অতি চেনা মানুষ যখন অচেনা মানুষের মত আচরণ করে তখন খারাপ লাগে। নিজেকে ছোট মনে হয়। মনের আকাশে জমে কালো মেঘ। যে মেঘ সহজে সরতে চায় না। স্থায়ী ভাবে বসে পড়ার একটা নিরন্তর চেষ্টা করে যায়। কখনোবা মনের একপাশ যুদ্ধ করে যায় সে কালো মেঘ সরাতে। তখন কষ্টটা আরো বাড়ে। বাধা পেয়ে যেন ঐ কালো মেঘ আরো ঝাঁকিয়ে বসতে চায়। বাধা না দিলেই মনে হয় ভাল।
তপু এক প্রাণবন্ত যুবক। বয়স ২১। এবার অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ছে। কপাল কুঁচকে আছে। তবে সেটা বিরক্তির না। মনের দুঃখের, স্বরচিত এক হতাশার। যে হতাশা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে ওকে। মনের মধ্যে দিয়ে রেখেছে ফালি ফালি কালো মেঘ।
যখন বাধা দিয়েও দেখছে মনের কালো মেঘ দূর হচ্ছে না তখন ভিন্ন পথে যায় তপু। নিজেই নিজের সাথে কথা বলে। আচ্ছা বন্ধুরা তো এক একজন কত মেয়ের সাথে সম্পর্ক করছে। এবং প্রতিটি সম্পর্কই ইচ্ছামত চালিয়ে নিচ্ছে। একটা যাচ্ছে নতুন আরেকটায় যুক্ত হচ্ছে। তাহলে তার করতে সমস্যা কোথায়? এক মেয়ে পর হয়েছে তাতে কি হয়েছে। মেয়ের কি অভাব হয়েছে নাকি এই দুনিয়ায়?
ঠিক তখনি মনের অন্য অংশ বলে, আরে অনেক মেয়ের সাথে যে সম্পর্ক সেটা কি ভালবাসা নাকি? সেটা তো শুধুই সময় কাটানো। নষ্টামী ছাড়া কিছু নয়।
নষ্টামী হলে হোক। সময়গুলো তো ওরা সুন্দর কাটাচ্ছে। কি হাসিখুশী থাকে ওরা। কি ফূর্তিতে আছে সব সময়। আমি কেন মন খারাপ করে থাকবো? আমিও ওদের মত করবো। এতে কার কি সমস্যা। মনের ভিন্ন দিকটা বলে ফেলে।
আচ্ছা যেটা বাধা দিচ্ছে কি সেটা কি বিবেক? এই অংশটা মাঝে মাঝে বড্ড বিরক্ত করে। সেটা বলে যায়, তোমার ইচ্ছা হলো ওদের মত করো। কিন্তু তুমি সেটা পারবে না। তোমার দ্বারা সম্ভব না ওদের মত শয়তানি করা।
কেন আমি পারবো না কেন? ওরা করলে সমস্যা নাই। আমি করলে সমস্যা কি?
বিবেকটা যেন একটু অসহায় গলায় বলে, ঠিক আছে করো তোমার যা ইচ্ছা। তবে যখন অনুশোচনায় ভুগবে তখন আমি ঠিকই আসবো। তবে দুর্বল হয়ে। তখন আমার বাধা দেওয়ার ক্ষমতা থাকবে না। এখন শক্ত আছি। তোমাকে অনুরোধ করছি তুমি আমাকে দুর্বল করো না। আমি যত দুর্বল হবো তুমি তত বেশি নিজের নৈতিকতা, নিজের অটলতা হারাবে।
আর ভাল লাগে না তপুর। ইচ্ছা হয় সব ছেড়ে ছুড়ে দিতে। নিজের কাছে নিজের হেরে যাওয়া মেনে নেওয়া যে আরো বেশি কষ্টকর।
তবে ফারজানাকে সব দোষ দিতেও পারে না তপু। ও এসেছিল । দিয়েছিল প্রস্তাব। আচ্ছা তুমি আমাকে এখন বিয়ে করতে পারবে? তপু অবাক হয়ে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বলেছিল, অবশ্যই বিয়ে করবো আমরা। কিন্তু এখন কেন? বিয়ে তো ছেলেমানুষী না। আরো পরে হবে।
