সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। বিকালটা যে এত তাড়াতাড়ি অন্ধকারে ঘনিয়ে এলো তা টেরই পায়নি শুভ্রা। এইতো আলো ছিল। পরক্ষণেই অন্ধকার হানা দিল, এরকম মনে হচ্ছে ওর কাছে। অন্ধকার যে খারাপ লাগে তা না। রাতের অন্ধকারের নিস্তবদ্ধতা, তারা ঝলমল মায়াবী রাতটা অনেক পছন্দ ওর। তবে এখন রাতের উপর বিরক্ত লাগছে প্রচন্ডরকমভাবে। আরেকটু পরে আসলে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেত।
লেকের উপর বসে আছে শুভ্রা। তার সাথে রফিক। রাত চলে আসায় বাসায় ফিরতে হবে তাড়াতাড়ি। বাবা এরি মধ্যে কল দিয়েছেন দুইবার। এই তো পথে বলেছে। অথচ সে এখনও লেকে বসে আছে। ঢাকা শহরে একটা মজা পরিচিত মানুষের দেখা হওয়া ভয় নেই।
চুপ আছে দেখে রফিক বলে, চুপ কেন?
-এখন এ মূহুর্তে সবচেয়ে শত্রু মনে হচ্ছে কাকে জানো?
-হা জানি, আমাকে মনে হচ্ছে। আঙ্কেল বার বার ফোন দিচ্ছে। অথচ এখনও যেতে পারো নাই আমার জন্য। আমাকে শত্রু ভাবাটাই স্বাভাবিক।
- সবকিছু বেশি বুঝো তাই না?
শুভ্রার কথার মধ্যে বিরক্তি।
জোরে হেসে উঠে রফিক। হাসির শব্দটা একটু বেশিই হয়ে গেছে। আশ পাশের দুই চারজন উল্টা দিকে ফিরে এদিকে দেখে। কি হয়েছে বুঝার চেষ্টা করে।
-আশ্চর্য ব্যাপার! হাসছো কেন? ঐই দেখো সবাই তোমার দিকে তাকাচ্ছে।
- তাকাক যার ইচ্ছা। অন্যরা তাকাবে এই ভয়ে আমি হাসবো না?
-আরে এখানে তো হাসির কিছু হলো না। বললাম, সবকিছু বেশি বুঝো। আর এ কথায় হাসির কি হলো?
-তুমি সব সময় বলো আমি গাধা, বোকা। কিছুই বুঝি না। আর এখন বলছো আমি সব কিছু বেশি বুঝো। থাক যাওয়ার আগে অন্তত একটা প্রশংসা পেলাম। আমার ইচ্ছা করছে সার্টিফিকেট বানাতে। সেখানে লেখা থাকবে।
যাওয়ার কথা মনে পড়ায় মন খারাপ হয়ে যায় শুভ্রার। প্রতিদিন এখানে আসতো। ঢাকার কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পায়নি। সিলেটে ভর্তি হয়েছে। আগামী কাল সেখানে চলে যাবে। পরীক্ষার পর সিরিয়াস ভাবে পড়া উচিত ছিল। কোচিং করছে ঠিকই। তবে ঘুরতেই বেশি সময় গেছে। ভালভাবে পড়লে হয়ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই চান্স পেয়ে যেত। কেন যে ফাঁকি দেওয়া হলো।
-আরে আবার দেখি চুপ হয়ে আছে। কি হলো তোমার। কাল চলে যাবা। আজ ভালভাবে প্রাণ খুলে কথা বলো।
-আচ্ছা আমি চলে গেলে তোমার খুব খারাপ লাগবে তাই না।
-না, না। খারাপ লাগবে না। মহা আনন্দ লাগবে।
-এভাবে বলছো কেন?
- তুমি যাবে গা এই শহর ছেড়ে তা চিন্তাই করতে পারছি না, আর সেখানে তুমি বলছো শুধু খারাপ লাগবে। কাল যে বিকালের সময়টা কিভাবে কাটাবো?
