লাবিবা
মেয়েটা শ্যামলা চেহারার। মুখের মধ্যে অনেক বেশি মায়া ছড়িয়ে আছে। ও যখন
হাসে তখন মনে হয় সারা মুখে যেন দুষ্টামি ছড়িয়ে আছে। চোখগুলোও যেন হাসে।
দেখে থাকতেই ইচ্ছা হয়। আবীর তো সাথে থাকলে অদ্ভূত সব কাণ্ড করে যেন লাবিবা
হাসে।
লাবিবা বলে, তুই এত দুষ্টামি করিস কেন?
- তোকে হাসানোর জন্য। তুই এত সুন্দর হাসি কার থেকে শিখেছিস?
- সেটা তো বলা যাবে না। চিন্তা করিস না তোর বউকে শিখিয়ে দেবো। হবে?
- সব সময় দুষ্টামি করিস কেন! দুষ্টামি করবি নাতো।
- কেন! তুই কি বিয়ে করবি না?
- নাহ। বিয়ের করার কোন ইচ্ছা নেই। বিয়ে করা মানেই একজায়গায় আবদ্ধ হয়ে যায়। একটা নারীর কথা মত চলতে থাকা। আমি পারবো না। আমি সারা বিশ্ব ঘুরবো।
-দোস্ত আমারও বিশ্ব ঘুরতে ইচ্ছা করে। আমাকে নিবি?
- আমি তো নেবো। কিন্তু তোর বাসা থেকে যেতে দিবে না।
- হা সেটাও কথা।
দুইদিন ধরে আবীরের মন বেজায় খারাপ। লাবিবার সাথে যোগাযোগ হচ্ছে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একই ডিপার্টমেন্টে পড়ে ওরা।
ব্যাপারটা আবীরও জেনেছে। একটু সুযোগ চায় লাবিবাকে বুঝানোর জন্য। এটা স্রেফ একটা দূর্ঘটনা। এখানে তো ওর কোন দোষ নেই। ও কেন অপরাধবোধ করবে। ও কেন কষ্ট পাবে। আবীর তার সার্কেলের বন্ধুদেরও বলে রেখেছে এ ব্যাপারে যেন কেউ কথা না তুলে লাবীবা এলে। সব কিছুই আগের মতই চলবে। এখন শুধু লাবীবার সাথে দেখা হওয়াটা দরকার। ওর মোবাইলটাও বন্ধ। যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।
++++++
লাবীবা দুইদিন ধরে খাচ্ছে না। আগে কোন বিষয়ে রাগ করলে খাওয়া বন্ধ করে দিতো। বাবা এসে ডাকতো।
-মা খেয়ে নেয়তো।
- নাহ খাবো না।
-তুই যখন পিচ্চি ছিলি তোকে খাওয়ানো অনেক কঠিন ছিল। খেতেই চাইতি না। তোর মা-তো মাঝে মাঝে তোকে খাওয়াতে গিয়ে চরম বিরক্ত হতো। তোর বেশি আগ্রহ ছিল বাহিরে যাওয়ার প্রতি। তা এক নলা তোর মুখে তুলে দিতো আর আমি তোকে কোলে নিয়ে সিড়িগুলোতে উঠানামা করতে থাকতাম যতক্ষণ না গিলতি।
-বাবা দিনগুলো অনেক মজার ছিল তাই না। কেন যে ছোট থেকে বড় হয়ে গেলাম।
- হা হা হা। এটাই তো প্রকৃতির নিয়ম। মা খেয়ে নেয়।
রাগ ভুলে খেতে বসে লাবীবা।
তবে এবারের রাগটা বাবার সাথে। লাবীবা সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাবিতে আর পড়বে না। বাবা মুক্তিযোদ্ধা এ পরিচয়ে সে গর্বিত হতো। মুক্তিযোদ্ধা কোটাতেই ঢাবিতে চান্স হয়েছে। তার বন্ধুরা তাকে আলাদা সমীহ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বলে। দেশের জন্য ওর বাবা যুদ্ধ করেছে এজন্য।
বাবার কাছে শোনা মুক্তিযুদ্ধের গল্প বন্ধুদের বলে। বন্ধুরা মনযোগ দিয়ে শোনে।
কিন্তু বাবা এমন কাজ কেন করলো। এমন একটা মিথ্যা পরিচয় কেন বহন করলো? সবার মুক্তিযোদ্ধা হতে হবে এমন তো কথা নেই। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান করার জন্যও তো লোক লাগবে। কিন্তু এমন প্রতারণা করলো কেন! এখন অন্যদের সামনে মুখ দেখানো কিভাবে?
