আগে এমন কোন অভিজ্ঞতা নেই। তাই লজ্জা লজ্জা করছে সুমনের। সব কিছু কেমন যেন। খাটের ওপর বসে আছে তিথি। মাথায় ঘোমটা দেওয়া।
বিকালে নিজের অবিবাহিত জীবনের পরিসমাপ্তি টেনেছে। ঠিক টেনেছে বলা যায় না। ওর মা অনেক দিন ধরে বলতেছিল, ঘর খালি খালি লাগে। বউ আনা দরকার। প্রথমে কিছুটা আপত্তি করেছিল বটে। তারপরও কিভাবে যেন ঘটনা ঘটে গেলো। একসময় নিজেকে আবিষ্কার করলো জামাইয়ের সাজে বিয়ের মঞ্চে বসে আছে।
বিয়ে হয়েছে কনের বাড়িতে। বাসার সামনে বিশাল মাঠে প্যান্ডেল করে সেখানে খাওয়া দাওয়ার আয়োজন। দক্ষিণদিকে মঞ্চ করা হয়েছে জামাই বসার জন্য। জামাই হয়ে মঞ্চে বসাটা কেমন যেন। সবাই হা করে দেখে যাচ্ছে। যেন কোরবানির গরু দেখতে এসেছে এমন ভাব। এ জামাইয়ের সাথে বিয়ে হওয়ায় জিতছে না হারছে এমন অনুভূতি।
এখনকার যুগে বেশির ভাগ বিয়েই হচ্ছে নিজেদের পছন্দমত। পরে পরিবারকে জানানো হচ্ছে। নিজের পছন্দমত বিয়ের সুযোগ পেলে রুপাকেই বিয়ে করত। মেয়েটার কারণেই লেখালেখিটা শুরু। পাশের বাসায় থাকতো। মেয়েটার এত লম্বা ঘন কালো চুল ছিল যে ধরে দেখতে ইচ্ছা হতো। কিন্তু কখনো সাহসের অভাবে ধরে দেখা ইচ্ছাটা ব্যক্ত করা যায়নি। ওই রুপা গল্পের বইয়ের ভক্ত ছিল। দিনরাত দেখা যেতো হাতের কাছে গল্পের বই ধরা।
বিকেলে রাস্তায় ক্রিকেট খেলত সুমনরা। ব্যাটিংয়ে গেলে সুমনের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকতো বলটা রুপাদের বাসার দিকে ফেলা। যদিও বাসার বাউন্ডারির ভেতরে বল ঢুকলে আউট। বল আনতে গেলে রুপা বিরক্ত ভাবে তাকাতো।
: এই আপনাদের কতবার না মানা করেছি রাস্তায় ক্রিকেট না খেলতে। এরপর যদি এখানে বল আবার আসে তাহলে আর দেয়া হবে না।
বিরক্তস্বরে কথাগুলো বলতো। কিন্তু ওর বিরক্ত ভাবটা অনেক ভাল লাগতো সুমনের। প্রতিবার দিবে না বললেও ঠিকই পরের বার দিতো।
একদিন বল আনতে গিয়ে সুমন জিজ্ঞেস করে, আচ্ছা তোমাকে যখনই দেখি বই নিয়ে বসে আছো। কি পড়ো এত! তোমার তো চোখ নষ্ট হবে।
প্রতিদিন বিরক্ত স্বরে তাকালেও সেদিন চোখে মুখে বিরক্ত ছিল না। বরং একটু হাসি দিয়ে বলেছিল, বই পড়লে বুঝি চোখ নষ্ট হয়?
: হুম! চোখের ওপর চাপ পড়ে।
এটা শুনে হেসে উঠে রুপা। বইটা কোলের ওপর রেখে বলে, বই পড়ার মজা বুঝেন না তো। তাই এ কথা বলছেন। যদি বুঝতেন তাহলে আপনিও রাতদিন বই পড়তেন।
সেদিন আর কথা হয়নি। বলের জন্য অন্যরা অপেক্ষা করছিল। তাই সুমনের চলে আসতে হয়। এরপর বল আনতে গেলে হালকা পাতলা কথা হতো।
একদিন রুপা জিজ্ঞেস করে, আচ্ছা আপনি একটা কথা সত্যি করে বলবেন তো?
: হা, বলো।
: আপনি কি আমাদের বাউন্ডারির ভেতরে ইচ্ছা করে বল ফেলেন? প্রায় প্রতিদিনই নিতে আসেন।
আরে এ মেয়ে বুঝলো কিভাবে। তখন সুমন ইন্টার পরীক্ষার্থী। রুপা স্থানীয় গার্লস স্কুলে দশম শ্রেণীতে পড়ত। এ বয়সে সে বুঝে গেলো কিভাবে। অবাক হয় সুমন।
সুমন বলটা হাতে নিয়ে কাচুমাচু করে। তা দেখে রুপা দুষ্টামি করে হেসে বলে, ঠিক আছে বলতে হবে না সত্য কথা। আপনি এম্নেই আসতে পারেন। বল নেয়ার বাহানা দিয়ে আপনার আসতে হবে না। আর একটু দাঁড়ান।
দৌড় মেরে ঘরের ভেতরে ছুটে যায় রুপা। একটু পর একটা বই নিয়ে বেরিয়ে আসে। বইটা সুমনের হাতে দিয়ে বলে এটা পড়বেন। আশা করি ভাল লাগবে।
তখন ওই মুহূর্তে বইটা সেভাবে খেয়াল করে না। তবে এটা ভাবতে ভাল লাগে রুপার হাতের স্পর্শ লাগা বইটা এখন নিজের কাছে। বইটাকে অনেক আপন মনে হয়। কেমন জানি অদ্ভূত অনুভূতি হয়। তলপেটে একটা ব্যথা বয়ে যায়। এই আনন্দের ব্যথা।
বাসায় এসে বইটা উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখে। উপন্যাসের নাম অন্যদিন, লেখক হুমায়ুন আহমদ। সন্ধ্যায় থেকে বইটি পড়া শেষ করে। বেশ সুন্দর। কি সাবলীল ভাষায় লেখা। রাতে মা যখন খাবার খেতে ডাকছিলেন তখন খুব বিরক্ত লাগছিল বইটি পড়া বন্ধ করে যেতে হবে দেখে। রাত দুইটায় উপন্যাসটি পড়া শেষ।
এরপর থেকে নিয়মিত বই এনে পড়া শুরু। বই আনতে গেলেই শুধু হুমায়ুন আহমদের গল্প। পুরা হুমায়ুন ভক্ত, যেন হুমায়ুন ছাড়া বাঁচবে না। তখন সুমনের হুমায়ুন আহমদের প্রতি ঈর্ষা হয়। কোন দূরে লিখে, বয়স অনেক বেশি তার প্রতি এভাবে সুন্দর একটা মেয়ের আকুলতা। ব্যাপারটা মেনে নিতে পারে না সুমন।
রুপা যখন হুমায়ুন আহমদের গল্প করে হুম, হা করে শুনে যায়। কিন্তু প্রতিবাদ করে না কোন কথার। যদি বিরক্ত হয়। এভাবে প্রাণবন্ত গল্প যদি আর না করে এ ভয়ে।
