নতুন যে চার্জলাইটটি কেনা হয়েছে সেটি বেশিক্ষণ জ্বলে
না। এক মাস না হতেই লাইটের এ দশায় সব দোষ পড়ল যে লাইটটি কিনে এনেছে তার
ওপর। লাইটটির ক্রেতা আমি। যদিও টাকা আমি দিইনি। আম্মু দিয়েছে। আব্বা বলছে,
কী লাইট এনেছে, আধা ঘণ্টা না জ্বলতেই নিভে যায়। এর চাইতে মোমবাতিও তো বেশি
আলো দেয়। অযথা টাকাগুলো নষ্ট করা হয়েছে।
আমি বুঝি না একটা চার্জ লাইটের সাথে মোমবাতির তুলনাটা কীভাবে হয়। তারপরও শুনে যাই। আব্বা রাগী মানুষ। কিছু বললে বলবে, মুখে মুখে তর্ক করিস। তর্কটাই শুধু পারিস।
আমি আসলে কিছুই পারি না। তর্কটাও না।
চার্জ লাইটটারও দোষ দেওয়া যায় না। দিনের অধিকাংশ সময় বিদ্যুত্ থাকে না। এত লোড চাইনিজ এ চার্জ লাইট কীভাবে নেবে! তার ওপর পুরো চার্জ তো হতে হবে। কিন্তু যতক্ষণ বিদ্যুত্ থাকে ওই সময়টায় পুরো চার্জ হওয়া সম্ভব না।
যেকোনো কারণেই হোক চাইনিজ জাতিটার প্রতি আমার অন্যরকম একটা দুর্বলতা কাজ করে। আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি চাইনিজ কোনো মেয়েকে বিয়ে করব। ওরা ভাগ্যবতী হয়। জীবনে নিজে তো কিছুই করতে পারলাম না। এখন যদি ভাগ্যবতীর সংস্পর্শে এসে কিছু করা সম্ভব হয়! চাইনিজ মেয়েরা যে মহাভাগ্যবতী এ ধারণা আমার প্রথম জন্মে জাকারবার্গকে দেখে। চাইনিজ মেয়ের সাথে প্রেম, বিয়ে হলো। আর সাথে সাথে কত কত টাকার মালিক হয়ে গেল এ অল্প বয়সেই। ভুল বলছি, টাকা না কত কত ডলারের মালিক হয়ে গেল।
তবে একথা বাসায় বলিনি। চাইনিজ কোনো মেয়েকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি জানলে ঘর থেকে বের করে দেবে। আব্বা তো রাগী গলায় বলবেন, ‘এমন পোলার আমার কোনো দরকার নেই।’
আমি সারাজীবন ভয়ে ভয়ে কাজ করেছি। সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই একটা কাজে আমি ভয়কে পরোয়া করব না।
মিশনও শুরু করে দিয়েছি। ফেসবুকে এক চাইনিজ মেয়ের সাথে পরিচয় হয়েছে। ওর সাথে ইনিয়ে বিনিয়ে কথা হয়। চাইনিজ ভাষা ছাড়া অন্য কোনো ভাষা পারে না। আমাদের বেশিরভাগ কথাই হয় ইমো ভিত্তিক। তবে মাঝে মাঝে গুগল ট্রান্সলেটের সাহায্য নিই। ভালোই কাজ দেয়।
কিছু টাকা থাকলে একটা চাইনিজ কোর্সে ভর্তি হতাম। আমার এক ব্যাংকার বন্ধু আছে। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আচ্ছা, দোস্ত। ভাষার কোর্স করার জন্য যদি লোন চাই তাহলে তোদের ব্যাংক দেবে?’
