সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস



আবীর ঘর থেকে বের হয়ে চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিলসন্দেহ জনক কিছু চোখে পড়ল নাওর হাত দুটি পাঞ্জাবীর পকেটে রাখাকিছুদিন হচ্ছে পাঞ্জাবী পরা শুরু করেছেএতে লাভআর্মিরা সহজে ঘাটায় নাধরে নেয় এ মুসলমানতবে কিছু ক্রিটিকাল আর্মি পথ আগলে দাঁড়ায়বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করেঅদ্ভূত সব প্রশ্নযেমন, তোমার নাম কে রেখেছে? তোমার বাবা না মা?


: আমিতো ঠিক বলতে পারবো নাজিঞ্জেস করতে হবে
:
কোথায় যাচ্ছো এখন?
:
নির্দিষ্ট কোথাও যাচ্ছি নাএই একটু হাটবো
:
আমি একটু ঘোরাঘুরি করব এটার ট্রান্সলেট করো ইংরেজীতে

আবীরের হাসি পায়যদিও তা চেপে রাখেএই উর্দু আর্মীগুলো উর্দুতে অনুবাদ করতে না দিয়ে ইংরেজীতে কেন অনুবাদ করতে দিয়েছে কে জানে? তবে উর্দু আর্মির বাংলা উচ্চারণ দেখে আবীর অবাক হয়ে যায়মাতৃভাষা নয় তারপরও কি সুন্দর বাংলায় কথায় বলছেপ্রশ্নকর্তা আর্মিটি এত সুন্দর বাংলা কিভাবে শিখেছে তা জানতে ইচ্ছে করে আবীরেরকিন্তু কেন যেন প্রশ্নটা করা হয় না

তবে আজ রাস্তাঘাট একটু ফাঁকাঅন্য সময় হলে রিকসা নিতকিন্তু রাস্তাঘাট ফাঁকা দেখে হাঁটা শুরু করলও যাবে একটা হাসপাতালেরোগ দেখাতে কিংবা রোগী দেখতে নয়সেখানে আরো কয়েকজন আসবেসবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেবেসামনের কাজটা কিভাবে হবে সে ব্যাপারে আলোচনা করা হবে
রাস্তায় গাড়ী চলাচল একেবারেই কমতবে মাঝে দুই একটা সেনাবাহিনীর বড় বড় গাড়ী টহল দিচ্ছেগাড়ীগুলোর গতি খুব মন্থরগাড়ী গুলো যখন পাশ দিয়ে যায় তখন কেমন যেন ভয় ভয় করেএই বুঝি গাড়ী থামানো হলোকয়েকজন আর্মি কিছু বুঝার আগেই গাড়ীতে উঠিয়ে নিলোএরকম এখন প্রায় সময়ই হচ্ছেকোন কারণ ছাড়াই মানুষ ধরা হচ্ছেবিশেষ করে যুবক বয়সী ছেলেদেরফুয়াদ ভাইকে একবার এরকম ধরা হলোউনি শাহবাগ মোড় ক্রস করছিলেনযাবেন খালার বাসায়হঠাৎ করে কথা নেই বার্তা নেই তাকে ধরে আর্মির গাড়ীতে উঠানো হলোসাথে আরো পাঁচজন ছিলফুয়াদ ভাইয়ের ভাগ্য ভালোতাকে যে মেজরের কাছে নেওয়া হলো সে একটু দয়া দেখালযুদ্ধক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর মধ্যে এই ব্যাপারটা দেখা যায় নাদুই দিন পর ফুয়াদ ভাইকে ছেড়ে দেয়া হলোযদিও এটা অকল্পনীয় ব্যাপারযাদেরকে ধরা হয় তাদের বেশির ভাগকেই মেরে ফেলা হয়সে মেরে ফেলাও যেনতেন ভাবে নয়লাইন করে দাঁড় করানো হয়অত:পর সামনে থেকে ঠান্ডা মাথায় গুলি করে এক একজনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়কেউ যদি লাইন ভাঙে তাহলে তার খবর হয়ে যায়মরার সময় তাকে সীমাহীন কষ্ট দেওয়া হয়ফুয়াদ ভাইয়ের চোখের সামনে নাকি এরকম ভাবে দুই লাইনে ত্রিশজন করে মোট ষাট জনকে মারা হয়ফুয়াদ ভাই ফিরে আসার পর তাকে দেখতে গিয়েছিল আবীররাফুয়াদ ভাইকে চিনা যায় নাএই দুদিনে শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে

