেনাই যাবে না এটা সে আগের আপা। মুখে অনেক দাগ। ইব্রাহিমের মনে হয় বাবা মা যদি এখন দেখতেন তবে বাবা- মা হয়ত চিনতেন না তাদের মেয়েকে। নরপশুর সাথে বিয়ে হলে এমনই হয় ।
তবে ইব্রাহিমের খারাপ লাগে সবচেয়ে যখন দেকে বেশি আপা অত্যাচারের ব্যাপারগুলোতে লুকাতে চেষ্টা করেন ভাইয়ের সামনে। আপাকে যে মারে তা নিজেই শুনে। কোথাও আঘাতের চিহ্ন থাকলে সেখানে অকারণে হাত দিয়ে ঢেকে রেখে চেষ্টা করেন যাতে না দেখে। অথচ এই অযথা হাত রাখার কারণে সেটা আরো বেশি নজরে পড়ে। আরো বেশি খারাপ লাগে।
দুলাভাইয়ের নোংরা আচরণে ইব্রাহিমের ইচ্ছা করে খুন করতে। অল্পক্ষণের ব্যাপার। একটা ছুরি দিয়ে ঐ ভুড়িযুক্ত পেটে ঢুকিয়ে দিলেই হলো। করে ফেলতে পারলে এই ব্যাটার নির্যাতন থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
কিন্তু বোনের দিকে চেয়ে পারে না। এত নির্যাতন করে তারপরও স্বামীকে কি যত্ন করে খেতে দেয়, বাহির হওয়ার সময় কাপড় এগিয়ে দেয়, কোন জিনিষটা দরকার তা খেয়াল করে আগে আগে ছুটে।
বোন কষ্ট পাবে অনেক। নাহলে এতদিনে হয়ত খুন করেই ফেলত। কিন্তু খুন করে ফেললে এই বোনটা তাকে ক্ষমা করবে না। সারাজীবন কাঁদবে স্বামীর জন্য। বোনকে এত কষ্ট দেওয়ার সাহস হয় না ইব্রাহিমের।
এরকম সহ্য করার ক্ষমতা পেয়েছে কোথায় থেকে বোনটা। অথচ যখন বাসায় ছিল কোন কারণে বকা দিলে মন খারাপ করে খাওয়া বন্ধ করে দিতো। মা-বাবা অনেক বুঝিয়ে খাওয়াতেন। অথচ কি বদলে গেল। গরুর মত মার খাওয়ার পর নিসঙ্কোচে খেয়ে ফেলে। মেয়ে হয়েছে বিধায় কি এত বদলে যেতে হবে? এত সহ্য করতে হবে?
বোনটার জন্য ইব্রাহিমও মুখ বুঝে সব সহ্য করে যায়।
>> প্রথম আলো ব্লগে : http://prothom-aloblog.com/posts/13/107108
যেটা শব্দ করছে সেটা ইঁদুর। কিছু কাটছে মনে হয়। ইঁদুরের প্রিয় কাটার জিনিষ কাগজ। এই রুমে কাগজ নাই। তাই রাগ করে অন্য কিছু বোধ হয় সর্বশক্তি প্রয়োগ করে কাটছে। যে কারণে ঠোকরের আওয়াজ বেশি আসছে। ইব্রাহিম ডান হাত দিয়ে সজোরে খাটের উপর থাপ্পর মারে। টুক টুক শব্দটা থেমে যায়। কিছুক্ষণ পর আবার শুরু। নাহ ইঁদুর যে শব্দ করছে এজন্য বিরক্ত হয় না ইব্রাহিম। তবে ওর থাপ্পরের শব্দে ইঁদুর থামে কিনা তা দেখার জন্য থাপ্পর দেওয়া। নিজেকে অনেক বেশি অসহায় মনে হয় ইব্রাহিমের। কেউ ভয় পায় না ওকে। এমনকি ইঁদুর পর্যন্ত না। কারো কাছে যেন গুরুত্ব নেই কথার।
এখন এসব খুটিনাটি বিষয় নিয়ে অনেক ভাবে ইব্রাহিম। খুঁটিনাটি বিষয় ভাবলে মনের দুঃখ দূর হয়। ধনীরা নাকি মনের দুঃখ ভুলার জন্য নেশা করে। নাইট ক্লাবে সুন্দরী ললনার সঙ্গ নেয়। কিন্তু ইব্রাহিমের কাছে এসব নাগালের বাহিরে। খুঁটিনাটি বিষয় ভেবে ভেবে যদি দুঃখটাকে পাশ কাটানো যায় সেটাই ভাল।
