সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

প্রথম আলো ব্লগারদের বনভোজন


যাত্রা পথে :১

মোবাইলের এলার্মেই ঘুম ভাঙলোএরিমধ্যে মুরুব্বী জামান ভাইয়ের কল আসল প্রথমেই গুড মর্নিং জানালেনউঠছি নাকি জিজ্ঞাসা করলেনবললাম, জ্বী উঠে গেছিতখন বললেন , জিয়া না উঠলে উঠায় দেন, ও সহজে উঠতে চায় নাআমি বললাম, ঠিক আছে উঠায় দিচ্ছিজিয়া ভাই অন্য রুমে ঘুমাচ্ছেনওনার রুমের দরজার সামনে গিয়ে কিছুক্ষণ ডাকলামনা কাজ হলো নাকিছুক্ষণ পর দেখলাম নিজে নিজে উঠলেনএরই মধ্যে জিয়া ভাইয়ের ব্যক্তিগত গাড়ির ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে চলে আসল

জিয়া ভাই তিন তলায় থাকেনসুন্দর ছিম ছাম বাসাচারদিকে রুচিশীলতার চমকপ্রদ প্রকাশপ্রতিটি রুমে শৌখিনতার পরিচয় স্পষ্ট

ঢাকার আকাশে তখনো শীতগাড়ীর ভিতর দেখি দুজন লোকবয়স্ক টাইপেরচিন্তা করছিলাম এরাও ব্লগার নাকি? জিয়া ভাই বললেন, ঢাকা থেকে বাবুর্চি নিয়ে যাচ্ছিঐখানে ভাল না পাওয়া গেলে....মনে মনে লজ্জা পেলাম, বাবুর্চি ব্যাটাদের আমি ব্লগার মনে করে বসে আছিকি গাধা আমি !!!!

বলে রাখা ভাল আমার বেশ ভূষায় ঢিলামীর এবং আচরণে বোকামীর চূড়ান্ত প্রকাশ থাকেএজন্য ভয় পাচ্ছিলাম কে কিভাবে নেয়সাথে সাথে একটা উত্তেজনা যাদের সাথে এত দিন ব্লগে কথা বলতাম তাদের সামনা সামনি দেখবকি মজা কি মজা

মাইক্রোবাস তিনটা চলে এসেছেছায়াবাজী ভাইয়ের সাথে পরিচিত হলামবেশ কিছুক্ষণ কথা হলোকেউ কাউকে আগে দেখি নাইতাই চিনতে সমস্যাসবাই এসে প্রথমে জিয়া ভাইকে খুঁজছেকিন্তু জিয়া ভাইকে চিনবে কি করেএসময় একটা ভাল বুদ্ধি পাওয়া গেলজিয়া ভাইয়ের মোবাইলটা অস্বাভাবিক বড়জিয়া ভাইকে কেউ খুঁজতে আসলেই বলা হলো যার হাতে সবচেয়ে বড় মোবাইল তিনিই আমাদের জিয়া ভাই খুব কাজ দিল এই হিন্টসজিয়া ভাইকে খুঁজে নিতে আর কোন সমস্যা হলো নানীল সাধু ভাই এসে সবার সাথে কোলাকুলি করলেনশুরুর দিকটা সবচেয়ে মাতায় রেখেছেন সারোয়ার ভাইঅনেক ফানি ম্যান উনি
এসময় দেখি দূরে লেখক আনিসুল হক দাঁড়িয়ে কি যেন ভাবছেনতার সাথে কথা বলতে আমরা গেলামকিছু কথা হলোউনি বললেন উনি ব্লগে ঢুকার নিয়ম ঠিক জানেন না, এজন্য ব্লগে ঢুকা হয় নাওনাকে মাইক্রো বাসের সামনে নিয়ে এসে সবাই মিলে ছবি তুললাম

কারিম ভাই ফল পানি ভাগ করে তিন গাড়ীতে পাঠাচ্ছেনআমার হাতে দিলেন, আমি ও ধ্রুবো ভাই বিভিন্ন গাড়ীতে উঠায় দিলাম

আমাদের মাইক্রোটাতে সামনের সিটে জিয়া ভাই বসছিলেনতবে গাড়ী ছাড়ার আগে তিনি নেমে গিয়ে নীল সাধু ভাইদের গাড়ীতে গিয়ে উঠলেনজিয়া ভাইয়ের জায়গায় বসলেন ব্লগার মহসিন ভাই

মহসিন ভাই, নোমান ভাই, কবিতা ভাই, কারিম ভাই, কবির ভাই, জেড সৈকত ভাই, গল্পকার শামীম ভাই, ই-মন ভাই ও বই পাগল নিয়ে হলুদ রঙের কাছাকাছি গাড়িটির যাত্রা শুরু করলোগাড়ীর যাত্রার সাথে সাথে শুরু হলো কথার যাত্রাশিক্ষা, অর্থনীতি, রাজনীতি, খেলাধূলা, নারী সব বিষয়ে তুমুল আলোচনা

কারিম ভাই মজার তথ্য শুনালেনএক ব্লগারের বিয়েতে গিয়েছেন তিনিএর আগে ঐ ব্লগারের সাথে অনেক মেয়েকে ঘুরতে দেখেছেননতুন নতুনবিয়েতে গিয়ে তিনি অবাকবউ এক্কেবারে নতুনআগে কখনো দেখেন নি এই মেয়েকেমনে করছিলেন আগের মেয়েগুলোর কোন একটার সাথে হয়ত বিয়ে হচ্ছেশুনে সবাই হাসতে হাসতে শেষ

যমুনা ভবন ভাঙা নিয়ে তর্ক হলোকেউ বলল ঠিক আছেআবার কেউ বলল ভীষণ অপচয় এটাকারিম ভাই এরই মধ্যে হিসাবে বসে গেছেন প্রতি বর্গফুট হিসাব করলে কত টাকা লস হচ্ছে এইটাতে তা নিয়েবহুক্ষণ চেষ্টা করেও হিসাব বের হলো না

কথার ফাঁড়িতে পড়ে এরই মধ্যে একজন ব্লগার জানালেন তার মামা জামায়াতের নেতা এজন্য মামার সাথে ঝামেলা হয়তা শুনে তাকে পচানোর চেষ্টা শুরু হলো...................

শামিম ভাই জানালেন তিনি ওপেন ইউনিভার্সিটি থেকে এম বিএ করতে যাচ্ছেনতাহা শুনে কারিম ভাই হট হয়ে গেলেনওপেন ইউনিভার্সিটি থেকে এম বি এ করার কোন মানে হয়এটা যে কত নিম্ন মানের তা বুঝানোর জন্য অনেক যুক্তি উপস্থাপন করলেন কারিম ভাইপ্রতি উত্তরে ইহা যে কত উচু মানের তাহা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করলেন শামীম ভাইসবচেয়ে বড় যুক্তি দিলেন ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তিনি টিকেছেনএক ঘন্টায় ২০০ টা বৃত্ত ভরাট করেছেনশুদ্ধ হোক ভুল হোক এতগুলো বৃত্ত ভরাট করার দক্ষতা দেখাতে পারায় তাকে টিকানো হয়েছে বলে তিনি দাবি করলেন

রাজনীতি বিষয়ে তর্কটা বেশী চললগাড়ীতে পুরা যাত্রা পথেই সব্বোর্চ গতিতে এসি চলছেতবে এসির এই ঠান্ডাও পারে নি তর্কের উত্তাপ সামান্যতম কমাতে

ই-মন ভাই চুপচাপ ছিলেন আলোচনায়তিনি মোবাইলে কথা বলছিলেনহঠাৎ বললেন, তাকে চলে যেতে হচ্ছেআমরা হতবাককিছুই না বলে বললেন পরে জানাবেননেমে গেলেন তিনিমন খারাপ হলো সবারপরে জানা গেল তাহার শ্বাশুড়ী অসুস্থ বিধায় তাহাকে ফিরে যেতে হয়েছেকারিম ভাইয়ের আফসোছ কি দরকার ছিল বিয়েটা করার!!!!!!

কতগুলো মানুষ গোসল করছিলএসময় আমি নোমান ভাইকে বললাম, নোমান ভাই ছবি নেন তা দেখে কারিম ভাই বললেন, পোলাপাইন নষ্ট হইয়া গেছেগোসলের ছবি তুলতে কয় নোমান ভাই আমার সমর্থনে এগিয়ে আসেনবলেন এটা গোসলের দৃশ্য না, এটা একটা শিল্পমাঝে মাঝে ক্যামেরা বিষয়ে টিপস দিয়ে যাচ্ছিলেন নোমান ভাইআমার কবিতা ভাই সব আলোচনায় নিজের অবস্থান তুলে ধরছিলেন

এসময় আমি ভয়াবহ এক তথ্য প্রদান করিভোটার লিস্টে কাজ করতে গিয়ে অনেক দুর্গম এলাকা বোডিং পাড়ায় গিয়েছিলামসেখানে ওরা কাপড় ছাড়া থাকে১৬/১৭ বছরের ................. ................তবে ঐখানে ইহায় স্বাভাবিক লাগে ইহা শুনে দেখলাম সবচেয়ে বেশি উচ্ছাসিত আমাদের শামীম ভাইজিজ্ঞাসা করে বসলেন, সামনের বার ভোটার লিস্ট কখন হবে কনসামনের বার আমিও যামু

আমি বললাম ঐখানে যেতে ৬ ঘন্টা উচু উচু পাহাড় পার হতে হয়েছেনা তাতে তিনি সামান্যতম নিরুৎসাহিত হন নাই৬ ঘন্টা ক্যান দরকার হলে দুই দিন পাহাড় পার হমুতারপরও যামু।......


কোন ব্লগার কেমন এ বিষয়ে কথা উঠলএ বিষয়ে সৈকত নিজের অভিজ্ঞতা পেশ করলেন কোন ব্লগারকে কার কেমন লাগে তা সবাই জানালেনঅনেক গোপন তথ্য সমৃদ্ধ হলো জীবনকারিম ভাই, মহসিন ভাই, নোমান ভাই, শামীম ভাই অনেক আগে থেকে ব্লগিং করেতাদের কিছু কথায় আশ্চর্য হলে বললেন এখনো তো নতুনসময় হোক বুঝতে পারবেন

এক হোটেলের সামনে গাড়ী থামানো হলোসকালের নাস্তার আয়োজনআমরা অন্য গাড়ীর ব্লগারদের জানালাম, আমাদের গাড়ীতে হুরুস্থুল পিটাপিটি চলছেএকজনকে গাড়ী থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছেকেউ কেউ বিশ্বাস করার ভান করলেনবিশেষ করে রাফেল ভাই আর ধ্রুবো ভাইতাহাদের অভিনয় এত সুন্দর ছিল যে শামীম ভাই, আমি, কারিম ভাই বিভ্রান্ত হয়ে বাড়ায় বুড়ায় আরো নানা কথা যোগ করলামদেখলাম আমরা যা বলি তাই বিশ্বাস করে বসেকি মুসিবত!!!!!

