এ পরীক্ষাও খারাপ হলো নীতুর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাল বাস চড়ার অনেক শখ
ছিল। ইচ্ছে ছিল টিএসসিতে আড্ডা দিবে। ঢাবি নামক রাজ্যটায় সেও একজন হবে।
কেউ যখন জিজ্ঞেস করবে কোথায় ভর্তি হলে খুব খুশী মনে উত্তর দিবে, ঢাবি।
ভাবতেই ভালো লাগতো।
দুই ইউনিটের ফর্ম নিয়েছিল। পরীক্ষার পর ভালোভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য ঢাকার একটা কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়। ঢাকায় চাচার বাসা আছে। সেখানেই থাকে। এখন মনে হচ্ছে ঢাকার পাঠ শেষ।
দুই ইউনিটেই অকৃতকার্য। তার ওপর তাদের ২০১৪ ব্যাচটার ওপর অনেক সমালোচনা আছে। সে যে নিজে প্রশ্ন পায়নি তা না। ফেসবুকেই তো বেশির ভাগ সময় থাকতো। ওখানে কিছু প্রশ্ন শেয়ার হয়েছে। ফেসবুকে থেকে লাভটা হলো ভালো একটা রেজাল্ট হয়েছে।
পরীক্ষা শেষে ভেবেছিল যা হওয়ার হয়েছে। ফেসবুক টুক সব বাদ। এখন শুধুই ঢাবিতে ভর্তির জন্য পড়া। ঢাকায় কোচিংয়ে ভর্তি হওয়া নিয়ে বাবার ঠিক সম্মতি ছিল না। বাবা বললেন, এখান থেকে পড়েও টিকতে পারবে। পড়াটা হচ্ছে মেইন।
মাকে দিয়ে রাজি করিয়েছে। বাবা মা-র কোন কথা ফেলেন না। এত ভালো একটা মানুষ হয় কিভাবে। বাবাকে দেখে ভাবতো তার জীবনে যে আসবে সেও এভাবে তার সব কথা শুনবে তো!
একদিন রাত দুইটার সময়। মায়ের একটা ওষুধ লাগবে। বাবা জরুরী কাজে অন্য শহরে গিয়েছিলেন। রাস্তায় জ্যামের কারণে আসতে দেরি হয়। বাসায় ওষুধ নাই শুনে আবার বেরিয়ে পড়েন। মফস্বল শহরের বেশির ভাগ দোকান বন্ধ।রাস্তায় মানুষ চলাচলও নেই। পরে দূরের বাজার থেকে ওষুধ নিয়ে ফেরেন। তখন আলো ফুটতে শুরু করেছে।
মা বিরক্ত হন জানতে পেরে। তখন ঘুমে ছিলেন।
- এত রাতে এসে তুমি আবার বের হলে কেন। তার ওপর ফোন বন্ধ করে রেখেছো। সকালে তো দোকান খুলতোই। তখন ওষুধ আনলে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেতো?
বাবা তোতলাতে তোতলাতে বলেন, মোবাইলে আসলে চার্জ ছিল না। তাই বন্ধ পেয়েছো। সময়মত ওষুধ খাওয়া ভালো। আর পাওয়া গেছে এটাই তো বড়। তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও।
এসময় নীতুকে ডাক দেয়। মায়ের অসুস্থতার কারণে নীতুও ঘুমায়নি। মা, মোবাইলটা চার্জ দেয়তো।
নীতু মোবাইল চার্জ দিতে গিয়ে গেয়ে দেখে মোবাইলে দুই দাগ চার্জ। মা-র ঘুম ভাঙ্গলেই ফোন দিয়ে বাবাকে চলে আসতে বলবে এ ভয়ে ফোন বন্ধ করে রেখেছেন। একটা মানুষ এতটা ভালো কিভাবে হয়।
আগে স্বপ্ন দেখলেও এখন আর দেখে না। ঢাকায় আসার পর তৌহিদের সাথেই সময় বেশি কেটেছে। তৌহিদ ফেসবুক ফ্রেন্ড। আগে থেকে ফেসবুকে কথা হতো অনেক। সব কথা তৌহিদের সাথে শেয়ার করতো। তৌহিদকে অনেক ভালো লাগতো। ঢাকায় আসার পর প্রথম দিকে কোচিং সেন্টারে আসা যাওয়ার সময় সাথে থাকতো তৌহিদ।
পরে কোচিং সেন্টারে ক্লাস করার বদলে এক এক জায়গায় যাওয়া শুরু করে দুই জন। প্রথম অনেক বেশি ঘনিষ্ট হওয়া ওয়াটার কিংডমে গিয়ে। সেখানে আরো যারা গেছে তারাও একজন আরেকজনের সাথে নাচতেছিল। উচু ভলিউমে বাজতেছিল ডিজের সং।
-আরে এভাবে আড়ষ্ট হয়ে আছো কেন? আশেপাশে দেখছো না ওরা কিভাবে লাফাচ্ছে। মজা করছে। আসো আমরা মজা করি।
এই বলে নীতুর হাত ধরে টান দেয় তৌহিদ।
সেদিন আশেপাশের মানুষগুলোর মত তারাও নাচানাচি করে। অনেকটা সময় কাটায়।
এরপর আরো বেশি ঘনিষ্ঠতা হয়।
ঢাবিতে চান্স পায় নাই এটা জানাতেই তৌহিদ বলল, আরে এটা কোন সমস্যা না। সবাই টিকবে এমন কথা আছে। আর সবাই যদি টিকতো তাহলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আছে কেন।
-কিন্তু আব্বুর তো ইনকাম সীমিত। এত টাকা পাবেন কোথায়?