:
ফুয়াদ ভাই খুব কষ্ট দিয়েছে বুঝি?
:
আরে কষ্ট নাচোখের সামনে এভাবে মানুষ মারলে আর সুস্থ থাকা যায়আর্মিগুলো মানুষ মারার মধ্যে আনন্দ খুঁজতোকারো গলায় গুলি করত, কারো বুকেকারো বা মাথায় গুলি করে এবড়েথেবড়ে করে দেয়া হতোমগজগুলি ছিটকে গিয়ে লাইনে দাঁড়ানো অন্য মানুষগুলোর গায়ে যেয়ে পড়ততা দেখে পাকিস্তানী আর্মিদের উল্লাস দেখে কে? যাদেরকে পরে মারা হবে এই চিন্তায় আলাদা রাখা হতো তাদেরকেও নিষ্ঠুর দৃশ্য গুলো দেখতে বাধ্য করা হতোএগুলো দেখে গা গুলিয়ে যেতচোখে অন্ধকার দেখতামহড় হড় করে বমি হতোঅথচ পানি পেতাম না বমির পর মুখ পরিষ্কার করারআমাদের এই আতঙ্ক আর্মি গুলো খুব উপভোগ করতলাইনে দাঁড় করিয়ে মানুষ মারার সময় আর্মি গুলো হলিডে মুডে থাকতমানুষ মারার মত কুৎসিত দৃশ্য যে এতো আনন্দদায়ক হতে পারে তা ঐ অসভ্য পাক আর্মিদের না দেখলে কখনো জানা হতো না

কথা গুলো শুনে আবীরের পেশী শক্ত হয়ে উঠেরক্ত গরম হয়ে যায়দাঁত কিড়মিড় করেএদেশের মধ্যেই দেশের ছেলেদের এভাবে মারা হচ্ছেআর ও কিনা কিছুই করতে পারছে না
:
তুমি বাঁচলে কিভাবে?

:
সে এক অলৌকিক ব্যাপারের মতোসেদিন লাইনে দাঁড় করানোর কথাএমন সময় এক মেজর আসেনবিভিন্ন জনকে দেখছিলেনহঠাৎ আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করেন, তোমার নাম কি? বললাম ফুয়াদ

:
তোমাকে কি বিদ্রোহীদের অবস্থান থেকে ধরে আনা হয়েছে?
:
না আমি আমার খালার বাড়ি যাচ্ছিলাম

মেজর সামনে গিয়ে আর্মিটির সাথে কি কথা যেন বললতারপর একজন আর্মিকে ডাক দিয়ে বললেন- এর বাঁধন খুলে দিয়ে আমার রুমে নিয়ে এস

মেজরের রুমে ঢুকতেই কলিংবেল টিপলেনএকজনকে নির্দেশ দিলেন বিভিন্ন খাবার আনতেআমার দিকে তাকিয়ে বললেন- তোমার মত আমার এক ভাই ছিলঠিক তোমার চেহারারবিমান বাহিনীতে ঢুকেছিলআমার ভাইটি খুব মেধাবী ছিলঅল্প সময়ের মধ্যে ও দুইটা কোর্স শেষ করে ফেলেকিন্তু ভাগ্য খারাপএক বিমান দূর্ঘটনায় মারা যায়তোমায় দেখে আমার ভাইয়ের কথা মনে পড়ছেওর নাম ছিল ইফতিআমার মা এখনও ইফতি আসার প্রতিক্ষায় আছেনওর কাপড় গুলো নিয়মিত ধুনপরিষ্কার কাপড়গুলোই বার বার নিজ হাতে ধুয়ে দেনইফতি আসলে কাপড়গুলো পড়বে বলে তার ধারণাতুমি এক্ষুণি চলে যাওএসময় ঘর থেকে কম বের হবেকোন সমস্যা হলে আমাকে জানাবাএই নাও আমার ঠিকানাএকটা কাগজে সুন্দর হস্তাক্ষরে লেখা ঠিকানাটা পকেটে ভরে নেয় ফুয়াদ
আসার সময় ফুয়াদ আবীরকে বলে আমার ভাগ্য ভালোনা হলে ঐদিন মেজরটি যদি না আসত তবে নির্ঘাত মরতে হতোযেনতেন মরা নয়পশুর মত মরা

