সকালে আজ একটু দেরিতে উঠল সৌরভ। ঠিক উঠল বলা যায় না। উঠানো হলো বললেই ভাল। ছুটির দিন বাদে প্রতিদিন ভোরেই ওর বাবা ওকে উঠিয়ে দেয়। এত ভোরে ঘুম থেকে উঠতে একটুও ইচ্ছা করে না। তারপরও উঠে যেতে হয়। এর পর বাবা ব্রাশে টুথপেস্ট লাগিয়ে তা এনে সৌরভের হাতে দেন। তখনও ওর ঘুম পুরাপুরি যায় না। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ও যেন দাঁত ব্রাশ করে। তা দেখে বাবা হাসেন।
বুয়া সকালের নাস্তা বানায়। এত সকালে খেতে চরম বিরক্ত লাগে সৌরভের। বাবা ওকে খাইয়ে দেন নিজ হাতে। একটু পর পর বাধা দিতে চায় সৌরভ। “ আব্বু আর খাবো না, পেট ভরে গেছে।”
“ এত কম খেলে খিদা লেগে যাবেতো। আরেকটু খাও।”
- নাহ আর খাবো না। খেতে ইচ্ছা করছে না। বমি আসছে। বলে বমির অভিনয় করার চেষ্টা করে সৌরভ।
পানির গ্লাসটা এগিয়ে দেন বাবা। নাও পানি খাও।
পানি খায় সৌরভ। সরাসরি ঘোষণা দেয়, আমি আর খাবো না।
-প্লিজ বাবা আরেকটা খাও শুধু। এটা খেলেই শেষ। আর খেতে বলব না। আমার বাবা অনেক ভাল।
খাওয়া শেষে ছেলের মুখ ধুইয়ে দেন আতিক। এরপর ছেলেকে স্কুলের শার্ট ড্রেস পড়িয়ে দেন। দিতে দিতে গল্প করেন, তোমার স্কুলে যেতে কি ভাল লাগে না?
-না ভাল লাগে না। টিচারগুলো শুধু পড়া আর পড়া দেয়।
-এটা তো ভাল। যাতে তুমি অনেক বড় হতে পারো সেজন্য দেয়। তুমি না বড় হলে বিমান চালাবে?
- বিমান চালাবো। কিন্তু বিমান চালাতে গিয়ে এগুলো শিখতে হবে কেন? বিমান চালাতে কি কবিতা বলতে হয়?
আসলে তো। এই প্রশ্নের সাথে সাথে উত্তর খুঁজে পায় না আতিক। সৌরভের ইচ্ছা বড় হলে বিমান চালাবে। যেসব ছবিতে বিমান আছে ঐ গুলো ও বেশি দেখে। বিমানের প্রতি আগ্রহ দেখে আতিক একদিন ছেলেকে বিমান চড়ান। তিনটা টিকেট নেন। ঢাকা চিটাগাং। সাথে সৌরভের মাও ছিল। বিমান উঠে অনেক বেশি উত্তেজিত হয়েছিল সৌরভ। আব্বু আমরা এখন কত উপরে?
-বেশি উপরে না। তবে বিদেশে যেসব বিমান যায়। সেগুলো অনেক উপর দিয়ে যায়।
-আমি বিদেশে যাবো।
-হা আরো বড় হও। বড় হলে বিদেশে যেতে পারবে।
-ছোটরা কি বিদেশে যেতে পারে না?
মাঝে মাঝে এমন হয়। প্রশ্নের উত্তরে এমন কিছু বললে ভুল ধরে নতুন প্রশ্ন করে সৌরভ। এরকম হলে প্রতিবারই আতিক ভাবে সামনে থেকে ছেলের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সময় আরো সতর্ক হবে। কিন্তু তারপরও।
-নাহ ছোটরাও যেতে পারে। তুমি বড় হও। বাবার আরো টাকা হোক। তখন তোমাকে ঘুরাতে নিয়ে যাবো।
- আচ্ছা বাবা, এই বিমান চড়তে কি টাকা কম লাগে।
-দেশের ভিতরে তো। ভ্রমণ পথও কম এজন্য টাকা কম লাগে।
পাশে বসা লোপা বিরক্ত হয়। ও এতক্ষণ জানালা দিয়ে নিচে তাকাচ্ছিলো। এখন অনেক কিছুই সহ্য হয় না লোপার। ছেলের এরকম কথা বলে যাওয়া খারাপ লাগছে। সবকিছু কেন খারাপ লাগছে এটাই প্রকাশ করতে পারছে না। এটাই বড় সমস্যা। এই সৌরভ চুপ করো।
ধমক খেয়ে থেমে যায় সৌরভ।
আতিক বলে, তুমি রাগ করছো কেন? ওতো জানতে চাচ্ছে বিষয়গুলো। এভাবেই তো শিখবে।
লোপার রাগ আরো বেড়ে যায় একথা শুনে। তার আগে তুমি চুপ করো। আর একটা কথা বলবা তো খারাপ হবে।
আতিক ভয় পায়। লোপাটা এরকম অচেনা হয়ে যাচ্ছে কেন? আগে তো এমন ছিল না। কি তাড়াতাড়ি বদলে গেল। আগে অনেক কথা জমা রাখতো। অফিস থেকে ঘরে ফিরে আসলেই সেগুলো বলা শুরু করতো। যেন না বলা পর্যন্ত শান্তি নেই। সারাদিন সৌরভ কি কি মজা করেছে সব বলত। বলত, সৌরভ মাশ আল্লাহ দিলে অনেক ব্রিলিয়ান্ট কিন্তু। অনেক কিছু বুঝে যায়। আজ নাস্তা করার পর প্লেট নিয়ে নিজেই চলে গেছে বেসিনে। অথচ বেসিনটা ওর অনেক উপরে। পরে কি করছে জানো?
