ফ্লাক্স থেকে চা নিয়ে খায় সোনিয়া। রাত দুইটা বাজে। চোখে ঘুম আসছে।
কিন্তু ওর ইচ্ছা রাত তিনটা পর্যন্ত পড়ে চার ঘন্টা ঘুমাবে। সেজন্য ঘুমটাকে
পাত্তা দেয় না। ঘরের সবাই ঘুমে। মনে মনে দোয়া করতে থাকে মা-য়ের ঘুম যেন না
ভাঙে। পাশের রুমেই ঘুমিয়েছেন। ঘুমাতে যাওয়ার আগে বলে দিয়েছেন তাড়াতাড়ি যেন
ঘুমিয়ে পড়ে।
: সোনিয়া, তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়িস। ঘুম ভাল হলে মাথা ঠান্ডা থাকে। ফাইনাল পরীক্ষা, মাথা ঠিক না থাকলে উল্টা পাল্টা লিখে আসবি। রাত বেশি জাগিস না।
সোনিয়া মাথা নাড়ে।
এসময় মা হিমতাজ তেল দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেন ভাল করে। মায়ের ধারণা হিমতাজ তেলে মাথা ঠান্ডা থাকে। তেলের গন্ধটা বিরক্ত লাগে সোনিয়ার। কিন্তু মায়ের হাত বুলানিটা এত বেশি ভাল লাগে যে সেজন্য ওই বিরক্তির কথা মুখেই আনে না। মা মাথায় হাত বুলালেই শান্তি শান্তি একটা ভাব হয়।
যাওয়ার আগে আবার বলে যান, ঘুমিয়ে পড়িস।
মায়ের ঘুম হালকা। অল্প শব্দতেই জেগে যান। এখন যদি এসে দেখেন এত রাতেও জেগে আছে তাহলে জোর করে ঘুমাতে পাঠাবেন। কয়েকটা রচনা রিভাইস দেওয়া বাকী। রচনাগুলো রিভাইস দেওয়া শেষ হলেই ঘুমাতে যাওয়ার ইচ্ছা সোনিয়ার।
টেবিল ঘড়িটার দিকে তাকায় সোনিয়া। বেশ বড় আকৃতির। আচ্ছা পরীক্ষার আগের রাতে সময়গুলো এত দ্রুত কেটে যায় কেন! আরেকটু আস্তে গেলে কি সমস্যা হয়। মাঝে মাঝে এমন হয় যে সময়ই কাটতে চায় না। মনে হয় পৃথিবীর সমস্ত সময় যেন থমকে দাড়িয়েছে। আর এখন মনে হচ্ছে সময় বাতাসে গতিতে ছুটছে। সময়কে যদি নিয়ন্ত্রণে রাখার কোন উপায় আবিষ্কৃত হতো তাহলে বেশ হতো।
টেবিল ঘড়িটা ওর ফুফাতো ভাই মনির দিয়েছে গত জন্মদিনে। টেবিলে রাখা কলমদানিটাও মনিরের দেওয়া।
টেবিলে রাখার জিনিসপত্র দেয় কেন জিজ্ঞাসা করেছিল সোনিয়া। মনির বলে, যাতে তুই আমাকে ভাবিস। সময় দেখার প্রয়োজন হলেই তুই ঘড়িটার দিকে তাকাবি। আর আমার কথাও মনে পড়বে।
সোনিয়া না বুঝার ভান করে বলে, মানে?