এর মধ্যে সারোয়ার ভাই চাঁদাবাজের ভূমিকায় নামলেনকারিম ভাই একটি প্রস্তাব উত্থাপন করলেনমেয়েদের জন্য হাফ করা হউক

পরে টাকাগুলো জমা রাখা হলো শামীম ভাইয়ের কাছেগাড়ীতে উঠার পর শামীম ভাই নতুন পরিকল্পনাটাকা গুলো নিয়ে কক্সবাজার চলে গেলে কেমন হয়?

+++++++++++++++
যাত্রা পথে : ০২

পোস্টে শামীম ভাই মন্তব্য করেছিলেন, ঐ গাড়িতে একটা বান্দর ছিল, শামীম নামেরপ্রমাণ লেখনিতেইসব জায়গায় শামিমপ্রথমেই দুঃখ প্রকাশ করছি শামীম ভাইয়ের কাছে

ব্লগার শামীম ভাই প্রাথমিক পরিকল্পনার কথা ফাঁস করে দিলেনটোকেনের টাকা গুলো নিয়ে তিনি কক্সবাজার আনন্দ করতে যাবেনদেখি গাড়ির সবাই বিষয়টি খুব সিরিয়াস ভাবে নিয়েছেঅন্তত সবার কথায় তা-ই মনে হলোকেউ বলছে আপনার নিখোঁজ সংবাদ নিয়ে ব্লগে পোস্ট চলে আসবেএকে ধরিয়ে দিন এই টাইপের!!! কেউ বলল, ব্লগে আর কখনো ঢুকতে পারবেন নাকিংবা এরকম পোস্টও আসতে পারে, এই প্রতারক ব্লগারকে চিনে রাখুনশামীম ভাই সহ ব্লগারদের কাছ থেকে নির্মম পরিণতির কথা শুনে একটু ভয় পেলেনচাঁদার টাকা নিয়ে কিছু করার কথা আর বললেন না

গাড়ি জোর গতিতে এগোচ্ছেতিনটি গাড়ির সামনেই ঝুলছে ব্যানারএদিকে আমি ব্যাপক উৎসাহে অপেক্ষা করছি যমুনা সেতু দেখব বলেএই সেতু সম্পর্কে অনেক শুনেছিএই সেতুর ফাটল সম্পর্কে জেনে মর্মাহত হয়েছিসে সেতু দেখতে পারবো বলে আমি অনেকটা উত্তেজিত মনে মনেযদিও প্রকাশ করছি নাকিন্তু বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এই সেতুর উপর উঠার পর আমি হতাশ হয়ে গেলামমুখ দিয়ে শুধু আফছোস আর আফছোসআফছোস একটা ভয়ানক সংক্রামক ব্যাধিগাড়ির সহ ব্লগারদের চেহারায়াও দেখি আফছোসযদিও একজন ব্লগার বলতে চেষ্টা করলেন, এই নদী যদি আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকত তবে আমরাও পানি আটকায় দিতামতবে তার কথাটা যুক্তি হিসাবে কোন মতেই নিতে পারলাম নাদুর্ভাগা যমুনা নিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছি এই কি দেখলাম? (দুর্ভাগা যমুনা) সত্যিই অনেক অনেক মন খারাপ হলো নদীর অবস্থা দেখেনা দেখায় ভাল ছিলএখনও ঐ মুমূর্ষ নদীটির দুঃস্বপ্ন দেখি

যমুনা ব্রিজ পার হতেই গাড়ি থামানোর নির্দেশএক পুলিশ অফিসার উকি দিলেন জানালা খোলা হলজিজ্ঞেস করলেন কই যাচ্ছেনআমার কবিতা ভাই বললেন, পাহাড়পুরপ্রথম আলো ব্লগের পক্ষ থেকেসামনে ব্যানার আছে দেখেনপুলিশ প্রথম আলো নামটা শোনার পর চেহারায় হাসি নিয়ে আসলেনবললেন ঠিক আছেযান আমার কবিতা ভাই ধন্যবাদ দিলেন পুলিশকেতবে আমি ধন্যবাদ দিলাম প্রথম আলোকে নাম শুনেই ছেড়ে দিলেন আমাদেরকি ক্ষমতা এই নামটার মাঝে

নিষাদ ভাই একটু চুপচাপ থাকেনসবাই কথা বলছেন তিনি একাধারে চুপ থাকবেন এটা কি হয়? এবার তিনি শুরু করলেন কথা বলাউনি বক্তাআর আমরা শ্রোতাসিলেটী দুটো খানার নাম বলে তিনি উত্তেজিত করার চেষ্টা করলেন সিলেটী ব্লগারদের আমাদের গাড়িতে সিলেটী ব্লগার ছিলেন, জেড এইচ সৈকত ভাই আর কাবির য়াহমদ ভাই ভাতের প্লেটে তরকারির সাথে দই নিয়ে খাওয়া, সাত খড়ি এই ধরণের খানা নিয়ে বললেনউদ্দেশ্য পরিষ্কারসৈকত ভাই আর কাবির ভাইকে রাগানোসৈকত ভাই আর কাবির ভাইয়ের সে খানা দুইটি নিয়ে ব্যাপক বিশ্লেষণের চেষ্টা দেখে মনে হলো নিষাদ ভাই সফলওনাদের যথেষ্ট উত্তেজিত করে ফেলেছেনকাবির ভাইকে বার বার নিষাদ ভাইকে জিজ্ঞাসা করতে লাগলেন, ভাই আপনার বাড়ি কই বলেন? কবিতা ভাই বললেন, বরিশাল মনে হয়নিষাদ ভাইও মাথা নাড়েনকাবির ভাই বলেন বরিশালের হলে এসব কথা জানতেন নানিশ্চয় সিলেটের আশেপাশের কোন জায়গারজানা গেল সিলেটের আশে পাশে জেলা গুলো সাথে মোটামুটি খানা গত ঐতিহ্য নিয়ে ঠাট্টা মশকরা চলেই মাঝে কিছু ঝামেলা আছে
সৈকত ভাই একটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিলেনসিলেটের মানুষেরা অনেক অনেক অনেক বেশি অতিথিপরায়নআর সেখানে হয়ত বেশি বড়লোক, নয়ত বেশী গরীব লোক আছে মধ্যবিত্ত নেই সিলেটে!!!!!

মেইন রাস্তা থেকে বিভিন্ন রাস্তা ঢুকে যাচ্ছিলোভিতরের রাস্তাগুলো কোথায় কোথায় গেছে সেগুলো বলে নিষাদ ভাই আমাদের কৌতুহল মিটাচ্ছিলেনএসব এলাকা সম্পর্কে দেখলাম নিষাদ ভাইয়ের ভালই জানাশোনা আছে

গাড়িতে কথার বিষয়ের শেষ নেইএই বিষয়ে কথার শেষ না হতেই অন্য বিষয় আরম্ভ হয়আমার কবিতা ওনার দেখা একটা বিষয়ের কথা বললেন, কোন মেয়ের নামের আইডি নতুন এসেছি এ জাতীয় পোস্ট দিলে সেখানে নাকি সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়েএই জিনিষটা দেখতে কবিতা ভাইয়ের ভাল লাগে না তা স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিলেনআমরা যারা নতুন দের স্বাগতম জানাই তারা একটু বিব্রত বোধ করলাম কবিতা ভাইয়ের কথায়

গাড়ি চলছে তো চলছেকিন্তু আমাদের গন্তব্য দেখা যাচ্ছে নাকাবির ভাই একটু বিরক্তএত বেশি গাড়ি চড়তে হচ্ছে বলেকিছুক্ষণ পর দেখলাম আমাদের সামনের গাড়িটা একটাপ্রাইভেটকারের সামনে দাঁড়ালোদেখলাম ঐ গাড়ি থেকে বেশ কয়েকজন নেমে পড়েছেনশুভেচ্ছা বিনিময় করছেবুঝতে দেরি হলো না, ইনিই আমাদের মুরুব্বী ওরফে জামান ভাইআমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে আগে চলে এসেছেন
আমাদের গাড়ি বহরের সাথে আরেকটি গাড়ি যুক্ত হলোমোট চারটি গাড়িজামান ভাইয়ের গাড়ি সহ

কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা পৌছলাম আমাদের প্রথম গন্তব্য মহাস্থানগড়ঐতিহাসিক এক স্থানেনামার পরই আমাদের জন্য এত উষ্ণ অভ্যর্থনা থাকবে কেউ হয়ত কল্পনা করে নিমুরুব্বীনি নিজ হাতে সবাইকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানালেনমুরুব্বীনি কে নিয়ে আমাদের সানোয়ার ভাই আর সৈকত ভাই এরি মধ্যে জান পরাণ আবেগের পোস্ট দিয়ে ফেলছেনআমিও অস্বীকার করব না তাআসলে অনেক সুন্দর মহিলা মুরুব্বীনি সৈকত ভাই না হয় বয়সের দোষে পোস্ট দিয়ে ফেলছেন, কিন্তু আমাদের সারোয়ার ভাই কেন কবিতা লিখতে যাবেন এই মানবীকে নিয়ে, সানোয়ার ভাই তো অলরেডি বিবাহিতএমন কি ওনার বউ ও এই পিকনিকের সম্মানিত সদস্যদুই মেয়েকে সঙ্গি করে

অভ্যর্থনা পর্বে জামান ভাই কে কোনটা তা বলার চেষ্টা করছেনবেশির ভাগই মিলে যাচ্ছেআমাকে দেখলামে এক সেকেন্ডে চিনতে পারলেনধন্যবাদ জামান ভাই

ভিআইপি গেস্ট হাউসে নিয়ে যাওয়া হলো সবাইকেসেখানে সবাই বসলেনআড্ডা শুরুর প্রস্তুতিএদিকে জুমাবারজুমার নামাজআমার কবিতা ভাই, সারোয়ার ভাই, হান্নান ভাই, ছায়াবাজি ভাই আমরা ছুটলাম নামাজের জন্য মসজিদের খোঁজে কিন্তু দেখি আমরা যেতে যেতে দেখি নামাজ শেষহুজুর ব্যস্ত মিলাদ মাহফিল পড়াতেআনা হয়েছে বিশাল ডেকছিতে খিচুরিসেগুলোর ঘ্রাণ উঠতেছেআমরা নিজেরা জামাত করার উদ্যেগ নিলামকিন্তু ইমাম হবে কে? সারোয়ার ভাই কিছুক্ষণ জোরাজুরি করলেন আমাকে ইমামতি করার জন্যআমি সে প্রস্তাব পেয়ে হতবাক জোর করে সারোয়ার ভাইকে ইমামতিতে দাড় করায় দিলামসুন্দর ভাবে নামাজ পড়া শেষ হলো

এদিকে আমরা ফিরে দেখি ফটোশেশন শেষ পর্যায়েপ্রথম আলোর বগুড়ার রিপোর্টার এসেছেসবাই একসাথে ছবি তুলছেদূরে এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছে সারোয়ার ভাইয়ের বউ ও মেয়েরাতা দেখে সারোয়ার ভাইয়ের বাঁধ ভাঙা নীরব আনন্দতার বউ তাকে ছাড়া ছবি তুলছে না, ব্যাপারটাই যে তিনি বিমোহিত তা প্রকাশ করতে ভুললেন না সবাই মিলে যোগ দিলাম ফটোসেশন পর্বে

