০১
বৃষ্টি হচ্ছে। বাহিরে প্রচন্ড বৃষ্টি। মধ্যখানে প্রচন্ড বজ্রপাতের শব্দ। শারমিন একা ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। তাকিয়ে আছে ঐ দূর আকাশের দিকে। বৃষ্টিগুলো যেন আকাশকে আড়াল করতে চায়। কিন্তু পারে না। স্বচ্ছ জিনিষ দিয়ে বুঝি কিছু আড়াল করা যায়? আকাশও আড়াল হয় না। আকাশে মেঘ ভেসে চলছে দুরন্ত গতিতে।
শারমিনের চোখে পানি। শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখের পানি শুষে নেওয়ার চেষ্টা করে। যতই নেয় লাভ হয় না। আরো বেশি আসে। এক সময় বিরক্ত হয়ে চোখের পানি মোছার চেষ্টাটাই বাদ দেয়। কেউ তো দেখছে না। বৃষ্টি দেখলেই কেন যে চোখের পানি এভাবে ধেয়ে আসে?
মনে পড়ে যায় ৫ বছর আগের কথা। তখনও এরকম বৃষ্টি ছিল। শারমিন হলে থেকে পড়ালেখা করত। সুজনের সাথে ভাল সম্পর্ক। একদিন ওরা পরিকল্পনা করে দূরে কোথাও ঘুরতে যাবে। কিন্তু কোথায় যাবে? সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।
বটতলীতে দুজনে আলোচনায় বসে। তখন পড়ন্ত বিকাল। সূর্যের আভা শারমিনের মুখে এসে পড়ে।
: পৃথিবীতে এই মাত্র এমন একটা জিনিষ দেখলাম, যা হাজারো স্বপ্ন দেখা ছাড়া সম্ভব না কোন দিন।
শারমিন বিভ্রান্ত হয়। এদিক সেদিক তাকায়। কি এমন দেখল। সুজন মাঝে মাঝে এরকম হেয়ালী কথা বলে। প্রায়ই সময় ব্যাপারটা খুলে বলে না। বার বার জিজ্ঞেস করতে হয়।
অভ্যাসবশত শারমিন প্রশ্ন করে, কি এমন দেখলে যা তোমার হাজারো স্বপ্নকে পাড়ি দিল। যদিও জানে সুজন সহজে উত্তর দেবে না। আরো অনেক বার জিজ্ঞেস করতে হবে।
: তুমি একটুও নড়বে না। একটুও না। ঠিক যেমন আছো তেমন থাকো।
সুজনের গলায় অনুনয় ঝড়ে পড়ে।
শারমিন ওড়নাটা দিয়ে হাত পরিষ্কার করল। কিছুক্ষণ আগে বাদাম খেয়েছে দুজনে। বাদামে ছোলা লেগে ছিল। নড়ব না কেন? হঠাৎ কি হলো? নড়তে তো হবেই। সূর্যের আলো এসে পড়ছে।
: আরে সূর্যের আলো পড়ছে সেজন্যই তো নড়তে মানা করছি। তোমাকে এত্ত সুন্দর লাগছে কেন? আমার মনে হচ্ছে.....
কথাটা বলে থেমে যায় সুজন।
: কি মনে হচ্ছে? থেমে গেলে কেন?
: কি মনে হচ্ছে এটাই তো বুঝিয়ে বলতে পারছি না।
: বুঝিয়ে বলতে হবে না। এম্নিই বলো।
: আরে পারলে তো বলতামই।
ঠিক আছে আমি এখন অন্য পাশে বসছি। সূর্যের আলোতে চোখ বুঝি এবার যাবে। একটু বিরক্তির ভান করে উঠতে যাওয়ার ভঙ্গি করে শারমিন।
প্লিজ আরেকটু বসো। অনেক ভাল লাগছে। একটুও নড়িও না।
: আরে আশ্চর্য তুমি ছবি তুলছো নাকি। নড়লে সমস্যা কোথায়?