হুমায়ুনের একটা নন্দিত নরকে বইটা নিয়ে কথা হচ্ছিলো। এসময় রুপা বলে, সুমন ভাই, একটা কথা। বেশ লজ্জার। তবে আপনাকে বলছি। হুমায়ুন আহমদের সাথে যদি দেখা হতো তাহলে বলতাম আমাকে যেন তার সঙ্গে সারাজীবন থাকার সুযোগ দেয়।
একথা শুনে সুমন বেশ ক্ষুব্ধ হয়, বেশ জেদ উঠে। কি বলে এ মেয়ে। এরকম বয়স্ক এক মানুষের সাথে সারাজীবন থাকবে। কি আজব রে বাবা।
সেদিন বাসায় গিয়ে কি যেন হয়। বড় মামার দেয়া একটা ডায়েরী ছিল। অনেক সুন্দর। হাতের লেখা বিশ্রী বলে সেখানে কিছু লেখা হয়নি। সেদিন ওই ডায়েরীতেই লেখা শুরু করে। কোন শিরোনাম ছাড়া লিখে যায়। একটা ছেলেকে নিয়ে গল্প যে প্রতিদিন সিদ্ধান্ত নেয় ঘর ছেড়ে পালাবে। তার মা-বাবার ঝগড়া ভাল লাগে না। কিন্তু একমাত্র ছোটবোনের মায়ার কারণে যেতে পারে না। যেদিন ছোট বোনটার বিয়ে হয় সেদিন সে পালিয়ে যায়। তবে শুধু বাসা থেকে না। পুরা পৃথিবী থেকে। কষ্টের গল্প। গল্পের নাম রাখে বোন ও পৃথিবী।
ওই সপ্তাহে আরো পাঁচটা গল্প লিখে ওই ডায়েরীতে। তবে কাউকে দেখায় না।
একদিন সাহস করে গল্প লেখা ডায়েরীটা রুপার কাছে দেয়।
: এখানে কিছু লেখা ছিল। সময় পেলে পড়ো। এ কথাটা বলেই চলে আসে। রুপা আশ্চর্য হয়ে দেখে একটা ছেলে লজ্জিত মুখে চলে যাচ্ছে। ভাল লাগে দৃশ্যটা দেখতে।
ডায়েরীটা দেওয়ার পর থেকে ভয়ে ভয়ে থাকে সুমন। রুপা পড়বে তো। পড়লে আবার বিরক্ত হবে নাতো। ভয়ে দুই দিন ওই পথেই যায় না।
তৃতীয় দিন সকালে বাসায় বসে কিছু লগের অংক করছিল। এসময় রুপাদের কাজের মেয়ে এসে একটা চিরকুট দিয়ে যায়। চিরকুটে লেখা, এভাবে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন কেন! আপনার খবর আছে। আজই অবশ্যই আসবেন।
দেখা করতে গেলে রুপা প্রথমেই জিজ্ঞাসা করে, আচ্ছা আপনি কেমন মানুষ বলেন তো?
: কেন?
: আমি তো বিপদে পড়ে গিয়েছি। কিন্তু উদ্ধারের পথ পারছি না। অথচ আপনার কোন দেখা নাই।
কি বিপদ? আতঙ্কের স্বরে জিজ্ঞাসা করে রুপা।
এসময় রুপার মুখে সে দুষ্টামি হাসিটা খেলা করে, আগে তো শুধু হুমায়ুন আহমদকে চাইতাম, এখন তো নতুন আরেক জন দেখি সেখানে যোগ হয়েছে আপনার গল্পগুলো পড়ে ডট ডট ডট। বাকীটা বুঝে নেন।
সুমনের এত্ত ভাল লাগে তা শুনে। কিন্তু লজ্জায় মুখ নিচে নামিয়ে ফেলে। এভাবে সরাসরি কেউ বলে নাকি!
তা দেখে রুপা বলে, এত লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। আপনার সাথে দুষ্টামি করছিলাম। তবে অনেক দারুণ লিখেছেন। চাওয়া গুলো না হয় কাগজেই থাক। গল্পে এত রোমান্টিকতা, আপনাকে দেখলে তো মনে হয় ভাজা মাছটিও উল্টে খেতে পারেন না। কিন্তু এত রোমান্টিক গল্প লিখলেন কিভাবে। বোন ও পৃথিবী গল্পটা পড়ে তো অনেকক্ষণ কেঁদেছি আমি। এমন কষ্টের গল্প লিখলেন কেন?
এত ভাবনা দিয়ে লেখা হয়নি। লিখতে বসেই গল্পগুলো লেখা হয়েছে। তাই সুমন কিছু বলে না। তার চুপ থাকা দেখে বুঝার উপায় নেই তার ভেতরে কি পরিমাণ আনন্দ হচ্ছে। ইচ্ছা হচ্ছে চিৎকার করে বলতে, আমি একজন সুখী মানুষ। আমার কোন দু:খ নেই।
সেভাবেই লেখালেখি শুরু। কোন লেখা লিখলেই প্রথম রুপাকে পড়তে দিতো। বিভিন্ন পত্রিকায় লেখাগুলো ছাপা হতে থাকে।
এমন সময় খবর আসে রুপার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। পাত্র ম্যাজিস্ট্রেট। তখন সুমন অনার্স থার্ড ইয়ারের ছাত্র। এমন কিছু করা সম্ভব ছিল না যে রুপাকে সাথে রাখার। আসলে মুখ ফুটে কখনো নিজের চাওয়াটার কথা বলতে পারে নি ও।
এরপর অনেক দিন লেখালেখি বন্ধ ছিল। ফেসবুকে সময় কাটানোর সুবাদে ভাল একটা নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। সেখানে বিভিন্ন পেজে গল্প প্রকাশিত হয়। গল্প গুলো পড়তে ভাল লাগে সুমনের। যেসব গল্প আনন্দের মাধ্যমে শেষ হয় তা বেশি ভাল লাগে। আসলে নিজের প্রথম আবেগটা আনন্দের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়নি বলেই হয়ত মিলনাত্মক গল্পগুলোতে এত ভাল লাগা।
আবার লেখালেখি শুরু। জনপ্রিয় পেজগুলো নিয়মিত পোস্ট হতে থাকে গল্প। বিভিন্ন মেয়ের নাম দিয়ে অদ্ভূত সব প্রেমের গল্প লিখে যায়। গল্প পড়ে কোন কোন মেয়ে দুর্বল হয়। ভালোবাসার কথা বলে। কিন্তু কোন ধরণের সম্পর্ক গড়া থেকে মুক্ত থাকে সুমন।
এরপর তিথির সাথে বিয়ে। সন্ধ্যায় কিছুটা বৃষ্টি হয়েছিল। বৃষ্টি হওয়াকে অনেকে ভাল বলছে। এটা নাকি সুলক্ষণ। বিয়েতে বৃষ্টি হলে দাম্পত্য জীবন সুন্দর হয় এমন কথা অনেকে বলাবলি করছে। ঘড়ির কাঁটায় রাত এগারটা।