আর কিচ্ছু বলে নাই। অন্য কথা বলছিল ফারজানা। মনে হচ্ছিলো আগের কথাটা এম্নে অভিনয় করে সিরিয়াস ভাবে বলেছে। তাই ব্যাপারটা নিয়ে আর ভাবে নাই তপু। আর এই একুশ বছর বয়সে ওর বিয়ে পরিবার কোন মতেই মেনে নিবে না। একুশ বছরে মেয়েদের বিয়ে স্বাভাবিক। কিন্তু ছেলেদের বিয়ে ২১ বছরে এখনও মধ্যবিত্ত সমাজে স্বাভাবিক না। পড়ালেখা শেষ হবে, একটা চাকরি হবে। তারপর বিয়ে এটাই এখনও মধ্যবিত্ত সমাজের প্রচলিত ধারা। সেখান থেকে বের হয়ে আসা অনেক কঠিন। বের হওয়া দূরের কথা বের হয়ে আসার চিন্তাই করতে পারে নি তপু। এখনও মনে হচ্ছে সেটা সম্ভব না। কিন্তু তারপরও বাস্তবতা মেনে নেওয়া কোন মতেই সম্ভব না। তারপরও যা হয়ে গেছে সেটাই যে মেনে নিতে হচ্ছে।
সামনে ঈদ। এলাকার বন্ধুদের সাথে প্যান্ট কিনতে গিয়েছিল। স্বপ্নপুরী গার্মেন্টসে প্যান্ট দেখছে। হঠাৎ দেখে সেখানে ফারজানা এসেছে ওর স্বামী সহ। মনে করছিল ওকে দেখে ফারজানা চলে যাবে। কিন্তু ফারজানা যায় নি। একটা শাড়ি দেখিয়ে তা নামাতে বলল সেলস বয়কে। ওকে যেন দেখিয়ে দেয় কত্ত সুখে আছে তারা। তপু তাকায় ফারজানার দিকে। আগের চেয়ে অনেক সুন্দর হয়েছে। বেগুনী রঙের একটা শাড়ি পড়েছে। মুখ স্নিগ্ধতায় ভরা। তপুর মনে হা হা কা র করে উঠে। এই মেয়েটি কত্ত কাছে ছিল। হাতে হাত রেখে কত গল্প হতো। অথচ কত দূরে চলে গেছে। অবস্থানগত কোন দূরত্ব নাই। দুই কদম দূরেই বসে আছে। কিন্তু মনের দিক থেকে ভাবের দিক থেকে যোজন যোজন দূর।
ফারজানা ব্যস্ত শাড়ির সৌন্দর্য অন্বেষণে কিংবা অভিনয় করছে ব্যস্ততার। আরেকটা শাড়ি নামাতে বলে। হঠাৎ চোখাচোখি হয়। তপু একটা হাসি দেয়। কিন্তু সাথে সাথে ফারজানা চোখ ফিরিয়ে নেয়। সে সরিয়ে নেওয়ার মাঝে তাচ্ছিল্য। এমন অচেনার মত করল কেন?
তপু প্যান্ট না কিনেই ফিরে আসে। বন্ধুদের বলে কাল কিনবে। ও এসে দাঁড়ায় পার্কের তুলা গাছটার নিচে। এখানে এসে গল্প করত ফারজানার সাথে। কলেজ ছুটির পর এখানে চলে আসত ওরা। কলেজ ড্রেস দেখে পার্কে ভ্রমণরত কেউ কেউ ভ্রু কুঁচকে তাকাতো। তবে সেসব গ্রাহ্য করত না ওরা কেউ। এখন তপু একা। ফারজানাকে ডাকলে আর আসবে না। অথচ একসময় বলার সাথে সাথে চলে আসতো। তপুর যদি আসতে কখনো একটু দেরি হতো তবে অভিমানে গাল ফুলিয়ে বসে থাকতো।
ফারজানার কথা ভেবে বুকের কালো মেঘটা আরো গাঢ় হয়, আরো ভারী হয়।
আরো আগে পৃথিবীতে আসলে কি সমস্যা হতো? বয়স বেশি হলে তো ফারজানাকে বিয়ে করতে কোন সমস্যা হতো না। নিজের বয়সটাকে নিষ্ঠুর মনে হয় তপুর। এটা ভাবনা আসতেই হু হু করে হেসে উঠে নিজের সাথে নিজেই তপু। দোষ দেওয়ার আর জিনিষ নাই বুঝি।
বিবেকটাকে দুর্বল করে দিতে হবে। এই বিবেকটা থাকলে অন্য মেয়েকে ভালবাসতে পারবে না। তপুর অপেক্ষা শুরু।এই অপেক্ষা অন্যরকম অপেক্ষা। কোন নির্দিষ্ট মানুষের জন্য না এই অপেক্ষা। এই অপেক্ষা শুধু বিবেক দুর্বল হওয়ার। এই অপেক্ষা বিবেককে পাশ কাটিয়ে কিছু স্বপ্ন দেখার স্বাধীনতা পাওয়ার।
