সকাল বেলায়
মোবাইলের ডিজিটাল অক্ষরের ডিজিট গুলোতে সময় ঘন্টায় ৮ ও পার হয় নি। এ সময় ফোন। এত সকালে টিটু উঠে না। মোবাইলের রিং য়ে উঠতে হলো। সানিজার ফোন।
ঘুম ঘুম গলায় এ পাশ থেকে টিটু বলে- হ্যালো।
: গলা পরিষ্কার কর। আগে ঘুম বন্ধ কর। ঘুম ঘুম গলা অসহ্য লাগছে।
কড়া নির্দেশ।
ঘুম ঘুম গলায় এ পাশ থেকে টিটু বলে- হ্যালো।
: গলা পরিষ্কার কর। আগে ঘুম বন্ধ কর। ঘুম ঘুম গলা অসহ্য লাগছে।
কড়া নির্দেশ।
টিটু স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে। বলে, কি হয়েছে তোমার? মন খারাপ?
: তুমি দেখি এখনও ঘুম ঘুম গলায় কথা বলছো। এর পরে যদি তোমার থেকে আসা একটা শব্দতে ঘুম ঘুম গন্ধ থাকে তাহলে আমি আর কথা বলব না। ডাইরেক্ট ফোন রেখে দিবো। তুমিও কল দিতে পারবা না। লক করব নাম্বার।
এবার পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যায় টিটু। সারিজা কোন কারণে রেগে আছে হয়ত। ভাবতে চেষ্টা করে কাল এমন কি করছে যাতে রাগ করেছে, না সেরকম কিছুতো মনে পড়ছে না। হাসি মুখেই তো বিদায় নিয়েছে। যাওয়ার সময় নাকে একটা দুষ্টামি করে কিল মেরেছিল। নাকটা নিয়ে প্রায়ই সময় মজা করে সারিজা। টিটুর নাকটা একটু মোটা। বোঁচা নাক যেটাকে বলা হয় সেরকম। টিটু বুঝতে পারে না কি হলো? বাসায় কোন সমস্যা হয় নাই তো?
গলা যতটুকু পারে তার চেয়ে বেশি স্বাভাবিক করে বলে, তুমি চাইলে ঘুম দেওয়া বন্ধ করে দেব। তোমার জন্য সামান্য ঘুম বাদ দিতে পারবো না? কি ভাবো তুমি আমাকে?? দেখো তুমি মানা করে দেখো। তুমি মানা করলেই আমি আর ঘুমাবো না। একবার হুকুম দিয়েই দেখো।
সারিজা বিরক্ত গলায় বলে, হেয়াঁলী রাখো। সাত সকালে তোমাকে যে কারণে ঘুম ভাঙিয়েছি তা বলছি।
: বলো, আমি শুনছি।
: উত্তরে হ্যা অথবা না বলবা। কোন ব্যাখ্যা দাঁড় করাবার চেষ্টা করবা না। হ্যা হলে হ্যা না হলে না। ঠিক আছে তো?
: আরে আগে প্রশ্ন করো।
: তুমি কি আজ আমাকে বিয়ে করতে পারবে কাজী অফিসে গিয়ে। আমার ফ্যামিলির কেউ না জানে এভাবে করতে হবে। ব্রিটেন প্রবাসী যে ছেলের কথা বলেছিলাম তার দেখতে আসার কথা হচ্ছে......
ওরা কখন আসবে? জানতে চায় টিটু।
: সেটা তোমাকে জানতে হবে না। তোমাকে জিজ্ঞেস করছি বিয়ে করতে পারবে কি পারবে না। হ্যা অথবা না বলো।
: অবশ্যই পারবো।
: তাহলে বলো কখন বের হবো? ঘর থেকে বের হয়ে কোথায় আসব? কোন কাজী অফিসে?