তিথি খাটে বসা। সুমন বুঝতে পারছে না কি বলবে। খাটের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। নিজেকে অসহায় অসহায় মনে হয়। বন্ধুরা অনেকে অনেক কথা বলেছে। সেগুলো সব মনে করার চেষ্টা করছে। জাহিদ তো পুরা আক্রমণাত্মক হওয়ার টিপস বলে গেছে। অন্যরা জাহিদের কথা শুনে হাসতে হাসতে শেষ।
তিথি ঘোমটা সরিয়ে নিয়েছে। সুমনের দিকে ওর দৃষ্টি। এভাবে দাড়িয়ে আছেন কেন? আপনার কপালে দেখি ঘাম। এত ভয়ের কিছু নেই। আমি বাঘ ও না, ভাল্লুকও না। আপনি নিশ্চিন্তে বিছানায় উঠতে পারেন।
সুমন স্বাভাবিক হওয়ার জন্য হাসার চেষ্টা করে। সে হাসিটায় তাকে আরো বোকা বোকা লাগে।
: খাটে উঠে বসেন। আপনার সাথে আপনার সাথে অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা আছে।
সুমন আতঙ্কিত হয়, পূর্বের প্রেম ট্রেমের গল্প শুরু করবে না তো। বিছানার উঠে বসে। তিথির দিকে তাকায়। অনেক সুন্দর একটি মুখ, তার দিকে চেয়ে আছে।
এভাবে আবেগী চোখে তাকিয়ে লাভ হবে না, আপনার সাথে আমার হিসাব আছে। আগে সেটা ক্লিয়ার করতে হবে। অনেকটা বজ্রকন্ঠে বলে তিথি।
আরে বাবা এটা কি ধরণের কথা। বিয়ের প্রথম দিন কেউ এভাবে কথা বলে নাকি। বন্ধুরা তাদের অভিজ্ঞতার যেসব গল্প বলছে তা তো অনেক সুন্দর প্রেমময় সময়ের গল্প। এই মেয়ে তো বিয়ের প্রথম দিন পুরা হিসাবের খাতা নিয়ে বসেছে মনে হচ্ছে।
আমতা আমতা করে সুমন বলে, কিসের হিসাব?
ওয়াও আপনি দেখি কথা বলতে পারেন। আমি তো এতক্ষণ ভাবছিলাম আপনাকে বোবায় ধরেছে। আজ রাতে আর কথা বলতে পারবেন না। আমি একাই কথা বলে যাবো। আপনি শুধু শুনবেন। বোবায় ধরা বাসর হবে আমার বাস্তব জীবনের গল্প। বেশ ভাল লাগছে আপনি কথা বলতে পারায়। আচ্ছা এবার সরাসরি হিসাবে চলে আসি।
সুমন বলে, বলেন।
: আপনার চেয়ে আমি বয়সে তিন বছরের ছোট। সুতরাং আমাকে তুমি করে বলতে পারেন। শুনেন আপনি তো অনেক রোমান্টিক রোমান্টিক গল্প লিখেন। আপনার গল্প অনেক আগে থেকেই পড়তাম। কিন্তু যখন আপনার সাথে বিয়ের কথা চলছিল তখন থেকে মনযোগ দিয়ে পড়া শুরু করলাম।
সুমন জিজ্ঞাসা করে, আমার লেখা গল্প ভাল লাগে?
: এখানে ভাল লাগা না লাগার প্রশ্ন না। আমি অন্য কারণে মনযোগের সাথে পড়েছি।
আরে কার পাল্লায় পড়লো। রাতটা দীর্ঘ মনে হচ্ছে সুমনের। মনে হচ্ছে রিমান্ডে আনা হয়েছে তাকে। বাস্তব জীবনে কখনো রিমান্ডে যাওয়ার অভিজ্ঞতা হয়নি। এখন তিথির ভূমিকা দেখে মনে হচ্ছে বাসর রাতে সে অভিজ্ঞতা পেতে যাচ্ছে।
তিথিই বলে, কারণ জিজ্ঞাসা না করে কি এত ভাবছেন?
যন্ত্রের মত গলায় সুমন বলে, কি কারণ?
: আমি দেখতে চাচ্ছিলাম গল্প গুলোতে বাস্তব মেয়ের প্রতি আপনার আবেগ। বেশ কয়েকটি গল্প দেখলাম উৎসর্গ করে লেখা। যার জন্য উৎসর্গ করা তাকে সাথে উত্তম পুরুষের লেখা গল্প। ওই গল্প গুলো পড়ে এত বিরক্ত লাগছে।
সুমনের অবাকের মিটারের কাটাটা ক্রমান্বয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ছুটে চলছে। ও জানতে চায়, কেন বিরক্ত লাগছে?
: ওই গল্প গুলোতে দেখলাম লেখকের আবেগ ওই মেয়েগুলোর প্রতি ফুটে উঠেছে। এমন কাজ চলবে না।
তিথির কপালে কয়েকটা চুল এসে পড়েছে। সেগুলো ডান হাত দিয়ে সরিয়ে দেয়। তারপর বলে, ওই গল্পগুলো ডিলিট করে দিতে হবে।
সুমন অস্ফুট কন্ঠে বলে, মানে?
: মানে সহজ, আপনার সকল আবেগ থাকবে আমার জন্য শুধু, অন্য কোন মেয়ের জন্য না। এখন ওই গল্পগুলো মুছে ফেলতে হবে আপনার নোট থেকে।
এ কি নির্দেশ। কোন পাষন্ড মেয়ের কবলে পড়া। এত নির্মল মুখ, ভাসা ভাসা চোখ এমন মেয়ে এই কঠিন নির্দেশ দিচ্ছে কেন!!
কিন্তু ওই গল্পগুলো তো তোমার কোন ক্ষতি করেনি। গল্প গুলো অনেক জায়গায় প্রকাশিতও হয়েছে। আমার নোট থেকে মুছে ফেলতে হবে কেন।
মুছে ফেলতে হবে কেননা অন্য মেয়ের প্রতি আপনার আবেগ বহন করেছে গল্পগুলো। আমি চাই না অন্য মেয়ের আবেগ বহনকারী কিছু আপনার একাউন্টে থাকুক। আবেগ শুধু একজনের জন্য থাকা উচিত। ভাঙা আবেগের কাউকে আমি পছন্দ করি না।
কিছু বলে না, অন্য সময় অনেক যুক্তি দেওয়া যেত। লেখকের স্বাধীনতা বলে একটা কথা আছে। কিন্তু এ বিষয়ে কথা বলতে ইচ্ছা করছে না। মায়ের প্রতি বিরক্ত লাগছে। এই কোন মেয়েকে বিয়ের জন্য ঠিক করেছে। এমন জেলাস মেয়েও থাকে। এইরকম একটা মেয়ের সাথে সারাজীবন পার করতে হবে এটা কল্পনা করতেই কেঁপে উঠলো মন। কি ভয়ানক হয়ে যাবে জীবন।
তিথি বলে, আপনাকে খুব বিরক্ত মনে হচ্ছে। এখনি সিদ্ধান্ত নিতে হবে এমন কথা নেই। আগে চা খাবো। চা খাওয়ার পর সিদ্ধান্ত।
সুমন বলে, এ মুহূর্তে চা পাবে কোথায়! সবাই ঘুমাচ্ছে।
: আমি চা বানাতে পারি।
আশ্চর্য গলায় জিজ্ঞেস করে, তুমি নিজে গিয়ে চা মানাবে?