তপু জানে না এই অপেক্ষা কখন শেষ হবে।
তপু এক প্রাণবন্ত যুবক। বয়স ২১। এবার অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ছে। কপাল কুঁচকে আছে। তবে সেটা বিরক্তির না। মনের দুঃখের, স্বরচিত এক হতাশার। যে হতাশা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে ওকে। মনের মধ্যে দিয়ে রেখেছে ফালি ফালি কালো মেঘ।
যখন বাধা দিয়েও দেখছে মনের কালো মেঘ দূর হচ্ছে না তখন ভিন্ন পথে যায় তপু। নিজেই নিজের সাথে কথা বলে। আচ্ছা বন্ধুরা তো এক একজন কত মেয়ের সাথে সম্পর্ক করছে। এবং প্রতিটি সম্পর্কই ইচ্ছামত চালিয়ে নিচ্ছে। একটা যাচ্ছে নতুন আরেকটায় যুক্ত হচ্ছে। তাহলে তার করতে সমস্যা কোথায়? এক মেয়ে পর হয়েছে তাতে কি হয়েছে। মেয়ের কি অভাব হয়েছে নাকি এই দুনিয়ায়?
ঠিক তখনি মনের অন্য অংশ বলে, আরে অনেক মেয়ের সাথে যে সম্পর্ক সেটা কি ভালবাসা নাকি? সেটা তো শুধুই সময় কাটানো। নষ্টামী ছাড়া কিছু নয়।
নষ্টামী হলে হোক। সময়গুলো তো ওরা সুন্দর কাটাচ্ছে। কি হাসিখুশী থাকে ওরা। কি ফূর্তিতে আছে সব সময়। আমি কেন মন খারাপ করে থাকবো? আমিও ওদের মত করবো। এতে কার কি সমস্যা। মনের ভিন্ন দিকটা বলে ফেলে।
আচ্ছা যেটা বাধা দিচ্ছে কি সেটা কি বিবেক? এই অংশটা মাঝে মাঝে বড্ড বিরক্ত করে। সেটা বলে যায়, তোমার ইচ্ছা হলো ওদের মত করো। কিন্তু তুমি সেটা পারবে না। তোমার দ্বারা সম্ভব না ওদের মত শয়তানি করা।
কেন আমি পারবো না কেন? ওরা করলে সমস্যা নাই। আমি করলে সমস্যা কি?
বিবেকটা যেন একটু অসহায় গলায় বলে, ঠিক আছে করো তোমার যা ইচ্ছা। তবে যখন অনুশোচনায় ভুগবে তখন আমি ঠিকই আসবো। তবে দুর্বল হয়ে। তখন আমার বাধা দেওয়ার ক্ষমতা থাকবে না। এখন শক্ত আছি। তোমাকে অনুরোধ করছি তুমি আমাকে দুর্বল করো না। আমি যত দুর্বল হবো তুমি তত বেশি নিজের নৈতিকতা, নিজের অটলতা হারাবে।
আর ভাল লাগে না তপুর। ইচ্ছা হয় সব ছেড়ে ছুড়ে দিতে। নিজের কাছে নিজের হেরে যাওয়া মেনে নেওয়া যে আরো বেশি কষ্টকর।
তবে ফারজানাকে সব দোষ দিতেও পারে না তপু। ও এসেছিল । দিয়েছিল প্রস্তাব। আচ্ছা তুমি আমাকে এখন বিয়ে করতে পারবে? তপু অবাক হয়ে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বলেছিল, অবশ্যই বিয়ে করবো আমরা। কিন্তু এখন কেন? বিয়ে তো ছেলেমানুষী না। আরো পরে হবে।