: কিন্তু একটু সমস্যা আছে, তোমার বিয়ের বয়স এখনও হয় নি।
এ কথা শুনে রেগে যায় সারিজা। তোমার বিয়ে করার ইচ্ছে নাই সেটা বলো। বুঝছি তুমি ভয় পাচ্ছো। আমাকে বিয়ে করতে হবে না তোমার। সত্যি করে বলছি আমাকে তোমার বিয়ে করতে হবে না।
এই কথা বলেই ফট করে ফোন রেখে দেয় সারিজা।
টিটু কথা বলতে যায়। কিন্তু দেখে কথা শুনার আগেই সারিজা কেটে দিয়েছে।
সারিজার মোবাইলে কল করতে থাকে। বারং বার। প্রতিবারই এক নির্দয় মহিলা বলে, এ মুহূর্তে মোবাইল সংযোগ দেওয়া সম্ভব না। কল দিতে দিতে হাত ব্যাথা হয়ে যায় কিন্তু কোন লাভ হয় না। প্রতি বারই একই কথা শুনিয়ে দিচ্ছে মোবাইলটি। মাথার চুল ছিড়তে ইচ্ছে হচ্ছে টিটুর। কি দরকার ছিল বয়সের কথাটা তোলার। এ কারণে ভুল বুঝছে সারিজা। যে জেদী মেয়ে সারিজা একবার একটা সিদ্ধান্ত নিলে ঐ সিদ্ধান্ত থেকে ওকে টলানো অনেক কঠিন। তবে অনেক নরম মনের মেয়ে। এরকম নরম মনের মেয়ে এরকম জেদী হলো কিভাবে তা ঠিক ধরতে পারে না টিটু।
সারিজার সাথে যে করে হোক কথা বলতে হবে। এখন একটাই উপায় সারিজাদের এলাকায় যাওয়া। কিন্তু সেখানেও সমস্যা। এটা নিয়ে অনেক ঝামেলা হয়েছে। ঐ এলাকা টিটুর জন্য নিষিদ্ধ। কি করা যায়। যে করে হোক সারিজার সাথে কথা বলতে হবে। কিন্তু কিভাবে।
++++++++++++++++++++++++
০২
সারিজার সাথে কথা বলতেই হবে। পুরা পৃথিবী এখন হাতের মুঠোয় অথচ তারপরও সারিজার সাথে কথা বলার কোন উপায় নেই। এরকম ও যদি হয়!
কি করবে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না। সারিজার সাথে পরিচয় অদ্ভূত ভাবে। নিউমার্কেটে রাস্তা পার হচ্ছিলো। এক রিকসা ওর সামনে এসে কড়া ব্রেক কষল। রিকসা চাকার উপরে লোহাটায় টিটু ব্যথা পায়। তো রিকসা থামিয়ে রিকসা অলাকে এসময় চোখে পড়ে রিকসায় বসে এক মেয়ে। অপূর্ব সুন্দরী। রিকসা অলাকে শিক্ষা দেওয়ার কথা ভুলে যায় টিটু। যে রিকসায় এত সুন্দর মেয়ে চড়ে সে রিকসা অলাকে কোন ভাবেই মারা যায় না। মেয়েটি ভাবতে পারে রিকসা অলা দুর্বল বিধায় সাহসিকতা দেখাচ্ছে। কোন দরকার নেই। তার চেয়ে ক্ষমা দেখানোই উচিত। সে রিকসাঅলার প্রতি এবার কোমল স্বরে বলল, ঠিক আছে তুমি যাও। সামনে থেকে দেখে শুনে গাড়ী চালাবে।
এদিকে আরেকটা রিকসায় উঠে বসে টিটু। দেখা যাক মেয়েটি কোথায় যায়? রিকসা অলাকে বলে দেয় সামনের রিকসাঅলাটাকে ফলো করতে। জোয়ান রিকসা অলা। সে মহাখুশী। সামনে রিকসা অলাকে ফলো করার জন্য পারলে সে প্রাইভেট কারকে ওভারটেক করে।
বেশ কয়েক বার ট্রাফিক জ্যাম এবং অন্য গাড়ির কারণে সামনের রিকসাটা আড়াল হলেও টিটুর ভাগ্য ভাল ছিল। শেষ পর্যন্ত রিকসার সাথে সাথে গন্তব্যে পৌছল। কাজী পাড়া বাসা। তা রিকসা থেকে মেয়েটি নেমে বাসায় দাঁড়ালো। ভাড়া দিচ্ছিলো। টিটু ভয় পাচ্ছিলো তাকে দেখে ফেলল নাকি। সে রিকসা অলাকে তাড়াতাড়ি পার হয়ে যেতে বলল। আর নিজে জড়সড় হয়ে বসে আছে। কোন দিকে না তাকিয়ে। ভাবটা এমন ও কাউকে না দেখলে কেউ ওকে দেখবে না।
যা ভয় করছিল তাই হলো। পার হচ্ছিলো এসময় মেয়েটি ডাক দিল। এই রিকসা থামো।
রিকসা থামলো।
: এই যে জনাব আমার পিছে পিছে চোরের মত এতদূর আসলেন কেন?