আরে, আপনি দেখি পাগল হয়েছেন। বাসর রাতে কোন মেয়ে পাকঘরে গিয়ে চা বানায় না।
: কিন্তু দোকানও তো বন্ধ হয়ে গেছে। এত রাতে বাহিরে গিয়েও তো লাভ হবে বলে মনে হয় না।
: আরে বুদ্ধু বাসর রাতে কোন স্বামী বাহিরে চা আনতে যায় না। আপনি আসলে বুদ্ধুই।
সুমন মাথা নাড়ে।
নিতু চা বানিয়ে দিয়ে গেছে। ফ্লাক্সে আছে। সেখান থেকে খাবো। সব আগে থেকে ঠিক করা।
তিথি কিছু বলে না। ফ্লাক্স থেকে চা ঢালে দুইটা কাপে। একটা কাপ সুমনের হাতে দেয়। বলে, স্বামীর প্রতি প্রথম সেবা। মোবাইলের ঘড়ির দিকে তাকায়। এখন ১২টা ১০ বাজছে। সময়টা দেখে নিলাম স্মরণীয় ঘটনা।
চায়ে প্রথম চুমুক দেওয়ার পর বলে, আপনারা লেখকরা তো ভাবেন গল্পতে সব মজার ঘটনা ঘটে, বাস্তবে না। দেখছেন বাসর রাতে চায়ের ব্যবস্থা করে ফেলেছি। বাস্তবে এমন সুন্দর সুন্দর অনেক ঘটনা ঘটে।
সুমনের বলতে ইচ্ছা করে, বাসর রাতে যে টর্চারিংয়ের ঘটনা ঘটছে বাস্তবে। গল্পে এত টর্চারের ঘটনা ঘটা সম্ভব নয়। কিন্তু বলে না। যে মেয়ে। এটা শুনে অন্য কি কঠিন কথা বলে বসে কে জানে।
সুমন অসহায় গলায় জিজ্ঞাসা করে, আচ্ছা গল্প গুলো না ডিলিট করলে হয় না?
: বুঝছি ওই গল্পগুলোর মেয়েদের প্রতি আপনার আবেগ রয়ে গেছে। ঠিক আছে ডিলিট করার দরকার নেই। ওই মেয়েদের নিয়েই থাকুক আপনার আবেগ। আমার প্রতি আবেগের দরকার নেই।
সুমন সাহস করে বলে ফেলে, গল্পের চরিত্রের আবেগ বুঝি বউয়ের চেয়ে বেশি হবে। কি যে বলো না।
তিথি বলে, এত কথা বলতে হবে না। মুছতে বলছি মুছবেন। নোটগুলো থাকলে আপনার সাথে কোন সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক হবে না।
কি বিপদরে বাবা। সুমন বলে, কিন্তু কোন গল্পগুলো মুছতে হবে?
: আমি নামগুলো নোট করে এনেছি। আমার একটা কাগজে আছে। গল্পের নামগুলো দেখে দেখে মুছবেন।
: কখন মুছতে হবে?
তিথি অবাক গলায় জিজ্ঞেস করে, কখন মানে! আপনার কি আজকের রাতে আমার সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ার ইচ্ছা নেই? কাকে বিয়ে করলামরে বাবা! এ কেমন মানুষ। বাকী জীবনে কি আছে কে জানে। আপনি তো দেখি পুরা পাষন্ড টাইপের মানুষ। আমি তো চেহারা দেখে ভেবেছিলাম মনে মায়া দয়া কিছু আছে। এখন তো দেখি কিছু নেই।
সুমন বলে, থামো থামো। দাড়াও আমি এখনই ল্যাপটপ আনছি। এখনি গল্পগুলো মুছবো।
তা শুনে হেসে উঠে তিথি। আরে বোকা ছেলে, আমার অনেক ভাল লাগছে এমন একটা বোকা ছেলে আমার জীবন সঙ্গী। আপনার মুছতে হবে না। আমি দুষ্টামি করতেছিলাম। আপনাকে দেখছিলাম আমার কথা রাখেন কিনা। বিয়ের প্রথম দিনই আমি নিশ্চিত হলাম আপনার সাথে কোন ঝগড়া হবে না এই ইহ জনমে। কিন্তু আমি যে ঝগড়া ছাড়া থাকতে পারি না। এখন কি হবে!
সুমনের ভাল লাগে। এতক্ষণ বেশ চাপের মধ্যে ছিল। মেয়েটা যে দুষ্টামি করছে তা একবারও ভাবে নি।
সুমনের মাথার চুল বিলি কেটে দেয় তিথি। কি যে ভাল লাগে সুমনের।
রাত বাড়ছে। দুইজনে শুয়ে পড়ে। তিথি বলে, আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
: কি?
: আমরা আগামী শনিবার ময়মনসিংহ যাবো।
সুমন বুঝতে পারে না ব্যাপারটা। তিথিদের বাড়ী কুমিল্লা। কিন্তু ময়মনসিংহে যাওয়ার কথা বলছে কেন!
: শুনেন, ময়ময়মনসিংহে রুপা আপু আছেন। সেখানে ওনার হাজব্যান্ড এনডিসি হিসাবে আছেন।
এটা শুনে সুমনের আকাশ থেকে পড়ার দশা। তা দেখে তিথি বলে, এত অবাক হওয়ার কিছু নেই। নিতুর মুখে আমি রুপা আপুর সব শুনেছি। রুপা আপুর সাথে কথা হয়েছে।
: কিন্তু তাদের বাসায় যাওয়া কেন?
: কারণ অন্য আছে। সেখানে গিয়ে বলবো। অনেকে হানিমুনে বিভিন্ন স্থানে যায়। আপনি না হয় হানিমুনে পুরানো প্রেমিকার বাসায় যাবেন। বেশ মজার না। বলে হাসতে থাকে তিথি।
আচ্ছা আপনাকে আপনি আপনি করে যাচ্ছি, একবারো বললেন না তুমি করে বলতে। গাল ফুলিয়ে বলে তিথি।
এরপরের ঘটনাগুলো তাদের মাঝেই থাক।
+++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++
দেশের বাহিরে আছেন, রুম কিংবা রুমমেট খোঁজছেন?