উত্তরের অপেক্ষা করে না। নিজেই বলে যায়, টি টেবিলটা আছে না। সেটা ঠেলে ঠেলে নিয়ে গেল। তারপর সেটার উপর দাঁড়িয়ে বেসিনের টেপ ছাড়ল। আমি দাঁড়িয়ে সব দেখছিলাম। তুমি যদি দেখতা। ওকে স্কুলে দিয়ে দিলে ভাল হয়। আমি পড়াবো। আমার ছেলে স্কুলে ফাস্ট হবে।
আতিক বলে, তুমি পড়ালে ফাস্ট হবে না। আমি পড়ালে হবে।
লোপা প্রতিবাদ করে, তোমারে বলছে! তুমি পড়ালে পড়ানো শুরু করবে মাইক্রোসফট এক্সেল, এক্সেস, ওয়ার্ড, প্রোগাম এগুলো। ঐই গুলো নিয়েই তো তোমার কাজ।সেগুলো পড়ে আমার ছেলের কাজ নাই।
আতিক বলে, আর তুমি পড়ালে তো পড়াবে কিভাবে ভারমিচিলি পুডিং বানাতে হয়,কোকানাট কাস্টার্ড বানানোর নিয়ম, ছানার কোফতা, খাসির রেজালা কিভাবে বানালে ভাল হয় এগুলো।
রান্নার ব্যাপারে কঠিন আগ্রহ লোপার। এর মাঝে বেশ কিছু কোর্স করেছে। মাঝে মাঝেই নতুন নতুন আইটেম রান্না করে। মজা হয় অনেক।
লোপা বলে, রান্না ঐগুলো কিচেনের ব্যাপার। ঐগুলো আমি শিখাতে যাবো কেন?
আতিক বলে, তাইতো। আর এক্সেল, প্রোগাম, ওয়ার্ড এগুলো আমার অফিসের ব্যাপার। এগুলোও আমি শিখাতে যাবো কেন?
সৌরভ টিভিতে কার্টুন দেখছিল। টম এন্ড জেরি। এই কার্টুনটা ওর অনেক প্রিয়। যদিও টম এন্ড জেরি কাউকেই ভাল লাগে না। দুই জন শুধু ব্যস্ত প্রতিশোধ নিতে।
কার্টুন দেখার ফাঁকে বাবা মায়ের কথা শুনছিল। সে ঘোষণা করে, আমি কারো কাছে পড়বো না। নিজে নিজে শিখবো।
আতিক লোপা দুজনই হেসে উঠে। লোপা ছেলেকে নিজের বুকে টেনে নেয়।
তা দেখে আতিক বলে, ওমা! ওকি বলছে নাকি তোমার কাছে শিখবে, যেভাবে বুকে টেনে নিয়েছো মনে হচ্ছে ও রাজি হয়েছে তোমার কাছে শিখবে। বাবা এদিকে আয়। আমার বুকে আয়।
লোপা বলে, না। আমার বুকে থাকবে।
আতিক বলে নাহ আমার বুকে থাকবে বলে নিজের দিকে টেনে নিতে চায় সৌরভকে। দুইজনেই টানাটানাটানি লাগে। কার বুকে যাবে।
সৌরভ মজা পায় মা বাবার টানাটানি দেখে।
আতিক বলে, সৌরভ বাবা তুই কি আমার বুকে আসবি না?
সৌরভ বলে, তুমি এদিকে আসো। আমি মধ্যেখানে থাকবো। তোমরা দুইজন দুইপাশে আমাকে জড়িয়ে ধরবা। ঠিক আছে তো?
