সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

এক ব্লগ পাগল (বড় গল্প)

সারাদিনের ধকল মুছার চেষ্টা করছে আহাদওর মুছার চেষ্টাটা একটু অদ্ভূতএকটু অন্যরকমসারাদিন পরিশ্রমের পর যখন নেটে বসে তখন তার সকল অবসাদ দূর হয়ে যায়নেট বলতে ব্লগএকটা ব্লগে সে বসেঅনেক ভাল লাগে সময়গুলো

ছোট কালে গল্প লিখতঅনেক দিন ক্যারিয়ারের চিন্তায় বিভিন্ন জায়গায় ব্যস্ত থাকায় লেখালেখির অভ্যাসটা ভুলতেই বসেছিলব্লগে যোগ দেওয়ার পর সে নেশাটা আবার জেগে উঠেছেব্লগে লিখে সেঅন্যদের লেখা পড়ে
মা ডাক দেন, আহাদ খেতে আয়

:
আসছি মা

আহাদ দ্রুত কি বোর্ড চাপতে থাকেঅনেক মন্তব্য এসে জমা হয়েছেসেগুলো উত্তর দিতে হবেউত্তর দেয়

কিছুক্ষণ পর মা আবার ডাক দেয়, আহাদ তাড়াতাড়ি আয়
:
এইতো মা আসছি

:
তুই তো অনেক আগে থেকেই আসছিস, ভাত যে ঠান্ডা হয়ে এলোসারাদিন অফিস করলি এখন ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়ার পর ঘুমাবি তা নাবসে পড়েছিস নেটে

আহাদ আরো কয়েকটা উত্তর দিয়ে ভাত খেতে আসেগ্রোগাসে খেতে থাকে ভাতঅতি দ্রুত

যত তাড়াতাড়ি খাচ্ছে তা দেখে মা বলেন, এভাবে খাচ্ছিস যে গলায় আটকাবে তো

সেদিকে খেয়াল নেই আহাদেরতাড়াতাড়ি খেয়ে ব্লগে বসতে পারলেই হলো

##০২##

হাতে আছে বিশ মিনিটনা ঘুমাতে যাওয়ার জন্য নয়কিংবা লোডশেডিংয়ের আগত হওয়ার সম্ভাবনা কাছে এসেছে তাও কিন্তু নয়লোডশেডিংয়ের সমস্যা কোন সমস্যা নয়ল্যাপটপে ব্লগিং করেতাছাড়া পুরা ঘর জুড়ে আছে শক্তিশালী আইপি এস তাছাড়া লোডশেডিং যে হয় এটাই বুঝা যায় নাফ্যানের স্প্রিড বেড়ে গেলে লাইটের উজ্জ্বলতা বাড়লে তবেই ধরে নিতে হয় লোডশেডিং হয়েছে

মা ঘুমাতে চলে গেছেনযাওয়ার আগে প্রতিদিনের মত বলে গেছেন, রাত জাগিস না, তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়িসরাত জাগলে শরীর খারাপ করবে

প্রতিদিনই শুনে আহাদকিন্তু ব্লগিং নেশার কারণে ঘুমটাকে বড় তুচ্ছ মনে হয় তাই মা র কথা এই একটা দিকে শুনে নাঅন্য ক্ষেত্রে মা-র বলা সব কথা রাখার চেষ্টা করে

দ্রুত কিবোর্ডের আঙুল চেপে যাচ্ছেহাতে সময় কম কলমের সাথে অদ্ভূত পার্থক্য এই কি বোর্ডেরঅথচ দুইটারই কাজ একইমনের ভাব কিংবা ইচ্ছাকৃত কথাগুলো ফুটিয়ে তোলাকলম কালির উপর নির্ভর শীলআর কি বোর্ড নির্ভরশীল বিদ্যুতের উপরতবে একদিকে মনে হয় কলম অনেক বেশি স্বাধীন কিবোর্ডের চেয়ে
এত কিছু চিন্তার কাজ নেইনতুন কয়েকজনের কবিতা পড়ে মন্তব্য করে আহাদচলছে মন্তব্য

এইসময় বেজে উঠে ভাইব্রেশনঘড়ির দিকে তাকায়এক মিনিট আগেই ফোন দিয়েছে

রিসিভ করে

ঐ পাশ থেকে ফাবিহা জিঙ্গেস করে, কি করছ?
প্রশ্ন করেই সাথে সাথে বলে, সরি

আহাদ একটু অবাক হয়কি করছ এটা জিঙ্গেস করে আবার সরি বলার অর্থটা কি? কি আজব! কিছু জানতে চাইলে সরি বলতে হবে কেন?
তাই জিঙ্গেস করে বসে,সরি কিজন্য?

:
তুমি কি করছো সেটাতো আমি জানি ঐই ব্লগ না ফ্লগ ঐটাতেই আছোতারপরও ভুলে জিঙ্গেস করে ফেললাম, এজন্যই সরি
হেসে উঠে আহাদব্লগ না ফ্লগ এই কথাটা বলার ভঙ্গি দেখে

:
খবরদার হাসবে না

:
কেন কেন?

:
তুমি হাসলে, তোমার হাসি শুনলে আমার রাগ কমে যায়আমি রাগ কমাতে চাচ্ছি না

:
ঠিক আছে হাসি বন্ধ করলামগম্ভীর ভাব ধরলামতবে রাগ করছো কেন?