তারা ভিজিট করতে পারেন > http://bit.ly/2fM8gSM
সরাসরি : রুমস্টার
এখান থেকে সহজেই আপনার এলাকায় রুমমেট বা রুম খোঁজে পেতে পারেন।
বিকালে নিজের অবিবাহিত জীবনের পরিসমাপ্তি টেনেছে। ঠিক টেনেছে বলা যায় না। ওর মা অনেক দিন ধরে বলতেছিল, ঘর খালি খালি লাগে। বউ আনা দরকার। প্রথমে কিছুটা আপত্তি করেছিল বটে। তারপরও কিভাবে যেন ঘটনা ঘটে গেলো। একসময় নিজেকে আবিষ্কার করলো জামাইয়ের সাজে বিয়ের মঞ্চে বসে আছে।
বিয়ে হয়েছে কনের বাড়িতে। বাসার সামনে বিশাল মাঠে প্যান্ডেল করে সেখানে খাওয়া দাওয়ার আয়োজন। দক্ষিণদিকে মঞ্চ করা হয়েছে জামাই বসার জন্য। জামাই হয়ে মঞ্চে বসাটা কেমন যেন। সবাই হা করে দেখে যাচ্ছে। যেন কোরবানির গরু দেখতে এসেছে এমন ভাব। এ জামাইয়ের সাথে বিয়ে হওয়ায় জিতছে না হারছে এমন অনুভূতি।
এখনকার যুগে বেশির ভাগ বিয়েই হচ্ছে নিজেদের পছন্দমত। পরে পরিবারকে জানানো হচ্ছে। নিজের পছন্দমত বিয়ের সুযোগ পেলে রুপাকেই বিয়ে করত। মেয়েটার কারণেই লেখালেখিটা শুরু। পাশের বাসায় থাকতো। মেয়েটার এত লম্বা ঘন কালো চুল ছিল যে ধরে দেখতে ইচ্ছা হতো। কিন্তু কখনো সাহসের অভাবে ধরে দেখা ইচ্ছাটা ব্যক্ত করা যায়নি। ওই রুপা গল্পের বইয়ের ভক্ত ছিল। দিনরাত দেখা যেতো হাতের কাছে গল্পের বই ধরা।
বিকেলে রাস্তায় ক্রিকেট খেলত সুমনরা। ব্যাটিংয়ে গেলে সুমনের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকতো বলটা রুপাদের বাসার দিকে ফেলা। যদিও বাসার বাউন্ডারির ভেতরে বল ঢুকলে আউট। বল আনতে গেলে রুপা বিরক্ত ভাবে তাকাতো।
: এই আপনাদের কতবার না মানা করেছি রাস্তায় ক্রিকেট না খেলতে। এরপর যদি এখানে বল আবার আসে তাহলে আর দেয়া হবে না।
বিরক্তস্বরে কথাগুলো বলতো। কিন্তু ওর বিরক্ত ভাবটা অনেক ভাল লাগতো সুমনের। প্রতিবার দিবে না বললেও ঠিকই পরের বার দিতো।
একদিন বল আনতে গিয়ে সুমন জিজ্ঞেস করে, আচ্ছা তোমাকে যখনই দেখি বই নিয়ে বসে আছো। কি পড়ো এত! তোমার তো চোখ নষ্ট হবে।
প্রতিদিন বিরক্ত স্বরে তাকালেও সেদিন চোখে মুখে বিরক্ত ছিল না। বরং একটু হাসি দিয়ে বলেছিল, বই পড়লে বুঝি চোখ নষ্ট হয়?
: হুম! চোখের ওপর চাপ পড়ে।
এটা শুনে হেসে উঠে রুপা। বইটা কোলের ওপর রেখে বলে, বই পড়ার মজা বুঝেন না তো। তাই এ কথা বলছেন। যদি বুঝতেন তাহলে আপনিও রাতদিন বই পড়তেন।
সেদিন আর কথা হয়নি। বলের জন্য অন্যরা অপেক্ষা করছিল। তাই সুমনের চলে আসতে হয়। এরপর বল আনতে গেলে হালকা পাতলা কথা হতো।
একদিন রুপা জিজ্ঞেস করে, আচ্ছা আপনি একটা কথা সত্যি করে বলবেন তো?
: হা, বলো।
: আপনি কি আমাদের বাউন্ডারির ভেতরে ইচ্ছা করে বল ফেলেন? প্রায় প্রতিদিনই নিতে আসেন।
আরে এ মেয়ে বুঝলো কিভাবে। তখন সুমন ইন্টার পরীক্ষার্থী। রুপা স্থানীয় গার্লস স্কুলে দশম শ্রেণীতে পড়ত। এ বয়সে সে বুঝে গেলো কিভাবে। অবাক হয় সুমন।
সুমন বলটা হাতে নিয়ে কাচুমাচু করে। তা দেখে রুপা দুষ্টামি করে হেসে বলে, ঠিক আছে বলতে হবে না সত্য কথা। আপনি এম্নেই আসতে পারেন। বল নেয়ার বাহানা দিয়ে আপনার আসতে হবে না। আর একটু দাঁড়ান।
দৌড় মেরে ঘরের ভেতরে ছুটে যায় রুপা। একটু পর একটা বই নিয়ে বেরিয়ে আসে। বইটা সুমনের হাতে দিয়ে বলে এটা পড়বেন। আশা করি ভাল লাগবে।
তখন ওই মুহূর্তে বইটা সেভাবে খেয়াল করে না। তবে এটা ভাবতে ভাল লাগে রুপার হাতের স্পর্শ লাগা বইটা এখন নিজের কাছে। বইটাকে অনেক আপন মনে হয়। কেমন জানি অদ্ভূত অনুভূতি হয়। তলপেটে একটা ব্যথা বয়ে যায়। এই আনন্দের ব্যথা।
বাসায় এসে বইটা উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখে। উপন্যাসের নাম অন্যদিন, লেখক হুমায়ুন আহমদ। সন্ধ্যায় থেকে বইটি পড়া শেষ করে। বেশ সুন্দর। কি সাবলীল ভাষায় লেখা। রাতে মা যখন খাবার খেতে ডাকছিলেন তখন খুব বিরক্ত লাগছিল বইটি পড়া বন্ধ করে যেতে হবে দেখে। রাত দুইটায় উপন্যাসটি পড়া শেষ।
এরপর থেকে নিয়মিত বই এনে পড়া শুরু। বই আনতে গেলেই শুধু হুমায়ুন আহমদের গল্প। পুরা হুমায়ুন ভক্ত, যেন হুমায়ুন ছাড়া বাঁচবে না। তখন সুমনের হুমায়ুন আহমদের প্রতি ঈর্ষা হয়। কোন দূরে লিখে, বয়স অনেক বেশি তার প্রতি এভাবে সুন্দর একটা মেয়ের আকুলতা। ব্যাপারটা মেনে নিতে পারে না সুমন।
রুপা যখন হুমায়ুন আহমদের গল্প করে হুম, হা করে শুনে যায়। কিন্তু প্রতিবাদ করে না কোন কথার। যদি বিরক্ত হয়। এভাবে প্রাণবন্ত গল্প যদি আর না করে এ ভয়ে।
