সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

রংচটা জীবন( গল্প )

ফ্যানের ভয়ংকর শব্দ। বাতাস আসছে সামান্যই। যে বাতাস আসছে তাতেও কেমন গরম একটা ভাব। গরম না কমিয়ে ফ্যান যেন আরো গরম বাড়াচ্ছে। তারপরও মনে শান্তি। ফ্যান ঘুরছে। কিছুটা ঠান্ডা কল্পনায় হলেও অনুভব করা যায়। সেটাও কম কিসে।

টেবিলের উপর একটা ম্যাগাজিন রাখা। বিদেশী ম্যাগাজিন। বেশ কিছু দৃষ্টিকুটু ছবি আছে। গল্পগুলোও বড়দের। খোরশেদ এবার অনার্স শেষ বর্ষে। যথেষ্ট বড় হয়েছে। তারপরও ওর কাছে মনে হয় বিয়ের আগে এসব গল্প পড়া ঠিক না। কিন্তু মনে হয় ঐ টুকুই। বুদ্ধিটা দিয়েছে মনির। ওরা একটা ইংলিশ কোর্সে ভর্তি হয়েছে। সেখানে একটা কথা-ই বার বার বলা হয়, বেশি বেশি ইংরেজী পড়তে হবে। ইংরেজী পত্রিকা পড়তে হবে।


কিন্তু বললেই হলো? বিরক্তিকর পত্রিকা কে পড়তে যাবে? সেজন্য ইংরেজী পড়া হতো না।

তখন মুনীর বলল, আমি এখন রাতে শোওয়ার আগে ইংরেজী পড়ি অনেকক্ষণ। ভালোই লাগে।

তা শুনে একটু অবাক হয় খোরশেদ। মুনীর যে ফাঁকিবাজ। ও ইংরেজী কোর্সটাতে ভর্তি হতেই চায় নাই। এক প্রকার জোর করেই ভর্তি করিয়েছে সেখানে। সে হঠাৎ ইংরেজী পঠনে এত আগ্রহী হয়ে উঠবে তা ঠিক বিশ্বাসযোগ্য না।

-আমি ঘুমানোর আগে বেশ কিছুক্ষণ ইংরেজী পড়ি এটা তুই বিশ্বাস করছিস না, তাই না?

খোরশেদ চোখ বড় বড় করে বলে, যা বিশ্বাস করার জিনিষ না তা বিশ্বাস করি কিভাবে? তুই ইংরেজীর কোর্সে ভর্তি হওয়ার ভয়ে আমার কাছ থেকেই এক সপ্তাহ পালিয়ে ছিলি। আর তুই নিজে নিজে ইংরেজী পড়বি? এটা আমাকে বিশ্বাস করতে হবে?

-হা হা হা। দোস্ত কাহিনী তো এই জায়গাতেই। সেদিন লতিফ স্যার বললেন না, ইংরেজী ম্যাগাজিন পড়তে। তা এক পুরাণ লাইব্রেরীতে অন্য বই নিতে গিয়ে দেখি বেশ কিছু পুরাণ ম্যাগাজিন আছে। কিছু সেরকম ছবি। তা অল্প দামে কিনে নিয়ে এলাম। তা বাসায় এনে পড়ছি। সাথে গল্প গুলো যে এত মজার। দোস্ত যদি পড়িস হেভি আরাম পাবি। তা প্রথমে ডিকশনারী নিয়ে বসলাম। পড়ি আর মজা পাই। আবার পড়ি। আবার মজা।
বলেই বিকট হাসে।

-ও এ ব্যাপার। তুই নোংরা গল্প গুলো পড়ার জন্য ইংরেজী পড়িস। ব্যাপার তাইলে এখানেই।

-হুম, মজাও পাচ্ছি। সাথে ইংরেজী শব্দ ভান্ডারও বাড়ছে। দেখছিস আমার কি বুদ্ধি?

-হা মহা কঠিন বুদ্ধি। বাজে বাজে কাহিনী পড়ছিস। তোর চরিত্র যে কই যাবে তা ভাবছি। ঐ সব কাহিনী গুলো যে পড়ছিস রাতে মাথা ঠিক থাকে তো??

মুনীর কিছু বলে না। হাসে মুখ বড় করে।

তা সেই দিয়ে গেছে ইংলিশ ম্যাগাজিনটা। খোলে সেটা পড়ার চেষ্টা করছে টেবিলে বসে। হাতে ডিকশনারী। গল্পটা বড়দের। একটু পর পর ডিকশনারী দেখতে হয়। গল্পটা অতি বাজে। এরকম গল্পও হতে পারে? কি বিশ্রী ? কি কুৎসিত।

ইচ্ছা করছে বাদ দিতে। কিন্তু মন সায় দিচ্ছে না। পুরা গল্পটা যেন পড়তেই হবে। আচ্ছা যুথি যদি জানে এই টাইপের গল্প পড়ে কি খারাপই না ভাববে।