দুপুর বেলায় গল্প হচ্ছেমুরুব্বীনির সাথেবললাম জিয়া ভাই তো, ঢাকা থেকে বাবুর্চি এনেছেনতা শুনে মুরুব্বীনি বললেন জিয়া ভাই অনেক গুছানোঅনেক বড় আয়োজন করবেননিজের স্বামীর ধৈয্য কম জানালেনআমি বললাম, কেন এত্ত বড় আয়োজন করেছেন, এত দূরে বসে এত বড় এরেঞ্জমেন্ট এটা তো অনেক বিশাল কর্মযজ্ঞ অনেক ধৈর্য্য ছাড়া সম্ভব নাতখন মুরুব্বীনি বললেন, এই একটা ব্যাপারে ওর এত ধৈর্য্য দেখলামমুরুব্বীনি স্বীকার করলেন এই ব্যাপারে নিজ স্বামীর ( মুরুব্বী জামান ভাই) ধৈর্য্য দেখে তিনি বিস্মিত। ( অফ দ্যা রেকর্ডের কথাগুলো প্রকাশ করে দিলাম)

আমার স্মৃতি শক্তি আমার সাথে প্রায়ই সময় কানামাছি খেলতে পছন্দ করেকোন ভুল হলে শুধরায় দিবেন আশা করি চড়ুই ভাতির ব্লগাররা

চড়ুইভাতি নিয়ে পূর্বের পোস্টগুলো-----

++++++++++++++++

 

মহাস্থানগড় দর্শন (অনাবিল খুশির ফোয়ারা)

যাত্রাপথে ০২ পোস্টে সৈকত ভাই মন্তব্য করলেন, `যত দোষ নন্দ ঘোষআমি কি পোস্ট দিলাম তা খুটিয়ে খুটিয়ে..অথচ উনি কত ডেটিং.........ভাল লাগল লেখাটালেখাটা আগাগোড়া আমার বিষয়ে নানা বর্ণনা থাকায় স্পেশাল ধন্যবাদঅনেক ধন্যবাদ।"
সৈকত ভাই বিরক্ত হলে দুঃখিত
নতুন পর্বে স্বাগতম


ফটোসেশন শেষসবাই আবার ঢুকে পড়লেন ভি আইপি রেস্ট হাউসেএবার খাওয়ার পালা ঢুকার মুখেই কোয়ালিটি বিরিয়ানী হাউসের পক্ষ থেকে চাকচিক্য ব্যানারের মাধ্যমে আমাদের স্বাগতম জানানো হলোভিআইপি রেস্ট হাউসটা দেখার মতবাহিরে ফুলের সমারোহরঙ বেরঙের ফুলগুলো সারি করে ফুটে আছেকোথাও বা আছে গোল হয়ে ফুল গুলির দিকে দেখলেই চোখ জড়িয়ে যায়অনেকে ফুল গুলোকে সঙ্গী করে ছবি তুলছেন

খাওয়া শুরু হলোকোয়ালিটি বিরায়ানী হাউসের বিরায়ানীর প্যাকেটঝাল বিরিয়ানীজামান ভাই জানালেন বগুড়ার সবচেয়ে নাম করা বিরায়ানী এটাখাওয়ার সময় একটু আদুরে নির্যাতনই চললএত বুঝি খাওয়া যায়একটু ঝাল তবে সুন্দর ঘ্রাণের বিরায়ানী খেতে ভালই লাগছিলসাথে বাড়তি প্যাকেটে মুরগীর গোস্ত, ডিমপ্যাকেটের বিরায়ানীর আধিক্য দেখে খেতে কষ্ট হলোএত গুলো বুঝি খাওয়া সম্ভব? কিন্তু রেখে দিলে কে কি মনে করে এই ভেবে কষ্ট করে হলেও পেটকে বিশাল একটা ড্রাম বানিয়ে খেয়ে ফেললামপরে দেখি ডিমটাই খানা হয় নিসেটা খাওয়ার আর শক্তি পেলাম নাসেটা আড়ালেই রেখে দিলাম

পেট ফুলে ফুটবল হয়ে আছে তাতে কি? বগুড়ার মিষ্টি দই জিবছাড়া কোন ভাবেই করা যাবে নাআমি আর কাবির ভাই একটা পাত্র থেকে দুইজনে মজা করে খাচ্ছিলাম দই বগুড়ার দইয়ের স্বাদ সত্যিই অসাধারণএত্ত মজার যে খেলে আরো খেতে ইচ্ছা করে মজা করেই খাচ্ছিলামএসময় কারিম ভাইয়ের সাহসী পদার্পণআমার হাত থেকে দইয়ের পাত্রটি নিয়ে ফেললেনআমাকে বললেন, আপনি তো অনেক খেয়েছেনএবার আমি খাইকারিম ভাইয়ের খানা শুরু হওয়ার আগেই ক্লিক ক্লিক শব্দক্যামেরায় উঠছে সব ছবিকারিম ভাই দেখি হেভী খুশীনিজেকে খাদক হিসাবে দেখা যাবে বলে কারিম ভাইয়ের দই খাওয়ার আওয়াজের চেয়ে ক্যামেরার আওয়াজই বেশি শুনা যেতে লাগল

মধ্যখানে জামান ভাই বার বার বলতে লাগলেন , কারো কিছু লাগলে বলিয়েনঅন্য প্যাকেট খুলে সেখান থেকে দেওয়া হবেতা শুনে আমি মনে মনে হাসিএতগুলো খাওয়ার পর আরো লাগবে বুঝি!!!

ভাত বেশি হয়ে গেছে তা নিয়ে আলোচনা বসল এবারমুরুব্বীনি বললেন, আমি ভাত আরো কম দিতে বলেছিলামকিন্তু শুনে নাইএর মধ্যে এক ব্লগার বলে উঠলেন, কম দিলে তখন বিভিন্ন জন বিভিন্ন কথা বলতবলত কম খাওয়ানোর জন্য কম দেওয়া হয়েছেবেশি দিয়েছে ভালই হয়েছেতা শুনে মুরুব্বীনি সুন্দর একটা হাসি দিলেন

এদিকে দেখা গেল সারোয়ার ভাই পেট পুরে খাওয়ার পরও বাড়তি একটা প্যাকেট নিয়ে ঘুরছেনমনে মনে ইচ্ছা কোন ফটোগ্রাফার তাহার এই অবস্থা ক্যাচ করে কিনা সারোয়ার ভাইকে বাড়তি প্যাকেট নেওয়ার কারণ সম্পর্কে ধরার আগেই সারোয়ার ভাই হড় হড় করে বলতে লাগলেন, আমার মেয়ে খায়নিওর জন্য এই প্যাকেটচোরের মনে পুলিশ পুলিশপ্রতিটি ক্ষেত্রে সারোয়ার ভাই অনেক মজা করেছেনসবাই অনেক মজা পেয়েছেন

খাওয়ার পর্ব শেষে এবার সবাই ছুটল মহাস্থানগড় দেখার উদ্দেশ্যেলাখ লাখ ইটের গাথুনিতে মহাস্থানগড়কিছু সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে হয়সবাই উঠলউঠার দৃশ্যগুলো ক্যামেরা বন্দী হতে লাগলজামান ভাইকে ঘিরে ধরলেন সবাইজামান ভাই বলছেন পাহাড়পুরের ইতিহাসআশ্চর্য রকমের সুন্দর ভরাট গলায় বলছেনওনার কথার জাদুতে সবাই মুগ্ধজামান ভাই জানালেন, এরকম ২০/২১ কিলোমিটার দেওয়াল আছেবিভিন্ন প্রয়োজনে মাটি ভরাট করায় এটা ক্রমে নিচু হয়ে যাচ্ছেপাশে একটা নদী ছিলসে নদীর যাতায়াতের সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে এখানে এটা করা হয়েছেপাশে নদীর কথা বললেও পাশের অবস্থা দেখে ভাবতে কষ্ট হয় এখানে নদী আছেসত্যিই কি নদী ছিলহারিয়ে যাওয়া নদীর খাতায় নাম লিখিয়েছে এই অভিমানী নদীটিওবাংলাদেশের সব নদীর কি শেষ পরিণতি ঐরকমইপ্রভু রক্ষা কররক্ষা কর

জামান ভাই জানালেন, বর্তমানে বগুড়ার সবচেয়ে ভয়ঙ্কর খারাপ এলাকা এইটা আতঙ্কের এলাকা এটাএখানে রাজা পরশুরাম থাকতেনরাজা পরশুরাম ইতিহাসে স্মরণীয় ছিলেন একটা ঘৃণিত কারণেনিজের মাকে নিজে বধ করেছেন তিনিপৃথিবীতে একমাত্র রাজা পরশুরামই এই ঘৃণিত কাজটি করেছেনরাজা পরশুরাম ছিলেন অনেকটা অপ্রতিরোধ্যতার সাথে অন্য রাজারা আক্রমণ করে পারত নাএটার একটা কারণ ছিল

কারণ হিসাবে জামান ভাই বললেন, এটার ভিতরে একটা কুয়া ছিলকোন সৈনিক নিহত হলে তাকে সেখানে ফেলা হতোকুয়ায় ফেললেই মৃত সৈনিকটি জীবিত হয়ে যেতএজন্যই রাজা পরশুরামের সাথে কেউ পারত নারাজা পরশুরাম যখন একেবারে অপ্রতিরোধ্য হয়ে যাচ্ছিলেন তখন সুদূর আরব থেকে এই এলাকায় এক দরবেশ এলেন, মাহিসওয়ার (তিনি মাছের পিঠে করে এসেছিলেন বলে তার নাম হলো মাহিসওয়ার।) আল্লাহ তাকে বললেন, (দর্শন পেলেন ) তিনি যদি যে কোনো মাংসের টুকরা ওই কুপে ফেলেন তবে ওই কুপের শক্তি আর থাকবে না, এ জন্য হয়তো কেনো কাকের ঠোটে করে একটি মাংসের টুকরা ওই কুপে ফেলা হলোএতে ঐ কূপের শক্তি নষ্ট হলো
পরশুরাম হারা শুরু করলেন

মুরুব্বী বললেন, যেখানে অনাচার বেড়ে গেছে সেখানে কাউকে না কাউকে পাঠানো হয়েছেএজন্যই এখানে বিহারের পাশে মসজিদ হয়েছে, মাজার হয়েছেবাবরী মসজিদের উদাহরণ টানলেন মুরুব্বীবললেন রাম মন্দিরের সাথে বাবরি মসজিদের কারণ ঐটাই

সবাই মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনছেঐ কুপ দেখার জন্য ইচ্ছা জাগলআমি আগ্রহ প্রকাশ করলাম মুরুব্বীর কাছেসাথে সাথে মুরুব্বী রাজিআরো অনেকে রাজি হলোওরাও যাবেজানানো হলো কূপ অনেক দূরেঅনেকটুকু হাঁটতে হবেতারপরও আমরা রাজিযত হাঁটার দরকার হোক হাঁটবতারপরও কূপটা দেখবকূপ দেখার উদ্দেশ্যে শুরু হলো যাত্রাঐ শুরুইএরই মাঝে বাধ সাধলেন জিয়া ভাইজিয়া ভাইয়ের ঐখানে যে বিশাল চমক প্রদ আয়োজন বাকী রয়ে গেছেঐ কূপ দেখে আসতে আসতে দেরি হয়ে যাবেতাই ঐখানে যাওয়া যাবে নাআফছোস নিয়ে ফিরলাম
ইটের দেয়াল গুলো দেখানোর সময় মুরুব্বী বলছিলেন, ঐ সময় এখানে এমন মাটি ছিল যা সিমেন্টের কাজ করতযদিও এখন আর নেইকবিতা ভাই প্রশ্ন রাখলেন, এত বেশি রুম রাখার কারণ কি? ছোট ছোট অনেক রুমএক একজন এক এক যুক্তি দেখালোকিন্তু সঠিক তথ্য জানা গেল না

