সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

জলরঙ্গে আঁকা জলছাপ ( গল্প )

-এই শুনছো?
-হুম।
-হুম কি? বলো জ্বী।
-জ্বী।
-এভাবে বলছো কেন?
কিভাবে বলছি?
এই প্রশ্নের উত্তরে প্রশ্ন করবে না। উত্তর দিবে।
-কি উত্তর দিবো?
-আশ্চর্য ব্যাপারতো আবার প্রশ্ন করছো?
শাকিল চুপ হয়ে যায়। কথা বলে না। শোঁ শোঁ বাতাসের শব্দ শোনা যায়।
-চুপ করে আছো কেন?
-তুমিই তো প্রশ্ন করতে মানা করছো। কিছু বললে বলছো প্রশ্ন করছি। তাই চুপ রইলাম। ঠিক করছি না?
-আরে আবার দেখি প্রশ্ন করে। কি আজব ছেলেরে বাবা। দাড়াও তোমার নাম আজ থেকে প্রশ্ন বাবা।
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে যুথি। কথা বলছে না দেখে বলে, তুমি হাসলা না যে? তোমাকে এত সুন্দর একটা নাম গিফট দিলাম। তারপরও হাসছো না। কাহিনী কি?
-জানি না।

-না জানলে সমস্যা নেই। আমি তো ভয়ে ছিলাম। এখন বুঝি আবার প্রশ্ন করে বসতে কি কাহিনী হবে। ভাগ্যিস করো নাই। তুমি না অনেক ভাল ছেলে।
মাথা নাড়ে শাকিল। যদিও ফোনে কথা বলার সময় অন্য পাশে কি ভঙ্গি করা হয়েছে তা বুঝা যায় না। যুথিও বুঝে না।
-তোমাকে ভাল ছেলে বলছি আমাকে থ্যাংকস দাও। সামান্য সৌজন্যতাবোধও বুঝি জানো না?
-ঠিক আছে। থ্যাংকস।
-ঠিক আছে থ্যাংকস না। শুধু বলো থ্যাংকস। এমন ভাবে বলবে যাতে মনে হয় মন থেকে বলছো।
-থ্যাংকস।
-গুড। আসলেই তুমি লক্ষী ছেলে। সামনে থাকলে দেখতে ঠিকই তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতাম।
-আমি কি ছোট বাচ্চা নাকি? আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিবে কেন?
-আরে এই ছেলে বলে কি? প্রিয়জনকে তো বাচ্চা মতই আদর করা যায়।
-এত আদর করতে চেয়ো না। ফরিদ ভাই যদি জানতে পারে তবে কঠিন অবস্থা হবে কিন্তু।
-আচ্ছা আমি যদি ফরিদকে বিয়ে না করি?
-মানে?
-আবার প্রশ্ন। আমি জানতে চাচ্ছি ফরিদকে আমি যদি বিয়ে না করি?
-হুম তাহলে কি হবে?
-সেটাই তো জানতে চাচ্ছি।
-অপ্রয়োজনীয় কিছু জানতে চেয়ো না। দুইদিন পর বিয়ের কার্ড ছাপা হবে আর এখন বলছো যদি বিয়ে না করি। প্রথম লস পড়বে ঐ প্রেস। কিছু টাকা পেত। বিয়ের কার্ড না ছাপালে ওর কিছু লস হবে আর কি। হেসে উঠে শাকিল।
যুথি হতাশ হয়। শাকিল সিরিয়াস বিষয়কে এভাবে রসিকতায় নেবে ভাবতে পারে নি। তাহলে এই কথাটাই উঠাতো না। কানে মোবাইল নিয়ে বসে থাকে।
এই শাকিলের সাথে পরিচয় ইংরেজী কোর্স করার সময়। ব্রিটিশ কাউন্সিলে ভর্তি হয়েছিল। সেখান থেকে কথা। অনেক ভাল বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। শাকিল ছেলেটা কেমন বোকা বোকার মত থাকে। অথচ অনেক ভাল।