সেদিন ফুয়াদের কাছ থেকে নির্যাতনের কথা গুলো শুনে আবীরের প্রতিশোধ স্পৃহা জেগে উঠেবাসায় এসেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেওর বন্ধু রফিক যে কিনা ওর সাথে একই ক্লাসে পড়ত সে ট্রেনিংয়ে গেছেযাওয়ার সময় আবীরকেও ডেকেছিলোআবীর রাজি হয় নি মা-বাবার ভয়েকিন্তু ফুয়াদের কথা গুলো শুনে আর কোন বাধা ও মানতে চায় নাসেদিনই রফিকের সন্ধানে বের হয়ওকে নিজের আগ্রহের কথা জানায়ওর সাথে গিয়ে চুপি চুপি পনের দিনের একটা ট্রেনিংও নিয়ে ফেলে

আবীর যখন হাসপাতালে পৌছে তখন সূর্যটা আকাশের ঠিক মধ্যখানেখুব গরম পড়ছেহাসপাতালটা পুরানোসামেনে বেশ কয়েকটি গাড়ি দাঁড়ানোহাসপাতালকে নিরাপদ জায়গা মনে করে অনেকে হাসপাতালের সামনেই গাড়ি পার্কিং করে রেখে গেছেআবীরদের মিলিত হওয়ার স্থান হাসপাতাল নির্ধারণ করার কারণ নিরাপত্তাকেউ যাতে সন্দেহ না করে এজন্য

হাসপাতালের সামনে একটা ছেলে পিয়াজু বিক্রী করছিলোআবীরের খেতে ইচ্ছে করছেপিয়াজু অলাকে ডাক দিলো

:
চারটা পিয়াজু দেয়তো

একটা কাগজের প্যাকেটে চারটা পিয়াজু ভরে আবীরের হাতে দিলআবীর তা নিয়ে টাকার জন্য পকেটে হাত দিতেই ভীমরি খেলম্যানিব্যাগটা আনা হয়নিপ্যান্টের পিছনের পকেটটাতে ও মানিব্যাগ রাখেআনতে মনে নিভাগ্য ভাল রিকসা করে আসেনিতাহলে ভাড়া দিতে গিয়ে ফ্যাসাদে পরে যেতআবীরের ভুলো মনএই ধরণের ভুল ওর মাঝে মাঝেই হয়ট্রেনিং নেওয়ার সময় রিয়াজ ভাই ব্যাপারটা জানতে পেরে তা নিয়ে হাসি ঠাট্টা করতেনবলতেন, আবীর তোমার যে ভুলো মন, তাতে হয়ত দেখা যাবে তুমি যুদ্ধক্ষেত্রেশত্রুর সামনেঅথচ তোমার অস্ত্র তোমাদের ঘর পাহাড়া দিচ্ছেএ কথা শুনে সবাই হেসে ফেলতোএতো হালকা গড়নের রিয়াজ ভাইশরীরে এতটুকু মাংসঅথচ কি শক্তিউনি যখন প্রথম আবীরকে জড়িয়ে ধরেনতখন তার হাতের চাপে আবীরের শরীরের সব হাড্ডি ভেঙে যাওয়ার উপক্রমপরে আবীর জেনেছিলো, যে কেউ ট্রেনিং নিতে আসলে শক্তি পরীক্ষা করার জন্য নাকি তিনি এতজোরে চাপ দেন

আবীর পিয়াজুর প্যাকেটটা ফেরত দিতে যাবে এসময় দেখা গেলে রফিক আসছেওকে অন্যরকম দেখাচ্ছেচোখে সানগ্লাস লাগানোর কারনেই হয়তওকে দেখে আবীর বলল- দোস্ত ভাংতি টাকা হবে? পিয়াজু নিয়েছিঅথচ মানিব্যাগ রেখে এসেছি বাসায়
রফিক হেসে উঠেপিয়াজুর দাম মিটিয়ে দেয়

