০১
ওরা অনেক কথা বলে। বিশেষ করে আমার বন্ধুরা। আমি বিশ্বাস করি না। বলি সবাই একরকম না। ভালও আছে। নিয়াজ তো ভেংচি কেটে বলেই ফেলে, হুম যখন আর খোঁজ নেবে না তখন বুঝবা। আরে মানুষ নেটে যায় মজা করতে। এভাবে সিরিয়াস ভাবে কেউ নেয় না। তুই এখনও বোকার স্বর্গে বাস করিসতো তাই কিচ্ছু বুঝিস না।
আমি বুঝতে চাই না। বোকার স্বর্গে বাস করে যদি এরকম ভাল মেয়ের সাথে সম্পর্ক করা যায় সেটাই ভাল। ওদের কথাটাকে পাত্তা দেওয়ার কোন মানে হয় না। আমি দিইও না।
ওর কিছু ছবি আমাকে ইমেইলে পাঠাইছে। আমার মন খারাপ হলে সেসব ছবি দেখি। কি সুন্দর মায়াবী মুখ। চোখ জুড়ে দুষ্টামি ভাব। দেখলেই মন ভাল হয়ে যায়। আমার প্রিয় নায়িকা ক্যাটরিনা। কিন্তু ওর ছবিও আমাকে এত মুগ্ধ করতে পারে না যতটুকু পারে লিনার ছবি। মন খারাপ হলেই আমি কম্পিউটার ওপেন করে সোজা চলে চায় আমার ছবি ফোল্ডারে। সেখান থেকে ওর ছবিটা দেখি। দেখেই থাকি। আস্তে আস্তে মন ভাল হয়ে যায়। নাহ একথা কখনো ওকে বলতে পারি নাই। লজ্জা লাগে।
অনলাইনে ঢুকলেই প্রথমে দেখি ও আছে কিনা। না থাকলে মন খারাপ হয়ে যায়। কেউ নক করলে উত্তর দিতে ইচ্ছে করে না। চুপ হয়ে বসে থাকি। সময় গুলো যেন কাটতে চায় না। অপেক্ষায় থাকি। কখনো আসে কখনো আসে না। আসলে এত্ত যে খুশী লাগে।
সেদিন মন খারাপ করে বসে আছি। বেশ কিছুক্ষণ পর এল। জিজ্ঞেস করে, কেমন আছো?
আমি বলি, ভাল। তুমি কেমন আছো?
-ভাল না। একটার পর একটা ঝামেলা।
-কেন কি হলো আবার?
-আম্মু রাগ করে বাসা থেকে চলে গেছেন। আব্বুর সাথে কি নিয়ে ঝামেলা হয়েছে যেন। এখনও বুঝছি না। আমি তখন ইউনিভার্সিটিতে ছিলাম।
-বলো কি? তাহলে তো কঠিন সমস্যা।
-হুম।
-তা কি করবা?
-বুঝতেছি না। আম্মুর রাগ কমা ছাড়া আসবেন না। আর আমি যদি এখন নানুর বাড়ীতে যাই আম্মুর রাগ আরো বেড়ে যাবে। আম্মু ভাববে আব্বু আমাকে পাঠিয়েছেন। তাই যাওয়া যাবে না।
লীনার মা-বাবার মধ্যে মাঝে মাঝেই সমস্যা হয়। এই ব্যাপারগুলো আমার সাথে শেয়ার করে। আচ্ছা আমাকে যদি অনেক ভাল বন্ধু মনে না করে তাহলে এগুলো শেয়ার করবে কেন? বন্ধুদের কথাগুলোকে পাত্তা না দেওয়া এটাও একটা কারণ।
আমার খারাপ লাগে। ইশ কি হাসিখুশী মেয়েটা। ওর মা-বাবা এমন করবে কেন?
আমি লিখে পাঠাই, তোমার বাবা কোথায়?
-বাবা বেডরুমে বসে আছেন ড্রিংস করছেন?
- তোমার বাবা ড্রিংস করে, এটা তো ভাল না। তুমি মানা করতে পারো না?