তা শুনে সুজনের একটা দীর্ঘশ্বাস শুনা যায়। ওর ক্যামেরার অনেক শখ। বেশ কয়েকবার টাকা জমিয়েছেও। কিন্তু প্রাথমিক পর্যায়ে শেষ করে ফেলেছে টাকা গুলো।
: ইশ একটা যদি ক্যামেরা থাকতো। তাহলে তোমার কত শত ছবি যে তুলতাম তার হিসাব থাকতো না। কি দুর্ভাগা ক্যামরা নাই। দাঁড়াও আজ থেকে আবার টাকা জমানো শুরু করবো।
আফছোসের সুরে কথাগুলো বলে।
শারমিনের খারাপ লাগে। ক্যামেরার কথা না তুললেই হতো। ইচ্ছে হয় ক্যামেরা একটা গিফট করতে। কিন্তু বাসা থেকে যে টাকা পাঠানো হয় তা দিয়ে নিজের চলতেই হিমশিম খেতে হয়। ক্যামেরা কিভাবে যোগাড় হবে?
ক্যামেরা কিনলে কি হবে জানো? জানতে চায় সুজন।
উত্তরের অপেক্ষা না করে নিজেই আবার বলে উঠে,
: আমি ক্যামেরা দিয়ে শুধু তোমার ছবি তুলবো। আর কোন ছবি তুলবো না। শুধু তোমার ছবি।
তা শুনে শারমিনের কেমন জানি একটা ব্যথা করে। অন্যরকম ভাল লাগার যে ব্যথা। যে ব্যথা টাকা দিয়ে পাওয়া অসম্ভব। চাইলেই পাওয়া যায় না। যে ব্যথা মনে আনন্দ ছড়িয়ে দেয় প্রতিটি পরতে।
ইশ আমি যেন তোমার ছবি তুলব না। শুধু আমার ছবি তুলবে? নাকি তোমার ক্যামেরা হবে বলে আমাকে ধরতে দেবে না?
খোঁচাটা লাগে সুজনের। আমার ক্যামরা বলে কি কথা? কষ্ট পেলাম। ধূর মনটাই খারাপ করে দিলা।
আরে দেখো রাগ করছো কেন? এম্নে একটু দুষ্টামি করলাম। এত বড় হয়েছো দুষ্টামিও বুঝো না। এখনও রাগ ভাঙো। না হলে ঘুষি মেরে রাগ ভেঙে দেব।
শারমিনের বলার ভঙ্গি দেখে রাগ হেসে উঠে সুজন।
আচ্ছা তোমার ছবি তুলবো না কেন? সেটা বলো।
- আমি কি তোমার মত সুন্দর নাকি? যে আমার ছবি তুলবে? আমার ক্যামেরাতে আমি শুধু সুন্দর জিনিষ রাখবো। আর আমার মতে শুধু তুমিই সুন্দর। আর কিচ্ছু না। আর কিচ্ছু না। কথাগুলো আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এক নিঃশ্বাসে বলে ফেলে সুজন।
বৃষ্টির প্রচন্ডতা বাড়ছে। কিছু ছিটা ব্যালকনিতে এসেও পড়ছে। চোখের পানি এখনও ঝড়ছে শারমিনের। মুখের মধ্যে এসে পড়ল বৃষ্টির কিছু ফোঁটা। চোখের পানি আর বৃষ্টির পানিতে মুখ সয়লাব।
ক্যামেরার কথা মনে হতেই শারমিনের অনেক খারাপ লাগছে। আজ চাইলে পুরা ক্যামেরার দোকান কিনে ফেলতে পারে। শুধু চাইলেই হবে। কিন্তু প্রাপ্তিগুলো যখন ইচ্ছামত না হয় তখন তা যতই ব্যাপক হোক ভাল লাগে না। তখন একটা ক্যামেরা যোগাড় করতে পারে নি। ক্যামেরা স্বপ্ন হয়েই ছিল।
বাসায় এত ক্যামেরা। অথচ কখনও একবারও কোন ক্যামেরার হাতে দেয় না শারমিন। ওর হাসবেন্ড মনির জিজ্ঞেস করে ছবি তোলার ব্যাপারে তোমার এত অনীহা কেন? নিজের সৌন্দর্য ধরা দিতে চাও না, তাই না।
তা শুনে শারমিন কষ্টের হাসি হাসে। যদিও তা বুঝতে দেয় না মনির কে।
আসল কথা কি বলা যায়?? সেটা যে বলা যায় না। সেটা যে শুধু মনের মধ্যেই থেকে যায়। ভাগ্যিস কেউ মন পড়তে পারে না........
হয়ত চলবে----
...............................................
