ছোটকাল থেকেই কম্পিউটারকে দুর্লভ এবং অনেক অনেক বড় কিছু ভাবতাম। যাদের বাসায় কম্পিউটার থাকতো তাদের অনেক বড় মনে হতো। হিংসা হতো।
তা ২০০৫ সালে একটা কম্পিউটার নিয়ে ফেললাম। ঢাকায় বসুন্ধরা সিটিতে মেলা চলছিল। সেখানে ফ্লোরাতে অর্ডার দিলাম। তিনদিন পর দিবে। মেলা থেকে নেওয়ার প্রকাশ্য লাভ হচ্ছে কম্পিউটারের সাথে একটি ক্যামেরা ফ্রি। অলিম্পাস এনালগ ক্যামেরা। ভাগ্যিস তখন ডিজিটাল সরকার ছিল না। এনালক ক্যামেরা নিয়ে কোন তিরস্কার শুনতে হয় নাই।
তা তিন পর গেলাম মতিঝিলে ফ্লোরার অফিসে। সেখান থেকে ডেলিভারী দেওয়া হলো। সাথে দেওয়া হলো একজন ইঞ্জিনিয়ার। নাম সোহেল। কুয়েট থেকে পাস করছে। তার দায়িত্ব হচ্ছে আমার সাথে বাসায় গিয়ে কম্পিউটার সেট করে দিবে।
কম্পিউটার কানেক শন করার জন্য ইঞ্জিনিয়ার সাথে করে নিয়ে গিয়েছি ব্যাপার এখন চিন্তা করলে হাসি পাই। তবে যথেষ্ট সদালপী সোহেল ভাই। যাওয়ার সময় দেশ নিয়ে, লেখাপড়া নিয়ে অনেক গল্প হলো।
বাসায় গিয়ে লাইন দেওয়া হলো। আমি চরম উত্তেজিত। একটা কম্পিউটারের গর্বিত অধিকারী। ইচ্ছেমত চালাতে পারবো। ভাবতেই অন্যরকম লাগছে। তো লাইন দেওয়ার পর কম্পিউটার অন করছেন। লাইট জ্বলে উঠল। উইন্ডোজ এক্সপি লোড নিল। এরপর একটা ড্রাইভে ঢুকে হিন্দী গান চালালো। উল্লেখ্য যে কিছু গান, ছবি লোড করে দিয়েছে ফ্লোরা থেকেই। কিন্তু এই কি গান বেজে যাচ্ছে কেন? হঠাৎ করে থেমে যাচ্ছে। তারপর চলছে, আবার থামছে। অনেকটা ফিতা বেজে গেলে ক্যাসেট চালালে যেরকম হয়।
তা কয়েকবার রিস্টার্ট নিয়ে গান পরিবর্তন করেও যখন হচ্ছে না। তখন সোহেল ভাই তার চিফের কাছে ফোন দিলেন। এদিকে আমার মন খারাপ।
তা টের পেয়ে সোহেল ভাই আমাকে স্বান্তনা দিতে লাগলেন। কোন জিনিষ প্রথমে সমস্যা হলে ভাল। পরে আর সমস্যা হয় না। আর চিন্তার তো কিছু নাই। যত বড় সমস্যা হোক ওয়ারেন্টি তো আছে আপনার। সমাধান ফ্লোরাই করে দেবে। কোন টেনশন নিবেন না।
আমি শুকনা হাসির চেষ্টা করি। ভান করি মন খারাপ হয় নাই।
চীফ বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। সেগুলোতে চেষ্টা করেন সোহেল ভাই। কিন্তু সমাধান হয় না। পরে বলা হলো সিপিউটি যেন আবার নিয়ে যাওয়া হয় ফ্লোরাতে।
তা বিকালের দিকে গেলাম সিপিউ নিয়ে ফ্লোরা ওয়ার্কশপে। আদমজী কোর্ট। এসি রুমের ভিতরে চলছে কম্পিউটার মেরামত। চীফ আসগর ভাই। পরিচিত হলাম। বান্দরবানের কাস্টমার শুনে আগ্রহ দেখালেন।
তা বললেন সময় লাগবে। দুইদিন পর দেওয়া হবে।
গেলাম দুই দিন পর। আমার কম্পিউটারটা ঠিক করার দায়িত্ব পড়ল লুবনা আপুর উপর। মিস্টি হাসি দিয়ে আপনি দেখেন ঠিক হয়েছে কিনা। আমি একটু বাহির থেকে আসছি।
আমি বললাম- কিভাবে দেখব।
তিনি বললেন, গান চালিয়ে দেখেন। একটা গান শেষ হলে অন্য আরেক ফোল্ডার থেকে গান দেবেন। থেমে যায় নাকি দেখেন।
আমি তখনও গান বদলাতেই পারতাম না। একটু লজ্জিত হয়ে বললাম, আপু আমি তো গান বদলাতে পারি না।
তা শুনে আবার লুবনা আপু মিস্টি করে হাসলেন। বললেন , ঠিক আছে সমস্যা নেই। আমি দিয়ে দিচ্ছি। আপনি শুধু দেখেন মধ্যখানে থেমে থেমে যায় নাকি।
দেখলাম থামছে না। গতিশীল ভাবে চলছে।
জিজ্ঞেস করলাম কি সমস্যা হয়েছে। বলল, মাডারবোর্ড চেঞ্জ করে দেওয়া হয়েছে। ইন্টেলের মাডারবোর্ড। ৯৪৫ সিরিজ মডেলের।
আমি একটু খুশী। নতুন আরেকটা মাডার বোর্ড পেয়ে গেলাম।
আর সবার ব্যবহার কি সুন্দর। আমি মুগ্ধ। অনেক আন্তরিক তারা।
সিপিউ বাকসে ভরে দিল। তা নিয়ে বাসায় ফিরলাম।