হুমায়ুনের একটা নন্দিত নরকে বইটা নিয়ে কথা হচ্ছিলো। এসময় রুপা বলে, সুমন ভাই, একটা কথা। বেশ লজ্জার। তবে আপনাকে বলছি। হুমায়ুন আহমদের সাথে যদি দেখা হতো তাহলে বলতাম আমাকে যেন তার সঙ্গে সারাজীবন থাকার সুযোগ দেয়।
একথা শুনে সুমন বেশ ক্ষুব্ধ হয়, বেশ জেদ উঠে। কি বলে এ মেয়ে। এরকম বয়স্ক এক মানুষের সাথে সারাজীবন থাকবে। কি আজব রে বাবা।
সেদিন বাসায় গিয়ে কি যেন হয়। বড় মামার দেয়া একটা ডায়েরী ছিল। অনেক সুন্দর। হাতের লেখা বিশ্রী বলে সেখানে কিছু লেখা হয়নি। সেদিন ওই ডায়েরীতেই লেখা শুরু করে। কোন শিরোনাম ছাড়া লিখে যায়। একটা ছেলেকে নিয়ে গল্প যে প্রতিদিন সিদ্ধান্ত নেয় ঘর ছেড়ে পালাবে। তার মা-বাবার ঝগড়া ভাল লাগে না। কিন্তু একমাত্র ছোটবোনের মায়ার কারণে যেতে পারে না। যেদিন ছোট বোনটার বিয়ে হয় সেদিন সে পালিয়ে যায়। তবে শুধু বাসা থেকে না। পুরা পৃথিবী থেকে। কষ্টের গল্প। গল্পের নাম রাখে বোন ও পৃথিবী।
ওই সপ্তাহে আরো পাঁচটা গল্প লিখে ওই ডায়েরীতে। তবে কাউকে দেখায় না।
একদিন সাহস করে গল্প লেখা ডায়েরীটা রুপার কাছে দেয়।
: এখানে কিছু লেখা ছিল। সময় পেলে পড়ো। এ কথাটা বলেই চলে আসে। রুপা আশ্চর্য হয়ে দেখে একটা ছেলে লজ্জিত মুখে চলে যাচ্ছে। ভাল লাগে দৃশ্যটা দেখতে।
ডায়েরীটা দেওয়ার পর থেকে ভয়ে ভয়ে থাকে সুমন। রুপা পড়বে তো। পড়লে আবার বিরক্ত হবে নাতো। ভয়ে দুই দিন ওই পথেই যায় না।
তৃতীয় দিন সকালে বাসায় বসে কিছু লগের অংক করছিল। এসময় রুপাদের কাজের মেয়ে এসে একটা চিরকুট দিয়ে যায়। চিরকুটে লেখা, এভাবে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন কেন! আপনার খবর আছে। আজই অবশ্যই আসবেন।
দেখা করতে গেলে রুপা প্রথমেই জিজ্ঞাসা করে, আচ্ছা আপনি কেমন মানুষ বলেন তো?
: কেন?
: আমি তো বিপদে পড়ে গিয়েছি। কিন্তু উদ্ধারের পথ পারছি না। অথচ আপনার কোন দেখা নাই।
কি বিপদ? আতঙ্কের স্বরে জিজ্ঞাসা করে রুপা।
এসময় রুপার মুখে সে দুষ্টামি হাসিটা খেলা করে, আগে তো শুধু হুমায়ুন আহমদকে চাইতাম, এখন তো নতুন আরেক জন দেখি সেখানে যোগ হয়েছে আপনার গল্পগুলো পড়ে ডট ডট ডট। বাকীটা বুঝে নেন।
সুমনের এত্ত ভাল লাগে তা শুনে। কিন্তু লজ্জায় মুখ নিচে নামিয়ে ফেলে। এভাবে সরাসরি কেউ বলে নাকি!
তা দেখে রুপা বলে, এত লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। আপনার সাথে দুষ্টামি করছিলাম। তবে অনেক দারুণ লিখেছেন। চাওয়া গুলো না হয় কাগজেই থাক। গল্পে এত রোমান্টিকতা, আপনাকে দেখলে তো মনে হয় ভাজা মাছটিও উল্টে খেতে পারেন না। কিন্তু এত রোমান্টিক গল্প লিখলেন কিভাবে। বোন ও পৃথিবী গল্পটা পড়ে তো অনেকক্ষণ কেঁদেছি আমি। এমন কষ্টের গল্প লিখলেন কেন?
এত ভাবনা দিয়ে লেখা হয়নি। লিখতে বসেই গল্পগুলো লেখা হয়েছে। তাই সুমন কিছু বলে না। তার চুপ থাকা দেখে বুঝার উপায় নেই তার ভেতরে কি পরিমাণ আনন্দ হচ্ছে। ইচ্ছা হচ্ছে চিৎকার করে বলতে, আমি একজন সুখী মানুষ। আমার কোন দু:খ নেই।
সেভাবেই লেখালেখি শুরু। কোন লেখা লিখলেই প্রথম রুপাকে পড়তে দিতো। বিভিন্ন পত্রিকায় লেখাগুলো ছাপা হতে থাকে।
এমন সময় খবর আসে রুপার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। পাত্র ম্যাজিস্ট্রেট। তখন সুমন অনার্স থার্ড ইয়ারের ছাত্র। এমন কিছু করা সম্ভব ছিল না যে রুপাকে সাথে রাখার। আসলে মুখ ফুটে কখনো নিজের চাওয়াটার কথা বলতে পারে নি ও।
এরপর অনেক দিন লেখালেখি বন্ধ ছিল। ফেসবুকে সময় কাটানোর সুবাদে ভাল একটা নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। সেখানে বিভিন্ন পেজে গল্প প্রকাশিত হয়। গল্প গুলো পড়তে ভাল লাগে সুমনের। যেসব গল্প আনন্দের মাধ্যমে শেষ হয় তা বেশি ভাল লাগে। আসলে নিজের প্রথম আবেগটা আনন্দের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়নি বলেই হয়ত মিলনাত্মক গল্পগুলোতে এত ভাল লাগা।
আবার লেখালেখি শুরু। জনপ্রিয় পেজগুলো নিয়মিত পোস্ট হতে থাকে গল্প। বিভিন্ন মেয়ের নাম দিয়ে অদ্ভূত সব প্রেমের গল্প লিখে যায়। গল্প পড়ে কোন কোন মেয়ে দুর্বল হয়। ভালোবাসার কথা বলে। কিন্তু কোন ধরণের সম্পর্ক গড়া থেকে মুক্ত থাকে সুমন।
এরপর তিথির সাথে বিয়ে। সন্ধ্যায় কিছুটা বৃষ্টি হয়েছিল। বৃষ্টি হওয়াকে অনেকে ভাল বলছে। এটা নাকি সুলক্ষণ। বিয়েতে বৃষ্টি হলে দাম্পত্য জীবন সুন্দর হয় এমন কথা অনেকে বলাবলি করছে। ঘড়ির কাঁটায় রাত এগারটা।
