শুক্রবার, ৫ আগস্ট, ২০১৬

রোমান্টিক স্ট্যাটাস (২০১৬)

 চোখ
: আমি তোমার চোখ দেখি।
: চোখে কি দেখো?
: একটা সময় ওই চোখে আমার জন্য কিছু আবেগ ছিল। সেগুলো খুঁজি।
: পেয়েছো?
: না, ঝাপসা হয়ে গেছে। স্পষ্ট হচ্ছে না।
: শুনো, সম্পর্কগুলো এমন। যোগাযোগে গ্যাপ হলে সম্পর্কগুলো ঝাপসা থেকে ঝাপসাতর হতে থাকে। একসময় কিছুই থাকে না।


: তবে একটা ব্যাপারতো ঠিকই আছে।
: কি?
: তোমার চোখ আগের মতই সুন্দর আছে।
: আবেগহীন চোখের সৌন্দর্যের কি দাম?

ফেসবুকে

+++++++++++++++++++++ 


ছাড়: আমার পরীক্ষা আমি এই কয়দিন আসতে পারবো না।
: পরীক্ষা ভালো হবে আশা করি।
: আশাবাদী বক্তব্য শোনার জন্য আসি নি। একটা কথা বলার জন্য এসেছি।
: হা বলো।
: আমার সময়গুলো অন্য কাউকে দেবে না। আমার সময় আমার জন্যই রাখবে।
: তুমি না থাকলে আমি কি করবো? চুপচাপ বসে থাকবো?
: আমি না থাকলে তোমার ফেসবুকেই আসার দরকারটা কি? দুইটা সপ্তাহ ফেসবুকে না আসলে কি খুব ক্ষতি হবে?
: তা হবে না। তোমরা না অনেক বেশি স্বার্থপর। শুধু নিজের কথাটাই ভাবো। নিজেরটা কড়ায় গন্ডায় হিসেব নাও। ছাড় দাও না।
: আবেগের ক্ষেত্রে স্বার্থপর হওয়া অপরাধ না। অন্য সবদিকে ছাড় দিলেও আবেগের ক্ষেত্রে একটুও ছাড় দিতে পারবো না। মনে থাকে যেন! ( ফেবুতে )

++++++++++++++++
ইমো

: এক একটা ইমো ঘাতক।
: ইমো আবার ঘাতক হতে যাবে কেন?
: অবশ্যই ঘাতক। ভাষাকে বাকরুদ্ধ করে দেয়। এত বড় ঘটনা শেয়ার করলাম। আর তুমি তার উত্তরে একটা হাসির ইমো দিলে। অতটুকুই। কিছুই লিখলে না। ইমোর মত এত বড় ভাষা ঘাতক আর কি আছে?
: ও এই কথা। ঠিক আছে আর ইমো দিবো না।
: প্রমিজ?
: হাসির ইমো।
: আবারও দিলে যে। ইমো মুখের ভাষা কেড়ে নেয় সে ইমো বন্ধের জন্য আন্দোলন করতে হবে দেখছি। ( ফেবুতে )

+++++++++++++++++++++++

প্রোফাইল পিকচার
: আপনার প্রোফাইলে ছবি নাই কেন? ছবি ছাড়া প্রোফাইল দেখতে কেমন দেখায় না!
: দুইটা কারণে নেই। এক নম্বর কারণটা হচ্ছে, কেউ খেয়াল করুক আমার প্রোফাইলে ছবি দেয়া নাই।
: বুঝলাম। অন্য কারণটি?
: দ্বিতীয় কারণটা হচ্ছে, সে যে ব্যাপারটা খেয়াল করেছে এটা আমাকে এসে বলুক। এটার অপেক্ষা। অপেক্ষা শেষ হয়েছে। এখনই প্রোফাইলে ছবি দেয়া হবে। ( ফেবুতে )