লোপা বলে, অনেক সুন্দর বুদ্ধি। আসলে আমাদের ছেলে অনেক বড় হবে।
সৌরভ মধ্যখানে। ওরা দুইজন দুই পাশ থেকে আদর করে জড়িয়ে রাখে। অন্যরকম লাগে।
ছেলের বুদ্ধিতে বাবা মা দুইজনই আশ্চর্য হয়। অনেক ভাল লাগে ওদের। দুই জন দুই দিক থেকে আদর করতে থাকে।
ঐই সময় কি ওরা ঘূর্ণাক্ষরেও কল্পনা করেছিল এই টানাটানি একসময় কঠিন হয়ে বাস্তব হবে ধরা দেবে?
০২
নাহ কল্পনা করার কথা না। তারা কল্পনাও করেনি ঐ সুন্দর সময়ে। ছেলের আচরণ দেখে তখন শুধু মুগ্ধতা ।
বিমান ভ্রমণটা অনেক উপভোগ করেছে সৌরভ। অনেক খুশী সে। যদিও লোপার চুপসে থাকা দেখে খারাপ লাগছিল আতিকের। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে গেল। সেখানে পানির চেয়ে পাথরই যেন বেশি। কক্সবাজারের মত বিশাল ঢেউ নাই। তারপরও ভাল লাগে। সৌরভ পানিতে গিয়ে দৌড়াদৌড়ি করে।
আতিক ডাক দেয়, বাবা এভাবে দৌড়াদৌড়ি করো না ব্যথা পাবে।
কিন্তু কে শুনে কার কথা। আতিকও ছেলের পিছে দৌড়ে।
লোপা বসে থাকে বড় ছাতার নিচে। কথা বলে না। ওর উচ্ছ্বাসতা যেন হারিয়ে গেছে। আতিক এসে বলে, ফুচকা খাবে?
লোপা মাথা নাড়ায়। না খাবে না।
অথচ ফুচকা অনেক প্রিয় লোপার। মাঝে মাঝে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় বলে দিত ফুচকা আনতে। যদি কখনো ভুলে না আনত তবে মুখ ফুলিয়ে বসে থাকত। অনুযোগ করত, মনে থাকবে কিভাবে? এখন কি তুমি আর আগের মত ভালবাস?
আতিক তখনই বের হয়ে পড়ে। যেখান থেকে হোক ফুচকা আনতেই হবে। আনেই। সামান্য ফুচকার জন্য ভালবাসাকে চ্যালেঞ্জ সহ্য হয় না ওর।
ফুচকা খাবে না শুনে আতিকের বলতে ইচ্ছা হয়, সে আগের ভালবাসা নেই? এখন তো আমার সাথে ফুচকা খেতেই ইচ্ছা করবে না।
কিন্তু বলতে পারে না। সাহসে কুলায় না। শুনলে লোপা বাজে কথা বলতে পারে। ও এখন অনেক বাজে কথা বলে। বিশ্রীভাবে ভাষায় বকা দেয় সৌরভকেও। সৌরভ বোধ হয় কিছু বুঝে। অভিযোগ করে না কারো কাছে। কি বুঝে নিয়েছে ও? বয়স কম হলেও ওর কিছু কিছু আচরণ অনেক বেশি বড়দের মত মনে হয়। মায়ের বকা শুনলেও কিছু বলে না। চুপ হয়ে শুনে যায়। এভাবে চুপ করে সয়ে নেওয়া দেখে অনেক খারাপ লাগে আতিকের।
এখন আতিককে ঠিক সহ্য করতে পারে না লোপা। রাতে বিছানায় একটু নড়লেই বলে সরো। আমার ভাল লাগে না। দম বন্ধ হয়ে আসে। সব কিছু কি হঠাৎ বদলে গেল। আতিক অনেক জানার চেষ্টা করে, আচ্ছা লোপা তোমার কি হয়েছে খুলে বলোতো।
লোপা কিছু বলে না। চুপ হয়ে থাকে। দিনের বেশির ভাগ সময়ই চুপ থাকে।
সৌরভের বয়স যখন পাঁচ তখন স্কুলে দেওয়া হলো। যেদিন প্রথম স্কুলে যায় সেদিন লোপা ও আতিক দুজনই স্কুলে যায়। এর আগে ব্যাগ, পেন্সিলবক্স, রঙের বক্স, ছাতা সব নতুন কিনে দেওয়া হয় সৌরভের জন্য। সৌরভও খুশী এত কিছু পেয়ে।
এর পর থেকে লোপা স্কুলে নিয়ে যায় ছেলেকে। সকাল বেলায় স্কুল। বাসা থেকে স্কুলে যেতে আধাঘন্টা লাগে। ছুটি হয় দুপুরে। বাসায় এসে আবার যাওয়া কষ্টকর দেখে সেখানেই অন্যান্য অভিভাবকদের সাথে অপেক্ষা করে ছেলের ছুটি হওয়া পর্যন্ত। ছুটি হলে মা ছেলে গল্প করতে করতে বাসায় ফিরে। কি হলো স্কুলে, কোন টিচার কি বলছে, কে আজ বকা খেয়েছে সব মা-কে বলে সৌরভ।