তিথি খাটে বসা। সুমন বুঝতে পারছে না কি বলবে। খাটের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। নিজেকে অসহায় অসহায় মনে হয়। বন্ধুরা অনেকে অনেক কথা বলেছে। সেগুলো সব মনে করার চেষ্টা করছে। জাহিদ তো পুরা আক্রমণাত্মক হওয়ার টিপস বলে গেছে। অন্যরা জাহিদের কথা শুনে হাসতে হাসতে শেষ।
তিথি ঘোমটা সরিয়ে নিয়েছে। সুমনের দিকে ওর দৃষ্টি। এভাবে দাড়িয়ে আছেন কেন? আপনার কপালে দেখি ঘাম। এত ভয়ের কিছু নেই। আমি বাঘ ও না, ভাল্লুকও না। আপনি নিশ্চিন্তে বিছানায় উঠতে পারেন।
সুমন স্বাভাবিক হওয়ার জন্য হাসার চেষ্টা করে। সে হাসিটায় তাকে আরো বোকা বোকা লাগে।
: খাটে উঠে বসেন। আপনার সাথে আপনার সাথে অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা আছে।
সুমন আতঙ্কিত হয়, পূর্বের প্রেম ট্রেমের গল্প শুরু করবে না তো। বিছানার উঠে বসে। তিথির দিকে তাকায়। অনেক সুন্দর একটি মুখ, তার দিকে চেয়ে আছে।
এভাবে আবেগী চোখে তাকিয়ে লাভ হবে না, আপনার সাথে আমার হিসাব আছে। আগে সেটা ক্লিয়ার করতে হবে। অনেকটা বজ্রকন্ঠে বলে তিথি।
আরে বাবা এটা কি ধরণের কথা। বিয়ের প্রথম দিন কেউ এভাবে কথা বলে নাকি। বন্ধুরা তাদের অভিজ্ঞতার যেসব গল্প বলছে তা তো অনেক সুন্দর প্রেমময় সময়ের গল্প। এই মেয়ে তো বিয়ের প্রথম দিন পুরা হিসাবের খাতা নিয়ে বসেছে মনে হচ্ছে।
আমতা আমতা করে সুমন বলে, কিসের হিসাব?
ওয়াও আপনি দেখি কথা বলতে পারেন। আমি তো এতক্ষণ ভাবছিলাম আপনাকে বোবায় ধরেছে। আজ রাতে আর কথা বলতে পারবেন না। আমি একাই কথা বলে যাবো। আপনি শুধু শুনবেন। বোবায় ধরা বাসর হবে আমার বাস্তব জীবনের গল্প। বেশ ভাল লাগছে আপনি কথা বলতে পারায়। আচ্ছা এবার সরাসরি হিসাবে চলে আসি।
সুমন বলে, বলেন।
: আপনার চেয়ে আমি বয়সে তিন বছরের ছোট। সুতরাং আমাকে তুমি করে বলতে পারেন। শুনেন আপনি তো অনেক রোমান্টিক রোমান্টিক গল্প লিখেন। আপনার গল্প অনেক আগে থেকেই পড়তাম। কিন্তু যখন আপনার সাথে বিয়ের কথা চলছিল তখন থেকে মনযোগ দিয়ে পড়া শুরু করলাম।
সুমন জিজ্ঞাসা করে, আমার লেখা গল্প ভাল লাগে?
: এখানে ভাল লাগা না লাগার প্রশ্ন না। আমি অন্য কারণে মনযোগের সাথে পড়েছি।
আরে কার পাল্লায় পড়লো। রাতটা দীর্ঘ মনে হচ্ছে সুমনের। মনে হচ্ছে রিমান্ডে আনা হয়েছে তাকে। বাস্তব জীবনে কখনো রিমান্ডে যাওয়ার অভিজ্ঞতা হয়নি। এখন তিথির ভূমিকা দেখে মনে হচ্ছে বাসর রাতে সে অভিজ্ঞতা পেতে যাচ্ছে।
তিথিই বলে, কারণ জিজ্ঞাসা না করে কি এত ভাবছেন?
যন্ত্রের মত গলায় সুমন বলে, কি কারণ?
: আমি দেখতে চাচ্ছিলাম গল্প গুলোতে বাস্তব মেয়ের প্রতি আপনার আবেগ। বেশ কয়েকটি গল্প দেখলাম উৎসর্গ করে লেখা। যার জন্য উৎসর্গ করা তাকে সাথে উত্তম পুরুষের লেখা গল্প। ওই গল্প গুলো পড়ে এত বিরক্ত লাগছে।
সুমনের অবাকের মিটারের কাটাটা ক্রমান্বয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ছুটে চলছে। ও জানতে চায়, কেন বিরক্ত লাগছে?
: ওই গল্প গুলোতে দেখলাম লেখকের আবেগ ওই মেয়েগুলোর প্রতি ফুটে উঠেছে। এমন কাজ চলবে না।
তিথির কপালে কয়েকটা চুল এসে পড়েছে। সেগুলো ডান হাত দিয়ে সরিয়ে দেয়। তারপর বলে, ওই গল্পগুলো ডিলিট করে দিতে হবে।
সুমন অস্ফুট কন্ঠে বলে, মানে?
: মানে সহজ, আপনার সকল আবেগ থাকবে আমার জন্য শুধু, অন্য কোন মেয়ের জন্য না। এখন ওই গল্পগুলো মুছে ফেলতে হবে আপনার নোট থেকে।
এ কি নির্দেশ। কোন পাষন্ড মেয়ের কবলে পড়া। এত নির্মল মুখ, ভাসা ভাসা চোখ এমন মেয়ে এই কঠিন নির্দেশ দিচ্ছে কেন!!
কিন্তু ওই গল্পগুলো তো তোমার কোন ক্ষতি করেনি। গল্প গুলো অনেক জায়গায় প্রকাশিতও হয়েছে। আমার নোট থেকে মুছে ফেলতে হবে কেন।
মুছে ফেলতে হবে কেননা অন্য মেয়ের প্রতি আপনার আবেগ বহন করেছে গল্পগুলো। আমি চাই না অন্য মেয়ের আবেগ বহনকারী কিছু আপনার একাউন্টে থাকুক। আবেগ শুধু একজনের জন্য থাকা উচিত। ভাঙা আবেগের কাউকে আমি পছন্দ করি না।
কিছু বলে না, অন্য সময় অনেক যুক্তি দেওয়া যেত। লেখকের স্বাধীনতা বলে একটা কথা আছে। কিন্তু এ বিষয়ে কথা বলতে ইচ্ছা করছে না। মায়ের প্রতি বিরক্ত লাগছে। এই কোন মেয়েকে বিয়ের জন্য ঠিক করেছে। এমন জেলাস মেয়েও থাকে। এইরকম একটা মেয়ের সাথে সারাজীবন পার করতে হবে এটা কল্পনা করতেই কেঁপে উঠলো মন। কি ভয়ানক হয়ে যাবে জীবন।
তিথি বলে, আপনাকে খুব বিরক্ত মনে হচ্ছে। এখনি সিদ্ধান্ত নিতে হবে এমন কথা নেই। আগে চা খাবো। চা খাওয়ার পর সিদ্ধান্ত।
সুমন বলে, এ মুহূর্তে চা পাবে কোথায়! সবাই ঘুমাচ্ছে।
: আমি চা বানাতে পারি।
আশ্চর্য গলায় জিজ্ঞেস করে, তুমি নিজে গিয়ে চা মানাবে?