-মানা করি। কিন্তু শুনে না। মানা করলে, হাসে। বলে মাথার টেনশনগুলো ড্রিংস না করলে নাকি হজম হয় না। বেঁচে থাকতে হলে ড্রিংস করতেই হবে। আচ্ছা তুমি থাকো। আমি যাচ্ছি। ভাল লাগছে না।
আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে যায়। ওর সাথে অনেক কথা হয়।
রাতে আসে। রাত জেগে কথা হয়। রাতগুলো ভোর হয়ে যায়। ঘুমু ঘুমু চোখে ও ইউনিভার্সিটিতে যায়। আমিও ক্লাসে ঘুমায়।
ক্লাসে আমার পাশে বসেছে ফয়সাল। ও গুঁতা মারে। কি রাতে কি চুরি করতে গিয়েছিস নাকি? ঐ দেখ স্যার দেখছে। ঘুমালো চোখেআমি চমকে উঠি। স্যারের দিকে তাকাই। কিন্তু স্যারের দৃষ্টি এদিকে না। মেয়েদের বেঞ্চে।
তবে মিথ্যা যে বলেছে এজন্য বিরক্ত ভাব দেখাই না। বিরক্ত ভাব দেখালে ফয়সাল আরো জ্বালাবে। তাই ওর দিকে তাকিয়ে মিস্টি হাসি। বলি, দোস্ত একটু ঘুমাতে দেয়।
ও ঘুমাতে দেয় না। বলে, রাতে কি করছিস।
-কম্পিউটারে ছিলাম।
- ওহ সে মেয়েটার সাথে টাংকি মারছিস সারা রাত জুড়ে।
আমি মাথা নাড়াই। এখন কঠিন কিছু বললে বিপদ আছে। ফয়সালের মুখ খারাপ। দেখতে অনেক ভদ্র মনে হয়। কেউ বিশ্বাসও করবে না ও এত বিশ্রী বিশ্রী কথা বলতে পারে। আসলে কত বৈচিত্র যে আছে এই পৃথিবীতে বুঝাটাই দায়। আমি কিছু বলতে গেলে ও কথাগুলো অন্য পর্যায়ে নিয়ে যাবে।
আমি কথা কাটানোর জন্য বলি, দোস্ত তোর রিমির খবর কি?
-ও বলে, আর বলিস না। সাইজ করতে পারি নাই।
স্যার এসময় আমাদের দিকে তাকান। এই ছেলেরা এত্ত কথা বলো কেন? মেয়েরা ফুসুর ফুসুর করে জানতাম। এখন দেখি ছেলেরাও কম না। চুপ করে মনযোগ দাও। এই চ্যাপ্টার থেকে একটা প্রশ্ন ফাইনালে অবশ্যই আসবে।
ভাগ্যিস স্যার আমাদের কথা বলা দেখছিলেন। না হয় মেয়ে নিয়ে বাজে কথা বলা শুরু করে দিতো ফয়সাল। ও মেয়েদের অন্যকিছু ভাবে। এই জিনিষটা অনেক বিরক্ত লাগে।
ক্লাস শেষে । শারমিন ডাকছে। আমাদের ক্লাসটা দ্বিতীয় তলায়। গেলাম। বলল, তোর সাথে কিছু কথা আছে।
আমি বললাম, হা বল।
শারমিন বলে, এখানে না। ক্যাফটেরিয়ায় চল।
আমাদের ক্লাসের সবচেয়ে সুন্দর মেয়ে হচ্ছে শারমিন। আমার মনে একটা ছবি গেঁথে গেছে। তাই অন্য কারো দিকে তেমন মনযোগ দিই না।
ক্যাফটেরিয়ায় বসতেই বেয়ারাকে ফুচকার অর্ডার দেয় শারমিন।
ব্যাগটা টেবিলের উপরে রাখে। সেখানে রিং বাজছে। ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে। মোবাইল রিসিভ না করে অফ করে দেয়।
-কিরে মোবাইল অফ করলি কেন?