অন্যান্য যেসব অভিভাবক ছুটি পর্যন্ত থাকেন তাদের বেশ কয়েকজনের সাথে পরিচয় হয়। এরকম ভাবে পরিচয় হয় শাহেদ সাহেবের সাথে। তার বোনের ছেলে এই স্কুলে পড়ে।
বিভিন্ন কথা হয়। অনেক খানি সময়। কথা চলতে থাকে। শাহেদের সাথে কথা বলতে ভাল লাগে লোপার। অনেক মজা করে কথা বলে। শুনতে ইচ্ছা করে। আর এত সুন্দর করে যে হাসে। পুরুষ মানুষের হাসি এত সুন্দর হয় কিভাবে তা বুঝতে পারে না লোপা। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে।
কথা বলতে লাগলে অনেক সময় কথার লাগাম ধরে রাখা যায় না। ব্যক্তিগত কথা চলে আসে। ওদের মাঝেও আসে।।
লোপা খেয়াল করে যেদিন ছেলের স্কুল বন্ধ থাকে সেদিন ওর মন খারাপ থাকে অনেক। কি আজব। কি হচ্ছে এসব? শাহেদের সাথে দেখা না হলে এত খারাপ লাগে কেন? আর মহিলা অভিভাবকরা না হয় অপেক্ষা করে। পুরুষ মানুষ এভাবে বসে থাকে কেন? শাহেদেরও কি ভাল লেগে গেছে?
একদিন জিজ্ঞেস করে বসে, আচ্ছা আপনার কি অফিস নাই? ছুটি পর্যন্ত অপেক্ষা করেন।
শাহেদ হাসে, থাকবে না কেন?
-তা কিভাবে যান? এখানেইতো অনেক সময় কাটিয়ে দেন।
-আমি চাকরি করি বাবার অফিসে। নিজেদের অফিস ইচ্ছামত গেলে সমস্যা হয় না। আর আমি সারাজীবনই এমনই। কোন কিছু সিরিয়াস ভাবে করতে পারি নি।
-ওহ তাহলে তো মজায় আছেন। বাবার অফিসে চাকরি করেন।
সম্পর্ক গাঢ় হতে থাকে। ৮ টা থেকে ১২ পর্যন্ত ক্লাস চলে। বিশাল সময়। শাহেদ আর লোপা কখনো বা চলে যায় লং ড্রাইভে। গল্প চলতে থাকে। লোপার নিজের কাছে খারাপ লাগে আতিককে ফাঁকি দিচ্ছে ভেবে। কিন্তু শাহেদের সাথে সঙ্গ, গল্প করা অনেক ভাল লাগে। যে কারণে ঐ খারাপ লাগাটা এত অনুভূত হয় না।
স্কুল থেকে ফেরার পথে এখনও গল্প করে সৌরভ। অনেক কথা বলে ও। কিন্তু সেগুলো কোনটাই মনযোগ দিয়ে শুনে না লোপা। ওর মনে আবেশ থাকে শাহেদের সাথে কাটানো সময় গুলো। সৌরভ বলে যায়।
শাহেদের সাথে ব্যাপারটা প্রকাশ্য হয়ে উঠে। আতিক জানতে পারে। আরো অনেকে জেনে যায়। বুঝানোর চেষ্টা করে লোপাকে। কিন্তু লোপা চুপ থাকে। এই বিষয়ে কিছু বলে না।
শাহেদের সাথে চলাফেরা ঠিকই চলতে থাকে। আতিকের বন্ধুরা বিভিন্ন কথা বলতে থাকে আতিককে। আতিকের বাবা মা চাপ দেয়। বউকে ঠিক করার জন্য।
কিন্তু লোপাকে কোন মতেই বোঝানো যায় না। একমাত্র ছেলের দিকে চেয়ে আপোষ করার চেষ্টা করে আতিক। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয় না।
শেষ পর্যন্ত আর না পেরে কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলে। তালাক দিয়ে দেয় লোপাকে।
এখন ছেলেকে নিয়েই ওর সংসার। অনেকে বিয়ে করতে বলে আবার। কিন্তু আতিক এ ব্যাপারে রাজি না। ছেলের যতেœর অবহেলা সহ্য করতে পারবে না।
ছেলে আর বাবার সংসার ভালই যাচ্ছিল। কিন্তু এসময় বিপত্তিটা ঘটে। লোপা মামলা করেছে ছেলে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য।
মামলা কোর্টে। আর সবার ধারণা ছেলে যেহেতু ছোট তাই মায়ের কাছেই থাকবে এই ধরণের রায়ই আসবে।
আতিকের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। ছেলেকে কিছু বলে না। এই ছেলেকে ছাড়া থাকবে কল্পনাও করতে পারে না। আতিক অনেক টাকা খরচ করে বড় আইনজীবি নিয়োগ দেয়।