মসৃণ ছোট ছোট লাখো ইটের কোনটাতে ইংরেজী অক্ষরে লেখামনে প্রশ্ন জাগল ঐসময় কি বৌদ্ধরা ইংরেজী জানতেন? কেউ কেউ বলল ইটগুলো পরে লাগানো হয়েছে, কিন্তু ইটগুলো দেখে বর্তমান সময়ের মনে হয় নাঅতি মসৃণ ছোট সম আকৃতির আধাপোড়া অথচ শক্ত ইটইট গুলোর ইংরেজী লেখা বিষয়ে কারো কি জানা আছে? এই প্রশ্নটার উত্তর পেলে ভাল লাগত


আমার স্মৃতি শক্তি আমার সাথে প্রায়ই সময় কানামাছি খেলতে পছন্দ করেকোন ভুল হলে শুধরায় দিবেন আশা করি চড়ুই ভাতির ব্লগাররা

+++++++++++++

জয়পুরহাট (সুন্দর মুহূর্ত)

মহাস্থানগড় থেকে নামতে ইচ্ছা করছিল নাকিন্তু সময়ের কাছে মানুষ বড় অসহায়সবাই সিঁড়ি বেয়ে নামতে লাগলেনআমিও তাদের অনুসরণ করতে বাধ্য হলামগাড়িতে উঠছে সবাই

রেস্ট হাউজের ঠিক পাশে আরো কিছু পুরানো স্থাপনা আছেসেখানে ঢুকলামতবে ফ্রিতে ঢুকার সুযোগ নেই এখানেটিকেট কাটতে হয়দুই টাকা প্রতিজনআমরা চারজন ঢুকলামদিলাম দশ টাকাদুই টাকা ফেরত পাওয়ার কথা, কিন্তু নেওয়া হয় নাইসামনের বার গেলে নিতে হবে এখানে অনেক উচু উচু দেওয়ালসবাই বিস্মিতএখানেও সে একই বিতর্কইটগুলো নতুন না পুরানো? ইট গুলো নতুন হিসাবে ধরে নেওয়ার শুধু একটাই যুক্তি আছে ইটে ইংরেজী লেখানা হলে নতুন ভাবার আর কোন কারণ নেইআগের ইটই মনে হয় আমলে ইংরেজী জানবে কোত্থেকে?? !! ?? অল্প কিছু সময় প্রদর্শন শেষে বের হয়ে পড়লাম

ঠিক হলো যে যে গাড়িতে ছিল সে গাড়িতেই উঠবেউঠলাম আমরাআমাদের গাড়ীতে স্থানীয় একজন উঠলেনঅন্য গাড়ির প্রস্তুতির অপেক্ষায় গাড়ি কিছুক্ষণ দাঁড়াল এরপর শুরু হলো নতুন যাত্রাগন্তব্য জিয়া রায়হান ভাইয়ের বাড়িযা জয়পুরহাটে

গাড়ি মেইন রাস্তায় আর উঠে নাইভিতরে রাস্তা দিয়েই চলতে লাগলদুদিকে সুন্দর দৃশ্যগুলো দেখছিলামমাঝে মাঝে কিছু বাজার পার হচ্ছিলোএকটা সিনেমা হলের সামনে রঙ্গীন পোস্টার দেখতেই দুজন ব্লগারের প্রস্তাব রাখলেন, চলেন ছবি দেখি গা

গাড়িতে কথা সমান তালে চলছিলহঠাৎ দেখি রাস্তা ছেড়ে গাড়ি গর্তে নেমে যাচ্ছেএকটু ভয় ভয় লাগছিলমাটির নেমে যাওয়া রাস্তায় গাড়িও নেমে গেল জানালা দিয়ে তাকাতেই দেখি অদূরে ব্রিজ হচ্ছেএকটা মৃত খাল না নদী বুঝলাম না, সেটা পার হলো গাড়িকোন পানি নেইকি দরকার ব্রিজের? ( হয়ত শুধু বর্ষা কালের জন্য) সেটা পার হয়ে গাড়ি আবার উপরে উঠে পিচঢালা রাস্তায় যোগ দিল

এভাবে পার হতে দেখে আমি একটা বিষয় শেয়ার করলামভোটার লিস্টে যখন কাজ করছি আলীকদমেতখন সেখানে একটা সেন্টার ছিল নদীর ঐ পারেনদীতে পানিহাটু সম পানির চেয়েও বেশিআমরা যেতাম আর্মির গাড়ি করেগাড়ি ঐ পানির উপর দিয়েই চলে যেতদুই পাশে পানি উড়ছে দেখতে ভালোই লাগতপানির উপর দিয়ে যখন গাড়ি যেত খুব মজা পেতামতবে সমস্যা হলো একদিনড্রাইভারের সাথে এক আনসার সদস্যের ঝামেলার কারণে ড্রাইভার একদিন মাঝনদীতে ইচ্ছা করেই ব্রেক কষে বসলেনগাড়ী আর স্ট্যাট নেয় নাআমরা নেমে প্যান্ট গুটিয়ে পার হলামপরে সবাই ঠেলাঠেলি করে গাড়িটা ঐপাড়ে উঠালোএ বিষয়ে একটা কথা না বললেই নয়, প্রধান মন্ত্রী কিংবা প্রেসিডেন্টের কাছে তদবিরের জন্য সবচেয়ে ভাল মাধ্যম হচ্ছে ড্রাইভার ড্রাইভারদের অনেক অঘোষিত সম্মান

আমরা যাচ্ছি জিয়া রায়হান ভাইদের বাসায়নিরিবিলি পিচঢালা রাজপথদুই পাশে গাছের শান্তির ছায়াযেদিকে চোখ যায় সেদিকে দিগন্ত জোড়া আলুর ক্ষেতঅনেক জায়গায় দেখলাম সদ্য তোলা আলুর অসংখ্য বস্তাকেউ কেউ আলু নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবলেনএসময় মজা লাগল কাবির য়াহমদ ভাইয়ের কথাতিনি প্রয়াত সাইফুর রহমানের একটা বাণী বললেন। " আমাদের বেশি বেশি পটেটো আর আলু খাইতে হবে, অথচ ওরা কয় শুধু নুডলস খাও নুডলস খাওসিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় এ কথাটি শুনে সবাই মজা পেয়েছিলহাসির জোরে যেন কাঁপছিল গাড়িটিযদি গাড়ি চলন্ত থাকায় বুঝা যায় নি

রাস্তার পর রাস্তা শেষ হয়, কিন্তু দেখা যায় না গন্তব্যকাবির ভাই সবচেয়ে বেশি বিরক্তহাত পা নেড়ে মাঝে মাঝে নিজের ক্লান্তি দূর করার অনবদ্য চেষ্টা কিছুক্ষণ পর পর করতে লাগলেনসামনে বসা স্থানীয় লোকটিকে বার বার জিজ্ঞেস করতে লাগলেন, ভাই আর কতদূর?

অবশেষে পৌছলামএকটা বাড়ির সামনে থামল গাড়িগেট দিয়ে ঢুকে পড়লাম সবাই সুন্দর সাজানো বাড়িবাড়ি না ঠিকডাক বাংলো বলায় সইদুতলার রুচিশীল মস্তবড় বাড়িসামনে রাস্তারাস্তার দুই পাশে লনসেখানে আছে দোলনাএক পাশে হরিণের খাঁচাসবাই প্রথমে ছুটল হরিণের দিকেহরিণগুলো দেখে মনে হলো তারা মহা চিন্তিত এতগুলো মানুষ দেখেভয়ে কিছু হরিণ আড়াল হলোযাদের চিন্তা হওয়ার কথা এত মানুষ দেখে তারা দেখি মহা খুশিজিয়া ভাইয়ের বাবা থেকে জানা গেল হরিণগুলো পালার জন্য সরকারের অনুমতি আছেএজন্য নিয়মিত ট্যাক্স দিতে হয়কিছুদিন আগে একটা হরিণ মারা যায়এই কারণে ঐ হরিণের পোস্ট মর্টেম করতে হয়েছিলপরে পোস্ট মর্টেমের রিপোর্ট ঢাকায় পাঠায়তে হয়েছিল

ঘরে ঢুকার মুখে করিডরে পাখির মেলাদেশ বিদেশী অনেক গুলো পাখিকয়েকটি পাখি কথা বলতে পারেযেন ঘরে ঢুকার মুখে অভিবাদন জানাতেই পাখিগুলো আছে!! সুন্দর সুন্দর পাখি গুলো দেখলে মন ভালো হয়ে যায়ভাল লাগে তাদের মিষ্টি স্বর

কেউ কেউ এরিমধ্যে দোলনায় চড়তে লাগলকিছুক্ষণ পর জিয়া ভাইয়ের পিছু পিছু সবাই ছুটল পুকুর পাড়ের দিকেপুকুর পাড়ের পাশে এলাহি সুন্দর স্থাপনাসবাই বসতে পারার জন্য উপরেই সিড়িছাউনি দিয়ে রাখা বসার জায়গাঅনেকে একসাথে বসতে পারেছবির কল্যাণে অনেকেরই বাসাটা অতি পরিচিত হয়ে গেছে ইতিমধ্যে সাথেই রয়েছে একটা রুমসাথে এটাচড বাথরুমসবাই বসেছিগল্প চলছেচলছে ছবি তোলাএকটু পর পর ক্লিক ক্লিকছবির দিকে মনযোগ দিতে যাওয়ায় আড্ডায় সমস্যা হচ্ছে
তা দেখে জামান ভাই বললেন, ছবি দেখি আমাদের প্রাণখোলা আড্ডায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেছবি তোলা বাদ দাও এখনপ্রাণখুলে কথা বলতে চাই সবাই

জিয়া ভাইয়ের মেয়ে খেয়ালীর জ্বরতারপরও আমাদের সাথে যোগ দিলখেয়ালীর মা আসলেনউনি বললেন আপনাদের নিকগুলো আমার খুব চেনাবললেই বুঝতে পারবসবাই প্রথম আলো ব্লগের নিক গুলো বললজামান ভাই জিয়া রায়হান ভাবীকে আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সময় বললেন, এই আমার শৈশব কালের বাল্য বন্ধযদিও বয়সে ছোটভাবীও সম্মতি জানালেনহেসে দিলেন

জিয়া রায়হান ভাবীকে ভাল লাগলঅনেক মিশুকতিনি গল্প করতে লাগলেন তুলা ভাবীর সাথে

এরি মধ্যে আসলেন জিয়া রায়হান ভাইয়ার বাবাসবার সাথে মোসাফাহ করলেনপরিচিত হলেন

+++++++++++++++++++++++++
++++++++++++++++++
১৯ তারিখ রাতের বেলা
, চড়ুইভাতি পাহাড়পুর