আরে, আপনি দেখি পাগল হয়েছেন। বাসর রাতে কোন মেয়ে পাকঘরে গিয়ে চা বানায় না।
: কিন্তু দোকানও তো বন্ধ হয়ে গেছে। এত রাতে বাহিরে গিয়েও তো লাভ হবে বলে মনে হয় না।
: আরে বুদ্ধু বাসর রাতে কোন স্বামী বাহিরে চা আনতে যায় না। আপনি আসলে বুদ্ধুই।
সুমন মাথা নাড়ে।
নিতু চা বানিয়ে দিয়ে গেছে। ফ্লাক্সে আছে। সেখান থেকে খাবো। সব আগে থেকে ঠিক করা।
তিথি কিছু বলে না। ফ্লাক্স থেকে চা ঢালে দুইটা কাপে। একটা কাপ সুমনের হাতে দেয়। বলে, স্বামীর প্রতি প্রথম সেবা। মোবাইলের ঘড়ির দিকে তাকায়। এখন ১২টা ১০ বাজছে। সময়টা দেখে নিলাম স্মরণীয় ঘটনা।
চায়ে প্রথম চুমুক দেওয়ার পর বলে, আপনারা লেখকরা তো ভাবেন গল্পতে সব মজার ঘটনা ঘটে, বাস্তবে না। দেখছেন বাসর রাতে চায়ের ব্যবস্থা করে ফেলেছি। বাস্তবে এমন সুন্দর সুন্দর অনেক ঘটনা ঘটে।
সুমনের বলতে ইচ্ছা করে, বাসর রাতে যে টর্চারিংয়ের ঘটনা ঘটছে বাস্তবে। গল্পে এত টর্চারের ঘটনা ঘটা সম্ভব নয়। কিন্তু বলে না। যে মেয়ে। এটা শুনে অন্য কি কঠিন কথা বলে বসে কে জানে।
সুমন অসহায় গলায় জিজ্ঞাসা করে, আচ্ছা গল্প গুলো না ডিলিট করলে হয় না?
: বুঝছি ওই গল্পগুলোর মেয়েদের প্রতি আপনার আবেগ রয়ে গেছে। ঠিক আছে ডিলিট করার দরকার নেই। ওই মেয়েদের নিয়েই থাকুক আপনার আবেগ। আমার প্রতি আবেগের দরকার নেই।
সুমন সাহস করে বলে ফেলে, গল্পের চরিত্রের আবেগ বুঝি বউয়ের চেয়ে বেশি হবে। কি যে বলো না।
তিথি বলে, এত কথা বলতে হবে না। মুছতে বলছি মুছবেন। নোটগুলো থাকলে আপনার সাথে কোন সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক হবে না।
কি বিপদরে বাবা। সুমন বলে, কিন্তু কোন গল্পগুলো মুছতে হবে?
: আমি নামগুলো নোট করে এনেছি। আমার একটা কাগজে আছে। গল্পের নামগুলো দেখে দেখে মুছবেন।
: কখন মুছতে হবে?
তিথি অবাক গলায় জিজ্ঞেস করে, কখন মানে! আপনার কি আজকের রাতে আমার সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ার ইচ্ছা নেই? কাকে বিয়ে করলামরে বাবা! এ কেমন মানুষ। বাকী জীবনে কি আছে কে জানে। আপনি তো দেখি পুরা পাষন্ড টাইপের মানুষ। আমি তো চেহারা দেখে ভেবেছিলাম মনে মায়া দয়া কিছু আছে। এখন তো দেখি কিছু নেই।
সুমন বলে, থামো থামো। দাড়াও আমি এখনই ল্যাপটপ আনছি। এখনি গল্পগুলো মুছবো।
তা শুনে হেসে উঠে তিথি। আরে বোকা ছেলে, আমার অনেক ভাল লাগছে এমন একটা বোকা ছেলে আমার জীবন সঙ্গী। আপনার মুছতে হবে না। আমি দুষ্টামি করতেছিলাম। আপনাকে দেখছিলাম আমার কথা রাখেন কিনা। বিয়ের প্রথম দিনই আমি নিশ্চিত হলাম আপনার সাথে কোন ঝগড়া হবে না এই ইহ জনমে। কিন্তু আমি যে ঝগড়া ছাড়া থাকতে পারি না। এখন কি হবে!
সুমনের ভাল লাগে। এতক্ষণ বেশ চাপের মধ্যে ছিল। মেয়েটা যে দুষ্টামি করছে তা একবারও ভাবে নি।
সুমনের মাথার চুল বিলি কেটে দেয় তিথি। কি যে ভাল লাগে সুমনের।
রাত বাড়ছে। দুইজনে শুয়ে পড়ে। তিথি বলে, আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
: কি?
: আমরা আগামী শনিবার ময়মনসিংহ যাবো।
সুমন বুঝতে পারে না ব্যাপারটা। তিথিদের বাড়ী কুমিল্লা। কিন্তু ময়মনসিংহে যাওয়ার কথা বলছে কেন!
: শুনেন, ময়ময়মনসিংহে রুপা আপু আছেন। সেখানে ওনার হাজব্যান্ড এনডিসি হিসাবে আছেন।
এটা শুনে সুমনের আকাশ থেকে পড়ার দশা। তা দেখে তিথি বলে, এত অবাক হওয়ার কিছু নেই। নিতুর মুখে আমি রুপা আপুর সব শুনেছি। রুপা আপুর সাথে কথা হয়েছে।
: কিন্তু তাদের বাসায় যাওয়া কেন?
: কারণ অন্য আছে। সেখানে গিয়ে বলবো। অনেকে হানিমুনে বিভিন্ন স্থানে যায়। আপনি না হয় হানিমুনে পুরানো প্রেমিকার বাসায় যাবেন। বেশ মজার না। বলে হাসতে থাকে তিথি।
আচ্ছা আপনাকে আপনি আপনি করে যাচ্ছি, একবারো বললেন না তুমি করে বলতে। গাল ফুলিয়ে বলে তিথি।
এরপরের ঘটনাগুলো তাদের মাঝেই থাক।
+++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++
দেশের বাহিরে আছেন, রুম কিংবা রুমমেট খোঁজছেন?
তারা ভিজিট করতে পারেন > http://bit.ly/2fM8gSM
সরাসরি : রুমস্টার
এখান থেকে সহজেই আপনার এলাকায় রুমমেট বা রুম খোঁজে পেতে পারেন।