( এর আগে বলেছিলাম দ্বিতীয় পর্বে সমাপ্ত হবে, কিন্তু অনাবশ্যক কিছু কথা লেখায় তা পারলাম না। এজন্য দুঃখিত। তৃতীয় পর্বে সমাপ্ত হবে। )
বুয়া সকালের নাস্তা বানায়। এত সকালে খেতে চরম বিরক্ত লাগে সৌরভের। বাবা ওকে খাইয়ে দেন নিজ হাতে। একটু পর পর বাধা দিতে চায় সৌরভ। “ আব্বু আর খাবো না, পেট ভরে গেছে।”
“ এত কম খেলে খিদা লেগে যাবেতো। আরেকটু খাও।”
- নাহ আর খাবো না। খেতে ইচ্ছা করছে না। বমি আসছে। বলে বমির অভিনয় করার চেষ্টা করে সৌরভ।
পানির গ্লাসটা এগিয়ে দেন বাবা। নাও পানি খাও।
পানি খায় সৌরভ। সরাসরি ঘোষণা দেয়, আমি আর খাবো না।
-প্লিজ বাবা আরেকটা খাও শুধু। এটা খেলেই শেষ। আর খেতে বলব না। আমার বাবা অনেক ভাল।
খাওয়া শেষে ছেলের মুখ ধুইয়ে দেন আতিক। এরপর ছেলেকে স্কুলের শার্ট ড্রেস পড়িয়ে দেন। দিতে দিতে গল্প করেন, তোমার স্কুলে যেতে কি ভাল লাগে না?
-না ভাল লাগে না। টিচারগুলো শুধু পড়া আর পড়া দেয়।
-এটা তো ভাল। যাতে তুমি অনেক বড় হতে পারো সেজন্য দেয়। তুমি না বড় হলে বিমান চালাবে?
- বিমান চালাবো। কিন্তু বিমান চালাতে গিয়ে এগুলো শিখতে হবে কেন? বিমান চালাতে কি কবিতা বলতে হয়?
আসলে তো। এই প্রশ্নের সাথে সাথে উত্তর খুঁজে পায় না আতিক। সৌরভের ইচ্ছা বড় হলে বিমান চালাবে। যেসব ছবিতে বিমান আছে ঐ গুলো ও বেশি দেখে। বিমানের প্রতি আগ্রহ দেখে আতিক একদিন ছেলেকে বিমান চড়ান। তিনটা টিকেট নেন। ঢাকা চিটাগাং। সাথে সৌরভের মাও ছিল। বিমান উঠে অনেক বেশি উত্তেজিত হয়েছিল সৌরভ। আব্বু আমরা এখন কত উপরে?
-বেশি উপরে না। তবে বিদেশে যেসব বিমান যায়। সেগুলো অনেক উপর দিয়ে যায়।
-আমি বিদেশে যাবো।
-হা আরো বড় হও। বড় হলে বিদেশে যেতে পারবে।
-ছোটরা কি বিদেশে যেতে পারে না?
মাঝে মাঝে এমন হয়। প্রশ্নের উত্তরে এমন কিছু বললে ভুল ধরে নতুন প্রশ্ন করে সৌরভ। এরকম হলে প্রতিবারই আতিক ভাবে সামনে থেকে ছেলের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সময় আরো সতর্ক হবে। কিন্তু তারপরও।
-নাহ ছোটরাও যেতে পারে। তুমি বড় হও। বাবার আরো টাকা হোক। তখন তোমাকে ঘুরাতে নিয়ে যাবো।
- আচ্ছা বাবা, এই বিমান চড়তে কি টাকা কম লাগে।
-দেশের ভিতরে তো। ভ্রমণ পথও কম এজন্য টাকা কম লাগে।
পাশে বসা লোপা বিরক্ত হয়। ও এতক্ষণ জানালা দিয়ে নিচে তাকাচ্ছিলো। এখন অনেক কিছুই সহ্য হয় না লোপার। ছেলের এরকম কথা বলে যাওয়া খারাপ লাগছে। সবকিছু কেন খারাপ লাগছে এটাই প্রকাশ করতে পারছে না। এটাই বড় সমস্যা। এই সৌরভ চুপ করো।
ধমক খেয়ে থেমে যায় সৌরভ।
আতিক বলে, তুমি রাগ করছো কেন? ওতো জানতে চাচ্ছে বিষয়গুলো। এভাবেই তো শিখবে।
লোপার রাগ আরো বেড়ে যায় একথা শুনে। তার আগে তুমি চুপ করো। আর একটা কথা বলবা তো খারাপ হবে।
আতিক ভয় পায়। লোপাটা এরকম অচেনা হয়ে যাচ্ছে কেন? আগে তো এমন ছিল না। কি তাড়াতাড়ি বদলে গেল। আগে অনেক কথা জমা রাখতো। অফিস থেকে ঘরে ফিরে আসলেই সেগুলো বলা শুরু করতো। যেন না বলা পর্যন্ত শান্তি নেই। সারাদিন সৌরভ কি কি মজা করেছে সব বলত। বলত, সৌরভ মাশ আল্লাহ দিলে অনেক ব্রিলিয়ান্ট কিন্তু। অনেক কিছু বুঝে যায়। আজ নাস্তা করার পর প্লেট নিয়ে নিজেই চলে গেছে বেসিনে। অথচ বেসিনটা ওর অনেক উপরে। পরে কি করছে জানো?