রাতে প্রথম আলো ব্লগারদের মেধার চরম বিষ্ফোরণ শুরু হলো
রাত বাড়ে সাথে বাড়ে প্রতিভার ছড়াছড়ি

কার্ড খেলা দিয়ে শুরু রাত ১২ টার দিকেসেটা দিয়েই শুরুভাগ ভাগ হয়ে খেলা দেখা গেল মেয়েরাও অংশ গ্রহণ করে ফেলছে কার্ড খেলায়

এর মধ্যে এক কোণে ব্যস্ত জামান ভাই, জিয়া ভাই পুরষ্কার বিতরণের পরিকল্পনা নিয়েপুরষ্কার পর্যাপ্ত কিন্তু কোন কোন পুরষ্কার কাকে দেওয়া হবে এটা আলোচনার বিষয়

সবার আকর্ষণ ক্রিকেট ম্যাচ নিয়েজামান ভাই চরম আগ্রহে নিলেন আম্পায়ারের দায়িত্বএক্ষেত্রে জিয়া ভাইয়ের মৃদু আপত্তি
:
তুমি ক্রিকেট বুঝো তো?ইহা শুনিয়া জামান ভাই আকাশ থেকে পড়লেনআমার বাবা জাতীয় দলের আম্পায়ার ছিলআর তুমি বলছো আমি আম্পায়িরিং বুঝি না

আমার কবিতা ভাই এর আগে গাড়ীতে ঘোষণা করছিলেন তিনি স্কুল থাকাকালীন ক্যাপ্টেন ছিলেন তাহাদের ক্রিকেট টিমেরসুতরাং তাহাকে এক দলের ক্যাপ্টেন হিসাবে মেনে নেওয়া হলো। (পূর্ব অভিজ্ঞতা বলে কথা!! ) অন্য পক্ষের ক্যাপ্টেন হলেন জিয়া ভাইযদিও তা ঘোষিত না, বুঝা গেল খেলোয়ার নিয়ে জিয়া ভাই আর আমারকবিতা ভাই টানাটানি করছে
তাহাদের টানাটানি চরম উত্তেজনা দেখে মনে হলো আইপি এল এর নিলাম ও ফেল করবে।!!!
আজ পাহাড়পুর দুই দলের মধ্যে প্রীতি ম্যাচউভয় দলে ৭ জন করে

তবে একই সাথে নতুন একটা বিষয় জানা গেলযারা ক্রিকেট খেলে তারা জ্ঞান অর্জনের পথে এগিয়ে যায়!!!!
বিজয়ী দলের প্রত্যেক সদস্যকে পুরষ্কার হিসাবে দেওয়া হবে মূল্যবান বই

অন্যান্য পুরষ্কারও ঠিক হয়ে গেলশিশুদের সংখ্যার চেয়ে পুরষ্কারের সংখ্যা অনেক বেশি হয়ে গেছে!!!!!

ক্রীড়াক্ষেত্রে দায়িত্ব দেওয়া হলো তুখোড় চৌকষ যদিও যাত্রাপথে নীরব ছিলেন এমন একজনকেসে আমাদের নিষাদ ভাই ওরফে নোমান ভাইতিনি খুব উত্তেজিত এই বিষয়েএত বড় একটা বিষয়ে জীবনে প্রথম দায়িত্ব পেয়েছেন সেজন্য তাকে দায়িত্ব দেওয়ার সাথে সাথে বসে গেলেন ল্যাপটপেমহা হুরস্থুল গতিতে নিজের একাউন্টে পোস্ট লিখে প্রকাশ করে দিলেন ব্লগেসবাইকে জানিয়ে দিলেন এই বিশাল দায়িত্ব পাওয়ার বিষয়টিসর্বশেষ খবর, তাহার পা মাটিতে পড়ছে না, তিনি ছাদে হাটাহাটি করছেন!!!!!

রাত গভীরতার সাথে আড্ডাও যেন নব নব উদ্যম ফিরে পাচ্ছিলোএরই মাঝে একজনের পোস্টে আড্ডার কথা শুনে এক ব্লগার ভাই মন্তব্য করলেন ঘুমানোর জায়গা না থাকাতেই নাকি আমরা আড্ডা দিচ্ছিএটা শুনে আমরা মহা উত্তেজিতবিশাল হলঘরে ১০ টি তোষক বিছিয়ে আমাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছেএর পরও যদি এটা শুনতে হয়!! সাথে সাথে পাশা ভাই ছবি তুললেন আমাদের বর্তমান অবস্থার চিত্র মন্তব্যের জবাব দেয়া হলো ঐ ছবি দিয়ে

সবার রুচি একরকম নাভিন্ন মানুষের ভিন্ন রুচিএটা বুঝা গেল যখন ৭ টি মোবাইল থেকে ৭ রকমের গান আসছিলোকেউ রবীন্দ্র সংগীত, কেউ হিন্দী, কেউ জেমস, কেউবা কবিতা

এরই মাঝে শামীম ভাই শুরু করলেন স্বরচিত পুথি পাঠস্ব উল্লাসে সবাই উৎসাহ দিলব্লগ চড়ুইভাতি নিয়ে পুথি
ছায়াবাজি শুনালেন সুন্দর একটা কবিতা আবৃত্তি

এরই মাঝে একজন ব্যস্ত সবার অটোগ্রাফ নেওয়ার জন্যতিনি সবার সামনে ডায়েরীটি দিচ্ছেন এবং কিছু লিখে দিতে বলছেনআমাকেও লিখতে বলা হলোকিন্তু আমার হাতের লিখা চরম বাজে বিধায় কিছু লিখার সাহস হলো নাএরমধ্যে কয়েকজনকে দেখলাম হেভী মুড নিয়ে অটোগ্রাফ দিচ্ছেনজীবনের প্রথম অটোগ্রাফ দেওয়ার সময়টুকু স্মরণীয় করে রাখতে চান হয়ত। !!!

কারিম ভাই মহা টেনশনেঘুমানোর সময় তার সিটটি ফ্রিজের পাশে পড়বে তো। ( আমাদেরকে যে বিশাল রুমে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে সেখানে একটা ডিপ ফ্রিজ আছে বড় ) কারিম ভাইয়ের আশা রাতে খিদা লাগলে ফ্রিজ থেকে কিছু বের করে খেতে পারবেন!!!!!

এদিকে রাত বাড়েসকাল থেকে আরো বেশি প্রোগামসেজন্য কিছুক্ষণ ঘুমানো দরকার বটেবেশির ভাগ ব্লগারই রাত ৩ টার দিকে ঘুম আনার চেষ্টা করেনতবে কেউ কেউ ব্যর্থপাশের জনের নাক ডাকানোর প্রবল শব্দে ঘুম হারানোর জোগাড়

একজন পরামর্শ দেন, ভাই নাক ডাকতেছে যে তার ঘুম ভাঙায় দেন, ওর আবার ঘুম আসতে আসতে আমরা ঘুমিয়ে পড়ি

সকাল বেলায় হান্নান ভাই মজার জিনিষ শুনানরাতে যারা নাক ডাকছে তাদের নাক ডাকা রেকডিং করেছেন তিনিসকাল বেলায় উচু ভলিয়মে সেটা ছেড়ে দেনসবাই হাসতে হাসতে শেষ

এরই মাঝে জিয়া ভাই ডাকতে আসেন, খেজুরের রস দেওয়া হয়েছে তাড়াতাড়ি খেতে যান, সাথে গরম গরম ভাপা পিঠাজিয়া ভাইদের বাসার সামনে সুবিশাল লন, আছে দোলনা
বাসায় ঢুকার মুখেই অনেকগুলো পাখি চোখে পড়বেদেশ বিদেশী অনেক পাখিলনের এক পাশে হরিণের খাঁচাসেখানে মায়াবী দুইটি হরিণের দুরন্ত হাটাচলা আর আমাদের তা মুগ্ধ হয়ে দেখা

উপর থেকে দেখলাম নিচে সবাই খেজুরের রস খাচ্ছে, তাই লোভ সামলাতে না পেরে পোস্ট লেখা বাদ দিয়ে আমিও নামলাম
আজকের প্রোগামগুলো- ১. খেজুরেরর রস ভাপা দিয়ে প্রথম সকালের নাস্তাপরে আরো ব্যাপক নাস্তার আয়োজন

২. জিয়া ভাইদের পুকুরের মাছ দেখাবিশাল বিশাল সাইজের মাছমাশ আল্লাহআশা করি এ বিষয়ে পোস্ট আসবেজেড এইচ সৈকত ভাই আর হান্নান ভাই মাছের সাথে মডেল হয়েছেন

৩. পাহাড়পুর গমন

৪. পাহাড়পুর ঘুরে দেখা

৫. ব্লগারদের নিয়ে ক্রিকেট খেলাএই খেলায় মুরব্বী জামান ভাইয়ের সুদক্ষ আম্প্যায়িং এর কারণে খেলা বেশ মজা হয়েছেহুমকিতে পড়ে তিনি ৪ টি আউট ঘোষণা করেও পরে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন, বলে রাখা ভাল আজ এই ম্যাচের সর্বোচ্চ রান নিয়েছি আমি তথা বই পাগল

৬ শিশুদের বল পাসিং

৭. মহিলাদের বল পাসিং

৮. হাড়ি ভাঙা

৯. হাউজিং, (জীবনের প্রথম হাউজিং খেলায় অংশ নিয়ে ২য় স্থান অধিকার করি আমি তথা বই পাগল

..................
সর্বশেষে ঢাকায় ফিরা


আজ ২০.০২.১০ সকাল বেলায় এই পোস্টির অধিকাংশ রেডি করা হলেও বিভিন্ন ঝামেলার কারণে দেওয়া গেল নানিরাপদে ঢাকায় পৌছার পর এখন দিলাম

++++++++++++++++++++++++++
জিয়া রায়হান ভাইয়ের বাড়ি ০১
(যেন আনন্দের পুণ্যভূমি!!)

জয়পুরহাট (সুন্দর মুহূর্ত ) পোস্টে লোপা আপা মন্তব্য করেছেন....
বই পাগল,
সবাই খেয়াল না করলেও আমি একটা জিনিস খেয়াল করলাম যে, আপনার বিগত পোস্ট্ গুলোর সাথে একটা ধারাবাহিকতা বজায় রেখেই আপনি পোস্ট দিয়ে যাচ্ছেন প্রত্যেকটা পোস্টই গোছানোআমি অন্য কারো পোস্ট চড়ুইভাতি নিয়ে এমন আর দেখিনিআমার মনে হচ্ছে আপনি এটি দিয়ে একটা গল্পের বই সাজানোর ফন্দি আটছেন ? মন্দ হবেনাতবে আরেকটু পরিমার্জন করতে হবেভাল থাকুন
ধন্যবাদ লোপা আপুকৃতজ্ঞতা

সবাইকে স্বাগতম নতুন পর্বে.....