টিটুর মুখে কোন কথা নেই। অনেক নার্ভাস ফিল করছে।
ঐ সময় তো ঠিকই রিকসা অলাকে মারতে যাচ্ছিলেন। যখন গাড়ীতে আমাকে দেখলেন দেখলাম চুপসে গেছেন। মেয়ে দেখে মারার সাহস হারায় ফেললেন তাই না। এত ভীতু কেন? রিকসা অলার তো ঠিকই দোষ ছিল। দেখতেছে আপনি পার হচ্ছেন। তারপর ও আপনার গায়ের উপর রিকসা তুলে দিতে লাগছিল। নিজেকে বড় দেখানোর জন্যই মারেন নাই। তাই না। একটা বকা পর্যন্ত তো দিলেন না। এত ভীতু কেন আপনি।
: আসলে আপনাকে দেখে আর রিকসা অলাকে কিছু বলতে ইচ্ছে হলো না।
আমতা আমতা করে বলল টিটু।
: কেন কেন?
হেসে উঠল সারিজা। আরে এই মেয়ে তো অনেক সুন্দর হাসতে পারে। এত সুন্দর করে মানুষ হাসে কেমনে?
: আরে দেখি কারণই বলছেন না। আপনি আসলে ভীতু।
: আমি ভীতু না।
শুনে আবার হেসে উঠে সারিজা। সুন্দর সে হাসি। আপনি ভীতু না বুঝলেন কেমনে?
: ভীতু হলে আপনার পিছে পিছে আসার সাহস পেতাম না।
বুঝছি। ঠিক আছে যান আপনি অনেক সাহসী। এখন চলে যান। এতক্ষণ খেয়াল ছিল না রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলছি। বাসায় গিয়ে সাহসীকতার অনুশীলনী করেন।
এই কথা বলে ফট করে বাসায় ঢুকে যায় সারিজা। পিছে একবার তাকায় না পর্যন্ত।
বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর সেখান থেকে ফিরে আসে টিটু। জীবনে এই প্রথম কোন মেয়েকে এরকম ভাল লাগল। অথচ মেয়েটি পাত্তাই দিল না। বয়সে তো ৪/ ৫ বছর কম হবে। বড়দের সাথে একটু সম্মান করে কথা বলবে তা করে নি। তারপরও এই মেয়েকে এত ভাল লাগছে কেন?
সারিজার সাথে কথা বলতেই হবে। পুরা পৃথিবী এখন হাতের মুঠোয় অথচ তারপরও সারিজার সাথে কথা বলার কোন উপায় নেই। এরকম ও যদি হয়!
