সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

বইয়ের কাছে ফিরি

বই দিবে, বই। হরেক রকম বই দরকার আমার। দিতে পারবে ? সেটা কালজয়ী হোক কিংবা অখ্যাত কোন লেখকের প্রথম বই হোক কোন আপত্তি নেই। তারপরও আমার বই চাই। এটা এখনকার যুগে হয়ত অস্বাভাবিক শোনাচ্ছে । তবে আজ থেকে ৮/১০ বছর আগের তরুণ-তরুণীদের মনো চাহিদা ছিল এটিই।

মোবাইলের হরেক রকম অফার, ডিশের শত চ্যানেল, ইন্টারনেটে সারা বিশ্বের বন্ধুদের সাথে চ্যাটিং, এফ এম রেডিও ইত্যাদির চাপে তরুণ সমাজের বিশাল একটা অংশের সাথে আজ বইয়ের সম্পর্ক নেই বললেই চলে। অথচ এক সময় বই-ই ছিল বিনোদনের সবচেয়ে বড় উপায়।


দশ বছর আগের কথা। পাশের বিল্ডিংয়ের পলি আপু। হালকা গড়নের কি সুন্দর চেহারা। কোমর অবধি লম্বা সিলকি চুল। মাথায় ভালভাবে ওড়না দিয়ে যখন বের হতেন সবাই তাকিয়ে থাকত। পাড়ার হারুণ ভাই, কামরুল ভাই, সুজন ভাইদের আড্ডায় বেশির ভাগ তিনিই থাকতেন কেন্দ্রবিন্দু। সে আপু আমাদের বাসায় আসলে গল্পের বইয়ের খোঁজে আমার বইয়ের সেলফ ঘেঁটে ফেলতেন।

এত বেশি গল্পের বই পড়তেন বিধায় অ্যান্টি রাগ করতেন। অ্যান্টির ভয়ে পলি আপু বাথরুমে দরজা বন্ধ করে গল্পের বই পড়তেন। গল্পের বইয়ের এরকম নেশা অনেকেরই ছিল। আমি গল্পের বইয়ের ছোট খাট একটা লাইব্রেরী বানিয়ে ছিলাম। যেটা এখনো আছে। দুঃখ লাগে কেউ আর এখন গল্পের খোঁজতে আসে না।

গল্পের বই পড়ার জায়গা যে ভাল কিছু দখল করেছে তা কিন্তু নয়। এখন বন্ধুর সাথে মোবাইলে কথা বলে (মাঝে মাঝে একাধিক জনের সাথে প্রেম বিনিময় চলে), হিন্দি সিরিয়াল দেখে, নেটে গিয়ে অনেক সময় অসভ্য ওয়েবে ঢুকে নিষিদ্ধ জিনিষ দেখতে দেখতে বই পড়ার ব্যাপারটাই আর মাথায় আসে না। এজন্য বই পড়তে যে কি আনন্দ এ ব্যাপারটা জানতে পারছে না।

বেণী ঝুলানো গল্পের বই পড়–য়া সেসব কিশোরী যারা এখন হয়ত সংসার করছে, বাচ্চাদের মা তারা তাদের শৈশব যত নির্মল আনন্দের কথা বলতে পারবে এখনকার যুগের তরুণীদের সেরকম বলতে কষ্ট হবে। কেননা আধুনিক যুগে তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে বেড়ে গেছে প্রতারণা, মিথ্যা বলার অভ্যাস। প্রযুক্তিগুলো মিথ্যা বলতে সহায়কের ভূমিকা পালন করছে, মিষ্টি গলা থাকলেই আজ ভাল প্রেমিক- প্রেমিকা হওয়া যায়। একটা না একই সাথে দশ বারোটাও প্রেম করা যায়। আমার এক বন্ধু হিসেব রাখছে। এক বছর আগে তার ১৯ টা হয়েছিল। এখন যোগাযোগ নাই। মফস্বল থেকে ঢাকায় যাওয়া এই বন্ধুর পরিসংখ্যানে এখন কয়টা কে জানে?

ভয়ানক ব্যাপার একটা দেখেছি সেদিন। এক ছেলে মেয়ের গলা নিয়ে অন্য ছেলের সাথে আবেগের কথা বলছে। ছি ছি ছি। মেয়ে কন্ঠ পাগল এসব ছেলেদের ভাগ্য খুব একটা ভাল বলে মনে হয় না। মেয়ের গলা নিয়ে কথা বলা ছেলেটির সাথে কথা বললাম। সে বলল, যেসব ছেলের সাথে কথা বলে তারাই নাকি মোবাইলে টাকা পাঠায়।

অন্ধ প্রযুক্তি ব্যবহার থেকে আমরা সতর্ক হই। বুঝে শুনে ব্যবহার করি। দিনে কিছুটা সময়ের জন্য হলেও ফিরে যাই বইয়ের কাছে। অনেক অনেক ভাল লাগবে। অযথা ঠকা থেকে বাঁচব।