পুকুর পাড়ে গল্প চলছেসবাই আলোড়িত আনন্দে উত্তপ্তকথার মধ্যেই বোঝা গেল সেসবহঠাৎ মুরুব্বী জামান ভাই ঘোষণা করলেন জামা কাপড় খুলে এ মুহূর্তে কে কে ছোট্ট কাপড় পড়ে নামতে প্রস্তুত পুকুরে? কিছু না ভেবেই শামীম ভাই সবার আগে হাত তুলে বসলেনঅল্পক্ষণের মধ্যে হাতের সংখ্যা বাড়লসবাই ছুটল কাপড় আনার জন্যযেভাবে ছুটছিল মনে হচ্ছিলো বেশ প্রতিযোগিতা হবেপুকুর ভর্তি হয়ে যাবে সাঁতারুতেআমার একটু ঠান্ডার সমস্যা আছেএ পড়ন্ত বিকাল বেলায় পানিতে নামলে নিশ্চিত ঠান্ডা লাগবেপরে সামনের আনন্দ গুলো মিস হবেআগামীর আনন্দের জন্য সাঁতারের আনন্দ কুরবান করে দিলামযদিও খারাপ লাগছিল

কারিম ভাই, আমার কবিতা ভাই ছোট প্যান্ট পড়ে এলেনকারিম ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম, প্রতিযোগিতায় অংশ নিবেন নাকি? উনি উত্তরে বললেন, নাহ না, সাঁতার দিবো না। ( উনি সাঁতার জানে কি না সে বিষয়ে সন্দেহ আছে।) বললাম, তাইলে হাফপ্যান্ট পড়লেন যেকারিম ভাই বললেন, সবাইকে দেখানোর জন্যপ্রস্তুতি নিচ্ছিএরকম একটা ভাব রাখবোযদিও নামবো নাকবিতা ভাই ও দেখি একই কাজ করলেনতাদের ভাব ভঙ্গি দেখে মনে হলো তারা সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে প্রথম স্থান না নিয়ে ঘরে ফিরবেন না

যত উৎসাহ নিয়ে যাত্রা শুরু হবে ভাবা হয়েছিল কাজের সময় দেখা গেল এত উৎসাহ নেইমাত্র চারজন প্রতিযোগী!! সৈকত ভাই, হান্নান ভাই, নীরব পথিক ভাই আর শামিম ভাইশুরু হয়ে গেল প্রতিযোগিতাহুরুস্থুল উত্তেজনাসবাইকে ফেলে প্রথম পাড়ে আসলেন সৈকত ভাই, পরে আব্দুল হান্নানহান্নান ভাইকে দেখলে মনে হয় চুপচাপকিন্তু অনেক বেশী কৌতুহলী, চঞ্চল, মজার মানুষভয়াবহ কান্ড হলো নীরব পথিকেরতাহার পরিধেয় একমাত্র বস্ত্রটি বার বার গা ছাড়া হয়ে যাচ্ছিলোতা সামলাবেন না সাঁতার কাটবেন এই ঝামেলায় তিনি পিছ পড়ে গেলেননোমান ভাই অসতর্ক মুহূর্তের ছবিগুলো ক্যামেরা বন্দী করে ফেললেন

সাঁতার শেষএরপর পুকুর পাড় মেয়েদের জন্য উম্মুক্ত করে দেওয়া হলোওরা সাঁতার কাটবে

ঘোষণা এলো সকল পুরুষ ব্লগাররা যেন নিজ নিজ দায়িত্বে পুকুরের আশ পাশ এলাকা ছেড়ে দেয়ঘোষণার সাথে সাথে আমরা চলে এলাম

সবাই ঘরের সামনে যে লন আছে সেখানে বসলামঅনেকগুলো চেয়ার দেওয়া আছেসেখানে বসলাম গোল হয়েনিচে সবুজ ঘাসঘাসের উপর পা রাখার মধ্যে অন্যরকম আনন্দ আমাদের মধ্যমণি জামান ভাইতিনি গল্প বলছেনসবাই তন্ময় হয়ে শুনছেনছবি দেখতে চাইলে দুটি ছবি চড়ুইভাতি কথা ছিল সুজন ভাই ও আমাদের সাথে যোগ দেবেনকিন্তু তিনি হঠাৎ জানালেন অসুস্থতাকে দেখতে ছুটে গেলেন জামান ভাইযদিও ঠিকানা জানেন নাএদিকে ফোন দিয়ে দেখেন সুজন ভাইয়ের ফোন বন্ধপড়লেন মহামুসিবতেজামান ভাইয়ের হাতে তখন দই, ফলএদিকে জানেনও না কোন ঠিকানাজিয়া ভাইকে ফোন করে জানতে চাইলেন এ বিষয়েজিয়া ভাই কিছু জানাতে পারলেন নাফোন করলেন মাহমুদ ভায়ের কাছে অনেকক্ষণ পর তিনিও কিছু জানাতে পারলেন নাবিপদের উপর বিপদঅনেক মেধা খাটিয়ে গোয়েন্দাগিরির মত কাজ করে সবশেষে সফল হলেন জামান ভাইদেখা পেলেন সুজন ভাইয়েরজামান ভাই বললেন তিনি সুজন ভাইয়ের কাছে কৃতজ্ঞ তার প্রথম পোস্টে সুজন ভাইয়ের সুন্দর মন্তব্যের জন্যএই ফাঁকে বলে রাখি আমিও সুজন ভাইয়ের কাছে কৃতজ্ঞব্লগ জীবনে আমার প্রথম পোস্টের প্রথম মন্তব্যদাতা সুজন ভাই

সুজন ভাইয়ের সাথে সৈকত ভাইয়ের মোবাইলে কথা হয় মাঝে মাঝেযাত্রা পথে সৈকত ভাই বেশ কয়েকবার ফোন করলেন সুজন ভাইয়ের কাছেকিন্তু প্রতিবারই বন্ধ পেয়েছেন আমাদের ফাঁকি দিতে সুজন ভাই মোবাইল বন্ধ করে রেখেছিলেন ঐ ২ দিন যাতে কেউ ওনাকে বিরক্ত না করতে পারেরহস্যময়ী সুজন ভাই রহস্যময়ীই রয়ে গেলেন

জামান ভাইয়ের বলার ভঙ্গি খুব সুন্দরতাই মজা পাচ্ছিলামভালো লেখকরা যেমন পাঠকদের বাধ্য করেন শেষ পর্যন্ত পড়তেজামান ভাইয়ের ব্যাপারটাও তেমনউনার বলার ভঙ্গি দেখে প্রতি মুহূর্তে জানতে ইচ্ছা হয় এরপর কি হয়?

এদিকে এরই মধ্যে বিকালের নাস্তার ডাক আসেআহামরি আয়োজনঅনেক রকমের ফল অনেক রকমের পিঠাযতগুলো দেওয়া হয়েছে তাতে আমাদের সংখ্যার চেয়ে আরো তিনগুণ বেশি মানুষ খেতে পারবেআপেল, কমলা, কাল সুস্বাদু আঙ্গুর, বরই সব ছিলযার যা ইচ্ছা তা নিয়ে শুধু খাওয়া

বাহিরে আসতেই দেখি অন্যরকম আয়োজনলনের একপাশে বারবিকিউ করার জন্য ব্যবস্থা আছেসেখানে বসে আছেন মামুন ভাইমুরগীর গোস্ত বারবিকিউ করছেনজিয়া ভাই আমাদের সাথে মামুন ভাইকে পরিচয় করিয়ে দিলেনমামুন কামাল জুটি প্রায় ১৩ বছর নামকরা জুটি ছিল হকি খেলায়এটা আমাদের সে মামুন ভাই৫ বছর ছিলেন অধিনায়কএখন জাতীয় হকি নির্বাচক কমিটির সম্মানিত সদস্য

গোশতের বারবিকিউ বানানো চলছেইসবাইকে দেওয়া হচ্ছেরাতের অন্ধকার তখন ভর করেছেশীত করছে একটু একটুখোলা আকাশের নীচে সবাই বসে আছেদেখছে বারবিকিউ করার অপরুপ সুন্দর দৃশ্যযার যতটুকু ইচ্ছা খাওয়া হচ্ছেএদিকে জিয়া ভাই হুমকি দিয়ে গেছেনরাতেও খেতে হবেঠিক মত যদি আমরা না খাই তবে ওনার বাবা ওনাকে ঘর থেকে বের করে দেবেন

চা আসলঅনেক কাপমুগ্ধ হয়ে গরম গরম চা খেলো সবাইসাথে চলছিল আড্ডাযার যত কাপ ইচ্ছে ধোঁয়া উঠা গরম চা খাচ্ছে

গোশতের পর করা হলো কোরাল মাছের বারবিকিউখোলা আকাশের নিচে তারা ভরা রাতে হালকা শীতে তখন গরম গরম গোশতের আর মাছের বারবিকিউ খাওয়া চলছিলসে সুন্দর অনুভূতি কথা দিয়ে প্রকাশ সম্ভব নাঅপরিসীম আনন্দের সে তৃপ্তিভাষা এখানে আনন্দের কাছে অসহায়

অন্যরকম সুন্দর পরিবেশএর মধ্যে জিয়া ভাই পোস্ট দিতে বললেননিলাম রাফেল ভাইয়ের ল্যাপটপজলন্ত মাছ নিয়ে কাড়াকাড়ি শিরোনামে একটা পোস্ট দিলাম

মামুন ভাই দীর্ঘ চার ঘন্টা বারবিকিউ বানিয়েছেন
ধন্যবাদ মামুন ভাইকে

এরিমধ্যে খবর পেলাম কবিরনি ভাই, পাশা ভাই, হলিহক ভাই, হাফিজ ভাই আসছেন আমাদের সাথে যোগ দিতে....




আমার স্মৃতি শক্তি আমার সাথে প্রায়ই সময় কানামাছি খেলতে পছন্দ করেকোন ভুল হলে শুধরায় দিবেন আশা করি চড়ুই ভাতির ব্লগাররা

+++++++++++++++++++++++++++++++

জিয়া রায়হান ভাইদের বাড়ি ০২ (আনন্দ প্রতিটি কোণায়)

রাত একটু একটু গাঢ় হচ্ছেরাত বাড়ার সাথে সাথে শীতও বাড়ছে কিঞ্চিত হারেজামান ভাই বলেছিলেন শীত নাইসে বলাটা ঠিক ছিল না বলেই অনেকের মনে হলোএকটু একটু শীত করতে লাগল সবারএ ব্যাপারে জামান ভাইকে অনুযোগও করতে লাগল কেউ কেউজামান ভাই যুক্তি দেখালেন পুকুর পাড় বিধায় একটু শীত লাগছেরুমে শীত নাই

এদিকে দেখা গেল খোলা আকাশের নীচে দুটা ল্যাপটপের মনিটরের আলো জ্বলছে একটাতে সৈকত ভাই টাইপ করছেনতাকে সাহায্য করছেন নীরব পথিক ভাই, হান্নান ভাই, কাজলা দিদি ভাইসৈকত ভাই দোলনা চড়ে চড়ে কাজ করছেনঅন্য ল্যাপটপে টাইপিং চালাচ্ছে বই পাগলতাকে সাহায্য করছে জামান ভাই, ছায়াবাজি ভাই, রাফেল ভাই, কাবির য়াহমদ ভাইনেটওয়ার্কের দুর্বলতার কারণে সহজে পোস্ট দেওয়া যাচ্ছিলো নাদুই গ্রুপের মধ্য একটা স্নায়ু যুদ্ধকার আগে কে পোস্ট দিতে পারেসঙ্গীরা তাল দিচ্ছেন তাড়াতাড়ি দেন, তাড়াতাড়ি দেনব্যাপক উত্তেজনা দুই গ্রুপের মধ্যেপরিশেষে দেখা দুই গ্রুপই সফলসামান্য সময়ের ব্যবধানে দুই ল্যাপটপ থেকে পোস্ট চলে এসেছে আলো ব্লগেসেদিন আলো ব্লগে যারা ছিলেন তারা মনে হয় অনেক বিরক্ত হয়েছেনএকটার পর একটা চড়ই ভাতি নিয়ে পোস্ট দেওয়া হয়েছে