-শত্রুর কথা বলছিলাম না।
-হুম।
-এ মুহূর্তে আমার সবচেয়ে বড় শত্রু মনে হচ্ছে রাতকে। রাতটা না আসলে আরো অনেকক্ষণ থাকতে পারতাম। বিকেলটা কত সুন্দর ছিল আমাদের জন্য।
এরিমধ্যে পিচ্ছি দুইটা ছেলে আসে। পা জড়িয়ে ধরে রফিকের। - ভাইজান টাকা দেন। কিচ্ছু খাই নাই।
রফিক ছুটাতে চেষ্টা করে। যতই চেষ্টা করে তত বেশি আঁকড়ে ধরে। এবার রফিক ধমক দেয়, সর বলছি। না হলে কষায় থাপ্পড় মারবো। সব দাঁত ফেলে দেবো। কথাগুলোর মধ্যে কঠিন কিছু ছিল।
দূরে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটা দৌড় দেয়, আর পা ধরে থাকা ছেলেটাও পা ছেড়ে দিয়ে চলে যায়।
শুভ্রা কিছু বলে না। রাতের অন্ধকার। তারপরও শুভ্রাকে দেখা যাচ্ছে। ফর্সা মুখ। অন্ধকারে সুন্দর মুখ খানি আরো বেশি সুন্দর লাগছে।
শুভ্রা উঠে দাঁড়ায়। চলো বাড়ি ফিরতে হবে।
-হ্যা ঠিক বলছো। রাত হয়ে যাচ্ছে। দেরি হলে তোমার বাসায় আবার চিন্তা করবে।
ওরা দুজনে হাঁটা শুরু করে।
-তুমি না বললে আমি বেশি বুঝি।
-হুম।
- আমার ইচ্ছা হচ্ছে একটা সার্টিফিকেট বানাতে। সেখানে লেখা থাকবে, জনাব রফিক সাহেবকে বেশি বুঝার জন্য এই প্রত্যায়নপত্র দেওয়া হচ্ছে। নিচে তোমার স্বাক্ষর থাকবে। এই যে কত বড় স্বীকৃতি হবে বুঝতে পারছো?
-আচ্ছা তোমার মন খারাপ?
- না, না।
রফিক ভাবে কাল দূরে চলে যাচ্ছে এজন্যই মন খারাপ। তাই সে কিছু বলে না। নিঃশব্দে দুজনে পাড়ি দেয় আরো কিছু দূর।
কাল সিলেট চলে যাবে। আচ্ছা যে ছেলে পিচ্চি ছেলের সাথে এরকম বিশ্রী ভাবে কথা বলে তার সাথে সম্পর্ক রাখা কি ঠিক। রাতে শুয়ে শুয়ে চিন্তা করে। ঐ ছেলেটা পায়ে ধরেছে তাই বলে এমন করতে হবে। বিপদে পড়ছে বিধায় না সাহায্য খুঁজতে এসেছে। তাই বলে এভাবে ধমক দিতে হবে।
বিরক্ত লাগছে রফিকের উপর। আজ দেখা করতে না গেলেই ভাল ছিল। মনটাই খারাপ হয়ে গেল। ধূর। কাল অনেক বড় জার্নি করতে হবে। ঘুমানো দরকার। কিন্তু ঘুম আসছে না। ঐ ছেলে দুইটির প্রতি রফিকের কর্কশ শব্দটাই কানে বাজছে, সর বলছি। না হলে কষায় থাপ্পড় মারবো। সব দাঁত ফেলে দেবো। কথাগুলোর মধ্যে কঠিন কিছু ছিল।
সে মুহূতের্র রফিকের রাগী চেহারাটা চোখে ভাসছে। চেষ্টা করছে না চিন্তা করতে। তারপরও চলে আসছে।
মোবাইলে রিং হচ্ছে। রফিক কল করছে। অথচ ধরতে একটুও ইচ্ছা করছে না। রিং টোন অফ করে দিল শুভ্রা।
কিছু ভাল লাগছে না। ইচ্ছা হচ্ছে রফিকের সাথে কোন সম্পর্ক না রাখতে। অথচ রফিককে অনেক ভালবাসে।
নিজেকে নিজের কাছে অনেক বেশি অচেনা মনে হচ্ছে শুভ্রার।
লেকের উপর বসে আছে শুভ্রা। তার সাথে রফিক। রাত চলে আসায় বাসায় ফিরতে হবে তাড়াতাড়ি। বাবা এরি মধ্যে কল দিয়েছেন দুইবার। এই তো পথে বলেছে। অথচ সে এখনও লেকে বসে আছে। ঢাকা শহরে একটা মজা পরিচিত মানুষের দেখা হওয়া ভয় নেই।
চুপ আছে দেখে রফিক বলে, চুপ কেন?