ও শুনে আকাশ থেকে পড়ার মতো অবস্থা। যেন বড় অন্যায় কথা বলে ফেলেছি। গাড়ি, বাড়ি কিনতে যদি লোন দিতে পারে। তাহলে ভাষা শিখতে কোর্স করার জন্য লোন দিতে কী সমস্যা? অর্থনীতিবিদরা এ বিষয়টি এড়িয়ে গেছে। অথচ যোগাযোগের প্রধান মাধ্যমই তো ভাষা। পৃথিবী আসলে এখনো সেরা মেধাবীদের দেখা পায়নি। পেলে আমাকে কোর্স শেখার জন্য লোন পাওয়া নিয়ে ভাবতে হতো না।
সেদিন আমি চাইনিজ মেয়েটাকে বলছিলাম, ‘আমি বাজার থেকে বাছাই করে চাইনিজ পণ্য কিনি। আমাদের দেশে চাইনিজ পণ্যের ছড়াছড়ি। তাই পেতে সমস্যা হয় না।’
একথা শুনে তার মন খারাপ হয়। সে বাংলাদেশি পণ্য কিনতে চায়। কিন্তু তাদের বাজারে বাংলাদেশি পণ্য তেমন একটা নেই।
আমি বললাম, ‘মন খারাপ করো না। আমি যখন ব্যবসা শুরু করব, তখন বাংলাদেশ থেকে চীনে পণ্য রপ্তানি করব। তখন তোমাদের বাজারে দেখবে বাংলাদেশি পণ্যর ছড়াছড়ি। টর্চ লাইট থেকে শুরু করে মোমবাতিও বাংলাদেশ থেকে পাঠিয়ে দেবো। ইচ্ছেমতো কিনতে পারবে।’
আমার কথা শুনে সে অনেক খুশি হয়। ওর খুশি দেখে আমার আনন্দ দেখে কে। চাইনিজ জুটায়া ফেলছি। জাকারবার্গ হতে এবার আমাকে ঠেকাবে কে? আমার কল্পনার বহর বাড়ে।
মাস দুয়েক পর সে একটা কার্ডের ছবি পাঠায়। চাইনিজ ভাষায় কী কী যেন লেখা সেখানে! অর্থ উদ্ধার করতে পারি না। কার্ডটা তো ছবি। অন্য কিছুর ক্ষেত্রে ওর লেখা কপি করে গুগল ট্রান্সলেট বক্সে পেস্ট করে দিতাম। অনুবাদ হতো। কিন্তু ছবি থেকে তো আর কপি করা যাবে না লেখা। আর এমন চাইনিজ অক্ষরগুলো আমার পক্ষে লেখাও সম্ভব না। এ তো দেখি মহা বিপদ!
জিজ্ঞেস করলাম, ‘এটা কী?’
উত্তরে লজ্জার পেয়েছে এমন একটা ইমো পাঠাল।
এরপর যা লিখল সেগুলো কপি করে গুগল ট্রান্সলেটে পাঠালাম। ঘটনা হচ্ছে, আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে তার বিয়ে। সে বিয়ের কার্ড এটি।
নিজের চুল ছিড়তে ইচ্ছে হলো। এখনকার মেয়েরা টাক মাথাওয়ালা ছেলে পছন্দ করে না। তাই বহু কষ্টে ইচ্ছেটা দমালাম। আমার বুঝি আর জাকারবার্গ হওয়া হলো না। আমাকে ধর! ( ফেবুতে ) ( ইত্তেফাকের ঠাট্টায় )
>> গতকাল ইত্তেফাকের ঠাট্টায় এ রম্য লেখাটি ছাপানো হয়েছে।
আমি বুঝি না একটা চার্জ লাইটের সাথে মোমবাতির তুলনাটা কীভাবে হয়। তারপরও শুনে যাই। আব্বা রাগী মানুষ। কিছু বললে বলবে, মুখে মুখে তর্ক করিস। তর্কটাই শুধু পারিস।
আমি আসলে কিছুই পারি না। তর্কটাও না।
চার্জ লাইটটারও দোষ দেওয়া যায় না। দিনের অধিকাংশ সময় বিদ্যুত্ থাকে না। এত লোড চাইনিজ এ চার্জ লাইট কীভাবে নেবে! তার ওপর পুরো চার্জ তো হতে হবে। কিন্তু যতক্ষণ বিদ্যুত্ থাকে ওই সময়টায় পুরো চার্জ হওয়া সম্ভব না।
যেকোনো কারণেই হোক চাইনিজ জাতিটার প্রতি আমার অন্যরকম একটা দুর্বলতা কাজ করে। আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি চাইনিজ কোনো মেয়েকে বিয়ে করব। ওরা ভাগ্যবতী হয়। জীবনে নিজে তো কিছুই করতে পারলাম না। এখন যদি ভাগ্যবতীর সংস্পর্শে এসে কিছু করা সম্ভব হয়! চাইনিজ মেয়েরা যে মহাভাগ্যবতী এ ধারণা আমার প্রথম জন্মে জাকারবার্গকে দেখে। চাইনিজ মেয়ের সাথে প্রেম, বিয়ে হলো। আর সাথে সাথে কত কত টাকার মালিক হয়ে গেল এ অল্প বয়সেই। ভুল বলছি, টাকা না কত কত ডলারের মালিক হয়ে গেল।
তবে একথা বাসায় বলিনি। চাইনিজ কোনো মেয়েকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি জানলে ঘর থেকে বের করে দেবে। আব্বা তো রাগী গলায় বলবেন, ‘এমন পোলার আমার কোনো দরকার নেই।’
আমি সারাজীবন ভয়ে ভয়ে কাজ করেছি। সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই একটা কাজে আমি ভয়কে পরোয়া করব না।
মিশনও শুরু করে দিয়েছি। ফেসবুকে এক চাইনিজ মেয়ের সাথে পরিচয় হয়েছে। ওর সাথে ইনিয়ে বিনিয়ে কথা হয়। চাইনিজ ভাষা ছাড়া অন্য কোনো ভাষা পারে না। আমাদের বেশিরভাগ কথাই হয় ইমো ভিত্তিক। তবে মাঝে মাঝে গুগল ট্রান্সলেটের সাহায্য নিই। ভালোই কাজ দেয়।
কিছু টাকা থাকলে একটা চাইনিজ কোর্সে ভর্তি হতাম। আমার এক ব্যাংকার বন্ধু আছে। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আচ্ছা, দোস্ত। ভাষার কোর্স করার জন্য যদি লোন চাই তাহলে তোদের ব্যাংক দেবে?’