ওরা দুজন পিয়াজু চিবোতে চিবোতে কাউন্টারের সামনে এসে দাঁড়ায়কাউন্টারের সামনে সুমন আগেই দাঁড়ানো ছিল

রফিক জিজ্ঞেস করে, তারেক আসেনি
সুমন জানায়, তারেক ও আমি এক সাথেই এসেছিতোদের আসতে দেরি হচ্ছে বিধায় ও একটু বাইরে গেছে সিগারেট আনতে

টিকেট কাউন্টারের সামনে ভীড় নেইদুপুর বেলাডাক্তাররা একটু পরেই লাঞ্চে যাবেতাই এ মুহূর্তে কেউ টিকেট নিতে আগ্রহী নয়
সুমনকে দেখতে শুকনা লাগছে

আবীর ও রফিকের ঢাকা শহরেরই বাসিন্দা হলেও সুমন ও তারেক এসেছে বাইরে থেকেসুমন ফেনীর পরশুরাম থেকেআর তারেক কুমিল্লার ঠাকুরপাড়া থেকেদুজন আলাদা দুই বাসায় উঠেছে
আবীর সুমনকে জিজ্ঞেস করে, কিরে সুমন তোকে শুকনা লাগছে কেন? যে বাসায় উঠেছিস ঐখানে ঠিকভাবে খেতে টেতে দেয় না নাকি?

রফিক ও বলে: আমারও তাই মনে হচ্ছেরিয়াজ ভাই থেকে শুনেছি সুমন যে বাসায় উঠেছে সেটার কর্তা নাকি সাংঘাতিক দেশ প্রেমিকতার বাসায় থেকে সুমনের এই অবস্থা কেন হবে তা বুঝতে পারছি না
সুমন বলে, বাড়ির কর্তা শুধু দেশপ্রেমিক নয়মারাত্মক সন্দেহ প্রবণ ও বটেএকদিন রাত দুইটায় এসে হাজিরআমি ঘুমাচ্ছিলামভদ্রলোক মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন- বাবা একটু উঠবা? কে যেন দরজা ধাক্কাচ্ছে? তুমি কষ্ট করে পাকঘরের দরজা দিয়ে বাইরে গিয়ে দাঁড়াওআমি দেখি কে এসেছেসময় খারাপবলাতো যায় নাআর্মি কিনা কে জানেআমি আর্মির কথা শুনে ধড়মড় করে উঠে বসলামপাকঘরের দরজা দিয়ে বাহির হইআফসোস হচ্ছিলো সুন্দর ঘুমটা ভেঙে যাওয়ায়যেখানে দাড়িয়েছি সেখানে শুধু মশা আর মশাএত মশা দেখে ভয় লাগছিলো শরীরে রক্ত নিয়ে ফিরতে পারবো কিনা? মশার কামড় সহ্য করে গাছের আড়াল করে দাঁড়িয়ে আছিআওয়াজ হবে এই ভয়ে মশাও মারতে পারছি নামশারাও স্বাধীনভাবে কামড়াচ্ছেতো কামড়াচ্ছেসময় কাটানোর জন্য আমি পাকিস্তানী আর্মিদের চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করছিলামকিছুক্ষণ পর ভদ্রলোক হাসিমুখে এসে বলল- চলে আসোদরজার বাইরে কাউকে দেখলাম নাবাতাসে নড়েছে হয়তএবার দেখুন অবস্থাবাতাসের ভয়ে আমাকে কি কষ্টই না করতে হলো? তবে ভদ্রলোক ভীষণ ভালোপ্রায় সময় এসে আমার সঙ্গে গল্প করেনতার গল্প শুনলে মনে হবে এই কয়েকদিনেই দেশ স্বাধীন হবেযদিও এটা দুরাশাতারপরও তার কথাগুলো শুনলে দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস চলে আসে দেশ শীঘ্রই স্বাধীন হবে

এরই মধ্যে তারেক চলে আসেওর হাতে সিগারেটতারেক রঙচঙের একটা গেঞ্জি পড়েছেভীষণ ফূর্তিবাজ ছেলে ওআমুদে প্রকৃতিরতারেক এমন ছেলে যে মরার আগ মুহূর্তেও হয়ত রসিকতা করতে ভুলবে নাআজরাইল আসলে হয়ত তাকে জিজ্ঞেস করবে আপনার হাত দুটো ধুয়ে এসেছেনতো? আমার পবিত্র আত্মা কেউ ময়লা হাতে ধরুক এটা আমি কোনমতেই চাই না