-পরে বলছি। আগে বল তুই নাকি প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি অনলাইনের একটা মেয়ের সাথে।
আমি অবাক। বলে কি? অনলাইনের ব্যাপারটা ও জানল কিভাবে?
তাই জিজ্ঞেস করে ফেলি, তুই জানলি কিভাবে?
-সেটা বড় ব্যাপার না। আগে বল ঠিক কিনা? আচ্ছা থাক বলেই দিই মারুফ থেকে শুনছি আমি। ওর সাথে কাল কথা হচ্ছিলো ফোনে ও বলল। এখন বল কথাটা সত্য নাকি?
আমি রাখঢাক না রেখে বলি হুম সত্য।
-অনলাইনে যে বেশির ভাগ ফেক নিক জানিস?
-হুম জানি। কিন্তু লীনা ফেক নিক না।
-তুই কেমনে জানলি?
-কথা শুনে বুঝলাম।
০২
বেয়ারা ফুচকা এনে রাখে। টক দেওয়া হয়েছে। তারপরও আরো আনতে বলে শারমিন।
আমি একটু ইতস্তত বোধ করি। অনেকে এদিকে তাকিয়ে আছে। বেশির ভাগ ছেলের চোখ এদিকে। সুন্দর মেয়ের সাথে বসলে এই এক সমস্যা। সবাই তাকিয়ে থাকে। মনে করে ছেলেটা কত ভাগ্যবান। কি সুন্দর একটা মেয়ের সাথে বসে কথা বলতে পারছে।
কিরে অন্যদিকে তাকিয়ে আছিস কেন? খাওয়া শুরু কর। নাকি আমার সাথে রাগ করলি ঐ মেয়ের আইডি ফেক বলে সন্দেহ করায়?
আমার একটু বিরক্ত লাগে। আমি কার সাথে কি করবো এটা আমি ভাববো। ওর ভাবার দরকার কি? কিন্তু উপরে প্রকাশ করি না। শারমিন মেয়েটা একটু বেশি অভিমানি। এই ব্যাপারটা প্রথম ইয়ারেই টের পেয়েছি। বেশি সুন্দর মেয়েরা হয়ত অভিমানী হয়েই জন্ম নেয়।
আমি বলি, নাহ এম্নেই অন্যদিকে তাকাচ্ছি। আচ্ছা ঐপাশের বড় ভাইটা না তোকে একদিন অফার দিয়েছিল। এদিকে ঘন ঘন তাকাচ্ছে।
আমার কথা শুনে ও বিরক্ত হয়। কে তাকাচ্ছে এটা তোকে ভাবতে হবে না। তুই খাওয়া শুরু কর। আর খেতে না ইচ্ছে করলে বল। চলে যাবো।
আমি বলি, ঠিক আছে এইতো খাচ্ছি।
নিঃশব্দে খেয়ে যাই। কথা বলি না। বুঝি ও কথা তোলার চেষ্টা করছে। কিন্তু বলছে না। আমিও দেখে আছি। কিছুটা খেয়ে রেখে দেয়।
আমি বলি, কিরে রেখে দিলি কেন?
-খেতে ইচ্ছা করছে না?
-রাগ করেছিস?
-কার সাথে? তোর সাথে? তোর সাথে রাগ করলেই বা কি? তুই রাগ ভাঙাবি? যে রাগ ভাঙাবে না তার উপর আমি কখনো রাগ করি না।
আমি গাম্ভীর্যের সুরে বলি, হুম কঠিন সত্য কথা বলছিস।
-তুই তো বলবিই। তোর তো সমস্যা নেই কেউ রাগ করলে।
- সেটা কি আমি বলছি?
- নাহ নাহ বলিস নি। আর আমি ভুল বলছি। তুই তো রাগ ভাঙাস লীনা না ফীলার। যত সব রাগ অভিমান সব তো ঐ মেয়ের সাথে।
-ওর নাম ফীলা না। লীনা। তুই এভাবে বলছিস কেন?