উত্তরের অপেক্ষা করে না। নিজেই বলে যায়, টি টেবিলটা আছে না। সেটা ঠেলে ঠেলে নিয়ে গেল। তারপর সেটার উপর দাঁড়িয়ে বেসিনের টেপ ছাড়ল। আমি দাঁড়িয়ে সব দেখছিলাম। তুমি যদি দেখতা। ওকে স্কুলে দিয়ে দিলে ভাল হয়। আমি পড়াবো। আমার ছেলে স্কুলে ফাস্ট হবে।
আতিক বলে, তুমি পড়ালে ফাস্ট হবে না। আমি পড়ালে হবে।
লোপা প্রতিবাদ করে, তোমারে বলছে! তুমি পড়ালে পড়ানো শুরু করবে মাইক্রোসফট এক্সেল, এক্সেস, ওয়ার্ড, প্রোগাম এগুলো। ঐই গুলো নিয়েই তো তোমার কাজ।সেগুলো পড়ে আমার ছেলের কাজ নাই।
আতিক বলে, আর তুমি পড়ালে তো পড়াবে কিভাবে ভারমিচিলি পুডিং বানাতে হয়,কোকানাট কাস্টার্ড বানানোর নিয়ম, ছানার কোফতা, খাসির রেজালা কিভাবে বানালে ভাল হয় এগুলো।
রান্নার ব্যাপারে কঠিন আগ্রহ লোপার। এর মাঝে বেশ কিছু কোর্স করেছে। মাঝে মাঝেই নতুন নতুন আইটেম রান্না করে। মজা হয় অনেক।
লোপা বলে, রান্না ঐগুলো কিচেনের ব্যাপার। ঐগুলো আমি শিখাতে যাবো কেন?
আতিক বলে, তাইতো। আর এক্সেল, প্রোগাম, ওয়ার্ড এগুলো আমার অফিসের ব্যাপার। এগুলোও আমি শিখাতে যাবো কেন?
সৌরভ টিভিতে কার্টুন দেখছিল। টম এন্ড জেরি। এই কার্টুনটা ওর অনেক প্রিয়। যদিও টম এন্ড জেরি কাউকেই ভাল লাগে না। দুই জন শুধু ব্যস্ত প্রতিশোধ নিতে।
কার্টুন দেখার ফাঁকে বাবা মায়ের কথা শুনছিল। সে ঘোষণা করে, আমি কারো কাছে পড়বো না। নিজে নিজে শিখবো।
আতিক লোপা দুজনই হেসে উঠে। লোপা ছেলেকে নিজের বুকে টেনে নেয়।
তা দেখে আতিক বলে, ওমা! ওকি বলছে নাকি তোমার কাছে শিখবে, যেভাবে বুকে টেনে নিয়েছো মনে হচ্ছে ও রাজি হয়েছে তোমার কাছে শিখবে। বাবা এদিকে আয়। আমার বুকে আয়।
লোপা বলে, না। আমার বুকে থাকবে।
আতিক বলে নাহ আমার বুকে থাকবে বলে নিজের দিকে টেনে নিতে চায় সৌরভকে। দুইজনেই টানাটানাটানি লাগে। কার বুকে যাবে।
সৌরভ মজা পায় মা বাবার টানাটানি দেখে।
আতিক বলে, সৌরভ বাবা তুই কি আমার বুকে আসবি না?
সৌরভ বলে, তুমি এদিকে আসো। আমি মধ্যেখানে থাকবো। তোমরা দুইজন দুইপাশে আমাকে জড়িয়ে ধরবা। ঠিক আছে তো?
লোপা বলে, অনেক সুন্দর বুদ্ধি। আসলে আমাদের ছেলে অনেক বড় হবে।
সৌরভ মধ্যখানে। ওরা দুইজন দুই পাশ থেকে আদর করে জড়িয়ে রাখে। অন্যরকম লাগে।
ছেলের বুদ্ধিতে বাবা মা দুইজনই আশ্চর্য হয়। অনেক ভাল লাগে ওদের। দুই জন দুই দিক থেকে আদর করতে থাকে।
ঐই সময় কি ওরা ঘূর্ণাক্ষরেও কল্পনা করেছিল এই টানাটানি একসময় কঠিন হয়ে বাস্তব হবে ধরা দেবে?