( গল্পটির নাম- বৃষ্টি কখন কান্না থামাবে ১ম পর্ব
লেখা শুরু করেছি- ০৬.০৫.১০ সকাল ৬ টা আট মিনিটে।
সময় লেগেছে- ৫০ মিনিট, পোস্ট দিচ্ছি- ০৬.০৫.১০)
বৃষ্টি হচ্ছে। বাহিরে প্রচন্ড বৃষ্টি। মধ্যখানে প্রচন্ড বজ্রপাতের শব্দ। শারমিন একা ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। তাকিয়ে আছে ঐ দূর আকাশের দিকে। বৃষ্টিগুলো যেন আকাশকে আড়াল করতে চায়। কিন্তু পারে না। স্বচ্ছ জিনিষ দিয়ে বুঝি কিছু আড়াল করা যায়? আকাশও আড়াল হয় না। আকাশে মেঘ ভেসে চলছে দুরন্ত গতিতে।
শারমিনের চোখে পানি। শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখের পানি শুষে নেওয়ার চেষ্টা করে। যতই নেয় লাভ হয় না। আরো বেশি আসে। এক সময় বিরক্ত হয়ে চোখের পানি মোছার চেষ্টাটাই বাদ দেয়। কেউ তো দেখছে না। বৃষ্টি দেখলেই কেন যে চোখের পানি এভাবে ধেয়ে আসে?
মনে পড়ে যায় ৫ বছর আগের কথা। তখনও এরকম বৃষ্টি ছিল। শারমিন হলে থেকে পড়ালেখা করত। সুজনের সাথে ভাল সম্পর্ক। একদিন ওরা পরিকল্পনা করে দূরে কোথাও ঘুরতে যাবে। কিন্তু কোথায় যাবে? সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।
বটতলীতে দুজনে আলোচনায় বসে। তখন পড়ন্ত বিকাল। সূর্যের আভা শারমিনের মুখে এসে পড়ে।
: পৃথিবীতে এই মাত্র এমন একটা জিনিষ দেখলাম, যা হাজারো স্বপ্ন দেখা ছাড়া সম্ভব না কোন দিন।
শারমিন বিভ্রান্ত হয়। এদিক সেদিক তাকায়। কি এমন দেখল। সুজন মাঝে মাঝে এরকম হেয়ালী কথা বলে। প্রায়ই সময় ব্যাপারটা খুলে বলে না। বার বার জিজ্ঞেস করতে হয়।
অভ্যাসবশত শারমিন প্রশ্ন করে, কি এমন দেখলে যা তোমার হাজারো স্বপ্নকে পাড়ি দিল। যদিও জানে সুজন সহজে উত্তর দেবে না। আরো অনেক বার জিজ্ঞেস করতে হবে।
: তুমি একটুও নড়বে না। একটুও না। ঠিক যেমন আছো তেমন থাকো।
সুজনের গলায় অনুনয় ঝড়ে পড়ে।
শারমিন ওড়নাটা দিয়ে হাত পরিষ্কার করল। কিছুক্ষণ আগে বাদাম খেয়েছে দুজনে। বাদামে ছোলা লেগে ছিল। নড়ব না কেন? হঠাৎ কি হলো? নড়তে তো হবেই। সূর্যের আলো এসে পড়ছে।
: আরে সূর্যের আলো পড়ছে সেজন্যই তো নড়তে মানা করছি। তোমাকে এত্ত সুন্দর লাগছে কেন? আমার মনে হচ্ছে.....
কথাটা বলে থেমে যায় সুজন।
: কি মনে হচ্ছে? থেমে গেলে কেন?
: কি মনে হচ্ছে এটাই তো বুঝিয়ে বলতে পারছি না।
: বুঝিয়ে বলতে হবে না। এম্নিই বলো।
: আরে পারলে তো বলতামই।
ঠিক আছে আমি এখন অন্য পাশে বসছি। সূর্যের আলোতে চোখ বুঝি এবার যাবে। একটু বিরক্তির ভান করে উঠতে যাওয়ার ভঙ্গি করে শারমিন।
প্লিজ আরেকটু বসো। অনেক ভাল লাগছে। একটুও নড়িও না।
: আরে আশ্চর্য তুমি ছবি তুলছো নাকি। নড়লে সমস্যা কোথায়?
