অনেক বৃষ্টি । সাধারণত বৃষ্টি হওয়ার বেশ কিছুক্ষণ আগে থেকে মেঘ ঘুরাঘুরি করে আকাশে। সূর্যের সাথে মেঘের লড়াই চলে। একসময় বৃষ্টি নামে। কিন্তু কেন যেন তা হয় না। এই সুন্দর ফকফকা আকাশ। মেঘের কোন লক্ষণ নাই। অথচ হঠাৎ মেঘের আগমণ। সাথে সাথে বৃষ্টি। অনেকেই বৃষ্টির পানি থেকে বাঁচতে গিয়েও পারে নাই। কঠিন সে বৃষ্টি। আমার বৃষ্টিতে ভিজতে ভালই লাগে। তাই আমার সমস্যা নাই। কিন্তু আমার সাথে যে আছে ওর ঠান্ডার সমস্যা। একটু বৃষ্টিতে ভিজলেই ওর ঠান্ডা লেগে যায়। টনসিল ফুলে উঠে। কিছু খেতে পারে না। খেলেই গলা ব্যথা করে। তাই ইচ্ছা থাকা স্বত্বেও ও বৃষ্টিতে ভিজে না।
আমি বলি, যাও যাত্রী ছাউনিতে গেলে পানির ছিটা কম পড়বে। চলো সেখানে গিয়ে দাঁড়াই।
ও মাথা নাড়ে। যাবে না। মাথায় ওড়নাটা ভালভাবে জড়িয়ে নেয়। ওর মুখ বেয়ে বৃষ্টির পানি ঝরে। ফোটা হয়ে তা নিচে পড়ে। বৃষ্টির পানিতে ফর্সা মুখটা আরো বেশি ফর্সা দেখায়। কালো চুলগুলো যেন আরো কাল হয়।
আমি তাকিয়ে থাকি। পলক পড়ে না আমার।
ও দুই হাতে পানি ভরে আমার চোখের দিকে ছিটিয়ে দেয়। এভাবে দেখো আছো কেন? এভাবে দেখে থাকবে না তো।
আমার লজ্জা লাগে। আমি অন্যদিকে তাকানোর চেষ্টা করি। প্রথমেই আকাশের দিকে তাকাই। যে কেউ ভাববে কোন উদাস কবি বুঝি আকাশের পানে চেয়ে আছে। একটু পরই একটা কবিতা লিখতে বসে পড়বে। । কিন্তু কবিতার ক ও আমার মাথায় নেই। আমার মাথায় শুধু লামিছা। ওর চেয়ে বড় কবিতা আর যে আমার নেই। ওর প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি কথা, প্রতিটি নিশ্বাসই আমার জন্য কবিতা। ইচ্ছা হয় ওর একেবারে পাশে গিয়ে ওর নিঃস্বাসের শব্দ শুনি। কিন্তু সাহস হয় না। যদি ভুল বুঝে। যদি খারাপ কিছু ধরে নেয়। তাই আমি কিছুটা দূরত্বই রাখি।
আকাশের পানে দিকে চেয়ে থাকা দেখে লামিছা ডাক দেয়, এই যে আকাশ বিশেষজ্ঞ! কি কি পেলেন আকাশের দিকে এভাবে নিখুঁত মনযোগ দিয়ে?