কি করবে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না। সারিজার সাথে পরিচয় অদ্ভূত ভাবে। নিউমার্কেটে রাস্তা পার হচ্ছিলো। এক রিকসা ওর সামনে এসে কড়া ব্রেক কষল। রিকসা চাকার উপরে লোহাটায় টিটু ব্যথা পায়। তো রিকসা থামিয়ে রিকসা অলাকে এসময় চোখে পড়ে রিকসায় বসে এক মেয়ে। অপূর্ব সুন্দরী। রিকসা অলাকে শিক্ষা দেওয়ার কথা ভুলে যায় টিটু। যে রিকসায় এত সুন্দর মেয়ে চড়ে সে রিকসা অলাকে কোন ভাবেই মারা যায় না। মেয়েটি ভাবতে পারে রিকসা অলা দুর্বল বিধায় সাহসিকতা দেখাচ্ছে। কোন দরকার নেই। তার চেয়ে ক্ষমা দেখানোই উচিত। সে রিকসাঅলার প্রতি এবার কোমল স্বরে বলল, ঠিক আছে তুমি যাও। সামনে থেকে দেখে শুনে গাড়ী চালাবে।
এদিকে আরেকটা রিকসায় উঠে বসে টিটু। দেখা যাক মেয়েটি কোথায় যায়? রিকসা অলাকে বলে দেয় সামনের রিকসাঅলাটাকে ফলো করতে। জোয়ান রিকসা অলা। সে মহাখুশী। সামনে রিকসা অলাকে ফলো করার জন্য পারলে সে প্রাইভেট কারকে ওভারটেক করে।
বেশ কয়েক বার ট্রাফিক জ্যাম এবং অন্য গাড়ির কারণে সামনের রিকসাটা আড়াল হলেও টিটুর ভাগ্য ভাল ছিল। শেষ পর্যন্ত রিকসার সাথে সাথে গন্তব্যে পৌছল। কাজী পাড়া বাসা। তা রিকসা থেকে মেয়েটি নেমে বাসায় দাঁড়ালো। ভাড়া দিচ্ছিলো। টিটু ভয় পাচ্ছিলো তাকে দেখে ফেলল নাকি। সে রিকসা অলাকে তাড়াতাড়ি পার হয়ে যেতে বলল। আর নিজে জড়সড় হয়ে বসে আছে। কোন দিকে না তাকিয়ে। ভাবটা এমন ও কাউকে না দেখলে কেউ ওকে দেখবে না।
যা ভয় করছিল তাই হলো। পার হচ্ছিলো এসময় মেয়েটি ডাক দিল। এই রিকসা থামো।
রিকসা থামলো।
: এই যে জনাব আমার পিছে পিছে চোরের মত এতদূর আসলেন কেন?
টিটুর মুখে কোন কথা নেই। অনেক নার্ভাস ফিল করছে।
ঐ সময় তো ঠিকই রিকসা অলাকে মারতে যাচ্ছিলেন। যখন গাড়ীতে আমাকে দেখলেন দেখলাম চুপসে গেছেন। মেয়ে দেখে মারার সাহস হারায় ফেললেন তাই না। এত ভীতু কেন? রিকসা অলার তো ঠিকই দোষ ছিল। দেখতেছে আপনি পার হচ্ছেন। তারপর ও আপনার গায়ের উপর রিকসা তুলে দিতে লাগছিল। নিজেকে বড় দেখানোর জন্যই মারেন নাই। তাই না। একটা বকা পর্যন্ত তো দিলেন না। এত ভীতু কেন আপনি।
: আসলে আপনাকে দেখে আর রিকসা অলাকে কিছু বলতে ইচ্ছে হলো না।
আমতা আমতা করে বলল টিটু।
: কেন কেন?
হেসে উঠল সারিজা। আরে এই মেয়ে তো অনেক সুন্দর হাসতে পারে। এত সুন্দর করে মানুষ হাসে কেমনে?
: আরে দেখি কারণই বলছেন না। আপনি আসলে ভীতু।
: আমি ভীতু না।
শুনে আবার হেসে উঠে সারিজা। সুন্দর সে হাসি। আপনি ভীতু না বুঝলেন কেমনে?