-এখন এ মূহুর্তে সবচেয়ে শত্রু মনে হচ্ছে কাকে জানো?
-হা জানি, আমাকে মনে হচ্ছে। আঙ্কেল বার বার ফোন দিচ্ছে। অথচ এখনও যেতে পারো নাই আমার জন্য। আমাকে শত্রু ভাবাটাই স্বাভাবিক।
- সবকিছু বেশি বুঝো তাই না?
শুভ্রার কথার মধ্যে বিরক্তি।
জোরে হেসে উঠে রফিক। হাসির শব্দটা একটু বেশিই হয়ে গেছে। আশ পাশের দুই চারজন উল্টা দিকে ফিরে এদিকে দেখে। কি হয়েছে বুঝার চেষ্টা করে।
-আশ্চর্য ব্যাপার! হাসছো কেন? ঐই দেখো সবাই তোমার দিকে তাকাচ্ছে।
- তাকাক যার ইচ্ছা। অন্যরা তাকাবে এই ভয়ে আমি হাসবো না?
-আরে এখানে তো হাসির কিছু হলো না। বললাম, সবকিছু বেশি বুঝো। আর এ কথায় হাসির কি হলো?
-তুমি সব সময় বলো আমি গাধা, বোকা। কিছুই বুঝি না। আর এখন বলছো আমি সব কিছু বেশি বুঝো। থাক যাওয়ার আগে অন্তত একটা প্রশংসা পেলাম। আমার ইচ্ছা করছে সার্টিফিকেট বানাতে। সেখানে লেখা থাকবে।
যাওয়ার কথা মনে পড়ায় মন খারাপ হয়ে যায় শুভ্রার। প্রতিদিন এখানে আসতো। ঢাকার কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পায়নি। সিলেটে ভর্তি হয়েছে। আগামী কাল সেখানে চলে যাবে। পরীক্ষার পর সিরিয়াস ভাবে পড়া উচিত ছিল। কোচিং করছে ঠিকই। তবে ঘুরতেই বেশি সময় গেছে। ভালভাবে পড়লে হয়ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই চান্স পেয়ে যেত। কেন যে ফাঁকি দেওয়া হলো।
-আরে আবার দেখি চুপ হয়ে আছে। কি হলো তোমার। কাল চলে যাবা। আজ ভালভাবে প্রাণ খুলে কথা বলো।
-আচ্ছা আমি চলে গেলে তোমার খুব খারাপ লাগবে তাই না।
-না, না। খারাপ লাগবে না। মহা আনন্দ লাগবে।
-এভাবে বলছো কেন?
- তুমি যাবে গা এই শহর ছেড়ে তা চিন্তাই করতে পারছি না, আর সেখানে তুমি বলছো শুধু খারাপ লাগবে। কাল যে বিকালের সময়টা কিভাবে কাটাবো?
