সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

বয়সের ফাঁদ (বড় গল্প)



সকাল বেলায় মোবাইলের ডিজিটাল অক্ষরের ডিজিট গুলোতে সময় ঘন্টায় ৮ ও পার হয় নিএ সময় ফোনএত সকালে টিটু উঠে নামোবাইলের রিং য়ে উঠতে হলোসানিজার ফোন

ঘুম ঘুম গলায় এ পাশ থেকে টিটু বলে- হ্যালো
:
গলা পরিষ্কার করআগে ঘুম বন্ধ করঘুম ঘুম গলা অসহ্য লাগছে
কড়া নির্দেশ


টিটু স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করেবলে, কি হয়েছে তোমার? মন খারাপ?

:
তুমি দেখি এখনও ঘুম ঘুম গলায় কথা বলছোএর পরে যদি তোমার থেকে আসা একটা শব্দতে ঘুম ঘুম গন্ধ থাকে তাহলে আমি আর কথা বলব নাডাইরেক্ট ফোন রেখে দিবোতুমিও কল দিতে পারবা নালক করব নাম্বার

এবার পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যায় টিটুসারিজা কোন কারণে রেগে আছে হয়ত ভাবতে চেষ্টা করে কাল এমন কি করছে যাতে রাগ করেছে, না সেরকম কিছুতো মনে পড়ছে নাহাসি মুখেই তো বিদায় নিয়েছেযাওয়ার সময় নাকে একটা দুষ্টামি করে কিল মেরেছিলনাকটা নিয়ে প্রায়ই সময় মজা করে সারিজাটিটুর নাকটা একটু মোটাবোঁচা নাক যেটাকে বলা হয় সেরকমটিটু বুঝতে পারে না কি হলো? বাসায় কোন সমস্যা হয় নাই তো?

গলা যতটুকু পারে তার চেয়ে বেশি স্বাভাবিক করে বলে, তুমি চাইলে ঘুম দেওয়া বন্ধ করে দেবতোমার জন্য সামান্য ঘুম বাদ দিতে পারবো না? কি ভাবো তুমি আমাকে?? দেখো তুমি মানা করে দেখোতুমি মানা করলেই আমি আর ঘুমাবো নাএকবার হুকুম দিয়েই দেখো

সারিজা বিরক্ত গলায় বলে, হেয়াঁলী রাখোসাত সকালে তোমাকে যে কারণে ঘুম ভাঙিয়েছি তা বলছি

:
বলো, আমি শুনছি

:
উত্তরে হ্যা অথবা না বলবাকোন ব্যাখ্যা দাঁড় করাবার চেষ্টা করবা নাহ্যা হলে হ্যা না হলে নাঠিক আছে তো?
:
আরে আগে প্রশ্ন করো

:
তুমি কি আজ আমাকে বিয়ে করতে পারবে কাজী অফিসে গিয়েআমার ফ্যামিলির কেউ না জানে এভাবে করতে হবেব্রিটেন প্রবাসী যে ছেলের কথা বলেছিলাম তার দেখতে আসার কথা হচ্ছে......

ওরা কখন আসবে? জানতে চায় টিটু

:
সেটা তোমাকে জানতে হবে নাতোমাকে জিজ্ঞেস করছি বিয়ে করতে পারবে কি পারবে নাহ্যা অথবা না বলো

:
অবশ্যই পারবো

:
তাহলে বলো কখন বের হবো? ঘর থেকে বের হয়ে কোথায় আসব? কোন কাজী অফিসে?

:
কিন্তু একটু সমস্যা আছে, তোমার বিয়ের বয়স এখনও হয় নি

এ কথা শুনে রেগে যায় সারিজাতোমার বিয়ে করার ইচ্ছে নাই সেটা বলোবুঝছি তুমি ভয় পাচ্ছোআমাকে বিয়ে করতে হবে না তোমারসত্যি করে বলছি আমাকে তোমার বিয়ে করতে হবে না

এই কথা বলেই ফট করে ফোন রেখে দেয় সারিজা

টিটু কথা বলতে যায়কিন্তু দেখে কথা শুনার আগেই সারিজা কেটে দিয়েছে

সারিজার মোবাইলে কল করতে থাকেবারং বারপ্রতিবারই এক নির্দয় মহিলা বলে, মুহূর্তে মোবাইল সংযোগ দেওয়া সম্ভব নাকল দিতে দিতে হাত ব্যাথা হয়ে যায় কিন্তু কোন লাভ হয় নাপ্রতি বারই একই কথা শুনিয়ে দিচ্ছে মোবাইলটিমাথার চুল ছিড়তে ইচ্ছে হচ্ছে টিটুরকি দরকার ছিল বয়সের কথাটা তোলারএ কারণে ভুল বুঝছে সারিজাযে জেদী মেয়ে সারিজা একবার একটা সিদ্ধান্ত নিলে ঐ সিদ্ধান্ত থেকে ওকে টলানো অনেক কঠিনতবে অনেক নরম মনের মেয়েএরকম নরম মনের মেয়ে এরকম জেদী হলো কিভাবে তা ঠিক ধরতে পারে না টিটু