- আরে ঠিকই ব্যবস্থা করে দিতে পারবে। তুমি এত দুশ্চিন্তা করছো কেন।
নীতুর এখন ইচ্ছা করে মফস্বলের কলেজটাতেই কোন একটা বিষয়ে ভর্তি হয়ে যাবে। কিন্তু ওখানে গেলে আর তৌহিদের সাথে দেখা করতে পারবে না। তৌহিদকে মাঝে মাঝে অনেক বেশি স্বার্থপর মনে হয়। আবার তাকে দেখা ছাড়াও থাকতে পারে না। তৌহিদের অবহেলা অনেক বেশি কষ্ট দেয়। নীতু মন খারাপের মধ্যেও চেষ্টা করে তৌহিদের সব চাহিদা মেটাতে। তারপরও তৌহিদ অবহেলা করে। অথচ প্রথম দিকে কি গুরুত্বই না দিতো। বলার আগে করে ফেলতো। কোথাও দেখা করার কথা থাকলে আধাঘন্টা এক ঘন্টা আগে এসে উপস্থিত হতো।
আর এখন নীতু গিয়ে বসে থাকে। তৌহিদের আসার নাম থাকে না। অনেক দেরি করে আসে।
নীতু ভাবে নিজেকে সস্তা করাটাই তার জন্য কাল হয়েছে। তৌহিদের জোরাজুরি, আকুতি শুনে অত দূরে যাওয়া ঠিক হয় নাই। সে ঘটনার পর অনেক কান্না করেছিল।
কিন্তু যে ভুলটা করে ফেলছে তা তো আর শোধরানো যাবে না। বিয়ে হলে এ তৌহিদের সাথেই হবে। কিন্তু এ বিয়ের কথা মা-বাবাকে কিভাবে জানাবে!
নীতু ডায়েরী লিখে.
মা,
বাবার কথাই ঠিক ছিল। আসলে বাসায় পড়লেই হয়ত টিকে যেতাম। মেয়ের ইচ্ছা পূরণের জন্য বাবাকে রাজি করিয়েছো। অথচ ঢাকা শহরে এসে আমি অনেক খারাপ হয়ে গিয়েছি যে!