চুপ করে আছে দেখে শাকিল বলে, শুনো তুমি আমাকে তুই করে বললে ভাল হয়। নাহলে ব্যাপারটা অনেকের চোখে লাগতে পারে। আমরা তো ভাল বন্ধু তুই করে বলতেই পারি।
যুথি বলে, তুমি ইচ্ছে করলে তুই করে বলতে পারো। তবে আমি পারবো না। আচ্ছা রাখি। অনেক বিরক্ত করলাম।

রাগ করেছে। যুথি জেদী প্রকৃতির। রাগ করলে বেশ কিছুদিন ভোগায়। কল ধরবে না জেনেও কল দেয় শাকিল। রাগ করে ফোন রেখে দিলে যুথি আর সেদিন ফোন ধরে না। কিন্তু আজ অবাক করে দিয়ে ফোন রিসিভ করে যুথি।
-হুম বলো।
-রাগ করছো?
-নাহ, রাগ করবো কার সাথে? যার সাথে রাগ করলে নিজের অনুভূতি গুলো আলোকিত করে দিবে তার সাথে রাগ করে লাভ আছে। কিন্তু যার তার সাথে রাগ করবো কেন?
-আমি কি একেবারেই কেউ না।
-এটা বলছো কেন? আমি কি সেটা বলেছি নাকি? শুনো আমার মাথা ব্যথা করছে। প্যারাসিটেমল খেতে হবে।
-ঠিক আছে।

ফরিদের সাথেই বিয়ে হচ্ছে যুথির। আগে খারাপ লাগে নি। তবে অনেক খারাপ লাগছে শাকিলের। কেমন নিসঙ্গ মনে হচ্ছে। যুথিকে বিয়ে করবে এটা কখনো ভাবে নি। তবে কেন এমন হচ্ছে। মনে হচ্ছে যুথি অনেক দূর চলে যাচ্ছে। তা তো ঠিক। বিয়ের পর মেয়েরা বদলে যায়। স্বাভাবিক নিয়মে যুথিও বদলাবে।

এর মধ্যে যুথি তেমন যোগাযোগ করে নি। কয়েকবার ফোনে কথা হয়েছে। কিন্তু সে কথাগুলো বিস্তৃতি ছিল অল্প।

আজ যুথির বিয়ে। ঘুম থেকে উঠে মোবাইল স্ক্রীণের দিকে তাকায় শাকিল। সময় কত তা জানতে। দেখে মেসেজ এসে বসে আছে মোবাইলে,
মেসেজ অপশনের ইনবক্সে গিয়ে মেসেজটি খুলে, “সেদিন চেয়েছিলাম কিছু বলতে, পাত্তাই দিলি না। ওহ তুই বলছি অবাক হচ্ছিস তাই না? খুব তো ইচ্ছা ছিল তুই শোনার। হলো এবার। বিয়েতে অবশ্যেই আসবি না? আচ্ছা তোর কি একবারও কখনো মনে উদয় হয় নাই আমরা সারাটা জীবন একসাথে থাকলে কেমন হয়? আচ্ছা যা এসব বাদ। আজই প্রথম তুই বললাম এটাই শেষ। আমি কেমন থাকবো জানি না। তবে তুমি অনেক ভাল থেকো।”

মেসেজটা পড়ে কেমন জানি লাগে শাকিলের। মনে হয় সবকিছু অন্ধকার। যুথিকে এই জীবনে বড় প্রয়োজন। যেভাবেই হোক যুথিকে চাই-ই। যুথি ছাড়া পুরা জীবনটাই অর্থহীন মনে হয়। আচ্ছা এখন যদি যুথিকে বলা হয় বিয়ে করার কথা সে রাজি হবে?

শাকিল শার্ট চাপিয়ে যুথিদের বাসায় যায়।


( কৃতজ্ঞতা নীলসাধু ভাইয়ের প্রতি। সুন্দর একটি নাম দেওয়ার জন্য। )