ওরা চারজনে হাসপাতালের দুতলায় গিয়ে উঠলোকরিডোর দিয়ে হেঁটে একেবারে কোণায় চলে আসলজায়গাটা নিরিবিলিসেখানে দাঁড়ালো ওরাকথা যা এখানে সেরে নিতে হবেতাদের এমন ভাবে থাকতে হবে যাতে কেউ দেখলে মনে করে কোন রোগী দেখতে এসেছে ওরা

তারেক হাতের সিগারেটটা ধরালোসেটা থেকে লম্বা একটা টান দিলওদেরকে গম্ভীরভাবে বলল- একটা সমস্যা হয়ে গেছেতা শুনে তিনজনই আঁতকে উঠলোক্যাম্প থেকে কয়েকটা প্যাকেট আনার দায়িত্ব ছিল তারেকের উপরপ্যাকেটগুলোতে বোম থাকবেএখন তারেক যদি সমস্যায় পড়ে তাহলে হাতে নেওয়া মিশনটা চালানো যাবে নাঅনেক দিন ধরে পরিকল্পনা করে বহু ভেবে চিন্তে একটা মিশন হাতে নেওয়া হয়পরিকল্পনামত একটা মিশন না চালানো মানে অনেক বড় ক্ষতি হওয়া
আবীর বলল- সমস্যাটা কি? ক্যাম্প থেকে প্যাকেট গুলো কি তুই ঠিকমত আনতে পারস নি?
:
তা পেরেছিএনে আমি যেখানে উঠেছি ঐই বাসায় রেখেছিও

একথা শুনে সকলের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসলভয় পেয়ে গিয়েছিল ওরাভেবেছিল প্যাকেট গুলো ক্যাম্প থেকেই আনা যায়নি

:
তাহলে সমস্যার কথা বললি যে
:
ঘরেই সমস্যাপ্যাকেট গুলো একটা বাজারের ব্যাগে করে ঘরে এনেছিএমন ভাবে এনেছি কেউ বিন্দু মাত্র সন্দেহ করতে পারেনিতবে ঘরে আসার পরই বিপত্তিটা হয়ব্যাগটি ঐ ঘরের বড় মেয়েটা দেখতে পায়আমি বাথরুম থেকে এসে দেখি ব্যাগ নেইতা দেখে মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড়মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করতেই অস্বীকার করলপরে বেশি চাপা চাপি করাতে বলল, ও নিয়ে অন্য জায়গায় রেখেছেবলছে তা নাকি ফেরত দেবে না

আবীর তা শুনে একটু বিরক্ত হলবলল- এইতো দেখি মহা সমস্যামেয়েটা বোমগুলো নিয়ে করবেটা কি?

তারেকের একটা সিগারেট টানা শেষ হয়েছেআরেকটা ধরিয়েছে ওবলল- মেয়েটা কিছু করবে নাওর ধারণা হয়েছে বোমগুলো ব্যবহার করতে গিয়ে আমার মৃত্যু হবেযাতে আমি না মরি সেজন্যই নাকি সে এই ব্যবস্থা নিয়েছে

:
তুই ওকে বলিস নি এগুলো তুই ব্যবহার করবিব্যবহার করার দায়িত্ব অন্যজনের
:
বলি নি মানেএকশো বার বলেছিএমনও বলেছি আমি বোমা ব্যবহার করতেই জানি নাআক্রমণ করাতো দূরের কথাকিন্তু মেয়েটা কিছুতেই বিশ্বাস করে নাআমি নাকি ওকে মিথ্যা বলছি
সুমন চুক চুক করে বলে, হায়রে প্রেমভাগ্য ভাল আমি যে ঘরে উঠেছি সেখানে কোন কন্যা সন্তান নেইঝামেলা মুক্তআমার মনে হচ্ছে তারেককে মেয়েটা বিয়ে না করে ছাড়বে নাতারেকের যুদ্ধ বোধ হয় এখানেই শেষতারেক মেয়েটা দেখতে কেমনরেখুব সুন্দর নিশ্চয়তুইও শালা ভালোই মজেজিসমেয়েটার কথা বলতে গিয়ে লাল হয়ে যাচ্ছিস