আমরা তখনও বাড়ির সামনেবারবিকিউ খাচ্ছি আর বানানো দেখছিএদিকে গানের আওয়াজ ভেসে আসছেপুকুর পাড়ে আয়োজন করা হয়েছে মিনি কনসার্টেরপেশাদার লোক আনা হয়েছেআনা হয়েছে বড় বড় দুইটা স্পীকার, মাইক্রো ফোন আরও প্রয়োজনীয় সকল বাদ্য যন্ত্রদুই ছোট ভাই গান গাচ্ছে সুন্দর ভাবেইএরি মধ্যে আমাদের সাথে যোগ দিলেন হালি হক ভাইউনি এসে দেখি মহা আনন্দিতপরিচয় হলেন আমাদের সাথেবললেন পাসওয়ার্ড সমস্যার কারণে অনেক দিন আসা হয় নি ব্লগেএখানে এতজনকে দেখে অনেক ভাল লাগছেনিয়মিত হওয়ার চেষ্টা করব

পুকুর পাড়, ঠান্ডা নির্মল হাওয়া, প্রিয় সব মানুষ, তারা ভরা আকাশ, রাতের একটা আধো রহস্য ভাব সব মিলিয়ে কনসার্টে গান শুনতে অন্যরকম আনন্দ এই আনন্দও ভাষার কাছে পরাস্থশুধু অনুভবেই তা অনুভব করা যায়

পুকুর পাড়ে ছুটলামগান শুনার জন্যদেখি এরি মধ্যে হাউস ফুলঅনেকে এসেছে জিয়া রায়হান ভাইয়ের পরিবারের সদস্যরাও যোগ দিলেন দর্শক হিসাবেসবচেয়ে বেশি শীত কাবু করেছে নিষাদ ভাইকেউনার মাথায় গরম টুপি, গলায় গামছা পেচানো, গায়ে মোটা সুয়েটারনিচের দিককার সিঁড়ির উপর দুই পা তোলে উনি আয়েশে গান উপভোগ করছেনআরো যে দুইজনকে শীত কাবু করেছে বলে মনে হলো তারা হচ্ছেন, ধ্রুবো এবং বই পাগলতাহাদেরকেও সুয়েটার গায়ে দিতে দেখা গেছে

গান শুনাচ্ছেন একুশের টিভির এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচিত মুখ শিশু মেয়ে শিল্পীমায়াবী গলাগান শুনতে ভালই লাগছেএরি মধ্যে চলছে আড্ডাওনোমান ভাই তার ক্যামেরায় ধারণ করা ছবিগুলো দেখাচ্ছেনসাঁতার প্রতিযোগিতার অসতর্ক মুহূর্তের তোলা ছবিসবাই দেখে বলল, ব্ল্যাক মেইল করা যাবে এগুলো দিয়া দুর্লভ দুর্লভ ছবিগুলো দেখে সবাই মজা পাচ্ছে

জামান ভাই জানালেন কবিরনি ভাই আসছেনকবিরনি ভাই আরেক ঝামেলায় আছেনঢাকা থেকে বগুড়া পর্যন্ত যাত্রাপথে গাড়ির গানের ঝাটকায় তিনি জয়দেবপুর আর জয়পুরহাট মিলায় ফেলছেনবগুড়ায় এসে তিনি খুঁজছেন গাজীপুরের জয়দেবপুরদেখে সেখানে যাওয়ার কোন গাড়ি বগুড়া শহরে নেইএবং যাহাদের তিনি জিজ্ঞেস করছেন তাহারা অসহায় চোখে একজনের চোখে অন্যজন তাকানো ছাড়া কোন সাহায্যই করিতে পারিল না

এরি মধ্যে এসে পৌছলেন পাশা ভাই এবং হাফিজ ভাইপাশা ভাই অনেক মজার মানুষঅনেক মজা করেন
গান চলছে আর শিল্পীদের পিছনে নীরব পথিক ব্যস্ত মন্তব্যের উত্তর প্রদানে একটা জিনিষ দেখে অবাক হলামনীরব পথিক ভার্চুয়াল কি বোর্ডে টাইপ করেনমাউস দিয়ে প্রত্যেকটি অক্ষর টিপে চলেনউনার টাইপ করার দৃশ্য দেখতে ভাল লাগে তবে নীরব পথিকের একটু বিচার আছেআমার টাইপিং দেখে তিনি বললেন এত জোরে লিখে কেমনে? তাহার এই কথা মুখ লেগে গেছেএখন টাইপ করতে গিয়ে মনে হচ্ছে স্প্রিড আগের চেয়ে কমে গেছে

গল্প করছিলাম কারিম ভাই, জামান ভাই, কবিতা ভাই, হলি ভাই, ছায়াবাজি ভাই সহ আরো কিছু ব্লগার গোল হয়েহঠাৎ দেখি সবার চিল্লানিকাহিনী কি? ঘুরে দেখে দেখি অঘটন ঘটে গেলআমাদের সারোয়ার ভাই নাচা শুরু করেছেনতবে একা না সঙ্গী নিয়েসঙ্গী হচ্ছেন মুরুব্বীনিঅল্প সময়ের নাচটি ধারণ করে ফেললেন ছায়াবাজি ভাই

এক ফাঁকে আমি আর আমার কবিতা ভাই রুমে এলাম মিনি কনসার্ট ছেড়েনামাজ পড়ার জন্যকবিতা ভাইয়ের ছেলে বাবার প্রতি খুব যত্নশীলমাঝে মাঝে ফোন করে খবর নিচ্ছিলো বাবা নামাজ পড়ছোতো, ঠিক মত খাচ্ছো তোকবিতা ভাই জানালেন, আসার সময় তার ছোট ছেলে নাকি কম্বল নিয়ে তার পিছে পিছে ছুটছিলবাবার শীত লাগবে ভেবে

এশারের নামাজ পড়তে এসে দেখি টাইলসের বিশাল হলরুমে তোষক বিছানো হচ্ছে সারিবদ্ধভাবেদেওয়া হচ্ছে বালিশসেগুলো তদারকি করছেন জিয়া ভাইয়ের বোন প্রথমে জিয়া ভাইয়ের মা এসে দেখিয়ে দিয়ে গেছেন কিভাবে বিছাতে হবে

গান পরিবেশন করলেন ব্লগারদের পক্ষ থেকে রাতের পাখিজামান ভাইও মাইক্রোফোন হাতে নিলেন

অনেকক্ষণ গানের পর বন্ধ হলোসবাই ফিরে এলো ঘরে

ডাক এলো রাতের খাবারেরটেবিল ভর্তি খানাবড় বড় চিংড়ি ভাজি আলোকিত করে আছে টেবিলটিখাসির গোশত, মুরগীর গোশত, ডাল, নদীর মাছ সব ছিলজিয়া রায়হান ভাইয়ের মা তদারকি করছিলেন খানাতিনি বলছিলেন মাছ নিতেমাছের তরকারি ভাল হয়েছে

খাওয়ার শেষে সবাই রুমে ফিরে এলোশুরু হলো জমজমাট আড্ডাকবিরনি ভাইয়ের সাথে পরিচয় হলামএরিমধ্যে জিয়া ভাই কয়েকটা প্যাকেট নিয়ে আসলেনকার্ডের প্যাকেট দিলেন খেলতেভাগ হয়ে খেলতে বসে গেল অনেকেকবিরনি ভাইদের গ্রুপে একজন কমআমাকে খেলব নাকি জিজ্ঞেস করলেন, রনি ভাইআমি যে পারিই নাখেলার তো প্রশ্নই আসে নাশেষ পর্যন্ত মেয়ে ব্লগার সঙ্গী হলেন রনি ভাইদের গ্রুপে

জিয়া ভাই আরেক লোভনীয় প্যাকেট দিলেনধূমপায়ীদের জন্যবেশ কয়েক জন ব্লগার দেখলাম খুশীতে আত্মহারাতারা পড়িমরি হয়ে ছুটলেন ছাদেরাতে আরো অনেক মজা হয়েছে, কিছু আছে ১৯ তারিখ রাতের বেলা, চড়ুইভাতি পাহাড়পুর এই পোস্টে


আমার স্মৃতি শক্তি আমার সাথে প্রায়ই সময় কানামাছি খেলতে পছন্দ করেকোন ভুল হলে শুধরায় দিবেন আশা করি চড়ুই ভাতির ব্লগাররা

+++++++++++++++++++++++++++++++

চড়ুই ভাতি পাহাড়পুরখেলায় উদ্বেলিত ব্লগাররা প্রারম্ভিক পর্ব!!!

পাহাড়পুর চড়ুই ভাতিতে যেসব ব্লগাররা গিয়েছেন তারা নিশ্চিত বলবেন জীবনে আনন্দের মাইলফলক এটিছিলাম এত আনন্দে এত আন্তরিকতায় তা শব্দ, ছবি দ্বারা ঠিক বুঝানো দুঃসাধ্যতারপরও স্মৃতি প্রতারণা করেতাই স্মৃতিকে শিক্ষায় রাখার জন্য এ বিষয়ে লিখেছিপোস্টও দিয়েছি অনেক গুলো তবে শেষ করতে পারি নাইমধ্য খানে নরসিংদীতে ব্লগ পিকনিক দেখে সে পিকনিকে আনন্দ পাবার অভিপ্রায়ে বন্ধ রেখেছিলাম চড়ই ভাতির পোস্টআজ সকালে দেখলাম সাইদ ভাইয়ের পোস্টসেখানে দেখা যাচ্ছে পোস্টের পতন ঘটছে

অন্যদিকে কাল সাজেদুন নাহার আপার পোস্টে দেখি বই পাগলের পোস্টের অত্যাচারে অনেকের ঘুম হারাম অনেক পোস্ট দিয়ে রাখে বই পাগলএতগুলোতে মন্তব্য করা সত্যি কষ্টকরসাইদ ভাই সুন্দর মন্তব্য করছেনভালা হইচে টেকনিক প্রয়োগ করবেনএবং এরি মধ্যে তিনি তা শুরু করেছেন কারা বেশি শক্তিশালী, বিবাহিত না অবিবাহিত-রা পোস্টে তিনি ভুলে সে কৌশল প্রয়োগ করতে ভুলে যানমনে পড়ার সাথে সাথে আরেকটা মন্তব্য করেন, ভালা হইচেএবং জানায় দিলেন এটাই তার আসল মন্তব্য পরবর্তী পোস্টে আর তিনি ভুল করেন নিচোখ বন্ধ করে লিখে দেন, ভালা হইচে