সোনিয়ার বলার ভঙ্গি দেখে অপ্রস্তুত হয়ে যায় মনির। বয়সে সোনিয়ার চেয়ে তিন বছরের বড় হবে মনির। আমতা আমতা করে, আরে দুষ্টামি করলাম। তুই দুষ্টামিটাও বুঝিস না।
আর কোন কথা না বলে চলে যায় অন্য রুমে।
বিদ্যুত চলে যায়। চার্জ লাইট জ্বালিয়ে নেয় সোনিয়া। এসময় মায়ের রুম থেকে শব্দ আসে। তড়িঘড়ি করে লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ সময় যায়। মা-য়ের আসার লক্ষণ না দেখে আবার উঠে পড়তে বসে। আরো দুইটা রচনা দেখা যাবে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনাটা পড়তে গিয়ে বেশ হাসি আসে সোনিয়ার। ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনাটায় ইনিয়ে বিনিয়ে অনেক কথা লেখা হয়েছে। যে দেশকে ডিজিটাল করার কথা বলা হচ্ছে সেখানে দিনের অধের্কের বেশি সময়ই বিদ্যুতই থাকে না। তার ওপর ওই রচনাটা এমন সময় পড়তে হচ্ছে যখন বিদ্যুত নেই।
তার ওপর আরেক ঝামেলা আছে। এ রচনাটায় যেভাবে সরকারের পক্ষে লেখা হয়েছে তাতে করে যদি কোন বিরোধী দলীয় সমর্থক শিক্ষকের কাছে খাতাটা যায় তাহলে নির্ঘাত খারাপ কিছু অপেক্ষা করছে।
মা-বাবার খুব ইচ্ছা তাদের মেয়ে ডাক্তার হবে। সোনিয়ারও ইচ্ছা একজন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ হবে। ওর নানা যখন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলো তখন বেশ কিছু সময় হাসপাতালে নানার সাথে থাকতে হয়। একসময় ধরা পড়লো নানার ক্যান্সার। ধরা পড়ার পর বেশিদিন যায়ও নি। নানা একেবারে শুকিয়ে গেলেন। হাড্ডি সব গোণা যায় বাহির থেকে দেখেই। ওজন একটা বাচ্চা বয়সী ছেলের সমান হয়ে গেলো। কি কষ্টের এমন দৃশ্যগুলো দেখা। তখন থেকেই ও সিদ্ধান্ত নেয় ডাক্তার হবে।
কিন্তু ডাক্তারীতে ভর্তি হওয়া বেশ প্রতিযোগিতার। তার ওপর ভাল মেডিকেলে না টিকলে সেভাবে ভাল ডাক্তার হওয়াটা কঠিনই বটে। আর বেসরকারি পড়ার মত টাকা বাবা-মায়ের নাই। তাই খুব ভাল পরীক্ষা দিয়ে সরকারি মেডিকেলেই টিকতে হবে।
সোনিয়ার ইচ্ছা খুব নামকরা ডাক্তার হবে। দেশের একজন খ্যাতিমান বিশেষজ্ঞ রোগীর সাথে এভাবে সুন্দর করে ব্যবহার করেন, গল্প করেন। এটা যেন অন্যরা বলে শুধু এ কারণেই তার নামী ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছা। অনেক নামকরা ডাক্তার মুডি আচরণ করেন, কেমন গম্ভীর ভাব। মাঝে মাঝে কথা দিয়ে আক্রমণ করে বসেন রোগীকে। এই বিষয়টা খারাপ লাগে সোনিয়ার।
যখন নানার সাথে ছিল একদিন ডাক্তার আসলেন। তা পাশে সোনিয়াও ছিল। তখন নানা কি একটা বিষয় জানতে চাচ্ছিলেন। তখন ডাক্তার বলল, আপনি রোগী। আপনার এত কিছু জানার কি দরকার। যে ওষুধগুলো দিচ্ছি সেগুলো খেতে থাকেন। এ ব্যবহারটা একটুও ভাল লাগে নি সোনিয়ার।
সোনিয়া টেস্টে জিপিএ ৪.৬৮ উঠেছে। স্যার বলেছেন, টেস্টের চেয়ে ফাইনাল পরীক্ষার খাতা আরো সহজ ভাবে কাটা হয়। এমন করে লিখতে পারলে অবশ্যই জিপিএ ৫ আসবে। টেস্টের পর পড়া লেখায় আরো বেশি সিরিয়াস হয়ে উঠে সে। মোবাইলে ফেসবুক ইউজ করতো। একাউন্টটা ডিএক্টিব করে দেয়। মোবাইলটাও দিনের বেশির ভাগ সময় বন্ধ রাখে। যে করে হোক, ভাল ডাক্তার হতেই হবে। একজন নামকরা ডাক্তার।
প্রথম তিনটা পরীক্ষা ভালই হয়েছে। বাংলা নিয়ে ভয় ছিল। কিন্তু সেটা যতটুকু আশা করেছিল তার চেয়ে ভাল হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে পেরেছে। এজন্য মনির খুব সাহায্য করেছে। বাংলা দ্বিতীয় পত্রের এক গাট্টি নোট এনে দিয়েছিল। ঢাকার ভিকারুন্নিসা এক স্যারের।
এটা দেখে বেশ মজা করেছিল সোনিয়া। বলেছিল, মনির ভাই, তোমাকে ধন্যবাদ এতগুলো নোট যোগাড় করে দেয়ায়। আনতে তোমার নিশ্চয় অনেক কষ্ট হয়েছে।
: আরে নাহ নাহ। কষ্ট কিসের।
: কিন্তু আমার মাথায় একটা ব্যাপার ঢুকছে না!