রফিক ধমক দিয়ে উঠেএগুলো এখন বাদ দেয়অপ্রয়োজনীয় কথা বলার জন্য অনেক সময় পাওয়া যাবেএখন দেখছি মহা সংকটে পড়ে গেলামঅন্য কেউ হলে ভয় দেখিয়ে নিয়ে আসা যেতকিন্তু নিয়েছে মেয়ে মানুষেআরো আবেগের বশেঐগুলো উদ্ধার করা যে অনেক কষ্ট হবে তা আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছিএম্নে ঝামেলায় বাঁচি নাতার উপর বাড়তি ঝামেলাএই যুদ্ধের সময় মেয়েগুলোর আর খেয়ে দেয়ে যেন কাজ নেই

সমস্ত মেয়ে জাতির উপর রফিকের ক্ষোভ গিয়ে পড়ে

আবীর এতক্ষণ ভাবছিলোও দলের অধিনায়কএটা ওর দ্বিতীয় মিশনএর আগের মিশনটা চালিয়েছিল এক মফস্বল শহরেও বলল- এ ব্যাপারটা কালকে দেখলেও চলবেআমাদের হাতে আরো কিছু সময় আছেআমাদের উচিত বিচ্ছিন্ন ভাবে রিয়াজ ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ রাখাএক এক সময় এক একজন ওনার কাছে যাবআমরা গেলে ওনারও সুবিধাআমাদের যেহেতু প্রশিক্ষণ আছে তাই নতুনদের শেখাতে পারবফলে আমাদের এক প্রকার প্র্যাকটিসও হয়ে যাবেরিয়াজ ভাইয়ের উপরও চাপ কম পড়বে
হঠাৎ করে দরজা খোলার আওয়াজ হলদরজার রঙ সাদাদেয়ালের রঙের সাথে মিশে গেছে বিধায় তারা এখানে যে দরজা আছে তা খেয়াল করে নিদরজা খুলে যে বের হল তা দেখতে তারা মোটেই প্রস্তুত ছিল না

সাদা শাড়ি পরামাথা টুপি দেওয়া হাসপাতালের নার্সবয়স একেবারে কমচেহারা এখনও বালিকা সুলভনতুন ঢুকেছে হয়তঅসম্ভব সুন্দরএই ধরণের নার্স দেখলে যে কারো-ই ইচ্ছে হবে রোগী হয়ে যেতে

আমার ধারণা যদি ভুল না হয় তবে আমি নিশ্চিত ভাবে বলছি আপনারা মুক্তিযোদ্ধা
কথাটি মিষ্টি গলায় বলেই হাসলওযেন তাদের দুষ্টামিটা ধরে ফেলেছে
মেয়েটার কথা শুনে ওরা চারজনই চমকে উঠল

:
চমকাবেন নাবেশ কিছুক্ষণ ধরে আমি আপনাদের কথা শুনছিলামনা শুনেও উপায় ছিল নাআপনারা যে আওয়াজে বলছিলেন সবগুলো ভিতরে স্পষ্ট ভাবে শুনা যাচ্ছিলোতবে ভয় পাওয়ার কিছু নেইআমার সাথে ভিতরের রুমে কেউ ছিল নাআর আমিও কাউকে যেয়ে বলছি না আপনারা যুদ্ধ করতে যাচ্ছেনতবে আপনাদের আরো সাবধান হওয়া উচিঠএভাবে চললেতো ধরা খেয়ে যাবেনআমিও চাই এদেশ স্বাধীন হোক

ফিনাইলের গন্ধ আসছেগন্ধটা খুউব অস্বস্তিদায়কমাথা ধরে যাবে মত অবস্থাদরজা বন্ধ থাকায় এতক্ষণ গন্ধটা তীব্রভাবে উপলব্ধি হয়নিদরজাটা খোলা থাকায় তা তীব্র ভাবে আসছে
আবীর বলল- দরজাটা কি একটু বন্ধ করে দেওয়া যায়ফিনাইলের গন্ধটা ভালো লাগছে নাগন্ধে মাথা ঝিম হয়ে আ