ফোনে যখন জিজ্ঞাসা করো কেমন আছি। খুব হাসি খুশী ভাব নিয়ে বলি, ভালো আছি। পড়া কেমন চলছে। তখন বলি, অনেক ভালো। মিথ্যা কথা বলে যাই।
পৃথিবীতে বিশ্বাসঘাতক কিছু সন্তান থাকে। যারা মা-বাবার সাথে চরম বিশ্বাস ঘাতকতা করে। আমিও যে বিশ্বাসঘাতকের সন্তানের তালিকায় চলে গেলাম।
মা বিশ্বাস করো আমি এমন বিশ্বাসঘাতক হতে চাই নি। কিন্তু... কেমনে কি যে হয়ে গেলো। জীবন বদলানোর সুযোগ থাকলে আমি ঠিকই বদলে যেতাম। কিন্তু প্রকৃতির কিছু নিয়ম যে বড্ড নির্মম। আমি ভালো হতে আর পারলাম না।
চোখের পানি ডায়েরীর পাতায় পড়ে। ঝাপসা হয়ে আসে নীতুর দৃষ্টি।
ফেসবুকে-বিশ্বাসঘাতক
কেউ যখন জিজ্ঞেস করবে কোথায় ভর্তি হলে খুব খুশী মনে উত্তর দিবে, ঢাবি।
ভাবতেই ভালো লাগতো।
দুই ইউনিটের ফর্ম নিয়েছিল। পরীক্ষার পর ভালোভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য ঢাকার একটা কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়। ঢাকায় চাচার বাসা আছে। সেখানেই থাকে। এখন মনে হচ্ছে ঢাকার পাঠ শেষ।
দুই ইউনিটেই অকৃতকার্য। তার ওপর তাদের ২০১৪ ব্যাচটার ওপর অনেক সমালোচনা আছে। সে যে নিজে প্রশ্ন পায়নি তা না। ফেসবুকেই তো বেশির ভাগ সময় থাকতো। ওখানে কিছু প্রশ্ন শেয়ার হয়েছে। ফেসবুকে থেকে লাভটা হলো ভালো একটা রেজাল্ট হয়েছে।
পরীক্ষা শেষে ভেবেছিল যা হওয়ার হয়েছে। ফেসবুক টুক সব বাদ। এখন শুধুই ঢাবিতে ভর্তির জন্য পড়া। ঢাকায় কোচিংয়ে ভর্তি হওয়া নিয়ে বাবার ঠিক সম্মতি ছিল না। বাবা বললেন, এখান থেকে পড়েও টিকতে পারবে। পড়াটা হচ্ছে মেইন।
মাকে দিয়ে রাজি করিয়েছে। বাবা মা-র কোন কথা ফেলেন না। এত ভালো একটা মানুষ হয় কিভাবে। বাবাকে দেখে ভাবতো তার জীবনে যে আসবে সেও এভাবে তার সব কথা শুনবে তো!
একদিন রাত দুইটার সময়। মায়ের একটা ওষুধ লাগবে। বাবা জরুরী কাজে অন্য শহরে গিয়েছিলেন। রাস্তায় জ্যামের কারণে আসতে দেরি হয়। বাসায় ওষুধ নাই শুনে আবার বেরিয়ে পড়েন। মফস্বল শহরের বেশির ভাগ দোকান বন্ধ।রাস্তায় মানুষ চলাচলও নেই। পরে দূরের বাজার থেকে ওষুধ নিয়ে ফেরেন। তখন আলো ফুটতে শুরু করেছে।
মা বিরক্ত হন জানতে পেরে। তখন ঘুমে ছিলেন।
- এত রাতে এসে তুমি আবার বের হলে কেন। তার ওপর ফোন বন্ধ করে রেখেছো। সকালে তো দোকান খুলতোই। তখন ওষুধ আনলে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেতো?
বাবা তোতলাতে তোতলাতে বলেন, মোবাইলে আসলে চার্জ ছিল না। তাই বন্ধ পেয়েছো। সময়মত ওষুধ খাওয়া ভালো। আর পাওয়া গেছে এটাই তো বড়। তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও।
এসময় নীতুকে ডাক দেয়। মায়ের অসুস্থতার কারণে নীতুও ঘুমায়নি। মা, মোবাইলটা চার্জ দেয়তো।
নীতু মোবাইল চার্জ দিতে গিয়ে গেয়ে দেখে মোবাইলে দুই দাগ চার্জ। মা-র ঘুম ভাঙ্গলেই ফোন দিয়ে বাবাকে চলে আসতে বলবে এ ভয়ে ফোন বন্ধ করে রেখেছেন। একটা মানুষ এতটা ভালো কিভাবে হয়।
আগে স্বপ্ন দেখলেও এখন আর দেখে না। ঢাকায় আসার পর তৌহিদের সাথেই সময় বেশি কেটেছে। তৌহিদ ফেসবুক ফ্রেন্ড। আগে থেকে ফেসবুকে কথা হতো অনেক। সব কথা তৌহিদের সাথে শেয়ার করতো। তৌহিদকে অনেক ভালো লাগতো। ঢাকায় আসার পর প্রথম দিকে কোচিং সেন্টারে আসা যাওয়ার সময় সাথে থাকতো তৌহিদ।
পরে কোচিং সেন্টারে ক্লাস করার বদলে এক এক জায়গায় যাওয়া শুরু করে দুই জন। প্রথম অনেক বেশি ঘনিষ্ট হওয়া ওয়াটার কিংডমে গিয়ে। সেখানে আরো যারা গেছে তারাও একজন আরেকজনের সাথে নাচতেছিল। উচু ভলিউমে বাজতেছিল ডিজের সং।
-আরে এভাবে আড়ষ্ট হয়ে আছো কেন? আশেপাশে দেখছো না ওরা কিভাবে লাফাচ্ছে। মজা করছে। আসো আমরা মজা করি।
এই বলে নীতুর হাত ধরে টান দেয় তৌহিদ।
সেদিন আশেপাশের মানুষগুলোর মত তারাও নাচানাচি করে। অনেকটা সময় কাটায়।
এরপর আরো বেশি ঘনিষ্ঠতা হয়।
ঢাবিতে চান্স পায় নাই এটা জানাতেই তৌহিদ বলল, আরে এটা কোন সমস্যা না। সবাই টিকবে এমন কথা আছে। আর সবাই যদি টিকতো তাহলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আছে কেন।
-কিন্তু আব্বুর তো ইনকাম সীমিত। এত টাকা পাবেন কোথায়?