এখন প্রায় রাতে ঘুম হয় না। ঘুম গুলো যেন কোথায় চলে গেছে। অথচ যখন মা বেঁচে ছিল সময়ে অসময়ে ঘুমাতো। মা কতো বকতো। তারপরও ঘুমাতো। এখন মা নেই। ঘুম গুলোও বোধ হয় মায়ের সাথে চলে গেছে।
রাতে না ঘুমালে সকালে যে ঘুমাতে পারবে সে সুযোগও নাই। বোনের বাসায় থাকে ইব্রাহিম। ওর দুলাভাইয়ের লবণ ব্যবসা। লবণ বানান। সাতসকালে কারখানায় যেতে হবে। গিয়ে কারখানা তালা খুলতে হবে। দারোয়ান আছে। কিন্তু দুলাভাই দারোয়ানকে বিশ্বাস করেন না। ওর কাছে চাবি দেন না। ইব্রাহিমের খুলতে হয় প্রতিদিন সবার আগে গিয়ে। আবার আসার সময় গেটে তালা বন্ধ করে সবার শেষে আসতে হয়।
মালিকের আত্মীয় হলে অধীনস্ত কর্মচারীরা বিশেষ সম্মান করে। কিন্তু ইব্রাহিমের মনে হয় সম্মান করা তো দূরের কথা তাকে ঠিকমত পাত্তাই দেয় না শ্রমিকরা। একটা কাজ একবার বলার সাথে সাথে কখনো করে না। বেশ কয়েকবার বলতে হয়। আর দেবেই বা কেন? মালিক যার সাথে সবার সামনে এত বিশ্রী ব্যবহার করেন তাকে পাত্তা দেওয়ার কোন মানে হয় না।
প্রথম দিকে ইব্রাহিমের খুব খারাপ লাগত দুলাভাইয়ের ব্যবহার দেখে। কান্না আসত। ঘুমাতে যাওয়ার আগে কান্না করত। নিঃশব্দের কান্না। বালিশ ভিজতো চোখের নোনা পানিতে। এখন আগের মত খারাপ লাগে না। সহ্য ক্ষমতা বেড়ে গেছে।
দুলাভাই কথায় কথায় কুত্তার বাচ্চা ডাকে। শ্বশুরকে কুত্তা মনে করলে কিইবা করার আছে। বাবার প্রতি রাগ হয় ইব্রাহিমের। চাকরি শেষে অবসরে কিছু টাকা পেয়েছিলেন। মেয়ের জামাইয়ের কথা শুনে সেগুলো দিয়ে দিয়েছেন। দুলাভাই কি সুন্দর করে বুঝালেন। বলেছিলেন, ইব্রাহিমের সব দায়িত্ব নেবেন। বড় হলে ইঞ্জিনিয়ার বানাবেন। টাকা বসিয়ে রেখে লাভ নেই। লাভ দেবেন।
বাবার মৃত্যুর পর দুলাভাই সম্পূর্ণ বদলে যান। ইব্রাহিমকে বোনের বাসায় উঠতে হয়। গ্রামের স্কুলে নবম শ্রেণীতে পড়ত। বোন কুলছুমা স্বামীকে অনেক অনুরোধ করে ভাইকে স্কুলে ভর্তি করার জন্য।
কিন্তু কুলছুমার কথা পাত্তা দেয় না। বলে, বেশি কথা বললে ইব্রাহিমকে এ বাসাতে রাখাই সম্ভব না।
তারপরও জোর করলে থাপ্পর মেরে বসে।
দুলাভাই যাওয়ার পর ইব্রাহিম বোনের কাছে যায়। কুলছুমা তখন তরকারি কাটছিল। আপা, আমার পড়ার ব্যাপারে তুই আর অনুরোধ করবি না। আমার পড়ালেখা করার ইচ্ছা নাই।
-কেন পড়ালেখা করার ইচ্ছা নাই কেন? পড়ালেখা করতে হবে। বাবা তোকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতেন। পূরণ করবি না বাবার স্বপ্ন?