সারিজার সাথে যে করে হোক কথা বলতে হবেএখন একটাই উপায় সারিজাদের এলাকায় যাওয়াকিন্তু সেখানেও সমস্যাএটা নিয়ে অনেক ঝামেলা হয়েছেঐ এলাকা টিটুর জন্য নিষিদ্ধকি করা যায়যে করে হোক সারিজার সাথে কথা বলতে হবেকিন্তু কিভাবে

++++++++++++++++++++++++

০২

সারিজার সাথে কথা বলতেই হবেপুরা পৃথিবী এখন হাতের মুঠোয় অথচ তারপরও সারিজার সাথে কথা বলার কোন উপায় নেইএরকম ও যদি হয়!

কি করবে কিছুই ভেবে পাচ্ছে নাসারিজার সাথে পরিচয় অদ্ভূত ভাবে নিউমার্কেটে রাস্তা পার হচ্ছিলোএক রিকসা ওর সামনে এসে কড়া ব্রেক কষল রিকসা চাকার উপরে লোহাটায় টিটু ব্যথা পায়তো রিকসা থামিয়ে রিকসা অলাকে এসময় চোখে পড়ে রিকসায় বসে এক মেয়েঅপূর্ব সুন্দরীরিকসা অলাকে শিক্ষা দেওয়ার কথা ভুলে যায় টিটুযে রিকসায় এত সুন্দর মেয়ে চড়ে সে রিকসা অলাকে কোন ভাবেই মারা যায় নামেয়েটি ভাবতে পারে রিকসা অলা দুর্বল বিধায় সাহসিকতা দেখাচ্ছেকোন দরকার নেইতার চেয়ে ক্ষমা দেখানোই উচিতসে রিকসাঅলার প্রতি এবার কোমল স্বরে বলল, ঠিক আছে তুমি যাওসামনে থেকে দেখে শুনে গাড়ী চালাবে

এদিকে আরেকটা রিকসায় উঠে বসে টিটুদেখা যাক মেয়েটি কোথায় যায়? রিকসা অলাকে বলে দেয় সামনের রিকসাঅলাটাকে ফলো করতেজোয়ান রিকসা অলাসে মহাখুশী সামনে রিকসা অলাকে ফলো করার জন্য পারলে সে প্রাইভেট কারকে ওভারটেক করে

বেশ কয়েক বার ট্রাফিক জ্যাম এবং অন্য গাড়ির কারণে সামনের রিকসাটা আড়াল হলেও টিটুর ভাগ্য ভাল ছিলশেষ পর্যন্ত রিকসার সাথে সাথে গন্তব্যে পৌছলকাজী পাড়া বাসাতা রিকসা থেকে মেয়েটি নেমে বাসায় দাঁড়ালোভাড়া দিচ্ছিলোটিটু ভয় পাচ্ছিলো তাকে দেখে ফেলল নাকিসে রিকসা অলাকে তাড়াতাড়ি পার হয়ে যেতে বললআর নিজে জড়সড় হয়ে বসে আছেকোন দিকে না তাকিয়েভাবটা এমন ও কাউকে না দেখলে কেউ ওকে দেখবে না
যা ভয় করছিল তাই হলোপার হচ্ছিলো এসময় মেয়েটি ডাক দিলএই রিকসা থামো