০২
নাহ কল্পনা করার কথা না। তারা কল্পনাও করেনি ঐ সুন্দর সময়ে। ছেলের আচরণ দেখে তখন শুধু মুগ্ধতা ।
বিমান ভ্রমণটা অনেক উপভোগ করেছে সৌরভ। অনেক খুশী সে। যদিও লোপার চুপসে থাকা দেখে খারাপ লাগছিল আতিকের। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে গেল। সেখানে পানির চেয়ে পাথরই যেন বেশি। কক্সবাজারের মত বিশাল ঢেউ নাই। তারপরও ভাল লাগে। সৌরভ পানিতে গিয়ে দৌড়াদৌড়ি করে।
আতিক ডাক দেয়, বাবা এভাবে দৌড়াদৌড়ি করো না ব্যথা পাবে।
কিন্তু কে শুনে কার কথা। আতিকও ছেলের পিছে দৌড়ে।
লোপা বসে থাকে বড় ছাতার নিচে। কথা বলে না। ওর উচ্ছ্বাসতা যেন হারিয়ে গেছে। আতিক এসে বলে, ফুচকা খাবে?
লোপা মাথা নাড়ায়। না খাবে না।
অথচ ফুচকা অনেক প্রিয় লোপার। মাঝে মাঝে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় বলে দিত ফুচকা আনতে। যদি কখনো ভুলে না আনত তবে মুখ ফুলিয়ে বসে থাকত। অনুযোগ করত, মনে থাকবে কিভাবে? এখন কি তুমি আর আগের মত ভালবাস?
আতিক তখনই বের হয়ে পড়ে। যেখান থেকে হোক ফুচকা আনতেই হবে। আনেই। সামান্য ফুচকার জন্য ভালবাসাকে চ্যালেঞ্জ সহ্য হয় না ওর।
ফুচকা খাবে না শুনে আতিকের বলতে ইচ্ছা হয়, সে আগের ভালবাসা নেই? এখন তো আমার সাথে ফুচকা খেতেই ইচ্ছা করবে না।
কিন্তু বলতে পারে না। সাহসে কুলায় না। শুনলে লোপা বাজে কথা বলতে পারে। ও এখন অনেক বাজে কথা বলে। বিশ্রীভাবে ভাষায় বকা দেয় সৌরভকেও। সৌরভ বোধ হয় কিছু বুঝে। অভিযোগ করে না কারো কাছে। কি বুঝে নিয়েছে ও? বয়স কম হলেও ওর কিছু কিছু আচরণ অনেক বেশি বড়দের মত মনে হয়। মায়ের বকা শুনলেও কিছু বলে না। চুপ হয়ে শুনে যায়। এভাবে চুপ করে সয়ে নেওয়া দেখে অনেক খারাপ লাগে আতিকের।
এখন আতিককে ঠিক সহ্য করতে পারে না লোপা। রাতে বিছানায় একটু নড়লেই বলে সরো। আমার ভাল লাগে না। দম বন্ধ হয়ে আসে। সব কিছু কি হঠাৎ বদলে গেল। আতিক অনেক জানার চেষ্টা করে, আচ্ছা লোপা তোমার কি হয়েছে খুলে বলোতো।
লোপা কিছু বলে না। চুপ হয়ে থাকে। দিনের বেশির ভাগ সময়ই চুপ থাকে।
সৌরভের বয়স যখন পাঁচ তখন স্কুলে দেওয়া হলো। যেদিন প্রথম স্কুলে যায় সেদিন লোপা ও আতিক দুজনই স্কুলে যায়। এর আগে ব্যাগ, পেন্সিলবক্স, রঙের বক্স, ছাতা সব নতুন কিনে দেওয়া হয় সৌরভের জন্য। সৌরভও খুশী এত কিছু পেয়ে।
এর পর থেকে লোপা স্কুলে নিয়ে যায় ছেলেকে। সকাল বেলায় স্কুল। বাসা থেকে স্কুলে যেতে আধাঘন্টা লাগে। ছুটি হয় দুপুরে। বাসায় এসে আবার যাওয়া কষ্টকর দেখে সেখানেই অন্যান্য অভিভাবকদের সাথে অপেক্ষা করে ছেলের ছুটি হওয়া পর্যন্ত। ছুটি হলে মা ছেলে গল্প করতে করতে বাসায় ফিরে। কি হলো স্কুলে, কোন টিচার কি বলছে, কে আজ বকা খেয়েছে সব মা-কে বলে সৌরভ।
অন্যান্য যেসব অভিভাবক ছুটি পর্যন্ত থাকেন তাদের বেশ কয়েকজনের সাথে পরিচয় হয়। এরকম ভাবে পরিচয় হয় শাহেদ সাহেবের সাথে। তার বোনের ছেলে এই স্কুলে পড়ে।
বিভিন্ন কথা হয়। অনেক খানি সময়। কথা চলতে থাকে। শাহেদের সাথে কথা বলতে ভাল লাগে লোপার। অনেক মজা করে কথা বলে। শুনতে ইচ্ছা করে। আর এত সুন্দর করে যে হাসে। পুরুষ মানুষের হাসি এত সুন্দর হয় কিভাবে তা বুঝতে পারে না লোপা। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে।
কথা বলতে লাগলে অনেক সময় কথার লাগাম ধরে রাখা যায় না। ব্যক্তিগত কথা চলে আসে। ওদের মাঝেও আসে।।
লোপা খেয়াল করে যেদিন ছেলের স্কুল বন্ধ থাকে সেদিন ওর মন খারাপ থাকে অনেক। কি আজব। কি হচ্ছে এসব? শাহেদের সাথে দেখা না হলে এত খারাপ লাগে কেন? আর মহিলা অভিভাবকরা না হয় অপেক্ষা করে। পুরুষ মানুষ এভাবে বসে থাকে কেন? শাহেদেরও কি ভাল লেগে গেছে?