: ভীতু হলে আপনার পিছে পিছে আসার সাহস পেতাম না।
বুঝছি। ঠিক আছে যান আপনি অনেক সাহসী। এখন চলে যান। এতক্ষণ খেয়াল ছিল না রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলছি। বাসায় গিয়ে সাহসীকতার অনুশীলনী করেন।
এই কথা বলে ফট করে বাসায় ঢুকে যায় সারিজা। পিছে একবার তাকায় না পর্যন্ত।
বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর সেখান থেকে ফিরে আসে টিটু। জীবনে এই প্রথম কোন মেয়েকে এরকম ভাল লাগল। অথচ মেয়েটি পাত্তাই দিল না। বয়সে তো ৪/ ৫ বছর কম হবে। বড়দের সাথে একটু সম্মান করে কথা বলবে তা করে নি। তারপরও এই মেয়েকে এত ভাল লাগছে কেন?
++++++++++++++++++++++++++++
০৩
সকালের নাস্তা টেবিলে দেওয়া হয়েছে।
: টিটু খেতে আয়। আজ এত সকালে উঠলি কেমনে? তোকে তো ডাকতে ডাকতে পুরা আধাঘন্টা যায়, উঠবি উঠবি করে উঠছ না। কথাগুলো বলতে বলতে ছেলের রুমে আসেন।
ছেলের মুখ দেখে আশ্চর্য হন। বিলকিস বেগম।
: কিরে তোর মুখের এই অবস্থা কেন? এই সকালে কি হলো। মন খারাপ কেন?
মা কিছু হয় নি, এম্নেই। এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে টিটু।
বললেই হলো। বুঝছি তোর মন অনেক খারাপ। কারণ খুলে বল। মনের মধ্যে কথা রেখে দিলে তো মন খারাপ বাড়েই।
টিটু চিন্তা করে। মা কে কোন ভাবেই বলা যাবে না বিষয়টা। যদিও মায়ের কাছে বন্ধুর মত সব শেয়ার করা যায়। তারপরও এই একটা ব্যাপার বলা যাবে না। কি বলা যায়। কি বলা যায় চিন্তা করে টিটু।
: কিরে কিছু বলছিস না কেন?
: না মা তেমন কিছু না। এম্নেই মন খারাপ।
: তেমন কিছু না হলে খেতে আয়।
: আম্মু তুমি কি রাগ করছো আমার কথায়? এভাবে গম্ভীর ভাবে খেতে ডাকছো কেন?
কথা শুনে বিলকিস বেগম হেসে উঠেন। একটাই ছেলে। এই ছেলের সাথে রাগ করা যায়?
আরে না রাগ করি নাই। তুই বলছিস না তো এজন্য একটু রাগের অভিনয় করলাম। বলে হেসে দেন বিলকিস বেগম।
: ঠিক আছে বলতে না চাইলে বলতে হবে না। আমি জানতে চাওয়ায় তুই অনেক বিপদে পড়ছিস বুঝতে পারছি তোর চেহারা দেখেই। যা আমি জানতে চাচ্ছি না। এবার অন্তত হাস।
টিটু হেসে দেয়। টিটুর মনে হয় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ্য মা ওর।
মা রুম ছেড়ে চলে যান। বাবা অফিসে যাবেন। বাবাকে নাস্তা দিতে হবে।
টিটু নিজের ডায়েরীটা নিয়ে বসে। হাতে কলম নেয়। ওর একটা অদ্ভূত স্বভাব আছে। মন খারাপ হলে ডায়েরী লেখা শুরু করে। যার কারণে মন খারাপ তাকে উদ্দেশ্য করে ডায়েরী লিখে। যদিও কাউকে দেখায় না।