রিকসা থামলো

:
এই যে জনাব আমার পিছে পিছে চোরের মত এতদূর আসলেন কেন?
টিটুর মুখে কোন কথা নেইঅনেক নার্ভাস ফিল করছে
ঐ সময় তো ঠিকই রিকসা অলাকে মারতে যাচ্ছিলেনযখন গাড়ীতে আমাকে দেখলেন দেখলাম চুপসে গেছেনমেয়ে দেখে মারার সাহস হারায় ফেললেন তাই নাএত ভীতু কেন? রিকসা অলার তো ঠিকই দোষ ছিলদেখতেছে আপনি পার হচ্ছেনতারপর ও আপনার গায়ের উপর রিকসা তুলে দিতে লাগছিলনিজেকে বড় দেখানোর জন্যই মারেন নাইতাই নাএকটা বকা পর্যন্ত তো দিলেন নাএত ভীতু কেন আপনি
:
আসলে আপনাকে দেখে আর রিকসা অলাকে কিছু বলতে ইচ্ছে হলো না
আমতা আমতা করে বলল টিটু
:
কেন কেন?
হেসে উঠল সারিজাআরে এই মেয়ে তো অনেক সুন্দর হাসতে পারেএত সুন্দর করে মানুষ হাসে কেমনে?
:
আরে দেখি কারণই বলছেন নাআপনি আসলে ভীতু
:
আমি ভীতু না
শুনে আবার হেসে উঠে সারিজাসুন্দর সে হাসিআপনি ভীতু না বুঝলেন কেমনে?
:
ভীতু হলে আপনার পিছে পিছে আসার সাহস পেতাম না
বুঝছিঠিক আছে যান আপনি অনেক সাহসীএখন চলে যানএতক্ষণ খেয়াল ছিল না রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলছিবাসায় গিয়ে সাহসীকতার অনুশীলনী করেন

এই কথা বলে ফট করে বাসায় ঢুকে যায় সারিজাপিছে একবার তাকায় না পর্যন্ত

বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর সেখান থেকে ফিরে আসে টিটুজীবনে এই প্রথম কোন মেয়েকে এরকম ভাল লাগলঅথচ মেয়েটি পাত্তাই দিল নাবয়সে তো ৪/ ৫ বছর কম হবেবড়দের সাথে একটু সম্মান করে কথা বলবে তা করে নিতারপরও এই মেয়েকে এত ভাল লাগছে কেন?

++++++++++++++++++++++++++++

০৩

সকালের নাস্তা টেবিলে দেওয়া হয়েছে

:
টিটু খেতে আয়আজ এত সকালে উঠলি কেমনে? তোকে তো ডাকতে ডাকতে পুরা আধাঘন্টা যায়, উঠবি উঠবি করে উঠছ নাকথাগুলো বলতে বলতে ছেলের রুমে আসেন

ছেলের মুখ দেখে আশ্চর্য হনবিলকিস বেগম

:
কিরে তোর মুখের এই অবস্থা কেন? এই সকালে কি হলোমন খারাপ কেন?

মা কিছু হয় নি, এম্নেইএড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে টিটু
বললেই হলোবুঝছি তোর মন অনেক খারাপকারণ খুলে বলমনের মধ্যে কথা রেখে দিলে তো মন খারাপ বাড়েই

টিটু চিন্তা করেমা কে কোন ভাবেই বলা যাবে না বিষয়টাযদিও মায়ের কাছে বন্ধুর মত সব শেয়ার করা যায়তারপরও এই একটা ব্যাপার বলা যাবে নাকি বলা যায়কি বলা যায় চিন্তা করে টিটু

:
কিরে কিছু বলছিস না কেন?
:
না মা তেমন কিছু নাএম্নেই মন খারাপ
:
তেমন কিছু না হলে খেতে আয়
:
আম্মু তুমি কি রাগ করছো আমার কথায়? এভাবে গম্ভীর ভাবে খেতে ডাকছো কেন?

কথা শুনে বিলকিস বেগম হেসে উঠেনএকটাই ছেলেএই ছেলের সাথে রাগ করা যায়?

আরে না রাগ করি নাইতুই বলছিস না তো এজন্য একটু রাগের অভিনয় করলামবলে হেসে দেন বিলকিস বেগম

:
ঠিক আছে বলতে না চাইলে বলতে হবে নাআমি জানতে চাওয়ায় তুই অনেক বিপদে পড়ছিস বুঝতে পারছি তোর চেহারা দেখেইযা আমি জানতে চাচ্ছি নাএবার অন্তত হাস

টিটু হেসে দেয়টিটুর মনে হয় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ্য মা ওর
মা রুম ছেড়ে চলে যানবাবা অফিসে যাবেনবাবাকে নাস্তা দিতে হবে

টিটু নিজের ডায়েরীটা নিয়ে বসেহাতে কলম নেয়ওর একটা অদ্ভূত স্বভাব আছে মন খারাপ হলে ডায়েরী লেখা শুরু করেযার কারণে মন খারাপ তাকে উদ্দেশ্য করে ডায়েরী লিখেযদিও কাউকে দেখায় না