আমি কিছু বলি না। উপরের দিকেই তাকিয়ে থাকি। বৃষ্টি ফোটাগুলোতেও যেন ওকেই দেখি।
আমার চুপ থাকা দেখে পিঠে একটা নরম থাপ্পড় বসিয়ে দেয় লামিছা। -হুম আমাকে এখানে দাঁড়িয়ে রেখে উনি ধ্যানে আছেন।
- তুমিই তো বললে তোমার দিকে ঐভাবে না তাকাতে। তাই আকাশের পানে তাকিয়ে আছি।
-বললাম বিধায় এভাবে তাকানো বাদ দিয়ে দেবা? ধ্যানে পড়ে যাবা? ঠিক আছে বাবা আর বলবো না। যত ইচ্ছা তাকাও। তোমার চোখ ব্যথা হলে আমার দায় নাই।
আমি হেসে উঠি। এরকম সুন্দর জিনিষ দেখা চোখের জন্য ভাল। দৃষ্টি শক্তি প্রখর হয়। চোখ ভাল থাকে।
- ওমা সন্নাসীর মত একটু আগে ধ্যানে পড়ল। এখন আবার দেখি চোখের ডাক্তার হয়ে গেল।
বৃষ্টি থেমে গেছে। মেঘ ডিঙিয়ে সূর্যটা আবার উঠার চেষ্টা করছে। আমরা দুজনেই ভেজা। বৃষ্টি থাকা অবস্থায় ভেজা কাপড়ে বেমানান লাগে না। তবে বৃষ্টি না থাকলে ভেজা কাপড়ে ঠিক মানায় না। তাই দুজনে দুই রিকসা করে বাসায় রওয়ানা দিই।
আমি মাঝে মাঝে গোঁ ধরি একসাথে রিকসায় চড়ব বলে। একসাথে গল্প করতে করতে সারা শহর ঘুরবো। কিন্তু ও কিছুতেই রাজি না। বলে বিয়ের আগে একসাথে রিকসায় উঠবো না। বিয়ের পরের জন্য কিছু স্পেশাল থাক।
দুই রিকসা। দুজনেই চলি এক পথে। আমাদের বাসা কাছাকাছি। রিকসা দুইটা হলেও কথা বলে যাই দুজনেই মোবাইলে। সারা পথ ব্যাপী কথা হয়। এত কাছে থেকেও কেমন যেন দূর। মাঝে মাঝে বিরক্ত লাগে। একটু পাশে বসে রিকসা চড়লে কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর নিজেকে বুঝাই বিয়ের পরে তো হবেই। তখন অনেক মজা লাগবে। থাক না কিছুদিন অধরা হয়ে। বুনা স্বপ্নগুলো আগলে ধরি। রাতে ঘুমানোর আগে কল্পনা করতে থাকি দুজনে হাতে হাত রেখে সারা শহর ঘুরছি। অনেক দূর চলে যাবো। হারিয়ে যাবো। পরে আগের পথ খুঁজে বের করতে করতে রাত হয়ে যাবে।
স্বপ্নগুলো বুকে ধরে শান্তির ঘুম ঘুমাই। লামিছা মায়ের সাথে রাতে ঘুমায়। তাই রাতে কথা হয় না। আমিও সুবোধ বালকের মত ঘুমিয়ে পড়ি।
মাঝে মাঝে সকালে ফোন দেয়। সকাল বেলায় হাঁটতে বের হয়। আমি চোখ মুখ কোন মতে ধুয়ে ছুটে যাই। চারদিকে হালকা আলো। শান্ত পরিবেশ। তবে ওর ডাকে গেলেও কাছাকাছি থাকা যায় না। দূর থেকে আমিও ওদের সঙ্গী হই। ওর মা ডায়েবেটিস রোগী। সেজন্য সকালে হাঁটতে আসেন। মা-কে সঙ্গ দিতে লামিছাও আসে।
আমি একটা নিরাপদ দূরত্ব রেখে ওদের সাথে হেঁটে যাই। কখনো বা চোখে চোখে কথা হয়। অদ্ভূত সেসব কথা। মুখ উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করে কেমন আছো? আমি মুচকি হেসে চিবুক নিচু করি। অথ্যাৎ ভাল আছি।
এত সকালে নাস্তা আমি খাই না। লামিছা জিজ্ঞেস করে খেয়ে আসছি কিনা। হাত মুখের দিকে তুলে আবার নামিয়ে নেয়। এটারই অর্থ খেয়েছি কিনা।
জানে খাইনি। তারপরও সকালে দেখা হলেই এটা জিজ্ঞাসা করে। এটা করতে ভাল লাগে তাই করে।
আমি মাথা দুই পাশে নেড়ে জানিয়ে দিই না খাই নি। মাঝে মাঝে এই প্রশ্নে বিরক্ত হলে বেশি মাথা নাড়ি। অনেকটা ঝাঁকি দেওয়ার মত অবস্থা। ও হাসে।
যাওয়ার আগে ঘাড় সুন্দর করে ডানদিকে বেঁকায়। অথ্যাৎ চলে যাচ্ছে। আমি ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকি। যতক্ষন না ওরা প্রাইভেট কারে উঠছে ততক্ষণ তাকিয়ে রই। মাঝে মাঝে ইচ্ছা হয় ওদের কারের ড্রাইভার হতে। তারপরও তো কিছু সময় সাথে থাকতে পারতাম।
...................