একদিন জিজ্ঞেস করে বসে, আচ্ছা আপনার কি অফিস নাই? ছুটি পর্যন্ত অপেক্ষা করেন।
শাহেদ হাসে, থাকবে না কেন?
-তা কিভাবে যান? এখানেইতো অনেক সময় কাটিয়ে দেন।
-আমি চাকরি করি বাবার অফিসে। নিজেদের অফিস ইচ্ছামত গেলে সমস্যা হয় না। আর আমি সারাজীবনই এমনই। কোন কিছু সিরিয়াস ভাবে করতে পারি নি।
-ওহ তাহলে তো মজায় আছেন। বাবার অফিসে চাকরি করেন।
সম্পর্ক গাঢ় হতে থাকে। ৮ টা থেকে ১২ পর্যন্ত ক্লাস চলে। বিশাল সময়। শাহেদ আর লোপা কখনো বা চলে যায় লং ড্রাইভে। গল্প চলতে থাকে। লোপার নিজের কাছে খারাপ লাগে আতিককে ফাঁকি দিচ্ছে ভেবে। কিন্তু শাহেদের সাথে সঙ্গ, গল্প করা অনেক ভাল লাগে। যে কারণে ঐ খারাপ লাগাটা এত অনুভূত হয় না।
স্কুল থেকে ফেরার পথে এখনও গল্প করে সৌরভ। অনেক কথা বলে ও। কিন্তু সেগুলো কোনটাই মনযোগ দিয়ে শুনে না লোপা। ওর মনে আবেশ থাকে শাহেদের সাথে কাটানো সময় গুলো। সৌরভ বলে যায়।
শাহেদের সাথে ব্যাপারটা প্রকাশ্য হয়ে উঠে। আতিক জানতে পারে। আরো অনেকে জেনে যায়। বুঝানোর চেষ্টা করে লোপাকে। কিন্তু লোপা চুপ থাকে। এই বিষয়ে কিছু বলে না।
শাহেদের সাথে চলাফেরা ঠিকই চলতে থাকে। আতিকের বন্ধুরা বিভিন্ন কথা বলতে থাকে আতিককে। আতিকের বাবা মা চাপ দেয়। বউকে ঠিক করার জন্য।
কিন্তু লোপাকে কোন মতেই বোঝানো যায় না। একমাত্র ছেলের দিকে চেয়ে আপোষ করার চেষ্টা করে আতিক। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয় না।
শেষ পর্যন্ত আর না পেরে কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলে। তালাক দিয়ে দেয় লোপাকে।
এখন ছেলেকে নিয়েই ওর সংসার। অনেকে বিয়ে করতে বলে আবার। কিন্তু আতিক এ ব্যাপারে রাজি না। ছেলের যতেœর অবহেলা সহ্য করতে পারবে না।
ছেলে আর বাবার সংসার ভালই যাচ্ছিল। কিন্তু এসময় বিপত্তিটা ঘটে। লোপা মামলা করেছে ছেলে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য।
মামলা কোর্টে। আর সবার ধারণা ছেলে যেহেতু ছোট তাই মায়ের কাছেই থাকবে এই ধরণের রায়ই আসবে।
আতিকের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। ছেলেকে কিছু বলে না। এই ছেলেকে ছাড়া থাকবে কল্পনাও করতে পারে না। আতিক অনেক টাকা খরচ করে বড় আইনজীবি নিয়োগ দেয়।
( এর আগে বলেছিলাম দ্বিতীয় পর্বে সমাপ্ত হবে, কিন্তু অনাবশ্যক কিছু কথা লেখায় তা পারলাম না। এজন্য দুঃখিত। তৃতীয় পর্বে সমাপ্ত হবে। )