- আরে ঠিকই ব্যবস্থা করে দিতে পারবে। তুমি এত দুশ্চিন্তা করছো কেন।
নীতুর এখন ইচ্ছা করে মফস্বলের কলেজটাতেই কোন একটা বিষয়ে ভর্তি হয়ে যাবে। কিন্তু ওখানে গেলে আর তৌহিদের সাথে দেখা করতে পারবে না। তৌহিদকে মাঝে মাঝে অনেক বেশি স্বার্থপর মনে হয়। আবার তাকে দেখা ছাড়াও থাকতে পারে না। তৌহিদের অবহেলা অনেক বেশি কষ্ট দেয়। নীতু মন খারাপের মধ্যেও চেষ্টা করে তৌহিদের সব চাহিদা মেটাতে। তারপরও তৌহিদ অবহেলা করে। অথচ প্রথম দিকে কি গুরুত্বই না দিতো। বলার আগে করে ফেলতো। কোথাও দেখা করার কথা থাকলে আধাঘন্টা এক ঘন্টা আগে এসে উপস্থিত হতো।
আর এখন নীতু গিয়ে বসে থাকে। তৌহিদের আসার নাম থাকে না। অনেক দেরি করে আসে।
নীতু ভাবে নিজেকে সস্তা করাটাই তার জন্য কাল হয়েছে। তৌহিদের জোরাজুরি, আকুতি শুনে অত দূরে যাওয়া ঠিক হয় নাই। সে ঘটনার পর অনেক কান্না করেছিল।
কিন্তু যে ভুলটা করে ফেলছে তা তো আর শোধরানো যাবে না। বিয়ে হলে এ তৌহিদের সাথেই হবে। কিন্তু এ বিয়ের কথা মা-বাবাকে কিভাবে জানাবে!
নীতু ডায়েরী লিখে.
মা,
বাবার কথাই ঠিক ছিল। আসলে বাসায় পড়লেই হয়ত টিকে যেতাম। মেয়ের ইচ্ছা পূরণের জন্য বাবাকে রাজি করিয়েছো। অথচ ঢাকা শহরে এসে আমি অনেক খারাপ হয়ে গিয়েছি যে!
ফোনে যখন জিজ্ঞাসা করো কেমন আছি। খুব হাসি খুশী ভাব নিয়ে বলি, ভালো আছি। পড়া কেমন চলছে। তখন বলি, অনেক ভালো। মিথ্যা কথা বলে যাই।
পৃথিবীতে বিশ্বাসঘাতক কিছু সন্তান থাকে। যারা মা-বাবার সাথে চরম বিশ্বাস ঘাতকতা করে। আমিও যে বিশ্বাসঘাতকের সন্তানের তালিকায় চলে গেলাম।
মা বিশ্বাস করো আমি এমন বিশ্বাসঘাতক হতে চাই নি। কিন্তু... কেমনে কি যে হয়ে গেলো। জীবন বদলানোর সুযোগ থাকলে আমি ঠিকই বদলে যেতাম। কিন্তু প্রকৃতির কিছু নিয়ম যে বড্ড নির্মম। আমি ভালো হতে আর পারলাম না।
চোখের পানি ডায়েরীর পাতায় পড়ে। ঝাপসা হয়ে আসে নীতুর দৃষ্টি।
ফেসবুকে-বিশ্বাসঘাতক