: কোন ব্যাপার। আর এখন পড়ালেখা কর। অন্য ব্যাপার মাথায় ঢুকতে আসলেও ঢুকাইস না।
“আরে সেরকম ব্যাপার না। এইযে তুমি নোট আনলে। এটা তো নটরডেম কলেজের কোন টিচারের কিংবা আইডিয়াল কলেজের হতে পারত। ভিকারুন্নিসার টিচারের কাহিনী। আছে নাকি পরিচিত কেউ। কখনো তো বলো নি। তুমি ছেলে মানুষ মেয়েদের স্কুলের নোট এনে দিলে। সন্দেহ জনক নয় কি!” হাসতে হাসতে বলেছিল সোনিয়া।
: আরে তুই কি বলিস!! ভিকারুন্নিসার মেয়ে আমি পাবো কই! ওইরকম কোন মেয়ের সাথে আমি পরিচিত হবো কিভাবে! ঢাকার এক ফ্রেন্ডকে বলেছিলাম। সে যোগাড় করে দিয়েছে।
: সত্যি বলছো তো!!
: হা সত্যিই বলছি। ভিকারুন্নিসার কোন মেয়ের সাথে আমার পরিচয় নেই।
: হয়েছে লুকাতে হবে না। আমাকে বলতে পারো। আমি আন্টিকে গিয়ে বলবো না। ভয় নেই। বরং সাহায্য করতে পারবো।
তুই আসলে না.. এরপর আর কিছু বলে না মনির। একটু কেমন যেন অভিমানী সুর।
সোনিয়া বলে, আরে বাবা, রাগ করছো কেন! এম্নে দুষ্টামি করলাম। তোমার সাথে দেখি দুষ্টামিও করা যাবে না। একেবারে সিরিয়াস ভাবে নিয়ে বসো বিষয়টাকে।
মনির কিছু বলে না। মেয়েটাকে অদ্ভূত এক ভাল লাগে। কিন্তু কখনো ভাল লাগার ব্যাপারটা বলার সাহস হয় না যদি বাজে কেউ ভাবে এই ভয়ে।
+++++++++++++++++
পরীক্ষা কেন্দ্রটা এক বয়েজ কলেজে। সোনিয়া আর ওর বান্ধবী তৃপ্তি একই সাথে ফরম পূরণ করে। চতুর্থ বেঞ্চের ডান কোণায় পড়েছে সোনিয়ার সিট। আর তার পরবর্তী বেঞ্চের বাম কোণায় তৃপ্তির সিট।
সোনিয়া পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢুকে দেখে তৃপ্তি আগেই চলে এসেছে। তৃপ্তিকে দেখে মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করে, কিরে আজ দেখি আমার আগেই চলে এলি। প্রস্তুতি খুব ভাল নিশ্চয়।
: আরে নাহ, গত পরীক্ষায় আসার সময় তিন রাস্তার মোড়ে যানযটটা দীর্ঘ ছিল। তাই আজ তাড়াতাড়ি বের আসতে বললেন আম্মু। বলল, তাড়াহুড়া করে পরীক্ষা হলে গেলে সব ঠিকমত লেখা যায় না। অনেক পারা জিনিসও ভুল হয়ে যায়। আম্মুর কথায় বাধ্য মেয়ের মত আগেই চলে আসলাম।
ওর বলার ভঙ্গি দেখে হাসে সোনিয়া। সৃজনশীল প্রশ্ন হওয়ায় এত বেশি মুখস্ত বিদ্যার ব্যাপার নেই। তাই মোটামুটি শেষ মুহূর্তের দেখার ব্যাপারটা এখন অনেকখানিই কমে গেছে। অনেকটা টেনশন মুক্ত হয়ে পরীক্ষায় কি কি আসতে পারে তা নিয়ে দুইজনে কথা বলে যায়।
সোনিয়ার পাশে বসেছে একটা ছেলে। অন্য কলেজে। অতি ভদ্র টাইপের। কি গম্ভীর ভাবে লিখে যায়। তবে মাঝে মাঝে আড়চোখে দেখে সোনিয়াকে। চোখাচোখি হতেই চোখ সরিয়ে নেয়। ব্যাপারটা বেশ মজা লাগে। এখনকার সময়ে ইন্টার লেভেলে এমন লাজুক ছেলে কমই দেখা যায়। সোনিয়া একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। শেষ পরীক্ষার দিন এ ছেলের সাথে কথা বলবে। জিজ্ঞেস করবে, এভাবে লজ্জা পেতো কেন! এটা শুনে ছেলেটা নিশ্চয়ই অপ্রস্তুত হয়ে যাবে।
ঘন্টার শব্দ শোনা যায়। সোনিয়াদের হলরুমের কাছেই বিশাল আকৃতির ঘন্টাটা। একজন পিয়ন একটা বড় হাতুড়ি দিয়ে সেখানে আঘাত করেন। ঘন্টা দেওয়ার সময় কানে হাত দিয়ে দেয় সবাই। কানে হাত না দিলে কিছুক্ষণ বো বো করে কান।