-শত্রুর কথা বলছিলাম না।
-হুম।
-এ মুহূর্তে আমার সবচেয়ে বড় শত্রু মনে হচ্ছে রাতকে। রাতটা না আসলে আরো অনেকক্ষণ থাকতে পারতাম। বিকেলটা কত সুন্দর ছিল আমাদের জন্য।
এরিমধ্যে পিচ্ছি দুইটা ছেলে আসে। পা জড়িয়ে ধরে রফিকের। - ভাইজান টাকা দেন। কিচ্ছু খাই নাই।
রফিক ছুটাতে চেষ্টা করে। যতই চেষ্টা করে তত বেশি আঁকড়ে ধরে। এবার রফিক ধমক দেয়, সর বলছি। না হলে কষায় থাপ্পড় মারবো। সব দাঁত ফেলে দেবো। কথাগুলোর মধ্যে কঠিন কিছু ছিল।
দূরে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটা দৌড় দেয়, আর পা ধরে থাকা ছেলেটাও পা ছেড়ে দিয়ে চলে যায়।
শুভ্রা কিছু বলে না। রাতের অন্ধকার। তারপরও শুভ্রাকে দেখা যাচ্ছে। ফর্সা মুখ। অন্ধকারে সুন্দর মুখ খানি আরো বেশি সুন্দর লাগছে।
শুভ্রা উঠে দাঁড়ায়। চলো বাড়ি ফিরতে হবে।
-হ্যা ঠিক বলছো। রাত হয়ে যাচ্ছে। দেরি হলে তোমার বাসায় আবার চিন্তা করবে।
ওরা দুজনে হাঁটা শুরু করে।
-তুমি না বললে আমি বেশি বুঝি।
-হুম।
- আমার ইচ্ছা হচ্ছে একটা সার্টিফিকেট বানাতে। সেখানে লেখা থাকবে, জনাব রফিক সাহেবকে বেশি বুঝার জন্য এই প্রত্যায়নপত্র দেওয়া হচ্ছে। নিচে তোমার স্বাক্ষর থাকবে। এই যে কত বড় স্বীকৃতি হবে বুঝতে পারছো?
-আচ্ছা তোমার মন খারাপ?
- না, না।
রফিক ভাবে কাল দূরে চলে যাচ্ছে এজন্যই মন খারাপ। তাই সে কিছু বলে না। নিঃশব্দে দুজনে পাড়ি দেয় আরো কিছু দূর।
কাল সিলেট চলে যাবে। আচ্ছা যে ছেলে পিচ্চি ছেলের সাথে এরকম বিশ্রী ভাবে কথা বলে তার সাথে সম্পর্ক রাখা কি ঠিক। রাতে শুয়ে শুয়ে চিন্তা করে। ঐ ছেলেটা পায়ে ধরেছে তাই বলে এমন করতে হবে। বিপদে পড়ছে বিধায় না সাহায্য খুঁজতে এসেছে। তাই বলে এভাবে ধমক দিতে হবে।
বিরক্ত লাগছে রফিকের উপর। আজ দেখা করতে না গেলেই ভাল ছিল। মনটাই খারাপ হয়ে গেল। ধূর। কাল অনেক বড় জার্নি করতে হবে। ঘুমানো দরকার। কিন্তু ঘুম আসছে না। ঐ ছেলে দুইটির প্রতি রফিকের কর্কশ শব্দটাই কানে বাজছে, সর বলছি। না হলে কষায় থাপ্পড় মারবো। সব দাঁত ফেলে দেবো। কথাগুলোর মধ্যে কঠিন কিছু ছিল।
সে মুহূতের্র রফিকের রাগী চেহারাটা চোখে ভাসছে। চেষ্টা করছে না চিন্তা করতে। তারপরও চলে আসছে।
মোবাইলে রিং হচ্ছে। রফিক কল করছে। অথচ ধরতে একটুও ইচ্ছা করছে না। রিং টোন অফ করে দিল শুভ্রা।
কিছু ভাল লাগছে না। ইচ্ছা হচ্ছে রফিকের সাথে কোন সম্পর্ক না রাখতে। অথচ রফিককে অনেক ভালবাসে।
নিজেকে নিজের কাছে অনেক বেশি অচেনা মনে হচ্ছে শুভ্রার।