৫ বছর কেটে গেছে এরি মধ্যে। লামিছার বিয়ে হয়েছে। আমারও বিয়ে হয়েছে। দুজনেই বিয়ের স্বপ্ন দেখতাম। স্বপ্ন সত্য হয়েছে । তবে তা একটু অন্যভাবে। দুজনের দুই জায়গায় বিয়ে। বাস্তবতার নানা চড়াই উৎড়াই পেরিয়ে আমাদের দুজনের বিয়ে করা সম্ভব হয় নাই। তবে দুজনের কাছেই রয়ে গেছে সুন্দর স্মৃতিগুলো। ফেসবুকে মাঝে মাঝে কথা হয়। আগের কথা গুলো ভাবি। তবে বাস্তবতা যে আমাদের ভালোবাসার অধিকার কেড়ে নিয়েছে। তাই সেটা দেখাতেও যাই না।
.............
বিদ্যালয়ের পুণর্মিলনী হবে। বিশাল অনুষ্ঠান। আমরা দুজনেই একই স্কুলে পড়েছি। তা অনেক জনের সাথে দেখা হয়। কথা হয়। যাওয়ার সময় দেখি গেটে দাঁড়িয়ে আছে লামিছা। আমাকে আসতে দেখে বলে, একটা কথা আছে। কোণার দিকে চলো। ওর পিছে পিছে যাই।
-হুম বলো।
- তুমি না বলতে আমার সাথে বসে রিকসা চড়বে। কখনো তো চড়া হয় নি। চলো আজ ঢাকা শহর ঘুরি।
- সেটাই না হয় অপ্রাপ্তির ঘরেই থাক। কি দরকার?
ও একটু অবাক হয়। এভাবে ফিরিয়ে দিচ্ছো?
আমি হাসি, তুমিও তো একদিন ফিরিয়ে দিতে।
-আমি তো ফিরিয়ে দিতাম ভবিষ্যতের জন্য জমা রাখতে।
আমি উদাস গলায় বলি, জমা জিনিষ জমাই থাক। তোমার কাছে জমা রেখে দিলাম।
ও প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকায়। কখনো নেবে না?
আমি কিছু বলি না। হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হয়। সেদিনের মত ঝুপঝাপ বৃষ্টি। দুজনে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকি। সবাই ব্যস্ত ফিরে যেতে। আর আমরা দাঁড়িয়েই থাকি।
সন্ধ্যা হয়ে আসে। বৃষ্টি থামার লক্ষণ নেই। আকাশে তারা নেই। তারা গুলো লুকিয়ে আছে মেঘের আড়ালে। আমাদের মাঝেও ভালবাসার প্রকাশ নেই। ভালবাসা গুলো যেন বাস্তবতার আড়ালে লুকিয়ে আছে। আমরা ভালবাসা খুঁজি। কিন্তু বাস্তবতা যে তা প্রকাশ করতে দেয় না।
আরো অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম। ভালবাসা আড়ালেই ছিল। থাক না আড়ালে তা। ভালবাসা আড়াল থাকার মধ্য দিয়েই আমাদের বিদায় ঘটে। আগের সে সুন্দর সময় গুলো দৃশ্যপটে ভেসে উঠে। বাস্তবতা আমাদের সংসার গড়তে দেয় নি। কিন্তু সুন্দর সময়গুলো মুছার ক্ষমতা তো বাস্তবতার নেই। আমি সুন্দর সময় গুলো ভেবে যাই। আচ্ছা লুমিছাও কি ভাবে সে সময়গুলোর কথা।
এসে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিই ভালবাসা প্রকাশের এক বড় অন্তরায় বাস্তবতা। আমার বউ তা দেখে জিজ্ঞেস করে, কি আধ্যাত্মিক টাইপের কথাবার্তা। ব্যাপার কি? এই স্ট্যাটাসের শানে নুযুল কি।