ছেলেবেলা ভাইও একই কাজ করতে গিয়েছিলেনতবে তিনি এর পর আরেকটি মন্তব্যে আতঙ্কের কথা বলেছেনঅনুরোধ করেছেন ........... এই ইস্যুতে একটা ব্লগ কনফারেন্স করা দরকারভালোই হয়েছে সর্বশেষ খবর হচ্ছে, ছেলেবেলা ভাই উভয় পক্ষে লিংক রাখছেন সমান্তালে

আজ সকাল ৯.১৬ মিনিটে আবার বসলাম সে সুন্দর দিনের স্মৃতিগুলো রচনায়দেখি কতটুকু এগিয়ে যাওয়া যায়এইটুকু যখন লিখছি তখন দেখি টিট শুরু হলোবিদ্যু নেই ইউপি এসেরও অদ্ভুত সমস্যাঅনেক কষ্টে এক মিনিটের মত ব্যাক আপ দেয় মাঝে মাঝে তাও দেয় না

১০.০৬ এর দিকে আবার আলোকিতবসলাম আবার লিখতেবিদ্যুত এসেছে

মাইক্রোবাসসহ আমরা তখন পাড়ি দিচ্ছিসরি মাইক্রোবাসকে সাথে নিই নাই মাইক্রোবাসের পেটে বসে আমরা গল্প করছিতুমুল আড্ডা চলন্ত আছে চলন্ত গাড়িতেগাড়ীর গতির চেয়ে আড্ডার গতি অনেক বেশি সচলআড্ডার অনেক কথাই ভুলে গিয়েছি স্মৃতি শক্তির দুর্বলতায় তবে সে সময়গুলো যে অনেক মজায় কেটেছে তা মনে আছে ব্যাপক ভাবে

গাড়ি পাহাড়পুর গিয়ে পৌঁছলনামলাম সবাইসুন্দর পরিবেশএরিমধ্যে সেখানে প্যান্ডেল টানানো হয়েছেচেয়ার টেবিলের ব্যবস্থা করা হয়েছেসাথে দেখি একটা মাইকেরও ব্যবস্থা আছেসুন্দর তোছবির মত সাজানো সব ব্যবস্থামুগ্ধতায় মুগ্ধতায় সবাই আবেশিত

বাবুর্চিরা ব্যস্ত রান্না বান্নায়খানার কথা বলতে গেলে আরো দুইটা পোস্ট হয়ে যাবেসেদিকে এখন যাচ্ছি নাদুইটা খাসী আনা হয়েছেখাসীগুলো ব্যস্ত কাঁঠাল পাতা খেতেতখন ব্লগে কাঁঠাল পাতার একটা জনপ্রিয়তা ছিলনীরব পথিক ভাই কিছু ছবি তুললেন ছাগলরা কাঁঠাল পাতা খাচ্ছে সে দৃশ্যের

এর পর জবেহ করা হলো খাসী দুইটাআমরা দল বেঁধে ঢুকলাম পাহাড়পুরবিশাল এলাকাপুরাটুকু হাঁটা দুঃসাধ্যসেখানে এত বড় স্থাপনা কিভাবে তৈরি হয়েছিল মাথায় ঢুকে নাযতটুকু পারা যায় ততটুকু দেখব

ভাল লাগছেপাহাড়পুরে অনেক খাপএকটার উপর আরেকটা খাপউঠতে একটু কষ্ট করতেই হয়তা উঠে গেলাম এসময় এক ব্লগার আপু নিচে ছিলেনতিনি বললেন, ধরতে পারবেন, উঠবনাকি লজ্জা পাচ্ছেনউঠার সময় হাত বাড়ায় দিলেন

ঘুরছিসরোয়ার ভাইয়ের পরিবার মহা উত্তেজিতসবার মাঝেই উত্তেজনা ভর করছে

তা ঘুরা শেষে এলাম গাড়ী যেখানে রাখা হয়েছে সেখানেকিন্তু অনেকেই নাইজিয়া ভাই ব্যবস্থপনার দেখভাল করছেনবলা হয়েছে ক্রিকেট ম্যাচ হবেসেটা নিয়ে অনেকের মাঝে উসাহ দেখা গেল

বিশাল এক বাকসো করে ক্রিকেট সরঞ্জাম নিয়ে আসা হলোসেখানে প্যাড, স্ট্যাম্প, ব্যাট, হেলমেট, গ্রাফস, গার্ড, ডিউস বল সব আছেকিন্তু আমরা এম্নেই ক্রিকেট খেলি নাতার উপর এখন যদি এগুলো দিয়ে খেলি তাহলে তো অনেকে সুস্থ স্বাভাবিক হয়ে ঢাকায় যাওয়া যাবে নাএদিকে পাহাড় পুরের আশে পাশে এমন কোন দোকান নেই যেখানে বল পাওয়া যাবেঅনেক দূর বাজারে যেতে হবে

চিত্র০১- সবাই একসাথে, দুই আম্প্যায়ার সহ

দূর হলে সমস্যা কিমোটর সাইকেলে লোক পাঠানো হলো বল আর ট্যাপের জন্যএদিকে নেমে পড়লাম প্রাকটিসে ব্যাট হাতেবল দিচ্ছে আর ক্যাচ দিচ্ছি
চিত্র০২- আমাদের দল

আমরা যারা প্র্যাকসি করছি তাদের পরিশ্রম হয়ত খেয়াল করলেন রাতের পাখি আর রুবিনা আপাতারা সকলকে কুলফি আইসক্রীম এনে দিলেনএক হাতে ব্যাট দিয়ে খেলছি অন্য হাতে কুলফি আইসক্রিমদেখার মত ব্যাপারযথেষ্ট মজা লাগছিল

বল আনা হলোকিন্তু এই বলটাও ভারীটেপ লাগানো যাবে নাউপরে টেনিসের বলের মত আবরণ ঠিক আছেকিন্তু ভিতরে পাথর জাতীয় কিছু আছেতাই ভারী

চিত্র ০৩- প্রতিপক্ষ দল

আবার পাঠানো হলোএরিমধ্যে চলছে মহাসমারোহে চলছে প্রস্তুতিবই পাগল একটু বেশি উত্তেজিতবেশি আবেগ প্রবণ হয়ে গেছে খেলাটা নিয়েতাকে অনেক বেশি সিরিয়াস দেখা যাচ্ছেযদিও খেলার খ ও জানে কিনা সন্দেহকিন্তু নাম রক্ষা বলে কথাকেননা ঘোষণা দেওয়া হয়েছে যে দল জিতবে সে দলের প্রত্যেককে দেয়া হবে বইএই এক অসাধারণ সুযোগবই পাগল বইয়ের পিছনে ছুটবে না তা কি হয়?

চার ছয় স্ট্যাম্প বসানোর কাজে লেগে গেছেন অনেকেদীর্ঘ অনেক দিন পর খেলায় নামছে বলে কথাখেলাটা আন্তর্জাতিক মানেরই হবেকমেন্ট্রিতে তখন সরোয়ার ভাইমজার মজার কথা বলে সবাইকে হাসাচ্ছেন

এদিকে বল এলোতবে আগের রকমইটেপ পড়ানোর মতো বল পুরা বাজার খুঁজেও পাওয়া যায় নিআমাদের টিমে কারিম ভাইকিন্তু হঠা দেখি তিনি নাইকাহিনী কি? মাইকে তখন সরোয়ার ভাইয়ের কন্ঠস্বরের সাথে শোনা যাচ্ছে কারিম ভাইয়ের ক্ষুদ্র কন্ঠকারিম ভাই কি খেলা বাদ দিয়ে কমেন্ট্রিতে চলে গেল নাকি? ভয় লাগলকান খাড়া করে বুঝার চেষ্টার করলাম কারিম ভাই কি বলছেন? কারিম ভাই সরোয়ার ভাইকে বলছে, ভাই আমি আহত হইছিপ্রস্তুতি নিতে গিয়ে আঙুলে ব্যথা পেয়েছিসবাইকে জানায় দেনমধ্যখানে নিজের হাতের ব্যথা সত্য প্রমাণ করার জন্য উহু উহু ও করলেন কয়েকবারমাইকে শোনা গেল

তা আমাদের খেলা শুরু হলো দুই দলের খেলোয়াড়দের সম্মিলিত ফটোসেশনের পরসবার গাঁয়ে একই গেঞ্জিদুই দলের সাধারণত আলাদা থাকেআলাদা খেলছে সত্য কিন্তু সবাই একই আশ্রয়ে আছে তা বুঝার জন্যই কি একই গেঞ্জি সবার কাছে?

এদিকে সরোয়ার ভাই মাইকে ঘোষণা দিয়েছেন, স্কোর লেখার জন্য আব্দুল হান্নান ভাইকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছেএকটু পরেই ঘোষণা আসল, হান্নান ভাই যেন আঞ্চলিকতায় প্রভাবিত হয়ে দুর্নীতি না করতে পারেন সেজন্য অন্য অঞ্চলের আরেক জন পাঠানো হলো

মেইন আম্পায়ের দায়িত্বে মুরুব্বীকঠিন ভাবে দাঁড়ালেনমনে হচ্ছে অনেক সিরিয়াস আম্পায়ারকারো কথায় কান না দিয়ে নিজের মত আম্পায়ারিং করবেন সিরিয়াস মুডদেখলেই ভয় করে

কিন্তু মুরুব্বী ভাইয়ের আম্পায়ারিত্ব খেলাটার বিনোদন বাড়িয়ে দিয়েছে আরো কয়েক গুণ

ছবি ০৪- উত্তেজনা আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত নিয়ে

আউটের জন্য আবেদন করলেই আউট দিয়ে দেন আঙ্গুল উঁচিয়েআবার প্রতিপক্ষ যখন এসে প্রতিবাদ শুরু করে তখন আউট বাতিল করে দেনএরকম ঘটনা কয়েকবার ঘটল

আমরা টসে জিতলামব্যাট পাওয়ার ইচ্ছা ছিলকিন্তু আমার কবিতা ভাই কেন যেন বোলিং নিলেন আগেতো খেলা চলছে

কবির য়াহমদ ভাই সম্ভবতআউটের আবেদনএবং সাথে আঙুল উচিয়ে আউট ঘোষণা স্ট্যাম্পে বল লাগিয়ে দিল উইকেট কিপার নীরব ভাইতা জিয়া ভাই এগিয়ে আসেন কেননা তিনি ব্যাটিং দলের অধিনায়কএটা আউট নাকেন? খেলার মধ্যেও যুক্তি দেখালেন ব্যাটসম্যান মনে করছেন এলবি ডব্লিউ আউট দিয়েছেসে তাই আর যায় নাই কিন্তু এলবি ডব্লিউ খেলায় নেইসুতরাং এটা আউট হবে নাআম্প্যায়ার সাথে সাথে ঘোষণা দিয়ে দিলেন নট আউট


খেলা পর্ব এখনো শেষ হয় নাইম্যাচের ফলাফল পর্যন্ত এগোবে

এগারোটার আগ মূহুর্তে লেখাটি শেষ হয়পোস্ট দিতে যাবো ঠিক এই সময় বিদ্যুত উদাওদুইঘন্টার বেশি সময় পরে বিদ্যু এলো

ছবি গুলো নিষাদ ভাইয়ের পোস্ট থেকে নেওয়াওনার পোস্টে আরো অনেক ছবি আছে এই খেলার