যুথি অনেক রক্ষণশীল। সব সময় মাথায় ওড়না থাকে। ওর মুখটাই শুধু দেখা যায়। ওড়না পড়ে থাকে বিধায় ওকে আরো অনেক বেশি সুন্দর দেখায় কি স্নিগ্ধ মুখ। শান্ত একটা ভাব। কথা বলে থেমে থেমে। প্রতিটি কথা বার বার শুনতে ইচ্ছা করে। একই ডিপার্টমেন্টেই পড়ে যুথি।

হঠাৎ করে বাতি নিভে যায়। ফ্যানের ঘট ঘট শব্দ কমে আসে। কিছুক্ষণের মধ্যে তা থেমে যায়। চারদিকে নিস্তব্ধ নীরবতা। লোডশেডিং।

ধূর শালার কারেন্ট। অল্পক্ষণ পর পর যেন যেতেই হবে। অনেক গালি দিতে ইচ্ছা করে খোরশেদের। কিন্তু গালি দিয়ে কি হবে। বিদ্যুত তো আর গালি শুনছে না। কিছু জ্বালাতে ইচ্ছা করছে না । জানালা দিয়ে বাতাসের একটা ঠান্ডা ভাব ঢুকল। বিছানায় শুয়ে পড়ল খোরশেদ। একদিকে ভালোই হলো বাজে কাহিনীটা আর পড়তে হচ্ছে না। বিদ্যুত থাকলে সেটা শেষ পর্যন্ত পড়ে তবেই উঠত।

ম্যাগাজিনটা আগামী কালই মনিরকে ফেরত দেবে চিন্তা করে খোরশেদ। এরকম কাহিনী পড়লে বাজে চিন্তা ভর করে মাথায়। খুব খারাপ। যুথির মত একটা মেয়ের সাথে সম্পর্ক আছে। ওর দিকে চেয়ে হলেও কোন বাজে চিন্তা মাথায় ঢুকতে দিতে চায় না খোরশেদ। কিন্তু তারপরও আসছে। নিষিদ্ধ জিনিষের প্রতি টান যে কতটা বুঝতে পারল খোরশেদ। বাজে ইচ্ছা করছে। কিন্তু পাত্তা দিল না খোরশেদ। শুয়ে থাকলে এরকম চিন্তা হবেই।

তাই গেঞ্জিটা গায়ে জড়িয়ে বাহির হয়। দরজায় তালা মারে। মোড়ের মাথায় একটা চায়ের দোকান আছে। পর পর দুই কাপ চা খায়। বন্ধু কেউ থাকলে আড্ডা মারা যেত।

যুথির সাথে ভীষণ কথা বলতে ইচ্ছা করছে। ইচ্ছে করলেই অনেক সহজ। মোবাইল মানুষকে অনেক কাছে এনে দিয়েছে। যতদূরে থাকুক না কেন মুহূর্তে পাওয়া যায়। অথচ যুথি এই শহরেই আছে। ইচ্ছা করলেই কথা বলা যাবে না। ওর ফ্যামিলি ওকে পার্সোনাল মোবাইল দেয় নাই। বাসায় টি এন্ডটি ফোন আছে ওদের।

একবার ফোন করেছিল। ওর ছোট ভাই ধরে সালাম দেয়। পুরুষ গলা দেখে সাথে সাথে কেটে দেয় খোরশেদ। পরে খোরশেদ যুথিকে ব্যাপারটা বলে। শুনে যুথী অনেক রাগ করে। তুমি আর কক্ষণো আমাদের বাসায় ফোন দিবা না।

তবে ইদানিং যুথী কম কথা বলে। আগের মত সঙ্গ দেয় না। ওর বান্ধবী একটা বলল, ওর ফ্যামিলি থেকে নাকি বিয়ের চাপ দেওয়া হচ্ছে। যুথীকে ছাড়া অন্য কোন মেয়েকে বিয়ে করার কথা কল্পনাও করতে পারে না খোরশেদ। মাঝে মাঝে মনে হয় যুথীকে না পেলে পাগল হয়ে যাবে।

বিয়ের ব্যাপারে জানতে চেয়েছিল খোরশেদ, ললিতা বলল তোমার বিয়ের নাকি কথা বার্তা চলছে।

আরে নাহ। হেসে উড়িয়ে দেয় যুথী।

সে হাসি কি সত্যিই হাসি? নাকি মিথ্যাকে আড়াল করার হাসি বুঝতে পারে না খোরশেদ।

তবে আবার জিজ্ঞেস করতেও লজ্জা লাগে। যদি যুথী মাইন্ড করে বসে। তাই জানা হয় না। তবে খোরশেদের ভাল লাগে যুথীর বিয়ে নিয়ে চিন্তা করতে গিয়ে মাথা থেকে বাজে চিন্তা গুলো উদাও হয়ে গেছে। এবার বাসায় গিয়ে শান্তিতে ঘুমানো যাবে।