আমি কিছু বলি না। গম্ভীর হয়ে অন্য স্ট্যাটাস গুলোর দিকে চোখ বুলায়।
যে বুঝার সে ঠিকই বুঝে নেবে।
কাঁচা হাতের গল্পে : সুন্দর সময়
আমি বলি, যাও যাত্রী ছাউনিতে গেলে পানির ছিটা কম পড়বে। চলো সেখানে গিয়ে দাঁড়াই।
ও মাথা নাড়ে। যাবে না। মাথায় ওড়নাটা ভালভাবে জড়িয়ে নেয়। ওর মুখ বেয়ে বৃষ্টির পানি ঝরে। ফোটা হয়ে তা নিচে পড়ে। বৃষ্টির পানিতে ফর্সা মুখটা আরো বেশি ফর্সা দেখায়। কালো চুলগুলো যেন আরো কাল হয়।
আমি তাকিয়ে থাকি। পলক পড়ে না আমার।
ও দুই হাতে পানি ভরে আমার চোখের দিকে ছিটিয়ে দেয়। এভাবে দেখো আছো কেন? এভাবে দেখে থাকবে না তো।
আমার লজ্জা লাগে। আমি অন্যদিকে তাকানোর চেষ্টা করি। প্রথমেই আকাশের দিকে তাকাই। যে কেউ ভাববে কোন উদাস কবি বুঝি আকাশের পানে চেয়ে আছে। একটু পরই একটা কবিতা লিখতে বসে পড়বে। । কিন্তু কবিতার ক ও আমার মাথায় নেই। আমার মাথায় শুধু লামিছা। ওর চেয়ে বড় কবিতা আর যে আমার নেই। ওর প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি কথা, প্রতিটি নিশ্বাসই আমার জন্য কবিতা। ইচ্ছা হয় ওর একেবারে পাশে গিয়ে ওর নিঃস্বাসের শব্দ শুনি। কিন্তু সাহস হয় না। যদি ভুল বুঝে। যদি খারাপ কিছু ধরে নেয়। তাই আমি কিছুটা দূরত্বই রাখি।
আকাশের পানে দিকে চেয়ে থাকা দেখে লামিছা ডাক দেয়, এই যে আকাশ বিশেষজ্ঞ! কি কি পেলেন আকাশের দিকে এভাবে নিখুঁত মনযোগ দিয়ে?
আমি কিছু বলি না। উপরের দিকেই তাকিয়ে থাকি। বৃষ্টি ফোটাগুলোতেও যেন ওকেই দেখি।
আমার চুপ থাকা দেখে পিঠে একটা নরম থাপ্পড় বসিয়ে দেয় লামিছা। -হুম আমাকে এখানে দাঁড়িয়ে রেখে উনি ধ্যানে আছেন।
- তুমিই তো বললে তোমার দিকে ঐভাবে না তাকাতে। তাই আকাশের পানে তাকিয়ে আছি।
-বললাম বিধায় এভাবে তাকানো বাদ দিয়ে দেবা? ধ্যানে পড়ে যাবা? ঠিক আছে বাবা আর বলবো না। যত ইচ্ছা তাকাও। তোমার চোখ ব্যথা হলে আমার দায় নাই।
আমি হেসে উঠি। এরকম সুন্দর জিনিষ দেখা চোখের জন্য ভাল। দৃষ্টি শক্তি প্রখর হয়। চোখ ভাল থাকে।
- ওমা সন্নাসীর মত একটু আগে ধ্যানে পড়ল। এখন আবার দেখি চোখের ডাক্তার হয়ে গেল।
বৃষ্টি থেমে গেছে। মেঘ ডিঙিয়ে সূর্যটা আবার উঠার চেষ্টা করছে। আমরা দুজনেই ভেজা। বৃষ্টি থাকা অবস্থায় ভেজা কাপড়ে বেমানান লাগে না। তবে বৃষ্টি না থাকলে ভেজা কাপড়ে ঠিক মানায় না। তাই দুজনে দুই রিকসা করে বাসায় রওয়ানা দিই।