কলমের ঢাকনা খুলে লেখা শুরু করে। প্রথমেই চিঠির নাম্বার দেয়। চিঠির নাম্বার হচ্ছে ৭৬। তার মানে তার বেশি মন খারাপ হয়েছে ৭৬ বার।
সারিজা,
কেমন আছো। নিশ্চয় ভালো। তোমার জন্য আবার চিঠি লিখতে বসলাম। এর আগেও বেশ কয়েকটা লিখেছি। যদিও তুমি পাও নি একটাও। পাবেই বা বা কেমনে? তুমি তো জানোই না আমি তোমাকে চিঠি লিখি এই ব্যাপারটা।
তুমি এভাবে ফোন রেখে দিলে কেন? তোমাকে তো একটা সমস্যার কথা বললাম শুধু। তুমি অন্যভাবে নিলে কেন? তোমাদের এলকায় যাওয়ার অপরাধে ছাদে নিয়ে তোমার বড় ভাই আমাকে যেদিন মেরেছিল সেদিনও এত খারাপ লাগে নি। ঐসময় ভেবেছিলাম বড় ভাই মারতেই পারেন। ছোট বোনের সাথে কে না কে ফাজলামী করছে এটা ভেবে। বড় ভাই নিশ্চয় খারাপ কিছু চান না। আমার ছোট বোন নাই। ছোট বোন কি কোন বোনই নাই। আমার ছোট বোনের সাথে কেউ এরকম ভালোবাসাসি করলে আমিও কি মাইর দিতাম। চিন্তা করছি। তুমি সেদিন এত কাঁদছিলে কেন? তোমার কান্না দেখে বেশি মারতে পারেন নাই বড় ভাই। যখন আমাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হলো আমি তো ভেবেছিলাম হাড্ডি টাড্ডি ভেঙে দেওয়া হবে। আচ্ছা আমাকে যে ছাদে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তা তুমি জানলে কিভাবে।
তোমার ভাই মারায় একদিকে ভালোই হয়েছে। তুমি আমার সব কিছুতে তাচ্ছিল্য করতে। তোমার ভাই যেদিন মারল সেদিন থেকে তাচ্ছিল্য করা বন্ধ করে দিলে। সেদিন থেকেই আমার প্রতি তোমার একটা আবেগ জন্মায়ছিলো। এখন মনে হচ্ছে সেদিন আমাকে আরো বেশি মারলে ভালো হতো। তোমার আবেগ আরো বাড়ত। অন্তত হঠাৎ আমাকে এত কষ্ট দিয়ে ফোন রেখে দিতে পারতে না।
আবার ভাইবো না, আমার প্রতি তোমার আবেগ কম আছে তা বলছি। যে মেয়ে একদিনে কোন ছেলেকে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিতে পারে সে ছেলেটির প্রতি মেয়েটির আবেগের বিষয়ে প্রশ্ন করা অবান্তর। মাঝে মাঝে তোমার আবেগ দেখে অবাক হই। মানুষ এত বেশি ভালবাসতে কেমনে পারে?
তোমার অনুমতি ছাড়া তোমার এলাকায় আমি কখনো যেতে পারবো না এ ধরণের কঠিন এক ওয়াদায় বন্দী করলে আমাকে। হয়ত বড় ভাইয়ের কাছ থেকে যেন কখনো অপমানের শিকার না হতে হয় সেজন্য। কিন্তু এখন যে তোমার সাথে কথা বলা খুব দরকার।
আচ্ছা মনে করো তোমার বিয়ে হয়ে গেল ঐ ব্রিটেন না টিট্রেন প্রবাসীর সাথে। তুমি কি সুখী হবে? মানুষ নাকি সব মানায় নিতে পারে। তুমিও হয়ত পারবা!!!
