শুক্রবার, ২১ আগস্ট, ২০১৫

কক্সবাজার থেকে ফেরার সময়

দুপুরে কক্সবাজার থেকে ফিরছিলাম। সোয়া একটার হানিফ পরিবহনে উঠলাম। প্রবেশ পথের দিক দিয়ে যে সিট সেখানে দ্বিতীয় সারির জানালায় পাশে পড়লো আমার সিট। বসলাম। পাশে বয়স্ক একজন।
ড্রাইভারের ঠিক পেছনের সিটে একটি কাপল বসা, কক্সবাজার ঘুরে তারাও ফিরছে। উঠার সময় তাদের সাথে চোখাচোখি হলো। হয়ত নতুন বিয়ে হয়েছে।
ভালই চলছিল সব। একটা সময় গিয়ে দেখি মেয়েটির চিল্লাচিল্লি, সে কি চিল্লানি! হাত থেকে স্মার্টফোনটা ছুড়ে মারলো। আওয়াজ হলো। পাশে বসা ছেলেটি স্মার্ট ফোনের বিভিন্ন অংশ খুজে নিয়ে লাগালো। মেয়েটির চিল্লানি থামে না। গাড়ির শব্দের কারণে কি বলে চিল্লাচ্ছে তাও স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে না। তবে খেয়াল করলাম গাড়ির সব যাত্রীর নজর তাদের দিকে। কিন্তু সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। মেয়েটির।


এক পর্যায়ে উচ্চ গলায় কান্না শুরু করলো। মধ্যখানে ফুপিয়ে কাদে। আবার উচ্চ গলায়। এরমধ্যে আবার কি কি বলে।
গাড়ি চকরিয়া দাঁড়ালো। মেয়েটির কান্না থামে না। ছেলেটি কিছু বলতে চাইলে তাকে থামিয়ে দেয়। চোখের পানি মুছিয়ে দিতে চাইলে হাত সরিয়ে দেয়, আমাকে ধরবে না বলে। এত উচ্চ গলায় বলে যে, গাড়ির সবচেয়ে পেছনের যাত্রীরও শোনার কথা।
কি মুসিবত। চকরিয়া থেকে গাড়ি আবার ছাড়া শুরু হলো। ছেলেটি কোন মতেই মেয়েটিকে থামাতে পারছে না।
বেশ কিছুক্ষণ দেখার পর হস্তক্ষেপ করতেই হলো। পাশের মুরুব্বীকে একটু সরতে বলে ওই ছেলের পিঠে হাত দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলাম। গাড়ি চলছে। রাগত চোখে পেছনের দিকে তাকালো সে। এম্নে বেচারা আছে মুসিবতে কে আবার পিঠে হাত রেখে!
আমার দিকে তাকাতেই বললাম, ভাই ওনাকে একটু বুঝিয়ে বলুন এভাবে কান্নাকাটি, কথা বললে ড্রাইবারের মনযোগ নষ্ট হবে। সামনের মিরর থেকে কিন্তু দেখা যায়। ড্রাইভারের মনযোগ নষ্ট হলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। থামতে বলুন।
ছেলেটি কিছু বলল না। মেয়েটি দেখি চুপ হয়ে গেছে।

এবার কয়েকজন যাত্রী কথা বলে উঠল। “এটাকে বাড়ি পেয়েছে নাকি। কেউ কিছু বলছে না দেখে চিল্লায় যাচ্ছে।“
আমি মনে মনে বলি, এতক্ষণ চুপ ছিলেন যে!
মেয়েটি আর কান্না করেনি চিৎকারও দেয়নি। ছেলেটি যত চেষ্টা করে থামাতে পারলো না। আমার এক কথায় থেমে গেলো। ভালই তো!

ফেসবুকে এ পোস্টটি