ঠিক আছে সুন্দর ভাবে বলবো। ওর নাম বলার আগে দাঁত ব্রাশ করবো আধাঘন্টা ধরে। তারপর মুখ ধুবো। অজু করবো। এরপর লিপিস্টিক লাগাবো ঠোঁটে। তারপরে ওর নাম বলবো, হবে তো?
আমার অবাক লাগে। ও এভাবে বলছে কেন? সমস্যাটা কি? ওই মেয়ের সাথে ওর এত শত্রুতা কিসে আমার মাথায় ঢুকে না। কি হচ্ছে এসব।
আমি বলি, তুই এভাবে উত্তেজিত হচ্ছিস কেন? আমি সহজ ভাবে বললাম ওর নাম লীনা। আর কঠিন ভাবে ব্যাপারটা নিয়ে নিলি।
ও আমার একথা শুনে না যেন। বলে, শুন, এরকম ফেক নিক নিয়ে অনেকে মজা করে। বেশিরভাগ সময় মেয়েরা সময় কাটানোর জন্য তা করে। আমিও একসময় সময় কাটানোর জন্য এটা করতাম। কয়েকটা আইডি ছিল।
-তার মানে তুই ছেলেদের এভাবে ফাঁকি দিতি?
Ñএভাবে বলতে?
-ছেলেদের স্বপ্ন দেখাতি?
-কেউ স্বপ্ন দেখলে আমি কি করবো। আমি তো বলি নাই স্বপ্ন দেখতে। কিংবা আমি তো স্বপ্ন দেখি নাই। আচ্ছা তুই যে লীনাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছিস এটা লীনা জানে?
-কিছুটা জানে হয়ত।
শারমিন আমার কথা শুনে হেসে উঠে। সুন্দর তো। কিছুটা জানে মানে। তুই বলিস নাই ওই মেয়েকে তুই পছন্দ করিস।
-নাহ তা সরাসরি বলি নাই কখনো।
-ও এই টাইপের কিছু বলছে?
-নাহ। বলে নাই।
চলবে...
ওরা অনেক কথা বলে। বিশেষ করে আমার বন্ধুরা। আমি বিশ্বাস করি না। বলি সবাই একরকম না। ভালও আছে। নিয়াজ তো ভেংচি কেটে বলেই ফেলে, হুম যখন আর খোঁজ নেবে না তখন বুঝবা। আরে মানুষ নেটে যায় মজা করতে। এভাবে সিরিয়াস ভাবে কেউ নেয় না। তুই এখনও বোকার স্বর্গে বাস করিসতো তাই কিচ্ছু বুঝিস না।
আমি বুঝতে চাই না। বোকার স্বর্গে বাস করে যদি এরকম ভাল মেয়ের সাথে সম্পর্ক করা যায় সেটাই ভাল। ওদের কথাটাকে পাত্তা দেওয়ার কোন মানে হয় না। আমি দিইও না।
ওর কিছু ছবি আমাকে ইমেইলে পাঠাইছে। আমার মন খারাপ হলে সেসব ছবি দেখি। কি সুন্দর মায়াবী মুখ। চোখ জুড়ে দুষ্টামি ভাব। দেখলেই মন ভাল হয়ে যায়। আমার প্রিয় নায়িকা ক্যাটরিনা। কিন্তু ওর ছবিও আমাকে এত মুগ্ধ করতে পারে না যতটুকু পারে লিনার ছবি। মন খারাপ হলেই আমি কম্পিউটার ওপেন করে সোজা চলে চায় আমার ছবি ফোল্ডারে। সেখান থেকে ওর ছবিটা দেখি। দেখেই থাকি। আস্তে আস্তে মন ভাল হয়ে যায়। নাহ একথা কখনো ওকে বলতে পারি নাই। লজ্জা লাগে।
অনলাইনে ঢুকলেই প্রথমে দেখি ও আছে কিনা। না থাকলে মন খারাপ হয়ে যায়। কেউ নক করলে উত্তর দিতে ইচ্ছে করে না। চুপ হয়ে বসে থাকি। সময় গুলো যেন কাটতে চায় না। অপেক্ষায় থাকি। কখনো আসে কখনো আসে না। আসলে এত্ত যে খুশী লাগে।
সেদিন মন খারাপ করে বসে আছি। বেশ কিছুক্ষণ পর এল। জিজ্ঞেস করে, কেমন আছো?