প্রশ্নপত্র দেখে ঝটপট পুরা প্রশ্নে চোখ বুলিয়ে নেয় সোনিয়া। ওর স্বভাব হচ্ছে প্রশ্নের শেষ নাম্বার থেকে দেখে আসা। সবার পরে দেখে এক নাম্বার প্রশ্ন। বিসমিল্লাহ বলে লেখা শুরু করে দেয়। ভালই লাগছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনাটা এসেছে। এ রচনাটা বেশ ভাল করে নোট করে শিখেছে। এখন সরকার বিরোধী কোন সমর্থক শিক্ষকের হাতে না পড়লেই হলো।
হল পরিদর্শকের দায়িত্ব পড়া চিকন স্যারটাকে বেশ কড়া মনে হচ্ছে। প্রতিটি কথা কেমন চিবিয়ে চিবিয়ে বলেন। এরিমধ্যে দুইবার তার মোবাইল রিং বেজে উঠেছে। একটা গর্জন টাইপের রিং। শুনলেই বিরক্ত লাগে।
পরীক্ষার্থীদের মোবাইল ব্যবহার নিষেধ। কিন্তু যেসব শিক্ষক হলে দায়িত্ব পালন করেন তাদের মোবাইল ঠিকই চালু থাকে। এতে যে পরীক্ষার্থীদের ডিস্টাব হয় এটা কবে বুঝবে শিক্ষাবোর্ড।
তৃপ্তি পেছন থেকে ডাক দেয়। কয়েকটা শূন্যস্থান পূরণ জিজ্ঞাসা করে। সোনিয়া বলে দেয় ফিস ফিস করে।
ব্যাপারটা চোখে পড়ে ওই চিকন স্যারটার। সে হুংকার ছাড়ে। এই মেয়ে এদিকে এসো। খাতা নিয়ে এসো। পরীক্ষা হলে পরীক্ষা দিতে আসছো কথা বলতে নয়।
একপ্রকার জোর করেই সোনিয়ার খাতা নিয়ে স্যারটা। পরীক্ষার তখনও চল্লিশ মিনিট বাকী। সোনিয়ার চোখে পানি চলে আসে। টপ টপ করে পানি পড়ছে। অনেক অনুনয় করে কিন্তু স্যারটা খাতা ফেরত দেন না।
অনুনয়ের উত্তরে স্যার কঠিন সব কথা শোনান।
২৫ নাম্বারের মত আনসার করা হয় না সোনিয়ার। নিজের ওপর কেমন যেন বিরক্ত লাগে। বুঝে ফেলে কোন মতেই বিষয়টাতে এ প্লাস পাওয়া হবে না। মেডিকেলে টিকা যাবে না এ রেজাল্ট নিয়ে।
রাতের বেলায় কি যেন হয়। হঠাৎ করে গলায় ওড়না পেচিয়ে ফ্যানের সাথে ঝুলে পড়ে সোনিয়া।
জাতীয় দৈনিকগুলোর শিরোনাম,পরীক্ষার খাতা নিয়ে ফেলায় পরীক্ষার্থীর আত্মহত্যা।
+++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মনির জেলে। ওর বিরুদ্ধে খুনের মামলা হয়েছে। যে শিক্ষক সোনিয়া খাতা নিয়ে আর ফেরত দেয় নাই তার নাম তাহের।
সোনিয়ার ব্যাপারটা জানতে পেরে সোনিয়াদের বাড়িতে যায় মনিরের মা-বাবাও বোন। কান্নার রোল উঠে সবদিকে। বার বার মূচ্ছা যান সোনিয়ার মা। কিন্তু মনির লাশ দেখতে না গিয়ে সরাসরি যায় তাহের স্যারের বাসায়। সাথে নিয়ে যায় একটা ছুরি। গিয়েই কিছু বুঝতে না দিয়ে তাহের স্যারকে কুপাতে থাকে। ওই শিক্ষকের চিৎকারে স্থানীয় জনতা এসে মনিরকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। তাহের স্যারকে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়।
আদালত মনিরের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন। পরিবারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করা হয়েছে জীবন ভিক্ষা চেয়ে।
এদেশে ক্ষমতাসীন দলের সদস্যদের মৃত্যুদণ্ড রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মাফ করার ঘটনা শুনতে পাওয়া যায়। কিন্তু মনির যে রাজনীতি করে না, তার বাবাও রাজনৈতিক কোন দলের নেতা নয়। তাই মনিরের ফাঁসির আদেশ রাষ্ট্রপতি হয়ত ক্ষমা করবেন না।