প্রথম একটা পত্রিকায় রিপোর্ট হয় ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা নামে। তখন বাবার নামও এসেছিল। লাবীবা মন খারাপ হয়। কিন্তু বাবা বলে, ওই পত্রিকার এক সাংবাদিক আমার অফিস থেকে একটা অনৈতিক সুবিধা চেয়েছিল। আমি না দেয়ায় ওই তালিকায় আমার নামও ঢুকিয়ে দিয়েছে।
পত্রিকায় অনেক মিথ্যা রিপোর্ট হয়। তার ওপর মুক্তিযোদ্ধা বাবার কথা সত্য না হয়ে পারে না। লাবীবা মন খারাপ চলে গিয়েছিল। কত হলুদ সাংবাদিকতায় তো হয়।
ওই ঘটনার পর তদন্ত হয়। তদন্তে বেরিয়ে আসে আসলে রিপোর্টটি সঠিক ছিল। কিভাবে কিভাবে জালিয়াতি করে মুক্তিযোদ্ধা সনদ নেয়া হয়েছিল তাও প্রকাশ করা হয়। রিপোর্টের সত্যতা পেয়ে বাতিল করে দেয়া হয় মুক্তিযোদ্ধা সনদ।
লাবীবার অবস্থা দেখে ওর বাবার সাহস হয় না মেয়েকে এসে কিছু বলার। মেয়েটা অনেক ভালো। কিন্তু অন্যায় একেবারেই সহ্য করতে পারে না। বিভিন্ন মানবিক কাজে এগিয়ে যায়। ফেসবুকে ওদের বিভিন্ন গ্রুপ আছে। সেখানে সাহায্য সহযোগিতা করে, স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করে।
সনদটি আরও কতজন নিয়েছে সেটা দেখে নিলো। কিন্তু এভাবে ফাঁস হয়ে যাবে তিনি বুঝতে পারেননি। আমান সাহেব বারান্দায় বসে ছিলেন। এসময় লাবীবা আসে। মেয়ের মুখ অনেকখানি শুকিয়ে গেছে। এলেমেলো হয়ে আছে চুলগুলো।
-বাবা তুমি এমন করলে কেন? দেশের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলে কেন? আমি এখন মুখ দেখাবো কেমনে? যারা আমাকে মুক্তিযুদ্ধের সন্তান বলে আলাদা সমীহ করতো তারা এখন জানে আমি একজন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। বাবা, মিথ্যা সনদটা না নিলে তোমার এমন কি ক্ষতি হতো?
আমান সাহেব কিছু বলতে পারেন না। মাথা নিচু করে রাখেন। চোখ মুছেন। যখন সনদটি নিচ্ছিলেন তখন ভাবতে পারেননি এটা এত ভয়ঙ্কর একটা অপরাধ, তার পিএ সব ব্যবস্থা করে দিয়েছিল।
-বাবা চুপ করে আছো কেন? তোমাকে বলতে হবে। বলো।
বাবার কাধে ঝাকি দেয় লাবিবা। তারপরও আমান সাহেব কিছু বলেন না। নিচু মাথাটা আরো নিচু হয়। তার ইচ্ছা করছে মাটির সাথে মিশে যেতে। নিজের মেয়ের সামনে এভাবে অপমান যে সহ্য হওয়ার না।
ফেসবুকে-কোটা
লাবিবা বলে, তুই এত দুষ্টামি করিস কেন?
- তোকে হাসানোর জন্য। তুই এত সুন্দর হাসি কার থেকে শিখেছিস?
- সেটা তো বলা যাবে না। চিন্তা করিস না তোর বউকে শিখিয়ে দেবো। হবে?
- সব সময় দুষ্টামি করিস কেন! দুষ্টামি করবি নাতো।
- কেন! তুই কি বিয়ে করবি না?
- নাহ। বিয়ের করার কোন ইচ্ছা নেই। বিয়ে করা মানেই একজায়গায় আবদ্ধ হয়ে যায়। একটা নারীর কথা মত চলতে থাকা। আমি পারবো না। আমি সারা বিশ্ব ঘুরবো।
-দোস্ত আমারও বিশ্ব ঘুরতে ইচ্ছা করে। আমাকে নিবি?