তা শুনে সুজনের একটা দীর্ঘশ্বাস শুনা যায়। ওর ক্যামেরার অনেক শখ। বেশ কয়েকবার টাকা জমিয়েছেও। কিন্তু প্রাথমিক পর্যায়ে শেষ করে ফেলেছে টাকা গুলো।
: ইশ একটা যদি ক্যামেরা থাকতো। তাহলে তোমার কত শত ছবি যে তুলতাম তার হিসাব থাকতো না। কি দুর্ভাগা ক্যামরা নাই। দাঁড়াও আজ থেকে আবার টাকা জমানো শুরু করবো।
আফছোসের সুরে কথাগুলো বলে।
শারমিনের খারাপ লাগে। ক্যামেরার কথা না তুললেই হতো। ইচ্ছে হয় ক্যামেরা একটা গিফট করতে। কিন্তু বাসা থেকে যে টাকা পাঠানো হয় তা দিয়ে নিজের চলতেই হিমশিম খেতে হয়। ক্যামেরা কিভাবে যোগাড় হবে?
ক্যামেরা কিনলে কি হবে জানো? জানতে চায় সুজন।
উত্তরের অপেক্ষা না করে নিজেই আবার বলে উঠে,
: আমি ক্যামেরা দিয়ে শুধু তোমার ছবি তুলবো। আর কোন ছবি তুলবো না। শুধু তোমার ছবি।
তা শুনে শারমিনের কেমন জানি একটা ব্যথা করে। অন্যরকম ভাল লাগার যে ব্যথা। যে ব্যথা টাকা দিয়ে পাওয়া অসম্ভব। চাইলেই পাওয়া যায় না। যে ব্যথা মনে আনন্দ ছড়িয়ে দেয় প্রতিটি পরতে।
ইশ আমি যেন তোমার ছবি তুলব না। শুধু আমার ছবি তুলবে? নাকি তোমার ক্যামেরা হবে বলে আমাকে ধরতে দেবে না?
খোঁচাটা লাগে সুজনের। আমার ক্যামরা বলে কি কথা? কষ্ট পেলাম। ধূর মনটাই খারাপ করে দিলা।
আরে দেখো রাগ করছো কেন? এম্নে একটু দুষ্টামি করলাম। এত বড় হয়েছো দুষ্টামিও বুঝো না। এখনও রাগ ভাঙো। না হলে ঘুষি মেরে রাগ ভেঙে দেব।
শারমিনের বলার ভঙ্গি দেখে রাগ হেসে উঠে সুজন।
আচ্ছা তোমার ছবি তুলবো না কেন? সেটা বলো।
- আমি কি তোমার মত সুন্দর নাকি? যে আমার ছবি তুলবে? আমার ক্যামেরাতে আমি শুধু সুন্দর জিনিষ রাখবো। আর আমার মতে শুধু তুমিই সুন্দর। আর কিচ্ছু না। আর কিচ্ছু না। কথাগুলো আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এক নিঃশ্বাসে বলে ফেলে সুজন।
বৃষ্টির প্রচন্ডতা বাড়ছে। কিছু ছিটা ব্যালকনিতে এসেও পড়ছে। চোখের পানি এখনও ঝড়ছে শারমিনের। মুখের মধ্যে এসে পড়ল বৃষ্টির কিছু ফোঁটা। চোখের পানি আর বৃষ্টির পানিতে মুখ সয়লাব।
ক্যামেরার কথা মনে হতেই শারমিনের অনেক খারাপ লাগছে। আজ চাইলে পুরা ক্যামেরার দোকান কিনে ফেলতে পারে। শুধু চাইলেই হবে। কিন্তু প্রাপ্তিগুলো যখন ইচ্ছামত না হয় তখন তা যতই ব্যাপক হোক ভাল লাগে না। তখন একটা ক্যামেরা যোগাড় করতে পারে নি। ক্যামেরা স্বপ্ন হয়েই ছিল।
বাসায় এত ক্যামেরা। অথচ কখনও একবারও কোন ক্যামেরার হাতে দেয় না শারমিন। ওর হাসবেন্ড মনির জিজ্ঞেস করে ছবি তোলার ব্যাপারে তোমার এত অনীহা কেন? নিজের সৌন্দর্য ধরা দিতে চাও না, তাই না।
তা শুনে শারমিন কষ্টের হাসি হাসে। যদিও তা বুঝতে দেয় না মনির কে।
আসল কথা কি বলা যায়?? সেটা যে বলা যায় না। সেটা যে শুধু মনের মধ্যেই থেকে যায়। ভাগ্যিস কেউ মন পড়তে পারে না........
হয়ত চলবে----
...............................................
( গল্পটির নাম- বৃষ্টি কখন কান্না থামাবে ১ম পর্ব
লেখা শুরু করেছি- ০৬.০৫.১০ সকাল ৬ টা আট মিনিটে।
সময় লেগেছে- ৫০ মিনিট, পোস্ট দিচ্ছি- ০৬.০৫.১০)