+++++++++++++++++++++++

তোমাকে

তোমাকে নিয়ে লিখবো বলে কিবোর্ডটা পরিষ্কার করেছি। বেশ ধূলা জমেছিল। সব ধূলা ঝেড়ে দিয়েছি। টেবিলে এলেমেলো ছিল কিছু বই আর গ্যাজেট। সেগুলো সাজিয়ে নিয়েছি। মনিটরের স্ক্রিণটা দামী টিস্যু পেপার দিয়ে মুছে নিয়েছি। মাউসটা ঝামেলা করছিল. স্ক্রল নড়ালেও নড়ত না মাউস পয়েন্টারটা। নতুন মাউস কিনে এনে লাগালাম। শুধু তোমাকে লিখবো বলে। হেডফোনটাও পরিষ্কার করতে নিচ্ছিলাম। আবার ভাবি লেখার সাথে তো এর সম্পর্ক নেই। তারপরও তা পরিষ্কার করে নিলাম।
তোমাকে লিখবো বলে সকাল থেকে ভাবছি। ভাবনারা শাখা প্রশাখা ছড়িয়েছে। কখনো সমুদ্রে কখনওবা গেছে পাহাড়ের সে বাসাটিতে। যেখানে মাচাঙ ঘরটিতে একটু হাঁটলেই আওয়াজ করে। তোমার দৌড় দেয়ার সময় ঘরটির কেপে উঠা। কল্পনাদের ভিসা লাগে না। তাই তারা ছুটে গেছে গ্রীসের স্যান্টোরিনি ওইয়াতে। একসাথে হাত ধরাধরি করে সূর্যোদয় দেখা, সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে হেটে বেড়ানো। তার আগে অবশ্যই তাজমহল ঘুরে যাবো। কফি নিয়ে তোমার অপেক্ষার সময়গুলো কল্পনা করে আমি হেসেছি। দেরি দেখে রাগ করে তুমি কফি ফেলে দিলে। আমি এসে আবার কফি বানালাম। তোমার দিকে বাড়িয়ে দিলাম কফির বড় কাপটি। এবার তোমার মুখে হাসি ফুটল। তোমাকে রাগানোর জন্য অন্য নাম্বার থেকে রোমান্টিক মেসেজ লিখে আমার মোবাইলে পাঠানো। অন্য মেয়ের মেসেজ মনে করে আমার দিকে তোমার তেড়ে আসার সে সময়টুকু! আমার হাসি, নিজের বোকামী বুঝতে পেরে তোমার রাগ আরও বেড়ে যাওয়া। সারাদিন জুড়ে কল্পনাতেই তো ছিলাম।
অবশেষে সব কিছু নিয়ে লিখবো। শুধু তোমাকে নিয়েই লিখবো। লিখতে বসলাম। সব লিখতে হবে। আবারও সব পরিষ্কার করে নিলাম। তোমার জন্যই তো লিখবো সব।
কিন্তু একি বিদ্যুতই যে চলে গেলো। তোমাকে নিয়ে যে আর লেখা হলো না। বদলে কয়েকটি গালি উচ্চারিত হলো বিদ্যুত নিয়ে। ভালোবাসার কথা যে আর লেখা হলো না। দোষ কি আমার? ( ফেবুতে )

++++++++++++++++

আবীর অপেক্ষা করছে। এখানে বেশ কয়েকজন রোগী বসা আছে। রোগীর সাথে আত্মীয় স্বজনও আছে। তারা ডাক্তারের ডাকের অপেক্ষায় আছে। ডাক্তারের সহকারী সিরিয়াল বলছে। সে সিরিয়াল ধরে রোগী ভেতরে যাচ্ছে।
এ ক্লিনিকটা অপেক্ষাকৃত ভালো। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। আর রোগীদের বসার স্থানও বেশ সুন্দর।
আবীর ডাক্তার দেখাতে আসেনি। সে রোগীদের সাথে বসে অপেক্ষা করছে। নিতু এ ক্লিনিকের ডাক্তার। তার রাতের রোগী দেখা শেষ হলে দুই জনে একসাথে ঘরে ফিরবে। প্রায় প্রতিদিনই এমন হয়। আবীর এসে অপেক্ষা করে রোগীদের বসার কক্ষটায়। সে ব্যাংকে চাকরি করে। সন্ধ্যায় তার অফিস শেষ হয়ে যায়।
একদিন তো ভালই বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছিল। নিয়মিত আসতে হয় এমন এক রোগী বলে বসে, ভাই আপনাকে আরও কয়েকবার দেখেছি। আপনারও কি আমার মত কঠিন কোন অসুখ?
নিতুও বলে, আচ্ছা তুমি ওখানে বসে থাকো কেন? আমার এখানে তো বসতে পারো।
: তোমার সামনে বসে থাকলে রোগীরা তাদের সমস্যা বলতে ইতস্তত বোধ করতে পারে। সেটা ঠিক হবে না। ওয়েটিং রুমই ভালো। তাছাড়া...
: তাছাড়া কি?
: তোমার সামনে বসে থাকলে তো অপেক্ষায় থাকার ফ্লেভারটা পাবো না। এইযে ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা করি। কিছুক্ষণ পর পর ওয়েটিং রুমের ডিজিটাল ঘড়িতে বড় বড় লাল অক্ষরে প্রদর্শিত সময় দেখি। আর কতক্ষণ বাকী সে হিসাব কষি। একসময় নির্দিষ্ট সময় শেষ হয়। তুমি বের হয়ে আসো। তখন অনেক বেশি ভালো লাগে। সামনে বসে থাকলে এ ভালো লাগাটাতো পেতাম না।
: তুমি না আসলেই পাগল একটা ছেলে। পুরাই পাগল।
বলে হেসে ফেলে নিতু। হাসলে নিতুর গালে টোল পড়ে।
সেদিকে তাকিয়ে থাকে আবীর। ( ফেবুতে )