কলমের ঢাকনা খুলে লেখা শুরু করেপ্রথমেই চিঠির নাম্বার দেয়চিঠির নাম্বার হচ্ছে ৭৬তার মানে তার বেশি মন খারাপ হয়েছে ৭৬ বার

সারিজা,
কেমন আছোনিশ্চয় ভালোতোমার জন্য আবার চিঠি লিখতে বসলামএর আগেও বেশ কয়েকটা লিখেছিযদিও তুমি পাও নি একটাওপাবেই বা বা কেমনে? তুমি তো জানোই না আমি তোমাকে চিঠি লিখি এই ব্যাপারটা

তুমি এভাবে ফোন রেখে দিলে কেন? তোমাকে তো একটা সমস্যার কথা বললাম শুধু তুমি অন্যভাবে নিলে কেন? তোমাদের এলকায় যাওয়ার অপরাধে ছাদে নিয়ে তোমার বড় ভাই আমাকে যেদিন মেরেছিল সেদিনও এত খারাপ লাগে নিঐসময় ভেবেছিলাম বড় ভাই মারতেই পারেনছোট বোনের সাথে কে না কে ফাজলামী করছে এটা ভেবেবড় ভাই নিশ্চয় খারাপ কিছু চান নাআমার ছোট বোন নাইছোট বোন কি কোন বোনই নাই আমার ছোট বোনের সাথে কেউ এরকম ভালোবাসাসি করলে আমিও কি মাইর দিতামচিন্তা করছিতুমি সেদিন এত কাঁদছিলে কেন? তোমার কান্না দেখে বেশি মারতে পারেন নাই বড় ভাইযখন আমাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হলো আমি তো ভেবেছিলাম হাড্ডি টাড্ডি ভেঙে দেওয়া হবেআচ্ছা আমাকে যে ছাদে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তা তুমি জানলে কিভাবে

তোমার ভাই মারায় একদিকে ভালোই হয়েছেতুমি আমার সব কিছুতে তাচ্ছিল্য করতে তোমার ভাই যেদিন মারল সেদিন থেকে তাচ্ছিল্য করা বন্ধ করে দিলেসেদিন থেকেই আমার প্রতি তোমার একটা আবেগ জন্মায়ছিলোএখন মনে হচ্ছে সেদিন আমাকে আরো বেশি মারলে ভালো হতোতোমার আবেগ আরো বাড়তঅন্তত হঠাৎ আমাকে এত কষ্ট দিয়ে ফোন রেখে দিতে পারতে না

আবার ভাইবো না, আমার প্রতি তোমার আবেগ কম আছে তা বলছিযে মেয়ে একদিনে কোন ছেলেকে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিতে পারে সে ছেলেটির প্রতি মেয়েটির আবেগের বিষয়ে প্রশ্ন করা অবান্তরমাঝে মাঝে তোমার আবেগ দেখে অবাক হইমানুষ এত বেশি ভালবাসতে কেমনে পারে?

তোমার অনুমতি ছাড়া তোমার এলাকায় আমি কখনো যেতে পারবো না এ ধরণের কঠিন এক ওয়াদায় বন্দী করলে আমাকেহয়ত বড় ভাইয়ের কাছ থেকে যেন কখনো অপমানের শিকার না হতে হয় সেজন্যকিন্তু এখন যে তোমার সাথে কথা বলা খুব দরকার

আচ্ছা মনে করো তোমার বিয়ে হয়ে গেল ঐ ব্রিটেন না টিট্রেন প্রবাসীর সাথে তুমি কি সুখী হবে? মানুষ নাকি সব মানায় নিতে পারেতুমিও হয়ত পারবা!!!

রাগ করছো না তো কঠিন এ কথাটা বলছি দেখেআসলে কেন জানি ক্ষোভ হচ্ছেক্ষোভ থেকে বলছিমনের কথা হচ্ছে তোমাকে অন্য কোন কারো সাথে আমি কোন ভাবেই মেনে নিতে পারবো নাকোন ভাবেই নাএ বলে রাখলাম

সারিজা, সর্বশেষ তোমার সাথে দেখা হয়েছিল পরশুদিন বিকাল বেলায়তখনও তো এ ব্যাপারে কিছু বলো নিবরং মজা করেছো আমার নাক নিয়েবিয়ের পর আমার সাথে কোন বিষয়ে ঝামেলা হলে তোমার সুবিধা হবে বলে বলেছোআমার নাকে নাকি ঘুষি মারবে, ঝামেলা হলেইউপদেশ দিয়েছো আমার নাক যেন এখন থেকে অনুশীলন করে শক্ত করে ফেলি