আমি মাঝে মাঝে গোঁ ধরি একসাথে রিকসায় চড়ব বলে। একসাথে গল্প করতে করতে সারা শহর ঘুরবো। কিন্তু ও কিছুতেই রাজি না। বলে বিয়ের আগে একসাথে রিকসায় উঠবো না। বিয়ের পরের জন্য কিছু স্পেশাল থাক।
দুই রিকসা। দুজনেই চলি এক পথে। আমাদের বাসা কাছাকাছি। রিকসা দুইটা হলেও কথা বলে যাই দুজনেই মোবাইলে। সারা পথ ব্যাপী কথা হয়। এত কাছে থেকেও কেমন যেন দূর। মাঝে মাঝে বিরক্ত লাগে। একটু পাশে বসে রিকসা চড়লে কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর নিজেকে বুঝাই বিয়ের পরে তো হবেই। তখন অনেক মজা লাগবে। থাক না কিছুদিন অধরা হয়ে। বুনা স্বপ্নগুলো আগলে ধরি। রাতে ঘুমানোর আগে কল্পনা করতে থাকি দুজনে হাতে হাত রেখে সারা শহর ঘুরছি। অনেক দূর চলে যাবো। হারিয়ে যাবো। পরে আগের পথ খুঁজে বের করতে করতে রাত হয়ে যাবে।
স্বপ্নগুলো বুকে ধরে শান্তির ঘুম ঘুমাই। লামিছা মায়ের সাথে রাতে ঘুমায়। তাই রাতে কথা হয় না। আমিও সুবোধ বালকের মত ঘুমিয়ে পড়ি।
মাঝে মাঝে সকালে ফোন দেয়। সকাল বেলায় হাঁটতে বের হয়। আমি চোখ মুখ কোন মতে ধুয়ে ছুটে যাই। চারদিকে হালকা আলো। শান্ত পরিবেশ। তবে ওর ডাকে গেলেও কাছাকাছি থাকা যায় না। দূর থেকে আমিও ওদের সঙ্গী হই। ওর মা ডায়েবেটিস রোগী। সেজন্য সকালে হাঁটতে আসেন। মা-কে সঙ্গ দিতে লামিছাও আসে।
আমি একটা নিরাপদ দূরত্ব রেখে ওদের সাথে হেঁটে যাই। কখনো বা চোখে চোখে কথা হয়। অদ্ভূত সেসব কথা। মুখ উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করে কেমন আছো? আমি মুচকি হেসে চিবুক নিচু করি। অথ্যাৎ ভাল আছি।
এত সকালে নাস্তা আমি খাই না। লামিছা জিজ্ঞেস করে খেয়ে আসছি কিনা। হাত মুখের দিকে তুলে আবার নামিয়ে নেয়। এটারই অর্থ খেয়েছি কিনা।
জানে খাইনি। তারপরও সকালে দেখা হলেই এটা জিজ্ঞাসা করে। এটা করতে ভাল লাগে তাই করে।
আমি মাথা দুই পাশে নেড়ে জানিয়ে দিই না খাই নি। মাঝে মাঝে এই প্রশ্নে বিরক্ত হলে বেশি মাথা নাড়ি। অনেকটা ঝাঁকি দেওয়ার মত অবস্থা। ও হাসে।
যাওয়ার আগে ঘাড় সুন্দর করে ডানদিকে বেঁকায়। অথ্যাৎ চলে যাচ্ছে। আমি ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকি। যতক্ষন না ওরা প্রাইভেট কারে উঠছে ততক্ষণ তাকিয়ে রই। মাঝে মাঝে ইচ্ছা হয় ওদের কারের ড্রাইভার হতে। তারপরও তো কিছু সময় সাথে থাকতে পারতাম।
...................