আমি বলি, ভাল। তুমি কেমন আছো?
-ভাল না। একটার পর একটা ঝামেলা।
-কেন কি হলো আবার?
-আম্মু রাগ করে বাসা থেকে চলে গেছেন। আব্বুর সাথে কি নিয়ে ঝামেলা হয়েছে যেন। এখনও বুঝছি না। আমি তখন ইউনিভার্সিটিতে ছিলাম।
-বলো কি? তাহলে তো কঠিন সমস্যা।
-হুম।
-তা কি করবা?
-বুঝতেছি না। আম্মুর রাগ কমা ছাড়া আসবেন না। আর আমি যদি এখন নানুর বাড়ীতে যাই আম্মুর রাগ আরো বেড়ে যাবে। আম্মু ভাববে আব্বু আমাকে পাঠিয়েছেন। তাই যাওয়া যাবে না।
লীনার মা-বাবার মধ্যে মাঝে মাঝেই সমস্যা হয়। এই ব্যাপারগুলো আমার সাথে শেয়ার করে। আচ্ছা আমাকে যদি অনেক ভাল বন্ধু মনে না করে তাহলে এগুলো শেয়ার করবে কেন? বন্ধুদের কথাগুলোকে পাত্তা না দেওয়া এটাও একটা কারণ।
আমার খারাপ লাগে। ইশ কি হাসিখুশী মেয়েটা। ওর মা-বাবা এমন করবে কেন?
আমি লিখে পাঠাই, তোমার বাবা কোথায়?
-বাবা বেডরুমে বসে আছেন ড্রিংস করছেন?
- তোমার বাবা ড্রিংস করে, এটা তো ভাল না। তুমি মানা করতে পারো না?
-মানা করি। কিন্তু শুনে না। মানা করলে, হাসে। বলে মাথার টেনশনগুলো ড্রিংস না করলে নাকি হজম হয় না। বেঁচে থাকতে হলে ড্রিংস করতেই হবে। আচ্ছা তুমি থাকো। আমি যাচ্ছি। ভাল লাগছে না।
আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে যায়। ওর সাথে অনেক কথা হয়।
রাতে আসে। রাত জেগে কথা হয়। রাতগুলো ভোর হয়ে যায়। ঘুমু ঘুমু চোখে ও ইউনিভার্সিটিতে যায়। আমিও ক্লাসে ঘুমায়।
ক্লাসে আমার পাশে বসেছে ফয়সাল। ও গুঁতা মারে। কি রাতে কি চুরি করতে গিয়েছিস নাকি? ঐ দেখ স্যার দেখছে। ঘুমালো চোখেআমি চমকে উঠি। স্যারের দিকে তাকাই। কিন্তু স্যারের দৃষ্টি এদিকে না। মেয়েদের বেঞ্চে।
তবে মিথ্যা যে বলেছে এজন্য বিরক্ত ভাব দেখাই না। বিরক্ত ভাব দেখালে ফয়সাল আরো জ্বালাবে। তাই ওর দিকে তাকিয়ে মিস্টি হাসি। বলি, দোস্ত একটু ঘুমাতে দেয়।
ও ঘুমাতে দেয় না। বলে, রাতে কি করছিস।
-কম্পিউটারে ছিলাম।
- ওহ সে মেয়েটার সাথে টাংকি মারছিস সারা রাত জুড়ে।
আমি মাথা নাড়াই। এখন কঠিন কিছু বললে বিপদ আছে। ফয়সালের মুখ খারাপ। দেখতে অনেক ভদ্র মনে হয়। কেউ বিশ্বাসও করবে না ও এত বিশ্রী বিশ্রী কথা বলতে পারে। আসলে কত বৈচিত্র যে আছে এই পৃথিবীতে বুঝাটাই দায়। আমি কিছু বলতে গেলে ও কথাগুলো অন্য পর্যায়ে নিয়ে যাবে।
আমি কথা কাটানোর জন্য বলি, দোস্ত তোর রিমির খবর কি?