- আমি তো নেবো। কিন্তু তোর বাসা থেকে যেতে দিবে না।
- হা সেটাও কথা।
দুইদিন ধরে আবীরের মন বেজায় খারাপ। লাবিবার সাথে যোগাযোগ হচ্ছে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একই ডিপার্টমেন্টে পড়ে ওরা।
ব্যাপারটা আবীরও জেনেছে। একটু সুযোগ চায় লাবিবাকে বুঝানোর জন্য। এটা স্রেফ একটা দূর্ঘটনা। এখানে তো ওর কোন দোষ নেই। ও কেন অপরাধবোধ করবে। ও কেন কষ্ট পাবে। আবীর তার সার্কেলের বন্ধুদেরও বলে রেখেছে এ ব্যাপারে যেন কেউ কথা না তুলে লাবীবা এলে। সব কিছুই আগের মতই চলবে। এখন শুধু লাবীবার সাথে দেখা হওয়াটা দরকার। ওর মোবাইলটাও বন্ধ। যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।
++++++
লাবীবা দুইদিন ধরে খাচ্ছে না। আগে কোন বিষয়ে রাগ করলে খাওয়া বন্ধ করে দিতো। বাবা এসে ডাকতো।
-মা খেয়ে নেয়তো।
- নাহ খাবো না।
-তুই যখন পিচ্চি ছিলি তোকে খাওয়ানো অনেক কঠিন ছিল। খেতেই চাইতি না। তোর মা-তো মাঝে মাঝে তোকে খাওয়াতে গিয়ে চরম বিরক্ত হতো। তোর বেশি আগ্রহ ছিল বাহিরে যাওয়ার প্রতি। তা এক নলা তোর মুখে তুলে দিতো আর আমি তোকে কোলে নিয়ে সিড়িগুলোতে উঠানামা করতে থাকতাম যতক্ষণ না গিলতি।
-বাবা দিনগুলো অনেক মজার ছিল তাই না। কেন যে ছোট থেকে বড় হয়ে গেলাম।
- হা হা হা। এটাই তো প্রকৃতির নিয়ম। মা খেয়ে নেয়।
রাগ ভুলে খেতে বসে লাবীবা।
তবে এবারের রাগটা বাবার সাথে। লাবীবা সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাবিতে আর পড়বে না। বাবা মুক্তিযোদ্ধা এ পরিচয়ে সে গর্বিত হতো। মুক্তিযোদ্ধা কোটাতেই ঢাবিতে চান্স হয়েছে। তার বন্ধুরা তাকে আলাদা সমীহ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বলে। দেশের জন্য ওর বাবা যুদ্ধ করেছে এজন্য।
বাবার কাছে শোনা মুক্তিযুদ্ধের গল্প বন্ধুদের বলে। বন্ধুরা মনযোগ দিয়ে শোনে।
কিন্তু বাবা এমন কাজ কেন করলো। এমন একটা মিথ্যা পরিচয় কেন বহন করলো? সবার মুক্তিযোদ্ধা হতে হবে এমন তো কথা নেই। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান করার জন্যও তো লোক লাগবে। কিন্তু এমন প্রতারণা করলো কেন! এখন অন্যদের সামনে মুখ দেখানো কিভাবে?
প্রথম একটা পত্রিকায় রিপোর্ট হয় ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা নামে। তখন বাবার নামও এসেছিল। লাবীবা মন খারাপ হয়। কিন্তু বাবা বলে, ওই পত্রিকার এক সাংবাদিক আমার অফিস থেকে একটা অনৈতিক সুবিধা চেয়েছিল। আমি না দেয়ায় ওই তালিকায় আমার নামও ঢুকিয়ে দিয়েছে।
পত্রিকায় অনেক মিথ্যা রিপোর্ট হয়। তার ওপর মুক্তিযোদ্ধা বাবার কথা সত্য না হয়ে পারে না। লাবীবা মন খারাপ চলে গিয়েছিল। কত হলুদ সাংবাদিকতায় তো হয়।
ওই ঘটনার পর তদন্ত হয়। তদন্তে বেরিয়ে আসে আসলে রিপোর্টটি সঠিক ছিল। কিভাবে কিভাবে জালিয়াতি করে মুক্তিযোদ্ধা সনদ নেয়া হয়েছিল তাও প্রকাশ করা হয়। রিপোর্টের সত্যতা পেয়ে বাতিল করে দেয়া হয় মুক্তিযোদ্ধা সনদ।
লাবীবার অবস্থা দেখে ওর বাবার সাহস হয় না মেয়েকে এসে কিছু বলার। মেয়েটা অনেক ভালো। কিন্তু অন্যায় একেবারেই সহ্য করতে পারে না। বিভিন্ন মানবিক কাজে এগিয়ে যায়। ফেসবুকে ওদের বিভিন্ন গ্রুপ আছে। সেখানে সাহায্য সহযোগিতা করে, স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করে।
সনদটি আরও কতজন নিয়েছে সেটা দেখে নিলো। কিন্তু এভাবে ফাঁস হয়ে যাবে তিনি বুঝতে পারেননি। আমান সাহেব বারান্দায় বসে ছিলেন। এসময় লাবীবা আসে। মেয়ের মুখ অনেকখানি শুকিয়ে গেছে। এলেমেলো হয়ে আছে চুলগুলো।
-বাবা তুমি এমন করলে কেন? দেশের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলে কেন? আমি এখন মুখ দেখাবো কেমনে? যারা আমাকে মুক্তিযুদ্ধের সন্তান বলে আলাদা সমীহ করতো তারা এখন জানে আমি একজন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। বাবা, মিথ্যা সনদটা না নিলে তোমার এমন কি ক্ষতি হতো?
আমান সাহেব কিছু বলতে পারেন না। মাথা নিচু করে রাখেন। চোখ মুছেন। যখন সনদটি নিচ্ছিলেন তখন ভাবতে পারেননি এটা এত ভয়ঙ্কর একটা অপরাধ, তার পিএ সব ব্যবস্থা করে দিয়েছিল।
-বাবা চুপ করে আছো কেন? তোমাকে বলতে হবে। বলো।
বাবার কাধে ঝাকি দেয় লাবিবা। তারপরও আমান সাহেব কিছু বলেন না। নিচু মাথাটা আরো নিচু হয়। তার ইচ্ছা করছে মাটির সাথে মিশে যেতে। নিজের মেয়ের সামনে এভাবে অপমান যে সহ্য হওয়ার না।
ফেসবুকে-কোটা