আর কিচ্ছু বলে নাই। অন্য কথা বলছিল ফারজানা। মনে হচ্ছিলো আগের কথাটা এম্নে অভিনয় করে সিরিয়াস ভাবে বলেছে। তাই ব্যাপারটা নিয়ে আর ভাবে নাই তপু। আর এই একুশ বছর বয়সে ওর বিয়ে পরিবার কোন মতেই মেনে নিবে না। একুশ বছরে মেয়েদের বিয়ে স্বাভাবিক। কিন্তু ছেলেদের বিয়ে ২১ বছরে এখনও মধ্যবিত্ত সমাজে স্বাভাবিক না। পড়ালেখা শেষ হবে, একটা চাকরি হবে। তারপর বিয়ে এটাই এখনও মধ্যবিত্ত সমাজের প্রচলিত ধারা। সেখান থেকে বের হয়ে আসা অনেক কঠিন। বের হওয়া দূরের কথা বের হয়ে আসার চিন্তাই করতে পারে নি তপু। এখনও মনে হচ্ছে সেটা সম্ভব না। কিন্তু তারপরও বাস্তবতা মেনে নেওয়া কোন মতেই সম্ভব না। তারপরও যা হয়ে গেছে সেটাই যে মেনে নিতে হচ্ছে।
সামনে ঈদ। এলাকার বন্ধুদের সাথে প্যান্ট কিনতে গিয়েছিল। স্বপ্নপুরী গার্মেন্টসে প্যান্ট দেখছে। হঠাৎ দেখে সেখানে ফারজানা এসেছে ওর স্বামী সহ। মনে করছিল ওকে দেখে ফারজানা চলে যাবে। কিন্তু ফারজানা যায় নি। একটা শাড়ি দেখিয়ে তা নামাতে বলল সেলস বয়কে। ওকে যেন দেখিয়ে দেয় কত্ত সুখে আছে তারা। তপু তাকায় ফারজানার দিকে। আগের চেয়ে অনেক সুন্দর হয়েছে। বেগুনী রঙের একটা শাড়ি পড়েছে। মুখ স্নিগ্ধতায় ভরা। তপুর মনে হা হা কা র করে উঠে। এই মেয়েটি কত্ত কাছে ছিল। হাতে হাত রেখে কত গল্প হতো। অথচ কত দূরে চলে গেছে। অবস্থানগত কোন দূরত্ব নাই। দুই কদম দূরেই বসে আছে। কিন্তু মনের দিক থেকে ভাবের দিক থেকে যোজন যোজন দূর।
ফারজানা ব্যস্ত শাড়ির সৌন্দর্য অন্বেষণে কিংবা অভিনয় করছে ব্যস্ততার। আরেকটা শাড়ি নামাতে বলে। হঠাৎ চোখাচোখি হয়। তপু একটা হাসি দেয়। কিন্তু সাথে সাথে ফারজানা চোখ ফিরিয়ে নেয়। সে সরিয়ে নেওয়ার মাঝে তাচ্ছিল্য। এমন অচেনার মত করল কেন?
তপু প্যান্ট না কিনেই ফিরে আসে। বন্ধুদের বলে কাল কিনবে। ও এসে দাঁড়ায় পার্কের তুলা গাছটার নিচে। এখানে এসে গল্প করত ফারজানার সাথে। কলেজ ছুটির পর এখানে চলে আসত ওরা। কলেজ ড্রেস দেখে পার্কে ভ্রমণরত কেউ কেউ ভ্রু কুঁচকে তাকাতো। তবে সেসব গ্রাহ্য করত না ওরা কেউ। এখন তপু একা। ফারজানাকে ডাকলে আর আসবে না। অথচ একসময় বলার সাথে সাথে চলে আসতো। তপুর যদি আসতে কখনো একটু দেরি হতো তবে অভিমানে গাল ফুলিয়ে বসে থাকতো।
ফারজানার কথা ভেবে বুকের কালো মেঘটা আরো গাঢ় হয়, আরো ভারী হয়।
আরো আগে পৃথিবীতে আসলে কি সমস্যা হতো? বয়স বেশি হলে তো ফারজানাকে বিয়ে করতে কোন সমস্যা হতো না। নিজের বয়সটাকে নিষ্ঠুর মনে হয় তপুর। এটা ভাবনা আসতেই হু হু করে হেসে উঠে নিজের সাথে নিজেই তপু। দোষ দেওয়ার আর জিনিষ নাই বুঝি।
বিবেকটাকে দুর্বল করে দিতে হবে। এই বিবেকটা থাকলে অন্য মেয়েকে ভালবাসতে পারবে না। তপুর অপেক্ষা শুরু।এই অপেক্ষা অন্যরকম অপেক্ষা। কোন নির্দিষ্ট মানুষের জন্য না এই অপেক্ষা। এই অপেক্ষা শুধু বিবেক দুর্বল হওয়ার। এই অপেক্ষা বিবেককে পাশ কাটিয়ে কিছু স্বপ্ন দেখার স্বাধীনতা পাওয়ার।
তপু জানে না এই অপেক্ষা কখন শেষ হবে।