-ও বলে, আর বলিস না। সাইজ করতে পারি নাই।
স্যার এসময় আমাদের দিকে তাকান। এই ছেলেরা এত্ত কথা বলো কেন? মেয়েরা ফুসুর ফুসুর করে জানতাম। এখন দেখি ছেলেরাও কম না। চুপ করে মনযোগ দাও। এই চ্যাপ্টার থেকে একটা প্রশ্ন ফাইনালে অবশ্যই আসবে।
ভাগ্যিস স্যার আমাদের কথা বলা দেখছিলেন। না হয় মেয়ে নিয়ে বাজে কথা বলা শুরু করে দিতো ফয়সাল। ও মেয়েদের অন্যকিছু ভাবে। এই জিনিষটা অনেক বিরক্ত লাগে।
ক্লাস শেষে । শারমিন ডাকছে। আমাদের ক্লাসটা দ্বিতীয় তলায়। গেলাম। বলল, তোর সাথে কিছু কথা আছে।
আমি বললাম, হা বল।
শারমিন বলে, এখানে না। ক্যাফটেরিয়ায় চল।
আমাদের ক্লাসের সবচেয়ে সুন্দর মেয়ে হচ্ছে শারমিন। আমার মনে একটা ছবি গেঁথে গেছে। তাই অন্য কারো দিকে তেমন মনযোগ দিই না।
ক্যাফটেরিয়ায় বসতেই বেয়ারাকে ফুচকার অর্ডার দেয় শারমিন।
ব্যাগটা টেবিলের উপরে রাখে। সেখানে রিং বাজছে। ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে। মোবাইল রিসিভ না করে অফ করে দেয়।
-কিরে মোবাইল অফ করলি কেন?
-পরে বলছি। আগে বল তুই নাকি প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি অনলাইনের একটা মেয়ের সাথে।
আমি অবাক। বলে কি? অনলাইনের ব্যাপারটা ও জানল কিভাবে?
তাই জিজ্ঞেস করে ফেলি, তুই জানলি কিভাবে?
-সেটা বড় ব্যাপার না। আগে বল ঠিক কিনা? আচ্ছা থাক বলেই দিই মারুফ থেকে শুনছি আমি। ওর সাথে কাল কথা হচ্ছিলো ফোনে ও বলল। এখন বল কথাটা সত্য নাকি?
আমি রাখঢাক না রেখে বলি হুম সত্য।
-অনলাইনে যে বেশির ভাগ ফেক নিক জানিস?
-হুম জানি। কিন্তু লীনা ফেক নিক না।
-তুই কেমনে জানলি?
-কথা শুনে বুঝলাম।
০২
বেয়ারা ফুচকা এনে রাখে। টক দেওয়া হয়েছে। তারপরও আরো আনতে বলে শারমিন।
আমি একটু ইতস্তত বোধ করি। অনেকে এদিকে তাকিয়ে আছে। বেশির ভাগ ছেলের চোখ এদিকে। সুন্দর মেয়ের সাথে বসলে এই এক সমস্যা। সবাই তাকিয়ে থাকে। মনে করে ছেলেটা কত ভাগ্যবান। কি সুন্দর একটা মেয়ের সাথে বসে কথা বলতে পারছে।
কিরে অন্যদিকে তাকিয়ে আছিস কেন? খাওয়া শুরু কর। নাকি আমার সাথে রাগ করলি ঐ মেয়ের আইডি ফেক বলে সন্দেহ করায়?