ওই দড়িই অপেক্ষা করছে অভিমানী বালক মনিরের জন্য। মনিরের দু:খ নাই। ক্ষমা নিয়ে তার মাথা ব্যাথা নেই। তার মনে হতে থাকে সোনিয়া ডাকছে। সোনিয়ার সাথে নিশ্চয় শীঘ্রই দেখা হবে। # ক্ষমা করা হবে না (গল্প)
: সোনিয়া, তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়িস। ঘুম ভাল হলে মাথা ঠান্ডা থাকে। ফাইনাল পরীক্ষা, মাথা ঠিক না থাকলে উল্টা পাল্টা লিখে আসবি। রাত বেশি জাগিস না।
সোনিয়া মাথা নাড়ে।
এসময় মা হিমতাজ তেল দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেন ভাল করে। মায়ের ধারণা হিমতাজ তেলে মাথা ঠান্ডা থাকে। তেলের গন্ধটা বিরক্ত লাগে সোনিয়ার। কিন্তু মায়ের হাত বুলানিটা এত বেশি ভাল লাগে যে সেজন্য ওই বিরক্তির কথা মুখেই আনে না। মা মাথায় হাত বুলালেই শান্তি শান্তি একটা ভাব হয়।
যাওয়ার আগে আবার বলে যান, ঘুমিয়ে পড়িস।
মায়ের ঘুম হালকা। অল্প শব্দতেই জেগে যান। এখন যদি এসে দেখেন এত রাতেও জেগে আছে তাহলে জোর করে ঘুমাতে পাঠাবেন। কয়েকটা রচনা রিভাইস দেওয়া বাকী। রচনাগুলো রিভাইস দেওয়া শেষ হলেই ঘুমাতে যাওয়ার ইচ্ছা সোনিয়ার।
টেবিল ঘড়িটার দিকে তাকায় সোনিয়া। বেশ বড় আকৃতির। আচ্ছা পরীক্ষার আগের রাতে সময়গুলো এত দ্রুত কেটে যায় কেন! আরেকটু আস্তে গেলে কি সমস্যা হয়। মাঝে মাঝে এমন হয় যে সময়ই কাটতে চায় না। মনে হয় পৃথিবীর সমস্ত সময় যেন থমকে দাড়িয়েছে। আর এখন মনে হচ্ছে সময় বাতাসে গতিতে ছুটছে। সময়কে যদি নিয়ন্ত্রণে রাখার কোন উপায় আবিষ্কৃত হতো তাহলে বেশ হতো।
টেবিল ঘড়িটা ওর ফুফাতো ভাই মনির দিয়েছে গত জন্মদিনে। টেবিলে রাখা কলমদানিটাও মনিরের দেওয়া।
টেবিলে রাখার জিনিসপত্র দেয় কেন জিজ্ঞাসা করেছিল সোনিয়া। মনির বলে, যাতে তুই আমাকে ভাবিস। সময় দেখার প্রয়োজন হলেই তুই ঘড়িটার দিকে তাকাবি। আর আমার কথাও মনে পড়বে।
সোনিয়া না বুঝার ভান করে বলে, মানে?
সোনিয়ার বলার ভঙ্গি দেখে অপ্রস্তুত হয়ে যায় মনির। বয়সে সোনিয়ার চেয়ে তিন বছরের বড় হবে মনির। আমতা আমতা করে, আরে দুষ্টামি করলাম। তুই দুষ্টামিটাও বুঝিস না।
আর কোন কথা না বলে চলে যায় অন্য রুমে।
বিদ্যুত চলে যায়। চার্জ লাইট জ্বালিয়ে নেয় সোনিয়া। এসময় মায়ের রুম থেকে শব্দ আসে। তড়িঘড়ি করে লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ সময় যায়। মা-য়ের আসার লক্ষণ না দেখে আবার উঠে পড়তে বসে। আরো দুইটা রচনা দেখা যাবে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনাটা পড়তে গিয়ে বেশ হাসি আসে সোনিয়ার। ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনাটায় ইনিয়ে বিনিয়ে অনেক কথা লেখা হয়েছে। যে দেশকে ডিজিটাল করার কথা বলা হচ্ছে সেখানে দিনের অধের্কের বেশি সময়ই বিদ্যুতই থাকে না। তার ওপর ওই রচনাটা এমন সময় পড়তে হচ্ছে যখন বিদ্যুত নেই।
তার ওপর আরেক ঝামেলা আছে। এ রচনাটায় যেভাবে সরকারের পক্ষে লেখা হয়েছে তাতে করে যদি কোন বিরোধী দলীয় সমর্থক শিক্ষকের কাছে খাতাটা যায় তাহলে নির্ঘাত খারাপ কিছু অপেক্ষা করছে।