:
রাগ করছি কেন মানে? রাগ কেন করব না, এটা জিঙ্গেস না করে জিঙ্গেস করে রাগ করছি কেন? বাসায় এসেই ফোন দেওয়ার কথা ছিল সেটা দিলে নাএতক্ষণ সময় গেল একবারও জানালে নাআমি ভাবছিলাম আর ফোন দেব নাব্লগ ফ্লগ নিয়ে পড়ে থাকে সেভাবেই পড়ে থাকে

আহাদের মনে পড়ে, হ্যা বাসায় পৌঁছেই ফোন দেওয়ার কথা ছিলকিন্তু ব্লগের বসে ভুলে গেছে তা

:
সরি সরি সরি

সরি বললে হবে নাহাসি দাওতখন থেকে গম্ভীর হয়ে আছো
আহাদ একটু ভাব ধরে, তুমি না হাসতে মানা করছো

:
এখন হাসতে বলছি, হাসো

:
আরে এখন হাসলে তো তা অভিনয় হবেমন থেকে হবে নাকৃত্রিম হাসি হবেকৃত্রিম হাসবো

:
না না, কৃত্রিম হাসির দরকার নেইযখন মন থেকে হাসি আসবে তখন হাসলেই চলবেআচ্ছা আমি এখন রাখছি
:
ঠিক আছে, ভালো থেকো

ফাবিহার বজ্র কন্ঠ এবার শুনা যায়
:
ঠিক আছে মানে? আমি রেখে দিবো আর তুমি আবার ব্লগে ঝাপিয়ে পড়বা তাই না? না সেটা হচ্ছে নাআজ সারা রাত কথা বলবদেখি তুমি ব্লগে বসো কেমনে?



##০৩##
কথাটা শুনে আহাদ একটু ভয় পায়সারা রাত কথা বলতে হবে মানে? তাহলে তো ব্লগে বসাই যাবে নাঅথচ অনেক মন্তব্যের উত্তর দেওয়া বাকীযাদের উত্তর দেওয়া হয় নি তারা কি ভাববেতারা তো ফাবিহার কথা জানে নামনে করবে ইচ্ছাকৃত উত্তর দেওয়া হয় নি

চুপ থাকে আহাদ

ঐ পাশ থেকে ফাবিহার গলা শুনা যায়, চুপ কেন!! কি ভয় পেয়ে গেছো তাই না? আমি যদি এখন তোমার সামনে থাকতাম তবে ল্যাপটপটা আছাড় মেরে ভাঙতাম

আহাদ কথাটা শুনে ল্যাপটপের দিকে তাকায়ল্যাপটপ ঠিক ঠাক আছে তো

ফাবিহা যে জেদী মেয়ে সে যা বলে তা করে ছাড়েএখন সাথে থাকলে নিশ্চিত ল্যাপটপটা আছাড় মেরে ভাঙতজিনিষ ভাঙার রেকর্ড ওর অনেক আছেনিজের মোবাইলই তিনটা ভেঙেছে এ পর্যন্তদুইটা ভাঙার জন্য আহাদই দায়ী

এই মেয়ের সাথে বিয়ে হলে তো ব্লগিং করতে হবে আড়ালেবুদ্ধি পেয়ে যায় আহাদ ল্যাপটপটা লুকিয়ে বাথরুমে নিয়ে যাবেদরজা বন্ধ করবেবেসিনের উপর রাখবে ল্যাপটপটাতারপর বসে বসে ব্লগিং করবেএরকম বুদ্ধি আবিষ্কার করে খুব উচ্ছাসিত আহাদনিজেকে অনেক বুদ্ধিমান মনে হয় তার

:
কি হলো চুপ কেন? আমি তো সাথে নাইসো তোমার ল্যাপটপ অক্ষত আছেতারপরও চুপ কেন?

আহাদ জোর করে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে

আমতা আমতা করে বলে, ঠিক আছে, ঠিক আছে?
ফাবিহা বিরক্ত হয়

:
আশ্চর্য ব্যাপারতোকি ঠিক আছেএরকম আমতা আমতা করছো কেন?

কই আমতা আমতা করছি, রাত জেগে কথা বলবসমস্যা নেই
আহাদের আমতা আমতা আরো বাড়ে

:
রাত জেগে কথা বলবা মানে?

:
তুমি না বললা রাত জেগে কথা বলবে?

:
আমার আর খেয়ে দেয়ে কাজ নেই, তোমার সাথে রাত জেগে কথা বলবঘুম আমার অনেক প্রিয়ঘুম যাবোতোমার কাছে যেমন ব্লগ প্রিয় আমার কাছে তেমন ঘুম প্রিয়

আশ্বস্ত হয় আহাদযাক ব্লগিং করা যাবেখুশিতে ওর লাফাতে ইচ্ছা করেকিন্তু লাফ দেওয়া যাবে না, ঐ পাশ থেকে টের পেলে খবর আছেফাবিহা শেষে অন্য কাজ দিয়ে রাখবে

:
আচ্ছা ফাবিহা একটা বলব

:
হ্যা বলো, তাড়াতাড়ি বলোঘুম আসছেফোন রাখবো

:
তুমি অনেক অনেক ভাল

:
আমি ভাল!! তাই নাকি? জানতাম না তোপাম্প দেওয়া তো ভালোই শিখছো

আহাদ হেসে ফেলে

হাসি শুনে ফাবিহার অনেক ভাল লাগেআর কথা বলা যাবে নাহাসি শুনে মনের মধ্যে যে সুন্দর একটা আবহ তৈরি হয়েছে সেটা নিয়েই ঘুমিয়ে পড়তে হবেঅনেক ভাল ঘুম হবে
:
আচ্ছা রাখছিবাই

আহাদকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন রেখে দেয় ফাবিহা