পৃথিবীতে যত ধরণের প্রেম আছে ক্লাসমেট প্রেমটাই সম্ভবত সবচেয়ে জটিল। দুই জনই বেশি বোঝে। কেউ কারো থেকে কম বুঝতে রাজি না।
রফিক আর নীরার সম্পর্ককে এখন আর প্রেম বলা যাবে কিনা সন্দেহ আছে। কেননা নীরা ইদানিং প্রায় সময় বলছে, তার জন্য পাত্র দেখা হচ্ছে। শীঘ্রই বিয়ে।
রফিক কিছু বলে না। বলার স্পেসটুকু তার নেই।
: তোকে কিন্তু আমি সপরিপারে দাওয়াত দেবো। কার্ডের ওপর বড় করে লেখা থাকবে, সপরিবারে। যারা আমার শ্বশুর শাশুড়ি, ননদ, দেবর হওয়ার কথা ছিল। হচ্ছে না। তাতে কি! বিয়ের দিন অন্তত তাদের সবাইকে একসাথে দেখতে চাই।
রফিক এবারও চুপ।
: কিরে কথা বলছিস না কেন? ধ্যানে বসেছিস নাকি!
মেয়েরা খুব সহজে অপমান করতে পারে। এমন ভাবে করে যাতে মনে হয় ওইটাই স্বাভাবিক, কোন ব্যাপারই না। ছেলেটার কেমন খারাপ লাগে সেট বোঝার চেষ্টা না করে বলেই যায়।
রফিক অন্যদিকে মনযোগ দেয়ার চেষ্টা করে। গত সপ্তাহে পাবলিক বাসের সিটের সাথে লেগে পাঞ্জাবির ডান পকেটের দিকে কিছুটা ছিড়ে গেছে। সেখানে দেখে। হাতটা ওখানে রাখে।
: এ ছেড়া অংশটা দেখছিস?
: হা। ছেড়া পাঞ্জাবিতে তোকে ভালই লাগে।
: লাগবেই তো। যার ফুটো কপাল তার কি ভালো পাঞ্জাবিতে মানাবে? ছেড়া পাঞ্জাবিতেই তার বেশি মানাবে।
: তুই কি আমার কথায় রাগ করেছিস?
: অবশ্যই রাগ করি নাই।
: তোকে আমি কেন পছন্দ করেছিলাম জানিস।
: হা জানি।
: ঘটনাটা বলতো।
: বলতে ইচ্ছে করছে না।
: আমার শুনতে ইচ্ছে করছে। খুব ইচ্ছে করছে। বল না প্লিজ!
: পারবো না।
: আচ্ছা আমিই বলি। সেদিন মঙ্গলবার ছিল। দুপুরের দিকে। হালকা বৃষ্টি হচ্ছিলো। রাস্তার একপাশে টং দোকানে একটি ছেলে চা খাচ্ছিলো। তার ঠিক অপজিটে গেইটে মেয়েটা দাড়িয়ে তার বাবার জন্য অপেক্ষা করছিল। বাবা গাড়ি নিয়ে আসবে। ছেলেটার কোন বন্ধু নাই। সব সময় আলাদা আলাদা থাকে। অনেক দিন ধরে মেয়েটা খেয়াল করে। কেমন একটা উদাসীন ভাব। তা সেদিন যখন চা খাচ্ছিলো তখন একটা বিড়াল পার হচ্ছিলো ওই রাস্তা দিয়ে। কালো রঙ্গের বিড়াল। খুব দ্রুত পার হচ্ছিলো। তার চেয়ে দ্রুত গতিতে আসা একটা রিকসার সাথে বাড়ি খেলো বিড়ালটি। ছেলেটা চিৎকার দিয়ে উঠলো হায় হায়। কিছুদূর গিয়ে বিড়ালটা পড়ে গেলো। চায়ের কাপ রেখে ছেলেটাও দৌড়ে গেলো। তার চেহারায় কেমন একটা ভাব। যেন প্রিয়জন দূর্ঘটনায় পড়েছে। হাসপাতালে নিতে হবে এখনি। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে বিড়ালটার নড়াচড়া বন্ধ হয়ে গেছে। ছেলেটা মৃত বিড়ালটির পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলো পরম মমতায়। হাত বুলিয়ে দিলে যেন বিড়ালটি প্রাণ ফিরে পাবে। দুই চোখে তার পানি। বিড়ালে গায়েও সে চোখের পানি পড়লো। দূর থেকে এ দৃশ্যটা দেখছিল মেয়েটি। তখনই সে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে এমন মায়াবান ছেলেকেই সে খুঁজতেছিল। ঠিক ওই সময় ছেলেটির পাশে গিয়ে দাঁড়ায় মেয়েটি। তারা এক ক্লাসেই পড়ে। আগে কখনো কথা হয়নি।
মেয়েটি বলে, চলেন ওকে কবর দিই।
আশেপাশে মাটির কোন দেখা নেই। সব পিচের রাস্তা নয়ত পাকা। ছেলেটি মরা বিড়ালটি হাতে নেয়। কিছুদূর হাঁটার পর মাটির দেখা মেলে। সেখানে বিড়ালটিকে কবর দেয়া হয়।
রফিক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, ওগুলো তো অতীত। এখন গল্প বদলে গেছে।
: কেমন?
: যে ছেলেকে খুজতেছিল তাকে এখন বিয়ের দাওয়াত দেয়।
: আমার ইচ্ছে। দেবো একশো একবার দেবো। তোর সমস্যা হলে আরও আরও দেবো। দরকার হলে দশটা কার্ড দিয়ে দেবো। যার সাথে বিয়ে হবে সে বিয়েতেই না আসলে মেয়েটির বিয়ে হবে কেমনে? ছেলেটিকেতো দাওয়াত দিতেই হবে। ছেলেটির মা-বাবাকে আসতে হবে।
ফেসবুকে : বিয়ের দাওয়াত
রফিক আর নীরার সম্পর্ককে এখন আর প্রেম বলা যাবে কিনা সন্দেহ আছে। কেননা নীরা ইদানিং প্রায় সময় বলছে, তার জন্য পাত্র দেখা হচ্ছে। শীঘ্রই বিয়ে।
রফিক কিছু বলে না। বলার স্পেসটুকু তার নেই।
: তোকে কিন্তু আমি সপরিপারে দাওয়াত দেবো। কার্ডের ওপর বড় করে লেখা থাকবে, সপরিবারে। যারা আমার শ্বশুর শাশুড়ি, ননদ, দেবর হওয়ার কথা ছিল। হচ্ছে না। তাতে কি! বিয়ের দিন অন্তত তাদের সবাইকে একসাথে দেখতে চাই।
রফিক এবারও চুপ।
: কিরে কথা বলছিস না কেন? ধ্যানে বসেছিস নাকি!
মেয়েরা খুব সহজে অপমান করতে পারে। এমন ভাবে করে যাতে মনে হয় ওইটাই স্বাভাবিক, কোন ব্যাপারই না। ছেলেটার কেমন খারাপ লাগে সেট বোঝার চেষ্টা না করে বলেই যায়।
রফিক অন্যদিকে মনযোগ দেয়ার চেষ্টা করে। গত সপ্তাহে পাবলিক বাসের সিটের সাথে লেগে পাঞ্জাবির ডান পকেটের দিকে কিছুটা ছিড়ে গেছে। সেখানে দেখে। হাতটা ওখানে রাখে।
: এ ছেড়া অংশটা দেখছিস?
: হা। ছেড়া পাঞ্জাবিতে তোকে ভালই লাগে।
: লাগবেই তো। যার ফুটো কপাল তার কি ভালো পাঞ্জাবিতে মানাবে? ছেড়া পাঞ্জাবিতেই তার বেশি মানাবে।
: তুই কি আমার কথায় রাগ করেছিস?