মা-বাবার খুব ইচ্ছা তাদের মেয়ে ডাক্তার হবে। সোনিয়ারও ইচ্ছা একজন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ হবে। ওর নানা যখন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলো তখন বেশ কিছু সময় হাসপাতালে নানার সাথে থাকতে হয়। একসময় ধরা পড়লো নানার ক্যান্সার। ধরা পড়ার পর বেশিদিন যায়ও নি। নানা একেবারে শুকিয়ে গেলেন। হাড্ডি সব গোণা যায় বাহির থেকে দেখেই। ওজন একটা বাচ্চা বয়সী ছেলের সমান হয়ে গেলো। কি কষ্টের এমন দৃশ্যগুলো দেখা। তখন থেকেই ও সিদ্ধান্ত নেয় ডাক্তার হবে।
কিন্তু ডাক্তারীতে ভর্তি হওয়া বেশ প্রতিযোগিতার। তার ওপর ভাল মেডিকেলে না টিকলে সেভাবে ভাল ডাক্তার হওয়াটা কঠিনই বটে। আর বেসরকারি পড়ার মত টাকা বাবা-মায়ের নাই। তাই খুব ভাল পরীক্ষা দিয়ে সরকারি মেডিকেলেই টিকতে হবে।
সোনিয়ার ইচ্ছা খুব নামকরা ডাক্তার হবে। দেশের একজন খ্যাতিমান বিশেষজ্ঞ রোগীর সাথে এভাবে সুন্দর করে ব্যবহার করেন, গল্প করেন। এটা যেন অন্যরা বলে শুধু এ কারণেই তার নামী ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছা। অনেক নামকরা ডাক্তার মুডি আচরণ করেন, কেমন গম্ভীর ভাব। মাঝে মাঝে কথা দিয়ে আক্রমণ করে বসেন রোগীকে। এই বিষয়টা খারাপ লাগে সোনিয়ার।
যখন নানার সাথে ছিল একদিন ডাক্তার আসলেন। তা পাশে সোনিয়াও ছিল। তখন নানা কি একটা বিষয় জানতে চাচ্ছিলেন। তখন ডাক্তার বলল, আপনি রোগী। আপনার এত কিছু জানার কি দরকার। যে ওষুধগুলো দিচ্ছি সেগুলো খেতে থাকেন। এ ব্যবহারটা একটুও ভাল লাগে নি সোনিয়ার।
সোনিয়া টেস্টে জিপিএ ৪.৬৮ উঠেছে। স্যার বলেছেন, টেস্টের চেয়ে ফাইনাল পরীক্ষার খাতা আরো সহজ ভাবে কাটা হয়। এমন করে লিখতে পারলে অবশ্যই জিপিএ ৫ আসবে। টেস্টের পর পড়া লেখায় আরো বেশি সিরিয়াস হয়ে উঠে সে। মোবাইলে ফেসবুক ইউজ করতো। একাউন্টটা ডিএক্টিব করে দেয়। মোবাইলটাও দিনের বেশির ভাগ সময় বন্ধ রাখে। যে করে হোক, ভাল ডাক্তার হতেই হবে। একজন নামকরা ডাক্তার।
প্রথম তিনটা পরীক্ষা ভালই হয়েছে। বাংলা নিয়ে ভয় ছিল। কিন্তু সেটা যতটুকু আশা করেছিল তার চেয়ে ভাল হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে পেরেছে। এজন্য মনির খুব সাহায্য করেছে। বাংলা দ্বিতীয় পত্রের এক গাট্টি নোট এনে দিয়েছিল। ঢাকার ভিকারুন্নিসা এক স্যারের।
এটা দেখে বেশ মজা করেছিল সোনিয়া। বলেছিল, মনির ভাই, তোমাকে ধন্যবাদ এতগুলো নোট যোগাড় করে দেয়ায়। আনতে তোমার নিশ্চয় অনেক কষ্ট হয়েছে।
: আরে নাহ নাহ। কষ্ট কিসের।
: কিন্তু আমার মাথায় একটা ব্যাপার ঢুকছে না!
: কোন ব্যাপার। আর এখন পড়ালেখা কর। অন্য ব্যাপার মাথায় ঢুকতে আসলেও ঢুকাইস না।
“আরে সেরকম ব্যাপার না। এইযে তুমি নোট আনলে। এটা তো নটরডেম কলেজের কোন টিচারের কিংবা আইডিয়াল কলেজের হতে পারত। ভিকারুন্নিসার টিচারের কাহিনী। আছে নাকি পরিচিত কেউ। কখনো তো বলো নি। তুমি ছেলে মানুষ মেয়েদের স্কুলের নোট এনে দিলে। সন্দেহ জনক নয় কি!” হাসতে হাসতে বলেছিল সোনিয়া।
: আরে তুই কি বলিস!! ভিকারুন্নিসার মেয়ে আমি পাবো কই! ওইরকম কোন মেয়ের সাথে আমি পরিচিত হবো কিভাবে! ঢাকার এক ফ্রেন্ডকে বলেছিলাম। সে যোগাড় করে দিয়েছে।
: সত্যি বলছো তো!!