রাগ করছো না তো কঠিন এ কথাটা বলছি দেখে। আসলে কেন জানি ক্ষোভ হচ্ছে। ক্ষোভ থেকে বলছি। মনের কথা হচ্ছে তোমাকে অন্য কোন কারো সাথে আমি কোন ভাবেই মেনে নিতে পারবো না। কোন ভাবেই না। এ বলে রাখলাম।
সারিজা, সর্বশেষ তোমার সাথে দেখা হয়েছিল পরশুদিন বিকাল বেলায়। তখনও তো এ ব্যাপারে কিছু বলো নি। বরং মজা করেছো আমার নাক নিয়ে। বিয়ের পর আমার সাথে কোন বিষয়ে ঝামেলা হলে তোমার সুবিধা হবে বলে বলেছো। আমার নাকে নাকি ঘুষি মারবে, ঝামেলা হলেই। উপদেশ দিয়েছো আমার নাক যেন এখন থেকে অনুশীলন করে শক্ত করে ফেলি।
সকালের নাস্তা টেবিলে দেওয়া হয়েছে।
: টিটু খেতে আয়। আজ এত সকালে উঠলি কেমনে? তোকে তো ডাকতে ডাকতে পুরা আধাঘন্টা যায়, উঠবি উঠবি করে উঠছ না। কথাগুলো বলতে বলতে ছেলের রুমে আসেন।
ছেলের মুখ দেখে আশ্চর্য হন। বিলকিস বেগম।
: কিরে তোর মুখের এই অবস্থা কেন? এই সকালে কি হলো। মন খারাপ কেন?
মা কিছু হয় নি, এম্নেই। এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে টিটু।
বললেই হলো। বুঝছি তোর মন অনেক খারাপ। কারণ খুলে বল। মনের মধ্যে কথা রেখে দিলে তো মন খারাপ বাড়েই।
টিটু চিন্তা করে। মা কে কোন ভাবেই বলা যাবে না বিষয়টা। যদিও মায়ের কাছে বন্ধুর মত সব শেয়ার করা যায়। তারপরও এই একটা ব্যাপার বলা যাবে না। কি বলা যায়। কি বলা যায় চিন্তা করে টিটু।
: কিরে কিছু বলছিস না কেন?
: না মা তেমন কিছু না। এম্নেই মন খারাপ।
: তেমন কিছু না হলে খেতে আয়।
: আম্মু তুমি কি রাগ করছো আমার কথায়? এভাবে গম্ভীর ভাবে খেতে ডাকছো কেন?
কথা শুনে বিলকিস বেগম হেসে উঠেন। একটাই ছেলে। এই ছেলের সাথে রাগ করা যায়?
আরে না রাগ করি নাই। তুই বলছিস না তো এজন্য একটু রাগের অভিনয় করলাম। বলে হেসে দেন বিলকিস বেগম।
: ঠিক আছে বলতে না চাইলে বলতে হবে না। আমি জানতে চাওয়ায় তুই অনেক বিপদে পড়ছিস বুঝতে পারছি তোর চেহারা দেখেই। যা আমি জানতে চাচ্ছি না। এবার অন্তত হাস।
টিটু হেসে দেয়। টিটুর মনে হয় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ্য মা ওর।
মা রুম ছেড়ে চলে যান। বাবা অফিসে যাবেন। বাবাকে নাস্তা দিতে হবে।
টিটু নিজের ডায়েরীটা নিয়ে বসে। হাতে কলম নেয়। ওর একটা অদ্ভূত স্বভাব আছে। মন খারাপ হলে ডায়েরী লেখা শুরু করে। যার কারণে মন খারাপ তাকে উদ্দেশ্য করে ডায়েরী লিখে। যদিও কাউকে দেখায় না।
কলমের ঢাকনা খুলে লেখা শুরু করে। প্রথমেই চিঠির নাম্বার দেয়। চিঠির নাম্বার হচ্ছে ৭৬। তার মানে তার বেশি মন খারাপ হয়েছে ৭৬ বার।
সারিজা,
কেমন আছো। নিশ্চয় ভালো। তোমার জন্য আবার চিঠি লিখতে বসলাম। এর আগেও বেশ কয়েকটা লিখেছি। যদিও তুমি পাও নি একটাও। পাবেই বা বা কেমনে? তুমি তো জানোই না আমি তোমাকে চিঠি লিখি এই ব্যাপারটা।