: অবশ্যই রাগ করি নাই।
: তোকে আমি কেন পছন্দ করেছিলাম জানিস।
: হা জানি।
: ঘটনাটা বলতো।
: বলতে ইচ্ছে করছে না।
: আমার শুনতে ইচ্ছে করছে। খুব ইচ্ছে করছে। বল না প্লিজ!
: পারবো না।
: আচ্ছা আমিই বলি। সেদিন মঙ্গলবার ছিল। দুপুরের দিকে। হালকা বৃষ্টি হচ্ছিলো। রাস্তার একপাশে টং দোকানে একটি ছেলে চা খাচ্ছিলো। তার ঠিক অপজিটে গেইটে মেয়েটা দাড়িয়ে তার বাবার জন্য অপেক্ষা করছিল। বাবা গাড়ি নিয়ে আসবে। ছেলেটার কোন বন্ধু নাই। সব সময় আলাদা আলাদা থাকে। অনেক দিন ধরে মেয়েটা খেয়াল করে। কেমন একটা উদাসীন ভাব। তা সেদিন যখন চা খাচ্ছিলো তখন একটা বিড়াল পার হচ্ছিলো ওই রাস্তা দিয়ে। কালো রঙ্গের বিড়াল। খুব দ্রুত পার হচ্ছিলো। তার চেয়ে দ্রুত গতিতে আসা একটা রিকসার সাথে বাড়ি খেলো বিড়ালটি। ছেলেটা চিৎকার দিয়ে উঠলো হায় হায়। কিছুদূর গিয়ে বিড়ালটা পড়ে গেলো। চায়ের কাপ রেখে ছেলেটাও দৌড়ে গেলো। তার চেহারায় কেমন একটা ভাব। যেন প্রিয়জন দূর্ঘটনায় পড়েছে। হাসপাতালে নিতে হবে এখনি। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে বিড়ালটার নড়াচড়া বন্ধ হয়ে গেছে। ছেলেটা মৃত বিড়ালটির পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলো পরম মমতায়। হাত বুলিয়ে দিলে যেন বিড়ালটি প্রাণ ফিরে পাবে। দুই চোখে তার পানি। বিড়ালে গায়েও সে চোখের পানি পড়লো। দূর থেকে এ দৃশ্যটা দেখছিল মেয়েটি। তখনই সে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে এমন মায়াবান ছেলেকেই সে খুঁজতেছিল। ঠিক ওই সময় ছেলেটির পাশে গিয়ে দাঁড়ায় মেয়েটি। তারা এক ক্লাসেই পড়ে। আগে কখনো কথা হয়নি।
মেয়েটি বলে, চলেন ওকে কবর দিই।
আশেপাশে মাটির কোন দেখা নেই। সব পিচের রাস্তা নয়ত পাকা। ছেলেটি মরা বিড়ালটি হাতে নেয়। কিছুদূর হাঁটার পর মাটির দেখা মেলে। সেখানে বিড়ালটিকে কবর দেয়া হয়।
রফিক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, ওগুলো তো অতীত। এখন গল্প বদলে গেছে।
: কেমন?
: যে ছেলেকে খুজতেছিল তাকে এখন বিয়ের দাওয়াত দেয়।
: আমার ইচ্ছে। দেবো একশো একবার দেবো। তোর সমস্যা হলে আরও আরও দেবো। দরকার হলে দশটা কার্ড দিয়ে দেবো। যার সাথে বিয়ে হবে সে বিয়েতেই না আসলে মেয়েটির বিয়ে হবে কেমনে? ছেলেটিকেতো দাওয়াত দিতেই হবে। ছেলেটির মা-বাবাকে আসতে হবে।
ফেসবুকে : বিয়ের দাওয়াত