ও শুনে আকাশ থেকে পড়ার মতো অবস্থা। যেন বড় অন্যায় কথা বলে ফেলেছি। গাড়ি, বাড়ি কিনতে যদি লোন দিতে পারে। তাহলে ভাষা শিখতে কোর্স করার জন্য লোন দিতে কী সমস্যা? অর্থনীতিবিদরা এ বিষয়টি এড়িয়ে গেছে। অথচ যোগাযোগের প্রধান মাধ্যমই তো ভাষা। পৃথিবী আসলে এখনো সেরা মেধাবীদের দেখা পায়নি। পেলে আমাকে কোর্স শেখার জন্য লোন পাওয়া নিয়ে ভাবতে হতো না।
সেদিন আমি চাইনিজ মেয়েটাকে বলছিলাম, ‘আমি বাজার থেকে বাছাই করে চাইনিজ পণ্য কিনি। আমাদের দেশে চাইনিজ পণ্যের ছড়াছড়ি। তাই পেতে সমস্যা হয় না।’
একথা শুনে তার মন খারাপ হয়। সে বাংলাদেশি পণ্য কিনতে চায়। কিন্তু তাদের বাজারে বাংলাদেশি পণ্য তেমন একটা নেই।
আমি বললাম, ‘মন খারাপ করো না। আমি যখন ব্যবসা শুরু করব, তখন বাংলাদেশ থেকে চীনে পণ্য রপ্তানি করব। তখন তোমাদের বাজারে দেখবে বাংলাদেশি পণ্যর ছড়াছড়ি। টর্চ লাইট থেকে শুরু করে মোমবাতিও বাংলাদেশ থেকে পাঠিয়ে দেবো। ইচ্ছেমতো কিনতে পারবে।’
আমার কথা শুনে সে অনেক খুশি হয়। ওর খুশি দেখে আমার আনন্দ দেখে কে। চাইনিজ জুটায়া ফেলছি। জাকারবার্গ হতে এবার আমাকে ঠেকাবে কে? আমার কল্পনার বহর বাড়ে।
মাস দুয়েক পর সে একটা কার্ডের ছবি পাঠায়। চাইনিজ ভাষায় কী কী যেন লেখা সেখানে! অর্থ উদ্ধার করতে পারি না। কার্ডটা তো ছবি। অন্য কিছুর ক্ষেত্রে ওর লেখা কপি করে গুগল ট্রান্সলেট বক্সে পেস্ট করে দিতাম। অনুবাদ হতো। কিন্তু ছবি থেকে তো আর কপি করা যাবে না লেখা। আর এমন চাইনিজ অক্ষরগুলো আমার পক্ষে লেখাও সম্ভব না। এ তো দেখি মহা বিপদ!
জিজ্ঞেস করলাম, ‘এটা কী?’
উত্তরে লজ্জার পেয়েছে এমন একটা ইমো পাঠাল।
এরপর যা লিখল সেগুলো কপি করে গুগল ট্রান্সলেটে পাঠালাম। ঘটনা হচ্ছে, আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে তার বিয়ে। সে বিয়ের কার্ড এটি।
নিজের চুল ছিড়তে ইচ্ছে হলো। এখনকার মেয়েরা টাক মাথাওয়ালা ছেলে পছন্দ করে না। তাই বহু কষ্টে ইচ্ছেটা দমালাম। আমার বুঝি আর জাকারবার্গ হওয়া হলো না। আমাকে ধর! ( ফেবুতে ) ( ইত্তেফাকের ঠাট্টায় )
>> গতকাল ইত্তেফাকের ঠাট্টায় এ রম্য লেখাটি ছাপানো হয়েছে।