- তুই থাপ্পর খেলি। তারপরও এই কথা বলছিস? শুন তুই যদি পড়ালেখা করতে বলিস তাহলে আমি এখান থেকে চলে যাবো।
তা বলে চলে এসেছিল। বাবা আপাকে অনেক আদর করত। মা কোন কারণে শাসন করলে অনেক রাগ করত। বলত ছোট মেয়ে বুঝে নাকি? বুঝিয়ে বললেই তো হয়। কখনো হাত তুলেন নাই। আর সে আপা স্বামীর হাতে মার খাচ্ছে। অজান্তে চোখের পানি ঝরেছিল ইব্রাহিমের। আর বাবা মা-র উপর রাগও হয়েছিল অনেক। পাশের বাসার বড় ছেলে শামীম ভাই আপাকে অনেক পছন্দ করত। আপাকে দেখার জন্য দাঁড়িয়ে থাকতো রাস্তায়। কিন্তু পারিবারিক সমস্যা দুই পরিবারের মধ্যে থাকায় সেখানে বিয়ে দেন না। শামীম ভাই এখন ও বিয়ে করেন নাই। হয়ত এখন্ও আপাকে ভালবাসেন। অনেক ভাল শামীম ভাই। শামীম ভাইয়ের সাথে বিয়ে হলে অন্যরকম জীবন হতো আপার। আসলে সব নিয়তি।
আপা অনেক সুন্দর ছিলেন। অথচ এখন দেখলে চেনাই যাবে না এটা সে আগের আপা। মুখে অনেক দাগ। ইব্রাহিমের মনে হয় বাবা মা যদি এখন দেখতেন তবে বাবা- মা হয়ত চিনতেন না তাদের মেয়েকে। নরপশুর সাথে বিয়ে হলে এমনই হয় ।
তবে ইব্রাহিমের খারাপ লাগে সবচেয়ে যখন দেকে বেশি আপা অত্যাচারের ব্যাপারগুলোতে লুকাতে চেষ্টা করেন ভাইয়ের সামনে। আপাকে যে মারে তা নিজেই শুনে। কোথাও আঘাতের চিহ্ন থাকলে সেখানে অকারণে হাত দিয়ে ঢেকে রেখে চেষ্টা করেন যাতে না দেখে। অথচ এই অযথা হাত রাখার কারণে সেটা আরো বেশি নজরে পড়ে। আরো বেশি খারাপ লাগে।
দুলাভাইয়ের নোংরা আচরণে ইব্রাহিমের ইচ্ছা করে খুন করতে। অল্পক্ষণের ব্যাপার। একটা ছুরি দিয়ে ঐ ভুড়িযুক্ত পেটে ঢুকিয়ে দিলেই হলো। করে ফেলতে পারলে এই ব্যাটার নির্যাতন থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
কিন্তু বোনের দিকে চেয়ে পারে না। এত নির্যাতন করে তারপরও স্বামীকে কি যত্ন করে খেতে দেয়, বাহির হওয়ার সময় কাপড় এগিয়ে দেয়, কোন জিনিষটা দরকার তা খেয়াল করে আগে আগে ছুটে।
বোন কষ্ট পাবে অনেক। নাহলে এতদিনে হয়ত খুন করেই ফেলত। কিন্তু খুন করে ফেললে এই বোনটা তাকে ক্ষমা করবে না। সারাজীবন কাঁদবে স্বামীর জন্য। বোনকে এত কষ্ট দেওয়ার সাহস হয় না ইব্রাহিমের।
এরকম সহ্য করার ক্ষমতা পেয়েছে কোথায় থেকে বোনটা। অথচ যখন বাসায় ছিল কোন কারণে বকা দিলে মন খারাপ করে খাওয়া বন্ধ করে দিতো। মা-বাবা অনেক বুঝিয়ে খাওয়াতেন। অথচ কি বদলে গেল। গরুর মত মার খাওয়ার পর নিসঙ্কোচে খেয়ে ফেলে। মেয়ে হয়েছে বিধায় কি এত বদলে যেতে হবে? এত সহ্য করতে হবে?
বোনটার জন্য ইব্রাহিমও মুখ বুঝে সব সহ্য করে যায়।
>> প্রথম আলো ব্লগে : http://prothom-aloblog.com/posts/13/107108