৫ বছর কেটে গেছে এরি মধ্যে। লামিছার বিয়ে হয়েছে। আমারও বিয়ে হয়েছে। দুজনেই বিয়ের স্বপ্ন দেখতাম। স্বপ্ন সত্য হয়েছে । তবে তা একটু অন্যভাবে। দুজনের দুই জায়গায় বিয়ে। বাস্তবতার নানা চড়াই উৎড়াই পেরিয়ে আমাদের দুজনের বিয়ে করা সম্ভব হয় নাই। তবে দুজনের কাছেই রয়ে গেছে সুন্দর স্মৃতিগুলো। ফেসবুকে মাঝে মাঝে কথা হয়। আগের কথা গুলো ভাবি। তবে বাস্তবতা যে আমাদের ভালোবাসার অধিকার কেড়ে নিয়েছে। তাই সেটা দেখাতেও যাই না।
.............
বিদ্যালয়ের পুণর্মিলনী হবে। বিশাল অনুষ্ঠান। আমরা দুজনেই একই স্কুলে পড়েছি। তা অনেক জনের সাথে দেখা হয়। কথা হয়। যাওয়ার সময় দেখি গেটে দাঁড়িয়ে আছে লামিছা। আমাকে আসতে দেখে বলে, একটা কথা আছে। কোণার দিকে চলো। ওর পিছে পিছে যাই।
-হুম বলো।
- তুমি না বলতে আমার সাথে বসে রিকসা চড়বে। কখনো তো চড়া হয় নি। চলো আজ ঢাকা শহর ঘুরি।
- সেটাই না হয় অপ্রাপ্তির ঘরেই থাক। কি দরকার?
ও একটু অবাক হয়। এভাবে ফিরিয়ে দিচ্ছো?
আমি হাসি, তুমিও তো একদিন ফিরিয়ে দিতে।
-আমি তো ফিরিয়ে দিতাম ভবিষ্যতের জন্য জমা রাখতে।
আমি উদাস গলায় বলি, জমা জিনিষ জমাই থাক। তোমার কাছে জমা রেখে দিলাম।
ও প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকায়। কখনো নেবে না?
আমি কিছু বলি না। হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হয়। সেদিনের মত ঝুপঝাপ বৃষ্টি। দুজনে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকি। সবাই ব্যস্ত ফিরে যেতে। আর আমরা দাঁড়িয়েই থাকি।
সন্ধ্যা হয়ে আসে। বৃষ্টি থামার লক্ষণ নেই। আকাশে তারা নেই। তারা গুলো লুকিয়ে আছে মেঘের আড়ালে। আমাদের মাঝেও ভালবাসার প্রকাশ নেই। ভালবাসা গুলো যেন বাস্তবতার আড়ালে লুকিয়ে আছে। আমরা ভালবাসা খুঁজি। কিন্তু বাস্তবতা যে তা প্রকাশ করতে দেয় না।
আরো অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম। ভালবাসা আড়ালেই ছিল। থাক না আড়ালে তা। ভালবাসা আড়াল থাকার মধ্য দিয়েই আমাদের বিদায় ঘটে। আগের সে সুন্দর সময় গুলো দৃশ্যপটে ভেসে উঠে। বাস্তবতা আমাদের সংসার গড়তে দেয় নি। কিন্তু সুন্দর সময়গুলো মুছার ক্ষমতা তো বাস্তবতার নেই। আমি সুন্দর সময় গুলো ভেবে যাই। আচ্ছা লুমিছাও কি ভাবে সে সময়গুলোর কথা।
এসে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিই ভালবাসা প্রকাশের এক বড় অন্তরায় বাস্তবতা। আমার বউ তা দেখে জিজ্ঞেস করে, কি আধ্যাত্মিক টাইপের কথাবার্তা। ব্যাপার কি? এই স্ট্যাটাসের শানে নুযুল কি।
আমি কিছু বলি না। গম্ভীর হয়ে অন্য স্ট্যাটাস গুলোর দিকে চোখ বুলায়।
যে বুঝার সে ঠিকই বুঝে নেবে।
কাঁচা হাতের গল্পে : সুন্দর সময়