: হা সত্যিই বলছি। ভিকারুন্নিসার কোন মেয়ের সাথে আমার পরিচয় নেই।
: হয়েছে লুকাতে হবে না। আমাকে বলতে পারো। আমি আন্টিকে গিয়ে বলবো না। ভয় নেই। বরং সাহায্য করতে পারবো।
তুই আসলে না.. এরপর আর কিছু বলে না মনির। একটু কেমন যেন অভিমানী সুর।
সোনিয়া বলে, আরে বাবা, রাগ করছো কেন! এম্নে দুষ্টামি করলাম। তোমার সাথে দেখি দুষ্টামিও করা যাবে না। একেবারে সিরিয়াস ভাবে নিয়ে বসো বিষয়টাকে।
মনির কিছু বলে না। মেয়েটাকে অদ্ভূত এক ভাল লাগে। কিন্তু কখনো ভাল লাগার ব্যাপারটা বলার সাহস হয় না যদি বাজে কেউ ভাবে এই ভয়ে।
+++++++++++++++++
পরীক্ষা কেন্দ্রটা এক বয়েজ কলেজে। সোনিয়া আর ওর বান্ধবী তৃপ্তি একই সাথে ফরম পূরণ করে। চতুর্থ বেঞ্চের ডান কোণায় পড়েছে সোনিয়ার সিট। আর তার পরবর্তী বেঞ্চের বাম কোণায় তৃপ্তির সিট।
সোনিয়া পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢুকে দেখে তৃপ্তি আগেই চলে এসেছে। তৃপ্তিকে দেখে মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করে, কিরে আজ দেখি আমার আগেই চলে এলি। প্রস্তুতি খুব ভাল নিশ্চয়।
: আরে নাহ, গত পরীক্ষায় আসার সময় তিন রাস্তার মোড়ে যানযটটা দীর্ঘ ছিল। তাই আজ তাড়াতাড়ি বের আসতে বললেন আম্মু। বলল, তাড়াহুড়া করে পরীক্ষা হলে গেলে সব ঠিকমত লেখা যায় না। অনেক পারা জিনিসও ভুল হয়ে যায়। আম্মুর কথায় বাধ্য মেয়ের মত আগেই চলে আসলাম।
ওর বলার ভঙ্গি দেখে হাসে সোনিয়া। সৃজনশীল প্রশ্ন হওয়ায় এত বেশি মুখস্ত বিদ্যার ব্যাপার নেই। তাই মোটামুটি শেষ মুহূর্তের দেখার ব্যাপারটা এখন অনেকখানিই কমে গেছে। অনেকটা টেনশন মুক্ত হয়ে পরীক্ষায় কি কি আসতে পারে তা নিয়ে দুইজনে কথা বলে যায়।
সোনিয়ার পাশে বসেছে একটা ছেলে। অন্য কলেজে। অতি ভদ্র টাইপের। কি গম্ভীর ভাবে লিখে যায়। তবে মাঝে মাঝে আড়চোখে দেখে সোনিয়াকে। চোখাচোখি হতেই চোখ সরিয়ে নেয়। ব্যাপারটা বেশ মজা লাগে। এখনকার সময়ে ইন্টার লেভেলে এমন লাজুক ছেলে কমই দেখা যায়। সোনিয়া একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। শেষ পরীক্ষার দিন এ ছেলের সাথে কথা বলবে। জিজ্ঞেস করবে, এভাবে লজ্জা পেতো কেন! এটা শুনে ছেলেটা নিশ্চয়ই অপ্রস্তুত হয়ে যাবে।
ঘন্টার শব্দ শোনা যায়। সোনিয়াদের হলরুমের কাছেই বিশাল আকৃতির ঘন্টাটা। একজন পিয়ন একটা বড় হাতুড়ি দিয়ে সেখানে আঘাত করেন। ঘন্টা দেওয়ার সময় কানে হাত দিয়ে দেয় সবাই। কানে হাত না দিলে কিছুক্ষণ বো বো করে কান।
প্রশ্নপত্র দেখে ঝটপট পুরা প্রশ্নে চোখ বুলিয়ে নেয় সোনিয়া। ওর স্বভাব হচ্ছে প্রশ্নের শেষ নাম্বার থেকে দেখে আসা। সবার পরে দেখে এক নাম্বার প্রশ্ন। বিসমিল্লাহ বলে লেখা শুরু করে দেয়। ভালই লাগছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনাটা এসেছে। এ রচনাটা বেশ ভাল করে নোট করে শিখেছে। এখন সরকার বিরোধী কোন সমর্থক শিক্ষকের হাতে না পড়লেই হলো।