আমার একটু বিরক্ত লাগে। আমি কার সাথে কি করবো এটা আমি ভাববো। ওর ভাবার দরকার কি? কিন্তু উপরে প্রকাশ করি না। শারমিন মেয়েটা একটু বেশি অভিমানি। এই ব্যাপারটা প্রথম ইয়ারেই টের পেয়েছি। বেশি সুন্দর মেয়েরা হয়ত অভিমানী হয়েই জন্ম নেয়।
আমি বলি, নাহ এম্নেই অন্যদিকে তাকাচ্ছি। আচ্ছা ঐপাশের বড় ভাইটা না তোকে একদিন অফার দিয়েছিল। এদিকে ঘন ঘন তাকাচ্ছে।
আমার কথা শুনে ও বিরক্ত হয়। কে তাকাচ্ছে এটা তোকে ভাবতে হবে না। তুই খাওয়া শুরু কর। আর খেতে না ইচ্ছে করলে বল। চলে যাবো।
আমি বলি, ঠিক আছে এইতো খাচ্ছি।
নিঃশব্দে খেয়ে যাই। কথা বলি না। বুঝি ও কথা তোলার চেষ্টা করছে। কিন্তু বলছে না। আমিও দেখে আছি। কিছুটা খেয়ে রেখে দেয়।
আমি বলি, কিরে রেখে দিলি কেন?
-খেতে ইচ্ছা করছে না?
-রাগ করেছিস?
-কার সাথে? তোর সাথে? তোর সাথে রাগ করলেই বা কি? তুই রাগ ভাঙাবি? যে রাগ ভাঙাবে না তার উপর আমি কখনো রাগ করি না।
আমি গাম্ভীর্যের সুরে বলি, হুম কঠিন সত্য কথা বলছিস।
-তুই তো বলবিই। তোর তো সমস্যা নেই কেউ রাগ করলে।
- সেটা কি আমি বলছি?
- নাহ নাহ বলিস নি। আর আমি ভুল বলছি। তুই তো রাগ ভাঙাস লীনা না ফীলার। যত সব রাগ অভিমান সব তো ঐ মেয়ের সাথে।
-ওর নাম ফীলা না। লীনা। তুই এভাবে বলছিস কেন?
ঠিক আছে সুন্দর ভাবে বলবো। ওর নাম বলার আগে দাঁত ব্রাশ করবো আধাঘন্টা ধরে। তারপর মুখ ধুবো। অজু করবো। এরপর লিপিস্টিক লাগাবো ঠোঁটে। তারপরে ওর নাম বলবো, হবে তো?
আমার অবাক লাগে। ও এভাবে বলছে কেন? সমস্যাটা কি? ওই মেয়ের সাথে ওর এত শত্রুতা কিসে আমার মাথায় ঢুকে না। কি হচ্ছে এসব।
আমি বলি, তুই এভাবে উত্তেজিত হচ্ছিস কেন? আমি সহজ ভাবে বললাম ওর নাম লীনা। আর কঠিন ভাবে ব্যাপারটা নিয়ে নিলি।
ও আমার একথা শুনে না যেন। বলে, শুন, এরকম ফেক নিক নিয়ে অনেকে মজা করে। বেশিরভাগ সময় মেয়েরা সময় কাটানোর জন্য তা করে। আমিও একসময় সময় কাটানোর জন্য এটা করতাম। কয়েকটা আইডি ছিল।
-তার মানে তুই ছেলেদের এভাবে ফাঁকি দিতি?
Ñএভাবে বলতে?
-ছেলেদের স্বপ্ন দেখাতি?
-কেউ স্বপ্ন দেখলে আমি কি করবো। আমি তো বলি নাই স্বপ্ন দেখতে। কিংবা আমি তো স্বপ্ন দেখি নাই। আচ্ছা তুই যে লীনাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছিস এটা লীনা জানে?
-কিছুটা জানে হয়ত।
শারমিন আমার কথা শুনে হেসে উঠে। সুন্দর তো। কিছুটা জানে মানে। তুই বলিস নাই ওই মেয়েকে তুই পছন্দ করিস।
-নাহ তা সরাসরি বলি নাই কখনো।
-ও এই টাইপের কিছু বলছে?
-নাহ। বলে নাই।
চলবে...