++++++++++
ফিল্টার্ড মেসেজ

তাদের প্রেমটা হয়েছিল ফিল্টার্ডয়ে থাকা মেসেজ থেকে। তাও মেয়েটি উত্তর দিয়েছিল দেড় বছর পর। ছেলেটি অপেক্ষায় ছিল। তার আত্মবিশ্বাস ছিল একদিন উত্তর পাবে। নতুন করে আর মেসেজ না দিয়ে প্রতিদিন চেক করত। এই বুঝি রিপ্লাই এলো।
দীর্ঘদিন পর বৃষ্টি হচ্ছে। ভ্যাপসা গরমটা দূর হয়েছে। চারদিকে একটা ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব। কিছুক্ষণ পর পর বাতাস বয়ে যাচ্ছে।
ব্যালকনিতে তারা বসা। মেয়েটি জিজ্ঞেস করে, আচ্ছা তুমি এতটা নিশ্চিত ছিলে কেম্নে আমি রিপ্লাই দেবো? ফিল্টারর্ড মেসেজ এলে কোন নোটিফিকেশন আসে না। আর সেখানে অনেক মেসেজ এসে জমা হয়ে থাকে। এড়িয়ে যেত পারত। আমিতো উত্তর নাও দিতে পারতাম।
: না দিয়ে থাকবে কিভাবে! তোমাকে ওই মেসেজ দেয়ার পর আর কখনও আমি কোন মেয়েকে নক করি নাই। আমার বিশ্বাস ছিল তুমি উত্তর দিবে। ছোটবেলায় আমার দাদু একটা কথা বলতেন, মন থেকে অনেক বেশি চাইলে তা পূরণ হয়। এজন্য অন্য কিছু বিকল্প ওই চাওয়াতে ঢুকানো যাবে না। চাওয়াটা পরিষ্কার রাখতে হবে। আমিতো আমার চাওয়া পরিষ্কার রেখেছিলাম। তাই পেয়ে গিয়েছি। ফেবুতে

++++++++++++++++++++++++++++++++++++

“সত্যি বলছি তোমাকে আর কোনদিন নক করবো না। জানতে চাইবো না খবরাখবর। যদিও কষ্ট হবে। তাতে কি, মানুষতো অভ্যাসের দাস। একসময় ঠিকই অভ্যস্ত হয়ে যাবো, দেখো ঠিকই অভ্যস্ত হয়ে যাবো। প্রিয় মানুষকে নক করে রিপ্লাই পাওয়ার অপেক্ষা থাকার অভাবনীয় কষ্ট থেকে তো মুক্ত থাকবো। ভালো থেকো আগে যেমন চাইতাম। এখনও তেমন চাই।”
চার বছর আগের স্ট্যাটাসটা স্মরণ করিয়ে দিলো ফেসবুক টাইম লাইন। নতুন এক পদ্ধতি বের করেছে ফেসবুক। ঠিক এদিনে আগের বছরগুলোতে কি স্ট্যাটাস দিয়েছে সেগুলো টাইম লাইনে এনে দেয়।
আরিফ ফেসবুকে বসা। আরিফের পাশেই বসা জুই। ওর হাতে বড় কাপ ভর্তি চা।
স্ট্যাটাসটা ওর নজরে পড়ল। শব্দ করে হেসে উঠলো।
ওর হাসি দেখে লজ্জা পেল আরিফ। মাউসের স্ক্রলটা দ্রুত ঘুরালো। যাতে ওই স্ট্যাটাসটা ওপরে চলে যায়।
লুকিয়ে লাভ নেই। আমিতো দেখে ফেলেছি। বলে দুষ্টু হাসি হাসে জুই। কিছুক্ষণ আগে গোসল করে এসেছে সে। চুলগুলো এখনও ভেজা। মুখে একটা স্নিগ্ধ মায়াবী আভা। ঝকঝকে সাদা দাঁতগুলো যেন ঝিলিক দিচ্ছে।
চায়ের কাপটা টেবিলের ওপর রাখে। বলে, আর এতে লজ্জা পাওয়ার কি আছে?
আরিফ বলে, আমি লজ্জা পাবো কেন। আসলে তিনদিন ধরে রিপ্লাই না পেয়ে অনেক বেশি খারাপ লাগছিল। তাই স্ট্যাটাসটা দেয়া। লজ্জা পাইনিতো।
: অবশ্যই পেয়েছো। দুই বছর ধরে তোমার সাথে আছি। তোমাকে তো চিনি। তখন তুমি নক দিতে ফেসবুকে। আর এখন আমাকে প্রতিদিন সকালে নক দিতে হয়। তোমার যে কড়া ঘুম। নকের পর নক দিয়ে সে ঘুম ভাঙ্গাতে হয়। মজাই লাগে। শুনো, আমার কিছু সম্পূর্ণ ভালো লাগার বিষয় আছে। যা সম্পূর্ণ আমারই। এর মধ্যে একটা হচ্ছে, আমার ভোর শুরু হয় প্রিয় মানুষটাকে নক করে। কি সুন্দর না?
আরিফ কিছু বলার মত বিষয় পায় না। কিছু বাক্য শুধু উপভোগ করা যায়। পাল্টা কোন কিছুতেই তার মত সুন্দর উত্তর দেয়া যায় না। এখনও সেটাই হচ্ছে।
আরিফ ফেসবুকে শুধু নতুন একটা স্ট্যাটাস দেয়, পৃথিবীটা অনেক বেশি সুন্দর। সুন্দরের চেয়েও সুন্দর।  ফেসবুকে