হল পরিদর্শকের দায়িত্ব পড়া চিকন স্যারটাকে বেশ কড়া মনে হচ্ছে। প্রতিটি কথা কেমন চিবিয়ে চিবিয়ে বলেন। এরিমধ্যে দুইবার তার মোবাইল রিং বেজে উঠেছে। একটা গর্জন টাইপের রিং। শুনলেই বিরক্ত লাগে।
পরীক্ষার্থীদের মোবাইল ব্যবহার নিষেধ। কিন্তু যেসব শিক্ষক হলে দায়িত্ব পালন করেন তাদের মোবাইল ঠিকই চালু থাকে। এতে যে পরীক্ষার্থীদের ডিস্টাব হয় এটা কবে বুঝবে শিক্ষাবোর্ড।
তৃপ্তি পেছন থেকে ডাক দেয়। কয়েকটা শূন্যস্থান পূরণ জিজ্ঞাসা করে। সোনিয়া বলে দেয় ফিস ফিস করে।
ব্যাপারটা চোখে পড়ে ওই চিকন স্যারটার। সে হুংকার ছাড়ে। এই মেয়ে এদিকে এসো। খাতা নিয়ে এসো। পরীক্ষা হলে পরীক্ষা দিতে আসছো কথা বলতে নয়।
একপ্রকার জোর করেই সোনিয়ার খাতা নিয়ে স্যারটা। পরীক্ষার তখনও চল্লিশ মিনিট বাকী। সোনিয়ার চোখে পানি চলে আসে। টপ টপ করে পানি পড়ছে। অনেক অনুনয় করে কিন্তু স্যারটা খাতা ফেরত দেন না।
অনুনয়ের উত্তরে স্যার কঠিন সব কথা শোনান।
২৫ নাম্বারের মত আনসার করা হয় না সোনিয়ার। নিজের ওপর কেমন যেন বিরক্ত লাগে। বুঝে ফেলে কোন মতেই বিষয়টাতে এ প্লাস পাওয়া হবে না। মেডিকেলে টিকা যাবে না এ রেজাল্ট নিয়ে।
রাতের বেলায় কি যেন হয়। হঠাৎ করে গলায় ওড়না পেচিয়ে ফ্যানের সাথে ঝুলে পড়ে সোনিয়া।
জাতীয় দৈনিকগুলোর শিরোনাম,পরীক্ষার খাতা নিয়ে ফেলায় পরীক্ষার্থীর আত্মহত্যা।
+++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মনির জেলে। ওর বিরুদ্ধে খুনের মামলা হয়েছে। যে শিক্ষক সোনিয়া খাতা নিয়ে আর ফেরত দেয় নাই তার নাম তাহের।
সোনিয়ার ব্যাপারটা জানতে পেরে সোনিয়াদের বাড়িতে যায় মনিরের মা-বাবাও বোন। কান্নার রোল উঠে সবদিকে। বার বার মূচ্ছা যান সোনিয়ার মা। কিন্তু মনির লাশ দেখতে না গিয়ে সরাসরি যায় তাহের স্যারের বাসায়। সাথে নিয়ে যায় একটা ছুরি। গিয়েই কিছু বুঝতে না দিয়ে তাহের স্যারকে কুপাতে থাকে। ওই শিক্ষকের চিৎকারে স্থানীয় জনতা এসে মনিরকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। তাহের স্যারকে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়।
আদালত মনিরের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন। পরিবারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করা হয়েছে জীবন ভিক্ষা চেয়ে।
এদেশে ক্ষমতাসীন দলের সদস্যদের মৃত্যুদণ্ড রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মাফ করার ঘটনা শুনতে পাওয়া যায়। কিন্তু মনির যে রাজনীতি করে না, তার বাবাও রাজনৈতিক কোন দলের নেতা নয়। তাই মনিরের ফাঁসির আদেশ রাষ্ট্রপতি হয়ত ক্ষমা করবেন না।
ওই দড়িই অপেক্ষা করছে অভিমানী বালক মনিরের জন্য। মনিরের দু:খ নাই। ক্ষমা নিয়ে তার মাথা ব্যাথা নেই। তার মনে হতে থাকে সোনিয়া ডাকছে। সোনিয়ার সাথে নিশ্চয় শীঘ্রই দেখা হবে। # ক্ষমা করা হবে না (গল্প)