তুমি এভাবে ফোন রেখে দিলে কেন? তোমাকে তো একটা সমস্যার কথা বললাম শুধু। তুমি অন্যভাবে নিলে কেন? তোমাদের এলকায় যাওয়ার অপরাধে ছাদে নিয়ে তোমার বড় ভাই আমাকে যেদিন মেরেছিল সেদিনও এত খারাপ লাগে নি। ঐসময় ভেবেছিলাম বড় ভাই মারতেই পারেন। ছোট বোনের সাথে কে না কে ফাজলামী করছে এটা ভেবে। বড় ভাই নিশ্চয় খারাপ কিছু চান না। আমার ছোট বোন নাই। ছোট বোন কি কোন বোনই নাই। আমার ছোট বোনের সাথে কেউ এরকম ভালোবাসাসি করলে আমিও কি মাইর দিতাম। চিন্তা করছি। তুমি সেদিন এত কাঁদছিলে কেন? তোমার কান্না দেখে বেশি মারতে পারেন নাই বড় ভাই। যখন আমাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হলো আমি তো ভেবেছিলাম হাড্ডি টাড্ডি ভেঙে দেওয়া হবে। আচ্ছা আমাকে যে ছাদে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তা তুমি জানলে কিভাবে।
তোমার ভাই মারায় একদিকে ভালোই হয়েছে। তুমি আমার সব কিছুতে তাচ্ছিল্য করতে। তোমার ভাই যেদিন মারল সেদিন থেকে তাচ্ছিল্য করা বন্ধ করে দিলে। সেদিন থেকেই আমার প্রতি তোমার একটা আবেগ জন্মায়ছিলো। এখন মনে হচ্ছে সেদিন আমাকে আরো বেশি মারলে ভালো হতো। তোমার আবেগ আরো বাড়ত। অন্তত হঠাৎ আমাকে এত কষ্ট দিয়ে ফোন রেখে দিতে পারতে না।
আবার ভাইবো না, আমার প্রতি তোমার আবেগ কম আছে তা বলছি। যে মেয়ে একদিনে কোন ছেলেকে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিতে পারে সে ছেলেটির প্রতি মেয়েটির আবেগের বিষয়ে প্রশ্ন করা অবান্তর। মাঝে মাঝে তোমার আবেগ দেখে অবাক হই। মানুষ এত বেশি ভালবাসতে কেমনে পারে?
তোমার অনুমতি ছাড়া তোমার এলাকায় আমি কখনো যেতে পারবো না এ ধরণের কঠিন এক ওয়াদায় বন্দী করলে আমাকে। হয়ত বড় ভাইয়ের কাছ থেকে যেন কখনো অপমানের শিকার না হতে হয় সেজন্য। কিন্তু এখন যে তোমার সাথে কথা বলা খুব দরকার।
আচ্ছা মনে করো তোমার বিয়ে হয়ে গেল ঐ ব্রিটেন না টিট্রেন প্রবাসীর সাথে। তুমি কি সুখী হবে? মানুষ নাকি সব মানায় নিতে পারে। তুমিও হয়ত পারবা!!!
রাগ করছো না তো কঠিন এ কথাটা বলছি দেখে। আসলে কেন জানি ক্ষোভ হচ্ছে। ক্ষোভ থেকে বলছি। মনের কথা হচ্ছে তোমাকে অন্য কোন কারো সাথে আমি কোন ভাবেই মেনে নিতে পারবো না। কোন ভাবেই না। এ বলে রাখলাম।
সারিজা, সর্বশেষ তোমার সাথে দেখা হয়েছিল পরশুদিন বিকাল বেলায়। তখনও তো এ ব্যাপারে কিছু বলো নি। বরং মজা করেছো আমার নাক নিয়ে। বিয়ের পর আমার সাথে কোন বিষয়ে ঝামেলা হলে তোমার সুবিধা হবে বলে বলেছো। আমার নাকে নাকি ঘুষি মারবে, ঝামেলা হলেই। উপদেশ দিয়েছো আমার নাক যেন এখন থেকে অনুশীলন করে শক্ত করে ফেলি।